মুহূর্তে পর্ব-৩৬

0
647

#মুহূর্তে
পর্ব-৩৬
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

“ওহ শীট!” তীর্থ দৌড় দেয় কবিতার পিছনে।
এতক্ষণে তীর্থের মৃণার কথা মনে পড়ে। কবিতা মৃণাকে এই মুহূর্তে তাদের বাসায় দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

কবিতার পিছে গেল তীর্থ। ডাইনিং রুমে যাবার পূর্বেই সে কবিতার হাত ধরে উচ্চ স্বরে বলল, “কবিতা, আমি জানি তুমি আমাকে দেখতে এসেছ। আমি ঠিক আছি কিনা তা যাচাই করতে এসেছ। আমি জানি আজও তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমার কবিতা আমাকে এভাবে ভুলে যেতে পারে না।”
তার এভাবে উচ্চস্বরে কথা বলার কারণ হলো যেন মৃণা যেয়ে লুকিয়ে যায় কোথাও।

কবিতার আজব লাগলো তার ব্যবহার। সে ঝাড়ন দিয়ে তার হাত সরিয়ে বলল, “আমি তোমাকে শেষ রাতেও বলেছিলাম, আমি তোমার স্পর্শও সহ্য করতে পারছি না। আমার ছেলে মেয়ের কিছু জিনিস প্রয়োজন, আমি তা নিতে এসেছি। আর কিছু না।”
এই বলে কবিতা ঘরের ভিতরে ঢুকে যায়। তার পিছনে যায় তীর্থও। বারবার তাকে আটকাতে চায়। কিন্তু কবিতা থামে না। ডাইনিং রুমে যেয়ে তীর্থের প্রাণ ফিরে আসে। মৃণা নেই সেখানে।

কবিতা ভিতরের রুমে যাওয়ার পর তীর্থ মৃণাকে খুঁজে। তাকে পায় ডাইনিং টেবিলের পিছনে লুকানো। সে মৃণার কাছে যেয়ে আদেশের সুরে বলে, “জলদি আমার ঘর থেকে বের হও। কবিতা যেন তোমাকে না দেখতে পারে।”
বলে সে চলে গেল কবিতার পিছনে।

মৃণা তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ায়। তীর্থের কথা অনুযায়ী সে যেতে নেয়। কিন্তু দরজার কাছে আবার থেমে যায় সে। সে মনে মনে ভাবলো,, “এক মিনিট, আমি তীর্থকে কবিতাকে মানানোর জন্য এত ভালো সুযোগ কেন দিব? যদি কবিতা আসলে তাকে ছেড়ে চলে যায় তাহলে আমার সুযোগ আছে। এই সুযোগে আমি এমনি হাতছাড়া করতে পারিনা। কবিতার তাকে ছেড়ে গেলে তীর্থের কাছে কোন পরিবার নেই। আমার গর্ভে যেহেতু তীর্থের সন্তান সে আজ না হয় কাল আমাকে মেনে নিবে। এছাড়া কবিতা সব জেনে গেছে, এখন আর তীর্থের তার জানার ভয় থাকবে না। অর্থাৎ তীর্থ ভয়ে না আমার সাথে দেখা করবে, না আমি ওকে কাছে পাব আর না আমার ইচ্ছাগুলো পূরণ করবে। এছাড়া সব ঠিক হয়ে গেলে কবিতা কিছুতেই তীর্থের সাথে আমার সম্পর্ক রাখতে দিবে না।”
এই ব্যাপারে প্রচুর ভাবল মৃণা। অবশেষে একটি সিদ্ধান্ত নিলো সে। সে আর লুকাবে না। যা তার চাই, সে জিনিসের জন্য লড়াই করবে।
.
.
কবিতা আলমারিতে তার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস খুঁজছিলো। হঠাৎ করে তীর্থ এসে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। কাঁপা-কাঁপা গলায় বলে, “কবিতা…প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না। আমার তোমাকে ছাড়া অনেক কষ্ট হয়।”
কবিতা যেন সে কথা কানে গেল না। সেখান থেকে সরে যেয়ে সে বিছানার পাশের সাইডবক্সে ঔষধের বাক্স খুঁজতে থাকে।

তীর্থ আবারো তার পিছু যায়, “আমি কিছু বলছি। আমার কথা তো শুনো।”
কবিতা উওর দিলো না। সে ঔষধ খুঁজে ব্যাগে ঢুকিয়ে আবারও আলমারির কাছে গেল। কাব্যের স্কুলের ব্যাগ এবং তার সার্টিফিকেট গুলো নিলো।

কবিতার এমন ব্যবহারে তীর্থের মাথায় রক্ত উঠে গেল। সে কবিতার পিছনে এসে তার বাহু ধরে এক টানে তাকে পাশের দেয়ালে পিঠ ঠেকাল। হাত মুঠোবন্দী করে শক্ত করে কবিতার কাঁধের পাশের দেয়ালে ঘুষি মারলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “তুমি আমার সাথে রাগ করে আছো আমি জানি। আমাকে তুমি বকা দেও, ঝগড়া করো, যা ইচ্ছা করো তবুও এভাবে চুপ থেকো না। কথা বলো। কথা বললে সব ঠিক হয়ে যাবে কবিতা।”
তীর্থ কবিতার দুই গালে হাত রেখে আহত দৃষ্টিতে তার চোখে তাকায়, “প্লিজ কবিতা আমার ভুল হয়ে গেছে। তুমি আমাকে যা শাস্তি দেওয়ার তা আমার সাথে থেকে দেও। তবুও এভাবে আমাকে অবহেলা করো না। আমার কাছ থেকে দূরে যেও না। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।”

“তাহলে মরে যাও।” নির্দ্বিধায় বলে কবিতা, “লাগলে হাত কাটার জন্য ছুরি অথবা খাওয়া জন্য বিষ এনে দিব?”
কবিতা বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে তীর্থকে সরিয়ে চলে যায়। রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিংরুমে যেয়ে সে দেখতে পায় মৃণাকে। সে বিশ্বাস করতে পাড়ছিলো না তার যাবার পরেরদিনই তীর্থ মেয়েটাকে ঘরে এনে তুলেছে। তার প্রচন্ড রাগ উঠলো। কিন্তু সে কিছু না বলেই হাঁটতে শুরু করে।

তীর্থ ড্রইংরুমে এসে মৃণাকে দেখে আতঙ্কিত হয়ে উঠে। সে দৌড়ে যায় কবিতার পিছনে। তার সামনে যে দাঁড়িয়ে অস্থির হয়ে বলে, “কবিতা তুমি যা ভাবছো এমন কিছুই না। আ… আমি ওকে ডাকি নি। ও নিজে এসেছে। আমি ওকে দেখার সাথে সাথে যেতে বলেছিলাম।”

কবিতা একপলক মৃণার দিকে তাকালো। তারপর আবার বিরক্তি নিয়ে তীর্থের দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি যা ইচ্ছা তাই করো। এমন তো না এমন নষ্টামি আজ নতুন করছো। আগে লুকিয়ে করতে, আর এখন খোলামেলা ভাবে করো। এছাড়া আগে তো আমি তোমার জীবনে ছিলাম তাই ভয় পাওয়ার কথা। কিন্তু এখন আমিও নেই, তোমার যা মন চায় তা করো। এই মেয়ের সাথে করো অথবা অন্য দশটা মেয়ের সাথে। আমার বিশ্বাস এবং সম্পর্ক আগেই শেষ, এখন আমার তোমার জন্য কোনো অনুভূতি হয় না।”
“কবিতা প্লিজ এমন করে বলো না।” তীর্থ কবিতা গালে হাত রেখে অহসায় গলায় বলে, “আই লাভ ইউ।”
“তাই? তাহলে ওর সাথে যা ছিলো তা কী ছিলো?”
“ভুল ছিলো। কেবল ভুল।”

মৃণা কথাটা শুনে আর্তনাদ করে উঠে, “তুমি এমন কথা কিভাবে বলতে পারো তীর্থ? দুইবছরের সম্পর্ক আমাদের। আমি তোমাকে আমার সবটা দিয়ে ভালোবেসেছি। আমাদের সম্পর্ককে তুমি কীভাবে ভুল বলতে পারো?”
“যাস্ট সাট ইউর মাউথ।”
“কেন?” কবিতা স্বাভাবিকভাবেই মৃণার সামনে যেয়ে তাকে বলো, “তুমি বলো। কি বলছিলে? ভালোবেসে তুমি এসব করেছিলে? তীর্থ আমাকে বলেছিল সিলেট যাবারর পর না’কি তুমি ওর কাছে এসেছিলে। এটা কি সত্যি?”
মৃণা উত্তর দিলো না। মাথা নামিয়ে চুপ করে রইলো।
“আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি।”
“আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।”
“ওহ তুমি এটা ভাবো? তুমি আসলেই বাধ্য। তোমার আসলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা উচিত আমি এখনো তোমার করণীয় শাস্তি তোমায় দেই নি। এখনো জানাই নি কাওকে। তোমার কান্ড সম্পর্কে সম্পূর্ণ জগৎকে জানাতে আমার এক মুহূর্তও লাগবে না। তুমি জানো তো তোমার মতো মেয়েকে কী বলে? দুশ্চরিত্রা।জঘন্য মেয়ে তুমি। তোমার মতে, একটি বিবাহিত পুরুষদের শরীর বিলিয়ে বেড়ানোকে ভালোবাসা বলে? কারণ আমি যতটুকু জানি শরীর বিলিয়ে ভালোবাসা হয় না। আর তুমি তো শরীর বিলিয়েই ওকে পেতে চেয়েছিলে তাই না? যদি তোমার কাছে এটাই ভালোবাসা হয় তাহলে দিনে কয়টা পুরুষকে এভাবে ভালোবাসো তুমি?”

“আপনি এখন নিজের সীমানা পাড় করছেন।” চিৎকার করে উঠে মৃণা। সাথে সাথে কবিতা তার গালে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। চমকে উঠে মৃণা। এর পূর্বে কেউ তার উপর হাত তুলে নি। তার বাবা মাও তার উপর কবে তার তুলেছিলো তার মনে নেই। কবিতাকে খুব কঠিন একটি উওর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো সে। কিন্তু তার দিকে তাকিয়ে তার অগ্নিদৃষ্টিতে একটু দেবে যায় মৃণা। কবিতা মৃণার মুখের সামনে আঙুল তুলে বলে, “আমার সংসার ভেঙে বলছিস আমি সীমানা পাড় করছি? এখন এই মুহূর্তে আমি চিল্লিয়ে বিল্ডিংয়ের সকলকে ডাকলে অথবা সবাইকে সত্যটা বলে বেড়ালে তোর কোন সম্মানের কোন সীমানা থাকবে শুনি? তোর মতো নিচুলোকের সাথে কথা বলে আমার মুখ নষ্ট করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। আমার তো আফসোস আর তোর মা বাবা এবং আইদের জন্য। আইদের মতো ভালো ছেলের সাথে এমন করতে বুক কাঁপে নি? সরি, আমিও কার সাথে কথা বলছি। তোমার মধ্যে এত অক্কল থাকলে তো এভাবে নিজের জীবন নিয়ে খেলা করতে না। কিন্তু থ্যাঙ্কিউ, তুমি না হলে আমি জানতামও না যে আমি যাকে এত ভালোবাসতাম, যাকে এতটা বিশ্বাস করতাম সে এভাবে আমার জীবন নষ্ট করতে পারে।”
“কবিতা প্লিজ….” তীর্থ কিছু বলতে যাবে তখনই কবিতা হাতের ইশারায় তাকে থামায়। নিজের কথা সম্পূর্ণ করে সে, “এই জন্য আমি নিজেকে পরিবর্তন করেছিলাম। নিজের সারাজীবন ওর নামে লিখেছিলাম। নিজের সম্পর্ক, শান্তি, স্বপ্ন সব বিসর্জন দিয়েছি। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছি।”

তীর্থ আবার বলল, “আমার ভুল হয়ে গেছে কবিতা। আমি নিজের ভুল স্বীকার করছি তো।”
কবিতা তীর্থের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, “ভুল? তুমি দুই বছরের বাচ্চা না যে না বুঝে ভুল করে ফেলবে। পরকীয়া কি ঠিক না বেঠিক জ্ঞান যদি তোমার না থাকে তাহলে তোমার থেকে অধম আর কেউ হতে পারে না।”
কবিতা চলে গেলে সেখান থেকে।

তীর্থ রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকালো মৃণার দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “তুমি এখানে কি করছ? আমি তোমাকে যেতে বলেছিলাম না?”
মৃণা আমতা আমতা করে বলল, “আমি…আমি ব্যাগ ভুলে গিয়েছিলাম তা নিতে এসেছি।”
“তাহলে নেও এবং আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও। এখনই। তোমার জন্য কবিতা আরও বেশি রাগ হয়ে গেছে আমার উপর। আমি ওকে কিভাবে মানাবো আমি নিজেও জানিনা। আর ওকে আমি যদি ফিরে না পাই, তাহলে তোমার কি অবস্থা করব তাও আমি জানি
না।”
মৃণা ছুটে এসে দিক থেকে জড়িয়ে ধরে, “প্লিজ এভাবে বলো না তীর্থ, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।”
তীর্থ মৃণাকে সরিয়ে এক ধাক্কায় তাকে নিচে ফালিয়ে দিলো। বিরক্তি নিয়ে বলল, “গেট লস্ট। আমার মাথা এখন ঠিক না, আমি কি করব তোমার সাথে আমি নিজেও জানি না। এখনই আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাও।”
তীর্থ মৃণাকে এক ধাক্কায় মেঝেতে ফেলে দেয়।

মৃণা একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল। তীর্থের রাগ আসলেই এ মুহূর্তে অনেক বেশি। তাই সে সেখান থেকে যাওয়াই ঠিক মনে করল। সে উঠে দৌড়ে সেখান থেকে পালায়।

কবিতা অনুর বাসায় যেয়ে তার ছেলে মেয়েকে খাইয়ে সোজা রওনা দেয় তাহিরার বাসার উদ্দেশ্যে। তাহিরাকে কল করে জলদি বাসায় আসতে বলেছিলো সে।
.
.
হাস্পাতাল থেকে আজ একটু জলদিই বাসায় এলো কথন। তাকে জলদি বাসায় আসার আদেশ দেওয়া হয়েছিলো। সে এসে দেখে তার মা বাবা কোথাও যাবার জন্য তৈরী হচ্ছে। তার বোন জবা এবং তার দুলাভাই আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত। জবা জোর করে তৈরি করে কথনকে। তারা কোথায় এবং কেন যাচ্ছে সে জানে না। তাকে কিছুই বলা হয়নি। গন্তব্যে পৌঁছে সে জানতে পারে সেখানে মেয়ে দেখতে তাকে নিয়ে এসেছে। কথনের বেশ রাগ উঠলো। সে তার মা’কে মানা করেছিলো। সে এখন কোনোমতেই বিয়ে করতে চায় না। সে এখন প্রস্তুত নয়। কিন্তু সবার সামনে সে কিছুই বলতে পাড়লো না।

মেয়ের নাম জান্নাত। সে ডাক্তারি পড়তে। ঘরের সবার তাকে পছন্দ হয়েছে। কথনকে তার সাথে একা কিছু কথা বলার জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাদের বেশি কথা হয়নি। প্রচন্ড মেজাজ খারাপ ছিল তার। এভাবে মিথ্যা কথা বলে তাকে এখানে আনার মানে হয় না।
মেয়ের পক্ষ থেকেও বিশেষ কথা হয়নি। মেয়েটাকে ভীষণ লাজুক মনে হলো।

সেখান থেকে বের পর কথন রাগের তার মা বাবাকে দুলাভাইয়ের গাড়িতে বসিয়ে একাই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। সে কোথায় যাচ্ছে জানে না। অচেনা পথে রওনা দিলো সে। কিন্তু এই মুহূর্তে বাসায় যাবার কোন প্রকার ইচ্ছা নেই তার। সেই চায় না রাগের মাথায় কাউকে উল্টাপাল্টা কিছু বলে কষ্ট দিক। রাগে তার মাথা ঠিক থাকে না। কখন কি বলে নিজেও বুঝতে পারে না।
সে ভালো করে জানে, তার মা যা করছে তা বেঠিক নয়। মা তাকে নিয়ে প্রচুর চিন্তা করে। এ-কারণেই বিয়ে নিয়ে এত তাড়াহুড়ো। কিন্তু সে নতুন সম্পর্কে জড়াতে তৈরি কি’না সে বুঝতে পাড়ছে না। সে এখনো কবিতাকে ভালোবাসে। তাকে ভালোবাসা উচিত কি’না তাও জানা নেই কথনের। তবুও ভালোবাসে। সে জেনে বুঝে অন্যকোনো মেয়ের অনুভূতির সাথে খেলা করতে পারে না।
.
.
তাহিরাকে দেখতেই তাকে জড়িয়ে ধরে কবিতা। শক্ত করে। তাহিরা একটুখানি অবাকই হয় কবিতার এমন কান্ডে। সে আলতো হাতে কবিতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “কি হয়েছে তোর? মন খারাপ?”
কবিতা উওর দিলো না সাথে সাথে। কেবল শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রইলো তাহিরাকে।
তাহিরা আবারো জিজ্ঞেস করল, “তীর্থও সন্ধ্যায় এসেছে ধ্রুবর কাছে।”
আচমকায় কবিতা ছেড়ে দিলো তাহিরাকে। বিস্মিত গলায় বলল, “তীর্থ এসেছে?”
“হ্যাঁ, ওরা ভিতরে গল্প করছে। এক কাজ কর তুই যেয়ে তাদের সাথে গল্প কর। আমি তোর জন্য কেক বানিয়েছি, তা নিয়ে আসছি।”
তাহিরা যাবার পূর্বে কবিতা তাকে ধরে নিলো। ছটফট করতে শুরু করে সে, “আপু তুমি জানো তীর্থ কেন এসেছে?”
তাহিরা হাসে, “স্বাভাবিক ধ্রুবর সাথে গল্প করতে এসেছে। তীর্থ তো প্রায়ই আসে, তোকে কত বলি তোরই সময় হয় না।”
“কেন এসেছে আমি বলছি তোমাকে। নতুন পরিকল্পনা করতে।”
“পরিকল্পনা? কিসের পরিকল্পনা?”
“আবার আমাকে কিভাবে ধোঁকা দেবে তার পরিকল্পনা।”
তাহিরার চোখে মুখে বিস্ময়ের ছায়া পড়লো, “এসব কি বলছিস তুই?”
“আপু তোমার আন্ডারে যে চাকরি করে আইদ ও গতকাল আমার বাসায় এসেছিলো।”
“আইদ তোর বাসায় হঠাৎ কেন গেল?”

কবিতা চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার বুক কাঁপছে। গলা কাঁপছে। কথাটা বলতে আজও তার জান বেরিয়ে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে কাঁপানো সুরে বলল, “ওর স্ত্রীর সাথে তী…তীর্থের অবৈধ সম্পর্ক আছে। তাও দুই বছর ধরে।”
তাহিরা চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। তার চোখ দুটো যেন কোটর থেক বেরিয়ে আসতে চাইছে।
“কী বলছিস তুই!”
“ওই মেয়ে তীর্থের বাচ্চার সাথে প্রেগন্যান্ট।”
“না কবিতা, আমার মনে হয় তোর কোথাও ভুল হচ্ছে। তীর্থ তো তোকে অনেক ভালোবাসে। আমি ওর চোখে দেখেছি তোর প্রতি ভালোবাসা। সবাই জানে ও তোকে কতটা ভালোবাসে।”
“আমারও তাই মনে হতো আপু। কিন্তু আমি প্রমাণ দেখেছি। এরউপর ও নিজেও স্বীকার করেছে।”
তাচ্ছিল্য হেসে আবার বলে কবিতা, “আর আজ আমার অনুপস্থিতিতে তাদের একত্রে আমার বাসায় দেখে এসেছি।”
তাহিরা চিন্তিত দৃষ্টিতে কিছু মুহুর্ত তাকিয়ে রইলো কবিতার দিকে। তারপর বুকে ভরে নিলো তাকে। তার নিজের চোখও ভিজে এলো। সে বলল, “তুই আমাকে বলিস নি কেন?”
“প্রথমে কল দিয়ে তোমাকে পাইনি। পরে রাতে আর দেওয়ার সাহস হয় নি। তোমাকে একটা কথা বলার আছে আপু।”
“পরে বলিস আমি আগে ওই লোককে ঘর থেকে বের করে আসি। ওই বেয়াদবটার আমার বোনকে এত কষ্ট দেওয়ার পরও বেহায়ার মতো মুখ তুলে আমার বাসায় আসলো। সাহস কত?”
তাহিরা কবিতাকে ছেড়ে এগিয়ে যায় ড্রইংরুমের রুমের দিকে। তখনই কবিতা বলে উঠে, “তীর্থকে এসব করতে ধ্রুব উৎসাহ দিয়েছে আপু। আমার সন্দেহ উনি…উনি নিজেও অন্য মেয়েদের সাথে সম্পর্কে লিপ্ত। উনার অতীত দেখে আমার তাই মনে হয়, নাহয় উনি কেন তীর্থকে এসব করার জন্য প্রশ্রয় দিবে?”
তাহিরা থেমে যায় কবিতার কথা শুনে। নিথর হয়ে যায় সে।

চলবে…

[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]

সকল পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=381227816949915&id=100051880996086

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here