ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব: ১৫

0
3015

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ১৫

সন্ধ্যার দিকে রুম অন্ধকার করে শুয়ে আছি।মনের মধ্যে ভয় আর টেনশন কাজ করছে।কারও সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা। বার বার শৈবালের শয়তানি হাসি মনে পড়ছে, উনি আমার উপর রেগে আছেন কেন সেটাই বুঝতে পারছিনা,উনি যদি আরাফের মতো আমার কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করেন?জারিফ ভাইয়াও তো এখানে নেই,কে বাঁচাবে আমাকে।আমার ভাবনার মাঝেই ইচ্ছে এসে রুমের লাইট অন করে বলতে লাগলো,

ইচ্ছে: এই উঠ নিচে চল সেই বিকেল থেকে শুয়ে আছিস, নির্ভীক ভাইয়া আর প্রান্ত ভাইয়া এসেছেন।

ইচ্ছের কথা শুনে আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,”কেন?”

ইচ্ছে: নির্ভীক ভাইয়া বলছিলেন আমাদের ঘুড়তে নিয়ে যাবেন।ভাইয়াদের ক্লাস টেস্ট শেষ আর আমরাও বোরিং টাইম স্পেন্ড করছি সেই জন্য।আম্মু বলল তুই যাবি কিনা…..

আমি: ভাল লাগছে না যেতে তুই যা।(এক পাশ ফিরে শুয়ে)

ইচ্ছে: আরে নিচে তো চল….. আম্মু সিঙ্গারা আর বেগুনি বানিয়েছে সবাই এক সাথে খাব চল।

আমি:যাবোনা,একা থাকতে দে।(চোখ বন্ধ করে)

ইচ্ছে: ভিসি অ্যাঙ্কেল বিজি আছে তাই বললাম না, চল নির্ভীক ভাইয়াকে বলে দেই শৈবালের কথা (আমার পাশে বসে)।কে জানে কাল দেখা হলে কি করবে।তুই তো এসব হ্যারাসমেন্ট একদম সহ্য করতে পারিস না,সেই বাসায় আসার পর থেকে শুয়ে আছিস।আমার মনে হয় ঐ টোয়া শাঁকচুন্নিটা শৈবালকে তোর পেছনে লাগিয়ে দিয়েছে।নির্ভীক ভাইয়াকে জানানো দরকার, চল।(আমার হাত টেনে)

আমি কিছু না বলে ইচ্ছের হাত থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে এক পাশ হয়ে শুয়েই থাকলাম।

ইচ্ছে: ওকে তুই থাক আমি আসছি।

বলেই নিচে চলে গেল।

কয়েকমিনিটপর কপালে কারও ঠান্ডা হাতের স্শর্শ পেয়ে চমকে তাকালাম তাকিয়ে দেখি নির্ভীক ভাইয়া এক হাটু ভাঁজ করে এক হাত দিয়ে বেডে ভর দিয়ে অন্যহাত আমার কপালে রেখে আমার দিকে ঝুকে আছেন।উনার চোখ লাল হয়ে আছে।আমি বেডে উঠে বসলাম।নির্ভীক ভাইয়া আমার মুখো মুখি হয়ে বেডের উপর বসলেন।

নির্ভীক: শৈবালের ব্যাপারটা আমি বুঝে নিবো ও আর কিছু বলবেনা তোমাকে।যাও রেডি হয়ে নাও আমরা বাহিরে যাব। (শান্ত গলায়)

উনার কথা শুনে আমার যে কি হলো আমি নিজেও জানিনা। আমি ফুঁপিয়ে কান্না করে দিলাম।মনে মনে হয়ত এতক্ষণ এইরকমই কারও সাপোর্ট চাইছিলাম।

নির্ভীক:প্লিজ ডোন্ট ক্রাই। (দুহাত আমার গালে রেখে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চোখের পানি মুছে)শৈবাল আর কখনও এমন করবেনা।

আমি: উনাকে আমার খুব ভয় করছে।(হিচকি তুলতে তুলতে)

প্রান্ত:তুমি ওই আবাল টাকে ভয় পাচ্ছো?হাউ ফানি।তুমি ওই আবালটাকেই যা ভয় পাচ্ছো নির্ভীক কে তাহলে…..!
নির্ভীক: শার্ট আপ।(প্রান্তের দিকে তাকিয়ে)

আমি: উনি বলেছেন কাল ক্যাম্পাসে গেলে আবার দেখা করবেন।(চোখ মুছে)

ইচ্ছে:শৈবাল…..

নির্ভীক: ডোন্ট ওরি, আমি আছি তো।শৈবাল মিনিমাম একমাস তোমার সামনে আসবেনা।ওকে, আর কোন কথা নয়,৫মিনিট টাইম দিলাম তোমরা দুজন রেডি হয়ে নিচে আসো।

বলেই উনি আর প্রান্ত ভাইয়া হন হন করে বেড়িয়ে গেলেন।

আমি আর ইচ্ছে রেডি হয়ে নিচে গেলাম। নির্ভীক আর প্রান্ত ভাইয়া ফুপ্পা – ফুপ্পির সাথে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন।আমরা যেতেই উনারা উঠে দাঁড়ালেন।

নির্ভীক: ফুপ্পি,এখন ৮টা বাজে আমরা ১০টার আগেই ফিরে আসবো,ডোন্ট বি টেন্সন্ড। ওকে?

ফুপ্পি:ঠিক আছে।ওদের হাত ধরে রাখবি একা ছাড়বিনা।

নির্ভীক: ওকে।বাই।

আমরা বাহিরে আসলাম।গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতেই নির্ভীক ভাইয়া বললেন,

নির্ভীক:ওদিকে কোথায় যাচ্ছো?..আমরা এই দিকে যাব, হেঁটে।(বাসার পেছন দিকে ইশারা করে)

ইচ্ছে: ভাইয়া ঐদিকে তো রাস্তা নেই। আমাদের বাসার পেছনে আরেকটা বাসা তারপর বিশাল আম বাগান। আমরা কোথায় যাবো?

নির্ভীক ভাইয়া এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার ডান হাত ধরে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে বললেন,

নির্ভীক: ফলো মি।প্রান্ত ইচ্ছেমতির সাথে আয়।

বলেই ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে বাসার পেছন দিকে যেতে লাগলেন।এইদিকটাতে আলো আছে তাই উনাকে ফ্ল্যাশ বন্ধ করতে বললাম।কিন্তু উনি করলেন না।কিছুক্ষণ হাঁটারপর আম বাগানে আসলাম।এইদিকটাতে তেমন বাসাবাড়ি নেই। আমি এরপর আর কিছু চিনিনা।আশে পাশে লোকজনও নেই,কেমন গা ছম ছমে পরিবেশ। বড় বড় আম গাছের নিচ দিয়ে হাঁটছি কারও মুখে কথা নেই, শুধু আমাদের পায়ের আওয়াজ আর ঝিঝিপোকার ডাক কানে আসছে।মনে হচ্ছে গ্রামের কোন রাস্তায় হাঁটছি।মনে মনে খুব ভয় পাচ্ছি। নির্ভীক ভাইয়া এখনও আমার হাত ধরে আছেন।হঠাৎ ফোনের ফ্লাশ অফ হয়ে গেল আমি চট করে অন্য হাত দিয়ে নির্ভীক ভাইয়ার একবাহু জড়িয়ে ধরলাম।ইচ্ছে ভূত বলে চিৎকার করে উঠলো।ওর চিৎকার শুনে আমিও চিৎকার দিয়ে নির্ভীক ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম। সঙ্গে সঙ্গে প্রান্ত ভাইয়া ফ্লাশ অন করে বললেন,

প্রান্ত : কোথায় ভূত?আমিও দেখবো।কোথায়?

ইচ্ছে: কো..থায়?আলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কেন?(কাঁপা কাঁপা গলায়)

নির্ভীক:সরি গাইস, ব্যাটারি ডেড।অন্ত?ভয় পেয়েছ?তাকাও ভূত নেই তো।(আমাকে উনার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে)

আমি: আমি বাসায় যাব। এখানে ভয় লাগছে।

নির্ভীক : আমরা চলে এসেছি। আর একটু সামনে চল প্লিজ।

আমি: না, না আমি বাসায় যাব। আপনি আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন।(ভয়ে গলা শুকিয়ে গিয়েছে)

নির্ভীক ভাইয়া কিছু না বলে হুট করে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।আচমকা এমন হওয়ায় আমি উনার কাঁধ জড়িয়ে ধরলাম।
আমি: কি করছেন নামান আমাকে।

নির্ভীক: প্রান্ত আয় তাড়াতাড়ি।

বলেই হাটা দিলেন।পেছন থেকে ইচ্ছে অবাক হয়ে বলল,
ইচ্ছে:এই নিয়ে তিন বার।

প্রান্ত: কি হল চলো,নাকি তোমাকেও কোলে নিতে হবে? আম রেডি..
ইচ্ছা:না, না। চলুন।

আমরা একটা বিশাল পুকুরের পাড়ে বাশের তৈরি দেয়ালবিহীন ঘরে বসে আছি,এটা একটা রেস্টুরেন্ট। আশেপাশে এইরকম ঘর আরও কয়েকটা আছে।চারদিকে রঙ বেরঙের লাইট জ্বলছে।। সব গুলো ঘরেই লোকজন বসে আড্ডা দিচ্ছে।আমরাও গল্প করছি।জায়গাটা খুবই সুন্দর ।নির্ভীক ভাইয়া বললেন,

নির্ভীক: জানো অন্ত?ছোটবেলায় তুমি আর আমি এই পুকুরের পানিতে পরে পানি খেয়ে পেট ঢোল করেছিলাম।তোমার তো গা হাত পা নীল হয়ে গিয়েছিল।

আমি: কিছু কিছু মনে পড়ে।কিন্তু আমি পানিতে পড়লাম কিভাবে আপনি জানেন?

নির্ভীক: ঐযে গাছটা দেখছো,ঐ গাছের নিচে বসে আমি কাগজের নৌকা বানাচ্ছিলাম।কখন যে তুমি নৌকা নিয়ে পুকুরে ভাসিয়ে দিতে গিয়েছ আমি বুঝতে পারিনি।যখন বুঝতে পারলাম তখন শুধু পানিতে তোমার হাত দেখা যাচ্ছিল।আমি তাড়াতাড়ি করে পানিতে হাত ডুবিয়ে দিয়ে তোমাকে তুলতে গেলাম কিন্তু পা স্লিপ করে পানিতে পরে গেলাম। সাঁতার জানতাম না তাই নিজেও উঠতে পারিনি তোমাকেও তুলতে পারিনি।(জোড়ে শ্বাস ছেড়ে)

আমি: তারমানে ঐহাত আপনার ছিল?..গিটার লাগানো ব্রেসলেট, স্টার…(খুশি হয়ে)

নির্ভীক: হুম।

আমি: তাইতো বলি আপনি এত ফর্সা কেন?আপনিও তো পুকুরের ভিটামিন ই যুক্ত পানি খেয়েছিলেন।

আমার কথা শুনে সবাই হেসে দিল।
আমি: আর ঐ সাইকেল ড্রাইভারটাও নিশ্চয় আপনিই ছিলেন?(ভ্রু কুচকে)

নির্ভীক: হুম।(মাথা নিচু করে)

প্রান্ত: অন্ত তোমার কিন্তু রিভেন্জ নেয়া উচিত।(হেসে হেসে)
আমি: হুম ঠিক বলেছেন।

আমার কথা শুনে নির্ভীক ভাইয়া আমার দিকে করুন চোখে তাকালেন।
আমি: কিন্তু কি রিভেন্জ নিবো?(চিন্তিত হয়ে)

ইচ্ছে: আমি বলি?
প্রান্ত: না আমি বলবো।
ইচ্ছে:না আমি..
প্রান্ত:আমি।।

আমি হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছি।
নির্ভীক: ওকে ওকে। যা রিভেন্জ নেয়ার পরে নিও এখন বিরিয়ানি খাও গরম গরম বিরিয়ানি।(হাতে স্পুন নিয়ে)

আমি: ঠিক আছে।পরে ভেবে যা বলবো আপনার কিন্তু তাই করতে হবে।

নির্ভীক:ওকে।(হেসে)

খাওয়া শেষ করে এইবার বাসায় যাওয়ার পালা।আবার সেই গা ছমছমে ভূতের রাস্তা। ভেবেই ভয় লাগছে আর এখন রাত আরও বেশি হয়েছে।
ইচ্ছে:আবার ওই রাস্তা দিয়েই যেতে হবে?

প্রান্ত:হুম।নাহলে অন্য রাস্তা দিয়ে বাসায় যেতে ২ঘন্টা লাগবে।

আমি:ভয় লাগছে, ওই রাস্তা দিয়ে যাবনা।

নির্ভীক: ওই রাস্তা দিয়েই যাব। চল…

আমি: না……!

নির্ভীক:হুম।

বলেই আবার কোলে নিলেন।

আমি: নামান আমাকে।আমি হেঁটে যাব।

নির্ভীক:চুপ।প্রান্ত ইচ্ছেমতি ভয় পেলে ওকেও কোলে নে।রাস্তার মধ্যে ভয় পেয়ে চিল্লানী দিলে লোকজন আমাদের খারাপ ভাববে।আর সত্যি যদি ভূত বের হয় তাহলে তো এরা হার্ট এটাক করবে।

ইচ্ছে:না না আমি হেটেই যেতে পারবো।কিন্তু এইবার আমরা সামনে হাটবো আপনি আর অন্ত আমাদের পেছনে আসুন।

বলেই প্রান্ত ভাইয়ার হাত ধরে হাটতে শুরু করলো।আবার সেই বাগানে আসলাম।রাত বেশি হওয়ায় জায়গাটা আরও ভয়ঙ্কর লাগছে।আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছি।একটু অসস্তি হচ্ছে,নির্ভীক ভাইয়া কেন যে আমাকে নামাচ্ছেন না।ধুর এভাবে কোলে চরে থাকতে লজ্জা করছে খুব।কিন্তু কে শোনে কার কথা,পুরো রাস্তা কোলে করেই নিয়ে আসলেন।

কিছুক্ষণ পরেই বাসায় পৌঁছে গেলাম।নির্ভীক ভাইয়া কি যেন জরুরী কাজ আছে বলে তাড়াহুরো করে প্রান্ত ভাইয়াকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন।আমি আর ইচ্ছে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম।এখন মনটা অনেক ফ্রেশ লাগছে।শৈবালের জন্য একটুও ভয় করছেনা।নানান গল্প শেষে আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম।

চলবে…………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here