#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu
২২.
বিকেল চারটে।আকাশে মেঘ রৌদ্রের খেলা চলছে।আকাশ কখনও মেঘে ঢেকে যাচ্ছে আবার কখনও রোদে ভরে উঠছে।মেঘ রৌদ্রের এই খেলা দেখে মনে হচ্ছে তারা রেসলিং এ নেমেছে।মেঘ বলছে আকাশ ফেটে বর্ষণ হোক আর রোদ বলছে কোনো বর্ষণ নয় এখন রোদ হবে।কেউ হার মানতে নারাজ।অগত্যা মেঘ ফেঁটে বৃষ্টি হতে লাগলো আর রোদ?সে হার মানার পাত্র নয়,বৃষ্টির মধ্যেই মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো।এদিকে স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রচুর লোক এসেছে।হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সবাই ছুটোছুটি করছে।নির্ভীক এমনিতেই বিরক্ত হয়ে মাঠে বসে ছিল এখন বিরক্তের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে অন্তর এক হাত ধরে দ্রুত হাঁটা দিল।স্কুলের বারান্দায় উঠে অন্তকে দেয়ালের সাথে লেগে দাঁড় করিয়ে চোখমুখ শক্ত করে অন্তর দুই কাঁধের পাশে দেয়ালে হাত রাখলো।চারপাশে ছেলেপেলে গিজগিজ করছে সবাই ইচ্ছে করে ধাক্কা ধাক্কি করছে।অন্তকে দেখছে শিস দিচ্ছে আর এটা ওটা বলছে।নির্ভীক রেগে যাচ্ছে কিন্তু কিছু করতে পারছেনা কারন ছেলে গুলো সংখ্যায় বেশি।অন্ত মুখ মলিন করে এদিক ওদিক তাকিয়ে নির্ভীককে বলল,
‘চলুন এখান থেকে।’
নির্ভীক অন্তর আর একটু কাছে দাঁড়িয়ে ছেলেগুলোর থেকে অন্তকে আড়াল করে বলল,
‘হ্যাঁ যাব,বৃষ্টি ছাড়ুক।’
নির্ভীক প্রান্ত আর সাফিদের খুঁজছে।একটু দূরে রিপনকে দেখতে পেয়েই চেঁচিয়ে বলল,
‘এই রিপন?প্রান্ত আর তোমার বাকি ফ্রেন্ডরা কোথায়?’
রিপন নির্ভীকের ডানদিকে ইশারা করে বলল,
‘ওইতো ওখানে আছে সবাই।’
নির্ভীক সেদিকে তাকিয়ে দেখলো সবাই আছে।তারপর প্রান্তকে ডেকে নিজের অবস্থান জানিয়ে দিল।অন্ত পায়ের গোড়ালি উঁচু করে প্রান্তদের দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু লম্বা লম্বা ছেলেগুলোকে ডিঙ্গিয়ে ওদের দেখতে পারলোনা।পেছনে দেয়াল সামনে নির্ভীক মাথার উপর ছাদ এছাড়া অন্ত আর কিছু দেখতে পাচ্ছে না।দেয়ালে হেলান দিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল,
‘উফ বিরক্ত!!!’
নির্ভীক অন্তর দিকে ঝুকে মৃদু কন্ঠে বলল,
‘আর কিছুক্ষণ ওয়েট কর।বৃষ্টি ছাড়লেই চলে যাব।’
অন্ত নির্ভীককে ছাপিয়ে খোলা আকাশ দেখার চেষ্টা করে বলল,
‘কখন ছাড়বে।ওইদিকে চলুন,এখানে ভাল লাগছেনা।’
নির্ভীক এদিক ওদিক দেখলো।এত ভীর ঠেলে অন্যের গায়ে গা ঠেকিয়ে কিছুতেই অন্তকে কোথাও নিয়ে যাবেনা তাই অন্তর দিকে ঝুকে বলল,
‘তুমি জানো এখন শেয়ালের বিয়ে হচ্ছে?’
অন্ত ভ্রু কুচকে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘কি!শেয়ালের বিয়ে?’
‘হ্যাঁ রোদ হয় বৃষ্টি হয় খেক শেয়ালের বিয়ে হয়।পড়নি এই ছড়া?’
‘হুম পড়েছি।’
নির্ভীক মুচকি হেসে বলল,
‘এখন তো রোদও হচ্ছে বৃষ্টিও হচ্ছে তাহলে নিশ্চয় এখন শেয়ালের বিয়ে হচ্ছে।সবার বিয়ে হচ্ছে শুধু আমাদেরই হচ্ছেনা।চলো আজকে আমরাও বিয়ে করি।’
অন্ত মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকালো।নির্ভীকের উপর আকাশ সমান অভিমান জমে আছে।নির্ভীক অন্তর ডান গালে হাত রেখে বলল,
‘করবা আজকে বিয়ে?’
অন্ত গাল থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়েই গোমড়া মুখ করে বলল,
‘না,আপনাকে বিয়ে করবো না।’
নির্ভীক ভ্রু কুচকে বলল,’কেন?’
অন্ত কিছু না বলে চুপ করে থাকলো।নির্ভীক একহাতে অন্তর দুই গাল টিপে ধরে অন্তর চোখের দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,
‘বিয়ে তোমার আমাকেই করতে হবে।সেটা তুমি চাইলেও আর না চাইলেও।’
‘করবো না,কি করবেন?’
নির্ভীক অন্তর গাল ছেড়ে দিয়ে মুচকি হেসে বলল,
‘এখন বলছো করবানা কিন্তু পরে ঠিকই করবা আই নো।’
অন্ত রাগী কন্ঠে বলল,
‘কখনও না।’
‘ওকে ওকে ফরগেট ইট।বিয়ে টিয়ে পরে হবে আগে প্রেম তো করে নিই।আই লাভ ইউ পিচ্চি।’
অন্ত খুশি হলেও রাগী মুখ করে বলল,
‘কেন আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ হয়ে গেছে?কি যেন নাম আফাটার প্রিয়তা না ফিয়তা।’
অন্তকে আবার পুরোনো কথা বলতে দেখে নির্ভীক অবাক হল।এক্সিডেন্টের দিন সকালেও অন্ত এসব কথা বলেছিল।নির্ভীক ভাবছে সবকিছু মনে পরা অন্তর জন্য ভাল হবে না।আরাফের ব্যাপারটার জন্য নিশ্চয় অনেক কষ্ট পাবে।নির্ভীক ভ্রু কুচকে বলল,
‘আর কি মনে আছে তোমার?’
‘ সব মনে আছে।’
‘সব মানে কি?’
অন্ত ছোট নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘আপনি আমাকে ভার্সিটিতে ঠান্ডা পানিতে চুবিয়েছিলেন শুধু তাই নয় আমার কপালে রিমোট ছুড়ে মেরেছিলেন আর প্রিয়তার কথা বলেছিলাম জন্য একটা থাপ্পড়ও মেরেছিলেন।আপনার সাথে আর কথায় বলব না যান।’
নির্ভীক নিশ্চিত হল অন্তর সব মনে পরে গেছে কারন এক্সিডেন্টের দিন সকালে ছাদে নির্ভীক অন্তকে বার বার বলছিল অন্তই প্রিয়তা তাও অন্ত বাজে কথা বলে নির্ভীককে রাগীয়ে দিচ্ছিল।এক্সিডেন্টের আগেরদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার পর অন্তর ফোনে মেসেজ আর একটা ছবি এসেছিল।প্রিয়তা নামের একটা মেয়ে অন্তকে নির্ভীকের থেকে দূরে যেতে বলেছিল অন্তর জন্য নাকি নির্ভীক তাকে ইগনোর করছে।ছবিতে একটা মেয়ে নির্ভীককে জড়িয়ে ধরে ছিল।মেয়েটির মুখ দেখা যাচ্ছিল না।ছবি দেখে বুঝায় যাচ্ছিল দুজনার মধ্যে সম্পর্ক আছে।সকালে এসব দেখেই অন্ত একা একা ছাদে যেয়ে কাঁদছিল।নির্ভীক অন্তকে ঘরে না পেয়ে ছাদে যেয়ে কাঁদতে দেখে কেন কাঁদছে জিজ্ঞেস করতেই অন্ত সব বলে দেয়।নির্ভীক অন্তকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়না।উল্টো অন্ত বাজে কথা বলে ফেলে।নির্ভীক রাগ করে অন্তর গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছিল।তারপর অনেক কষ্টে অন্তকে বুঝিয়েছিল।অন্তও চাইছিল এসব যেন মিথ্যে হয়।নির্ভীককে জড়িয়ে ধরেছিল।নির্ভীকও অন্তকে জড়িয়ে ধরে চড় দেওয়া গালে কিস করতেই আরাফ দেখে ফেলেছিল।
অন্তর কথা শুনে নির্ভীক মুখ মলিন করে বলল,
‘তুমি আমার সাথে কথা না বললে আমি মারা যাব।’
অন্ত দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়ালো।মন থেকে এসব বলছে না তাই তারও খারাপ লাগছে।মারা যাওয়ার কথা শুনে আরও বেশি খারাপ লাগছে।নির্ভীক পেছন থেকে অন্তর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
‘আমি পৃথিবী থেকে চলে যাব তখন তুমি কি করবা হুম?’
অন্ত চুপ করে থাকলো।নির্ভীকের কথা শুনে খুব কান্না পাচ্ছে।নির্ভীকের গলা টিপে ধরে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে তুই পৃথিবী থেকে চলে গেলে আমিও চলে যাব কিন্তু অন্ত কিছুই বলতে পারলো না।এমন শ্বাসরোধী জায়গায় এভাবে কান্না আটকে রেখে শ্বাসবন্ধ হয়ে আসছে।লোকজনের এত হৈচৈও সহ্য হচ্ছে না তাই এখান থেকে বের হয়ে খোলা জায়গায় যেতে হবে কিন্তু এত ভীর ঠেলে কিভাবে যাবে।জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে সাইড চাওয়ার জন্য একটা ছেলের পিঠে হাত দিবে তখনই নির্ভীক খপ করে অন্তর হাত ধরে অন্তকে নিজের দিকে ঘুরালো।অন্তর চোখে পানি দেখেই অন্তর গালে হাত রেখে উত্তেজিত বলল,
‘এই তুমি কাঁদছো কেন?এনি প্রবলেম?হোয়াট হ্যাপেন্ড?’
অন্ত কিছু বলার আগেই নির্ভীক অন্তকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল।এক হাতে ভীর ঠেলে অন্তকে নিয়ে বারান্দার ধারে আসলো।অন্ত হেচকি তুলে কাঁদছে।পাশের একটা অপরিচিত মহিলা অন্তকে কাঁদতে দেখে চিন্তিত হয়ে বললেন,
‘কি হয়েছে ওর?’
নির্ভীক অন্তকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে চোখ মুছে দিতে দিতে বলল,
‘ও একটু অসুস্থ।এত লোকজনদের মধ্যে প্রবলেম হচ্ছে।’
মহিলাটা অন্তর দিকে সহানুভূতির নজরে তাকালেন।নির্ভীক আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি কখন ছাড়বে বুঝার চেষ্টা করছে।বৃষ্টির তেজ কমে এসেছে।রোদ এখন আর নেই।আষাঢ়ের আকাশের মতো পুরো আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেছে।মনে হচ্ছে আজ আর এই বৃষ্টি ছাড়বেনা।গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতেই অনেকে মাঠে নেমে গিয়েছে।নির্ভীকও কিছু না ভেবেই অন্তর হাত ধরে মাঠে নেমে গেল।
সন্ধ্যা হতে অনেক দেরি।আকাশ মেঘলা থাকায় আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হওয়ায় নির্ভীক অন্তকে নিয়ে সাফিদের বাড়িতে গিয়েছে।প্রান্ত,ইচ্ছেমতি আর বাকিরাও বাড়িতে চলে এসেছে।অন্তকে আজই রাজশাহীতে নিয়ে যেতে হবে জন্য নির্ভীক প্রান্তকে ইচ্ছেমতির দ্বায়িত্ব দিয়ে বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পরলো।অন্ত থমথমে মুখ করে বাইকে বসে আছে।অনিচ্ছা শর্তেও গ্রামের এবড়ো থেবড়ো রাস্তার জন্য নির্ভীককে ধরে বাইকে বসে থাকতে হচ্ছে।এখন আর একটুও বৃষ্টি নেই সেজন্য নির্ভীকের কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে হেলমেট খুলে হাতে নিয়ে বলল,
‘আসার সময় তো এমন জঙ্গলের মধ্যে রাস্তা ছিল না।রাস্তা চিনেন নাকি আজাইরা একদিকে চলে যাচ্ছেন?’
নির্ভীক মুচকি হাসলো।লুকিং গ্লাসে অন্তর দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে ড্রাইভ করতে করতে বলল,
‘এইদিক দিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি মেইনরোডে উঠতে পারবো।আকাশের অবস্থা ভাল নয় যেকোনো সময় বৃষ্টি নামবে।হেলমেটটা পরে নাও আর ধরে বসো।রাস্তার যা অবস্থা!’
অন্ত মুখ ভেংচিয়ে বলল,
‘আপনি তো হেলমেট পরেই আছেন ওটাতেই হবে।আপনি খেলে নাকি আমার খাওয়া হয়ে যায় তাহলে আপনি হেলমেট পরলে আমারও পরা হয়ে যায়।’
রাগ নিয়ে কথা গুলো বলে নিজের অজান্তেই পরে যাওয়ার ভয়ে নির্ভীকের কাঁধে হাত রাখলো।আসার সময় সাফির মা নির্ভীক আর অন্তকে চর্বি যুক্ত খাসির মাংস আর বিরিয়ানি খেতে দিয়েছিল।নির্ভীক নিজে মাংস খেলেও অন্তকে শুধু ভাত আর মাছ দিতে বলেছিল আর বড় মুখ করে বলেছিল নির্ভীকের খাওয়া মানেই অন্তর খাওয়া।অন্ত এমনিতেই খেতনা তারউপর নির্ভীক খেতে দিতে না চাওয়ায় রাগ করে কিছুই খায়নি।নির্ভীক সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘রাগ করেছো?তোমার তো অত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া নিষেধ।একবার সুস্থ হও তারপর সব খেতে দিব।’
অন্ত মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘আমি আপনার মতো হ্যাংলা নয়।’
নির্ভীক মুচকি হেসে বলল,
‘হুম তুমি তো অনেক কিউট।আমার যাদুমণি।’
অন্ত অন্যদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।নির্ভীকের উপর রাগ করতে চেয়েও পারছেনা।ঠিকই নির্ভীক অন্তর সব রাগ ভেঙ্গে দিচ্ছে।অন্ত ভেবে রেখেছিল নির্ভীকেরর উপর অনেক রেগে থাকবে কিন্তু নির্ভীক ওকে যাদুমণি বলায় সব রাগ ভ্যানিস হয়ে গিয়েছে। এদিকে নির্জন রাস্তার ধারে তিনটে ছেলে বসে থেকে নেশা করছে।অন্তকে দেখেই তারা হো হো করে উঠে বলল,
‘ইশ!কি মাল যাইতেছে গো।আহ!ওই সুন্দরী *****…..’
অশ্লীল কথা শুনে নির্ভীকের মাথা গরম হয়ে যায়।আগের দিন প্রান্তর সাথে এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ও সে ছেলেগুলোকে এখানে বসে থাকতে দেখেছে।নির্ভীক ধীরেই ড্রাইভ করছিল, কিছুটা দূরে গিয়ে গাড়ি থামালো।বাঁকা হেসে গাড়ি থেকে নেমে দুটো ঢিল তুলে নিয়ে আবার গাড়িতে বসলো।ছেলেগুলো গাড়ি থামাতে দেখে ওদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।অন্তকে হেলমেট পরতে বলে নির্ভীক রাস্তার পাশের একটা গাছে ঝুলে থাকা ভিমরুলের বাসায় ঢিল মেরে দ্রুত গাড়ি নিয়ে চলে গেল।প্রান্তর সাথে যাওয়ার সময় বিশাল এই ভিমরুলের বাসাটা তার চোখে পরেছিল।অন্ত পেছনে তাকিয়ে ছেলেগুলোকে ভিমরুলেরর তাড়া খেয়ে এলোমেলোভাবে পালিয়ে যেতে দেখে হাসি চেপে রাখতে না পেরে খিলখিল করে হেসে উঠলো কিন্তু তার হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না।কিছুদূর যেতেই বৃষ্টি শুরু হলো।দূর দূরান্ত পর্যন্ত কোনো ঘর বাড়ি না থাকায় তাদেরকে ভিজতে হলো।
—
রাত আটটা ড্রইং রুমের সোফায় জারিফের সামনে বসে আছে আরাফ।অন্ত দুদিন ধরে বাসায় নেই শুনে আরাফের তেমন রাগ হয়নি কিন্তু যখন শুনেছে অন্ত নির্ভীকের সাথে আছে তখন থেকে রাগে তার মুখ লাল হয়ে গিয়েছে।জারিফ অফিসে ছিল আরাফ এসেছে শুনে বাসায় চলে এসেছে।জারিফ কফির মগে চুমুক দিয়ে সুপ্ত রাগ নিয়ে বলল,
‘জবটা ছেড়েই দিলি তাহলে?’
আরাফ ভ্রু কুচকে বলল,
‘হুম।’
‘কেন?’
আরাফ সেন্টার টেবিলের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তুই জানিস কেন।’
জারিফ কফির মগ টেবিলে রেখে সোজা হয়ে বসে বলল,
‘কি করতে বলছিস?’
আরাফ জারিফের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘অন্তকে বিয়ে করতে চাই।’
এমন সময় কাক ভেজা হয়ে বাসায় ফিরলো নির্ভীক আর অন্ত।আরাফকে দেখেই অন্ত নির্ভীকের পেছনে লুকিয়ে পরলো।আরাফ হন্ত দন্ত হয়ে উঠে এসে নির্ভীককে সরিয়ে দিয়ে অন্তর একহাত ধরে বলল,
‘চলে এসেছো?কেমন আছো তুমি?এভাবে ভিজলে কিভাবে?’
অন্ত বিরক্ত হয়ে আরাফের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে লাগলো।আরাফ অন্তর গালে হাত দিতেই নির্ভীক শান্ত কন্ঠে বলল,
‘ছেড়ে দাও ওকে।আগে ফ্রেশ হয়ে আসুক তারপর কথা বল।অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজেছে ঠান্ডা লাগছে।অন্ত রুমে যাও।’
নির্ভীকের দিকে একবার তাকিয়েই অন্ত দৌঁড়ে উপরে চলে গেল।নির্ভীক আরাফের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
‘ভাবি কোথায়?ভাবিকে নিয়ে আসোনি?’
আরাফ রক্তচক্ষু নিয়ে নির্ভীকের দিকে তাকালো।মনে মনে বলল তোকে আমি ছাড়বোনা।নির্ভীকও শান্ত চোখে আরাফের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল ওয়েলকাম, মোস্ট ওয়েলকাম মি. ছাগল।
—
ভারী বৃষ্টির পর আকাশ একদম পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। কালো আকাশে ছোট বড় অসংখ্য তারা দপদপ করে জ্বলছে।সাফিদের বাড়ির ছাদে ইচ্ছেমতিরা গোল হয়ে বসে আড্ডা জমিয়েছে।বৃষ্টির কারনে স্কুলের অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি আর এম.পি আর তার চেলারাও আসতে পারেননি।রান্না করা খাবার গুলো গ্রামের গরিব দুঃখীদের খাওয়ানো হয়েছে।সাফি আর তার বন্ধুরা আনন্দের সাথে সবাইকে খাবার পরিবেশন শেষে নিজেরা খেয়ে আড্ডা দিতে ছাদে চলে এসেছে।সবাই গোল হয়ে বসে গানবাজনা করছে।প্রান্ত একটু দূরে প্লাস্টিকের একটা চেয়ারে একা একা বসে থেকে সবাইকে দেখছে।ইচ্ছেমতি আড় চোখে প্রান্তর দিকে তাকিয়ে নিজের চেয়ার নিয়ে প্রান্তর পাশে গিয়ে বসলো।প্রান্ত নিজের ফোন বের করে হুদায় ব্যস্ত হয়ে গেল।ইচ্ছেমতি গলা ঝেড়ে বলল,
‘কি করছেন?’
প্রান্ত ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
‘বাবুর জন্য অনলাইন শপিং করছি।’
ইচ্ছেমতি লজ্জা পেলেও রাগী কন্ঠে বলল,
‘আপনি সবসময় এমন বাবু,বাচ্চা,ছেলে এসব বলেন কেন?দেখুন আপনি কিন্তু বেশি বেশি করছেন।আমি মজা করে অ্যান্টিকে ওসব বলেছিলাম তার জন্য সরি বলেছিতো।আর কি করতে হবে?’
প্রান্ত ফোন পকেটে ঢুকিয়ে হাত পা টান টান করে বলল,
‘চাপ নিও না,জাস্ট চিল।’
ইচ্ছেমতি রাগী কন্ঠে বলল,
‘আপনি আর এসব বলবেন না।’
প্রান্ত মুচকি হেসে বলল,
‘ভাল লাগে তোমাকে জ্বালাতে।’
ইচ্ছেমতি ব্রাশ মার্কা হাসি দিয়ে বলল,
‘আমারও ভাল লাগে আপনাকে জ্বালাতে।ভাবছি রেলস্টেশন যাব,টোকায় টাইপের কোন মেয়েকে হায়্যার করে বাচ্চাসহ আপনার বাসায় পাঠিয়ে দিব।সে বলবে সে আপনার স্ত্রী আর বাচ্চাটা আপনার বাচ্চা।মজা হবে না খুব?আমি তো টাকা জমাচ্ছি।মেয়েটাকে আর বাচ্চাটাকে তো টাকা দিয়েই হায়্যার করতে হবে।’
প্রান্ত মৃদু হেসে বলল,
‘দারুণ আইডিয়া।আমি ভাবছি নির্ভীকের সাথে সাথে আমিও বিয়ে করে নিব।তোমাদের মতো শাঁকচুন্নি টাইপের মেয়েদের হাত থেকে আমাকে সেইফ রাখার জন্য আমার বউ একাই যথেষ্ট।’
ইচ্ছেমতির গা জ্বলে গেল।রাগ কন্ট্রোল করে বলল,
‘আপনার বিয়ে আমি ভেঙ্গে দিব।’
প্রান্ত একটা গা জ্বলা হাসি দিয়ে বলল,
‘সেই সুযোগ তুমি পাবানা।দরকার হলে আমরা পালিয়ে বিয়ে করবো।’
ইচ্ছেমতির মুখ মলিন হলো।ঘাড় ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আবার প্রান্তর দিকে তাকালো।মাথা নিচু করে বলল,
‘আপনি খুব খারাপ প্রান্ত ভাইয়া,খুব খুব খারাপ।’
প্রান্ত পা মেলে দিয়ে বুকে হাত গুজে বলল,
‘জানি আমি….’
ইচ্ছেমতি প্রান্তকে পুরোটা বলতে না দিয়ে বলল,
‘কিছু জানেন না আপনি।হয়তো জেনেও না জানার ভং ধরে থাকেন।শুনুন আপনার গার্লফ্রেন্ডকে বলে দিবেন সে যেন সতীনের ঘর করার জন্য মনে মনে তৈরী হয়ে থাকে।’
বলেই ইচ্ছেমতি হন হন করে বন্ধুদের কাছে চলে গেল।প্রান্ত মুচকি হেসে চেঁচিয়ে বলল,
‘এই রিপন?’
‘জ্বী ভাইয়া?’
‘গার্লফ্রেন্ডকে যদি বলি তোমাকে সতীনের ঘর করতে হবে তাহলে কি হতে পারে?’
‘হাতে হারিকেন আর ভাঙ্গা হাত-পা নিয়ে নতুন গার্লফ্রেন্ড খুঁজতে হবে।’
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।ইচ্ছেমতিও মুচকি হাসলো।প্রান্তও হাসতে হাসতে বলল,
‘দারুণ বলেছো।এক্সপেরিয়েন্স আছে নাকি তোমার?’
রিপন মাথা চুলকিয়ে বলল,
‘কি যে বলেন ভাইয়া,আমার আবার গার্লফ্রেন্ড!প্রথম যখন ভার্সিটিতে উঠি একজনকে ভাল লেগেছিল খোঁজ নিয়ে দেখি বিবাহিত সিনিয়র বড় আপু।শুধু তাই নয় কয়েকদিন আগে দেখলাম মনে হল প্রেগন্যান্ট।’
সবাই দম ফাঁটা হাসিতে মেতে উঠলো।কিয়াম হাসতে হাসতে বলল,
‘শুধু তাই নয় ভাইয়া,ওর ক্রাশের অভাব নেই।সবগুলোই মিঙ্গেল।’
রিপন তেঁতে উঠে বলল,
‘আর তোমার ক্রাশ বুঝি খুব সিঙ্গেল?ডিপার্টমেন্টের মেয়েদের উপর ক্রাশ খাস লজ্জা করেনা শালা?জানেন ভাইয়া?অন্ত ওর ক্রাশ।অন্তর তো সেটিং হয়ে গেছে তাই এখন ইচ্ছের পেছনে ঘুরঘুর করছে।’
ইচ্ছেমতি ভাব নিয়ে প্রান্তর দিকে তাকালো।ভেবেছিল প্রান্ত জেলাস হবে কিন্তু তার সব ভাবনায় কাঁদা ছিটিয়ে প্রান্ত হাসতে হাসতে বলল,
‘লেগে থাকো,সফল তুমি হবেই হবে।’
কিয়াম প্রান্তর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘নতুন ক্রাশ খুঁজতে হবে।নির্ভীক ভাইয়ার জন্য তো অন্তর দিকে তাকাতেও ভয় লাগে আর এই চাশমিশ ইচ্ছে এরও তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।এদের পেছনে লেগে থাকা মানে সময় নষ্ট করা।’
ইচ্ছেমতির বিয়ের কথা শুনে প্রান্তর মুখ কিছুটা মলিন হলেও কাউকে বুঝতে দিল না।হাই তুলতে তুলতে বলল,
‘এই সাফি ঘুম পাচ্ছে তো।কোথায় ঘুমাবো?’
আড্ডার আসর ভাঙ্গার জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিল।
সারাদিন হৈ-চৈ আর লাফালাফি করে সবাই ক্লান্ত ছিল তাই সবাই নিচে ঘুমোতে গেল।
চলবে…………..
(গাড়িতে বসে লিখলাম।আম্মু বার বার বকা দিচ্ছে। আমিও আম্মুকে বলছি এত বকলে কিন্তু সালামির টাকা একটাও তোমাকে রাখতে দিব না।আম্মুর মুখ বন্ধ করতে পারলাম না,উল্টো আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছি।যাইহোক,গল্প আপনাদের কেমন লাগছে একটু বলবেন। ভাল না লাগলে শেষ করে দিব আর ভাল লাগলে চলবে।)