#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৫৫
_____________
মিতুলের মুখ দেখে জোহানের দুশ্চিন্তা হলো। হঠাৎ করে মিতুলের মুখ এমন হয়ে গেল কেন? আর মমই বা কী বললো ব্রাদার, মিতুলকে নিয়ে?
মমের বলা বাংলা থেকে জোহান শুধু তিনটা শব্দই ধরতে পেরেছে। তা হলো, জায়িন, মিতুল এবং ঘর। জোহান আশঙ্কা করলো মম যাই বলুক না কেন, ভালো কিছু বলেনি। ভালো কিছু বললে মিতুলের চাহনি, চেহারা এমন হতো না। জোহান ওর পাশে থাকা নাবিলের দিকে কিছুটা মুখ এগিয়ে নিয়ে, আস্তে করে বললো,
“কী নিয়ে কথা হচ্ছে? ব্রাদার, মিতুল…কী বললো আমার মম?”
রেশমীর কথা শুনে নাবিল, মিলানও বিস্মিত। হঠাৎ করেই শুনলো এমন কিছু।
নাবিল নিজের বিস্ময়াভিভূত ভাবকে কিছুটা সামলে নিয়ে জোহানকে ইংলিশে বুঝিয়ে বললো,
“তোমার মম তোমার ব্রাদারের সাথে মিতুলের বিয়ের কথা বলছে।”
নাবিলও জোহানের মতো নিচু স্বরেই বললো কথাটা।
জোহানের স্বাভাবিক চোখ জোড়া হঠাৎ জ্বলে উঠলো। জোহান চকিতে মিতুলের দিকে তাকালো। মিতুল এখনও ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। সেই আগের মতো। জোহান মিতুলের থেকে চোখ সরিয়ে মমের উপর দৃষ্টি ফেললো।
মমের মুখে মিটিমিটি হাসি। জোহানের চোখ মমের পাশে ব্রাদারের উপরও পড়লো। ব্রাদারের চেহারা একেবারে স্বাভাবিক। কোনো বিস্ময়ের ছাপ নেই।
জোহানের ভিতরটা হঠাৎ ক্রোধে জ্বলে উঠলো। আর নিশ্চুপ, স্থির বসে থাকতে পারলো না। বসা থেকে দাঁড়িয়ে বেশ জোরালো কণ্ঠে বলে উঠলো,
“ব্রাদারের সাথে মিতুলের বিয়ে মানে? এটা কোন ধরণের মজা চলছে এখানে? হঠাৎ করে ব্রাদারের সাথে মিতুলের বিয়ের কথা কোত্থেকে, কীভাবে উঠলো? যেখানে মিতুলের বিয়ের কথা হবে আমার সাথে, সেখানে ব্রাদার…কী করে সম্ভব এটা?”
লিভিং রুমে উপস্থিত থাকা সবার মুখ বিস্ময়ের কালো ছায়ায় ঢেকে গেল। রেশমীর কথা শুনে মিতুল এবং জোহান যতটা না অবাক হয়েছে, জোহানের কথা শুনে এবার তার থেকে অনেক বেশি অবাক হলো ওদের ফ্যামিলি।
রেশমী তো বিস্ময়ের ঘোরে দাঁড়িয়েই গেলেন,
“হোয়াট?”
মিতুলের ভিতর ভয়ের দানা ক্রমশ আরও দলা পাকিয়ে উঠছে। ভয়ে হাত, পা সব কাঁপছে ওর।
রেশমী বিস্ময়, অবিশ্বাসের জাল আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এইমাত্র ভুল শুনলেন মনে হচ্ছে। কিন্তু যা শুনলেন সেটা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তার ছেলে ঠিক এই কথাটাই বলেছে। রেশমীর মন মানতে চাইছে না এটা। সে জানে জোহান এমন মজা করার ছেলে নয়। যেটা বলেছে সেটা সিরিয়াস। তারপরও তিনি মনকে বৃথা বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করে বললেন,
“দেখো জোহান, এমন একটা মুহূর্তে মজা করো না তুমি। এটা একটা সিরিয়াস বিষয়। পাগলামো করো না এখানে।”
জোহান অশান্ত গলায় বললো,
“পাগলামো? কে পাগলামো করছে? আমিও খুব সিরিয়াস হয়ে এই কথাগুলো বলছি মম। হঠাৎ করে কীভাবে ব্রাদারের সাথে মিতুলের বিয়ের কথা উঠতে পারে? ইট’স ইম্পসিবল! মিতুল আমার। ওর বিয়ে হলে আমার সাথে হবে। সেখানে তুমি ব্রাদারের সাথে ওর বিয়ের কথা বলছো কীভাবে?”
জোহানের কথায় লিভিং রুমে উপস্থিত সবাই আগের থেকে আরও বেশি চমকিত হলো। মাহিরা এবং নাহিদ তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মিতুলের দিকেও তাকাচ্ছে বার বার।
মিতুল উপলব্ধি করতে পারছে মা, বাবার দৃষ্টি ওর উপর এসে পড়ছে। কিন্তু নিজের একবার তাদের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস হলো না।
রেশমীর স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে ছেলের কথায়। এসব কী শুনছে?
“তোমার কি মাথা ঠিক আছে? এসব কী বলছো তুমি?”
জোহান গলার স্বর আরও উচ্চ করে বললো,
“অবশ্যই আমার মাথা ঠিক আছে। মাথা তো খারাপ হয়েছে তোমাদের। কী করে তোমরা ব্রাদারের সাথে মিতুলের বিয়ের কথা ভাবতে পারলে? মিতুলকে ভালোবাসলাম আমি, অথচ বিয়ের কথা উঠলো ব্রাদারের সাথে? কী করে? হঠাৎ করে ব্রাদারের সাথে মিতুলের বিয়ের কথা ওঠার মানে কী? আমার চোখে তো কোনো মানেই ধরা দিচ্ছে না। কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছি না আমি। মিতুলকে আমি ভালোবাসি, বিয়ে হবে আমার সাথে। এখানে ব্রাদার আসতে পারে না।”
রেশমীর সর্বাঙ্গে রাগ ছড়িয়ে পড়ছে। হাত মুঠো হয়ে আসছে রাগে। তিনিও চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,
“অনেক হয়েছে জোহান। অনেক বাড়াবাড়ি করে ফেলেছো তুমি! নিজের উশৃঙ্খলতা আর দেখিও না এখানে।”
“আর কত মম? যখন যেটা করি সেটাই তোমার কাছে উশৃঙ্খলতা মনে হয়? এটা মোটেও উশৃঙ্খলতা নয়। আমি শুধু তোমাদের ভুলটা দেখিয়ে দিচ্ছি। মিতুলের সাথে ব্রাদারের বিয়ের কথা বলা তোমার ভুল হয়েছে। ব্রাদারের সাথে নয়, মিতুলের বিয়ে আমার সাথে হওয়া উচিত। বিকজ, আই লাভ হার!”
মিতুলের ফ্যামিলির প্রত্যেকে ঘোর বিস্ময়ে ডুবে আছে। এখানের কথাবার্তা সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে যেন। মাহিরা মিতুলের দিকে তাকালেন আবার। মিতুল মাথা নুইয়ে বসে আছে। মুখ তোলেনি একবারও।
লিভিং রুমে উপস্থিত সবার মাঝে বিস্ময়, উত্তেজনা থাকলেও জায়িনকে এর মাঝে খুবই শান্ত দেখালো। ও খুবই স্বাভাবিক। ও যে আগে থেকেই জানতো এমন হবে।
রেশমী এবার কিছু বললেন না জোহানকে, শুধু রাগে ফুঁসলেন।
জোহান রাগের মাঝেও নিজেকে শান্ত রেখে, শান্ত কণ্ঠে বলার চেষ্টা করলো,
“আমি বুঝতে পারছি ব্যাপারটা তোমরা আগে থেকে জানতে না। আমি জানাতে চেয়েছিলাম খুব শীঘ্রই। মিতুলদের বাসায় থাকাকালীনই জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে গেল! যাক কোনো ব্যাপার না। তোমরা আগে জানতে না, এখন তো জানো। সুতরাং ব্রাদারের সাথে নয়, আমার সাথে মিতুলের বিয়ে ঠিক করো।”
রেশমী নিজের রাগ আর ধরে রাখতে পারছেন না। তিনি তারস্বরে বলে উঠলেন,
“অসম্ভব! ভুলে যাও ওসব। এমনটা কখনোই হবে না।”
জোহান কষ্ট করে যে শান্ত ভাব ধরে রেখেছিল নিজের মাঝে, আর সেটা পারলো না। বরং ওর রাগ আরও বেড়ে গেল। মমের মতোই তারস্বরে বললো,
“এমনটা কখনো হবে না কেন? সবটা জানার পরও কীভাবে এমন করতে পারো?”
“তোমার ওসব মানি না আমি। তোমার পাগলামির ভালোবাসায় কারো কিছু যায় আসে না।”
মমের কথায় হেসে উঠলো জোহান। শ্লেষপূর্ণ হাসি। বললো,
“এটাকে তোমার পাগলামির ভালোবাসা মনে হয় মম?”
জোহান মিতুলের দিকে তাকালো। মিতুল এখনও মাথা নুইয়ে বসে আছে।
জোহান মিতুলের দিকে এগিয়ে এলো। কাছে এসে মিতুলের হাত ধরে দাঁড় করালো মিতুলকে।
আকস্মিক এমন ঘটনায় মিতুল আঁতকে উঠলো। তাকাতে না চাইলেও একবার চোখ পড়লো সবার উপর। মা, আব্বুর কঠিন মুখ দেখে ভয়ে মিইয়ে গেল মন। মা, আব্বুর কঠিন মুখে তাকানোর সাহস যে ওর নেই। মিতুল দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো। ঢোক গিললো ভয়ে। বুক ধুকপুক করছে।
জোহান মিতুলের হাত ছাড়লো না। হাত ধরে রেখেই বললো,
“মিতুল, বলো সবাইকে, এটা কি আমাদের পাগলামির ভালোবাসা?”
মিতুল কী বলবে? ভয়ে সমস্ত শরীর কাঁপছে ওর। চোখ নিচু করে রাখা এবং ভয়ার্ত মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারলো না। এতটাই ভয় করছে যে কান্না পেয়ে যাচ্ছে।
জোহান মিতুলকে নিশ্চুপ দেখে ধরে রাখা হাতটায় মৃদু ঝাঁকি দিয়ে বললো,
“মিতুল, বলে দাও তুমিও।”
মিতুল আবারও আঁতকে উঠলো। চোখ পড়ে গেল জোহানের চোখে।
জোহানের চোখে উত্তেজনা, কষ্ট, রাগ, ভয় সবকিছুর সংমিশ্রণ। সেই সাথে গভীর ভালোবাসা এবং ভরসাও দেখতে পেল চোখ দুটোতে। এই বাদামি চোখ জোড়ায় মিতুল এর আগে এতকিছু দেখেনি। এত কিছু দেখতেও চায়নি। যা দেখতে চেয়েছিল তা কেবল, আনন্দ, চঞ্চলতা আর ওর জন্য গভীর ভালোবাসা। আজ কেন এতকিছু দেখতে হচ্ছে?
মিতুল নিজের চোখে কিছুই দেখাতে পারলো না। জোহান ওর চোখে যেটা দেখতে পাবে, সেটা হলো শুধু ভয়।
জোহান মিতুলের চোখ পড়তে পারলো,
বুঝতে পারলো মিতুল কিছুই বলতে পারবে না। জোহান বললো,
“ঠিক আছে, তোমাকে বলতে হবে না।”
জোহান আবারও লিভিং রুমের সবার দিকে তাকালো। সবার উদ্দেশ্যে বললো,
“আমরা একে অপরকে খুব করে ভালোবাসি। এ ভালোবাসার শুরুটা ছিল মিতুল কানাডা থাকতেই। আমরা দুজন রিলেশনশিপে আছি দীর্ঘ সময় ধরে। এটা শুধু নামেই রিলেশনশিপ নয়, আমরা বিয়েও করবো। আমি মমের কাছে এটা জানাতে চেয়েছিলাম। হয়তো আমাদেরই ভুল ছিল। আমরা জানাতে বেশি সময় নিয়েছি। কিন্তু এখন তো তোমরা সবটা জানলে। যেখানে মিতুল আমাকে ভালোবাসে, সেখানে আমার ব্রাদারকে বিয়ে করবে কীভাবে? মিতুল যাকে বিয়ে করবে সেটা আমি। ও শুধু আমাকেই ভালোবাসবে।
ব্রাদার নয়, আমার আর মিতুলের বিয়ের বন্দোবস্ত করো। সিনক্রিয়েট করো না আর।”
জোহানের কথার পর পরিবেশটা খুব নীরব হয়ে গেল। কেউ কিছু বললো না।
মাহিরা উঠে এলো মিতুলের কাছে। শান্ত কণ্ঠে বললেন,
“জোহান যা বললো তা কি সত্যি? তোমরা দুজন দীর্ঘ সময় ধরে রিলেশনশিপে আছো?”
মায়ের প্রশ্ন মিতুলকে আরও ভীত করে দিলো। বুকের ভিতর হাতুড়ি পেটার শব্দটা আরও ভারী হলো। মিতুল মায়ের কথার কোনো উত্তর দিতে পারলো না। ভয় গলা থেকে স্বর কেড়ে নিয়েছে। মিতুল শুধু মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকলো।
মাহিরা এর মাঝেই মিতুলকে এক হাত ধরে টেনে নিজের দিকে ফেরালো।
মিতুলের হৃদয়ে যেন বজ্রপাতের ঝমকা লাগলো। হাত পায়ের কাঁপন বেড়ে গেল। মাহিরার গলা কঠিন হলো,
“কিছু বলছো না কেন? যা জিজ্ঞেস করলাম তার উত্তর দাও। জোহান যা বললো তা সত্যি কি না?”
মিতুল কিছু বললো না। নিচের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
রেশমী জোহানের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,
“মিতুল কানাডা থাকতে তোমাদের ভালোবাসার শুরু হয়েছিল। আর মিতুল কানাডা যাওয়ার আগে থেকেই আমি মিতুলকে জায়িনের বউ করবো ভেবে রেখেছিলাম। যদিও তখন এই ব্যাপারটা অতটা সিরিয়াস ছিল না। এ ব্যাপারে মাহিরার সাথে তখন আমার টুকটাক কথা হয়েছিল। মিতুলকে কানাডা ঘুরতে পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল, যাতে জায়িনের সাথে ওর চেনা পরিচয় হয়, আমাদের ফ্যামিলিকে ভালো করে চিনতে পারে, জানতে পারে, আমাদের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারে নিজেকে।
নাহিদ ভাই ওকে একা একটি মেয়েকে কানাডা ছাড়তে নারাজ ছিলেন। আমি অনেক বুঝিয়ে, ভরসা দিয়ে তাকে রাজি করিয়েছি। এসবের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল? জায়িন এবং মিতুলের বিয়েটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।”
মিতুলের এতক্ষণ শুধু ভয় ছিল। ভয়ের সাথে এবার জন্ম নিলো রাগ আর ঘৃণাও। কানাডা ঘুরতে যাওয়া অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল ওর। আজ যাক, কাল যাক যেতই কানাডা। কিন্তু মা যখন ওর স্বপ্নটা অল্পতেই পূরণ দিয়েছিল, তখন ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি ওর স্বপ্ন পূরণের পিছনে এসব ছিল। ও জানতো, মা ওর স্বপ্ন পূরণ করছে। কিন্তু যদি জানতো কানাডা পাঠানোর পিছনে আসলে এসব গল্প আছে, তাহলে হয়তো কানাডা যাওয়া হতো না।
মা, আব্বু কী করে পারলো ওকে কিছু না জানিয়ে, ওর মতামত না নিয়ে এতদূর এগিয়ে যেতে? কেন জানালো না? আর কেনই বা এখন এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো? এ ভুল কার? ওর আর জোহানের? না কি তাদের? কার ভুলের জন্য কাকে মাশুল গুনতে হবে এখন?
জোহানের কষ্ট হচ্ছে। গলা থেমে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু এই পরিস্থিতি ঠিক না বানিয়ে, সবার ভুল না শুধরিয়ে ও থামবে না।
“মম, এই ভুলটা কার ছিল? ভুলটা কি তোমাদের ছিল না? তোমরা কি একবারের জন্যও জানিয়েছিলে ব্রাদারের সাথে মিতুলের বিয়ে ঠিক করে রেখেছো? জানাওনি।
তোমাদের ভুলের জন্য তো আমরা শাস্তি পেতে পারি না।”
রেশমী বললেন,
“হ্যাঁ, ভুলটা আমাদেরই। তোমাদের সবাইকে আগেই জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।
আমরা জায়িন আর মিতুলের বিয়ের ব্যাপারটা সারপ্রাইজ হিসেবে রেখেছিলাম। সারপ্রাইজটা তোমাদের উদ্দেশ্যেই ছিল। কিন্তু যদি জানতাম এই সারপ্রাইজ রাখতে গিয়ে এমন কিছু হবে, তাহলে আগেই জানিয়ে দিতাম। আমার তো ধারণাতেই ছিল না তোমার আর মিতুলের মাঝে এমন কিছু হতে পারে। হ্যাঁ, দেখতাম, জানতাম তোমরা দুজন একটু বেশিই ঘোরাঘুরি করতে এক সাথে। কিন্তু তোমাদের মাঝে এমন কিছু হতে পারে সত্যিই ভাবিনি আমি। আমার মাথায় ছিল শুধু জায়িন এবং মিতুল। তাই তোমার ব্যাপারটা অতটা খেয়াল করিনি। আর এই খেয়াল না করার জন্যই তোমরা এতদূর চলে গিয়েছো। আমি চাই না এটা আর এতটুকু সামনে আগাক। তোমাদের দুজনের এই ব্যাপারটা এখানেই থামিয়ে দাও। তোমরা যেটাকে ভালোবাসা বলছো, ওটাকে ভালোবাসা বলে না। ওটা ছেলেমানুষি। আবেগে বশীভূত হয়ে আছো তোমরা। ওটা অল্পতেই ঠিক হয়ে যাবে। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত থেকে নড়বো না। জায়িনের সাথেই মিতুলের বিয়ে হবে। তোমরা তোমাদের মাথা থেকে এসব ঝেড়ে ফেলে দাও। রিল্যাক্স, ফ্রেশ মুডে চলে আসো। ঠাণ্ডা মাথায় ভাবো, দেখবে সব ঠিকঠাক লাগবে।”
“তোমরা তোমাদের এই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারো না! এ বিয়ে হতে পারে না, এ বিয়ে হতে দেবো না আমি।”
তীব্র রাগের সাথে কথা গুলো বলেই জোহান ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া দিলো।
কিন্তু দরজার কাছে গিয়ে আবার থামলো। পিছন ফিরে সরাসরি মিতুলের দিকে তাকালো। মৃদু কণ্ঠে বললো,
“হেই মিতুল, মুখটা এমন করে রেখেছো কেন? কী ভাবছো এত? তুমি সবসময়ই আমার থাকবে। তুমি তো কেবল আমারই লিটল এঞ্জেল!”
জোহান আর দাঁড়ালো না। দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।
এমন একটা মুহূর্তেও জোহানের কথা শুনে হৃদয়ে শুভ্র অনুভূতির পরশ অনুভব করলো মিতুল। মনে মনে জোহানের কথার প্রতিউত্তর দিলো,
“হ্যাঁ, তোমার লিটল এঞ্জেল সবসময় তোমারই থাকবে!”
মিতুল দরজা থেকে চোখ সরিয়ে এনে সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো একবার। তারপর বললো,
“তোমরা ঠিক করছো না এটা।”
মাহিরা এতক্ষণ খুব কষ্টে নিজেকে সামলে রেখে সবকিছু শুনছিল। মেয়ের কথা শুনে সেটা আর পারলেন না। তার রাগ আর বাধ মানলো না। শক্ত করে চেপে ধরলো মিতুলের হাত। লিভিং রুম থেকে টেনে নিয়ে গেলেন মিতুলকে।
(চলবে)