#১৬_পৃষ্ঠায়
পর্ব – ১০ #Aishitemasu
লেখিকা – Zaira Insaan
মুহূর্তের মধ্যে মেজাজ বিগড়ে যায় এনোনের সে বাঁকা হেঁসে চট করে সেই হাতটি ধরে বলল,, আমি কি সেটা তোমাকে ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিব আজ।” বলেই নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে নিনির মুখের কাছে। নিনি হচকচিয়ে ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়। এনোন তাকালো তার দিকে তাকে ভয় পেতে দেখে বাঁকা হেঁসে তার কানে কাছে গিয়ে আসতে করে বলে,, Aishitemasu..!” নিনি কপাল কুঁচকে ফেলল কথাটি শুনেই আসতে আসতে চোখ খুলল সে দেখল এনোন দূরে সরে দাঁড়ায় আছে মুখোভাব স্বাভাবিক। নিনি চোখ মুখ কুঁচকে বলে,, এহ্যা? কি বললেন কিছুই বুঝেনি।” এনোন শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলল,, বুঝতে হবে না, শুধু এতটুকু জেনে রাখো আমার সাথে ভালোভাবেই থাকো নাহলে ঠিক হবে না।” বলে সে চলে যেতে নিলে নিনি পেছন থেকে বলল,, কি করবেন? ।” এনোন ফিরে বলল,, অশুভ কিছু ঘটায় ফেলব।” বলে সে এমন জায়গায় তাকালো সাথে সাথে নিনি অপ্রস্তুত হয়ে শাড়ির আঁচল শক্ত করে চেপে ধরে চোখ নামিয়ে নেয়। এনোন সেখান থেকে চলে আসতেই নিনি বিড়বিড় করে বলে,, অসভ্য গরু রাক্ষস কোথাকার!”
_____________________
সকাল সকাল কলিং বেল বেজে উঠতেই নিনি এসে দরজা খুলে দেয়। সামনে সিনান কে দেখে চমকে উঠে সে সিনান হাসিমুখে বলে,, ওমা ভিতরে আসতে দিবা না?” নিনি দ্রুত মাথা নেড়ে সাইড হয়ে দাঁড়ালো বলল,, এটা তো তোমারই ঘর….।” পুরো কথা শেষ হতে না দিয়ে সিনান তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,, উঁহু, এটা এখন আমার ঘর না তোমার ঘর, আমি তো শুধু মেহমান বুঝলা?” বলে তার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হেসে দেয় সিনান। সিনান ফ্রেশ হয়ে আসতেই দুজনে কফি নিয়ে সোফায় বসে গল্প করতে লাগল। গল্পের এক পর্যায়ে সিনান জিজ্ঞেস করে বসে,, আচ্ছা, অর্সা মাসি তোমার হয় কে?”
নিনি হাসিমুখে জবাব দিল,, আমার ও মাসি হয়।”
সিনান আবারো প্রশ্ন করল,, আপন?”
নিনি না সূচক মাথা নেড়ে বলল,, না না, আব্বার কে যেন লাগে তো আমি মাসি ডাকি আরকি।”
সিনান শুধু ওহ্ বলে আর কিছু বলল না। নিনি জিজ্ঞেস করল এবার,, তোমাদের আপন মাসি হয়?”
সিনান মুখ ব্যঙ্গ করে বলে,, ধূর না, আমাদের পাশের বাসার আন্টি আছে না? সেটার খালাতো বোন হয় মা’র সাথে পরিচিত হবার পরেই আমাদের সাথে বেশি থাকে, আর যেখানে সেখানে নাক গলায়!” শেষ কথাটি বেশ বিরক্ত হয়ে বলে সিনান। নিনি না বুঝে বলল,, মানে?”
সিনান বলে,, ভাইয়া আর আমার লাইফে ইন্টারফেইর করে আরকি, কিন্তু ভাইয়া পাত্তা দেয় না উনাকে, ভাইয়ার নাকি বিরক্ত লাগে ওই মহিলাকে।” নিনি স্লান মুখে বলল,, ওহ আচ্ছা।”
সিনান আবারো প্রশ্ন করল,, আচ্ছা তুমি উনাকে এতো ভয় পাও কেন? আমি দেখেছি অনেক বার।”
প্রশ্নটি শুনেই হচকচিয়ে যায় নিনি দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে গেল কোনমতে দম নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,, কই নাতো!”
সিনান ব্যাপারটি বুঝলো না কফি রেখে তার দিকে ভালোভাবে ফিরে বলে,, কি হলো? তোমার স্বর এতো কাঁপছে কেন?” নিনি হাসার চেষ্টা করে বলল,, না না তোমার মনে হচ্ছে যে, কফি খাও?”
বলে সে তার কাপটি শক্ত করে দুহাত দিয়ে চেপে ধরল। সিনান আন্দাজ করতে পেরে বলে,, তোমাকে মারতো?” নিনি চমকে উঠে গা কাঁপতে লাগল তার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,, কিসব বলছো তুমি! মারতে যাবে কেন?” সিনান তার হাত থেকে কাপটি নিতেই দেখে তার হাত বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গেছে ওর দিকে তাকাতেই দেখল তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। ওকে একদম নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,, কি হয়েছে আমাকে বলো…এতো ভয় পাওয়ার কি আছে? প্লিজ বলো আমাকে নিনি!”
নিনি চোখ নামিয়ে রেখে কিছুক্ষণ সময় নিল তারপর কাঁদো কাঁদো মুখে ও স্বরে বলল,, উনি আমাকে মারেন।” বলে সে হু হু করে কেঁদে ওঠে নিনি। চরম পর্যায়ে অবাক হলো সিনান সে বলল,, কেন মারতো?” নিনি ভেজা ভেজা কন্ঠে বলে,, উনার রাগ উঠলেই আমাকে মারতো, আমি অনেক বার আব্বা কেও বলেছিলাম কিন্তু সে আমাকে কাউকে জানাতে মানা করলো।” সিনান অন্য দিকে তাকিয়ে কটাক্ষ চোখে বলল,, ভাইয়া কে বলতে হবে আমার।” পিলে চমকালো নিনি চোখে মুখে ভয়ের আভা ফুটে উঠল সে ঝপ করে সিনানের দুহাত ধরে বলল,, প্লিজ এসব উনাকে জানিও না, এসব তো অতীত আমি কি এখন মাসির সাথে থাকি নাকি প্লিজ এসব উনাকে জানিও না প্লিজ।” সিনান হাত ছাড়িয়ে বলল,, তুমি কি পাগল নিনি? এসব যদি ভাই কে না জানায় তাহলে অর্সা মাসি আরও বেশি সুযোগ পেয়ে যাবেন, আর তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেন ভাই আছে আমি আছি সবাই আছে তাহলে এত ভয় পাচ্ছো কেন?” নিনি চোখ পিটপিট করতে করতে বলল,, ভেজাল হবে অনেক ভেজাল হবে আর আমি ভেজাল সৃষ্টি করতে চাই না আর সিনান প্লিজ এসব উনাকে জানানোর দরকার নেই এসব আমার ব্যাপার।” সিনান বলল,, কোনটা তোমার ব্যাপার? হ্যা? অর্সা মাসির টা? তুমি যদি নিজেই পদক্ষেপ নিতে পারো তাহলে আমি ভাইয়া কে জানাব না কিন্তু আমি জানি তুমি কিছুই করবা না সো ভাইয়া কে সবকিছুই জানানোর লাগবে।” বলে সে রুমের দিকে পা বাড়ায় নিনি দু-তিন বার সিনান বলে বলে ডাকলেও সিনান না শুনেই চলে যায়। নিনি হতাশ হয়ে দুহাতে মাথা চেপে ধরে ঝুঁকে বসে বিড়বিড় করে বলে,, ভুল ছিল আমার জানানোয় উচিত হয়নি।”
________________________
বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিনি তাকিয়ে আছে সেই অসিতবর্ণ আকাশের দিকে। আজ আকাশ ও মন দুটোই বেশ হতাশ পূর্ণ। সন্ধ্যা নেমে এসেছে সেই কবেই। এখন হয়ত বৃষ্টিও নামবে এক দল মেঘ জট পেঁকে আছে আকাশে। নিনি চোখ দিয়ে অশ্রু জল গড়িয়ে পড়তেই সে তা মুছে রুমে প্রবেশ করল। দরজায় চোখ পড়তেই থমকালো সে, এনোন! এনোনের মুখশ্রীতে রাগ প্রকাশ পাচ্ছে। নিনি ধীর পায়ে এগিয়ে এসে আলমারির পাশে দাঁড়ালো আলমারি খুলতেই এনোন এসে আলমারির দরজা বন্ধ করে তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে অতি গম্ভীর স্বরে বলে,, মারের দাগ দেখাও।” পিলে চমকালো নিনি এদিক ওদিক তাকিয়ে না জানার ভান ধরে বলল,, কিসের দাগ? কোন দাগ টাগ নেই।”
এনোন শান্ত গলায় বলল,, সিনান বলেছে সব আমাকে।” তার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই বলা কথা এনোনের। এক পলক তাকালো নিনি আবারো চোখ ফিরিয়ে নিলো সে। এনোন গম্ভীর গলায় বলে,, শরীরে হা দিতে বাধ্য করিও না।” নিনি চমকে চোখ উঠিয়ে তাকায় তার দিকে। নিনির মধ্যে কোন উন্নতি না দেখে এনোন এবার বলল,, আমি নিজেই তোমার শাড়ি খুলে খুঁজে বের করব তখন তুমি আমাকে দোষ দিতে পারবা না।” কথাটি কর্ণগোচর হতেই শিউরে কেঁপে উঠলো নিনা তার দিকে তাকাতেই দেখে সে সিরিয়াস, সিরিয়াস হয়ে বলেছিল কথাটি। এনোন তার দিকে হাত বাড়াতেই নিনি ছট করে সেই হাতটি সরিয়ে আমতা আমতা করে বলল,, আ..আমি দেখাচ্ছি।” বলে সে ফিরলো তার দিকে পিঠ মুখ করে। নিনির কেমন কেমন লাগলেও সে চোখ বুজে পিঠ থেকে চুল সরিয়ে নিল ফিতা খুলতে যাওয়ার আগেই এনোন আস্তে করে টান মেরে খুলল কেঁপে উঠলো নিনি। ফর্সা পিঠে বেতের মারে কালো লালচে দাগ বসে গেল পিঠে এনোন চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। নিনি ধীরে ধীরে ফিরলো ওর দিকে তাকালো পুরো মুখশ্রী রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে। এনোন বলল,, আর?” নিনি হালকা মাথা নেড়ে এক কাঁধের কাছ থেকে ব্লাউজ হালকা নামালো। একই দাগ তবে এ দাগে অনেকটা কেটে গেছে এক বাহু। নিনি ব্লাউজ উঠালো। এনোন গর্জ কন্ঠে বলল,, থানায় কেস করোনি কেন ওই মহিলাটির উপর?
তোমার কে লাগে? মা? খালা? ফুপি?” নিনি না সূচক মাথা নাড়ল তবে মাথা নুয়ে। এনোন আবারো বলল,, তাহলে তোমাকে কোন সাহসে মারলো? এটা কে যতক্ষণ না পর্যন্ত জেলের ভাত খাওয়াবো না ততক্ষণ পর্যন্ত আমার শান্তি হবে না।” কথাগুলো বলে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে নিনি দুহাতে তার হাত ধরে বলল,, প্লিজ কিছু করবেন না, এসব তো অতীত… আবার অতীতে যাওয়ার দরকার কি? প্লিজ আপনি কিছু করবেন না নাহয় অনর্থক ঝামেলা হবে।” কথাগুলো শুনে ঘৃণা লাগতে লাগলো এনোনের সে বলল,, কথাগুলো বলার সময় একবারও চিন্তা করছো যে কাকে কি বলছো? তোমার মনে হয় আমি ওই মহিলাকে ছাড় দিব? তুমি সহ্য বা কেন করছো? তোমার আব্বা আম্মা কিছু করে নাই? মুখ বুজে ছিল?” প্রশ্ন করতেই বিষাদে চোখ নামালো নিনি বলল,, আব্বা জানতো আম্মা কে জানাতে মানা করেছিল।” এনোনের আর কিছু বলার বাকি রইল না। কতটা জঘন্য হলেই মানুষ এমন করতে পারে! হাত মুষ্টিবদ্ধ করল এনোন ভেবে নিল অর্সার সাথে সাথে সৌরভ কেও জেলে পাঠাবে সে। নিনি আবারো বলল,, প্লিজ এ.. না কিছু করবেন না।” নিনি যে তার নাম নিতে চেয়েও থেমে গেল তা বুঝলো এনোন। সে কাছে এসে তার গালে দুহাত রেখে শান্ত গলায় বলল,, ভয় পেয়েও না আমি আছি তো তোমার সাথে।” কথাটি শুনে বুক ধক করে উঠল নিনির অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সে এনোনের দিকে এনোন স্মিত হাসলো।
(চলবে…)
[ এতদিন না দেওয়ার জন্য দুঃখিত। যারা এনোন ও নিনির মধ্যে মিল তাড়াতাড়ি দেখতে চাইছেন তাদের জন্য এক বালতি….🥱 । মিল করিয়ে দ্রুত ইতি টানবো গল্পের। আর হ্যা পর্ব কেমন হয়েছে জানাবেন। ]