অল্প থেকে গল্প🍁.পর্ব:৫

0
1646

অল্প থেকে গল্প🍁
অরিত্রিকা আহানা
পর্ব:৫

—আসবো মা?
শুদ্ধ খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে আনোয়ারা বেগমের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
—শুদ্ধ আমি এখন খাবো না।তুমি যাও!
রেগে থাকলে আনোয়ারা বেগম শুদ্ধকে তুমি করে বলেন।অন্যসময় তুমি।
শুদ্ধ ভেতর ঢুকে খাবারের প্লেটটা টেবিলের ওপর রেখে আনোয়ারা বেগমের পায়ের কাছে বসলো।আনোয়ারা বেগম শুয়ে আছে।
শুদ্ধ পা টিপে দিতে দিতে বললো,
—তুমি কি আমার ওপর রাগ করেছো মা?
আনোয়ারা বেগম জবাব দিলেন না।
—আমি কি কোন ভুল করেছি মা?
আনোয়ারা বেগম উঠে বসলেন।চোখভর্তি পানি নিয়ে বললেন,
—তুই সব কিছু ভুলে গেলেও আমি কিছুই ভুলি নি।ঘরভর্তি লোকজনের সামনে আমার ছেলের গালে যেই মেয়ে চড় মারতে পারে তাকে আমি মরে গেলেও ক্ষমা করবো না।

বিয়ের দিন ছবির পরনে ছিলো লাল টপ্স আর হলুদ লং স্কার্ট।কাধ অব্দি কোঁকড়ানো চুলগুলো একপাশে একটা ক্লিপ দিয়ে বাধা।
শুদ্ধর পরনে ছিলো নেভি ব্লু কালারের একটা ফুলহাতা গেঞ্জি আর সাদা জার্সি ট্রাউজার।গেঞ্জির হাতাটা কনুই পর্যন্ত গোটানো।হাতে স্টাইলিশ রিস্টওয়াচ!চোখে ব্লু ফ্রেমের পাওয়ারি চশমা!মাথায় এলোমেলো ভাবে বিন্যস্ত একরাশ ঝাঁকড়া চুল।একটুপর পর গেঞ্জির কোনা দিয়ে চশমা পরিষ্কার করছিলো।বাবার অসুস্থতার কারনে জরুরী তলব করে তাকে ডেকে আনা হয়েছে।বিয়ের ব্যাপারে কিছুই জানানো হয় নি তাকে। শুদ্ধর বাবা ছেলেকে ডেকে নিয়ে আলাদা ভাবে কথা বললেন।তারপরই শুদ্ধ নতমুখে বেরিয়ে এসে বিয়ের পিঁড়িতে বসলো।

সেদিন সন্ধ্যেবেলা শুদ্ধর বাবা ছেলের বউকে শাড়ি পরিয়ে দিতে বললেন।ছেলে আর ছেলের বউকে একসাথে বিয়ের সাজে দেখবেন তিনি।কিন্তু ছবি কিছুতেই শাড়ি পরবে না।আনোয়ারা বেগম এবং ছবির মা দুজনেই নানাভাবে ছবিকে বোঝালেন যে বিয়ের দিন মেয়েদের শাড়ি পরতে হয়।কিন্তু ছবি পরবে না মানে পরবে না।কোনভাবেই তাকে মানানো যাচ্ছিলো না।আনোয়ারা বেগম যতই বোঝান ছবি রাগ ততই বাড়তে থাকে।

বাবা অনুরোধ রক্ষার্থে শুদ্ধ যখন খয়েরী রংয়ের পাঞ্জাবী আর সাদা পায়জামা পরে রুমে ঢুকলো ছবিকে আনোয়ারা বেগমের সাথে তর্ক করতে দেখে মৃদু ধমক দিয়েছিলো ছবিকে।সেই মুহূর্তে প্রচন্ড রাগে সপাটে শুদ্ধর গালে চড় বসিয়ে দিলো ছবি।
ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হতবম্ভ।চারফুট সাত ইঞ্চিখানেকের একটা বাচ্চা মেয়ের এত সাহস সে ছ’ফুট লম্বা ছেলের গালে চড় বসায়?
অগ্নিবর্ণ ধারণ করলো আনোয়ারা বেগম চেহারা।হাতের শাড়িটা ছুঁড়ে ফেলে শুদ্ধকে টেনে বের করে নিয়ে গেলেন তিনি।এমন নির্লজ্জ বেয়াদপ মেয়ে তিনি তার জন্মে দেখেন নি।শারমিন বেগম সহ উপস্থিত সবাই নতমুখে বসে রইলেন।লজ্জায় মাথা কাটা গেলো তার।

প্রচন্ড রাগে বিছনার ঝাড়ু নিয়ে তাড়া করলেন ছবির পেছন।মারে হাত থেকে বাঁচার জন্য ছবি দৌঁড়ে গিয়ে উপলের পেছনে গিয়ে লুকালো।
—থাক মা ছেড়ে দিন।
—এতবড় সাহস তুই জামাইয়ের গালে হাত তুলিস?
শারমিন বেগম রাগে লাল হয়ে গেছেন।এমন অনাচার উনি কিছুতেই সহ্য করবেন না।
মেয়ের হাটু এবং গোড়ালির সন্ধিস্থলে কষে বাড়ি লাগালেন শারমিন বেগম।
—ও মাগো!..মাআআ!
ছবির চিৎকার শুরু হয়ে গেলো।উপল হাত উঁচিয়ে শারমিন বেগমকে থামালেন।
—আর করবে না মা ছেড়ে দিন।
—তুমি সরো বাবা তোমার গায়ে বাড়ি লাগবে!
ছবি উপলের ট্রাউজার খামচে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো।শারমিন বেগম যেদিকে ঘোরে সে তার উলটো দিকে ঘোরে।সেই সাথে উপলেও ঘোরালো!

উপল না থাকলে যা রাগ উঠেছিলো ছবিকে মেরে আধমরা করে দিতেন সেদিন শারমিন বেগম।অনেক কষ্টে উনাকে শান্ত করলো উপল।কিন্তু আনোয়ারা বেগমকে কিছুতেই শান্ত করা গেলো না।শুদ্ধর বাবার সাথে এই নিয়ে তুমুল ঝগড়া হলো উনার।এই মেয়েকে উনি কিছুতেই ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেবেন না।সব শুনে শুদ্ধর বাবা ছেলের হাত ধরে অপরাধির মত বললেন,
—-আমি বোধহয় সত্যি ভুল করেছি বাবা!আমি তোমার কাছে ভীষণ অনুতপ্ত!
শুদ্ধর তখন বাবার হাতের ওপর হাত রেখে ভরসাসূচক হাসি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না।
স্মৃতি থেকে ফিরে এসে শুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—মা ও তখন ছোট ছিলো।
—কিসের ছোট ছিলো?আমার যখন তোর বাবার সাথে বিয়ে হয়েছিলো তখন আমার বয়স ছিলো মাত্র দশ বছর।তোর খালার বিয়ে হয়েছে বারো
বছর বয়সে।কই আমরা তো কখনো এমন সাহস দেখাই নি? তুই যাই বলিস ঐ মেয়ের এমন ঔধ্যত্বপূর্ণ আচরণ আমি কিছুতেই মেনে নেবো না।
—আচ্ছা মা সবার বুদ্ধি তো একরকম হয় না তুমিই বলো ক্লাস এইটে পড়া একটা মেয়ের স্বামী সংসার নিয়ে কতটুকুই বা জ্ঞান থাকতে পারে?
—আমি এসব কথা শুনতে চাইছি না শুদ্ধ!মানলাম সে তখন ছোট ছিলো এখন তো সে বড় হয়েছে।তার কৃতকর্মের জন্য একবারও ক্ষমা চেয়েছে?..তুই যে তাকে খেতে ডাকলি তোর কথার দাম দিয়েছে সে? যে চারবছরে শোধরায় নি সে চারশোবছরেও শোধরাবে না।
শুদ্ধ চুপ করে আছে।
—আমি তোর আবার বিয়ে দেবো শুদ্ধ।
—মা?
—হ্যাঁ আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।
—প্লিজ মা!..সব মানুষই ভুল করে মা।ও না বুঝে ভুল করে ফেলেছে।আমি ওর সেই ভুল শুধরে দেবো।তুমি আমাকে আরেকবার সুযোগ দিয়ে দেখো।আমি তোমার মনের মত করে ওকে গড়ে নেবো।যদি না পারি তাহলে তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।
—তোমার এখন বাচ্চা পালবার বয়স শুদ্ধ!বউ পালবার নয়।এই নিয়ে আর দ্বিতীয় কথা শুনতে চাই না আমি।চুপিচুপি যেমন বিয়েটা হয়েছে চুপিচুপি ডিভোর্সও হবে।সে তার জীবন নতুন করে গড়ে নিক। আমার ছেলের জীবন আমি নষ্ট হতে দেবো না।
—কিন্তু মা আমার পক্ষে আবার বিয়ে করা সম্ভব না।আমাদের বিয়েটা বাবার ইচ্ছেতে হয়েছিলো।বাবা ওকে পছন্দ করে আমার সাথে বিয়ে দিয়েছে।
—সেইজন্যই এতদিন সহ্য করে ছিলাম।কিন্তু আর নয়।এবার আমি নিজে দেখে তোমার বিয়ে দেবো।
—মা প্লিজ।তুমি আমাকে এমন কোন কাজ করতে বলো না যেটা আমি রাখতে পারবো না।
—তাহলে আর কি?কালকে সকালে আমাকে বাসে তুলে দিও!আমি জানবো আমার ছোট ছেলেও পর হয়ে গেছে।
আনোয়ারা বেগম ডুঁকরে কেঁদে উঠলেন।তারপর ধীরে ধীরে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লেন।শুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
—আমি কিন্তু খাই নি মা?
—তো গিয়ে খেয়ে নাও।
—আমি তোমার হাতে খাবো বলে খাবার নিয়ে এসেছি।
—তোমরা এখন বড় হয়েছো শুদ্ধ।তোমাদের এখন মায়ের প্রয়োজন নেই।বুড়ো হয়ে গেলে মায়ের কোন দাম থাকে না।তুমি যাও খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।আমার জন্য চিন্তা করো না।একবেলা না খেলে আমি মরে যাবো না।
শুদ্ধ প্লেট হাতে নিয়ে কিছুক্ষন বসে রইলো।আনোয়ারা বেগমকে সে ভালো করেই চেনে।একবার তিনি যেই কথা বলেছেন তার নড়চড় কিছুতেই করবেন না।শুদ্ধ নরম গলায় বললো,
—ঠিক আছে তুমি যা বলবে তাই হবে।শুধু একটাই রিকোয়েস্ট ও যতদিন বাসায় আছে,তুমি কষ্ট করে একটু মানিয়ে নাও।তুমি ওকে কিছু বললে ভাবির খারাপ লাগে।অন্তত ভাবির জন্য হলেও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করো না।
আনোয়ারা বেগম ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।শুদ্ধ উনার হাত চেপে ধরে বলল,
—কেঁদো না মা।ওঠো খাবে।
আনোয়ারা বেগম উঠে বসলেন।চাপা কান্নার স্বরে বললেন,
—আমি যা করছি আমার ছেলের সুখের জন্যই করছি।ঐ মেয়ে কোনদিন তোকে সুখি করতে পারবে না।তুমি আমাকে ভুল বুঝিস না বাবা!
—আমি তোমাকে ভুল বুঝি নি মা!আসো ভাত খাই।

আনোয়ারা বেগম ছেলেকে খাইয়ে দিচ্ছেন।শুদ্ধ শান্ত ভঙ্গিতে বসে মায়ের হাতে ভাত খাচ্ছে।
—মা?
—হু?
—তুমি খাও নি দেখে ভাইয়াও খায় নি।ভাইয়াকে ডেকে আনি?
—ডাক।

বিগত পনেরো মিনিট যাবত উপল অনুর সিথানে খাবারের প্লেট নিয়ে বসে আছে।অনু পাশ ফিরে শুয়ে আছে।
—অনু ওঠো।ভাত খাবে।খালি পেটে ওষুধ খাওয়া যাবে না।
—আমি খাবো না।
—না খেলে ওষুধ খাবে কি করে?এইমুহূর্তে ওষুধ গ্যাপ দেওয়া যাবে না।আসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
অনুর কাঠ হয়ে শুয়ে রইলো।উপল হাত বাহুতে হালকা ঝাঁকি দিয়ে বললো,
—প্লিজ অনু আমার কথাটা একবার শোনো।আমার বাচ্চাটাকে এভাবে কষ্ট দিও না দোহাই তোমার।সে কি দোষ করেছে।তোমার রাগ আমার ওপর আমাকে শাস্তি দাও।বাচ্চাটাকে কেন কষ্ট দিচ্ছো।
—শোনো বাচ্চা আমারও।তোমার চেয়ে হাজার গুন বেশি টান আমার বাচ্চার প্রতি।আমি তাকে পেটে ধরেছি।তুমি কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান না করে সরো আমার কাছ থেকে।বাসায় তোমার মা,ভাই আছে আমি চাইনা তাদের সামনে কোন অশান্তি হোক।দয়া করে আমাকে আমার মত থাকতে দাও।
—আচ্ছা ঠিক আছে তুমি খাবারটা খেয়ে নাও।আমি আর তোমাকে বিরক্ত করবো না।
—আমি তোমাকে সরতে বলেছি?..বলেছি না? একবার বললে কথা কানে যায় না?

উপল খাবার ঢেকে রেখে হতাশ হয়ে সোফায় বসে পড়লো।এমন সময় দরজায় টোকার আওয়াজ হলো।
—ভাইয়া ঘুমিয়ে পড়েছো?
—কে শুদ্ধ?
—হ্যাঁ ভাইয়া।ঘুমিয়ে পড়েছো?
উপল উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
—না ঘুমাই নি।কিছু বলবি?
—ভাবি ঘুমিয়ে পড়েছে?
—হ্যাঁ?..না তোর ভাবি বোধহয় এখনো ঘুমায় নি।
—মা তোমাকে ডাকছে।
ঘাবড়ে গেলো উপল।আনোয়ারা বেগম এতরাতে ওকে ডাকছে কেন? তিনি কি আবার কোন কারনে ক্ষেপে গেছেন? কপালের ওপর বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হচ্ছে।উপল নার্ভাস ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো,
—এতরাতে মা আমাকে কেন ডাকছে শুদ্ধ?
—গেলেই দেখতে পাবে।চলো ভাইয়া।
—তুই যা আমি আসছি।

আনোয়ারা বেগম একসাথে দুই ছেলেকে খাইয়ে দিচ্ছেন।মাঝে মাঝে নিজেও খাচ্ছেন।সেই ছোটবেলার মত একপ্লেটে তিনজন খাচ্ছে।আনন্দে বারবার চোখ ভিজে উঠছে উনার।একটু পরপর শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুচছেন।
আর অন্য ঘরে অনু খাইয়ে দিচ্ছে ছবিকে।উপল বেরিয়ে যাওয়ার পর টেবিলের ওপর থেকে খাবারটা নিয়ে ছবির ঘরে এসেছে সে।
ছবি দরজা বন্ধ করে বসে ছিলো।অনুর ডাক পেয়ে দরজা খুলে দিলো।অনেক্ষন যাবত মান অভিমান পালা সেরে একে অন্যের গলা জড়িয়ে কাঁদলো কিছুক্ষন।

বাসায় ছবি একা।দুদিন হলো আনোয়ারা বেগম উত্তরায় তার বোনের বাসায় গেছেন।উপল অনুকে নিয়ে চেকাপ করাতে গেছে।যদিও অনু একাই বেরিয়েছে এবং সাবধান করে দিয়ে গেছে কেউ যাতে ওর পেছন পেছন না আসে।তাই উপল নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ওর পিছু নিয়েছে।শুদ্ধ কোথায় গেছে সেটা ছবি জানে না।

বিকেল চারটা সাড়েচারটার দিকে বাসায় ফিরলো সে।এসেই গোসল সে ভাত খেয়েছে।তার প্রায় মিনিট বিশেকের ভেতর শুদ্ধর বয়সী তিনচারটে ছেলেমেয়ে এসে হাজির।এরা যে শুদ্ধর বন্ধু সেটা বুঝতে ছবির অসুবিধে হলো না।
ড্রয়িংরুম থেকে হাসাহাসি আওয়াজ আসছে।ছবি চুপচাপ ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছে।অনু ওকে নিষেধ করে দিয়েছে অপ্রয়োজনে সে যেন নিজের ঘর থেকে বেরোয়।যদিও অধিকাংশ দিনই শুদ্ধকে কফি করে দেওয়ার জন্য বেরোতে হয়।

একটুপর দরজায় টোকা শুনে ছবির বুকটা ধড়ফড় করে উঠলো।এভাবে দরজায় নক করে কেবল শুদ্ধ।তিনটোকা দেয় সে।না খুললে থেমে থেমে প্রতিবারই তিন টোকা দেয় সে।
ছবি খুলবে কি খুলবে না বুঝতে পারছে না।অনু শুনলে যদি রাগ করে?
অনেক্ষন, চিন্তা ভাবনা করে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো সে।শুদ্ধ তীক্ষ্ণভাবে ওকে পর্যবেক্ষন করে বললো,
–এতক্ষন লাগলো যে?
–ওয়াশরুমে ছিলাম।আপনার কিছু লাগবে?
–হ্যাঁ।তুমি কি একটু চা বানিয়ে দিতে পারবে?
–জ্বী আপনি যান আমি আসছি।
–থ্যাংক ইউ সো মাচ।
ছবি চা বানিয়ে ট্রেতে কাপ গুলো সাজিয়ে রাখলো।শুদ্ধর জন্য অপেক্ষা করছে সে।কিন্তু অনেক্ষন হয়ে যাওয়ার পরও শুদ্ধ চা নিতে এলো না দেখে ছবি নিজেই চা নিয়ে গেলো।
ড্রয়িংরুমে ঢুকেই ওর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।একটা মেয়ে শুদ্ধর চুল ধরে টানাটানি করছে।ছবি প্রথমে বুঝতে পারলো না কি হচ্ছে একটুপর শুদ্ধকে মেয়েটার চুল ধরে টানতে দেখে বুঝতে পারলো এরা দুজন দুষ্টুমি করছে।শুদ্ধ মেয়েটার চুল টেনে ধরে ,
–নির্লজ্জ মেয়ে।পরপুরুষের গায়ে হাত দিস তোর লজ্জা করে না?
মেয়েটা শুদ্ধর পিঠে চাপড় মেরে বললো ,
–পরপুরুষ কে বললো?তুই তো আমার জামাই।
শুদ্ধ একটু দূরে সরে যাওয়ার ভঙ্গি করে বললো,
–তোর মত ডাইনীকে বিয়ে করবো আমি?দেশে কি মেয়ের আকাল পড়েছে নাকি?
–মেয়ের আকাল পড়ে নি তবে মৌনতার আকাল পড়েছে।
–সেটা তোকে দেখলেই বোঝা যায়।তুই হচ্ছিস ঝগড়ার দেবী।তোর নাম হওয়া উচিৎ ছিলো এরিস।তোর নাম যে মৌনতা কে রাখলো আমার মাথায় আসে না।আস্ত গাধা ব্যাটা!
মৌনতা আবার শুদ্ধর চুল টেনে ধরে বললো,
–তোকে কতবার বলেছি আমার নাম নিয়ে বাজে কথা বলবি না।
–উফ!আমি ব্যথা পাচ্ছি।ছাড়,ছাড় প্লিজ।
–না আগে বল আমার নাম নিয়ে আর কখনো মজা করবি না।
–না করবো না।এবার ছাড়!
এরা দুজন মারামারি করছে বাকিরা হাসছে।মৌনতা ছেড়ে দিতেই শুদ্ধ সোজা হয়ে বসলো।
ছবিকে চা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লাজুক গলায় বললো,
–তুমি দরজায় দাঁড়িয়ে আছো কেন?ভেতরে এসো।
ছবি চায়ের ট্রে টা টেবিলের ওপর রেখে চলে আসছিলো।শুদ্ধ আটকালো,
–কই যাও তুমি?সারাক্ষণ তো একা একা বসে ছিলে।এখানে এসে বসো।
—না ঠিক আছে।আমি আসি।আপনাদের কিছু লাগলে আমাকে বলবেন।
—কিচ্ছু লাগবে না।তুমি এসে বসো আমাদের সাথে।

শুদ্ধ ছাড়া বাকি সবগুলো কৌতুহলী চোখ ছবির দিকে তাকিয়ে আছে।ছবি অস্বস্তি নিয়ে খাটের এক কোনায় গিয়ে বসলো।একটা ছেলে ফিসফিস শুদ্ধকে করে জিজ্ঞেস করছে,
–মেয়েটা কে?
শুদ্ধ ছবির দিকে তাকালো।ছবি ইতস্তত করছে।
–ভাবীর বোন।
–তারমানে আমাদের বেয়াইন?এইজন্যই তো চেনাচেনা লাগছে।
শুদ্ধ ফিসফিস করে বললো,
–উল্টাপাল্টা কিছু বলবি না খবরদার।
ছেলেটা হাসতে হাসতে বললো,
–বেয়াইনের নাম?
–জ্বী ছবি।
–নাইস নেইম।
–থ্যাংক ইউ।
— একটা কথা বলি বেয়াইন কিছু মনে করবেন না আপনি দেখতে ভীষণ সুন্দরী।
ছবি লাজুক হাসি হাসলো।তবে ভেতরে ভেতরে অস্বস্তি হচ্ছে তার। শুদ্ধ ছেলেটাকে ধমক দিয়ে বললো,
—শুরু করে দিলি?
মৌনতা বললো,
–কি রে মেহেদী?বাচ্চা মেয়েটাকে তুই এমন লজ্জা দিচ্ছিস কেন।ও তো আমাদের সাথে বসতে আনইজি ফিল করছে।
মেহেদী দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল ,
–কিছু মনে করবেনা না বেয়াইন।সম্পর্কে আপনি বেয়াইন তো তাই একটু মজা করলাম।
ছবির ভদ্রতাসূচক উত্তর,
–না আমি কিছু মনে করি নি।
–কিছু মনে করেন নি?
মেহেদীর এমন প্রশ্নে ছবি ঘাবড়ে গেলেও মুখে বলল,
–জ্বী না।
–তাহলে একটা কথা বলি?
–জ্বী?
–একটা কথা বলবো।
–জ্বী বলেন।
–জ্বী লজ্জা পেলে আপনাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে।
ছবির অস্বস্তি আরো বেড়ে গেলো।মেহেদী দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,
–এবার কিছু মনে করেছেন?
মেহেদী কথা শেষ হওয়ার আগে শুদ্ধ বললো,
–তোর কি ভয়ডর বলতে কিচ্ছু নেই?সামনে তোর গার্লফ্রেন্ড বসে আছে আর তুই নির্লজ্জের মত ছবির ফ্লার্ট করছিস?
—মুক্তা বাদ।আজ থেকে অনলি ছবি।
সবাই খিলখিল করে হেসে উঠলো।খালি মুক্তা ছাড়া।মুক্তার হাবভাব দেখে মেহেদী সাথে তার কি সম্পর্ক সেটা ছবির বুঝিতে বাকি রইলো না। মেহেদীর চুলগুলো টেনে ধরে আছে মুক্তা।
—তিনবছর আমার পেছনে ঘুরে এখন আমি বাদ না?
—আমি তো মজা করছিলাম জান।চুলটা ছাড়ো!
মুক্তা চুল ছেড়ে দিতেই বলল,
—আমার মুক্তা বেবিটা কত সুইট,গুলুগুলু।কত্ত ভালো আমার বউটা।
—তোমাকে না বলেছি আমাকে এইসব বেবি জান এগুলো বলবে না।
–সরি জান।
–আবার জান।
–আচ্ছা সরি।তুমি বেবি হতে যাবে কেন তুমি তো আমার বেবির আম্মু।
মুক্তা দুম করে মেহেদীর পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিলো।
—সবসময় অসভ্যতা!
মেহেদী হাসছে।মৌনটা ত্যক্ত গলায় বলল
—আরো দুইটা দিতি।তুই না থাকলে আমার পেছন পেছন ঘুরে।
—তোকে তো আমার বউয়ের পা টিপার জন্য রেখেছি তাই তুই না অসুবিধে হয়।
মেহেদীর কথা শেষ হতে দেরী কিন্তু মৌনতার কিল পড়তে দেরী হয় নি।
ছবি বসে বসে ওদের কান্ড দেখছে।সে জানে না সামনে তারজন্য কত ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here