#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ২০
____________
বাইরে রোদ্রজ্জ্বল দিন। যতদূর চোখ যায় সবই যেন রোদদের দখলে। খোলা উইন্ডো দিয়ে সকালের রোদের কিছুটা অংশ এসে মিতুলের মুখখানিতেও বিরাজ করেছে।
মিতুলের মস্তিষ্ক এখন কালকের ঘটনাতে আটকে আছে। চোখের সামনে কালকে রাতের দৃশ্যপট ভেসে উঠছে ঝাপসা করে টানা রংতুলিতে। চুলে ফুল গুঁজে দেওয়া, আর জোহানের মুখ থেকে নির্গত সেই শান্ত-মৃদু কণ্ঠ বাণী! মিতুলের সে সময় মনে হয়েছিল ও কিছুক্ষণের জন্য নিজের হৃদয় হারিয়ে ফেলেছে। ওর হৃদয় ওর বশে ছিল না। ওর হৃদয় অদ্ভুত আচরণ করছিল ওর সাথে।
মিতুল জানে না এর কারণ কী। আর জানে না, কী ছিল জোহানের কালকের বলা ওই কথার মানে? কী বুঝিয়েছে জোহান? ওটা কি ওর গানের কোনো অংশ ছিল?
সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এভাবে ভাবার জন্য এবার মিতুল নিজের প্রতি নিজে ভীষণ বিরক্ত হয়ে উঠলো। আরে সেই থেকে কী এত ভেবে চলেছে! জোহান তো গান গায়, গান লেখে। ওটা নিশ্চয়ই ওর গানের একটা অংশ ছিল। ওর সেই, ‘ইউ আর মাই লিটল এঞ্জেল’ গানটা থেকেই একটু অংশবিশেষ ছিল বোধহয়। কালকে জোহানের বলা বাক্য গুলোর মাঝে তো এঞ্জেল ব্যাপারটা ছিল।
মিতুল ভাবার চেষ্টা করলো, সেদিন পার্টিতে জোহানের কণ্ঠে যে লিটল এঞ্জেল গানটি শুনেছিল, সেই গানের মাঝে এই অংশটুকু ছিল কি না। মিতুল ভাবলো। কিন্তু গানটার সব কথা ওর মনে পড়ছে না। হবে হয়তো ওই গানেরই। হ্যাঁ, সেটাই হবে। নিজের গানের একটা অংশ তো জোহান বলতেই পারে। সেটা নিয়ে এত ভাবাভাবির কী আছে? মিতুলের নিজেকেই নিজের বলতে ইচ্ছা হলো,
‘আরে মিতুল, কানাডা এসে এ কি অবনতি হলো তোর! সামান্য কিছু গানের বাক্য নিয়েও তোর এত মাথা ব্যথা? আহারে, তুই কোথা থেকে কোথায় গিয়ে ঠেকছিস? প্রথমে জঙ্গল নিয়ে, এখন আবার এই গান নিয়ে। হায়রে!’
মিতুল নিজের ভাবনাগুলো মৃদুমন্দ হাওয়ার তরে বিলীন করে দিলো। সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে এত ভাবাভাবির কিছু নেই। মিতুল বড়ো করে একটা শ্বাস নিয়ে, এই শ্বাসের সাথেই বের করে দিলো ওর এসব বাড়াবাড়ির চিন্তা।
মিতুল হঠাৎ লক্ষ্য করলো ওর হাতে হেয়ার রাবারটা নেই। কালকে সকালে খুলে রেখেছিল। মিতুল চেয়ার ছেড়ে দিয়ে ওয়ার্ডোবের দিকে এগিয়ে এলো। ড্রয়ার খুলে খুঁজতে খুঁজতে মিহি সুরে বলতে লাগলো,
“হোয়্যার ইন মাই কার্ল?”
মিতুল একটু খুঁজতেই পেল হেয়ার রাবারটা। হাতে পরে নিলো। এখন সুন্দর লাগছে! মিতুল রুমে একা আছে। রেশমী আন্টি সাদাত আঙ্কলের সাথে কোথায় একটা বের হয়েছে। তারা ফিরলে সবাই মিলে ঝুলন্ত ব্রিজ দেখতে বের হবে। মিতুল বিছানার দিকে এগিয়ে এলো। মোবাইল হাতে তুলে নিলো। কার্লকে ম্যাসেজ পাঠাবে। কিন্তু কী লিখবে?
মিতুল টাইপ করতে লাগলো,
‘গুড মর্নিং কার্ল! হোয়াট আর ইউ ডুয়িং?’
মিতুল সেন্ড করে দিলো। তারপর রুম থেকে বের হলো। কোথায় যাবে এখন? পুলে যাওয়া উচিত? মিতুল পুলে চলে এলো।
পুলে তেমন মানুষ নেই। মাত্র কয়েক জনকে দেখা যাচ্ছে। কেউ সাঁতারও কাটছে না তেমন। মিতুলের হঠাৎ একটা পুলে চোখ পড়লো। জোহানকে দেখা যাচ্ছে পুলে। সাঁতার কাটছে না ও। পানিতে গা ডুবিয়ে স্থির দাঁড়িয়ে আছে।
মিতুল চাইছিল জোহান ওকে দেখার আগেই ও এখান থেকে চলে যাবে। যাওয়ার জন্য ঘুরেও ছিল। কিন্তু জোহান ওকে লক্ষ্য করতেই পিছন থেকে ডেকে উঠলো,
“হেই মিতুল!”
মিতুলের দাঁড়িয়ে যেতে হলো। না চাইতেও কেন যেন পিছন ফিরলো। জোহান ওকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললো,
“এদিকে এসো।”
মিতুল জোহানের কাছে যাবে না, যাবে না করেও এগিয়ে এলো। জোহানের গায়ে কোনো শার্ট, টি-শার্ট বা কোনো গেঞ্জি নেই। শুধু পরনে একটা হাফপ্যান্ট। জোহানকে খালি গায়ে দেখে কেমন যেন লাগলো মিতুলের। যদিও এখানে আরও দুই তিন জন ছেলেই আছে যাদের জোহানের মতো এমন গেট আপ। তাদের ব্যাপারটা স্বাভাবিক লাগলেও, জোহানের ব্যাপারটা কেমনই যেন লাগলো ওর।
মিতুল কাছে এসে দাঁড়াতেই জোহান পানি ছিটিয়ে দিলো। মিতুল বিরক্ত হয়ে বললো,
“কী করছো!”
জোহান হাত দিয়ে পানি নাড়াচাড়া করতে করতে বললো,
“সুইম করবে আমার সাথে?”
মিতুল মুখ বাঁকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।
“সাঁতার পারো না তুমি?”
“অবশ্যই পারি।” দৃঢ়তার সাথে বললো মিতুল।
“তাহলে এসো। আমার সাথে প্রতিযোগিতা করো। দেখি কে বেশি সাঁতারে পারদর্শী।”
“দরকার নেই। আমার মাথা খারাপ নয় যে তোমার সাথে সাঁতার কাটবো আমি।”
“এখানে মাথা খারাপের কথা উঠলো কেন? সত্যিটা মেনে নাও। তুমি আসলে সাঁতারে দুর্বল।”
বলে এ মাথা থেকে ও মাথা একবার সাঁতার কেটে এলো জোহান। সাঁতার কেটে মিতুলের কাছাকাছি আসতেই আবারও দুষ্টুমির ছলে পানি ছিটিয়ে দিলো মিতুলের গায়ে।
মিতুল পুলের কাছ থেকে সরে গেল কয়েক পা দূরে। পানি এসে ওর গায়ে লাগলো ঠিকই। জোহানের এমন আচরণে মিতুল অগ্নিচোখে তাকালো ওর দিকে। জোহান হাসলো।
মিতুল রেগে গেল ভীষণ। বেরিয়ে এলো পুল গ্রাউন্ড থেকে। সাদা টপসের অনেক জায়গা ভিজে গেছে পানিতে। মুখেও পানির ঝাপটা লেগেছে। মিতুল মুখ মুছতে মুছতে এগিয়ে আসছিল। পথে জায়িনের সাথে দেখা। মিতুলের মুখের দিকে কেমন একটা বাঁকা চোখে তাকালো সে। প্রশ্ন করলো,
“কোথায় গিয়েছিলে?”
“পুলে।”
বলে অল্পতেই পাশ কাটিয়ে চলে এলো মিতুল। রুমে এসে দেখলো রেশমী আন্টি এসে গেছে। রেশমী আন্টি ওকে দেখে বললো,
“রেডি হয়ে নাও। আমরা ব্রিজ দেখতে বের হবো।”
____________
মিতুল লায়ন্স গেইট ব্রিজ নিয়ে ভাবছে। ব্রিজের একদম পাশে মানুষের হাঁটার জন্য আলাদা ওয়াক ওয়ে রয়েছে। ব্রিজের মাঝখান থেকে গাড়ি চলে অহরহ। ব্রিজের মাঝখানের বাম পাশ থেকে লাইন ধরে সুশৃঙ্খল ভাবে গাড়ি আসে। আর ডান পাশ থেকে লাইন ধরে সুশৃঙ্খল ভাবে গাড়ি যায়।
ওয়াক ওয়েতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মানুষজনের চলাচল ছিল। কেউ কেউ নিজেদের ভিতর গল্প করছিল। কারো কারো দৃষ্টি ছিল দূর পাহাড়ে। কারো দৃষ্টি ছিল সমুদ্রের অদূরে। আবার কারো কারো দৃষ্টি ছিল দূরে সমুদ্রের পাশ ঘেঁষে থাকা সবুজ উদ্যানে। ব্রিজ থেকে নিচের পানির দিকে তাকালে দেখা যায় সোনালী রোদ্দুর পড়ে পানি সব চিক চিক করছে। ব্রিজ ধরে এগোলে
ব্রিজ থেকেই দেখা যায়, সমুদ্রের তীর ঘেঁষে সবুজে ঘেরা অরণ্যের পাশ কেটে একটা আঁকা বাঁকা রাস্তা এগিয়ে গেছে। সমুদ্রের সাথের ওই রাস্তা কোথায় গিয়ে মিলেছে মিতুল জানে না। মিতুলের ইচ্ছা ছিল ওই রাস্তায় নেমে খুব কাছ থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠ দেখবে একটু। কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠেনি। সবাই মিলে লায়ন্স গেইট ব্রিজ থেকে ফিরে গিয়েছিল আবার স্ট্যানলি পার্ক। কারণ, কালকে ১০০০ একরের উপর গড়ে ওঠা বিশাল পার্কটির অনেক জায়গা ভালো করে দেখা হয়নি। ভ্যাঙ্কুভারের বৃহত্তম অ্যাকোয়েরিয়াম স্ট্যানলি পার্কের ভিতরেই। আজকে স্ট্যানলি পার্কে গিয়ে ভ্যাঙ্কুভার অ্যাকুয়েরিয়াম দেখেছে সবার আগে। ওটা ছিল ওর জন্য বেশ মনোমুগ্ধকর। ওখানে সত্তর হাজারেরও বেশি প্রাণী আছে। কাছ থেকে কত জলজ প্রাণী দেখে এসেছে। পার্কের আরও কিছু স্পট ঘুরে দেখেছে। আরও কয়েকটা জায়গা ঘোরার কথা থাকলেও সময় স্বল্পতার জন্য তা হয়ে ওঠেনি। সময় সল্পতার কারণ ছিল সাদাত আঙ্কল এবং জায়িন। বিকেলে তাদের ফ্লাইট ছিল। আজকে বিকেল নাগাদ তারা এডমন্টন ফিরে গেছে অফিসিয়াল কাজের জন্য। তাদের ছুটির সময় ছিল কেবল তিনদিন। আজকে এই তিনদিনে পড়েছে। তাই তাদের ছুটতে হয়েছে আবার এডমন্টন। ও এবং রেশমী আন্টি আছে ভ্যাঙ্কুভারে। আরও দুই দিন থাকবে ওরা। জোহানও আছে। রেশমী আন্টি চাইছিলেন জোহানকে ওর ড্যাড এবং ব্রাদারের সাথে এডমন্টন পাঠিয়ে দিতে। কিন্তু, জোহান যেতে নারাজ। ও বলে দিয়েছে,
‘ড্যাড, ব্রাদারের কাজ আছে তাই তারা এডমন্টন ফিরে যাবে। আমি কেন যাব? আমার কি কোনো কাজ আছে? আমি তো মুক্ত পাখির মতো। এখানে মুক্ত হয়ে ঘুরতে পারি শত শত দিন। আমি ফিরবো না তাদের সাথে।’
নাছোড়বান্দার মতো ভ্যাঙ্কুভার থেকে গেল জোহান।
মিতুল এখন লবিতে দাঁড়িয়ে আছে। রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ানো। এই শহর এবং রেডিসন এখন রাতের সৌন্দর্যে আছে। চারিদিকে বাহারি আলোক সজ্জা। নিচে দেখা যাচ্ছে অনেকের চলাচল। কেউ জোড়ায় জোড়ায় চলছে, কেউ বা একাকী! মিতুলের মনে হলো ও নিজেও একা। কেউ নেই ওর সাথে। রেশমী আন্টি রুমে। রেশমী আন্টিকে বলেই ও হোটেল দেখতে বের হয়েছে। মিতুলের একাকিত্ব দূর করে দিতে হঠাৎ আগমন ঘটলো জোহানের।
যদিও জোহানের এই আগমনের থেকে ওর একাকী থাকাই ভালো ছিল। জোহান এসেই ওর পাশে দাঁড়িয়ে নিজের হাতে থাকা মোবাইলের দিকে তাকাতে ইঙ্গিত করলো ওকে। মিতুল দেখতে পেল মোবাইলে সেই মেয়েটা। যে মেয়ের গুণকীর্তন গেয়ে বেড়ায় জোহান ওর কানে কানে। নিশ্চয়ই আবারও এসেছে আগের মতো গুণকীর্তন গাইতে। জোহান মোবাইল স্কিনে তাকিয়ে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললো,
“দেখো, সান্ডা আমার কাছে পিক পাঠিয়েছে। একটু আগে ভিডিও কলে কথা হচ্ছিল ওর সাথে। তখন ও বললো আমাকে ওর তোলা নিউ পিক পাঠাবে। দেখো পাঠিয়েছে। মনে হচ্ছে যেন কোনো অপ্সরীর ছবি দেখছি মোবাইলে!”
মিতুল অবাক হয়ে দেখছে জোহানকে। জোহান ওকে ছবি দেখতে বলে নিজেই গভীর চোখে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। হাসছেও আবার মিটিমিটি। এই মেয়েটার জন্য এত পাগল জোহান? এই মেয়েটার জন্য পাগল হয়ে মরছে ও! অথচ যে মেয়েটা ওকে সত্যি ভালোবাসে, সেটা বুঝতে পারছে না ও? ও কি লেনির মনের অনুভূতি একটুও বুঝতে পারেনি?
মিতুল দেখতে পেল জোহান মেয়েটার ছবির দিকে ফ্লাই কিস ছুঁড়ছে। মিতুলের দেখে রাগ হলো। আস্ত একটা গাধা এই জোহান। লেনির আসল ভালোবাসা বুঝতে পারছে না, অথচ এই মেয়েটার জন্য পিরিত গলে গলে পড়ছে ওর। অসহ্যকর আহাম্মক একটা!
জোহান মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো। রেলিংয়ে সাথে হেলান দিয়ে মিতুলের দিকে মুখ করে দাঁড়ালো। তারপর বলতে লাগলো,
“সান্ডার ব্যাপারে টুকিটাকি সব জানা হয়ে গেছে আমার। সান্ডা একটা বেসরকারি কোম্পানিতে জব করে। ওর বাবা টিচার এবং ওর মা ডক্টর। ওর ছোট একটা ভাই আছে। ওর ভাইয়ের বয়স উনিশ এবং ওর বয়স সাতাশ। ও…”
জোহান পুরো কথা শেষ করতে পারলো না।
তার আগেই মিতুল বিস্ময় কণ্ঠে বললো,
“সাতাশ?”
জোহান স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,
“হ্যাঁ, সাতাশ। এতে এত অবাক হওয়ার কী আছে? বয়সে বড়ো যে কারো সাথে রিলেশন করাই যায়। ইট’স অল রাইট। আর সান্ডা তো আমার থেকে মাত্র তিন বছরের বড়ো। এটা খুবই স্বাভাবিক।”
বলতে বলতে নিজের কাঁধ নাড়ালো।
“তোমরা কি রিলেশনশিপে আছো?”
জোহান ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
“এই না না। রিলেশনশিপে নেই আমরা। তবে ভাবছি ওরকম কিছু একটা হতেও পারে। মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই আমরা রিলেশনে যাব।”
মিতুলের আর সহ্য হলো না। এই অন্ধ জোহানের চোখ খুলে দিতে ওকে বলতেই হলো,
“লেনি যে তোমাকে পছন্দ করে, ভালোবাসে, সেটা কি তুমি বোঝো না?”
বেশ তেজি শোনালো মিতুলের কণ্ঠ।
জোহান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“কোন বিষয়ে কথা বলছো তুমি?”
“আমি তোমার আর লেনির ব্যাপারে বলছি। লেনি মেয়েটা যে তোমাকে পছন্দ করে সেটা তো সুস্পষ্ট। আমি একদিন দেখে বুঝে গেলাম ও তোমায় পছন্দ করে। আর তুমি? তুমি এত কাল ধরে কাছে থেকেও সেটা বুঝতে পারোনি? কেমন মানুষ তুমি? হুট করে ক্লাবে একটা মেয়ে দেখে পাগলামো শুরু করেছো। অথচ যার তোমার জন্য সত্যি কারের ফিলিংস আছে, তাকে একবার বোঝার চেষ্টা করলে না? কেমন মানুষ তুমি?”
জোহান ফোঁস করে বিরক্তিকর নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর মিতুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“লিসন, আমাকে এবং লেনিকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। তুমি তোমার…”
“কেন ভাবতে হবে না? লেনি তোমাকে মুখ ফুঁটে হয়তো বলতে পারেনি নিজের পছন্দের কথা। কিন্তু তুমি? তোমার তো বোঝা উচিত। এত বছরের ফ্রেন্ডশিপ, অথচ এটা বোঝো না?”
জোহান ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে বললো,
“মুখ ফুঁটে বলতে পারেনি?” হেসে উঠলো জোহান।
মিতুল বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। জোহান বললো,
“লিসন, শি প্রপোজড টু মি।”
মিতুলের এতক্ষণের চিন্তাধারা সব মুহূর্তে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে গেল জোহানের একটা কথায়। চোখ কপালে উঠলো ওর। প্রপোজ মানে?
“ও প্রপোজ করেছিল আমাকে। আমি একসেপ্ট করিনি। বিকজ, আমি মুসলিম। আমি বিয়ে করলে কোনো কানাডিয়ান মুসলিম মেয়েকেই করতে চেয়েছি। তো যখন আমি একটা মুসলিম মেয়েকেই বিয়ে করবো, তখন ওর সাথে কিছুদিনের জন্য রিলেশনে জড়ানোর মানে কী? আছে কোনো মানে? নেই। তাহলে শুধু শুধুই এসব…”
জোহান এবার লবি ছেড়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো।
মিতুল পিছন থেকে বলে উঠলো,
“তাহলে সান্ডা? সান্ডা কি মুসলিম? ওর জন্য তো ঠিকই তোমার পিরিত উপচে উপচে পড়ছে! দিশেহারা প্রেম তোমার।”
জোহান কয়েক পা দূরত্বে এসে আবার থামলো। মিতুলকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“সান্ডা! হ্যাঁ, এই সান্ডা শুধুই একটা অহেতুক জিনিস ছাড়া আর কিছুই নয়। এক দুই দিনের অহেতুক ব্যাপার। তোমাকে তো আগেই বলেছি, দিনে অনেক মেয়ের প্রোপোজ আসে আমার কাছে। ভাবলে কী করে যে এত এত মেয়ের মাঝে আমি এই ক্লাবে দেখা সান্ডাকে পছন্দ করবো? বোকা না কি তুমি?”
মিতুল শুধু ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইল। জোহান চলে গেল।
মিতুলের দিশেহারা লাগছে। পাগল হয়ে যাবে বোধহয়। এটা কী করলো ও? লেনির হয়ে কেন ওকালতি করতে গেল ও? না কিছু জানে লেনির ব্যাপারে, আর না জানে জোহানের ব্যাপারে। তাহলে এরকম করে কেন বলতে গেল জোহানকে? কেন? দেখো না, কীরকম ভাবে কথা শুনিয়ে গেল জোহান ওকে! বোকা পর্যন্ত বলে গেল! ছি, জীবনে এরকম ভাবেও অপমান, লাঞ্ছিত হওয়া বাকি ছিল? ছি ছি ছি।
আর সান্ডার ব্যাপারটা? কী হলো এটা? জোহান এই দুদিন ধরে সান্ডার গুণকীর্তন গাইলো। আর এখন কীসব বলে চলে গেল? মিতুলের সত্যিই দিশেহারা লাগছে। সত্যি সত্যিই লাগছে। এতটাই দিশেহারা লাগছে যে, ইচ্ছা করছে খুব জোরে একটা চিৎকার করতে। কিন্তু সেই চিৎকার ওর ভিতরেই গুমরে মুচড়ে নেতিয়ে পড়লো।
(চলবে)