ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব: ২৪

0
2469

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:২৪

মুখের উপর ঠান্ডা পানি পরতেই পিট পিট করে চোখ খুললাম।আশেপাশে তাকিয়ে দেখি আম্মু আমার মাথার কাছে,জারিফ ভাইয়া আর ইচ্ছে আমার দুইপাশে বসে আছে।আমাকে চোখ খুলতে দেখেই আম্মু ব্যস্ত হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করতে থাকলো,
আম্মু:অন্ত, সোনা, কি হয়েছে মা?শরীর খারাপ করছে?ভয় পেয়েছিস?(উদ্বিগ্ন কন্ঠে)

আমি উঠে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম। আর বললাম,
আমি:আম্মু ঐ লোকটা আবার এসেছিল।(কাঁপা কাঁপা গলায়)

আম্মু:কোন লোক?কেউ নেই এখানে,এখানে কি করে কেউ আসবে?

জারিফ:ছোটপাখি তুই কি দেখেছিস খুলে বলতো?

আমি:আমি তখন চেতনই ছিলাম…

জারিফ:ওয়েট,এই মিষ্টি পাখি যা আমার ফোন নিয়ে আয়।(ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে)

ইচ্ছে:আ..মি??(একটা ঢোক গিলে)ভাইয়া আমার ভয় করছে।

ভাইয়া টেবিলের উপর থেকে আমার ফোন নিয়ে নির্ভীক ভাইয়াকে কল দিলেন,
নির্ভীক:হুম অন্ত,বলো..(সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে)

জারিফ:চাঁদ আমাদের বাসায় আয় ফাস্ট।
নির্ভীক:কি হয়েছে ভাইয়া।অন্ত,অন্ত ঠিক আছে?আমি আসছি(উত্তেজিত হয়ে)
জারিফ:হুম,ওকে।

কল কেটে ভাইয়া ঘরের বাহিরে গেল।আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে নিশ্চুপ মেরে আধ শোয়া হয়ে বসে আছি।বার বার চোখের সামনে সেই নীল চোখ জোড়া ভেসে উঠছে।ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে দেখি ভয়ে ওর চোখমুখ শুকিয়ে গিয়েছে। হঠাৎ বাহিরে থেকে জারিফ আর নির্ভীক ভাইয়ার কন্ঠ শুনতে পেলাম।ওরা বড় বড় ধাপ ফেলে এই দিকে আসছে বোঝায় যাচ্ছে।দরজার দিকে তাকালাম নির্ভীক ভাইয়া দরজায় এসে দাঁড়ালেন।উনি সাদা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর স্কাই ব্লু টি শার্ট পরে আছেন।পায়ে একজোড়া চটি।জারিফ ভাইয়া এসে বেডের উপর আমার পায়ের কাছে বসলো।নির্ভীক ভাইয়া পুরো রুম দেখতে লাগলেন।ভাল করে চারপাশ দেখে আমার পাশে এসে বসলেন।তারপর বললেন,
নির্ভীক:কি দেখেছো তুমি?(চিন্তিত হয়ে)

আমি:ঐ লোকটা…নীল.. চোখ..কালো হুডি.. কথা বলছিল… আমার..সাথে।(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)

জারিফ:কি বলছিল?আর মিষ্টি পাখি তুই কোথায় ছিলি?
ইচ্ছে:আমি ঘুমোচ্ছিলাম।হঠাৎ ও চিৎকার দিল আমি উঠে লাইট অন করে দেখি ও কাঁপছে। আমি ভেবেছি ও স্বপ্ন দেখেছে তোমাদের ডাকার আগেই সেন্সলেস হয়ে গেল।
নির্ভীক:কি কথা বলেছিল লোকটা?সবটা খুলে বলো..

আমি:আমি ঘুমিয়েছিলাম তারপর ঘুম ভেঙ্গে গেল পানি খেয়ে আবার শুলাম,ইচ্ছে তখন ঘুমোচ্ছিল। তাই আমিও আবার চোখ বন্ধ করলাম কিন্তু কিছুক্ষণ পরই মনে হলো কেউ আছে চোখ খুলতেই একজোড়া নীল চোখ দেখতে পেলাম লোকটা কালো হুডি পরে ছিল।আমি চিৎকার দিবো তখনই আমার মুখ চেপে ধরলো আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম লোকটা আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললো,”ভয় পাচ্ছো জানপাখি ভয় পেয় না ভয় পেলে ফল ভাল হবে না আই লাভ ইউ বলছিল আর একটা গান।(ঘন ঘন ঢোক গিলে)
নির্ভীক:কি গান?
আমি:তুমহে আপনা বানানে কি কাসম খায়ি হে।(আম্মুকে আরও জোড়ে জড়িয়ে ধরে)

নির্ভীক:খাওয়াবো ওকে কাসম, খুন করে ফেলবো ওকে।(রেগে চোখ মুখ শক্ত করে)
জারিফ:আর কিছু দেখেছিস?ওকে চেনা চেনা লাগছিল?

আমি:নাহ্। পুরো মুখে কালো প্লাস্টিক এর মতো মাস্ক ছিল আর চোখ নীল আমি আগে কখনও কারও নীল চোখ দেখিনি।

নির্ভীক:ওর কন্ঠস্বর কেমন ছিল?

আমি:ভয়ঙ্কয়। অনেক চাপা।

নির্ভীক:তুমি ওকে কোনদিকে যেতে দেখেছো?
আমি:দরজা দিয়ে দৌঁড়ে বের হতে দেখেছি।আর হাতে কি যেন ছিল হয়ত বোতল আমি ভাল বুঝতে পারিনি।

নির্ভীক ভাইয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,” এখন ২:২০ বাজে। তারমানে লোকটা ঠিক দুটোর সময় এসেছে।ভাইয়া?(চোখে চোখে কিছু বুঝালেন)

জারিফ:হুম।

নির্ভীক ভাইয়া আর কিছু বললেন না।বেড সাইড টেবিল থেকে ওয়াটার পট আমাকে এগিয়ে দিয়ে পানি খেতে বললেন। আমি দুই ঢোক পানি খেয়ে আনমনে বললাম,
আমি:এটা এমন কেন?
নির্ভীক:খাও ফ্রেশ লাগবে।ভাইয়া মেন গেইট কি খোলা ছিল?আর ছাদের গেইট?(জারিফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
জারিফ:না সব বন্ধ ছিল।আমি নিজে চেক করেছি।

আমি আর একটু পানি খেলাম।কয়েক সেকেন্ড যেতেই আমার মাথা ঘুরতে লাগলো সব কিছু ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।
আমি:আম্মু..(এক হাত দিয়ে কপাল ধরে পেছন দিকে নেতিয়ে পড়লাম)

ঝাপসা চোখে দেখলাম সবাই আমার উপর ঝুকে আমার গালে হাত দিয়ে কি যেন বলছে শুনতে পাচ্ছিনা। চোখ বন্ধ করে নিলাম।

চোখ খুলে দেখি আমি শুয়ে আছি,হাতে স্যালাইন দেয়া। ইচ্ছে সোফায় বসে ভাত খাচ্ছে। আমি উঠে বসে বললাম,
আমি:এই স্যালাইন কেন?

ইচ্ছে:উঠেছিস?দাঁড়া মামিন কে ডাকছি।(দৌঁড়ে বের হয়ে গেল)

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দুপুর ১:৪৫।মাথা ভারি লাগছে।কাল রাতের কথা মনে পরতেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল।ইচ্ছে আবার রুমে ফিরে এলো সাথে আম্মু আর নির্ভীক ভাইয়াও আছেন।
আম্মু:অন্ত মা,ঘুম হয়েছে?(আমার কাছে আসতে আসতে)

আমি:আম্মু ঐলোকটা….
আম্মু:তোর সব মনে আছে?(আমার মাথায় হাত বুলিয়ে)

আমি:হুম।আমার মাথা ঘুরছিল তারপর আর কিছু মনে নেই।

ইচ্ছে:তোর তাহলে সব মনে আছে। উফ্ কি টেনশনেই না ছিলাম আমরা।
আমি:মানে?
নির্ভীক:অ্যান্টি,ইচ্ছেমতি যাও তোমরা আমি একটু ওর সাথে কথা বলবো।

উনার কথা শুনে ওরা বাহিরে চলে গেল।উনি আমার কাছে এসে বসলেন।সাদা কালো চেক শার্টে উনাকে অনেক সুন্দর লাগছে।উনি খুব সাবধানে আমার সুচ ফুটানো হাত নিজের কাছে টেনে নিয়ে আলতো করে ঠোঁট ছোয়ালেন।আমি হাত টান দিতে গেলাম কিন্তু উনি ছাড়লেন না।আমিও আর বেশি টানাটানি করলাম না।উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কিন্তু কিছু বলছেন না।তাই আমিই বললাম।
আমি:আচ্ছা ভাইয়া রাতে আমার কি হয়েছিল?মাথা ঘুরছিল খুব।

নির্ভীক:তোমাকে যেই পানি দিয়েছিলাম ওটাতে মেমোরি লস হওয়ার মেডিসিন পাওয়া গিয়েছে। ঐ লোকটাকে তুমি চিনো কিন্তু লোকটা চায় তুমি তাকে ভুলে যেয়ে আবার নতুন করে চিনো।

আমি:মানে?(কিছু বুঝতে না পেরে)লোকটা আমাকে এমন মেডিসিন কেন দিল?

নির্ভীক:মানে লোকটা চেয়েছিল প্রতিদিন তোমাকে মেডিসিন দিবে যার ফলে তুমি আমাদের সবাইকে ভুলে যাবে এমনকি ওই লোকটাকেও ভুলে যাবে।তারপর সে নতুন করে তোমার সাথে পরিচিত হবে।ও আগের থেকে তোমার সাথে পরিচিত তুমি খুব ভাল করে চিনো ওকে এমনটায় ধারনা করছি।

আমি চুপ করে উনার কথা শুনছি আর পরিচিত দের মুখ মনে করছি।
নির্ভীক: তুমি বলেছিলে ঘুম ভাঙ্গার পর তুমি পানি খেয়েছো। সেই হিসেবে তোমার পানির পট কিছুটা হলেও খালি থাকার কথা কিন্তু আমি তোমাকে যখন পানি দিয়েছিলাম তোমার পটে পানি পূর্ণ ছিল।জ্ঞান ফেরানোর জন্য ইচ্ছেমতি ওর পট থেকে তোমাকে পানি দিয়েছিল।তোমার পটে ওরা কেউ হাত দেই নি।তুমি বলেছিলে লোকটার হাতে বোতলের মতো কিছু ছিল।আসলে ওইটাতে মেডিসিন ছিল যেটা দিয়ে তোমার পটের ফাকা অংশ পূর্ণ করেছে।

আমি:কি?(অবাক হয়ে)

নির্ভীক:তুমি কিন্তু দ্বিতীয় বার জ্ঞান হারাওনি। তুমি আমাদের ডাকে সাড়া না দিলেও আমার হাত শক্ত করে ধরেছিলে।তোমাকে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলাম।ডক্টর বলেছেন তোমাকে হাই পাওয়ারের কোন মেডিসিন দেওয়া হয়েছে যার জন্য তুমি সহ্য করতে পারছোনা।আমার তখনই মনে হল তুমি লাস্ট পানি খেয়েছো আর পানি খাওয়ার সময় বলেছিলে এটা এমন কেন?আমি তোমার পট ল্যাবে পাঠিয়ে দিই ওখানকার রিপোর্টে জানতে পারি পানিতে মেমোরি লসের মেডিসিন মেশানো আছে।

আমি:এসব কে করছে?কেন করছে?(কান্না করে)

নির্ভীক:রিল্যাক্স।ডোন্ট ক্রাই।ও এসব করে কিছু করতে পারবেনা। (আমার দুইগালে হাত রেখে)
আমি:আজ যদি আবার আসে?(কান্না থামিয়ে)

নির্ভীক:আমি তো সেটাই চাই,ও আসুক।কিন্তু ও আর আসবেনা যদিও আসে তোমার ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই আমি আছি তো।

নির্ভীক:এবার একটা কিউট স্মাইল দেও তো।

আমি উনার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলাম। উনিও হাসলেন।

.
দেড়মাস পর ভার্সিটিতে আসলাম।এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ।সব ফ্রেন্ডরা আমাকে পেয়ে খুব খুশি।তাই সবাই ঠিক করলো ক্লাস শেষে আমার ফিরে আসা উদযাপন করবে।ক্লাস শেষে আমরা কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম। আড্ডার মাঝেই আমার ফোনে নির্ভীক ভাইয়ার কল আসলো।আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা ভেঙচি কেটে ফোন ব্যাগে রেখে দিলাম।উনার উপর এখন আমি রেগে আছি কারন উনি আমাকে উনার ঘরে ঢুকতে দেননি।সকালে উনাদের বাসায় কমলা খালা স্পেশাল খিচুরি খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন।খাওয়া শেষে উনাকে বললাম, “ভাইয়া চলুন না আপনার রুম দেখবো।” কিন্তু উনি আমাকে কিছুতেই উনার রুমে যেতে দিলেন না আমাকে নিয়ে অন্যঘরে বসলেন।তখন থেকে আমি রাগ করে আছি কিন্তু উনি আমার রাগের ধারও ধারছেন না।
আমি ফোন রিসিভ করলাম না দেখে নির্ভীক ভাইয়া ইচ্ছেকে ফোন দিলেন।ইচ্ছেও সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে কথা বলেনিল।আমি চোখ গরম করে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু ও আমাকে পাত্তা না দিয়ে বললো,

ইচ্ছে:নির্ভীক ভাইয়া ভার্সিটিতে আমাদের নিতে এসেছে আমি উনাকে এখানে আসতে বলেছি।

আমি কিছু বললাম না।ইচ্ছেও কিছু শোনার জন্য বসে নেই।আমরা আড্ডায় মেতে উঠলাম।

আমি,ইচ্ছে,আইরিন, তামান্না,কিয়াম আমরা পাশাপাশি বসেছি আর রিপন, সাফি,আদনান,সূচি,ফারিয়া ওরা আমাদের বিপরীতে বসেছে।আদনানের সাথে একটা ঝামেলা হয়েছিল, আমার এক্সিডেন্টের পর সব ফ্রেন্ডরা আমাকে দেখতে গিয়েছিল তখন ও আমাকে সরি বলেছে।কিন্তু এখনও ওর ছ্যাবলামু যায়নি কারন এইমাত্র ওর চোখে চোখ পরতেই আমাকে চোখটিপ দিল।আমি রেগে অন্যদিকে তাকালাম। তখনই আদনান বললো,
আদনান:হেই গাইস, এটেনশন প্লিজ।আমার কাছে একটা দারুণ নিউস আছে।

সবাই একসাথে বলে উঠলাম,”কি নিউস?”

আদনান:আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে স্টাডি টুরে নিয়ে যাবে। দু-এক দিনের মধ্যেই নোটিশ দিয়ে দিবে। আমাকে শরিফ ভাই এই নিউস টা দিয়েছে।

রিপন:হুম আমিও শুনেছি।

আইরিন:যেখানেই নিয়ে যাক আমরা সবাই যাবো,ওকে?

সবাই এক সাথে বললাম,”ওকে।”

আবারো আমার ফোন বেজে উঠলো,দেখি নির্ভীক ভাইয়া এইবার কল কেটে দিলাম কিন্তু উনি আবার দিলেন আমি আবার কেটে দিলাম।তারপর ইচ্ছেকে কল দিলেন।ও রিসিভ করে বললো,”জ্বি ভাইয়া আমরা আসছি।” তারপর সবাইকে বললো,
ইচ্ছে:ওকে গাইস কাল ভার্সিটিতে দেখা হবে।এই অন্ত চল তাড়াতাড়ি।

আমি:যাবোনা তুই যা।
ইচ্ছে:হোয়াট?(অবাক হয়ে)

আমি:বাংলা বুঝিসনা?(ভ্রু কুচকে)
ইচ্ছে:নির্ভীক ভাইয়া গাড়িতে ওয়েট করছেন।
আমি:আমি আইরিনের সাথে যাবো ও আমাকে ড্রপ করে দেবে।
আইরিন:আমাকে আজ নিতে আসবেনা।

আমি:ওকে তাহলে আমি আর আইরিন রিক্সায় যাবো।আমাদের বাসা তো এক রাস্তা দিয়েই যেতে হয়।আমরা আজ রিক্সায় হাওয়া খাবো আর যাবো না শুধু হাওয়া নয় রাস্তার পাশে ফুসকাও খাবো, কতদিন খাইনা।(ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে)

ইচ্ছে:ওকে তুই বসে বসে ফুচকা খাওয়ার স্বপ্ন দেখ আমি যাচ্ছি।

বলেই চলে গেল।আমি আড্ডায় মনোযোগ দিলাম।হেসে হেসে কথা বলছিলাম সবার সাথে হঠাৎ আমাদের সামনে নির্ভীক ভাইয়া এসে দাঁড়ালেন।ফ্রেন্ডরা তো সব নির্ভীক ভাইয়া বলতে পাগল সবাই উনার সাথে কথা বলতে ঝাপিয়ে পরলো।আর সবার আগে আদনান কথা বললো।নির্ভীক ভাইয়াতো ওর উপর রেগে ছিল কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে ওদের খুব ভাল সম্পর্ক।সবার কথার মাঝখানেই উনি আমার হাত ধরে টেনে দাঁড় করালেন তারপর হাঁটা দিলেন।পেছন থেকে সূচির কন্ঠ পেলাম,
সূচি:উফ্,চকলেট কালার টি শার্টে উনাকে একদম চকলেট বয় লাগছে,মনে হচ্ছে খেয়ে ফেলি।

কথাটা আমার কেন যেন হজম হলো না। মনে মনে বললাম এই লুচি মেয়ে কাল আচ্ছা করে তোর ক্লাস নিবো তারপর দেখবি চকলেট কালার আর চিনতে পারবিনা।

নির্ভীক ভাইয়া আমাকে গাড়ির সামনের সিটে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে লাগলেন।আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে ইচ্ছের দিকে তাকালাম ও পেছনের সিটে পায়ের উপর পা তুলে গেমস খেলছে।আমি মুখ ফুলিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বসে থাকলাম।
নির্ভীক:তোমার আজ পানিশমেন্ট হবে, অন্ত।(সামনের দিকে তাকিয়ে)

আমি:কেন?কিসের পানিশমেন্ট? (ভ্রু কুচকে)

নির্ভীক:৭নং রুলস্ ভেঙ্গেছো ওখানে বলা ছিল আমাকে না জানিয়ে কোথাও যেতে পারবেনা কিন্তু তুমি আমাকে না জানিয়ে ভার্সিটি থেকে এখানে চলে এলে।আর রুলস নং৪ এ বলা ছিল আমি সাথে না থাকলে তুমি বাহিরের খাবার মুৃখে দিবেনা এমনকি পানিও নয় কিন্তু তুমি আজ অনেক কিছু খেয়ে ফেলেছো।দুটো গুরুত্ব পূর্ণ রুলস ভেঙ্গেছো।

আমি মুখ কাচুমাচু করে বসে থাকলাম কারন সত্যি আমি দুটো রুলস্ ভেঙ্গেছি।আসলে দুটো নয় তিনটে। উনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন ২৯নং রুলস এ আছে উনি ফোন করলে যেই অবস্থাতেই থাকিনা কেন আমি যেন রিসিভ করি কিন্তু আমি আজ উনার কল কেটেছি। লাস্ট পানিশমেন্টে উনি আমাকে দুইদিন খোলা আকাশের নিচে যেতে দেননি মানে বাসা বন্দি ছিলাম। আমার অপরাধ ছিল আমি রুলস নং৬ ভেঙ্গেছিলাম সেখানে বলা ছিল একা কোথাও যেতে পারবোনা কিন্তু একা বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে রিংকুর কাছে গিয়েছিলাম তাও কাউকে না জানিয়ে।ইশ এখন যে উনি আমাকে কি পানিশমেন্ট দিবেন।ওই কালো হুডি পরা লোকটার জন্য
আমার আজ এই অবস্থা। লোকটার তো আর কোন দর্শন পাওয়া গেল না উল্টো আমার লাইফটা ত্যানা হয়ে যাচ্ছে।ওই দিনের পর থেকে নির্ভীক ভাইয়া আমাকে কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে রেখেছেন। এখন পর্যন্ত ৯১টা রুলস্ দিয়েছেন এগুলো আবার ক্রমশ বৃদ্ধিমান।

আমি একটা ঢোক গিলে মুখে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি:আমি না আপনার কিউট পিচ্চি ফ্রেন্ড?তাও আমাকে পানিশমেন্ট দিবেন?

নির্ভীক:হুম।(গম্ভীর মুখ করে)

উনার কথা শুনে আমার মুখ মলিন হয়ে গেল।উনি হয়তো আবার আমাকে বাসা বন্দি করবেন।ধূর, কেন যে রুলস্ গুলো ভাঙ্গলাম।উনি তো আমার ভালোর জন্যই এসব করছেন।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here