#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ২১
চোখ খুলে দেখি কেউ আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে জোড়ে জোরে চিৎকার করে কান্না করছে।এত শব্দে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।আমি বুঝতে পারছি নির্ভীক ভাইয়াই এমন করে কাঁদছেন।ডানহাত উনার পিঠে রাখলাম।তখন উনি আমার গলা থেকে মুখ তুলে আমার গালে হাত রাখলেন।কান্না করে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছেন।চুল গুলোর কি অবস্থা হয়ে গিয়েছে একদম উসকো-খুশকো।বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারছিনা ঘুম পাচ্ছে।
নির্ভীক:অন্ত,কোথায় কষ্ট হচ্ছে?বল আমাকে।(কান্না থামানোর চেষ্টা করে)
আমি:ঠিক আছি।আপনার কিছু হয়নি তো?(লো ভয়েছে চোখ বন্ধ করে)
নির্ভীক:দেখ,তাকাও আমার দিকে।কথা বল আমার সাথে প্লিজ।এই দেখ আমি শ্বাস নিতে পারছিনা।প্লিজ কথা বল। (আমার একবাহু ঝাকিয়ে)
প্রান্ত:আহ্ কি করছিস কি ছাড় ওকে।ওর লেগে যাবে কোথাও।ডক্টর ওকে কড়া ডোজের ঘুমের ঔষধ দিয়েছে ওকে ঘুমোতে দে নাহলে ব্রেনে চাপ পড়বে।
আমি:আমার পা কোথায়?(উত্তেজিত হয়ে উঠার চেষ্টা করে)
নির্ভীক:কাম ডাউন।কিছু হয়নি পা ঠিক আছে।(মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে)
আমি ধীরে ধীরে চোখ খুলে পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি বাম পা হাটু থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত ব্যান্ডেজ করে একটা স্ট্যান্ডের সাথে ঝুলিয়ে রাখা আছে।পা আছে কি নেই বুঝতে পারছিনা।বাম হাতেও ব্যান্ডেজ করা হাতও নাড়াতে পারছিনা।ভয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করে দিয়েছি।
নির্ভীক ভাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে প্রান্ত ভাইয়াকে উত্তেজিত হয়ে বললেন,
নির্ভীক:প্রান্ত,কি করবো এখন আমি ও কাঁদছে,আমার খুুব কষ্ট হচ্ছে।উফ্ শ্বাস নিতে পারছিনা। আমি…
আর কিছু বলার আগেই উনি সেন্স হারিয়ে পড়ে যেতে লাগলেন।প্রান্ত ভাইয়া উনাকে ধরে বললেন,
প্রান্ত:এই কি হলো তোর।নির্ভীক?নির্ভীক?….হায় আল্লাহ এ কোন বিপদে ফেললে আমাকে।
আমি কি সব বির বির করতে করতে আবার ঘুমিয়ে গেলাম।খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলে তাকিয়ে দেখি নির্ভীক ভাইয়া ফ্লোরে বসে আমার হাত ধরে বেডে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে আছেন।উনাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাই আর ডাকলাম না।ধীরে ধীরে হাত টেনে উনার থেকে ছাড়িয়ে নিলাম।এখন ভাল করে তাকাতে পারছি।উনার হাতের কনুই এর কাছে ব্যান্ডেজ করা।আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি এখনও ঝুলছে।প্লাস্টার করে দিয়েছে। হাত এমনি ব্যান্ডেজ করা তারমানে হাত ভাঙ্গেনি। কপালে হাত দিয়ে দেখি সেখানেও ব্যান্ডেজ করা বাম গাল ছিলে গিয়েছে চোখের কাছেও ছিলে গিয়েছে।দরজা ঠেলে একজন মধ্যবয়সী নার্স ভেতরে ঢুকলেন।আমাকে তাকানো দেখেই কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
নার্স:এখন কেমন লাগছে?
আমি:ভাল।
নার্স:ফ্রেস হয়ে তোমার কিছু খেতে হবে এখন।
আমি:ওয়াশরুম যাব।
নার্স:২মিনিট ওয়েট করো আমি সিস্টার কে ডাকছি।খেয়াল রেখো পায়ের ব্যান্ডেজ এ যেন একটুও পানি না লাগে।
ফ্রেস হয়ে এসে দুজন সিস্টার আমাকে ধরে বেডে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিয়ে আবার পা ঝুলিয়ে দিলেন।
আমি:পা ঝুলিয়ে দিতে হবেনা এমনি রাখুন আমার সমস্যা হচ্ছেনা।
নার্স:৪৮ ঘন্টা এভাবেই রাখতে হবে নাহলে পায়ে পানি জমে ফুলে যাবে।
আমি:ওহ।উনি এখনও উঠেননি।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নার্স:ও এখন উঠবেনা। রাত ১২টায় ওকে ঘুমের ইন্জেকশন দিয়েছি এখানে এসে এভাবেই ঘুমিয়ে গেছে।
আমি:উনাকে ডেকে বেডে শুইয়ে দিন এভাবে তো উনার কষ্ট হচ্ছে।
নার্স:ডাকলে আর ঘুমোবেনা।থাক এভাবেই যতক্ষণ পারে ঘুমোক।কাল থেকে ছেলেটার উপর দিয়ে যা ধকল গিয়েছে।কাল বিকেলে তোমাকে এখানে নিয়ে এসে কেমন পাগলের মতো করছিল। সেকি কান্না,কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেল।জ্ঞান ফেরার পর তোমার কাছে এসে চিৎকার করে তোমাকে ডাকছিল তোমাকে জাগানোর কত চেষ্টা করছিল।ওর বাবা,বন্ধু ওকে আটকাতে পারছিল না।তোমার সমস্যা হচ্ছিল তাই ওর মা ওকে ঘুমের ইন্জেকশন দেয় তারপর রাত ১০টায় আবার তোমার কাছে এসে অজ্ঞান হয়ে যায়।জ্ঞান ফেরার পর তোমার কাছেই এসে বসে ছিল।পরে ওর বন্ধু ওকে জোড় করে পাশের কেবিনে নিয়ে শুয়ে দেয় আমি ওকে ঘুমের ইন্জেকশন দেই কিন্তু কখন উঠে এখানে চলে এসেছে।
আমি:ওহ।(একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে)
নার্স:এই স্যুপটা খেয়ে নাও।(মুখের কাছে চামচে স্যুপ নিয়ে)
আমি:এখন খেতে পারবোনা।কেমন যেন হচ্ছে।(কপালে হাত দিয়ে)
নার্স:কাল থেকে স্যালাইন সলুউশনে আছো, তুমি জাগলেই ম্যাম তোমাকে খাইয়ে দিতে বলেছে।ঔষুধ না খেলে তাড়াতাড়ি ঠিক হতে পারবেনা।
আমি:প্লিজ জোড় করবেন না। আমার অসস্থি হচ্ছে।মাথা ঘুরছে।
নার্স:আচ্ছা আমি ডক্টর কে ডাকছি।
বলেই নার্স চলে গেলেন।আমি নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকালাম। এই কয়মাসে উনি আমাকে কত আপন করে নিয়েছেন।আমার কষ্টে উনি কত কষ্ট পাচ্ছেন।উনাকে এভাবে দেখতে আমারও যে খুব কষ্ট হচ্ছে।এই কয়দিনে উনার সাথে আমার এত ভাল সম্পর্ক হয়েছে।উনি খুব ভাল মনের মানুষ।হঠাৎ উনি নড়ে চড়ে উঠলেন।তারপর আমার দিকে তাকিয়েই বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন।আমার দিকে ঝুকে আমার গালে হাত রেখে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললেন,
নির্ভীক:এখন কেমন লাগছে?কখন উঠেছো?আমাকে ডাকলেনা কেন?(শান্ত কন্ঠে)
আমি:আমি ভাল আছি।(আমার গালে রাখা উনার হাত ধরে)
ডক্টর রুমে এসে আমাকে চেক আপ করে খাইয়ে দিতে বলে চলে গেলেন। নির্ভীক ভাইয়া আমাকে জোড় করে খাওয়ালেন তারপর ঔষধ খাওয়ালেন।উনি বেডের উপর বসে আমার ডান হাত উনার হাতের মুঠোতে নিয়ে চুমু খেয়ে বললেন,
নির্ভীক:অন্ত,তুমি আমাকে কখনও ক্ষমা করো না।আমি পারিনি তোমাকে প্রটেক্ট করতে।আমার জন্য তোমার এই অবস্থা। তুমি আমাকে পানিশমেন্ট দাও।
আমি:প্লিজ এইরকম কথা বলবেন না।ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল,ঐ মুহূর্তে আপনার কিছু করার ছিল না।আর আমি জানি আপনি নিজের জীবন দিয়ে হলেও আমাকে প্রটেক্ট করবেন।
তখনই প্রান্ত ভাইয়া রুমে আসলেন।উনার হাতে খাবার আর কাপড়ের ব্যাগ।আমাকে জেগে থাকা দেখে উনি বললেন,
প্রান্ত:বোনু কেমন লাগছে এখন? খেয়েছো?
আমি প্রান্ত ভাইয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। কারন উনি আমাকে আগে কখনও বোনু বলেননি।
আমি:ভাইয়া আপনি আমাকে বোনু ডাকছেন?
প্রান্ত: হুম।কেন তোমার ভাল লাগছেনা?তুমি আমার ছোট বোন তাই ভাবলাম….(গোমড়া মুখ করে)
আমি:না না খুব ভাল লাগছে।(হালকা হেসে)
প্রান্ত:তবে তোমার নাম টা আমার খুব ভাল লাগে তোমাকে দেখলেই খালি তোমার নাম বলতে ইচ্ছা করে কিন্তু একটা পাগল আছে সে অন্ত নামটা কোন ছেলের মুখে শুনলেই পাগলামি শুরু করে দেই, অন্ত নামের একটা মেয়ে নাকি তাকে পাগল বানিয়েছে তাই পাগলটা অন্ত নাম শুনলেই একশন নেই তাইনা নির্ভীক?(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)।আমি আবার পাগলদের খুব ভয় পাই তাই ভাবলাম তোমাকে বোনু করে ডাকবো বলা তো যায় না কখন পাগলটা আমার ঘাড় মটকে দেই।(হেসে)
আমি:পাগলটার সাথে যদি আমার দেখা হয় আর আমার নাম যে অন্ত সেটা জানলে তো আমার উপরও একশন নিবে। (ভয় পেয়ে )
নির্ভীক:এই কে পাগল?(প্রান্ত ভাইয়ার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে)কোন পাগল নেই।(আমার দিকে তাকিয়ে)
প্রান্ত:ওই যা ফ্রেশ হয়ে আয়। অন্ত তো এখন ঠিক আছে ও আর তোকে ছেড়ে যাবেনা। আমি অন্তর কাছে আছি(নির্ভীক ভাইয়া তাকাতেই)আই মিন বোনু,আমি বোনুর কাছে আছি ও কোথাও যাবেনা।
আমি:আমি কি করে কোথাও যাব?আমার তো পা ই ভেঙ্গে গিয়েছে।((মন খারাপ করে)
প্রান্ত:ডোন্ট ওরি বোনু নির্ভীকের পা তো আছে।
আমি:হুম তাও ভাল আপনার কিছু হয়নি।বাইক থেকে পড়ার পর আপনাকে না দেখে আমি টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
আমার কথা শুনে উনি আমার হাত শক্ত করে ধরে বললেন,
নির্ভীক:তুমি আমাকে কখনও ছেড়ে যেওনা অন্ত, আমি মরে যাব।(ছল ছল চোখে)
আমি:ওকে যাব না কিন্তু একটা শর্ত।রাজি?
নির্ভীক: ওকে ডান।বল কি শর্ত?
আমি:আপনি এখনি ফ্রেশ হয়ে এসে খেয়ে ঘুমোবেন।আর এই যে আপনার হাত, দেখুন ব্যান্ডেজ টা কেমন হয়ে গিয়েছে এটা চেন্জ করে নিবেন।যান এখনই নাহলে আমি প্রান্ত ভাইয়াকে নিয়ে ঢাকা চলে যাব।(উনার হাত ধরে)
নির্ভীক:না প্লিজ আমি যাচ্ছি তবে এখন ঘুমোতে বল না আমার ঘুম আসবেনা এখন।
আমি:আচ্ছা আপনি বাকি কাজগুলো করুন আগে।
নির্ভীক:প্রান্ত তুই থাক এখানে আমি ৫মিনিটে আসছি।
বলেই উনি উঠে দাঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটতে লাগলেন।
আমি:ভাইয়া আপনার পায়ে তো লেগেছে।
নির্ভীক:বেশি না সামান্য লেগেছে (পেছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে)।
প্রান্ত: আচ্ছা তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে।
নির্ভীক ভাইয়া ওয়াশরুমে গেলেন।প্রান্ত ভাইয়া আমার বেডের পাশে টুল নিয়ে বসে বললেন,
প্রান্ত:কি থেকে কি হয়ে গেল।এত বাজে ভাবে এক্সিডেন্টটা হলো…
আমি:হুম ভাইয়া আমি বাইক থেকে পড়ার পর বুঝতে পেরেছি আমাদের এক্সিডেন্ট হয়েছে।কিভাবে কি হলো বুঝতে পারিনি।
প্রান্ত:ওখানে তখন একটা ঝামেলা হয়েছিল,মারামারি হচ্ছিল।নির্ভীক সেটা খেয়াল করেনি। একটা লোকের হাতে ধাঁরালো রাম দা ছিল ওই লোকটা আরেকটা লোককে উদ্দেশ্য করে রামদাটা ছুড়ে মেরেছিল।ওটা যেয়ে নির্ভীকের বাইকের পেছনের টায়ারে লেগেছিল আর তুমি ছিটকে পড়েগেলে।নির্ভীক বাইক নিয়েই পরেছিল কিন্তু খুব একটা আঘাত পায় নি।
আমি: উনি আসলে উনাকে বাসায় পাঠিয়ে দিন উনার ঘুম হয়নি খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
নির্ভীক:আমি কোথাও যাব না।(ওয়াশরুমের দরজা খুলে)
প্রান্ত:কিরে এত তাড়াতাড়ি কিভাবে কি করলি?শাওয়ার নিয়েছিস, হাত ভিজিয়েসিছ কেন?
প্রান্ত ভাইয়ার কথার কোন উত্তর না দিয়ে উনি আমার পাশে এসে বসলেন।তখনই রুমে অ্যান্টি আসলেন।
অ্যান্টি:অন্ত মা উঠেছিস?(আমার মাথায় হাত দিয়ে)কেমন লাগছে এখন?পা ব্যাথা করছে?
আমি:আমি ভাল আছি অ্যান্টি।কিন্তু আমার পা কবে ঠিক হবে?
অ্যান্টি:৪৬দিন পর খুলে দিব।সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি:৪৬দিন?আমি ভার্সিটি যাব কি করে অত দিন কিছুতেই এভাবে থাকতে পারবোনা।
অ্যান্টি:চিন্তা করিসনা এখন রেস্ট নে। খেয়েছিস?
আমি:হুম।
নির্ভীক:আম্মু ওকে বাসায় নিয়ে যাব।
অ্যান্টি:কাল বিকেলে ওকে বাসায় নিয়ে যাব।এখন ওকে রেস্ট নিতে দাও ও খুব দুর্বল হয়ে গিয়েছে।দুপুরে ওর কাটা জায়গা গুলোতে ড্রেসিং করতে হবে।
বলেই অ্যান্টি চলে গেল।অ্যান্টি এই হসপিটালেরই ডক্টর।প্রান্ত ভাইয়া জোড় করে নির্ভীক ভাইয়াকে খাইয়ে দিলেন। বাসায় সবার সাথে ভিডিও কলে কথা বললাম।ওরা আজই আসবে।নির্ভীক ভাইয়া প্রান্ত ভাইয়াকে পাঠিয়ে দিলেন। তারপর আমাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে আমার মাথার কাছে বেডে হেলান দিয়ে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।আমি একটু কষ্ট করে বামপাশে এগিয়ে গিয়ে উনাকে বেডের উপর পা তুলতে বললাম কারন উনি পায়ে চোট পেয়েছেন। এভাবে পা ঝুলিয়ে বসে থাকলে উনি বেশি কষ্ট পাবেন।অনেক রিকুয়েস্ট করার পর উনি আমার বেডে আধ শোয়া হয়ে বসে আমার ডান হাত ধরে রাখলেন।আমি ঘুমোনোর জন্য চোখ বন্ধ করে থাকলাম।
বিকেলে আম্মু, বাবা,ভাইয়া,আপু,ইচ্ছে,ফুপ্পা,ফুপ্পি সবাই ঢাকা থেকে চলে এসেছে।বাবা, ফুপ্পা,ফুপ্পি আর আপু রাতেই ফ্লাইটে ঢাকা চলে যাবে।নির্ভীক ভাইয়া সবার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।সবাই উনাকে বুঝাচ্ছেন কিন্তু উনি কিছুতেই বুঝতে চাইছেন না।নিজেকে অপরাধী ভাবছেন।আমার সাথে দেখা করে সবাই বাসায় চলে গেল।জারিফ ভাইয়া আর নির্ভীক ভাইয়া রাতে আমার কাছে আছে।আমি ঘুমিয়ে আছি, ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ আমার গালে ঠোঁটে হাত দিয়ে স্লাইড করছে।আমার খুব অসস্থি হচ্ছে।তাকিয়ে দেখি একটা কালো হুডি পরা লোক ডিম লাইটের আলোই উনার মুখ দেখা যাচ্ছেনা।আমাকে তাকাতে দেখেই দরজা খুলে বেড়িয়ে গেল।আমি চিৎকার দিয়ে ডান হাতের কনুইতে ভর দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না।নির্ভীক ভাইয়া আমার পাশেই বেডে মাথা লাগিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন আমার চিৎকার শুনে ধরফরিয়ে জেগে উঠে বললেন,
নির্ভীক:হোয়াট হেপেন্ড, অন্ত?কোথায় কষ্ট হচ্ছে?
আমি থরথর করে কাঁপছি।উনি রুমের লাইট অন করলেন তারপর আমাকে বেডে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিয়ে আমার বাহু ঝাকিয়ে বলতে লাগলেন,
নির্ভীক:কি হয়েছে?স্বপ্ন দেখেছো?(উত্তেজিত হয়ে)
আমি:এখানে কেউ আছে,ওই লোকটা।(কাঁপা কাঁপা গলায়)
তখনই জারিফ ভাইয়া দরজা ঠেলে দুইহাতে দুটো কফির মগ নিয়ে ঢুকলো।আমাকে এভাবে দেখেই ব্যস্ত হয়ে বললো,
জারিফ:কি হয়েছে ছোটপাখি?চাঁদ,কি হয়েছে ওর?
নির্ভীক:ও বলছে এখানে কেউ এসেছে।ঘুমের মধ্যে থেকে চিৎকার দিয়ে উঠেছে।মনে হয় খারাপ স্বপ্ন দেখেছে।
আমি:না,আমি দেখেছি। ওই কালো হুডি পরা লোকটা আমার গালে হাত দিয়েছিল আমি তাকাতেই বেড়িয়ে গেল।(কাঁপা কাঁপা গলায়)
আমার কথা শুনেই নির্ভীক ভাইয়া বাহিরে দৌড় দিলেন।জারিফ ভাইয়া আমার কাছে এসে বসলো।আমি ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে যা যা দেখেছি সব বললাম।কিছুক্ষণ পর নির্ভীক ভাইয়া ফিরে এলেন।এসে বললেন উনি সেইরকম কাউকে বাহিরে দেখেননি।
আমি:আমি সত্যি বলছি।এটা কিছুতেই আমার ভুল নয়।
নির্ভীক:ভাইয়া তুমি ওর কাছে থাক আমি সিসি টিভি ফ্রুটেজ চেক করে আসি।(জারিফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
বলেই উনি চলে গেলেন।প্রায় ৩০মিনিট পর নির্ভীক ভাইয়া ফিরে এলেন।উনাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে।
আমি:কি দেখলেন ফ্রুটেজে?
নির্ভীক:ওই লোকটাকে দেখিনি জারিফ ভাইয়াকে ঢুকতে বের হতে দেখলাম।তুমি স্বপ্ন দেখেছো।ফরগেট ইট।
বলেই রুমের দরজা ভেতর থেকে লক করে দিলেন।
আমি:আমি বাসায় যাব।
জারিফ:হুম সকালে নিয়ে যাব। এখন ঘুমা।
আমি শুয়ে থেকে চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকলাম এটা কিছুতেই স্বপ্ন নয়। নির্ভীক ভাইয়া বেলকুনিতে গেলেন।কিছুক্ষণপর জারিফ ভাইয়াও বেলকুনিতে গেল আমি তখনও জেগে আছি কিন্তু চোখ বন্ধ করে আছি।বেলকুনি থেকে ফিসফিস আওয়াজে কথা গুলো শুনে ভয়ে আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো।কথা গুলো ছিল এমন,
জারিফ:কি হয়েছে চাঁদ তোকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?
নির্ভীক:ভাইয়া ইটস্ ট্রু।
জারিফ:হোয়াট?(অবাক হয়ে)
নির্ভীক:এই যে এই ভিডিওটা দেখো, কালো হুডি পড়া লোকটা রুমে ঢুকলো ঠিক তুমি বের হওয়ার পর আর তুমি আসার কিছুক্ষণ আগেই দৌঁড়ে বের হয়ে গেল।
জারিফ:অহ মাই গড।কে ও?
নির্ভীক:ভাইয়া আই সোয়্যার ও যদি আরাফ হয়, আই উইল কিল হিম।
জারিফ:আরাফ কি করে হবে,ও তো ঢাকায়।
এতটুকু শুনেই ভাইয়াকে ডাকলাম।আমার কন্ঠ পেয়ে দুজনই তাড়াহুরো করে রুমে ঢুকলো।
আমি:তারমানে ওই লোকটা সত্যি এসেছিল?(ভয় পেয়ে)
নির্ভীক:একদম ভয় পাবেনা আমরা আছি তো।ওটা একটা চোর ছিল দরজা খোলা পেয়ে ভেতরে এসেছিল।(আমার পাশে বসে)
জারিফ:হুম চাঁদ ঠিক বলেছে।এই দেখ আমার ফোনটা পাচ্ছিনা ওই চোরটা নিয়ে গিয়েছে।
নির্ভীক:তুমি এবার ঘুমাও আমরা এখানেই আছি। সকাল হলেই আমরা বাসায় যাব।
সারারাত তিনজন তাকিয়ে থেকেই কাটিয়ে দিলাম।নির্ভীক ভাইয়া কয়েকজনকে ফোন করে কিসব কাজ করতে বললেন।সকাল হতেই আমাকে নিয়ে বাসায় চলে গেলেন।
চলবে……