মুহূর্তে পর্ব-৪৩

0
645

#মুহূর্তে
পর্ব-৪৩
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

একটি হোটেলে ছিলো রূপা ও ধ্রুব। সেখানে বিশেষ কিছু মুহূর্ত কাটাচ্ছিলো দু’জন। কিন্তু কলিংবেল শুনে না চাওয়া সত্ত্বেও উঠতে হলো তার। পোশাক পরতে পরতে দরজা খুলে সে। দরজা খুলেই স্থির হয়ে যায় সে।অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার সামনে দাঁড়ানো তাহিরার দিকে।

তাহিরা কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি আমি জানতে পারি এত রাতে এই হোটেলে কি করছো?”
ধ্রুবর ভয়ে জান শুকিয়ে যায়। সে এক ঢোক গিলে। কিন্তু স্বাভাবিক হয়ে বলে, “আমি… আমি তো একটা ক্লায়েন্টের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম নিচের রেস্টুরেন্টে। একটু মাথা ব্যথা করছিলো দেখে উপরে রেস্ট নিতে আসলাম। তুই এখানে কীভাবে?”
“বাসায় না যেয়ে তুই এখানে রেস্ট নেবার জন্য এসেছিস?”
“তাহু তুই কি আমাকে সন্দেহ করছো?”

তাহিরা ধ্রুবকে একপাশে সরিয়ে নিজের ভিতরে যায়। হোটেল রুমে ঢুকে দেখে ভেতরে কেউ নেই। ধ্রুব শান্তির নিশ্বাস ফেলে সম্ভবত রুপা তার কথা শুনে কোথাও লুকিয়ে পড়েছে। ধ্রুব নিজে দোষীভাব স্বীকার করবার পরিবর্তে উল্টো অপরাধবোধ করানোর চেষ্টা করে তাহিরাকে, “তাহিরা তুই ভেবেছিলি আমি কোনো মেয়ের সাথে এখানে….ছিঃ! তুই এটা ভাবতেও কীভাবে পারিস? কবিতা সামনে সেদিন তো তুই এমন দেখালি যেন আমায় বিশ্বাস করিস। এই তোর বিশ্বাসের নমুনা?”

তাহিরা কিছু সময় তাকিয়ে থাকে ধ্রুবর দিকে। তারপর আশেপাশে খুঁজতে শুরু করে সে। তাহিরাকে এভাবে খুঁজতে দেখে আসলেই ভীষণ ভয় পেয়ে যায় ধ্রুব। সে দ্রুত যেয়ে হাত ধরে নেয় তাহিরার, “আমি কিছু বলছি তাহু।”

তাহিরা হাত ঝেড়ে নেয়। তার দৃষ্টি শীতল। তার মুখ দিয়ে একটি শব্দও বের হয় না। সে বাথরুম এবং আলমারিতে খোঁজার পর খাটের নিচে দেখে। খাটের নিচে পায় সে রুপাকে। রুমা কোনোমতে তার ওড়না দিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করছে। সে উঠে দাঁড়িয়ে শীতল দৃষ্টিতে তাকায় ধ্রুবর দিকে।

কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে ধ্রুব ভাবলো তাহিরা এখনো খুঁজে পায় নি রুপাকে। এই কারণে সে বলল, “দেখলে তো আমি বলেছিলাম এখানে কেউ নেই। তুমি আমার কথা বিশ্বাসই করলে না।”
তাহিরা চোখ ফিরিয়ে নেয়। কিছু না বলেই চলে যায় সেখান থেকে। তাহিরা যেতেই দেখে রুপা বের হয়েছে বিছানার নিচ থেকে। তাকে দেখেই ধ্রুবর চক্ষু কপালে উঠে যায়, “তুমি এখানে… তাহিরা তোমাকে দেখে নিয়েছে?”
মাথা নাড়ায় রুপা।
“ওহ সীট!” ধ্রুব দৌড়ে যায় তাহিরার পিছনে। বাহিরে করিডরে কোথাও পায়না সে তাহিরাকে। লিফটও অন্য তালায় আটকে আছে। সে জলদি করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামে। সে দেখে তাহিরা দরজা দিয়ে বের হচ্ছে। সে পিছু গেল তাহিরার। সে বেরিয়ে দেখে তাহিরা রাস্তা পাড় হচ্ছিলো। একটি গাড়ি দ্রুত এগিয়ে আসছিলো তার দিকে। তাহিরা এক’পাও নড়লো না। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রয় সেখানে। ধ্রুব ডাক দিলো তাহিরাকে, যা বোধহয় কানেই গেল না তাহিরার। সে এক ইঞ্চিও সরলো না। হঠাৎ ধ্রুবর মনে পড়লো তাহিরার কথা, ‘তুই আমার সাথে এমন করলে তো আমি নিশ্চিত মরে যেতাম।’
কথাটা মন করতেই বুকের ভেতর কামড়ে উঠে ধ্রুবর। সে ছুটে যায় তাহিরার কাছে। এর পূর্বেই গাড়িটি এসে থামে তাহিরার সামনে। ড্রাইভার গাড়ির জানালা থেকে মুখ বের করে উঁচু গলায় বলে, “মেডাম আপনার কী মরার শখ হইসে? এত শখ থাকলে অন্যকোথাও যেয়ে মরেন, আমার গাড়ির সামনের থেকে সরেন তো।”

ধ্রুব এতক্ষণে এসে পড়েছে। সে ড্রাইভারের কথা শুনে তাকে ভালো শিক্ষা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে তার তাহিরাকে আগে বোঝানোটা উচিত মনে হলো। সে তাহিরার হাত ধরে আলাদা নিয়ে আসে। নিজের কর্মের জবাবদিহি দিতে তৈরি হয় সে। সে বলতে নেয়, “তাহু আমার কথা একটু শুন। আই ক্যান এক্সপ্লেইন।”
“আমি বাসায় যাব।” তাহিরা অনুভূতিহীন ভাব নিয়ে বলে ধ্রুবকে।
ধ্রুব অনেকটা চমকে উঠে তাহিরার এমন প্রতিক্রিয়ায়। তার এক মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল সে কল্পনা করছে। তাহিরা সবকিছু জানার পর এমন প্রতিক্রিয়া দিতেই পারে না। সে বিস্মিত গলায় বলল, “কী?”
তাহিরা চোখ তুলে তাকায় ধ্রুবর দিকে। অনুভূতিহীন দৃষ্টি। শীতল গলায় বলে, “আমি বলেছি বাসায় যাব। গাড়ি বের কর।”
ধ্রুব কিছু সময় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে। কি হচ্ছিল সে বুঝতে পারছিল না। তাহিরার এমন সহজপাচ্য ব্যবহার তার হজম হচ্ছিলো না। সে জানে তাহিরা কবিতার মতো মারমুখো না, ভীষণ শান্ত। তবুও এই ব্যাপারে সে কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখাবে না এমনটা ভাবে নি সে। সে দ্রুত যেয়ে গাড়ি গ্যারেজ থেকে নিয়ে এলো। গ্যারেজে সে রুপাকে ফোনও করে দিয়েছিলো। গাড়িতে বসেও তাহিরা কোনো কথা বলল না।
.
.
“তোমার পরিবারকে জানিয়েছ তোমার এবং তীর্থের আলাদা হবার কথা?” কথন জিজ্ঞেস করল কবিতাকে। কবিতা ঠিক তার সামনের চেয়ারে বসা। মাথা নিচু করে বসে আছে সে। কথনের প্রশ্নের উত্তরে সে মাথা নাড়ায়। কথন আবারও জিজ্ঞেস করে, “তোমার মনে হয় না তাদের জানানো উচিত?”
“না।”
“তোমার এখন তাদের সাপোর্ট সবচেয়ে বেশি দরকার কবিতা।”
“আমার তাদের সাপোর্টের প্রয়োজন নেই। আমার সাথে তাদের সম্পর্ক অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। তাদের অর্থাৎ বড় ভাই এবং মায়ের কথা বলছি।”
কবিতার কথাটা ধরতে পারলো না কথন। কিছুই বুঝতে পারছেনা সে, “সম্পর্ক শেষ মানে? কি বলছো তুমি?”

কবিতা ছোট করে তার বিয়ের কাহিনী শোনায় কথনকে। এসব শুনে কথন কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। কবিতার সাথে এত কিছু হয়ে গেছে অথচ সে কিছুই জানে না। তার এই মুহূর্তে নিজের উপর রাগ উঠছে। সে স্বার্থপরের মতো নিজের কথা ভেবে কবিতার সাথে যোগাযোগ রাখেনি। সে নিজে কবিতাকে অন্য কারো সাথে দেখলে কষ্ট পেত এই কারণে। অথচ কবিতা এত বছর ধরে, এত কষ্ট বুকে লুকিয়ে রেখেছে।

কবিতার ভাইয়ের কান্ড শুনে রাগ আরও বাড়ে কথনের। মানুষ এতটা নিচু কীভাবে নামতে পারে? নিজের বোনের ব্যাপারেও একবার ভাবে নি সে? অথচ সে লোকটাই একসময় বলেছিলো, কবিতাকে সে নিজের মেয়ের মতো লালন-পালন করেছে।
কবিতার সামনে সে নিজের এই অনুভূতিগুলো বর্ণনা করে কবিতাকে আরও দুর্বল হতে দেখতে চায় না। তাই তার পরিবারের কথা বাদ দিয়ে সে বলল, “আমি তোমার সাথে আছি। কোনো প্রয়োজন হলে বলো।”

কবিতা মাথা নাড়ায়। তারপর নিজেক স্বাভাবিক করে কথনকে জিজ্ঞেস করে, “আপনার কী খবর? আপনার জন্য তো মেয়ে দেখছিলো। আপনি এবং মেয়েটা কি বিয়ের জন্য রাজি হয়েছেন?”
কথনের হঠাৎ করে মনে পড়লো জান্নাতের কথা। তার এতক্ষণ ধরে মেয়েটার কথা মাথায়ও আসে নি। আর না এটা এসেছে যেহেতু কবিতা এখন আর তীর্থের সাথে নেই সেহেতু কথন তার জীবনের অংশ হতে পারে। কথাটা মাথায় আসতেই কথনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। এ কি করল সে? এত বছর ধরে সে কবিতার জন্য অহেতুক অপেক্ষা করছিলো। অথচ আজ যখন তার কবিতাকে ফিরে পাওয়ার সুযোগ ছিলো, সে সুযোগ নিজেই বিসর্জন দিলো? কথাটা ভাবতেই প্রচন্ড মাথা ধরে গেল তার।

কবিতা আবারও জিজ্ঞেস করে, “কি হলো উওর দিচ্ছেন না যে?”
“হুম মেনে গেছে। সব ঠিক থাকলে এই শুক্রবারে এনগেজমেন্ট হবে।”
“কনগ্রেটস।”
“কবিতা তুমি একটু বাহিরে যেতে পারবে। আমার একটু কাজ ছিলো। আমি আসছি কিছুক্ষণের মধ্যে।”
“আচ্ছা আমি কাব্যের কাছে যাই।”
কবিতা উঠে যাবার সময় কথন তাকে একবার ডাকে, “কবিতা শুনো।”
“জ্বি?”
“তোমার এবং তীর্থের ঘটনাটা কবে ঘটেছে?”
কিছুক্ষণ চুপ থাকে কবিতা। তাকে দ্বিধাগ্রস্ত মনে হচ্ছে।
“শেষবার যখন আপনার সাথে দেখা হয়েছিল, ঠিক তার আগের দিন।”
“ওহ।”
কবিতা চলে যায়। কথন বসে থাকে সেখানেই। অর্থাৎ তার বিয়ের কথা হবার আগেই কবিতার সাথে তীর্থের ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিলো? কবিতা তাহলে সেদিন কথাটা জানায় নি কেন কথনকে? লুকাল কেন সে? আজ হয়তো কবিতার কথা জানলে সে জান্নাতের সাথে বিয়েতে রাজি হতো না।
এখন?
সে এমন মানুষ না যে কোনো মেয়ের জীবন নষ্ট করবে, তার স্বপ্ন, তার অনুভূতির সাথে খেলা করবে। আর জান্নাত তো কবিতার কথা জানা সত্ত্বেও রাজি হয়েছে তাকে বিয়ে করার জন্য। এছাড়া তার একটি ভুল সিদ্ধান্ত দুই পরিবারের সম্মানে প্রশ্ন তুলবে।
কী হচ্ছে কথনের সাথে? কেন হচ্ছে?
কথনের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। সে কপালে হাত রেখে এত জলদি বিয়ের জন্য রাজি হওয়ায় নিজের বোকামির বিরক্তি প্রকাশ করলো। রাগে তার মাথা ঠিক থাকলো না আর। রাগের চোটে নিজের সামনে রাখা চেয়ারে সজোরে এক লাথি মারলো।

কবিতা কথনের কেবিন থেকে বের হয়ে দেখে তার ফোনে তীর্থের অনেকগুলো মিসকল। ফোন সাইলেন্ট থাকায় তা খেয়াল করে নি কবিতা। দেখতে দেখতে আবারো কল আসলো তীর্থের। এবার কবিতা কল ধরলো, “কী চাই?”
“তুমি আমার ফোন এভাবে কেটে দিলে কেন? এর উপর কল ধরছো না। সমস্যা কি তোমার? আছে এবার বলো কখন আমার কাছে ফিরে আসছো?”
“আপনার কাছে আমি কোনমতেই ফিরে আসবো না।”
“তুমি…” তীর্থ কঠিন কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়, “আচ্ছা বুঝেছি। তুমি কোন হাস্পাতাল আছো কাব্যকে নিয়ে? আমি টাকা নিয়ে আসছি।”
“আপনার টাকার এখন আর আমার প্রয়োজন নেই। আমি টাকার ব্যবস্থা করে ফেলেছি। আর আপনাকে আসতে হবে না। যখন আপনার সন্তানের জীবনের প্রশ্ন উঠেছিলো তখন আপনি ওর পরিবর্তে শর্ত রেখেছিলেন। আমি বুঝেছিলাম কি আপনি কেবল স্বামী হিসেবে অনুত্তীর্ণ। আপনি আমার ধারণা ভুল করে দিলেন, আপনি পিতা হিসেবে জঘন্য। আর আমি আমার বাচ্চাদের উপর আপনাদের ছায়াও পরতে দিব না।”
“তোমার কি মনে হয়, তুমি মানা করলে টাকা দিতাম না? অবশ্যই দিতাম। আমার ছেলের জীবন আমার কাছে মূল্যবান। আমি কেবল সুযোগটা হাতছাড়া….”
কবিতা কল কেটে দিলো। তার তীর্থের অহেতুক কোনো কথা শোনার ইচ্ছা নেই।
.
.
তাহিরা গাড়ি থেকে নেমে কিছু না বলেই বাসার ভেতরে ঢুকে যায়। ধ্রুবও গাড়ি পার্ক করে ছুটে যায় তাহিরার পিছনে। ভয় হয় তার। ভীষণ ভয়। তাহিরার কিছু না বলাটা তার বুকের জ্বালা আরও বাড়িয়ে দেয়। তাহিরা উল্টাপাল্টা কিছু না করে বসুক আবার। সে রুমে যেয়ে দেখে তাহেরা বিছানার পর ব্যাগ রেখে পানি খাচ্ছে। তার বুকের ভিতর ধুকপুক করছিলো। ভয়ে যেন তার প্রাণ আসে যায়। সে এগিয়ে যেয়ে তাহিরার হাত ধরে অস্থির হয়ে বলে, “তাহু আমার ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমা করে দে প্লিজ। আর হবে না, আই প্রমিজ।”
তাহিরা আবারও একই দৃষ্টিতে তাকায় ধ্রুবর দিকে। প্রশ্ন করে, “ক্ষমা করার একটি কারণ দে।”
ধ্রুব একটু দেবে গেল। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তাহিরার দিকে। বলল, “কারণ তুই আমাকে ভালোবাসিস।”
তাহিরা উঠে যায় বিছানা থেকে। ড্রেসিংটেবিলের সামনে যেয়ে কানেরদুল খুলতে খুলতে বলল,”ভালো তো তুইও বেসেছিস। তাও তো এমন করলি। তাহলে আমি ভালোবেসে তোকে ক্ষমা করবো কেন?”
ধ্রুব কি করবে বুঝতে পারছে না। তাহিরা ঝগড়া করল একভাবে তাকে জোর করে বোঝানো যেত। কিন্তু তাহিরার এমন ভাব দেখে তার নিজেরই বিদঘুটে লাগছে।

সে যেয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল তাহিরাকে, “তুই আমাকে ছেড়ে যাবি না তো? আমিও ওয়াদা করছি তাহু, আমি আর কখনো এমন করব না। শেষবারের মতো ক্ষমা করে দে আমাকে।”
উত্তর দিতে তাহিরা এক মুহূর্তও লাগালো না, “করলাম।”
এই উত্তর শুনে আরও চমকে উঠে ধ্রুব। তার কাছে তাহিরার ব্যবহার ভীষণ আজব লাগছে। প্রথম যখন তাহিরা তার অন্যকারো সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে জেনেছিলো, তখন তার রাগ দেখে সে নিজেই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তাকে ছেড়ে পর্যন্ত চলে গিয়েছিল সে। অথচ আজ, তার স্বামী হবার পর এত বড় অপরাধ এভাবেই ক্ষমা করে দিলো সে?

তাহিরা পিছনে ফিরে কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে ধ্রুবর দিকে। হঠাৎ করে তাকে জড়িয়ে ধরে। শক্ত করে আঁকড়ে ধরে তার শার্ট।

ধ্রুব হতদম্ব। এবার আসলে তার মাথায় কিছু ঢুকছিলো না। সে না পেরে জিজ্ঞেস করেই নিলো, “তাহু তুই আসলে ঠিক আছিস? আমি এতকিছু করার পরও তুমি আমাকে কিছু বলবি না?”
“উঁহু, আমি এই মুহূর্তে কেবল তোর বুকে মাথা রাখতে চাই। এই মুহূর্তে আমি কেবল আমার প্রতি তোর ভালোবাসা টা মনে করাতে চাই তোকে।”
“আমি এক মুহূর্তের জন্যও তোকে ভালোবাসা ছাড়িনি।”
“তাহলে আমি যে তুই আমাকে আরও বেশি ভালবাসতে শুরু করিস।”

ধ্রুব একবার জিজ্ঞেস করতে চাইলো, তাহিরা কীভাবে জেনেছে সে হোটেলে ওই রুমে ছিলো? তাও একটি মেয়ের সাথে। কিন্তু তোর সাহস হলো না।

তাহিরা জিজ্ঞেস করে, “তোর কি মনে আছে এই শুক্রবারে কী?”
তাহিরার কথা ঘোর ভাঙে ধ্রুবর। সেও জড়িয়ে ধরে তাহিরাকে। উওর দেয়, “কী?”
“এই শুক্রবারে আট বছর হবে। ঠিক আট বছর আগে তুই সেদিনেই প্রথমবার নিজের অনুভূতি আমার কাছে প্রকাশ করেছিলি। দিনটা আমার জন্য খুব বিশেষ। তাই আমি চাই সব ভুলে আমাদের জীবন নতুন করে শুরু করতে। সেদিন তোর সন্ধ্যা কেবল আমার নামে হবে। আমি ঘর সাজাব, তোর পছন্দের রান্না করবো, কেক বানাব। তোর জন্য একটা উপহারও আছে আমার কাছে। বিশেষ উপহার।”
ধ্রুব শান্তির নিশ্বাস ফেলল। তাহিরা তাহলে সব ভুলে নতুন জীবন শুরু করতে বলছে তাকে। তাহলে তাহিরা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে?
হয়তো, ভালোবাসার খাতিরে সে সব আবার নতুন করে শুরু করতে চাইছে।
এটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। সে জানে, তাহিরা তাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। তাহিরার প্রয়োজন সে। তার পরিবার বলতে সে ছাড়া আর কেউ নেই। তাকে ছাড়া কিভাবে যাবে তাহিরা?
এসব ভাবতেই ধ্রুব ঠোঁটের কোণে প্রশস্ত এক হাসি এসে বিরাজ করল।

এই ঘটনার পর ধ্রুব ভেবেছিলো কয়দিন মেয়েদের থেকে দূরে থাকবে। কিন্তু তাহিরার প্রতিক্রিয়া দেখে তার সাহস আরও বেড়ে যায়। সে ভাবে, এরপর যাই হোক না কেন তাহিরা তাকে ছেড়ে যাবে না। এ-কারণে সে মেয়েদের সাথে দেখা করতে থাকে। শুক্রবারে তার রুপার বিয়েতে যাবার কথা ছিলো। এর পরিবর্তে সে আরেকটি মেয়ের সাথে দেখা করতে গেল। সেখানে যেয়েও রুপার কল পেল সে। সে আলাদা যেয়ে কল ধরলো, “বাহ তুমি দেখি বিয়ের দিনেও আমাকে মনে করছো। আমি জানি আমার উপর থেকে কারও ধ্যান সরে না কিন্তু আজ তো একটু নিজের স্বামীর উপর ধ্যান দেও।”

“ধ্রুব…ধ্রুব সর্বনাশ হয়ে গেছে। তোমার ওয়াইফ সর্বনাশ করে দিয়েছে আমার।” হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল রূপা।
ধ্রুব বড়সড় এক ঝটকা খেল রূপার কথা শুনে। সে রূপাকে শান্ত করার চেষ্টা করল, “শান্ত হও রূপা। কি হয়েছে আমায় বলো। আর তাহিরা, ও কি করেছে? ওকে তো আমি আজ বাসায় দেখেই আসলাম। আমার জন্য স্পেশাল ডিনার প্লান করছে।”
“আমি শান্ত হবো? কীভাবে শান্ত হবো আমি? তোমার ওয়াইফ আজকে ঠিক আমার বিয়ের মুহূর্তে তুষারকে তোমার এবং আমার ইনটেমেট মুহূর্তের ছবি দিয়েছে। তুমি বুঝতে পারছো ব্যাপারটা? আমি বউ সেজে স্টেজে ছিলাম। সেখান থেকে আমার বিয়ে ভেঙে গেছে। তুষার আমাকে ঘৃণা করছে। আমার মা বাবা আমার চেহেরাও দেখতে চাইছে না। আমি কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না। সব তোমার ওয়াইফের জন্য। ও আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে।”
কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ধ্রুব। হতবাক হয়ে বলল, “তুমি মজা করছ তাই না?”
রূপা চিৎকার করে বলে, “তোমার মনে হয় আমি এই বিষয় নিয়ে মজা করবো?”
“আমি নিশ্চিত এটা তাহিরা করে নি। সেদিন হোটেলে আমাদের একসাথে সেভাবে দেখে নি তাহিরা।”
“সেদিনের হোটেলের ছবি না। তোমার বাসার ছবি। আর তাহিরা ছাড়া এমনটা কে করবে? তাহিরা ছাড়া কেউ আমার সাথে এমন করবে না।”

চলবে…

[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]

সকল পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=381227816949915&id=100051880996086

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here