#মুহূর্তে
পর্ব-২০
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
মৃণা তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছিল। তীর্থকে সজাগ দেখে থমকে যায়। গতরাতের কথা মনে পড়ে তার। তীর্থ তার হাত ধরে তাকে কাছে টেনে নেয়, তার গালে স্পর্শ করে, তার কাছে আসে। হয়তো গতকাল তীর্থ তাকে চুমুও খেত। একটি সুন্দর মুহূর্ত কাটতো দুইজনের মাঝে। কিন্তু এর পূর্বেই তীর্থ হেলে পড়ে যায় তার উপর। বেহুঁশ হয়ে যায়। মৃণা যেমন তেমন করে তীর্থকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার পাশে বসে কিছুক্ষণ দেখতে থাকে তীর্থকে। তারপর ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সারারাত কাটায়। সকালে মেঘের বুক থেকে উঁকি দেওয়া সূর্যের দর্শনও করে। এর মাঝেও অনেকবার সে তীর্থকে দেখে যায়। আচ্ছা তীর্থের কি তার এই যত্নের কথা মনে থাকবে?
তীর্থ এখন সজাগ হওয়ায় ভীষণ নিরাশ হয় মৃণা। সকাল সকাল যেয়ে সে তার ব্যাগ থেকে শাড়ি এবং কিছু সাজগোজের জিনিস নিয়ে এসেছিলো। রূপার সাথে রাগ করে সে এই রুমেই সব নিয়ে এলো। ভেবেছিলো সকাল সকাল এমনভাবে তীর্থের সামনে প্রস্তুত হবে যে বাকি সব মেয়েদের কথা তার মাথা থেকে চলে যাবে। তার সামনে কবিতা অথবা অন্যকোনো মেয়ের চিন্তাও আসবে না তীর্থের মাথায়। কিন্তু আফসোস তার সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। এর থেকে ভালো নিজের রুম থেকেই সেজে আসতো।
তীর্থের চোখেমুখে ভয়ের ছাপ। দূর থেকেই তার চোখেমুখে ভয়ে ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তীর্থ অশান্ত হয়ে দৌড়ে আসে তার কাছে। এক বাহুতে হাত রেখে অশান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে, “মৃণা… মৃণা আমি গত…গতকাল নেশায় ছিলাম। মাথা কাজ করছিলো না। তুমি বলোতো… বলো প্লিজ গতরাতে কোনো অঘটন ঘটে নি তো?”
“অঘটন!” অবাক হয়ে বলে মৃণা। তীর্থ ঠিক কি বুঝাতে চাইলো সে মোটেও বুঝে না।
তীর্থ আমতা-আমতা করে জিজ্ঞেস করে, “মানে আমি তোমার সাথে এমন কিছু করি নি তো যা করা উচিত হয় নি?”
“আপনি নেশায় আমাকে আপনার প্রাক্তন ভেবে অনেক কথা বলেছিলেন। তারপর… ” মৃণা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। সে লজ্জামাখা গলায় বলে, “কাছেও এসেছিলেন।”
“আমি কী তোমার সাথে কোনো জোর-জবরদস্তি করেছি?” আতঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞেস করে তীর্থ। কাছে আসার কথা শুনে তার বুকের ভেতর ধুকপুক শুরু হয়।
মৃণা এতক্ষণে বুঝতে পারে তীর্থের ইশারা কোন দিকে। মানে কি তীর্থের মনে নেই যে সে মৃণার কাছে আসতেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো? তীর্থের চিন্তা ভেবে মৃণার নিজেরই লজ্জায় ডুবে যেতে মন চাইছে।
মৃণা দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলে, “না আপনি কোনোপ্রকার জোর করেন নি।”
তীর্থের জানে যেন জান এলো। সে তার চুলটা আঁকড়ে ধরে গভীর নিশ্বাস ফেলে। এতক্ষণে সে শান্তির নিশ্বাস ফেলল। বুকের বাম পাশে হাত রেখে বলল, “ভয়ে এখন আমার জান চলে যেত। কিন্তু তুমি এখানে কি করছ?”
মৃণা কিছু বলতে যাবে এর পূর্বেই আবারও ফোন বেজে উঠে তীর্থের। সে বলে, “একমিনিট।”
ফোনটা ধরে তীর্থ। ফোনের ওপাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠ ভেসে এলো, “এতক্ষণ লাগে কল ধরতে। গতকাল থেকে তোমাকে পাচ্ছিনা, আমার তো ভয় লাগছিলো।”
“আমি ঠিক আছি, কবিতা। ভয় পাবার কিছু নেই।”
“তোমার কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন?”
তীর্থ আড়চোখে তাকায় মৃণার দিকে। সে বলল, “বিশেষ কিছু না। গতকাল ধ্রুব ওদের সাথে একটু পার্টি করেছিলাম। তাই একটু মাথা ব্যাথা।”
কবিতা শাসানি গলায় বলে, “ওয়েট, পার্টি করেছ মানে কী তোমরা মদ খেয়েছ? ধ্রুব ভাইয়া আবার তোমাকে জোর করিয়ে মদ খাইয়েছে তাই না? আমি প্রথমে ধ্রুব ভাইয়ার খবর নিব। তারপর তোমার। তুমি আমার মানা করা সত্ত্বেও কীভাবে… ” তীর্থ কবিতার কথা কেটে ছোট একটি মিথ্যা বলে, “আহা, বাবা এমন কিছু না এমনিতেই বারবিকিউ পার্টি করলাম।”
“এত টাকা খচর করে সাজেকে গিয়েছ তোমরা বারবিকিউ পার্টি করতে? আমাদের ছাদে কী ঠাডা পরসে?”
এইবার তীর্থ বিরক্ত হয়। সে বিরক্তির সুরে বলে, “তোমার কী সব কিছুতেই সমস্যা? একটা সাইড নেও তো। আচ্ছা শুনো, পরে কল দিচ্ছি তোমাকে। আপাতত রাখি।”
“এই দাঁড়াও, আগে বলো না কবে আসবে তুমি? খুব মনে পড়ছে তোমাকে।”
“এইখানে আসলাম একদিনও তো হলো না।”
“একদিন? একদিনের বেশি হলো আমাকে ছেড়ে গেল তুমি, জানো প্রায় তেত্রিশ ঘন্টা হলো আমার থেকে দূরে গিয়েছিলে তুমি।”
মুহূর্তে তীর্থের সব খারাপ লাগাটা হাওয়ার সাথে মিশে গেল। তার ঠোঁটের কোণে এঁকে এলো একগাল হাসি। সে বলল, “এতটা সময় গুনেছ তুমি?”
“তো কি? আগে তো তোমার প্রথম প্রেমিকা অর্থাৎ তোমার কাজের জন্য সারাদিন শেষে রাতে তোমার একটু দেখা পেতাম, ধ্রুব ভাইয়া তারও বারোটা বাজিয়ে দিলো। এই ধ্রুব ভাইয়া আমার ভাই থেকে বেশি সতিনগিরি করছে। তাহিরা আপুকে জানাতে হবে বুঝলে?” বলে কবিতায় নিজেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। সে আবারও বলে, “তোমার ছেলে দোষারোপ করলো যে তুমি ওর সাথে খেলার সময় পাও না কিন্তু ওর ধ্রুব মামার সাথে ঘুরতে গিয়েছ। বলেছে এই সাপ্তাহে আসার পর শুধু তার সাথে খেলা লাগবে।”
“আচ্ছা।”
“কী আচ্ছা? তাহলে আমার সাথে প্রেম করবে কখন? কী আনরোমেন্টিক বর বাছাই করলাম ভাই!”
“আমি তোমাকে একটুপর কল দিচ্ছি কবিতা।”
“আগে আই লাভ ইউ বলে শব্দ করে একটা চুমু দেও। তারপর ফোন কাটব।”
“বাচ্চামিটা কমাও। এখন দুইটা বাচ্চার মা তুমি।”
বলেই কল কেটে দেয় তীর্থ।
হঠাৎ এভাবে কল কেটে দেওয়ায় মনটা খারাপ হয়ে যায় কবিতার। সে ফোনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সময়ের সাথে সাথে সম্পর্ক কতটা পালটে যায়। একসময় যে বাচ্চামি দেখে তীর্থের ঠোঁটের কোণে হাসি এঁকে আসতো সে বাচ্চামি থেকেই এখন বিরক্ত লাগে তীর্থের।
কবিতা আফসোসের নিশ্বাস মিশিয়ে দেয় সকালের উষ্ণ হাওয়ায়। ফোনের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভাবে, তারপর একটা কল দেয় নিজের বাবাকে। কয়েকটা রিং বাজে, তারপর কলের ওপার থেকে ভেসে উঠে এক নারীর
কন্ঠ, “হ্যালো…”
কবিতা তার মা’য়ের কন্ঠ শুনে চমকে উঠে। তার বুকের ভেতর চিনচিন ব্যাথা শুরু হয়। কান্না আসে খুব, কিন্তু সে কাঁদে না। এক ঢোক গিলে। ফোনের ওপাশ থেকে আবারও প্রশ্ন আসে, “কে বলছেন?”
কবিতা ফোন কেটে দেয়। শক্ত হয়ে বসে রয় কিছুক্ষণ। পাঁচটা বছর কেটে গেল কিন্তু আজ পর্যন্ত সে তার মা এবং বড় ভাইকে ক্ষমা করতে পারে নি। এমন না যে তারা কবিতার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করেছে। কবিতার আজও মনে আছে সে পাঁচবছর আগের কথা, নিজের বুকের উপর পাথর রেখে সে তীর্থকে বলেছিলো সে অন্যকারো সাথে বিয়ে করছে। ফোন রাখার পর কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ে। আবির ছিলো তার সাথে। তাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে থাকে সে। সান্ত্বনা দেয়। এমন সময় আসে কবিতার বাবা। সে কবিতার হাত ধরে অনুরোধের সুরে বলে, “মা তুই পালিয়ে যা এইখান থেকে। আমি তো। এই ভেবে কবিরকে সব দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে আমি দূরে থাকায় ও এই পরিবার সামলাবে। কিন্তু আমি কি জানতাম কবির এমন ছেলের সাথে তোর বিয়ে দিয়ে তোর জীবন নষ্ট করে দিবে।” কবিতার বাবা আবার আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল, “শুন…শুন আবির তুই জলদি করে কবিতাকে নিয়ে এইখান থেকে চলে যা। প্রয়োজনে ঢাকা থেকে আসা ওই ছেলের খোঁজ নিবি। ওই ছেলে ভালো হলে নিজ দায়িত্বে ওকে বিয়ে করিয়ে দিবি। তোরা যা এইখান থেকে।”
কবিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল নিজের বাবার দিকে। এর আগে সে তার বাবাকে তার মা এবং বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে যেতে দেখে নি। এমনকি সেদিন তার আবির ভাইয়াও সেই প্রথম কবিরের বিরুদ্ধে গেল। বহু কষ্টে সে রিসোর্ট থেকে বের হয়। আবির ভাইয়ার বন্ধুরাও সাহায্য করে এতে। বাসে উঠে সবটা জানানো হয় তীর্থকে। সে খুশিতে আত্মহারা। মাঝ রাস্তায় দেখা হয় তাদের। আবির কবিতা এবং তীর্থকে নিয়ে দুইদিন এক বন্ধুর বাসায় লুকিয়ে থাকে। এর মাঝে আবির তীর্থকে বোঝার চেষ্টা করে এবং বন্ধুদের দিয়ে তার খোঁজ নেওয়ায়। দুইদিন পরেই তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। বড় ভাইয়াকে জানানোর পর সে কবিতা এবং আবিরের চেহারাও দেখতে চায় না। তাদের ঘরে ঢুকতে দেওয়া তো দূরের কথা। আবিরেরও সেই ঘরে থাকার আর কোন ইচ্ছা ছিল না। তাদের সম্পত্তি ভাগ করা হয়। আবির তার সম্পত্তি বিক্রি করে বিদেশে চলে যায়।
অতীত ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কবিতা। সে কখনোই ভাবেনি যে মা এবং ভাইয়ের আদরের পুতুল ছিলো সে, তাদের সাথে পাঁচ বছর না কথা বলেও থাকতে পারবে। মানুষ বলে, সময়ের সাথে সাথে সকল আঘাত মিটে যায়। কথাটা ভুল। আপন মানুষদের আঘাত বেদনাদায়ক। মানুষ যত কাছের, আঘাত ততই গাঢ়।
.
.
মৃণা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তীর্থের দিকে। কবিতা? কবিতা তার প্রাক্তন না? তাহলে তার সাথে কথা বলছে কেন তীর্থ? এবং তাদের কথা এমন স্বাভাবিক কেন?
হঠাৎ করেই মৃণার মনের ভেতর কু ডাকতে শুরু করলো। সে খারাপ আভাস পাচ্ছে। তীর্থের কথা শেষে যখন সে মৃণার দিকে তাকে জিজ্ঞেস করল, “এখন উত্তরটা দেও। তুমি আমার রুমে কি করছ?”
মৃণা মাথা নামিয়ে নেয়। চিন্তিত দৃষ্টিতে আশেপাশে তাকাতে থাকে। উত্তর দেয়, “আপনি নেশায় ছিলেন তাই নিয়ে এসেছিলাম।”
তীর্থের হঠাৎ করে চোখের সামনে ভেসে উঠে গত কিছু মুহূর্ত। তার মনে আছে সে মৃণার কাছে গিয়েছিলো কিন্তু এরপরের কিছুই সে মনে করতে পারে না। চিন্তিত হয়ে পড়ে সে। জিজ্ঞেস করে, “আমাদের মাঝে সত্যিই কিছু হয় নি তো? আমি নেশায় ছিলাম। ভুল কিছু করলে আমি ক্ষমা চাচ্ছি।”
“কবিতা আপনার কী হয়?” মৃণা প্রশ্ন করে তীর্থকে। তার চোখে হঠাৎ জল ভেসে উঠে। সে ভেবেছিল তীর্থের সাথে এখনো কবিতার মাঝে মধ্যে কথা হয়। এই কারণেই এখনো সে ভুলতে পারে নি কবিতাকে। কিন্তু তীর্থ যা উত্তর দিলো তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তীর্থ বলল, “কবিতা আমার ওয়াইফ।”
মৃণা চমকে তাকায় তীর্থের দিকে। তীর্থ যেন অবিশ্বাস্য একটি কথা শোনাল তাকে। এইটা কীভাবে সম্ভব? ধ্রুব না বলেছিলো কবিতা তাকে ছেড়ে গিয়েছে? তাহলে ধ্রুব মিথ্যা বলেছ? কিন্তু কেন? তার সাথে মিথ্যা বলে ধ্রুবর কি লাভ? কিছুই মাথায় ঢুকছে না মৃণার। সে খেয়াল করলো রাগে, জেদে শরীর কাঁপছে তার। কার উপর এই রাগ সে নিজেও বুঝতে পারছে না। তীর্থের উপর, না কবিতার উপর, ধ্রুবর উপর? না তার নিজের উপর? সে কেন এমন এক মানুষকে সে ভালোবেসে ফেলল যাকে সে চিনেও না?
মৃণা এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়ায় না। দ্রুত বেরিয়ে যায় রুমটা থেকে।
মৃণার চোখে জল দেখে তীর্থের ভয় লেগে গেল। সে কী ভুল কিছু করেছে? তীর্থের ভয়ে জান বের হওয়ার মতো অবস্থা। সে যে করেই হোক মৃণার সামনে আর যাইতে চাইছে না। ব্যপারটা অস্বস্তির। তীর্থ জলদি করে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে তার ব্যাগ গুছাতে শুরু করে। আজই সে ঢাকায় যাবে। ভীষণ অশান্তি লাগছে তার। কবিতাকে একবার বুকের মাঝে ভরে নিতে হবে তার এই অশান্তি মেটানোর জন্য।
মৃণা দ্রুত যায় ধ্রুবকে খুঁজতে। তার কাছে কিছু প্রশ্নের উওর লাগবে তার। সে মিথ্যা বলে তাকে এই যন্ত্রণায় কেন ফালিয়েছে? ধ্রুবকে সে পায় নিজের রুমেই। রুপার সাথে বসে গল্প করছে সে। ধ্রুবকে দেখে সে হাওয়ার বেগে যেয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আর্তনাদ করে উঠে, “আপনি নিজেকে কী ভাবেন বলুন তো। আপনার সাহস কী করে হলো আমার ফিলিংস এর সাথে এভাবে খেলা করার?”
রুপা অবাক হয় মৃণার এমন ব্যবহার দেখে। সে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “এভাবে কথা বলছিস কেন তুই? উনার সাথে এমন বেয়াদবি করছিস কেন?”
“আর উনি যা করেছে তার কি?”
“কি করেছে ?”
“তোর মনে আছে, উনি আমাদের বলেছিল তীর্থ একটি কবিতা নামক মেয়েকে ভালবাসত। যে তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করেছিল।”
“হ্যাঁ, আমার সামনেই তো বলেছে।”
“মিথ্যা বলেছ উনি। কবিতা তীর্থের বউ। আমার সামনে আজ কবিতার সাথে কথা বলেছে তীর্থ। উনাকে তুই জিজ্ঞেস কর উনি কেন আমাদের মিথ্যা বলল? উনার মিথ্যার কারণে আমি তীর্থের প্রতি নিজের ফিলিংস কখনো আটকানোর চেষ্টা করি নি। আমি যদি জানতাম সে বিবাহিত তাহলে কী নিজের মনের অনুভূতি বাড়তে দিতাম?”
রুপা অবাক হয়ে তাকায় ধ্রুবর দিকে, “মৃণা কী সত্যি বলছে? আমি আপনাকে তো প্রথমদিনই বলেছিলাম সম্ভবত মৃণা আপনার বন্ধুকে পছন্দ করে। তাও মিথ্যা কেন বললেন আপনি?”
ধ্রুব গভীর নিশ্বাস ফেলে তাকায় মৃণার দিকে। খুব স্বাভাবিকভাবে উওর দেয়, “দেখো আমি কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলতে চাই না। আমি জানতাম তীর্থকে তুমি পছন্দ করো এর কারণেই মিথ্যা বলেছি।”
“যা বলার পরিষ্কারভাবে বলুন।”
“দেখো তীর্থ নিজের সংসারে সুখী না। আমি এইটা জানি যে ও কবিতা এবং তার সন্তানদেরকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু পারিবারিক অশান্তিতে ওর মানসিক চাপ পড়ছে তা আমি জানি। একদিকে কাজের এত চাপ, অন্যদিকে পারিবারিক ঝামেলা। ঘরে থাকলে এক মুহূর্তও শান্তিতে কাটাতে পারে না সে। আমার ওকে নিয়ে অনেক চিন্তা হচ্ছিলো তাই আমি অন্যদিকে যেন ওর মন বসে তাই তোমাকে….”
মৃণা এইবার চেঁচিয়ে উঠে, “আমি কী কোনো জিনিস যে আপনার বন্ধুর মন ভালো নেই তাই আমাকে তার মন ভোলানোর জন্য ধরিয়ে দিবেন?”
রুপা বলল, “আস্তে কথা বল, এইখানে আরও অনেক মানুষ আছে। সাধ সকালে এমন চিল্লাচিল্লি শুনলে মানুষ কি ভাববে?”
মৃণা ক্রোধিত দৃষ্টি নিয়ে তাকায় রুপার দিকে। তারপর রাগে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
.
.
বাংলাদেশে যখন শুভ্র সকাল, আমেরিকায় রাত তখন। কথন বসে আছে ব্যালকনিতে। সামনে বসা তার ফ্লাটমেট প্রণয়। প্রণয়ের হাতে একটি কালো ডায়েরি। ডায়েরিটি কথনের। আজ আমেরিকায় শেষ দিন প্রণয়ের। প্রণয় এবং কথন পাঁচ বছর ধরে একসাথে থাকছে। একই হাস্পাতালে কাজ করছে। আগামীকাল প্রণয়ের বাংলাদেশের জন্য রওনা দেওয়ার কথা। প্রণয় যাওয়ার আগে শেষ উপহার চাইলো কথনের কাছে, তার ডায়েরিটি পড়তে চাইলো সে। এই পাঁচবছরে একটিবারও কথন সে ডায়েরিটি কাওকে পড়তে দেয় নি। তাই সে ডায়েরির ভেতরের লেখা পড়ার জন্য ভীষণ আগ্রহ হয় প্রণয়ের। প্রণয় ডায়েরি পরার মাঝে একটিবার তাকায় কথনের দিকে, “তুই আসলে মেয়েটার জন্য সম্পূর্ণ ডায়েরি লিখেছিস? আমার তো বিশ্বাস-ই হচ্ছে না। প্রথম পৃষ্ঠাগুলো পড়ে মনে হলো তুই কাওকে ভালোবাসতে পারিস না অথচ এখন…. ”
কথন প্রণয়ের কথা কেটে বলে, “যে মানুষ ভালোবাসায় পড়তে চায় না, তারাই গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলে। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি ঝোঁকটা যে বেশি থাকে এইকারণে।”
প্রণয় হেসে একবারের জন্য আকাশে তাকায়। তারপর বলে, “ভালোবাসা, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শব্দ অথচ অসুন্দর অনুভূতি দিয়ে যায়। তুমি ভালোবাসার মতো সুন্দর অনুভূতি অনুভব করবে অথচ সাথে কষ্ট অনুভব করতে চাইবে না। তা তো হয় না।”
চলবে….
[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]
সকল পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=381227816949915&id=100051880996086