#হৃদয়_রেখেছি_জমা
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৪
সায়েদের ব্যপারটা মাথায় ঢুকছে না মেহরিনের। একটা মানুষ হুট করে কিভাবে গায়েব হয়ে গেলো? মেহরিন যখন রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়েছিলো তখনও সায়েদের সঙ্গে তাঁর পার্সনাল বডিগার্ডরা ছিলো। এর মাঝেখানে সে উধাও হলো কি করে?
চিন্তিত মুখে মাহমুদের পেছন পেছন এগিয়ে চললো সে। এইমুহূর্তে ইরফান সাহেবের সঙ্গে দেখা করার জন্য হস্পিটালে যাচ্ছে তাঁরা। সেখান থেকে বুদ্ধি পরামর্শ করে সেই অনুযায়ী মিশন শুরু করবে। ধ্যান ভাঙলো মাহমুদের ডাকে। গাড়িতে উঠার সময় মাহমুদ ফিসফিস করে বললো,’সত্যি করে বলতো শুট করে দাও নি তো আবার?’
ধারালো দৃষ্টিতে তাঁর দিকে চাইলো মেহরিন। তাঁর শক্ত চেহারা দেখে সঙ্গে সঙ্গেই আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে হাত উপরে তুলে ফেললো মাহমুদ। হেসে উঠে বললো,’ঠিক আছে সরি! বাট আই অ্যাম স্টিল কনফিউজড!’ মেহরিন বিরক্ত হয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। সোহাগকে দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে চুপচাপ পেছনের সীটে গিয়ে বসলো। মাহমুদ আর বেশি ঘাটালো না। সোহাগের সঙ্গে বসে টুকটাক আলোচনা শুরু করে দিলো।
হস্পিটালে পৌছানোর আগেই হঠাৎ তাঁর কাছে খবর এলো মেহরিনের নামে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। বেশ কিছুক্ষনের জন্য তব্দা খেয়ে গেলো মাহমুদ! মন্ত্রীর ছেলে না হলে শুধু মাত্র সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে এত দ্রুত লিগাল অ্যাকশন নেওয়া সম্ভবই ছিলো না। মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। কপালের রগ চেপে ধরে নিজেকে শান্ত করলো সে। পেছন ফিরে মেহরিনের দিকে একঝলক চাইলো। সীটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। চুপিচুপি সোহাগের সাথে বিষয়টা আলোচনা করলো। সোহাগ বোকার মত কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বললো,’এখন তাহলে কি হবে স্যার?’
দেরী করলো না মাহমুদ। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো। শান্ত কন্ঠে দিয়ে বললো,’গাড়ি ঘোরাও! আমার বাসার দিকে চলো।’
★
রাত নটা,
মাহমুদের বেডরুমে রাগত মুখে বসে আছে মেহরিন। দুপুর থেকে তাঁকে এখানে বন্দি করে রেখেছে মাহমুদ। বাইরে যাওয়ার সময় তালা বন্ধ করে গেছে। সারাদিন রুমের ভেতর একা বসে ছিলো বেচারি। মাহমুদ একটু আগে বাসায় ফিরেছে। ক্লান্ত চেহারা নিয়ে তাঁর দিকে চেয়ে মিষ্টি করে হাসলো। রাগে মুখ ফিরিয়ে নিলো মেহরিন। তেতে উঠে বললো,’আমাকে এভাবে লুকিয়ে রাখার মানে কি? আমি কি ক্রিমিনাল?’
-‘ইচ্ছে করে যে রাখি নি সেটা তুমি ভালো করেই জানো। তোমার নামে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে।’
-‘তো? ওয়ারেন্ট জারি হলেই কি প্রমান হয়ে যায় আমি ক্রিমিনাল?’
-‘না প্রমাণ হয় না। কিন্তু ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে মানে প্রমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত পুলিশ কাস্টোডিতে থাকতে হবে তোমাকে! কি চাও তুমি? থাকবে পুলিশ কাস্টোডিতে? যাবে শ্বশুরবাড়ি?’
মেহরিন জবাব না দিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে রইলো। মাহমুদ না থেমেই বললো,’এমনিতে অবশ্য তোমার যা স্বভাব! বিয়েশাদী আদৌ হবে কিনা সন্দেহ আছে। বিয়ে ছাড়া শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো উপায় আর হতেই পারে না।’
-‘দেখো সকাল থেকেই আমার মেজাজ কিন্তু প্রচুর খারাপ হয়ে আছে। তারমধ্যে তোমার এসব বাজে কথা একদম ভালো লাগছে না।’
-‘না চাইলেও শুনতে হবে। কে বলেছিলো সায়েদের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে?’, খানিকটা শাসনের সুর মাহমুদের কন্ঠে।
-‘আমি ইচ্ছে করে যাই নি। সে আমাকে বারবার অনুরোধ করছিলো আমার সঙ্গে নাকি তাঁর খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। আমি যেন শেষবারের মত একবার তাঁর সঙ্গে দেখা করি!’
-‘সে বললেই তোমাকে যেতে হবে?’
-‘আমি অনেকবার না করেছিলাম। কিছুতেই মানছিলো না। তাই ভাবলাম দেখা করে এলে হয়ত ঝামেলা মিটে যাবে।’
কথাগুলো বলার সময় বিরক্তিতে মুখ বিকৃত করে ফেললো মেহরিন। কাঠ গলায় প্রশ্ন করলো কতদিন এভাবে লুকিয়ে থাকতে হবে তাঁকে? জবাবে মাহমুদ হেসে উঠে বললো,’যতদিন না তোমার ভদ্রলোককে আমরা খুঁজে পাচ্ছি।’
ফের রাগে কটমট করে উঠলো মেহরিন। মাহমুদের এই ধরনের ঠাট্টা তাঁর একদমই পছন্দ নয়। আগে ছিলো সোহাগ এখন আবার সায়েদ! অসহ্যকর! বিরক্ত হয়ে বারান্দার দিকে চলে গেলো।
মাহমুদ মুখটিপে হাসলো। সায়েদকে খুঁজে বের করার পরই বাসায় ফিরেছে সে। শয়তানটা ঢাকার বাইরে তাদের নিজস্ব গেস্টহাউজে লুকিয়ে ছিলো। সকালে মেহরিনের হাতে চড় খেয়ে প্রেস্টিজে লেগেছিলো বদমাইশটার। তাই মেহরিনকে ফাঁসানোর জন্য ইচ্ছে করে নিখোঁজ হওয়ার মিথ্যে নাটক করেছে। সরাসরি কিছু করার সাহস হয় নি কারণ তাঁর বাবা মন্ত্রী হলেও ইরফান সাহেবের ক্ষমতাও কিছু কম নয়। মেহরিনকে সরাসরি কিছু করতে যাওয়া মানে ইরফান সাহেবের রোখের মুখে পড়া। পেশাগত কারণে খুব স্বাভাবিক ভাবেই উপরস্তরে অনেক চেনাজানা আছে ইরফান সাহেবের। তাই অন্যপন্থা অবলম্বন করেছিলো কিন্তু তারপরেও শেষ রক্ষা হলো না। এনএস আই এজেন্টদের হাতে ধরা পড়তে হলো। মাত্র ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই গেস্টহাউজ থেকে তাঁকে খুঁজে বের করে ফেলেছে মাহমুদরা। এদিকে সব শুনে ইরফান সাহেবও বেশ চটে গেছেন। মানহানির মামলা করবেন বলে অলরেডি সায়েদের বাবার কাছে হুমকিও দিয়ে দিয়েছেন। বাকি সব দায়িত্ব সোহাগের ওপরে দিয়ে মাহমুদ বাসায় ফিরে এসেছে।
মেহরিন বারান্দা থেকে ফিরে এলো। পুনরায় খাটের ওপর বসে কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন করলো,’তোমার কি মনে হয়? সায়েদ সত্যি সত্যিই নিখোঁজ নাকি এর ভেতরে অন্য কোন রহস্য আছে। আই মিন, আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব করছে না তো?’
তাঁর চিন্তিত মুখপানে চেয়ে আপন মনেই হেসে ফেললো মাহমুদ! মন্ত্রীর ছেলে পর্যন্ত ডাকুরানীর চড়ের হাত থেকে বাঁচতে পারে নি! এক চড়েই বেচারা নাজেহাল! ডান হাতে মাথার চুল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললো,’হতে পারে। বাট নট সিউর!’
-‘আমার ফোন?’, হাত বাড়িয়ে দিলো মেহরিন।
-‘আগেই তো বলেছি যতদিন না তোমার ঐ মি.ভদ্রলোককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে ততদিন ফোন আমার কাছে থাকবে।’
দুপুরে মেহরিনের ওয়ারেন্ট জারি হওয়ার খবর পাওয়ার পরপরই সীম খুলে তাঁর ফোনটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলো মাহমুদ। সীম খুলে রাখার কারণ হচ্ছে কোনভাবেই যেন লোকেশন ট্র্যাক করা না যায়।
তার জবাব শুনে বিরক্ত হওয়ার পরিবর্তে উলটে রহস্যজনক হাসলো মেহরিন।তাঁকে অবাক করে দিয়ে ব্যাগ থেকে আরেকটা ফোন বের করে লায়লা শারাফাতের নাম্বারে ডায়াল করলো। রিসিভ হলো না দেখে বন্ধ করে আবার ব্যাগে রেখে দিলো। মাহমুদকে শঙ্কিত মুখে চেয়ে থাকতে দেখে আশ্বস্ত করে বললো,’এই নাম্বার মা ছাড়া আর কাউকে দেই নি!’
-‘গুড!’, স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো মাহমুদ। উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। মেহরিন বসে বসে ভাবতে শুরু করলো কি করলে সায়েদের আসল সত্যিটা সে জানতে পারবে! তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস তাঁকে ফাঁসানোর জন্যই সায়েদ নিখোঁজ হওয়ার নাটক করছে।
★
মিনিট দশেক বাদে ওয়াশরুম থেকে বের হলো মাহমুদ। মেহরিন খাটের ওপর বসে কফি খাচ্ছে! পাশে গিয়ে বসলো সে। মিষ্টি হেসে বললো,’আমার জন্য বানাও নি?’
-‘না!’
হাত দিয়ে চুলের পানি ঝরাতে ঝরাতে আবারো হাসলো মাহমুদ। মেহরিনের হাত থেকে মগটা নিয়ে তাতে চুমুক দিয়ে বললো,’এক মগেই চলবে। ইট’স লাইক কিসিং ইউর লিপ্স! নাও ধরো।’
নিলো না মেহরিন। বিরক্ত মুখে ফিরিয়ে দিয়ে বললো,’তুমিই খাও।’ উঠেই চলে যাচ্ছিলো সে। মাহমুদ টেনে বসিয়ে দিয়ে বললো,’আরে বসো, বসো। মজা করছিলাম। তোমাকে আমি খেয়ে ফেলবো না!’
-‘আমার অস্বস্তি লাগছে!’, জোরপূর্বক হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো মেহরিন। মাহমুদ ছাড়লো না। আচ্ছন্ন গলায় প্রশ্ন করলো,’কেন?’
মেহরিন জবাব দিলো না। ইতস্তত করলো। বাস্তবিক অস্বস্তি লাগছে তাঁর। মাহমুদ ধরে রাখা হাতখানায় আলতো চাপ দিয়ে মুচকি হেসে বললো,’ডোন্ট ওরি! আমিও ভদ্রলোক! সায়েদ সাহেবের মত না হলেও উনার চাইতে কিন্তু কম নই!’
নিমিষেই মুখ কালো হয়ে গেলো মেহরিনের। রাগে ধমকে উঠে বললো,’ছাড়ো আমার হাত। ছাড়ো বলছি। কাজ আছে আমার!’
-‘কি কাজ?’
-‘আছে অনেক কাজ। তুমি ছাড়ো।’
-‘ঠিক আছে যাও ছেড়ে দিলাম।’ ছেড়ে দিলো মাহমুদ। কফির মগটা খাটের পাশে টেবিলে রাখলো। মেহরিন বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলো। কিন্তু মাহমুদের কথা শুনে পুনরায় থামতে হলো। মাহমুদ ঘাড় চুলকাতে চুলকাতে খুব স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞাসা করলো,’তুমি কি ইদানীং এর ভেতরে খুব সিরিয়াসভাবে অসুস্থ ছিলে? মানে হস্পিটালে ভর্তি হতে হয়েছিলে এমন?’
-‘না। কেন বলোতো?’
-‘না মানে, তোমার ফোনে একটা ছবি দেখেছিলাম। হস্পিটালের ড্রেস পরা। মনে হলো অপারেশন থিয়েটারে ছিলে তুমি তাই।’
-‘তুমি আমার ফোন চেক করেছো?’
-‘চেক করবো কেন? এমনি দেখেছি।’
বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো মেহরিন। রাগে মুখ লাল করে বললো,’লজ্জা শরমের সাথে সাথে কি ভদ্রতাও গুলিয়ে খেয়ে ফেলেছো? জানো না কারো পারমিশন ছাড়া তাঁর পার্সোনাল জিনিসে হাত দিতে নেই?’
-‘ছিঃছিঃ মেহরিন! তোমার ভাষাজ্ঞান এত খারাপ কেন? ফোন কে ফোন বলতে শেখো, পার্সনাল জিনিস আবার কি? ছিহ্!’
থতমত খেয়ে গেলো মেহরিন। রাগে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো সে। মাহমুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষাস্বরূপ পাশের রুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই আটকে দিলো মাহমুদ। সে-ও পেছন পেছন উঠে এসেছে। শান্ত হেসে ফিসফিস করে বললো,’বললে না যে কবে অসুস্থ ছিলে?’
-‘ছিলাম কোন একদিন! তোমার কি? তুমি এসব জেনে কি করবে?’
-‘তোমার এখনো মনে হচ্ছে আমি জানি না?’
আচমকা হৃদপিন্ডটা ব্যাঙের মত লাফিয়ে উঠলো মেহরিনের। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। ক্ষনকালের জন্য কোন কথা বলতে পারলো না। মিনিট খানেক বাদে ভয়ার্ত চোখে বিড়বিড় করে বললো,’সোহাগ!’
-‘ইয়েস! সোহাগ! আমি অবশ্য প্রথমে শুনতে চাই নি। বললাম, মেহরিন তোমাকে বন্ধু ভেবে একটা কথা বলেছে তুমি সেটা আবার আমাকে বলে দিচ্ছো। এটা তোমার কেমন বন্ধুত্ব সোহাগ? কিন্তু সোহাগ বললো শুনলে নাকি আমারই লাভ হবে। এনাও তাই বললো। ভাবলাম লাভ যখন হবে তখন শুনেই দেখি। তাছাড়া জানোই তো এনার কথা আবার আমি ফেলতে পারি না। তাই শুনলাম!’, এটুকু বলে মুখটিপে হাসলো মাহমুদ। কিন্তু মেহরিন কাঁদছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ক্রমান্বয়ে সেটা আরো বাড়ছে। তাঁর এতদিনের আত্মত্যাগ, পরিশ্রম সব বৃথা! অভিশপ্ত, নিষ্ঠুর সত্যটা ঠিকই বেরিয়ে এসেছে! চোখের পানি বাধা মানলো না। নিজেকে শক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করলো। ঠোঁট কামড়ে কান্না গিলে নিতে চাইলো কিন্তু পারলো না। কান্নার বেগ দ্বিগুণ গতিতে বেড়ে গেলো। তাঁর কান্না দেখে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লো মাহমুদ। এর আগে কোনদিন মেহরিনকে এতটা অসহায় দেখে নি সে। হাত বাড়িয়ে দ্রুত কাছে টেনে নিতে চাইলো কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই ত্রস্তপায়ে দূরে সরে গেলো মেহরিন। চোখ মুছে গম্ভীর গলায় বললো,’উই ব্রোক আপ!’
কয়েক সেকেন্ড কোন কথা বলতে পারলো না মাহমুদ। পলকহীন ভাবে চেয়ে রইলো মেহরিনের বিষণ্ণ, ক্রন্দনরত মুখখানার দিকে। তারপর ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’আই নো উই ব্রোক আপ, বাট দ্যা রিজন ইজ নট ভ্যালিড টু মি!’
-‘দ্যাট ইজ নট মাই প্রবলেম। আই হ্যাভ নাথিং টু ডু উইথ ইট!’
এবারে বাধাসত্ত্বেও দুপা কাছে এগিয়ে গেলো মাহমুদ। মেহরিনের বাহু চেপে ধরে অত্যাধিক গম্ভীর গলায় বললো,’যতক্ষণ না পর্যন্ত তুমি আমাকে আমাদের ব্রেক আপের কোন প্রপার রিজন শো করতে পারছো ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এই ব্রেক আপ মানি না। আর মানবোও না।…তোমাকে আমি তিনদিন সময় দিচ্ছি এর মাঝে যদি তুমি আমাকে যে কোন একটা প্রপার রিজন, জাস্ট একটা, আ সিঙ্গেল ওয়ান, শো করতে আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে আর বিরক্ত করবো না। তোমার রাস্তায় তুমি,আমার রাস্তায় আমি। কথা শেষ!’
তারপর মেহরিন কিছু বলার আগে নিজে থেকেই বাধা দিয়ে বললো,’এখনই কিছু বলার দরকার নেই। সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে বলো! হাতে তিনদিন সময় আছে তোমার!’
কথা শেষ করে ফ্রিজ খুলে আইসক্রিম বের করলো সে। খেতে খেতে টিভি দেখতে বসে পড়লো। যেন কিছুই হয় নি। মেহরিন মূর্তির মতন শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। বুকের ভেতর তীব্র মাত্রার ঝড় বইছে তাঁর! সেই ঝড়ে আশেপাশে সবকিছু কেমন যেন তলিয়ে যাচ্ছে! দুবছর আগে হস্পিটাল রিপোর্টের লিখাগুলো জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠছে চোখের সামনে! কানের কাছে কেউ যেন ফিসফিস করে বলছে তাঁর নারীসত্তা ব্য্রর্থ! এই ভালোবাসায় স্বার্থক মিলন সম্ভব নয়! এর চেয়ে বিরহই ঢের আনন্দের! ফ্যালফ্যাল করে মাহমুদের দিকে চেয়ে রইলো সে! এতবড় একটা খবর শোনার পরেও মাহমুদ এমন শান্ত থাকতে পারছে কি করে? তাঁর কি সত্যিই কোন কষ্ট হচ্ছে না? নাকি মেহরিনকে দেখাতে চাইছে না সে?
তাঁকে শূন্য দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকতে দেখে মাহমুদ দুষ্টু হেসে বললো,’আইসক্রিম খাবে ডার্লিং? মাথা ঠান্ডা হবে। ঠান্ডা মাথায় উপযুক্ত কারণ বের করতে পারবে।’ দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো মেহরিন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ক্লান্ত গলায় বললো,’ভেরি সুন ইউ উইল গেট ইউর ভ্যালিড রিজন! আই প্রমিস!’ বিশেষ পাত্তা দিলো না মাহমুদ। মুচকি হেসে বললো,’লেট’স সি!’
.
.
.
চলবে