#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_০৫
লেখনীতেঃভূমি
দিহানের জ্ঞান ফিরেছে।চোখমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।মা বাবার দিকে একনজর তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে অদ্রিজার দিকে তাকাল সে।স্থির নয়নে তাকিয়ে থাকা অদ্রিজাকে দেখেই বুকের ভেতর অদ্ভুত নিয়ম করা সেই ব্যাথা জেঁগে উঠল।ব্যাথাটা তীব্র হয়েই বলে উঠল,” ঐ সুন্দর পবিত্র রমণীকে তুমি ভালোবাসো দিহান।ঐ রমণীতে তুমি আসক্ত।” হৃদয় থেকে এই কথা গুলো শুধালে ও মস্তিষ্ক গম্ভীরভাবে জানিয়ে দিল তাকে,” সে এখন বিবাহিত দিহান।অন্য কারো স্ত্রী।তুমি তাকে ভালোবাসতে পারো না দিহান।সেই অধিকার তোমার নেই।”দিহান চোখমুখ কালো করে দৃষ্টি সরাল দ্রুত।কথা বলার মতো অবস্থায় নেয় সে।তবুও মন চাইছে অদ্রিজা এসে কিছু বলুক।সেও উত্তর দিক।বহুদিন যে কথা হয়নি এই সুন্দরী রমণীর সাথে।দিহানের ভাবনা ভাবনায় রয়ে গেল।অদ্রিজা সেভাবে স্থির নয়নেই তাকে দেখে বাইরে গিয়ে বসল।ডক্টর বারবার করে বলে দিয়েছে দিহানের সাথে এই মুহুর্তে কেবল দেখা করা যাবে, কোন কথা বলা যাবে না।তাই অদ্রিজাও বলেনি।বার কয়েক জোরে জোরে শ্বাস ফেলে মাথায় দুইহাত ঠেকিয়ে বসল সে।কয়েকমিনিট সেভাবে থাকার পর মোবাইলটা নিয়ে কল দিল নেহাকে। নেহা সেসময় কি করছিল জানা নেই অদ্রিজার। তবে কলটা নেহা ধরেনি নেহার আম্মুই রিসিভড করল।ওপাশ থেকে রাশভারী কন্ঠে বলে উঠলেন তিনি,
‘ হ্যালো’
অদ্রিজা থমকে গেল।পিঠ সোজা করে একদম সোজা হয়ে বসল সে।মৃদু কন্ঠে বলে উঠল,
‘ আন্টি নেহা?নেহা কোথায়?’
ভদ্রমহিলা বিরক্ত হলেন কি খুশি হলেন বোঝা গেল না।কন্ঠটা আগের মতোই ভারী রেখে বলে উঠলেন,
‘ নেহা তো বাসা থেকে বের হলো দিহানকে দেখতে।মোবাইলটা নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছে বোধ হয়।তুমি কি হসপিটালেই?’
‘ হ্যাঁ।দিহানের জ্ঞান ফিরেছে।কথাটা জানাতেই কল দিয়েছিলাম।আচ্ছা ও যখন আসছেই জেনে তো যাবেই।রাখছি তাহলে আন্টি?’
‘ হ্যাঁ।’
অদ্রিজা কল কাঁটল।এপাশ ওপাশ তাকিয়ে পরিচিত কাউকে না দেখেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কিছুক্ষন পর দিহানের বাবা মা রুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেই অসহায় চোখে তাকাল।উঠে দাঁড়িয়ে দু পা এগিয়ে আবার ও গিয়ে দাঁড়াল দরজার সামনে।দিহানকে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এখন দিহানের সাথে কথা বলা উচিত হবে না।আরেকটু সুস্থ হোক।তারপরই না হয় বলবে।আপাদত বাসায় যেতে হবে।এক্ষুনিই!তারপর আর দাঁড়াল না অদ্রিজা।দিহানের আম্মুকে বলে বেরিয়ে পড়ল দ্রুত।
.
অদ্রিজা রাতের খাবার খেয়ে ঘুমোতে যাবে ঠিক তখনই রক্তিমের প্রবেশ ঘটল।কপালের ক্ষতটায় এখন ব্যান্ডেজ করা।হাতের ছিলে যাওয়া অংশগুলোতেও ঔষুধের প্রলেপ চোখে পড়ছে।লম্বা চওড়া শরীরে পরনে কালো শার্ট, ব্ল্যাক জিন্স।হাতাগুলো ফোল্ড করা, হাতে ব্র্যান্ডেড ঘড়ি।হাতের, কপালের ব্যান্ডেজ নিয়েও অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল তাকে।কিন্তু তার এই সৌন্দর্যে অদ্রিজার মন কিংবা চোখ মুগ্ধ হলো না।বরং অদ্রিজার চোখ দিয়ে বেরিয়ে এল ঘৃণারশ্মি।রক্তিমের দিকে তার সেই জ্বলন্ত চাহনি স্পষ্ট বলে উঠল, ” আমি আপনাকে ঘৃণা করি রক্তিম।”সেই জ্বলন্ত চাহনি নিয়েই উঠে দাঁড়াল সে।এক্ষুনিই রক্তিমের মা তার হাতে খাবার ধরিয়ে রক্তিমের কাছে নিয়ে যেতে বলবে।অথচ এই নিকৃষ্ট,নির্দয় লোকটির সামনেও থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে নাহ তার। ঘৃণায় রি রি করে উঠছে শরীর।তীব্র বেদনায় বিষিয়ে উঠেছে মন।ক্ষ্রিপ্ত চাহনিতে রক্তিমের দিকে বার কয়েক তাকাতেই রক্তিম পা ফেলে এগিয়ে আসল।অদ্রিজার দিকে এক নজরও তাকাল ও না সে এতক্ষনে।পুরোপুরি সামনের রমণীটাকে উপেক্ষা করে খাবার টেবিলে বসে থাকা রিয়াদ সাহেবের দিকে তাকাল সে। তারপর বলে উঠল,
‘ মিস্টার মাহমুদ?আমি খেয়ে এসেছি। আপনার মিসেসকে খাবার পাঠাতে নিষেধ করবেন।’
কথাটা বলেই সামনের দিকে হাঁটা দিল রক্তিম।অদ্রিজা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।বাবা মায়ের সাথেও কথা বলার ধরণ কেমন এই লোকটার। তা ভেবেই কপালে ভাজ পড়ল।রক্তিমের যাওয়ার পথে তাকাতেই ভাজটা আরো ঘন হলো।রক্তিম আজ তার ভুতুড়ে রুমে যায় নি।সেই রুমের দরজায় এখনো ঝকঝকে তালাটা ঝুলছে।তবে কি সোজা অদ্রিজার রুমেই যাবে?অদ্রিজার ভাবনাটাই সঠিক হলো।রক্তিম ভুতুড়ে রুমে প্রবেশ না করে অদ্রিজার রুমটাতেই প্রবেশ করল।অদ্রিজা ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়ে পা এগিয়ে রুমে যাবে ঠিক তখনই পেঁছন থেকে রিয়াদ সাহেব বলে উঠলেন,
‘ অদ্রিজা?একটু বসবে?তোমায় কিছু কথা বলার ছিল আমার।’
অদ্রিজা মুখ ঘুরিয়ে চাইল।বার কয়েক নিঃশ্বাস ফেলে রিয়াদ সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়েই মৃদু হাসল।আবারও চেয়ারে বসে পড়ে বলে উঠল,
‘ হ্যাঁ, বলুন বাবা।’
রিয়াদ সাহেব তৃপ্তি নিয়ে তাকালেন।এভাবে কোনদিন বাবা ডাকটা শোনা হয়নি তার।চাপা খুশি মুখে ফুটিয়েই বললেন তিনি,
‘ একটা প্রতিশ্রুতি দেবে আমায় মা?’
অদ্রিজা ভড়কে গেল হঠাৎ। কি প্রতিশ্রুতি? তা বুঝে না উঠেই কি উত্তর দিবে সে?যদি প্রতিশ্রুতিটা তার রাখার মতো না হয়? তাহলে?অদ্রিজার চিন্তাগুলোকে মুক্ত করতেই রিয়াদ সাহেব হাসলেন। তারপর বললেন,
‘ ভয় পাওয়ার কিছু নেই মা।আমি জানি তুমি কথাটা নির্দ্বিধায় দিতে পারবে।তুমি চাইলেই সম্ভব প্রতিশ্রুতিটা রাখা। ‘
‘ কি প্রতিশ্রুতি?’
রিয়াদ সাহেব মৃদু হাসলেন।অদ্রিজার কৌতুহল দেখে বলে উঠল,
‘ রক্তিমকে কোনদিন ছেড়ে দেবে নাহ তো মা?ওকে ছেড়ে কোনদিন চলে যাবে না কথা দাও।প্লিজ!’
অদ্রিজা সরু চাহনিতে বার কয়েক চাইল রিয়াদ সাহেবের দিকে।তারপরই তপ্তশ্বাস ফেলল।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রিয়াদ সাহেবের স্ত্রীর দিকে তাকিয়েও থমকে গেল সে।মহিলার চোখ ছলছল করছে।নাকের অগ্রভাগ কেমন লাল হয়ে আছে।সাধারনত মহিলা বলতেই বোঝায় চঞ্চল, বকবক করা মানুষ।কিন্তু এই ভদ্রমহিলা সেইদিক থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।কেমন গম্ভীর, প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেন না,কখনো হাসতেও দেখেনি এই মহিলাকে অদ্রিজা।কয়েক নজর তার দিকে তাকিয়েই রিয়াদ সাহেবের দিকে তাকাল অদ্রিজা।তারপর বলল,
‘ বিয়ের আগেও তো এমন প্রতিশ্রুতি আমি আপনাকে দিয়েছি বাবা।হঠাৎ আবার এই প্রতিশ্রুতিটাই আদায় করতে চাইছেন ?’
‘ রক্তিম আমার ছেলে অদ্রিজা।ও কে তুমি যেমনটা ভাবছো ও মোটেও তেমনটা নয় অদ্রিজা।কথা দাও ওর সঙ্গে থাকবে পুরোটা জীবন?আমি জানি তুমি পারবে।আমি ওর চোখে তোমার জন্য অনুভূতি দেখেছি।পারবে তুমি।আমরা ওকে এভাবে দেখতে পারছি নাহ মা।’
অদ্রিজা তাচ্ছিল্য মাখা হাসল।তারপর বলল,
‘ এভাবে দেখতে পারছেন না মানে?কোনভাবে বাবা?উনি তো দিব্যি আছেন।হাসছেন, খাচ্ছেন, প্রেম করছেন, ড্রিংক করছেন। বেশ আনন্দেই তো আছেন উনি।তবে?আর উনার চোখে অনুভূতি?হাস্যকর বাবা!উনার মধ্যে কোন অনুভূতি থাকতেই পারে না বাবা।তবে কি বলুন তো?তবুও আমি উনাকে ছেড়ে যাব না।কোনদিনও যাব না।এতটা স্বার্থপর আমি নই বাবা।এটুকু বিশ্বাস আপনার আমার উপর থাকা উচিত ছিল। আমি আপনাকে আগেই বলেছি উনাকে কোনদিন ছাড়ব নাহ।এই প্রতিশ্রুতিতেই তো বিয়েটা হয়েছিল।আপনি ভাবলেন কি করে প্রতিশ্রুতি রাখব না?নাকি স্বার্থপর ভেবেছেন আমায়?যে নিজের প্রয়োজনটুকু মিটে গেলে, টাকা পেয়ে গেলেই আমি উনাকে ছেড়ে চলে যাব?এরকমটা কখনো হবে না বাবা।আজকে আবার ও প্রতিশ্রুতি দিলাম।’
রিয়াদ সাহেব ক্লান্ত চাহনিতে তাকাল। কিছু বলার আগেই অদ্রিজা উঠে পা বাড়াল নিজের রুমে।জীবনের এমন একটা অবস্থায় সত্যিই বিরক্ত লাগছে তার।সবকিছু কেমন এলোমেলো।দুইদিন আগেও তার জীবনটা বেশ গোছালো ছিল।অথচ অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানেই জীবনটা বদলে গেল অদ্ভুত ভাবে। রক্তিম নামক পুরুষটার সাথে তার জীবনটা জড়িয়ে গেল অবিচ্ছিন্ন ভাবে।যে পুরুষটাকে সে ভালোবাসে নি, না তার কোন ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছে সে।তবুও সেই পুরুষের সাথেই তার জীবন বাঁধা।অদ্রিজা ছোট্ট শ্বাস ফেলল।রুমে ডুকতেই নাকে নিকোটিনের তীব্র গন্ধ হানা দিল।সঙ্গে সঙ্গেই কুঁচকে গেল মুখচোখ। গন্ধটাকে অনুসরণ করেই বেলকনির দরজায় দাঁড়াল সে। অন্ধকারে রক্তিমের ছায়াটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।একহাতে মোবাইল কানে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।অন্য হাতে জ্বলন্ত সিগারেট।অদ্রিজা কিছু বলে উঠবে ঠিক তখনই রক্তিম মোবাইলের ওপাশের ব্যাক্তিটাকে বলে উঠল,
‘ উফফস সুইটহার্ট!অতোটাও আঘাত পাইনি আমি যতোটা তুমি বলছো।তাছাড়া তোমার কথামতো তো ডক্টরের কাছেও গেলাম।ব্যান্ডেজও করে নিয়েছি।তাও এত চিন্তা করছো কেন?আর রইল তোমার সাথে দেখা করার কথা।আজও তো তোমার সাথে দেখা হলো বেইবি! একমাস পর এমনিতেও তোমার কাছে পুরোপুরি ব্যাক করব।নো টেনশন।এনিওয়েজ বেশি রাত জাগা ভালো না বেইবি।গুড নাইট।’
অদ্রিজার মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠল কথাগুলো শুনে।বিরক্তি নিয়েই বলে উঠল,
‘ মিঃ রক্তিম?’
রক্তিম ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল।অদ্রিজার ঘৃণা, রাগ, কষ্ট,বিরক্তি মিশ্রিত দৃষ্টিটার দিকে একবার তাকিয়েই মুচকি হাসল। মোবাইলের ওপাশের ব্যাক্তিটাকে বলে উঠল,
‘ ধুরর! তুমিই আমার প্রিয়তমা!মেয়েটা কেউ না।শুধু পরিচিত কেউ।’
অদ্রিজা কুঞ্চিত ভ্রু নিয়ে তাকিয়ে রইল।রক্তিম যে তাকে জড়িয়েই কথাগুলো বলেছে তা আর বুঝতে বাকি রইল নাহ।শুধু পরিচিত?আর কোন সম্বোধন কি আধো দিতে পারত না রক্তিম? কে জানে।অদ্রিজা ছোট্ট শ্বাস ফেলে রক্তিমের দিকে তাকাল।মোবাইলটা পকেটে রেখে তার দিকেই দু পা এগিয়ে আসল রক্তিম।বাঁকা হেসে বলে উঠল,
‘ কি ব্যাপার বলুন তো?লুকিয়ে চুরিয়ে আমার প্রেমালাপ শুনছিলেন?’
‘ একদমই নাহ!আপনার প্রিয়তমা আর আপনার এইসব ন্যাকামো মাখা কথা শোনার মতো নিচু মানের ইচ্ছে আমার নেই।’
রক্তিম দাঁত কেলিয়ে হেসেই বলল,
‘ রেগে যাচ্ছেন?’
অদ্রিজা তেজ নিয়ে তাকাল। তিক্ত কন্ঠে বলল,
‘ রেগে যাব কেন আমি? আপনার প্রেমিকা কেমন, কিরকম, কোথায় থাকে তাতে বিন্দুমাত্রও আগ্রহ নেই আমার।তবে আপনার প্রেমিকা যেমনই হোক, সে আপনাকে ডক্টর দেখাতে রাজি করিয়েছে এটুকু অন্তত ভালো করেছে।অন্যরা বললে তো আপনার সেমপ্যাথি মনে হয়। তাই না?’
রক্তিম সরু চোখে তাকাল।তারপর বলল,
‘ আপনার সাথে তার তুলনায় হয় না অদ্রিজা।বৃথা বৃথা তুলনা করবেনও না।আপনার বলা কথাগুলো সেমপ্যাথি হলেও সে কখনো সেমপ্যাথি নিয়ে কথা বলবে না আমার সাথে।তাকে আমি অনেকটা ভালোবাসি।’
অদ্রিজা মেকি হাসল।তারপর বলল,
‘ যাক। আপনি কাউকে ভালোবাসেন শুনে ভালো লাগল।এনিওয়েজ, সিগারেটটা ফেলে দিন।যদি সিগারেট নিয়ে ধোঁয়া উড়োতেই চান তো বাইরে যান আর নয়তো সিগারেটটা ফেলে দিন।আমি সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারি নাহ।মাথা ব্যাথা করে।’
রক্তিম হেসে উঠল অদ্রিজার কথা শুনে।সিগারেটটা না ফেলে দিয়ে ঠোঁটের মাঝে নিয়ে টান দিল।মুখ দিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে মুচকি হেসে বলল,
‘ কি ভাবছেন?আপনার কথামতো সিগারেটটা ফেলে দিব?দেওয়া উচিত?’
অদ্রিজা দৃঢ় কন্ঠে বলল,
‘ হ্যাঁ, উচিত।অবশ্য আপনার মধ্যে উচিত অনুচিত বোধ থাকলে তো?’
রক্তিম হু হা করে হেসে উঠল এবার।অন্ধকারের আবছায়ায় রক্তিমের হাসিটা অদ্ভুত মাদকতায় ছুঁয়ে গেল অদ্রিজার মনকে।তেমনই অদ্ভুতভাবে রক্তিম একটা কাজ করে বসল।হাত থেকে সিগারেটটা ফেলে দিল।অদ্রিজা অবাক হলো রক্তিমের এমন কাজে।রক্তিমকে যতটুকু চিনেছে তাতে রক্তিম সিগারেটটা ফেলে দেওয়ার মানুষ নয়।কিন্তু ফেলে দিল? এত সহজেই?রক্তিম অদ্রিজার অবাক হওয়াটাকে উপেক্ষা করেই বলল,
‘ নিন, ফেলে দিলাম।এবার বলুন? উচিত অনুচিত বোধ আছে আমার। তাই না?’
অদ্রিজা অবাক হলেও আগের মতোই দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠল,
‘ না নেই!আপনার কাছে কোনকিছুরই বোধ থাকতে পারে না।’
‘ তাই বুঝি অবাক হলেন সিগারেটটা ফেলে দিলাম দেখে?’
অদ্রিজা তাচ্ছিল্য হেসেই বলল,
‘ হ্যাঁ।যার কাছে কোন কিছুর বোধ থাকে না সে আবার উচিত অনুচিত বোধ করে সিগারেট ফেলে দিল?একটু তো অবাক হওয়া উচিতই এতে।বলুন?’
রক্তিম হাসল।পাশে থাকা টুলটায় বসে পড়েই প্রশ্ন করল,
‘ দিহানের সাথে কথা বলেছেন?শুনলাম এখন কথা বলার মতো অবস্থায় আছে দিহান।ডক্টরও কথা বলার অনুমতি দিবে।বলবেন কথা? আপনি চাইলে এখন গিয়ে দেখা করে আসতে পারেন অদ্রিজা।’
‘ হঠাৎ দিহানের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলছেন কেন?আমি তো দিহানের সম্পর্কে আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি।আর দিহানের সম্পর্কে আপনি কিছু বলবেন ও না রক্তিম।আপনার মতো মানুষের মুখে দিহান সম্পর্কিত কথা মানায় নাহ।এসব ভালো মানসিকতা একদমই দেখাবেন নাহ।আমি জানি আপনি কেমন।’
রক্তিমের মুখে আগের মতোই হাসি।অদ্রিজা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইল।সবকিছুতেই এত হাসি আসে কোথায় থেকে এই মানুষটার?সবকিছুতেই কেন এত হাসে?অদ্ভুত!বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই রক্তিম ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করল,
‘ সত্যিই জানেন আমি কেমন?’
‘ হ্যাঁ, জানি।’
রক্তিম মুচকি হাসল।উঠে দাঁড়িয়ে অদ্রিজার মুখোমুখি দাঁড়িয়েই দাঁত কেলিয়ে হাসল।অদ্রিজার পেঁছনের দেওয়ালে দুই হাত রেখে অদ্রিজার সামনাসামনি দাঁড়াল।মাঝখানে কয়েক ইঞ্চি দূরত্ব রেখেই ফু দিয়ে উড়িয়ে দিল অদ্রিজার কপালে আসা চুলগুলো।তারপরই বলল,
‘ আমার প্রতি আপনি এতটাই ইন্টারেস্টেড যে, আমি কেমন তাও জেনে নিয়েছেন? ‘
অদ্রিজা ভড়কে গেল।নিজের এতটা কাছাকাছি রক্তিমের উপস্থিতিতে নিঃশ্বাস ঘন হয়ে উঠল তার।রক্তিমের উপছে পড়া উষ্ণ নিঃশ্বাস কপাল ছুঁয়ে যেতেই কেঁপে উঠল শরীরের লোমকূপগুলো। তবুও আগের মতোই তেজ নিয়ে বলে উঠল সে,
‘ সরে দাঁড়ান রক্তিম।’
‘ না সরলে?’
অদ্রিজা তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল। তারপরই বলল,
‘ না সরলে কিছুই করব না।আপনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন আমার সাথে রক্তিম।আমি আপনার কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছি। ভুলেই গিয়েছিলাম তা।সরে দাঁড়াতে বলার জন্য দুঃখিত!’
রক্তিমের মুখচাহনি তৎক্ষনাৎ পাল্টে গেল। শক্ত হয়ে উঠল চোয়াল। হাতজোড়া দেওয়াল থেকে সরিয়ে নিয়ে অদ্রিজার থেকে দু পা পিঁছিয়ে দাঁড়াল।গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ সরে গেলাম।ঠিক এভাবেই সবকিছু থেকে সরে যাব অদ্রিজা।’
অদ্রিজা রক্তিমের কথার মানে বুঝল না।হতবিহ্বল দৃষ্টি নিয়ো রক্তিমের দিকে তাকাতেই রক্তিম সেই স্থান ত্যাগ করল।দ্রুত প্রবেশ করল রুমে।আর অদ্রিজা সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল সেখানে।
#চলবে…..
{ কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলত্রুটি মার্জনীয়।কোথাও ভুল হরে জানাবেন, এডিট করে ঠিক করে নিব।ভালোবাসা সবাইকে❤️🥀}