#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৩
হুম আমরা RU তে চান্স পেয়েছি। দুজন একসাথে চান্স পাওয়ায় সবাই খুব অবাক আর খুশিও হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই আমরা মেধার দিক দিয়ে এরকম, ১৯ আর ২০। চান্স পাওয়ার পরও অনেক জেদ করে আমরা রাজশাহী আসতে পেরেছি।আমাদের জেদের কাছে হার মেনে বাবা ফুপ্পা-ফুপ্পিকেও আমাদের সাথে পাঠালেন।যদিও ভিসি আঙ্কেল আর আ্যন্টি উনাদের সাথে থাকার জন্য অনেক জোর করেছেন তাও বাবা রাখলেন না।আমরা আমাদের রাজশাহীর বাসাতেই থাকবো।এই বাসাটা আমাদের খুবই পছন্দ হয়েছে। আমাদের বাসার সামনেই রাযীন ভাইয়াদের বাসা কিন্তু বাসায় কেউ থাকেনা উনারা এখন নতুন বাসায় থাকেন।
.
.
.
অনেক আশা নিয়ে আজ ৩য় বারের মত RU তে এসেছি।২য় বার এসেছিলাম ভর্তি হতে।আজ ভার্সিটিতে আমাদের ১ম দিন। ঐভাইয়াদের আমরা এখনও খুজে পাইনি। ভাবতেই মন টা খারাপ হয়ে যাই।যাদের জন্য চান্স হইলো তাদেরকে সামান্য কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগটাও পাচ্ছিনা।।
…..আমরা ক্লাস রুমে যেয়ে সবার সাথে পরিচিত হয়ে ক্লাস করে বেড়িয়ে আসলাম। আজ আর ক্লাস নেই।তাই ভাবলাম আজ আমরা পুরো ভার্সিটি ঘুরে দেখবো।মাঠের মধ্যে দিয়ে আমি আর ইচ্ছে হেটে যাচ্ছি এমন সময় এক ভাইয়া ডাকলেন,
ভাইয়া: এইযে আপু মনিরা এইদিকে আসেন।
আমরা ঐদিকে তাকিয়ে দেখি সেই ন্যাকা আপুটা। পরনে উনার জিন্স, স্লিভলেস টপ আর জ্যাকেট কোমরে বেধে রেখেছেন।কেমন একটা লেডি ডনের মতো ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।আমি আশেপাশে ভাল করে দেখতে লাগলাম ব্লু শার্ট ভাইয়াকে কোথাও দেখছিনা।সেদিন তো উনারা একসাথেই ছিলেন।ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে দেখি ও অনেক খুশি।
আমরা দুজন ঐ আপুর সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
হ্যালো আপু।
মেয়েটা আমাদের দেখে মোটেও খুশি হয়নি। আমাদের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললেন,তোমরা তাহলে এই ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছো।
উনার কথা শুনে আমর দুজনই বললাম, “জ্বী আপু”।
উনি একহাত দিয়ে আরেক হাতের তালুতে পিন্চ করে বললেন,”অহ শীট”।
ইচ্ছে: আর সবটাই হয়েছে ঐ ভাইয়াদের জন্য।আচ্ছা আপু উনারা কি এই ভার্সিটিতেই পড়েন?
এইবার মনে হলো ন্যাকা মেয়েটা আরও রেগে গেলেন।ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে বললেন,
ন্যাকা আপু: এই অভদ্র মেয়ে বড় আপুদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না কথা বলতে আসো কেন?
ইচ্ছে: সরি আপু।আমার এভাবে প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি।(মাথা নিচু করে)
পাশ থেকে আরেকটা মেয়ে বললেন, এই টোয়া তুই এদের চিনিস?
আমি: ওও তারমানে এই নেকুটার নাম টোয়া।(মনে মনে)
টোয়া: না চিনিনা তবে এখন চিনবো(বাঁকা হেসে)।তোমরা আমাদের সাথে মিসবিহেব করেছো।সো তোমাদের শাস্তি পেতে হবে।(আমাদের দিকে তাকিয়ে)
আমি: কি শাস্তি?কিন্তু আমরা তো কোনো মিসবিহেভ করিনি(ভয় পেয়ে)।
টোয়া: আবার মুখে মুখে কথা বলো বেয়াদব মেয়ে।
আমার এইবার খারাপ লাগলো। একি মেয়েরে বাবা এত রুঢ় বিহেভ করছে কেন?(মনে মনে)
ইচ্ছকে বিরবির করে বললাম চল কেটে পরি এদের কথা শুনে মনে হচ্ছে আমাদের র্যাগ দিবে।
ইচ্ছে: কি করে পালাবি দেখছিসনা সবাই ঘরে ধরে আছে?(বিরবির করে)
হঠাৎ টোয়া আপু বললেন,
টোয়া: এই তোরা কি কথা বলছিস?যেদিন থেকে তোদের সাথে দেখা হয়েছে সেদিন থেকে তোরা আমার লাইফটা হেল করে দিয়েছিস।এখন আমি তোদের লাইফ হেল করবো।(বাঁকা হেসে)
বলেই সবাই মিলে হাসতে শুরু করলো।আর আমরা তো হতবাক,কবে কখন কিভাবে টোয়া আপুর লাইফ হেল করলাম।আ’ম সিউর সি ইজ ক্রেজি!
টোয়া : কিরে তোরা কোন ডিপার্টমেন্ট?
আমি: কেমেস্ট্রি।
তারপর টোয়া আপু একটা ছেলেকে ডাকলেন।ছেলেটির নাম সানভি।আপুর ডাক শুনে কাছে আসলেন।
টোয়া: এইযে এই মেয়ে তোকে ভালুপাসে।(আমার দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে)….তোকে এখন প্রপোজ করবে।
আমি:হোয়াট?….নেভার আমি এটা পারবোনা।চলে আসতে লাগলাম..
টোয়া: আমি তোর থেকে পারমিশন চাইনি।(রেগে..পথ আটকে দাড়ালেন)
কোনো ভাবেই কোনো দিকে যেতে পারছিনা।ইচ্ছের সাথে বোঝাপড়া করে নিয়েছি একটু চান্স পেলেই ভৌ দৌড় দিব।
সানভি ভাইয়াকে দেখেই মনে হচ্ছে ছেলেটা ফাস্ট ক্লাস লুচু।আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।
টোয়া আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
টোয়া: এইমেয়ে তোর নাম কি?
আমি: হুমাইরা আনতারা অন্ত।
টোয়া:আর তোর?(ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে)
ইচ্ছে: নাদিয়া নুসরাত ইচ্ছেমতি।
ওকে ইচ্ছেমতি বেপ্পি তুই সাইডে দাড়া।আর অন্ত তুই সানভির সামনে দাড়িয়ে ওকে প্রোপোজ কর।(টোয়া)
আমরা যাইগা অদল বদল কটতেই এক দৌড়,আমাদের আর পাইকে।পেছন থেকে টোয়া আপুর রাগি কন্ঠ শুনতে পেলাম, পালিয়ে যাবি কই?ঘুরে ফিরে আমার সামনে আসতেই হবে,দেখেনিবো তোদের….ব্লা.. ব্লা…
বাসায় আসতেই ফুপ্পি আমাদের জিজ্ঞেস করলো ১ম দিন কেমন কাটলো।
আমরা দুজনই ফুপ্পিকে জড়িয়ে ধরে বললাম, “আমেইজিং”.
২য় দিন খুব ভয়ে ভয়ে ভার্সিটি গেলাম।ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে যাচ্ছি দুর থেকেই টোয়া আপুকে দেখে আর গেলাম না। হঠাৎ আইরিন(আমাদের নতুন ফ্রেন্ড) বললো চল রুয়েট যাই ওখানে আমার কাজিন আছে,আমাকে যেতে বলেছে।
আমি আর ইচ্ছেও সম্মতি জানালাম, কারন আমরা আগে কখনও রুয়েট যাইনি।ওকে চল যাই।।
রুয়েটে ঢুকে চারপাশ দেখছি আর হাটছি।ইচ্ছে আর আইরিন নানান কথা নিয়ে ব্যস্ত।হাটছি এমন সময় পাশের মাঠে তাকালাম ছেলেরা ফুটবল খেলছে আর গোল বলে হৈহুল্লোর করছে। সবাই যেয়ে একজনকে ঝাপ্টে ধরলো।আমি এইবার হাটা থামিয়ে দিলাম কেন জানিনা ছেলেটাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।ইচ্ছে আর আইরিন গল্পেরতালে আমাকে রেখেই অনেকটা রাস্তা চলে গেছে।আমি মাঠের দিকে তাকিয়ে আছি।সব ছেলেরা আবার সারা মাঠে ছড়িয়ে পরলো আর ওই ছেলেটাকে দেখেই আমার মন আনন্দে নেচে উঠলো।
প্রায় দুমাস ধরে খুজে খুজে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি অবশেষে দেখা মিলেছে সেই ব্লু শার্ট ভাইয়ার।
আমি দাঁড়িয়ে থেকে উনার দিকে তাকিয়ে আছি আর নিজের অজাম্তেই মুচকি হাসছি।উনি আজ সাদা জার্সি আর সাদা প্যান্ট পড়ে আছেন।দৌড়াদৌড়ি করার জন্য উনার মাথা ঘেমে চুল গুলো ভিজে গিয়েছে।
হঠাৎ ইচ্ছে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
ইচ্ছে: ওই ছেমরি এখানে কি করিস?
আমি: সামনে তাকা।
ইচ্ছে সামনে তাকিয়েই লাফিয়ে উঠলো।ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও খুব খুশি।
আমি: কিরে তোকে এত খুশি খুশি লাগছে কেন? আমি তো কোথাও প্রান্ত ভাইয়াকে দেখছিনা।(খোজাখুজির ভান করে)
ইচ্ছে কিছু বলবে এমন সময় আইরিন,
আইরিন: এই তোরা যাবি নাকি আমি চলে যাব? আপু ফোন করছে ওর ক্লাস আছে।
ইচ্ছে: আপাতত আমরা এখানেই আছি তুই তোর আপুর সাথে দেখা করে আয়।
আইরিন:কি?
ইচ্ছে:জ্বী।যা আমরা এখানে আছি তুই আপুর সাথে দেখা করে আয়।
আইরিন: ওকে,তোদের মনে কখন কি চলে বুঝিনা।বলেই চলে গেল।
আমি সামনে তাকিয়েই আছি। উনি খেলছেন। হঠাৎ উনি খেলতে খেলতে আমার দিকে তাকালেন। তাকিয়েই দৌড়ানো বন্ধ করে দিলেন।চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে চোখ ডলে আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালেন। উনি এক দৌড়ে আমার কাছে আসলেন।
ইচ্ছে: হ্যালো ভাইয়া।কেমন আছেন?আচ্ছা ভাইয়া আপনার নাম কি?বার বার আপনাকে ব্লু শার্ট বলে সম্বোধন করতে করতে আমরা বোর হয়ে গেছি।তাই আমি ভেবে রাখেছি যেখানেই আপনার সাথে দেখা হবে সবার আগে আপনার নাম জেনে নিব।(হেসে হেসে)
আমি রাগি চোখে ইচ্ছের দিকে তাকালাম যার অর্থ হলো তুই আমার আগে কথা বললি কেন?….ইচ্ছে মুখ কাচুমাচু করে ফেললো।
ব্লু শার্ট ভাইয়া হালকা হাসলেন তারপর বললেন,
ব্ল শার্ট: ওয়েল। আ’ম মুহতাসিম ফুয়াদ নির্ভীক।ইউ কান কল মি নির্ভীক।আর তোমরা?
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেয় উনি বললেন,
নির্ভীক : চলো আমরা বসে কথা বলি….
চলবে….
(কেমন হলো অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।)