ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব: ২২

0
2206

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ২২

শেষ বিকেলে ঘরে থাকতে একদমই ভাল লাগেনা।কিন্তু গত ৭দিন ধরে শুধু শেষ বিকেল নয় সব সময় ঘরেই শুয়ে আছি কারন তো জানেনই আমার পা ভেঙ্গেছে।৩-৪বার ভাইয়া কোলে করে নিচে নিয়ে গিয়েছিল আর নির্ভীক ভাইয়া দুবার ছাদে নিয়ে গিয়েছিল, এই যা তাছাড়া আর ঘর থেকে বের হওয়া হয়নি।এখন ঘরে শুয়ে বোর হচ্ছি আর মাথা ব্যাথা তো আছেই কাল থেকে কিছুতেই ছাড়ছেনা। অন্যদিন তাও ঘরেই অনেক মজা করা হত আজ নির্ভীক ভাইয়া নেই তো কেউ নেই। নির্ভীক ভাইয়া আজ সকালে ঢাকা গিয়েছেন।বাবার সাথে অ্যাঙ্কেলের একটা বিজনেস শাখা আছে ঐটাতে কিছু দরকারি কাজ পড়ে গিয়েছে অ্যাঙ্কেল ব্যস্ততার কারনে যেতে পারেননি তাই জোড় করে নির্ভীক ভাইয়াকে পাঠালেন।নির্ভীক ভাইয়া তো কিছুতেই যেতে চাইছিলেন না। উনি থাকলে এখন আমার বোরিং টাইম স্পেন্ড করতে হতো না।রাতে আমি আর ইচ্ছে পড়ছি এমন সময় ইচ্ছে বললো,

ইচ্ছে: আজকে ভার্সিটি থেকে আসার সময় প্রান্ত ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছিল।(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি: ভাল তো, কি বললেন উনি?

ইচ্ছে:এই আমি কেমন আছি, তুই কেমন আছিস। (মন খারাপ করে)
আমি:অহ।

ইচ্ছে:জানিস অন্ত,আজকে না আমার খুব মন খারাপ। (টেবিল থেকে উঠে এসে বিছানায় আমার পাশে বসে)

আমি:কেন?

ইচ্ছে:প্রান্ত ভাইয়াকে দেখলাম একটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিল।

আমি:তো?(ভ্রু কুচকে)

ইচ্ছে:তো মানে?আমার তখন কেমন লাগছিল জানিস?…আমার তখন বুকটা ফাইটা যাই ফিলিং হচ্ছিল,এখনও হচ্ছে।প্রান্ত ভাইয়া কি বুঝেন না আমি উনাকে ভালোবাসি?তাও কেন আমার সামনে ঐ মেয়েটার সাথে এত হেসে হেসে কথা বলছিলেন?

আমি:তুই সত্যি প্রান্ত ভাইয়াকে ভালোবাসিস?বিয়ে করতে চাস উনাকে নাকি এমনি প্রেম?

ইচ্ছে:আরে এক কথা তোকে কত বার বলবো?শুধু বিয়ে নয় আমি উনার ১০বাচ্চার মা হতে চাই আর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত উনার সাথে থাকতে চাই। বুঝেছিস, মাথা মোটা মহিলা?(আমার প্রতি বিরক্ত হয়ে)

ওর কথা শুনে আমার মুখটা ওয়াও রিঅ্যাক্টের মতো চোখ গোল গোল আর মুখ হা হয়ে গিয়েছে।এই সেই ইচ্ছে যাকে ফুপ্পি বিয়ের কথা বললে রাগ করে নাওয়া খাওয়া বাদ দিত আর আজ তার কি পরিবর্তন দেখছি।

ইচ্ছে:অন্ত,আমি খুব ভয় পাচ্ছি।যদি উনি আমাকে ভালো না বাসেন তাহলে?..আই কান্ট লিভ।(কান্না মুখ করে)
আমি:এরকম বলিস না প্লিজ।আমরা প্রান্ত ভাইয়ার সাথে কথা বলবো, ওকে?নির্ভীক ভাইয়া আসলে উনাকে এই ব্যাপারে জানাতে হবে।

ইচ্ছে:হুম এইভাবে এক তরফা ভালোবাসায় জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি।অনেক দিন তো দেখলাম প্রান্ত ভাইয়া আমাকে কিছুই বললেন না।শুধু বলেন আমাকে উনার ভাল লাগে আমার চয়েস উনার সাথে মিলে। আমি এবার আমার ফিলিংস গুলো উনাকে জানাতে চাই।

আমি:ওকে।নির্ভীক ভাইয়া আসুক আগে উনার সাথে কথা বলতে হবে কারন উনারা বেস্টফ্রেন্ড।

ইচ্ছে:হুম।

আমি:এই তোর লজ্জা করবেনা প্রান্ত ভাইয়াকে ভালোবাসার কথা বলতে?

ইচ্ছে:ভালোবাসার কথা বলবো লজ্জা কিসের।তবে একটু নার্ভাস লাগবে। তোর সময় আসেনি তো তাই বুঝতে পারছিসনা তবে ডোন্ট ওরি তুই ও খুব তাড়াতাড়ি প্রেমে পড়বি।(হা হা)

আমি:কখনও না আমি এসব জ্বালা পোড়া ফিলিংস এর মধ্যে নেই।

ইচ্ছে:কেউ একজন তোকে পোড়াতে চাইছেনা তাই পুড়ছিস না,না হলে এত দিন কয়লা হয়ে যেতি।(হাসতে হাসতে)

আম্মু:এই কি হয়েছে পড়া বাদ দিয়ে এত হাসছিস কেন তোরা?(ঘরে ঢুকতে ঢুকতে)

আমি:দেখনা আম্মু এই ইচ্ছে বলছিল আমি নাকি কয়লা……

ইচ্ছে:জানো মামিন? অন্ত কয়লা চেনে না।(আমাকে পুরো টা বলতে না দিয়ে)

আমি ইচ্ছের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি ও আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে যার অর্থ আম্মুকে আমার সত্যি বলতে চাওয়া ঠিক হয়নি।

আম্মু: সেকি কথা অন্ত?তুই কয়লা চিনিস না?

আমি এইবার ইচ্ছের দিকে রাগি চোখে তাকালাম।ইচ্ছে ইননোসেন্ট ফেস করে আমার দিকে তাকালো তারপর আম্মুকে বললো,

ইচ্ছে:মামিন তুমি এখনও ঘুমাওনি?প্রায় এগারোটা বাজে।

আম্মু:হুম ঘুমাবো এখন।তোরাও ঘুমা।অন্ত,ওয়াশরুমে যাবি?চল।

আম্মু আর ইচ্ছের সাহায্যে ফ্রেশ হয়ে এসে বেডে হেলান দিয়ে বসলাম।ইচ্ছে পানি নিতে নিচে গিয়েছে। আমি পায়ের আঙুল নাড়াচ্ছি,উফ্ এগুলো একদম জং ধরে গিয়েছে। মনে হলো দরজায় কেউ দাঁড়িয়ে আছে তাকিয়ে দেখি নির্ভীক ভাইয়া ঠোঁটে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।সাদা শার্ট পরে আছেন টাই গলার কাছে ঢিলা করা কালো কোট খুলে হাতে নিয়েছেন। সকালে উনার চুল গুলো সেট করা ছিল এখন সামনের দিকের চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালে এসে পড়ে আছে।আমি উনাকে দেখে অবাক কারন উনি দুদিনের জন্য ঢাকা গিয়েছিলেন আর আজই চলে এলেন।

আমি:ভাইয়া আপনি?(উনার দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:ইয়াহ, চলে এসেছি।(আমার দিকে এগিয়ে এসে)
আমি:সব কাজ শেষ?(খুশি হয়ে)
নির্ভীক:বাহ্!এত খুশি?আমাকে মিস করছিলে?(আমার পাশে এসে আমার উপর ঝুকে)

আমি:হুম খুব।(উনার দিকে তাকিয়ে)

উনি এবার টুপ করে আমার কপালে চুমু দিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন।তারপর বললেন,

নির্ভীক:এটা কিন্তু ভালোবাসা। তুমি আমাকে খুব মিস করছিলে তাই তোমাকে একটু ভালোবাসা দিলাম।(মুচকি হেসে)

আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বসে আছি। উনি আমার পায়ের কাছে বসে হাত থেকে কোট রেখে দুই হাত দিয়ে আমার পায়ের আঙুল নড়াতে লাগলেন।
আমি উনাকে নিষেধ করলাম তাও শুনলেন না।

নির্ভীক:অন্ত,তোমাকে একটা সিক্রেট কথা বলি?

আমি:জ্বী বলুন।

নির্ভীক:আমি না সব কাজ ফেলে চলে এসেছি।(ইননোসেন্ট ফেস করে)
আমি:কেন?(অবাক হয়ে)
নির্ভীক:যাওয়ার সময় আমার ফুসফুস এখানে রেখে গিয়েছিলাম নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল তাই চলে এসেছি। (মুচকি হেসে)

আমি উনার দিকে ৩সেকেন্ড ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে বললাম,
আমি:ছোটবেলায় আম্মুর কাছে বানরের কলিজা গাছে রাখার গল্প শুনেছিলাম। বানরটা কুমিরকে বোকা বানিয়েছিল আর আজ আপনি ফুসফুস রেখে যাওয়ার গল্প বলে আমাকে বোকা বানাচ্ছেন।(ঠোঁট উল্টিয়ে)

নির্ভীক:উফ্, তুমি এত কিউট কেন।(আমার গাল টেনে)

তখনই ইচ্ছে ঘরে ঢুৃকলো।ওর দুই হাতে দুটো পানির বোতল।
ইচ্ছে:ভাইয়া মামিন খাবার গরম করেছে আপনাকে নিচে খেতে ডাকছে।
নির্ভীক:না আমি কিছু খাব না।

আমি: এনেছিস? দে..

ইচ্ছের থেকে আমার বোতল নিয়ে পানি খেলাম।নির্ভীক ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,

নির্ভীক:তুমি আমাকে ওয়াটার অফার করলেনা একা একা খেলে,আমি এত দূর থেকে আসলাম।তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসোনা(মুখ গোমড়া করে)

উনার কথা শুনে আমি অপমানিত। ঠিকই বলেছেন উনি উনাকে একটাবার জিজ্ঞেস করা উচিৎ ছিল।আমি ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে বললাম,

আমি:যা না ভাইয়ার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়।

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ইচ্ছে এক দৌঁড় দিয়েছে।কিন্তু নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত থেকে বোতল নিয়ে ঢক ঢক করে সব পানি খেয়ে নিলেন।আমি মনে মনে ইয়াক ছিঃ করছি কারন এইমাত্র আমি বোতলে মুখ লাগিয়ে পানি খেলাম আর উনি সেই পানিই খেলেন।উনি অবশ্য মুখ লাগাননি।সব পানি খেয়ে খালি বোতল আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

নির্ভীক:থ্যাঙ্ক ইউ অ্যান্ড গুড নাইট,হ্যাভ আ সুইট ড্রিম। (কপালে আবার টুপ করে চুমু দিয়ে বড় বড় পায়ে হেটে চলে গেলেন)

আমি হা করে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।ইচ্ছে এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে আমার দিকের বেড সাইড টেবিলে রেখে বললো,

ইচ্ছে:উনি পানি খেলেন না। রাগ করেছেন হয়তো।তুই একটা মাথা মোটা।

আবার দুইজনার গল্প শুরু হয়ে গেল।ঘড়িতে ভোর ৪টা বাজে সকাল ১০টায় ইচ্ছে ভার্সিটি যাবে তাই আর কিছু না বলে দুজনই ঘুমিয়ে গেলাম।৯টায় ঘুম ভেঙ্গে গেল তীব্র মাথা ব্যাথায়।উফ্ এই মাথা ব্যাথার জন্য দুদিন ধরে ঘুম হচ্ছেনা।শুয়ে থাকলে আরও বেশি হচ্ছে।তাই উঠে হেলান দিয়ে বসে থাকলাম।নাস্তা করে মেডিসিন নিলাম।কপালে ব্যান্ডেজের কারনে কয়েকদিন ভাল করে মাথায় পানি দিতে পারিনি তাই আরও বেশি মাথা ব্যাথা করছে।ইচ্ছে ভার্সিটি চলে গিয়েছে তাই একা একা ব্যান্ডেজ খুলে ফেললাম তারপর আম্মুকে ডেকে বাথরুম যেয়ে অনেকক্ষণ ধরে পানি দিলাম।পানি দিয়ে এসে বেডে হেলান দিয়ে বসলাম আম্মু গা মুছে দিল।চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে কপালের কাটা জায়গা ভিজে নরম হয়ে গিয়েছে এখানে সেলাই দেয়া লাগতো কিন্তু দাগের ভয়ে অ্যান্টি সেলাই দিয়ে দেয় নি পানিতে ভিজাতে না করেছিল তাও ভিজালাম যা হওয়ার হবে আই ডোন্ট কেয়ার।আধ শোয়া হয়ে চোখ বন্ধ করে আছি আম্মু চুল মুছে দিচ্ছে । এমন সময় নির্ভীক ভাইয়া আসলেন।আমাকে এভাবে দেখে বললেন,

নির্ভীক:অ্যান্টি কি হয়েছে ওর?

আম্মু:ওর মাথা ব্যাথা করছে।দেখ না চাঁদ কপালের ব্যান্ডেজ খুলে ঠেসে মাথায় পানি দিল।

নির্ভীক:অ্যান্টি ওকে রেডি করিয়ে দাও আমি গাড়ি বের করছি।

আমি:যাব না হসপিটালে।আমাকে একটা স্লিপিং পিল দিন আমি ঘুমাবো।(চোখ বন্ধকরে আছি কিন্তু চোখের কোন বেয়ে পানি পড়ছে)

নির্ভীক:অ্যান্টি তাড়াতাড়ি কর নাহলে কিন্তু এভাবেই নিয়ে যাব।

আমি এবার আর কিছু বললাম না কারন উনি একবার আমাকে বাসায় পড়ে থাকা কাপড় পড়িয়ে পদ্মা গার্ডেন থেকে ঘুড়িয়ে নিয়ে এসেছেন সেদিন তাও আজকের তুলনায় ভাল ড্রেস পড়েছিলাম আজ আমি থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর শর্ট টি শার্ট পড়ে আছি।

আম্মু:আমি এখনই ওকে রেডি করিয়ে দিচ্ছি।

নির্ভীক ভাইয়া চলে গেলেন।
আম্মু আমাকে গোলাপি রঙের স্কার্ট,সাদা রঙের টপ আর সাদা গোলাপি মিক্সড শিপন স্কার্ফ দিলো। আমি ড্রেস পড়ে রেডি হলাম। আম্মু আমার চুল গুলো চিড়ুনী করে দিয়ে খোলায় রাখলো।আমি আম্মুকে ধরে ঘরের দরজা পর্যন্ত আসতেই নির্ভীক ভাইয়া চলে আসলেন।উনি সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়েছেন আর কিছু খেয়াল করার আগেই উনি এসে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।উনি আমাকে গাড়িতে পেছনের সিটে বসিয়ে দিলেন যাতে পা রাখতে সমস্যা না হয়। তারপর উনি ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে লাগলেন।আমি জানালার কাচ খুলে বাহিরে দেখছি আর বাহিরের হাওয়া খাচ্ছি খুব ভাল লাগছে।কিছুটা পথ যেতেই আমি উনাকে বললাম,

আমি:ভাইয়া আমার আর মাথা ব্যাথা করছেনা চলুন বাসায় ফিরে যাই।

কিন্তু উনি শুনলেন না।আমাকে হসপিটালে নিয়ে যেয়ে কপালে নতুন করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিলেন।ফোন করে প্রান্ত ভাইয়াকেও ডেকে নিলেন।কিছুক্ষণ পর প্রান্ত ভাইয়া এলেন। উনিও সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরে এসেছেন। আর গিটারও নিয়ে এসেছেন।আমরা এতক্ষণ অ্যান্টির কেবিনে ছিলাম প্রান্ত ভাইয়া আসতেই নির্ভীক ভাইয়া আমাকে কোলে তুলে নিয়ে হাটা দিলেন।তারপর গাড়ির পেছন সিটে বসিয়ে দিয়ে উনিও আমার পাশে বসলেন।আর প্রান্ত ভাইয়াকে ড্রাইভ করতে বললেন।গাড়ি বাসার রাস্তায় যাচ্ছেনা তাই আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম
আমি:ভাইয়া আমরা কোথায় যাচ্ছি?

নির্ভীক:আজকে আমরা হারিয়ে যাবো,যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবো।(আমার ডান হাতের আঙুলের মধ্যে উনার বাম হাতের আঙুল নিয়ে হাত মুঠো করে)

চলবে…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here