হৃদয় রেখেছি জমা পর্ব:১৫

0
530

#হৃদয়_রেখেছি_জমা
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৫

(মাঝেমাঝেই বিভিন্ন কারণে গল্প লেখার মুড নষ্ট হয়ে যায় আমার। তাই লিখালিখি ছেড়ে দেই। এবারের গ্যাপটা অবশ্য বেশ লম্বা ছিলো। তারজন্য আমি দুঃখিত। আসলে লিখতে ইচ্ছে না করলে তো আর জোর করে লেখা যায় না। তাই কষ্ট হলেও সবাই আশাকরি বুঝবেন।
সবার মেসেজের রিপ্লাই দেওয়া সম্ভব হয় নি। তারজন্যেও আমি দুঃখিত।
বিঃদ্রঃ যেহেতু অনেক দিন পর গল্প দিয়েছি তাই আগের দুটো পর্ব পড়ে নিলে আশা করি আপনারা গল্পটা বুঝতে পারবেন। গল্প শেষ করতে হয়ত আর দুইটা বা তিনটা পর্ব লাগতে পারে।)

রাতের খাবারের জন্য মেহরিনকে ডাকতে এসেছিলো মাহমুদ। মেহরিন ওয়াশরুমে। অপেক্ষা করতে করতে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো সে। শরীর ভীষণ টায়ার্ড। সারাদিন বড্ড ধকল গেছে। আচমকাই খাটের ওপর মেহরিনের ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠলো। পাশ ফিরতেই মেসেজের লিখাটা চোখে পড়লো তাঁর। ভিসা সংক্রান্ত কোন একটা মেসেজ। খানিকটা অবাক হলো সে। ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ ওপেন করলো ভেতরে কি লিখা আছে সেটা পড়ার জন্য।

কিন্তু পড়ার আগেই মেহরিন ছোঁ মেরে তাঁর হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো। নাকমুখ কুঁচকে বিরক্ত মুখে বললো,’এসব কি ধরনের অসভ্যতা! তুমি আবার আমার ফোনে হাত দিয়েছো?’

-‘কিসের ভিসা করাতে দিয়েছো তুমি?’

ফ্যাকাসে হয়ে গেলো মেহরিনের চেহারা। মাহমুদের অজান্তেই দেশ ছেড়ে পালানোর প্ল্যান করছে সে। এছাড়া আর কোন উপায় নেই। সব কিছু জানার পর, মাহমুদ তাঁকে ছাড়বে না এটা সে ভালো করেই জানে।
কিন্তু সেও হাল ছাড়ার পাত্রী নয়। তাঁর এতদিনের ত্যাগ, পরিশ্রম, সংযম কিছুতেই বিফলে যেতে দেবে না। দরকার হলে সবকিছু ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবে। তবুও সারাজীবন ব্যর্থতার কষ্ট বয়ে নিয়ে বেড়াতে পারবে না। আতংকিত চেহারা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বললো,’আমার নয়।’

-‘কার?’, ভ্রু কুঁচকালো মাহমুদ।

-‘আছে একজন।’

-‘সে কে?’

-‘তা জেনে তুমি কি করবে? তাছাড়া বললেও তুমি চিনবে না।’

চট করে তাঁর হাত থেকে আবার ফোনটা নিয়ে নিলো মাহমুদ। হাত মুড়িয়ে পেছনে লুকিয়ে বললো,’সত্যি করে বলো। তোমার মাথায় কি চলছে?’

-‘আমার ফোন দাও!’, আচমকাই রাগে জ্বলে উঠলো মেহরিন।

-‘আগে আমার প্রশ্নের জবাব।’

-‘তোমার কোন প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বাধ্য নই।’

-‘আমি চাইলেই তোমাকে বাধ্য করতে পারি?’

তাচ্ছিল্যভরে হাসলো মেহরিন। যদিও ভেতরে ভেতরে নার্ভাস সে। কিন্তু বুঝতে দিলো না। স্বভাবসুলভ গম্ভীর কন্ঠে বললো,’মেহরিন শারাফাতকে বাধ্য করবে এমন এজেন্ট এখনো এনএস আই তে তৈরীই হয় নি। ইউ নো দ্যাট? অ্যাম আই রাইট?’

-‘ইউ হ্যাভ টু আন্সার মি!’ অধৈর্য শোনালো মাহমুদের কন্ঠস্বর।

-‘আই ও’ন্ট!’

-‘প্লিজ!’, বাধ্য হয়ে গলা নরম করলো মাহমুদ। সে বুঝে গেছে মেহরিনকে খেপিয়ে লাভ নেই। উল্টো হিতে বিপরীত হবে। আজকে রাতে মেহরিনের সঙ্গে কোনরকম ঝগড়া করতে চায় না সে।

মেহরিন চুপ করে কিছুক্ষণ ভাবলো। তারপর খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো,’আমার মামাতো ভাইয়ের। হায়ার স্টাডিজ এর জন্য দেশের বাইরে যাবে সে। সেইজন্য ভিসা করাতে দিয়েছিলাম।’ কথাগুলো বলার সময় কোনরকম উৎকণ্ঠা প্রকাশ পেলো না তাঁর কণ্ঠে কিংবা চেহারায়।

ফোনটা আলতো করে তাঁর দিকে ছুঁড়ে মারলো মাহমুদ। ঠোঁট উলটে বললো,’ সামান্য একটা কথা নিয়ে এমন রহস্য করার কি আছে? প্রথমে বললেই তো হতো।’

-‘ও আমাকে পছন্দ করে। মাঝেমাঝে উল্টোপাল্টা মেসেজ পাঠায় তাই তোমাকে দেখাতে চাই নি।’, এবারেও খুব দ্রুত মিথ্যে বানিয়ে ফেললো মেহরিন।

মাহমুদ হাসলো। বলা বাহুল্য, মেহরিনের কথাগুলো বিশ্বাস করেছে সে। তাই ভেতরের লেখাগুলো পড়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করলো না। মুচকি হেসে বললো,’ইউ থিংক, আই উইল বি জেলাস? এখনো আমার ওপর এত ভরসা?’

মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো মেহরিন।মাহমুদ তাঁর কথা বিশ্বাস করেছে। এটাই অনেক! সোজাসুজি কোন জবাব না দিয়ে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে নিলো। তারপর খানিকটা নির্দেশের সুরেই বললো,’তুমি বেরোও রুম থেকে আমি ঘুমাবো।’

-‘ডিনার করবে না?’

-‘না।’

-‘কেন?’

-‘আমার খিদে নেই।’

-‘সারাদিন তো কিছু খাও নি। চলো খাবে চলো।’

-‘বললাম তো আমার খিদে নেই।’

কথা না বাড়িয়ে তাঁকে পাঁজকোলা করে তুলে নিলো মাহমুদ। একেবারে ডাইনিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিয়ে বললো,’আমার রাগ খাবারের ওপর দেখানোর প্রয়োজন নেই। আমি তোমার সামনেই আছি। ইচ্ছে হলে মেরে হাতপা ভেঙ্গে দিতে পারো।’

-‘তোমার ওপর রাগ করতে যাবো কেন? আমি তো বলেছি আমার খিদে নেই।’

-‘খামোখা কথা বাড়িয়ো না মেহরিন। আমি জানি তোমার খিদে পেয়েছে।’

আর কথা বাড়ালো না মেহরিন। বাস্তবিকই তাঁর খিদে পেয়েছে। মাহমুদ যাওয়ার পর থেকে একফোঁটা পানিও খায় নি। পেটে ছুঁচো দৌড়াচ্ছে। খাওয়া শেষ করে চুপচাপ রুমে চলে গেলো। মাহমুদও পেছন পেছন গেলো।
ভেতরে ঢোকার আগেই মেহরিন সতর্ক করে দিয়ে বললো,’আমি তোমার কথা রেখেছি। এবার তুমি বেরোও। আমি ঘুমাবো।’

-‘তো ঘুমাও না। আমি কি ধরে রেখেছি?’

-‘ঘুমাবো। আগে তুমি বেরোও!’, এবারে কড়া গলায় ধমক দিলো মেহরিন।

-‘আমার জামাকাপড় সব এই ঘরে। আমি চেইঞ্জ করবো।’, মুচকি হেসে জবাব দিলো মাহমুদ।

ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো মেহরিন। অতঃপর দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো। বিরক্তিতে কপালখানা কুঁচকে গেছে তাঁর। মাহমুদ সেদিকে তাকিয়ে আরেকবার হাসলো। লোকে প্রিয়তমার হাসিমুখ দেখে প্রেমে পড়ে। আর সে ডুবেছে প্রিয়তমার রাগ, অভিমান আর কঠোরমূর্তি দেখে। হায়রে কপাল! সত্যিই আশ্চর্য রকমের রাগ মেহরিনের! কি অদ্ভুত মায়া!

-‘হাসছো কেন?’

-‘মন চেয়েছে তাই হাসছি! তোমার সমস্যা?’

-‘হ্যাঁ সমস্যা। আমার অসহ্য লাগছে।’

-‘কিচ্ছু করার নেই। আমার বাসা, আমার ঘর, আমার মুখ! আমি হাসবো। কারো অসুবিধে হলে সে চোখ কান বন্ধ করে রাখতে পারে।’

-‘বাসার খোঁটা দিচ্ছো? আমি ইচ্ছে করে তোমার বাসায় এসেছি? তুমি জোর করে আমাকে নিয়ে এসেছো।’

-‘ইউ শুড থ্যাংক মি! আমি নিয়ে না এলে এতক্ষনে জেলে থাকতে।’

রাগে চুপ করে গেলো মেহরিন। চুপচাপ খাটের ওপর গিয়ে বসলো। আলমারি থেকে টিশার্ট আর ট্রাউজার বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো মাহমুদ।

সে ভেতরে ঢোকার পরই ব্যাগ থেকে ফোন বের করে চুপিচুপি সোহাগের নাম্বারে ডায়াল করলো মেহরিন। উদ্দেশ্য সায়েদের কোন খবর আছে কিনা সেটা জানা। দুবার রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ করলো সোহাগ। মেহরিনের প্রশ্ন শুনে বিস্মিত কন্ঠে বললো,’সায়েদ তো ধরা পড়েছে মেহরিন! মাহমুদ ভাই তোমাকে বলে নি?’

অবাক হলো মেহরিন! সায়েদ ধরা পড়েছে? মাহমুদ তাঁকে বললো না কেন?
ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই অসহ্য রাগে দাঁত কিড়মিড় করলো মেহরিন। ফোন রেখে চুপচাপ মাহমুদের বেরোনোর পর্যন্ত অপেক্ষা করলো।

ওয়াশরুমের দরজা খুলতেই মাহমুদের নাক বরাবর প্রচণ্ড জোরে ঘুষি পড়লো। নাকে হাত দিয়ে মেহরিনের রণচণ্ডী মূর্তির দিকে অবাক হয়ে চেয়ে রইলো সে।

-‘মিথ্যে কেন বলেছো শয়তান! সায়েদ ধরা পড়েছে। কি ভেবেছিলে আমি খবর পাবো না? মিথ্যেবাদী! অসভ্য, জংলি!’, বলতে বলতেই আবার ঘুষি মারলো মেহরিন।

নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে! তথাপি নাক ডলতে ডলতে শব্দ করে হাসলো মাহমুদ। পাশ কাটিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে দেখলো নাক ফুলে গেছে কিনা। ভয়ানক লাল হয়ে গেছে! হাতে রক্ত! এরপরেও মুখের হাসি বজায় রেখে বললো,’এত জোরে ঘুষি দিলে মরে যাবো মেহরিন।’

মেহরিন তাঁর কথায় পাত্তা না দিয়ে কাঠকাঠ গলায় বললো,’আমি এক্ষুনি বাসায় ফিরে যাবো।’

-‘আমার গাড়ি নষ্ট!’, রুমাল দিয়ে নাক মুছলো মাহমুদ।

-‘মিথ্যে কথা। চাবি দাও আমি পরীক্ষা করবো।’

-‘সত্যি বলছি। এই দেখো, আমার ভাঙ্গা নাক ছুঁয়ে বলছি!’

ফের ঘুষি মারতে চাইলো মেহরিন। তড়িৎগতিতে সামনে থেকে সরে গেলো মাহমুদ। চোখ বড়বভয়ার্ত কণ্ঠে বললো,’সত্যি সত্যি মেরে ফেলবে নাকি?’

-‘গাড়ির চাবি দাও।’

-‘বললাম তো গাড়ি নষ্ট।’

তীক্ষ্ণ শিকারির ন্যায় জ্বলজ্বল দৃষ্টিতে তাঁর দিকে চেয়ে রইলো মেহরিন। তাঁর কথাটা সে বিশ্বাস করতে পারছে না। মাহমুদ ফের হেসে ফেললো। বললো,’ভয় পাচ্ছো? কদিন বাদে তো আমার সঙ্গেই থাকতে হবে। এক বাসায়, এক কামরায় , একই খাটে। দুজনে পাশাপাশি!’

-‘ভয়? কিসের ভয়?’

-‘একসঙ্গে থাকার ভয়?’

-‘কনফিডেন্স থাকা ভালো মি.মাহমুদ সিদ্দিকি কিন্তু ওভারকনফিডেন্স নয়।’

-‘তাই নাকি?’

-‘ইয়েস। মেহরিন শারাফাত যখন একবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সে তোমার কাছে থাকবে না তারমানে থাকবে না।’

-‘আচ্ছা?’, মাহমুদ সকৌতুকে হাসলো।

-‘হ্যাঁ। এখনো সময় আছে নিজের ইমোশনকে কন্ট্রোল করে নাও।’

জবাবে মাহমুদ ধীরস্থির ঠান্ডা, শীতল কন্ঠে বললো,’তুমি একবার নয় একহাজারবার সিদ্ধান্ত নিলেও আমার কথাই শেষ কথা হবে। এই কথাটা আজকের তারিখ সহ খাতায় লিখে রাখো। আই প্রমিস ইউ দ্যাট!’

মুখ ভেংচি কাটলো মেহরিন। সেই সাথে ঠোঁট উল্টালো। তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো,’ফোর্স করার কথা ভাবছো নাকি?’

-‘ডিপেন্ডস অন সিচ্যুয়েশন!’

-‘সিচ্যুয়েশন?’

-‘ইয়েস! সিচ্যুয়েশন। তুমি যদি সেরকম কোন সিচ্যুয়েশন ক্রিয়েট করো তাহলে আমি বাধ্য হবো তোমাকে জোর করতে।’

মুখে হাসি বজায় রাখলেও মনে মনে মেহরিন ঠিকই বুঝলো এত সহজে তাঁকে যেতে দেবে না মাহমুদ। আপাতত এই নিয়ে তর্ক করতে মন চাইছে না। হাল ছেড়ে দিয়ে বললো,’ঠিক আছে এসব আলোচনা পরে হবে। এখন তুমি ঘর থেকে বেরোও।

-‘কেন থাকলে কি হয়?’

-‘মানে?’

-‘মানে এক বিছানায় তুমি আর আমি একটু ঘুমাতাম আরকি! কতদিন তোমাকে জড়িয়ে ধরি নি!’, মুখে দুষ্টু হাসি ফুটে উঠলো মাহমুদের।

-‘ফালতু কথা বাদ দাও।’

-‘ফালতু কথা কোথায় বললাম? যেটা সত্যি সেটাই তো বললাম।’

-‘আবার?’, চোখ পাকালো মেহরিন।

-‘ঠিক আছে আমি আর কিছু বলবো না। কিন্তু তুমি একটা ভালোবাসার কথা বলো।’

মেহরিন তাঁর ভাঙ্গা নাকের দিকে ইশারা করে বললো,’এখনো শিক্ষা হয় নি দেখছি।’

-‘এইজন্যই তো বলছি একটু ভালোবাসার কথা বলো। নইলে, এই যে আমার নাক ভেঙ্গে দিয়েছো এই ভেবে পরে তোমারই আফসোস হবে।’

-‘তুমি কি যাবে নাকি আমি বেরিয়ে যাবো?’

মেহরিন রেগে যাচ্ছে বুঝতে পেরে বিছানায় বালিশ নিয়ে বেরিয়ে গেলো মাহমুদ। যাওয়ার সময় মেহরিনকে চমকে দিয়ে ওর একেবারে কাছে এগিয়ে গিয়ে মুখে একটা ফুঁ দিয়ে বললো,’এক খাটে কেন? এক বিছানায়ও যদি তুমি আমাকে একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেও ঘুমাও তবুও তোমার কোন অসম্মান আমি করবো না মেহরিন। এইটুকু ভরসা আমার ওপর তুমি রাখতে পারো।’

সে চলে গেলে মেহরিন মূর্তি মতন সেখানে কিছুক্ষন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তাঁর বুকের ভেতরটা হু হু করছে। ডান হাতের মুঠোয় দিকে চোখ পড়তেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো বুক চিরে। হাতে রক্ত লেগে আছে! রাগে তখন বুঝতে না পারলে এখন বুঝতে পারছে ঘুষিটা বেশ জোরেই লেগেছে মাহমুদের।

রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো সে। পাশের রুমে উঁকি দিতেই দেখলো ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নাকে ওষুধ লাগাচ্ছে মাহমুদ।
ধীর পায়ে কাছে এগিয়ে গেলো। আয়নার ভেতর দিয়ে তাঁকে দেখতে পেয়ে হাসলো মাহমুদ। মুচকি হেসে বললো,’বলেছিলাম না পরে কষ্ট হবে? এখন হলো তো?’
মেহরিন জবাব দিলো না। অনুশোচনা হচ্ছে তাঁর। রাগটা মাহমুদের সঙ্গে একটু বেশিই করে সে। নিজের অজান্তেই মুখটা করুণ হয়ে গেলো তাঁর।

মাহমুদ ওর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে খুব স্বাভাবিকভাবেই বললো,’যাও, যাও শুয়ে পড়ো। এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুঃখ পাওয়ার মতন কোন ঘটনা ঘটে নি। তোমার সিমপ্যাথি পাওয়ার জন্য ইচ্ছে করে কথাগুলো বলেছিলাম।এখন তো দেখছি সত্যি সত্যি ইমোশোনাল হয়ে পড়েছো।’

মেহরিন অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো মাহমুদের শান্ত সুন্দর মুখটার দিকে। এত ভালোবাসার পরেও একটা মানুষকে কেবল কষ্টই দিয়ে যাচ্ছে সে। ভাবতেই নিজের রাগ হলো। ক্ষণকালের জন্য আত্মবিস্মৃত হলো সে। এগিয়ে গিয়ে মাহমুদের পায়ের পাতার ওপর ভর করে দাঁড়ালো। দুহাতে মাহমুদের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,’আমি তোমার ভালোবাসা চাই!’

মাহমুদ হাতের ওষুধের ক্রিমটা বেসিনের ওপর রেখে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো মেহরিনকে। কপালে আলতো চুমু খেয়ে কোলে তুলে নিলো তাঁকে। মেহরিন আচ্ছন্নের মত তাঁর গলা জড়িয়ে ধরে চুপচাপ বুকের সঙ্গে মিশে রইলো।

মেহরিনকে নিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে পাশে রুমে ঢুকলো মাহমুদ। বিছানায় ওকে শুইয়ে দিলে গায়ের ওপর কাথা টেনে দিলো। তারপর মিষ্টি হেসে বললো,’গুড নাইট!’
বাতি নিভিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলো সে। মেহরিন বালিশে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেললো। নিজের দুর্বলতা মাহমুদের কাছে প্রকাশ করে ফেলেছে সে। একবারও ভাবে নি এর পরিনতি কি হতে পারে! রাগে দুঃখে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো আজকের পর থেকে আর মাহমুদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ রাখবে না সে।
.

.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here