চেরি ব্লসমের সাথে এক সন্ধ্যা পর্ব: ৫৬

0
1087

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৫৬
____________

মাহিরা মিতুলকে টেনে নিয়ে এসে, রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করলেন।

“জোহান যে কথাগুলো বলে গেল তা কি সত্যি? তুমি ভালোবাসো জোহানকে?”
মাহিরার কণ্ঠ ধীরে ধীরে আরও রুক্ষ হয়ে উঠছে।

মিতুলের মাঝে ভীতি ছায়া ছেয়ে আছে। মিতুল নিজের ভীতি, ভয়কে বাধ মানিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দিলো,
“হ্যাঁ।”

মেয়ের কথা শুনে মাহিরা জোরে একটা চড় মারলেন মিতুলকে। মিতুলের মুখ হেলে যায় অন্যদিকে। সেই সাথে চোখ দিয়ে ঝরে পড়ে অশ্রুজল।

মাহিরা আক্রোশ পূর্ণ গলায় বললেন,
“এসবের জন্য কানাডা পাঠিয়েছিলাম তোমাকে? আমাদের মান সম্মান কিছু রাখলে না তুমি! সব ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছো একেবারে। কানাডা গিয়ে প্রেম, ভালোবাসা করে বেড়িয়েছো? দীর্ঘ রিলেশনশিপ তোমাদের?”

মিতুল কাঁদছে। দু চোখ দিয়ে অনবরত ঝরছে অশ্রুধারা। বুকের ভিতর কষ্টে সব তিক্ত হয়ে যাচ্ছে। মিতুল নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলো না। অশ্রুনির্গত চোখে মায়ের দিকে ফিরে তাকালো। ভয় ভুলে গেল বেমালুম। অভিমান জর্জরিত রাগি, তিক্ত গলায় প্রায় চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
“কী ভুল? জোহানকে ভালোবাসলে কী ভুল? হ্যাঁ আমি জোহানকে খুব বেশি ভালোবাসি। কানাডা গিয়ে প্রেম করে বেড়িয়েছি ওর সাথে। কী হয়েছে তাতে? তোমরা কি আগে থেকে বলে দিয়েছিলে কাউকে ভালোবাসা যাবে না, কারো সাথে রিলেশনে জড়ানো যাবে না? বলোনি তো। তাহলে এখন এত কী সমস্যা? আমি জোহানকে ভালোবাসি তাতে এত কী সমস্যা তোমাদের?”
মিতুল কথা বলা শেষ করতেই মাহিরা আরও জোরালো একটা চড় মারলেন মিতুলকে। মিতুলের গাল কিছুটা রক্তিম হয়ে গেল।

“তোমার এত অধঃপতন হয়েছে? তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো? ভুলে গেছো সব শিক্ষা দীক্ষা? এতকাল কী শেখালাম তোমায়?”

মিতুল চোখ তুলে তাকালো মায়ের দিকে। দু চোখ অশ্রুসিক্ত, লাল। মায়ের মুখে রাগের প্রতিফলন মিতুলের অতটা ভয় লাগলো না আর। ভয়ডর সব ভুলে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
“জোহানকে ভালোবাসলে যদি এতই সমস্যা হবে তোমাদের, তাহলে আগে কেন বলোনি? আগেই বলে দিতে কাউকে ভালোবাসা যাবে না, কারো প্রেমে পড়া যাবে না। বলোনি কেন? আর জায়িনের সাথে যে আমায় বিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা আগে থেকেই করে রেখেছো, সেটাই বা কেন জানাওনি? কানাডা যাওয়ার আগেই জানাতে এটা। তাহলে জোহানকে ভালো না বাসার যথাসাধ্য চেষ্টা করতাম আমি। যেহেতু জানাওনি এই ভুলটা তোমাদের। আমার অথবা জোহানের নয়। আমাকে কিছু না জানিয়ে, আমার মতামত না নিয়ে হুট করে জায়িনের সাথে বিয়ের কথা বললেই তো আমি জায়িনকে বিয়ে করে নেবো না। আমি জোহানকে ভালোবাসি। ওর সাথেই বিয়ে হবে আমার।”

মাহিরা চাপা গর্জন করে ডেকে উঠলো,
“মিতুল!”

মিতুল আগের মতোই বললো,
“বিয়ে করলে আমি ওকেই করবো।”

মাহিরার চোখে রাগের পাশাপাশি, অবিশ্বাসের ঘোরও লেগে আছে। তার মেয়ে তার মুখের উপর এরকম কথা বলতে পারে তা তার ধারণার বাইরে।

______________

“জায়িন, তোমার ভাই এসব কী বলে গেল? আমার তো পাগল পাগল ফিল হচ্ছে। কী বলে গেল ও এসব?”
রেশমী এখনও বিস্ময়ের জাল চিরে বেরোতে পারেননি।

জায়িন মমের হাত ধরে মমকে শান্ত করার উদ্দেশ্যে বললো,
“মম, কুল ডাউন!”

রেশমী শান্ত হতে পারলেন না। তার মুখ থামলেও, ভিতরের অস্থিরতা রয়ে গেল। এমন কিছু হতে পারে এটা আসলেই কল্পনাতে ছিল না তার। জোহান এবং মিতুলের মাঝে প্রেম, ভালোবাসা সম্পর্কিত কিছু সৃষ্টি হতে পারে কখনো ভাবেননি তিনি। একসাথে মিতুল, জোহানকে ঘুরতে দেখেছে অনেক। তার খারাপ লাগতো জোহানের সাথে মিতুলের এত ঘোরাঘুরি। তাই বলে সেই খারাপ লাগাটা এমন ছিল না। তিনি মিতুলকে বেশিরভাগ সময় জায়িনের সাথে দেখতে চাইতেন। কিন্তু মিতুল জায়িনের সাথে বেশি সময় না কাটিয়ে, জোহানের সাথে থাকতো। এই ব্যাপারটা খারাপ লাগতো তার। তিনি মিতুলকে জায়িনের সাথে দেখতে চাইতেন। মিতুল জায়িনের সাথে বেশি কথা বলছে কি না, ঘুরছে কি না এসব যাচাই করতে গিয়ে, ওদিকে মিতুল এবং জোহানের মাঝে যে এমন কিছুর সৃষ্টি হতে পারে সেদিকে একদম খেয়াল করেনি তিনি। তার মাথায় সবসময় ছিল জায়িন, মিতুল। আর তাছাড়া জোহানের যে মিতুলকে ভালো লাগতে পারে এমনটাও ভাবতে পারেনি। জোহান যেমন ছেলে, এত এত সুন্দরী মেয়ে ফ্রেন্ড যার, সে হঠাৎ মিতুলের প্রেমে পড়বে এটা ভাবাও যে একটু কষ্টকর। কিন্তু এই কষ্টকর জিনিসটাই একেবারে আসল কষ্ট হিসেবে এসে দাঁড়ালো। এখন এই ঝামেলার সমাপ্তি কী করে ঘটবে, সেটা সত্যিই বুঝতে পারছেন না। যে মেয়েকে বড়ো ছেলের বউ করে নেবে ভেবেছে, সেই মেয়েকে ছোট ছেলের বউ করে নেওয়াটা একেবারেই অসম্ভব! মিতুলের বিয়ে হলে জায়িনের সাথেই হবে।

লিভিং রুমে রেশমী, জায়িনের পাশাপাশি নাহিদ সাহেব, মিলান এবং নাবিলও এখন পর্যন্ত উপস্থিত। মিলান, নাবিল এখনও বাকরুদ্ধ হয়ে আছে।
নাহিদ সাহেবের মাথায় পুরো ঘটনা ঘুরপাক খাচ্ছে। কাউকে কিছু বলার মতো খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।
মাহিরা যে মিতুলকে ওভাবে টেনে নিয়ে গেল সেদিকে হয়তো বিমূঢ়তায় কারো কোনো খেয়াল নেই। নাহিদ সাহেবের আছে। তিনি এখান থেকে এখন ওঠার তাগিদ অনুভব করলেন। আগে তার মেয়ের কাছে গিয়ে ব্যাপারটা দেখা দরকার। নাহিদ সাহেব বসা থেকে উঠে ভিতরের দিকে গেলেন।

_____________

“তোমার মতো মেয়ের জন্য এমন একটা দিন দেখতে হবে ভাবিনি আমি। নম্র, ভদ্র একটা মেয়ে তৈরি করতে চেয়েছিলাম তোমাকে। কিন্তু তুমি ধীরে ধীরে একটা বেয়াদব হয়ে উঠলে!”

মাহিরার কথার মাঝেই দরজায় করাঘাত ও সেই সাথে নাহিদ সাহেবের গলা শোনা গেল,
“মাহিরা দরজা খোলো।”

বাবার উপস্থিতিতে মিতুলের হৃদপিণ্ডে ভয়ের ঝাপটা লাগলো আবারও।
মাহিরা গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
নাহিদ সাহেব ভিতরে প্রবেশ করে প্রথমেই দৃষ্টি ফেললেন মেয়ের উপর। মিতুল চোখ নিচু করে রাখলো। নাহিদ সাহেব এগিয়ে এসে দাঁড়ালো মিতুলের কাছে। মিতুল ভয়ে ভয়ে আছে। নাহিদ সাহেব অবশেষে নিজের মুখ খুললেন,
“তোমার থেকে এটা মোটেই আশা করিনি।”

আব্বুর কথা বেশ করে লাগলো মিতুলের মনে। ভয় করছে ওর সেটা ঠিক, কিন্তু মুখ বুজে রইল না। ভয় পেয়ে মুখ বুজে থাকলে চলবে না ওর। মিতুল বললো,
“আমার কোনো দোষ নেই। এমনটাই হওয়ার ছিল।”

মাহিরা তেড়ে এলেন,
“কোনটা হওয়ার ছিল? জোহানের সাথে তোমার প্রেম, সেটাই? জোহানের সাথে তোমার প্রেমের বিষয়টা কি সঠিক মনে হচ্ছে? তোমাকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম কি প্রেম করে বেড়ানোর জন্য? জোহানের সাথে প্রেম করে বেড়াও তুমি?”

“জোহানের জায়গায় জায়িনের সাথে প্রেম করে বেড়ালে তুমি খুব খুশি হতে, তাই না মা?”
মায়ের কথার প্রতিবন্ধকতা থেকে মিতুলের মুখ থেকে আপনা ভাবেই বেরিয়ে গেল কথাটা।

মাহিরার রক্ত গরম হয়ে গেল। তিনি আবারও মিতুলকে আঘাত করার জন্য এগিয়ে আসতে চাইছিলেন, কিন্তু নাহিদ হাত ধরে থামিয়ে দিলেন।
“মাথা গরম করো না মাহিরা।”

“মাথা গরম করবো না? তোমার মেয়ে যেসব বলছে, আর করছে তাতে মাথা গরম না করে উপায় আছে?”
মাহিরা মিতুলের দিকে তাকালেন,
“শোনো, যদি তুমি ভেবে থাকো ওই বাউন্ডুলে ছেলেটার সাথে তোমার বিয়ে দেবো, তাহলে সেটা ভুল। যে ছেলে মদ খায়, কারো কথা শোনে না, নিজের ইচ্ছা মতো চলে, মায়ের কথার প্রধান্য দেয় না, বেয়াদবি করে, তেমন ছেলের সাথে আমি মেয়ে বিয়ে দেবো না। নিজের চোখেই তো দেখলাম রেশমীর সাথে কেমন বেয়াদবি করলো। একটা কথা শোনানো গেল না ছেলেটাকে। জায়িন সবদিক থেকে পারফেক্ট। জায়িন ম্যাচিউর একটা ছেলে। ভালো জব করে, নম্র-ভদ্র। তোমার চোখে ওকে ভালো না লেগে, জোহানকে ভালো লাগলো?”

মিতুল বলে উঠলো,
“জায়িন ভদ্র না ছাই। আস্ত একটা অহংকারী! আর জায়িন যদি ভদ্র হয়েও থাকে তাহলেও আমার কিছু যায় আসে না। আমি ওকে নিয়ে ভাবতেও চাই না।”

মেয়ের কথায় নাহিদ সাহেবের রাগ এবার একটু বাড়লো। তিনি বলেই ফেললেন,
“জায়িনকে নিয়ে না ভেবে, জোহানকে নিয়ে ভাবতে চাও?”

আব্বুর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সাহস হলো না মিতুলের।

মাহিরা বললেন,
“তুমি বরাবরই বোকা ছিলে, এখনও আছো। তোমাকে সবসময়, সবকিছু আমাকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে দিতে হয়। তুমি বোকামি ছাড়া আর কিছুই পারো না। সবথেকে বেশি বোকামিটা করছো এখন। তোমার এই বোকামির সিদ্ধান্তে সুখী হতে পারবে না কোনো দিন। তাই বোকামি ছাড়ো, সবকিছু ভালোয় ভালোয় মেনে নাও। তোমার যদি বিয়ে হয়, জায়িনের সাথেই হবে। নয়তো জায়িন, জোহান কারোর সাথেই নয়।”

মিতুল মায়ের কথার প্রতিবাদ করে উঠলো,
“অসম্ভব! ওই অহংকারীটাকে বিয়ে করার কথা আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারি না।”

“দুঃস্বপ্ন নয়, স্বপ্নেই ভাবতে হবে তোমার। তোমার সকল ভাবনার শেষপ্রান্তে জায়িনই থাকবে।”

মিতুলের কান্না একটু থেমেছিল। মায়ের এত কঠিন কথায় আবারও ঝর ঝর করে কেঁদে দিলো।
“আমি জায়িনকে বিয়ে করলে মরেই যাব। জোহানকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারব না আমি। জোহান আমার ভালোবাসা।”

নাহিদ সাহেব আর সহ্য করতে পারলেন না। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
“এই মেয়ের মাথা সত্যিই খারাপ হয়ে গেছে। বোঝাও ওকে, বোঝাও।”
নাহিদ সাহেব আর ধৈর্য ধরে রাখতে না পেরে চলে গেলেন।

মাহিরা মনোযোগ দিলেন মিতুলের দিকে।
“জোহানের প্রতি তোমার ওই ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই। তুমি যেটাকে ভালোবাসা ভাবছো, ওটাকে ভালোবাসা বলে না। আমি রেশমীর সাথে কথা বলছি। তোমার বিয়ে হলে জায়িনের সাথে হবে, নয়তো দুই ভাইয়ের কারো সাথেই নয়। আজকে রাতটা ভাবার সময় দিলাম তোমায়। যত খুশি তত ভাবো। তবে ভাবনার শেষে যেন জোহান না থাকে। জোহানের মতো অমন একটা ছেলেকে নিয়ে তুমি বোকামি করতে পারো, আমরা পারি না। অবুঝ তুমি, আমরা তো নই। যেখানে ওর মা ওকে নিয়ে চিন্তায় থাকে সবসময়, কী হবে ওর, ওর ভবিষ্যৎ কী হবে, কারো কথা শোনে না, নিজের ইচ্ছা মতো চলে, নেশা করে বেড়ায়, সেখানে আমি মেয়ের মা হয়ে কী করে এরকম একটা ছেলের হাতে তুলে দিতে পারি তোমাকে?
তুমি বুঝতে পারছো না। জোহানকে যদি তুমি বিয়ে করো, তাহলে তোমার জীবনটা কেমন হবে তোমার ধারণা নেই কোনো। তুমি অবুঝ। এসব বোঝার ক্ষমতা তোমার নেই। তাই বলছি, জোহানের চিন্তা বাদ দাও। জোহান তোমার পারফেক্ট নয়। আর যে তোমার পারফেক্ট নয়, তার সাথে তুমি সারাজীবন কাটাতে পারবে না।”

মিতুলের এই মুহূর্তে এতটাই অসহায় লাগলো যে মুখ থেকে একটা শব্দ বের করতে পারলো না। শুধু টলমল চোখে করুণ ভাবে তাকিয়ে রইল মায়ের দিকে।

মাহিরা আর দাঁড়ালেন না চলে গেলেন এখান থেকে।

একা হয়ে মিতুলের মাঝের কান্না সব উগড়ে উঠলো। চাপা একটা ক্রন্দন সুর ছড়িয়ে পড়লো রুমের আনাচে কানাচে। জোহানকে মনে পড়ছে। চিন্তা হচ্ছে জোহানের জন্য। কোথায় চলে গেল জোহান এই রাতে?

মাহিরা বেরিয়ে যাওয়ার একটু পরেই নাবিল, মিলান মিতুলের রুমে এসে উপস্থিত হলো। এতক্ষণ লিভিং রুমে বলতে গেলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই বসে থাকতে হয়েছিল তাদের। রেশমী আন্টি, জায়িন ছিল লিভিং রুমে। অতিথিদের রেখে সবার চলে আসা তো একেবারে বেমামান।
ভাইদের দেখে মিতুলের কান্না যেন আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেল।
নাবিল কাছে এসে মিতুলের পাশে বেডের উপর বসলো। মিলান দাঁড়িয়ে থেকেই বললো,
“জোহানকে খুব ভালোবাসিস, তাই না?”

ভাইয়ের প্রশ্নে মিতুলের আরও কান্না পেল, মুখে কিছু বলতে পারলো না। কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়িয়ে বোঝালো, ‘হ্যাঁ’।

মিলান একটু নিশ্চুপ থাকলো। তারপর বললো,
“কাঁদছিস কেন এভাবে? কী হয়েছে যে তোর এমন ভাবে কাঁদতে হবে? কান্না থামা বলছি।”
আদেশের সুরে বলে উঠলো মিলান।

কিন্তু মিতুলের সেই আদেশ মানার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। ওর কান্না অব্যাহত। মিলান কী বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। বোনের এমন কান্না দেখে নিজের ভিতরটাও কেমন কেঁদে উঠছে।

নাবিল মিতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আশ্বাস দিলো,
“সব ঠিক হয়ে যাবে।”

_______________

রেশমী খুব টেনশনে আছে। জোহান কল রিসিভ করছে না। এই সময় তার দরকার জোহানকে, অথচ জোহানের কোনো খবরই নেই। কোথায় গেছে জোহান? কোনো কিছু মীমাংসা হতে পারলো না, বোঝাতে পারলো না কিছু জোহানকে, মাঝপথে চলে গেল জোহান। কোথায় গেছে তারও কোনো খোঁজ নেই। এমনিতেই বাংলাদেশ এসে একা একা চলতে পারে না, বাংলা বোঝে না। এরকম করে কোথায় চলে গেল?
বাড়িতে চলে যায়নি তো আবার? রেশমীর মাথায় এতক্ষণ এই কথাটা আসেনি। জোহান দাদা বাড়ি চলে যেতে পারে। সত্যিই যদি এখন দাদা বাড়ি যায়, আর এখানের ঘটনা সব জানিয়ে দেয় নিজের দাদিকে, তাহলে এই ঝামেলা তো কমবেই না বরং আরও বাড়বে। এই ঝামেলা সামাল দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়বে তখন। তার শাশুড়ি মা তো নাতি ছাড়া কিছু বোঝেন না। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, সেটা না ভেবেই নাতির টানই টানবেন।
আর যদি যেতে পারে একটু জোহানের নানার কানে, তাহলে তো আরও। সবাই মিলে ভুলটা বেছে নিতে পারবে ভালো করে। সঠিকটা তাদের চোখেই পড়বে না।
রেশমী আর সময় নষ্ট না করে দ্রুত শাশুড়ি মা’র কাছে ফোন করলেন। কয়েকটা রিং বাজতেই কল রিসিভ হলো।
রেশমী শাশুড়ি মা’র কাছে থেকে জানলেন, জোহান এখন নেই ওর দাদা বাড়ি। যায়নি সেখানে। দাদা বাড়ি না থাকলে এখন কোথায় জোহান?

_______________

জোহানের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছে মিতুল। কিন্তু জোহান আর ফেরেনি।
মোবাইল নিয়ে বসে থেকেছে। জোহানের একটা কল অথবা ম্যাসেজ আসেনি। নিজে কল দিয়েছিল, কিন্তু জোহান কল রিসিভ করেনি। ম্যাসেজও দিয়েছে, কিন্তু সিন হয়নি। জোহানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে মিতুলের চোখে ঘুম নেমে যায়। ঘুমিয়ে পড়ে মিতুল। তবে ঘুমটা অতটা জোরালো নয়। ভাসা ভাসা। আর এই ভাসা ভাসা ঘুমের কারণেই কপালে কিছুর স্পর্শে ঘুম ভেঙে গেল ওর।
আচমকাই বন্ধ চোখের পাতা খুলে যায়। চোখে আবছা অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেল না মিতুল। তবে অনুভব করতে পারলো কেউ একজন ওর মাথায় হাত রেখেছে। মিতুলের হঠাৎই মনে হলো এই হাত জায়িনের! মিতুল কপালে থাকা হাতটা ছিটকিয়ে সরিয়ে দিয়ে, ধরফড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে দূরে সরে গেল। আতঙ্কে হাত পা জমে গেল ওর। একটুতেই শরীর ঘেমে একাকার।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here