অল্প থেকে গল্প🍁
অরিত্রিকা আহানা
পর্ব:৩
শুদ্ধ ব্যাগ রেখে অনুর ঘরে ঢুকলো। মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
—কংগ্রাচুলেশনস ভাবী।
প্রতিউত্তরে অনু সোজা হয়ে উঠে বসে হাসি দিয়ে বলল,
—থ্যাংক ইউ!
—শরীর কেমন তোমার? খাওয়াদাওয়া ঠিকমত করছো তো?
—হ্যাঁ সব ঠিক মতই চলছে।
—লাস্ট ট্রাইমেস্টার না?
—হ্যাঁ।সাড়ে আটমাস।
—আলট্রা করিয়েছো?
—না।তোমার ভাইয়া বলে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে।আল্লাহ ছেলে মেয়ে যাই দিক আমরা খুশি।
—গুড। প্রেশার কন্ট্রোলে আছে তো?
—প্রেশার…মাঝে মাঝে বেড়ে যায়।
—এটা কোন ব্যাপার না।প্রেগন্যান্সির সময় মাঝে মাঝে এমন হয়।
ছবি ঠান্ডা পানি দিয়ে শরবত করে নিয়ে এসে ট্রে টা শুদ্ধর ঠিক সামনে খাটের ওপর রাখলো।শুদ্ধ শুধু আড়চোখে একবার ওকে দেখলো।ছবিও আর দাঁড়ালো না। নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো।
শুদ্ধ নিজের ঘরে এসে লাগেজ থেকে জামা কাপড় বের করে নিলো।চোখের চশমা আর হাতের ঘড়িটা খুলে ড্রেসিংটেবিল এর ওপর রেখে ওয়াশরুমে ঢুকলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
মাথার ওপর পানির ধারা পড়ছে।শুদ্ধ পানির নিচে দাঁড়িয়ে ভাবছে ছবি বেশ বড় হয়ে গেছে।যদিও সে অতোটা ভালোকরে খেয়াল করে নি,তবুও মনে হচ্ছে বেশ বড় হয়েছে। লন্ডনে যাওয়ার আগে অনেক ছোট দেখে গিয়েছিলো।
লাঞ্চের সময় অনু ছবির ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আওয়াজ দিচ্ছে,
—এই ছবি?..দরজা খোল!
ছবি দরজা খুলতেই বলল,
—তোর দুলাভাই তোকে ডাকছে।
—কেন?
—কেন আবার?খেতে বসতে।
—আমি এখন খাবো না।
অনু বিরক্ত কণ্ঠে বলল,
—ছেলেটা কতঘন্টা জার্নি করে এলো শান্তিতে খেতেও দিবি না নাকি?
—আশ্চর্য আমি উনাকে খেতে নিষেধ করেছি নাকি?
—উপল বসে আছে তোর জন্য।শুদ্ধ উপলের সাথে খেতে বসবে বলে অপেক্ষা করছে।
ছবি কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই উপল এসে হাজির!
—কি ব্যাপার ছবি? তুমি দরজা আটকে বসে আছো কেন? এসো আমরা একসাথে খাবো।
—ভাইয়া…
—কোন ভাইয়া টাইয়া হবে না!খাবে চলো!
উপল ছবির হাত ধরে খাবার টেবিলে টেনে নিয়ে গেলো।শুদ্ধর পাশে একটা ফাঁকা চেয়ারে জোর করে ওকে বসিয়ে দিলো।শুদ্ধ চুপচাপ খাচ্ছে।মোটেও বসে নেই সে!
খেতে খেতে উপল শুদ্ধকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—পরশু আমি চিটাগাং যাবো মাকে আনতে!
শুদ্ধ খাওয়া থামিয়ে বললো,
—আসার কি দরকার আমি তো চিটাগাং যাবোই।
—কবে যাবি তুই?
—কাল বা পরশু।
—তোর যাওয়ার দরকার নেই।মা অনেকদিন ঢাকায় আসে না।তুই এসেছিস এই উপলক্ষে আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।
—ঠিক আছে।
ছবি আঙ্গুল দিয়ে খাবার নাড়াচাড়া করছে।অনু ধমক দিয়ে বলল,
—খাচ্ছিস না কেন?
ছবির রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।আজকে এরা জামাই বউ মিলে এমন করছে কেন? জোর করে শুদ্ধর সাথে খেতে বসিয়ে দিয়েছে এখন আবার ধমকাচ্ছো।
—ভাবী লেবু আছে?
—কি রে ছবি বুয়াকে লেবু দিতে বলিস নি?
—ভুলে গেছি।
—ফ্রিজে আছে।যাতো কেটে নিয়ে আয়।
শুদ্ধ বাধা দিয়ে বলল,
—খাওয়া ছেড়ে ওঠার দরকার নেই।আমাকে বলো আমি নিয়ে আসছি!
অনু বলল,
—কতক্ষন লাগবে!তুমি বসো।
ছবি বললো,
—আমি আনছি।
ছবি লেবু কাটতে গিয়ে অনুকে ইচ্ছেমত বকলো।পাশে বাসার আন্টিকে দিয়ে একগাদা রান্না করানোর উদ্দেশ্য এতক্ষনে সে বুঝতে পারছে । অথচ ওকে একটাবার জানালো না পর্যন্ত আজকে শুদ্ধ আসছে? দেবর আসার আনন্দে বোনকে ভুলে গেলো? এই ভালোবাসা বোনের প্রতি? ছবি কি খেয়ে ফেলতো তার দেবরকে?একবার বললে কি হতো?ইশশ!চেহারার কি হাল হয়েছে ওর? চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে গেছে।গাল বসে গেছে।ছবির এই চেহারাটাই অনুর ওকে দেখাতে হলো?
ঘড়িতে রাত দুটো। ছবি পড়ছিলো।আচমকা কিছু ভাঙার শব্দে উঠে দাঁড়ালো সে।।মনে হচ্ছে ডাইনিং থেকে এলো শব্দটা।পা টিপে টিপে রুম থেকে বেরলো সে।ডাইনিং এ আলো জ্বলছে।শুদ্ধ হাটু ভাঁজ করে বসে কি যেন করছে।আরেকটু কাছে যেতেই দেখলো মেঝেতে ভাঙা কাঁচের টুকরো।শুদ্ধর হাত থেকে পড়ে পানির গ্লাস ভেঙে গেছে।নিচে বসে কাঁচের টুকরো গুলোই তোলার চেষ্টা করছে সে।
ছবি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলো।নরম গলায়,
—আমি উঠিয়ে নিচ্ছি।আপনি যান।
ওর গলার আওয়াজ শুনেই শুদ্ধ ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো।ওকে দেখে কিছুটা অবাক হলো।চোখে চোখ পড়ে গেলো দুজনের।ছবি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ঘুমঘুম চেহারায় কি আদুরে লাগছে শুদ্ধকে!চোখে চশমা নেই!সম্ভবত পানি খেতে এসেছে সে।আর চশমা না থাকার দরুনই অঘটনটা ঘটিয়েছে।
শুদ্ধও তাকিয়ে আছে।সে ভাবছে ছবিকে সে যতটা বড় ভেবেছিলো ততটা বড় ছবি হয় নি।চেহারাতে এখনো কিশোরী কিশোরী ভাব!চুল গুলো আগের চেয়ে বড় হয়েছে এই যা!আর কোন পরিবর্তন নেই।এখনো সেই ছোটবেলার মত পুতুল পুতুল মনে হয় ওকে।মনে মনে আন্দাজ করলো সে,ছবির বয়স এখন কত? এইচএসসি দিচ্ছে সে তারমানে সতেরো বা আঠারো! আঠারো বোধহয় হবে না।সতেরাই হবে।শুদ্ধ চোখ নামিয়ে নিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,
—আমি পারবো।তুমি যাও।এত রাতে উঠে এসেছো কেন?
—গ্লাস ভাঙার আওয়াজ পেয়ে উঠে এলাম।
শুদ্ধ চুপচাপ নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।
ছবির ঘরটা ডাইনিং এর পাশেই তাই আওয়াজটা ওর ঘর থেকেই জোরে শোনা গিয়েছে।
ছবি ইতস্তত করে বললো,
—আপনি পারবেন না হাত কেটে ফেলবেন।
—সেটা আমি দেখবো।তোমাকে যেতে বলেছি তুমি যাও।
শুদ্ধর কথা শুনলো না ছবি। কাঁচের টুকরো গুলো পরিষ্কার করতে বসে গেলো।শুদ্ধ অবাক হয়ে গেছে!পিচ্চি মেয়েটার এত সাহস?ছবি শান্তভাবে কাঁচের টুকরো গুলো তুলে একটা বাটিতে রাখছে। শুদ্ধ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওকে পর্যবেক্ষণ করছে।টুকরোগুলো তোলা শেষ হলে শুদ্ধ চুপচাপ উঠে নিজের ঘরে চলে গেলো।যাওয়ার সময় বললো,
—থ্যাংক ইউ।
পরেরদিন সকালে অনু ছবিকে নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো।আজকে ছবির পরীক্ষা আছে।এদিকে উপলের আজকে আর্জেন্ট মিটিং আছে।তাড়াতাড়ি অফিসে যেতে হবে।বাসা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্র বেশ দূরে। ওতোদূর রাস্তা ছবি একা যাবে কি করে?
শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলো শুদ্ধকেই বলবে।শুদ্ধ রাজী হবে না সে ভালো করেই জানে।তবুও একটা চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।
শুদ্ধর ঘরে গিয়ে দেখলো উপুড় হয়ে দুইহাত মাথার নিচে দিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সে।অনু আস্তে আস্তে দুএকবার ডাক দিলো।কিন্তু সাড়াপেলো না।এবার আলতো করে পিঠে কয়েকটা চাপড় দিলো।তাতেও কাজ হচ্ছে না দেখে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দিলো।শুদ্ধ ঘুমের ঘোরেই একবার চোখ মেলে তাকালো তারপর আবার বন্ধ করে ফেললো।
অনুর বেশ বিরক্ত লাগছে।শুদ্ধকে ঘুম থেকে তুলতে গিয়ে সে বেশ হাপিয়ে পড়েছে।নিশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে তার।খিটখিটে মেজাজে বললো,
—এই শুদ্ধ এমন কুম্ভকর্ণের মত ঘুমাচ্ছো কেন?
শুদ্ধ ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,
—ভাবী যাও তো বিরক্ত করো না।
—তোমার সাথে আমার কথা আছে।
—পরে বলো।এখন যাও আমাকে শান্তিতে একটু ঘুমাতে দাও।
—এখনি বলতে হবে।
শুদ্ধ বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো।তারপর বালিশের পাশ থেকে চশমাটা নিয়ে চোখে দিয়ে বললো,
—বলো।
অনু ইতস্তত করছে।শুদ্ধ কীভাবে রিয়েক্ট করবে কে জানে? মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো,
—তোমাকে একটা কাজ করে দিতে হবে।
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে ফেললো।ওকে এভাবে তাকাতে দেখে অনুর অস্বস্তি আরো বেড়ে গেলো।
—তোমার ভাইয়ার আজকে জরুরি মিটিং পড়ে গেছে।সে সকালেই বেরিয়ে গেছে।এদিকে ছবির আজকে পরীক্ষা..
—তো আমি কি করবো ভাবি?
—না মানে ওকে তো কখনো একা একা পাঠাই নি তাই বলছিলাম তুমি যদি কষ্ট করে ওকে একটু দিয়ে আসতে।শুধু আজকের জন্যই।
—ঠিক আছে যাও।আমি রেডি হয়ে আসছি।
অনুর গোলগোল চোখে শুদ্ধর দিকে তাকালো।শুদ্ধ এত সহজে রাজি হবে সে ভাবতেই পারে নি।ওকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুদ্ধ বিরক্ত কন্ঠে বললো,
—এভাবে তাকিয়ে আছো কেন ভাবী?কেউ আমার দিকে এমন হাঁ করে তাকিয়ে থাকলে আমার ভীষণ অস্বস্তি লাগে।
অনু খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
—থ্যাংক ইউ সো মাচ শুদ্ধ!
—হ্যাঁ ঠিক আছে,এবার যাও।
দ্রুত শুদ্ধর ঘর থেকে বেরিয়ে এলো অনু। ছবি রেডি হচ্ছে।ওকে দেখে বললো,
—আমাকে ভাড়া দাও আপু।একটু বেশি দিও।রিজার্ভ সি এনজি নিয়ে যাবো।
অনু মিটমিট করে হাসতে হাসতে বললো,
—শুদ্ধ যাবে তোর সাথে।
ছবি রেডি হওয়া বন্ধ করে অনুর চোখের দিকে তাকালো।অনু কি মজা করছে ওর সাথে?ঠিক শুনেছে তো? কন্ঠে একরাশ বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলো,
—কে যাবে?
অনু হাসি চেপে বললো,
—ডাঃ ইফতেখার হোসাইন শুদ্ধ!
ছবি স্তব্ধ হয়ে গেছে। চোখ বড়বড় করে ফেললো সে।এমভাবে তাকিয়ে আছে যেন চোখের মনি কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে।ভি-বেল্টটা হাত থেকে পড়ে গেলো তার।নিজের হাতে চিমটি কাটলো সে।অনু ওর প্রতিক্রিয়া দেখে হেসে দিলো।ওর গাল টেনে দিয়ে বললো,
—তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়।দেরী হলে আবার রেগে যেতে পারে।
অনু বেরিয়ে যেতেই ছবি দুপ করে খাটের ওপর বসে পড়লো।ইয়া আল্লাহ!তারমানে শুদ্ধভাইয়া ওকে সত্যি সত্যি পৌঁছে দিতে যাবে? বুকের ভিতর তীব্রমাত্রার ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেলো।খুশিকে চোখের মনি চিকচিক করে উঠলো।অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করে রেডি হলো সে।
ছবি নিচে নামতেই দেখলো শুদ্ধ বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চোখদুটো ফোনের স্ক্রিনে।ওর পরনে সাদা একটা গেঞ্জি তারওপর ব্লাক চেকশার্ট,শার্টের সবগুলো বোতামই খোলা,হাতাটা ফোল্ড করে রাখা।চোখে চশমা,হাতে ঘড়ি!ছবি মুগ্ধ চোখে কতক্ষন চেয়ে রইলো।ধীরপায়ে বাইকের কাছে এগিয়ে গেলো।ওকে দেখে শুদ্ধ ফোন বন্ধ করে পকেটে ঢুকিয়ে নিলো।তারপর বাইকে চেপে বসে বাইক স্টার্ট দিল।
ছবি ভয়ে ভয়ে বাইকে উঠে বসলো।মাঝখানে যথেষ্ট ফাঁকা রেখে বসেছে সে।শুদ্ধ লুকিং গ্লাস দিয়ে সরাসরি ওর দিকে তাকালো।ছবি তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে ফেললো।
শুদ্ধ বিরক্ত গলায় বললো,
—এভাবে বসেছো কেন? ঠিক করে বসো।পড়ে তো হাতপা ভাঙবে।
শুদ্ধর গলার স্বরে খানিকটা ধমকের সুর ছিলো।ছবি আরেকটু কাছে ঘেঁষে বসলো।পারফিউমের মিষ্টি গন্ধ আসছে শুদ্ধর গা থেকে,বাতাসে ঝাঁকড়া চুলগুলো উড়ছে, সেই সাথে খোলা শার্টের আস্তিন!ছবির ইচ্ছে করছে হাত দিয়ে ওর চুলগুলো একটু ছুয়ে দিতে কিন্তু সাহসে কুলালো না।মনে ইচ্ছেটা মনেই চাপা দিলো সে।
ত্রিশমিনিটের মাথায় পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে শুদ্ধ বাইক থামালো।ছবি বাইক থেকে নেমে দ্রুত গেটের দিকে পা চালালো।কিন্তু শুদ্ধর গলার আওয়াজে থামতে হল। শুদ্ধ বাইক ঘোরাতে ঘোরাতে জিজ্ঞেস করলো,
—পরীক্ষা কখন শেষ হবে?
—একটায়।
—একা বেরোবে না।আমি নিতে আসবো।
তারপর সাঁ করে বাইক ঘুরিয়ে ছবির সামনে দিয়ে চলে গেলো।ছবির খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে।এতখুশি মনে হয় সে জীবনেও হয় নি।লাফাতে লাফাতেই কলেজের ভেতরে ঢুকলো।এই প্রথম পরীক্ষা নিয়ে ওর কোন টেনশন হচ্ছে না।যেটা হচ্ছে সেটা শুধু শুদ্ধকে নিয়ে উত্তজনা!উফফ!মরে যাবে সে!
অনুর খুব খুশি লাগছে।শুদ্ধর সাথে ছবির সম্পর্কটা তাহলে স্বাভাবিক হতে চলেছে।উপলের নাম্বারে ডায়াল করলো সে।ফোন রিসিভ করে উপল আহ্লাদী গলায় বলল,
—বলুন শেহজাদী আপনার জন্য আমি কি করতে পারি?
—ফ্রি আছো?
—এখন আছি তবে আধঘন্টা পর আবার মিটিং শুরু হবে।
—ওহ!
—তোমার শরীর ঠিক আছে?
—শরীর এবং মন দুটোই ঠিকই আছে।আজকে আমার খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে।
—কি পাচ্ছে??
রিসিভার নামিয়ে চেক করে নিলো উপল।সে ঠিক শুনছে তো? অনু লাজুক গলায় বললো,
—প্রেম প্রেম!
উপল হাসলো।অনুর হঠাৎ হঠাৎ কি যে মতিভ্রম হয় না!
—তা আমার বউয়ের হঠাৎ প্রেম প্রেম পাওয়ার কারণটা জানতে পারি?
—এমনি।
—উহু!এমনি নয়।নিশ্চই কোন কারন আছে।বলো শুনি?
ক্ষেপে গেলো অনু।এই লোকের একটাই সমস্যা ভালো কিছু সহ্য হয় না!
—এত কৈফিয়ত দিতে পারবো না।তুমি তোমার কাজ করো,রাখছি আমি ।
ফোন কেটে দিলো অনু।উপল ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।খারাপ কি বললো সে?অনুকে ইদানীং সে বুঝিতে পারে না?প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে কাছেই ঘেঁষতে দেয় না।উপল ভালো কিছু বললেও রেগে যায় কেন?কি করেছে সে?
ছবির পরীক্ষা শেষ।একটা বাজতে এখনো পাঁচমিনিট দেরী আছে।আগেভাগে গেটের কাছে এসে দাঁড়ালো সে।দৃষ্টি সামনের দিকে।কখন শুদ্ধকে দেখা যাবে সেই অপেক্ষায়!
হঠাৎ ওকে চমকে দিয়ে একটা বাইক অপজিট দিক থেকে ওর ঠিক সামনে এসে থামলো। শুদ্ধ বাইকে বসে আছে।ঘাড় বাঁকিয়ে ওকে বাইকে উঠতে ইশারা করলো।
ছবি উঠে বসে আলতো করে শুদ্ধর কাধে হাত রাখলো, শুদ্ধ কিছু বললো না।ওকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়েই আবার চলে গেলো।
বাসায় ঢুকেই ছবি অনুকে জড়িয়ে ধরে লাফিয়ে উঠলো।অনু ওকে এভাবে নাচতে দেখে বললো,
—শুদ্ধ তো দেখছি একবেলাতেই তোর মাথা খারাপ করে দিয়েছে।
ছবি হৃদয়ে তখন মেরে সাইয়্যা সুপারস্টার বাজছে! অনুর গলায় জড়িয়ে ধরে নাচতে নাচতে বললো,
“হ্যায় তো হ্যান্ডসাম সৌঁড়া সাবছে
মেরি দিলকো গায়্যা লে কার,
মেরি নিন্দ চুরালি উছনে ওর
খাআব গায়্যা দে কার
আব ইয়্যে নেয়না বলে ইয়ার,
বলে এহ্যি লাগাতর
কয়্যি চাহে কিতনা রোকে
কারুঙ্গি পেয়্যার…..”
ছবি যেন খুশিতে পাগল হয়ে গেছে।অনু ওর সাথে তাল মিলাচ্ছে।দুজনে একসাথে গেয়ে উঠলো,
“মেরে সাইয়্যা সুপারস্টার,
মেরে সাইয়্যা সুপারস্টার,
মে ফ্যান হুয়্যি উনকি,
ও মেরি সাইয়্যা সুপারস্টার।”
খানিকবাদে হুঁশ এলে নিজের এমন কান্ডে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো ছবি।অনুর হাতদুটো ছাড়িয়ে দৌঁড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।অনু হাসতে হাসতে নিজের ঘরে যাচ্ছিলো এমন সময় সদর দরজায় বেল বেজে উঠলো,দরজা খুলতেই শুদ্ধ ভেতরে ঢুকলো।চোখমুখ ফ্যাকাসে লাগছে।হাতে একগাদা শপিং ব্যাগ নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো।
দুপুরবেলা খেতে বসে শুদ্ধর মুখ কালো হয়ে গেলো।সবখাবার কেমন তিতা তিতা লাগছে।
—কি হলো শুদ্ধ রান্না ভালো হয় নি?
—আমার অরুচি লাগছে ভাবী।
ছবি বলল,
—লেবু কেটে দেই?
শুদ্ধ স্থির দিকে ছবির দিকে তাকালো।ছবি লজ্জা পেয়ে বললো,
—খাবারে সাথে লেবু নিলে রুচি পাবেন।
—উহু।আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।আমি কিছুক্ষন রেস্ট নেবো।আমার ঘরে যেন কেউ না আসে।
শুদ্ধ না খেয়েই চলে গেলো।ছবি বলল,
—রান্না তো ঠিকই আছে তাহলে উনি খেলো না কেন? উনার কি শরীর খারাপ?
—কিছু তো বললো না।
সন্ধ্যার দিকে অনু শুদ্ধর ঘরে গিয়েছিলো শুদ্ধকে ডাকতে।সেই দুপুরে শুয়েছে এখনো উঠে নি।এতবেলা পর্যন্ত শুয়ে আছে।শরীর খারাপ নাকি?
ছবি পড়ছে।অনু হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকে বললো,
—চট করে আধ বালতি পানি আর মগ নিয়ে শুদ্ধর ঘরে আয় তো।
—কি হয়েছে আপু? শুদ্ধ ভাইয়া ঠিক আছে?
—হাড় কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে তার।গায়ে হাত দিতেই আমার হাত পুড়ে যাওয়ার উপক্রম!মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।সারা মুখ রক্তের মত লাল হয়ে আছে!আমি তোর ভাইয়াকে খবর দিয়ে দিয়েছি, সে ডাক্তার নিয়ে আসছে।তুই আয় আমার সাথে আগে ওর মাথায় পানি দিতে হবে।
ছবি অনুর পেছন পেছন পানির বালতি আর মগ নিয়ে ঢুকলো।খাটের ওপর কম্বল মুড়িয়ে অচেতনভাবে শুয়ে আছে শুদ্ধ।
আধঘন্টা যাবত অনু হাতে পায়ে মালিশ করছে আর ছবি মাথায় পানি ঢালছে।
—আপু উনার জ্বর তো নামছে না।ভাইয়া কখন আসবে?
—আমাকে তো বললো রাস্তায়।ছেলেটা এসেছে দুদিনও হয় নি,এরমাঝেই জ্বর বাধিয়ে ফেললো!
অনু শুদ্ধর দিকে একটু ঝুঁকে উদ্বিগ্ন গলায় ডাক দিল,
—এই শুদ্ধ?..শুদ্ধ?বেশি কষ্ট হচ্ছে ভাই?..ইশস জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।
শুদ্ধ চোখ মেললো।জ্বরে ঠোঁটজোড়া টকটকে লাল হয়ে আছে।ঠোঁট জোড়া প্রশস্ত করে হাসলো সে।তারপর বিড়বিড় করে বললো,
—ব্যস্ত হয়ো না ভাবি,ভাইরাল ফিভার।তিনচার দিন বাদে এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।
ছবির রাগ লাগছে।এতজ্বর নিয়ে কেউ হাসে? জ্বর কে পাত্তা না দিলে সে তো আরো বেশি করে জেঁকে বসবে।ও দাঁত খিচিয়ে বললো,
—তিনচারদিন এই অবস্থায় থাকলে আর ঠিক হওয়া লাগবে না এমনিতেই মরে যাবেন।
—তুমি তো সেটাই চাও।ভাবি তোমার বোনকে আমার সাথে ঝগড়া করতে না করো!
অনু ধমক দিয়ে বলল,
—আহ!ছবি কি উল্টোপাল্টা বকছিস?
.
.
চলবে