১৬_পৃষ্ঠায় পর্ব – ১৫ নতুন_শুরু (বাকি অংশ)

#১৬_পৃষ্ঠায়
পর্ব – ১৫ নতুন_শুরু (বাকি অংশ)
লেখিকা – Zaira Insaan

হিম হাওয়ায় নিবদ্ধ পরিবেশ। তপ্ত রোদ কাঁচের গ্লাস ভেদ করে মুখে পড়ছে নিনির। বাহিরে প্রচন্ড গরম কিন্তু তা অনুভব করতে পারছে না সে। গাড়ির এসির বাতাসে ঠান্ডা হয়ে আছে। গালে হাত রেখে বাহিরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আছে। কয়েক মাস কেটে গেল। এই কয়েক মাসে অনেক কিছুই পরিবর্তন ঘটেছে। সে সাথে নিজেকেও অনেক পরিবর্তন করেছে এক পুরুষের কারণে। আজ তার অদ্ভুত রকমের ইচ্ছা জাগছে। এই রৌদ্রজ্বল রক্তিম পরিবেশে বের হতে। গরম হাওয়া নিজের গায়ে মাখতে। যদি এ ইচ্ছা কেউ শুনলে নির্ঘাত তাকে পাগল বলবে। অনেকেই দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে এই গরম থেকে বাঁচতে।

তাকে এমন নিরলস ভাবলেশহীন হয়ে থাকতে দেখে তার পাশে বসে ড্রাইভ করতে করতে এনোন বলে উঠে,, কি হয়েছে তোমার?”

পিলক চমকালো নিনি। আনমনে হয়ে থাকতে হঠাৎ এক ধ্বনি কানে বেজে উঠতেই চমকে উঠে, বলে,,, “কিছু না।”

“মন খারাপ?” সামনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই প্রশ্ন করল এনোন।

“কিছুটা”

সাথে সাথে গাড়ি থামায় এনোন। হালকা ঝুঁকে হচকচিয়ে গেল নিনি। আঁটসাঁট ‌কন্ঠে বলল,,

“কিসের জন্য মন খারাপ? কি হয়েছে?”

ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল নিনি তারপর ধীরস্তে কন্ঠে বলল,,

“এমনেই কিছুই ভালো লাগছে না।”

“হঠাৎ!” ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকে ফেলল এনোন।

“বাসায় যাবো” মুখ গোমরা রেখে বলল। এনোন তার দিকে এক পলক তাকিয়ে গাড়ি র্স্টাট দিল। তার হঠাৎ এমন মুড দেখে চিন্তিত হতে লাগল এনোনের।

বাসার সামনে গাড়ি থামাতেই নিনি নেমে সোজা চলে গেল। তার ব্যবহার বুঝতে পারলো না এনোন শুধু থ মেরে তাকিয়ে রইল।
__________

এনোন রুমে আসতেই দেখে নিনি বিছানার এক কোণায় বসে বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে। এনোন পাশে গিয়ে বসলো। নিনি নিজেকে আরো গুটিয়ে নিল। গোপনে ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে এনোন বলল,,

“কি হয়েছে এমন হয়ে আছো কেন?”

“বিয়ের কই মাস হচ্ছে?” মুখে গাম্ভীর্য ভাব রেখে প্রশ্ন করল নিনি।

“নয় মাস চলছে” কপাল কুঁচকে বলল সে।

“হুমম, কিন্তু এই নয় মাসে আপনি আমাকে ভালোভাবে চিনেন নি।” আড়চোখে তাকালো নিনি।
বিষয়টি বুঝলো না এনোন। চেহারা বানিয়ে ফেলল সে। তর্জনি দিয়ে কপাল ঘষে বলল,,

“মানে?”

“আজ কই তারিখ?”

“সাত তারিখ!” ক্যালেন্ডার দিকে এক পলক দেখে বলল এনোন।

“কালকে কি?” এক ভ্রু উঁচু করে বলল নিনি।

“কি?” না জেনে বলল এনোন।
আফসোসের দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো নিনি তারপর বিড়বিড় করে,, পুরুষ জাতি বোধহয় এমনি হয়!”

“বলো! কালকে কি?” আবারো প্রশ্ন করতেই নিনি রক্তিম চোখে তাকিয়ে বলে,,

“মনে যেহেতু নেই তাহলে মনে করিয়ে লাভ কি! সরেন সামনের থেকে” বলে তাকে সরিয়ে চলে গেল। এনোন এখনো বুঝতে পারলো না নিনি এতো ছ্যাত করে উঠলো কেন?
__________

রাতে এক সাথে খেতে বসতেই নিনি বলল,,

“কালকে আমি কলেজের ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে বের হবো।”

“কেন?” খেতে খেতে প্রশ্ন করল এনোন। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নিনি হতাশার সুর তুলে বলল,,

“আপনার হয়ত মনে নেই কিন্তু আমার বন্ধুর মহলে সবারই মনে আছে তাই কালকের সারাটি দিন এদের সাথেই কাঁটাবো।” বলে উঠে যেতেই এনোন তার হাত ধরে নিল বলল,,

“খাবার খেয়ে নাও”

“খাওয়ার ইচ্ছা অনেক আগেই মরে গেছে তাই আমার হাত ছাড়ুন” বলে হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলো নিনি।

“এ সময়ে তোমার আরো খাওয়া উচিত, সো কথা না বাড়িয়ে খেতে বসো।” বলে তাকে টেনে বসালো। তারপর মুখের কাছে খাবার তুলে ধরলো। নিনি আড়চোখে তাকালো একবার তারপর শত অভিমান ভুলে তারই হাত থেকে খাবার টুকু খেয়ে নিল।
খাওয়ায় দিতে দিতে এনোন বলল,,

“কালকে কোথাও যেতে হবে না কারোর সাথে, তোমাকে আমি পারমিশন দিচ্ছি না।”

চোখ অবাকে বড়বড় করলো নিনি। সাথে সাথে রাগের ভিড় জমলো। বলল,,

“কেন?”

“রেস্ট নিতে হবে তোমার”

“কোন রেস্ট ফেস্ট লাগবে না আমার, আমি কালকেই বাহিরে যাবো ওদের সাথে নাহয় আপনার সাথে” বলে জিদে ঠোঁট চেপে ধরে বুকে দুহাত গুজে দিল। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে এনোন তারপর বলল,,

“কালকে তোমাকে আমি ঘুরতে নিয়ে যাবো ওদের সাথে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, ওদের বিশ্বাস করে রিস্ক নিতে চাইনা আমি”

খুশিতে গদগদ হয়ে গেল নিনি। খিলখিল করে হেসে বলল,, সত্যি?”

“হুম”

খিলখিল করে হাসতে লাগলো নিনি। নিষ্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল এনোন। ঠোঁটের কোণায় তারও হাসি ফুটে উঠল।
___________

ঘুমাতে এসে ঝপ করে জড়িয়ে ধরল নিনি বুকে মুখ গুঁজে দিল সে। এনোন তার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বলল,,

“উনিশে পা রাখতে চলেছেন আপনি…কি ভাবছিলেন আমার মনে নেই?”

চরম অবাক হলো নিনি ঠোঁটে কিঞ্চিৎ দূরত্ব সৃষ্টি হলো। তাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে টুপ করে চুমু বসিয়ে দিল তার গালে। দ্রুত জিভ ভিজিয়ে ঠোঁট জোড়া বন্ধ করলো সে তারপর আমতা আমতা আমতা করে বলল,,

“আপনার মনে আছে?”

“একটা মাত্র বউ মনে থাকবে না কেন?”

রেগে ফুঁসে গেল নিনি বলল,,

“এক মাত্র বউ মানে?” হালকা শব্দ তুলে হেঁসে দিল এনোন। তার অধর নগলে গাঢ় স্পর্শ করলো সে। বলল,,

“এতো রেগে যাও কেন? বেশি রাগলে আমাদের অনাগত বাচ্চাও এমন হবে সো বি কুল!”

এক ঝাঁক লজ্জা পেয়ে বসল নিনির। ফুলা গাল গুলো রক্তিমে ছেয়ে গেল। তার বুকে মুখ গুজে বলল,, ঘুমাতে দেন তো!”
মুচকি হাসি দিলো এনোন।
___________

ঘুমের ঘোরে খালি কিছু অনুভব করতে পারলো নিনি। চোখ খুলতে পারছে না তাও কিছু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে চোখ খুলল সে। চারপাশ আঁধারের গহীনে ডুবে আছে। পাশ ফিরলো সে এনোন নেই! হড়বড়িয়ে উঠে বসলো সে। দু এক বার ডাক দিল,, “আপনি কই?”
কিন্তু কোন সারা শব্দ পাওয়া গেল না। রুমটাও অদ্ভুত রকমের অন্ধকার হয়ে আছে। তার উপর এনোন ও নেই। ঘামতে লাগলো সে। পায়ের কাছ থেকে চাদর সরিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো হাতরিয়ে মোবাইল খোঁজার ও চেষ্টা করলো কিন্তু পেল না। এই অন্ধকার জগতে আসতে আসতে হেঁটে সামনে পা বাড়াতে লাগলো নিনি। রুম থেকে বেরিয়ে আসলো সে হল রুম পুরো টা অন্ধকার হয়ে আছে। রান্নাঘরের বাতি সবসময় জ্বালানো থাকে আজ সেটাও বন্ধ হয়ে আছে।
নিনি কিছু একটা আঁচ করতে পারলো তারপর হালকা হেঁসে বলল,, আপনি আমাকে সারপ্রাইজ দিচ্ছেন তাই না?”
বিপরীতে কোন উত্তর আসলো না। এবার এক ধরনের ভয় কাজ করতে লাগলো তার। ঘেমে মেখে চুপসে আছে সে।
আবারো গলা ঝেড়ে শুকনো ঢোক গিলে বলল,, আপনি আমাকে ভয় লাগালোর চেষ্টা করছেন? কোথায় আপনি? দেখেন এবার আমার প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে প্লিজ সামনে আসুন!”
পরিবেশ নিস্তব্ধ হয়ে আছে। শুধু তারই আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেও তার ভয় কাজ করছে কিনা কি হয়ে যায়! এনোন থাকলে সাহস হতো। তার মনে হচ্ছে এনোন পুরো ঘরের লাইট অফ করে তাকে ভয় দিয়ে পরে সারপ্রাইজ দিবে। দু এক শুকনো ঢোক গিললো সে। এখন আর সেটা মনে হচ্ছে না এনোন নামক এক ব্যাক্তি ঘরে আছে বলেও তার মনে হচ্ছে না। নিজের হৃৎপিণ্ডের স্পষ্ট শব্দ শুনতে পাচ্ছে। শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত ও ঘন হয়ে আসলো। বাজে বাজে খেয়াল আসতে লাগলো তার মনে।
চোখের কোণার থেকে অশ্রুজল গড়িয়ে পড়তে লাগল কান্না ভেজা ভাঙা কন্ঠে বলল,,
“আপনি যদি এখনি না আসেন তাহলে আমি অন্ধকারে সিঁড়ি থেকে নেমে নিজের ক্ষতি করে ফেলবো”

(চলবে…)

[ গতকাল না দেওয়ার জন্য দুঃখিত, আসলে আমি গল্পের বাকি অংশ ভুলে গিয়েছিলাম মনে করতে পারছিলাম না তাই দিতে পারিনি।
গল্প প্রায় শেষের দিকে চলে আসছে রেসপন্স না পেলে দুঃখ জনক ভাবে শেষ করবো, ইয়া বড় বড় করে রেসপন্স করেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here