ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব: ২৩

0
2284

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:২৩

নাটোরের কাছিকাটায় একটা রেস্টুরেন্টে আমরা দুপুরের খাবার খাচ্ছি।কিন্তু আমি খাবার রেখে ইচ্ছে আর প্রান্ত ভাইয়াকে ফলো করছি।আসার সময় আমরা ইচ্ছেকে ভার্সিটি থেকে পিক আপ করে নিয়েছি,গাড়িতে ইচ্ছে আমাকে বলেছিল প্রান্ত ভাইয়া ওর দিকে তাকায় কিনা সেটা যেন ওকে বলি।প্রায় অনেকক্ষণ ধরে ওদের দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু কেউ কারও দিকে তাকাচ্ছেনা।এই দিকে আমি খাচ্ছিনা দেখে নির্ভীক ভাইয়া আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,

নির্ভীক:কি হলো খাচ্ছোনা কেন?
আমি:হুম খাচ্ছি তো।

বলেই খেতে লাগলাম।খাওয়া শেষে আবার সবাই গিয়ে গাড়িতে বসলাম।নির্ভীক ভাইয়া ড্রাইভ করছেন,প্রান্ত ভাইয়া উনার পাশে বসে গিটার বাজাচ্ছেন আর বলছেন,
প্রান্ত:আমাকে দিয়ে এসব হবেনা।
নির্ভীক:ট্রাই করলে মানুষ সব পারে।
ইচ্ছে:কারেক্ট,প্রান্ত ভাইয়া আপনি নির্ভীক ভাইয়ার কাছে শিখলেই পারবেন।
প্রান্ত:অনেক ট্রাই করেছি কিন্তু কোন মিউজিক তুলতে পারিনা,নির্ভীক আমাকে শেখায় তাও পারিনা।(হতাশ হয়ে)
আমি: আমিও শিখবো।
ইচ্ছে:তুই শিখে কি করবি?
আমি:এমনি আমার গিটার ভাল লাগে।নির্ভীক ভাইয়া,আমাকে শেখাবেন?

নির্ভীক:উম্ আচ্ছা ভেবে দেখবো।
আমি:এত ভাবার কি আছে? আপনি আমাকে শেখাবেন ব্যস।

প্রান্ত:ওকে বোনু শেখাবে,ডোন্ট ওরি।তবে তোমরা কি জানো আমরা কোথায় যাচ্ছি?(আমাদের দিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে)

ইচ্ছে:না।(মাথা নাড়িয়ে)

প্রান্ত:আমরা চলন বিল যাচ্ছি।

আমরা এখন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিল চলন বিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।নাটোর, সিরাজগঞ্জ এবং পাবনা জেলা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট অনেকগুলো বিলের সমষ্টি এই চলনবিল।সাতচল্লিশটি নদী ও অন্যান্য জলপথ চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।নির্ভীক ভাইয়ার কাছে শুনলাম এই জায়গার নাম খুবজীপুর,এখান থেকে নাটোর অংশের চলন বিলের সৌন্দর্য সবচেয়ে ভালভাবে উপভোগ করা যায়।

এখন বিকেল,আশে-পাশে প্রচুর লোক এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছে।অনেকে রাস্তা থেকে নেমে নৌকায় গিয়ে উঠছেন বিলের মধ্যে যাওয়ার জন্য।আমি আর ইচ্ছেও নৌকাই উঠার বাইনা করলাম।কিন্তু নির্ভীক ভাইয়া কিছুতেই আমাকে ওদের সাথে নৌকাই যেতে রাজি হলেন না।উনি প্রান্ত ভাইয়া আর ইচ্ছেকে নৌকায় ঘুরতে পাঠালেন।ওরা চলে গেল।আমি ঘাসের উপর মন খারাপ করে বসে পড়লাম।নির্ভীক ভাইয়া আমার দিকে নিজের হাত বারিয়ে দিয়ে বললেন,

নির্ভীক:উঠে পর আমরা একটা দারুণ জায়গাই যাবো।

আমি অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে বসে থাকলাম। নৌকায় উঠতে দিলেননা আর এখন আমাকে অন্য জায়গাই নিয়ে যাবেন কখনও যাবোনা,হুহ্।(মনে মনে)

নির্ভীক:ওয়েল(হালকা হেসে)তুমি এখানে দুমিনিট বসো আসছি আমি।

বলেই উনি চলে গেলেন।আমি আড় চোখে উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি গাড়ির কাছে যাচ্ছেন।গাড়ি থেকে গিটার নিয়ে গাড়ির চাবি কাউকে দিয়ে কি যেন বলে আবার আমার দিকে আসছেন।আমি আবার অন্যদিকে তাকালাম।ইচ্ছেদের নৌকা অনেক দূর চলে গিয়েছে। সেই দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকলাম।নির্ভীক ভাইয়া আমার কাছে এসে গিটার কাঁধে নিলেন তারপর প্যান্ট টাখনুর উপরে ফোল্ড করে নিয়ে আমাকে কোলে তুলে নিলেন তারপর বললেন,

নির্ভীক:আমরাও নৌকায় উঠবো চলো।

আমি:এখন কেন নৌকায় উঠবেন?ওরা তো চলে গেল।(মুখ ফুলিয়ে)

নির্ভীক:ওদের সাথে যেতে ইচ্ছে করছিল না তাই এখন যাচ্ছি।

আমরা একটা নৌকায় গিয়ে বসলাম। নির্ভীক ভাইয়া মাঝিকে খুবজীপুরের শেষ সীমানায় নিয়ে যেতে বললেন।নৌকা চলতে শুরু করলো।আমি প্রথম বার নৌকায় উঠেছি,খুব ভাল লাগছে।পানিতে বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ ভাসছে,প্রচুর শাপলা ফুলও আছে।আমি হাত পানিতে ভিজালাম তারপর হাত বারিয়ে একটা শাপলা ফুল নিতে যাবো তখনই নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত ধরে টান দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:কি করছো?পরে যাবে তো।(রাগি গলায়)

আমি:একটা শাপলা ফুল নিবো,প্লিজ।

নির্ভীক ভাইয়া পানি থেকে কয়েকটা শাপলা ফুল তুলে আমার হাতে দিলেন।আমি তো অনেক খুশি।উনিও আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসছেন।একটা ফুল উনাকে দিয়ে সামনে তাকিয়ে বললাম,

আমি:ভাইয়া আমরা কত দূর যাবো?

নির্ভীক:ইটস্ অ্যান ইন্ডলেস জার্নি।(আনমনে)

আমি:কি?(ভ্রু কুচকে)
নির্ভীক:ইয়াহ্।(আকাশের দিকে তাকিয়ে)
আমি:আমরা বাসায় ফিরবো না আর?এভাবেই সারাজীবন নৌকাই কাটিয়ে দিব?(ভ্রু কুচকে)

নির্ভীক:উফ্,তুমি কবে বড় হবা বলো তো?(দুই গাল আলতো করে টেনে দিয়ে)

আমি:আমি অনেক বড় হয়েছি।

নির্ভীক:তাই?(ভ্রু উচু করে)

আমি:হুম।

নির্ভীক:এখন তাহলে তোমাকে বিয়ে দিতে হবে। জারিফ ভাইয়াকে বলে বিয়ের আয়োজন করে ফেলি, কি বলো?

আমি:কি?না।কি বলছেন এসব।(রেগে)

নির্ভীক:তুমিই তো বললে বড় হয়ে গিয়েছো।মেয়ে বড় হলেই বিয়ে দিতে হয় তাই তোমাকেও বিয়ে দিতে হবে।(মুচকি হেসে)

আমি:না না আমি বিয়ে করবো না আমি বড় হইনি।আপনি তো অনেক বড় হয়েছেন আপনিই আগে বিয়ে করুন।(কি বলবো বুঝতে না পেরে এসবই বলে দিলাম)

আমার কথা শুনে নির্ভীক ভাইয়া হু হা করে হেসে দিলেন।হাসি থামিয়ে বললেন,
নির্ভীক:কি করে বিয়ে করবো বলো একটা মেয়েকে বিয়ে করতে চাইলাম সে তো আমাকে বিয়ে করতে চাই না। রিজেক্ট করে দিল।(হতাশ হয়ে)

আমি:আপনাকে রিজেক্ট করে দিয়েছে?(অবাক হয়ে)
নির্ভীক:হুম।(ঠোঁট উল্টিয়ে)
আমি:ওটা তাহলে পচা মেয়ে।

নির্ভীক:না পচা নয় খুব ভাল,মায়াদ্বীপের এক অবুঝ রাজকুমারী সে।(নৌকায় মাথার নিচে দুই হাত দিয়ে শুয়ে)
আমি:এটাই সেই মেয়ে যাকে আপনি ভালোবাসার চেয়েও বেশি ভালোবাসেন,তাইনা?(মলিন মুখে)

মাঝি:আমরা চইলা আইছি।

নির্ভীক:চলো,চলো,চলো…ইটস্ ঠু লেইট।মাঝি কে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে উনি আমাকে নিয়ে একটা সরু রাস্তা ধরে হাঁটা দিলেন।প্রায় আধা ঘন্টা হাঁটার পর উনি এক জায়গাই দাঁড়ালেন। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি।উত্তর দিকে কৃষি জমি সেখানে পুরুষ মহিলারা একত্রে কাজ করছে।উনি আমাকে একটা উচু ঢিবিতে বসেয়ে দিয়ে আমার পাশে বসলেন।উনার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।এতটা পথ আমাকে কোলে নিয়ে আসলেন,উনার নিশ্চই অনেক কষ্ট হয়েছে।

আমি:আপনি আমাকে এখন কেন এখানে আনলেন বলুন তো?আমার পা ভাল হয়ে গেলে এখানে আসলেই হতো।এখন আপনার কত কষ্ট হচ্ছে।

উনি আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন,

নির্ভীক:আমার একটুও কষ্ট হয়নি বরং তোমাকে কোল থেকে নামিয়ে মনে হচ্ছে আমার কোন একটা অঙ্গ মিসিং,বুঝলা কিছু?(আমার নাক টেনে)

আমি মাথা নেড়ে না সূচক জবাব দিলাম।উনি হালকা হেসে বললেন,

নির্ভীক:ওকে বুঝতে হবেনা।তুমি সামনে দেখো।

আমি সামনে তাকিয়ে দেখি হাজারো পানকৌড় বিলের পানিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।সূর্য অর্ধেকটা ডুবে গিয়েছে। আমরা চুপ করে বসে থেকে বাকিটা ডুবতে দেখলাম।

গোধূলি লগ্ন শুরু হয়েছে।দমকা বাতাসে আমার চুল গুলো উড়ছে।মনে এক অদ্ভূত ভাল লাগার শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।আনমনেই নির্ভীক ভাইয়ার বাম হাত জড়িয়ে ধরে উনার বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে রাখলাম।উনি উনার ডান হাত আমার বাম গালে রাখলেন। আমি মাথা তুলে উনার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললাম,

আমি:গান শোনাবেন?

উনি মুচকি হেসে গিটার নিয়ে গাইতে লাগলেন,

আবার এলো যে সন্ধ্যা,, শু….ধু দুজনে
আবার এলো যে সন্ধ্যা,, শু…..ধু দুজনে

চলো না ঘুরে আসি,অজানাতে……..
যেখানে নদী এসে,থেমে গেছে…।।

ঝাউবনে হাওয়া গুলো খেলছে,
সাঁওতালি মেয়ে গুলো চলছে

লাল লাল শাড়ি গুলো উড়ছে,
তারসাথে মন মোর দুলছে।

ঐ দূর আকাশেরও প্রান্তে সাত রঙা মেঘ গুলো উড়ছে।।

চলো না ঘুরে আসি,অজানাতে
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে….

এই বুঝি বয়ে গেল সন্ধ্যা
ভেবে যায় কি জানি কি মনটা
পাখি গুলো নীরে ফিরে চলছে
গানে গানে কি যে কথা বলছে

ভাবি শুধু এখানেই থাকবো
ফিরে যেতে মন নাহি চাইছে….।।

চলো না ঘুরে আসি, অজানাতে…..
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে……

আবার এলো যে সন্ধ্যা, শুধু…..দুজনে।।

গান শেষ করেই উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন।তারপর বললেন,
নির্ভীক:অন্ধকার হয়ে গেছে আমাদের এখনই ফিরতে হবে।(হাঁটতে হাঁটতে)

আমি:আমার যেতে ইচ্ছে করছেনা।
নির্ভীক:ওকে আবার নিয়ে আসবো।
আমি:এরপর আমরা এখানে এসে থাকবে কিন্তু।
নির্ভীক:ওকে।(মুচকি হেসে)

১০মিনিট হেটে একটা ছোট রাস্তায় এসে উঠলাম আমরা।একটা গাড়িতে উঠে নির্ভীক ভাইয়া বললেন,”কাছিকাটায় চলুন।”

৩০মিনিট পর আমরা কাছিকাটায় গিয়ে পৌঁছালাম। দুপুরে যেই রেস্টুরেন্টে খেয়েছিলাম ওটার ভেতরে যেতেই ইচ্ছে আর প্রান্ত ভাইয়াকে দেখতে পেলাম ওরা হেসে হেসে কথা বলছে।আমরা যেয়ে ওদের সাথে যোগ দিলাম।চলন বিলের সুস্বাদু মাছ দিয়ে আমরা ডিনার সেরে বেড়িয়ে এলাম।নাটোর এসে নির্ভীক ভাইয়া অনেক গুলো কাঁচাগোল্লা কিনলেন।তারপর আমরা রাজশাহী ফেরার জন্য রওনা দিলাম।প্রান্ত ভাইয়া ড্রাইভ করছেন ইচ্ছে প্রান্ত ভাইয়ার পাশে বসেছে।আমি বুঝতে পারছি এদের মধ্যে ইটিস ফিটিস চলছে।দুজন দুজনার দিকে আড় চোখে তাকচ্ছে।বাসায় যেয়ে ইচ্ছের থেকে সব শুনতে হবে।আমার পাশে নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ফোনে ডুবে আছেন।বাতাসে উনার চুলগুলো কপালে পড়ে উড়ছে।কিছুক্ষণ উনার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে থেকে আমি জানালা দিয়ে রাতের শহর দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

হঠাৎই ঘুম ভেঙ্গে গেল চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে। তাকিয়ে দেখি গাড়িতে কেউ নেই।জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখি আমরা রাজশাহী কিন্তু রাস্তায় নির্ভীক ভাইয়াকে প্রান্ত ভাইয়া আর দুটো লোক শক্ত করে ধরে রেখেছেন,নির্ভীক ভাইয়া রেগে ওদের হাত ছুটানোর চেষ্টা করছেন।আরও ভাল করে তাকিয়ে দেখি নির্ভীক ভাইয়ার সাদা শার্টে রক্ত লেগে আছে।আমি আতঙ্কিত হয়ে গাড়ির দরজা খুলে দরজার সাপোর্ট নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।ইচ্ছে আমাকে দেখেই দৌঁড়ে আমার কাছে এসে আমাকে ধরলো।আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম,

আমি:ইচ্ছে কি হয়েছে এখানে?
ইচ্ছে:তেমন কিছু নয় একটা ছোট ঝামেলা হয়েছে।

আমি সামনে তাকিয়ে দেখি একটা লোক সেন্সলেস হয়ে রাস্তায় পরে আছে লোকটার মাথা দিয়ে রক্ত পরছে।প্রান্ত ভাইয়া জোড় করে নির্ভীক ভাইয়াকে গাড়িতে এনে বসালেন।আমরাও গাড়িতে উঠে বসলাম।ট্রাফিক পুলিশ প্রান্ত ভাইয়াকে এসে বললেন,”আমরা ছেলেটাকে পুলিশে দিব।”
প্রান্ত:ওকে।

বলেই কাচ বন্ধ করে দিলেন।নির্ভীক ভাইয়া দিকে তাকিয়ে দেখি দুই হাত দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরে আছেন।উনাকে দেখেই মনে হচ্ছে উনি সাংঘাতিক ভাবে রেগে আছেন।আমি কিছুই বুঝলাম না।নির্ভীক ভাইয়ার এক বাহুতে হাত রেখে চিন্তত হয়ে বললাম,
আমি:কি হয়েছে আপনার?

উনি আমার দিকে তাকালেন।উনার চোখমুখ লাল হয়ে আছে।হঠাৎ উনি একহাতে আমার গাল ধরে অন্য হাত আমার ঘাড়ের পেছনে দিয়ে আমার একদম কাছে এসে আমাকে সিটে ঠেসে ধরে গালে পর পর ১০-১২টা কিস করলেন।তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

নির্ভীক:আম সরি।প্লিজ হেল্প মি, প্লিজ। আমার খুব রাগ হচ্ছে আই ক্যান্ট কন্ট্রোল।

আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছেন।আমি প্রান্ত ভাইয়াকে বললাম,

আমি:প্রান্ত ভাইয়া দেখুন উনি কেমন করছেন।(ভয় পেয়ে কাঁপা কাঁপা গলায়)

প্রান্ত ভাইয়া গাড়ি থামিয়ে উনার একবাহু ধরে টানছেন আর বলছেন,
প্রান্ত:এই নির্ভীক কি করছিস?ছাড় ওকে।তুই কিন্তু ভুল করছিস।

নির্ভীক ভাইয়া আমাকে ধীরে ধীরে আমাকে ছেড়ে দিলেন।ছাড়া পেয়ে আমি তড়িৎ গতিতে উনার থেকে দূরে গাড়ির দরজার সাথে লেগে গেলাম।আমার হাত-পা মৃদু কাঁপছে।আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে উনাকে বললাম,

আমি:আপনি খুব খারাপ।(কাঁদতে কাঁদতে)

ইচ্ছে:অন্ত…

নির্ভীক:আম সরি।ফরগিভ মি।(আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার গালে হাত রেখে)

আমি এক ঝটকায় উনার হাত সরিয়ে দিলাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে করুন গলায় বললেন,

নির্ভীক:প্লিজ এরকম কর না।

প্রান্ত:নির্ভীক তুই চুপ কর আমি ওকে বলছি।বোনু আমরা কিছুক্ষণ আগে ট্রাফিক সিগনালে আটকে ছিলাম তুমি তখন জানালায় হেলান দিয়ে ঘুমোচ্ছিলে। একটা বাজে ছেলে জানালার পাশে বাইক থামিয়ে তোমার গালে হাত দিয়ে তার বন্ধুকে বলছিল,”দোস্ত মালটা তো হেব্বি নরম”।আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি যতক্ষণে বুঝতে পারলাম ততক্ষণে ছেলেটা রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পরে আছে।নির্ভীক ওর বুকের উপর বসে ওকে অনবরত মারছে।তারপর আমরা যেয়ে ওকে ধরে নিয়ে আসলাম।নির্ভীক খারাপ নয়।ওর রাগ উঠেছে তাই তোমাকে এমন করে জড়িয়ে ধরেছে।

ইচ্ছে:সারাদিন নির্ভীক ভাইয়ার কোলে চড়ে ঘুরলি আর এখন সামান্য জড়িয়ে ধরেছেন আর তুই বলছিস উনি খারাপ?

তারমানে উনি যে আমাকে ঠেসে ধরে এতগুলো কিস করলেন সেটা এরা কেউ দেখেনি।আর আমি কি মরার মতো ঘুমোচ্ছিলাম যে কেউ আমার গাল টানলো তাও চেতন পেলাম না।নির্ভীক ভাইয়াকে তো আমি চিনি উনি খুব ভাল, উনি ইচ্ছে করলে শুধু কিস নয় অনেক কিছু করতে পারতেন কিন্তু উনি কোন এডভানটেজ নেননি।উনার কোন খারাপ স্পর্শ আমি পাইনি।আমার উনাকে খারাপ বলা ঠিক হয়নি।উনি এখন যা করেছেন সবটাই রাগ কন্ট্রোল করতে করেছেন। (মনে মনে)

আমি নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি উনার কাছে এগিয়ে গিয়ে উনার হাত ধরে বললাম,
আমি:সরি,আমি পুরোটা জানতাম না তাই এমন রিয়েক্ট করে ফেলেছি।আপনি একটুও খারাপ না তবে রাগটা সত্যি অনেক বেশি।

আমার কথা শুনে উনি একটু হাসলেন।তারপর আবার সবকিছু আগের মতো হয়ে গেল।

রাতে বিছানায় শুয়ে ইচ্ছেকে প্রান্ত ভাইয়ার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম ও বললো সেরকম কিছু হয়নি অনেকক্ষণ এক সাথে ঘুরার জন্য ওরা অনেক ফ্রি হয়েছে।আরও কিসব বলছিল কিন্তু আমি বেশি কথা না বলে ঘুমিয়ে গেলাম খুব ঘুম পাচ্ছে।হঠাৎ ঘুমের মধ্যে গালে হাত দিয়ে লাফ দিয়ে উঠে বসলাম।স্বপ্নে দেখলাম নির্ভীক ভাইয়া আবার আমাকে গাড়ির সিটে ঠেসে ধরে কিস করেছেন।ঢক ঢক করে পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। কিন্তু আর ঘুম ধরছেনা।এখন ইচ্ছেকে ডেকে তুলে গল্প করতে পারলে দারুণ হতো।থাক ডাকবোনা আমিও ঘুমাই আবার।চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি মুখের উপর কারো গরম নিঃশ্বাস পরতেই চোখ খুললাম।একজোড়া নীল চোখ আমার মুখের কাছে
,মুখে কালো মাস্ক পরা আর গায়ে কালো হুডি পরা। আমি চিৎকার দিব তখনই আমার মুখ চেপে ধরে বললো,”ভয় পেয়ো না জানপাখি,ভয় পেলে ফল ভাল হবেনা,আই লাভ ইউ…….তুমহে আপনা বানানে কা কাসম খায়ি হে…খায়ি হে(স্লো ভয়েসে)।”
লোকটা আমাকে ছেড়ে দিয়ে হন হন করে বেড়িয়ে গেল আমি চিৎকার দিয়ে উঠে বসলাম।ইচ্ছেও ঘুম থেকে উঠে গেছে।

ইচ্ছে:এই… অন্ত?কি হয়েছে?(রুমের লাইট অন করে)

আমি কিছু বলতে পারছিনা। ভয়ে আমার জীবনী শক্তি শেষ হওয়ার উপক্রম।

ইচ্ছে:ভয়ের স্বপ্ন দেখেছিস?কাঁপছিস কেন আর ঘামছিসই বা কেন এত?(আমার হাতে হাত দিয়ে)

আমি ওর কথার কোন জবাব দিতে পারলাম না সেন্সলেস হয়ে গেলাম……

চলবে……………

(জানিনা কেমন হলো,খুবই ব্যস্ত আছি।সামনের পর্ব গুলো ভাল করার চেষ্টা করবো। আর প্লিজ আপনারা গল্প সম্পর্কে যা বলার কমেন্টে বলুন আজাইরা ইনবক্সে বাজে কথা বলবেন না)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here