#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu
৩৫.
ঘর অন্ধকার।আলো জ্বালানো দরকার কিন্তু আরাফ অলস ভাবে সোফায় শুয়ে আছে।বাম হাতে জলন্ত সিগারেট।এখন মাঝ রাত্রি পার হয়ে গিয়েছে তাও মনে হচ্ছে রাত গভীর হয়নি।নিচ থেকে হৈ-চৈ এর আওয়াজ আসছে।নিচে ইচ্ছেমতি বার্থডে গিফট গুলো খুলে দেখছে আর আনন্দে আত্মহারা হচ্ছে।হঠাৎ ঘরের আলো জ্বলে উঠলো।আরাফ চোখমুখ কুচকে ডানহাত চোখের উপর রাখলো।নিপা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে মৃদু স্বরে কথা বলতে লাগলো।তার গলার স্বর মিষ্টি,শুনতে ভাল লাগছে।
‘আপনি আবার স্মোক করছেন?স্মোকিং কজেস ক্যান্সার।আপনি চাইলে আপনাকে ভাল কিছু রান্না করে খাওয়াতে পারি।ভাল খাবারও কিন্তু নেশার মতো কাজ করে।সব দুঃখ ভুলিয়ে দেই যেমন- আম্মুর হাতের আদা চা খেলে আমার মনে হয় আমি অন্যকোন দুনিয়ায় চলে গিয়েছি।সবকিছু নতুন আর ফ্রেশ লাগে।ব্যালকনিতে ইজি চেয়ারে বসে এক চুমুক চা মুখে নিয়ে….আহ কি শান্তি!আপনি সিগারেট ছেড়ে চা শুরু করতে পারেন।মাঝ রাতে ব্যালকনিতে বসে আকাশ দেখতে দেখতে এক কাপ চা খাবেন দেখবেন সিগারেটের চেয়ে অনেক ভাল কাজে দিবে।’
সুইচ বোর্ডের পাশে দাঁড়িয়ে এতগুলো কথা নিপা কোন জড়তা ছাড়ায় বলে দিল।সন্ধ্যায় আরাফ নিপাকে অন্তর পছন্দ করা ঘড়িটা দেওয়ার পর থেকে নিপা খুব খুশি হয়েছে সাথে আরাফের সাথে কথা বলার প্রশ্রয়ও পেয়েছে।নিপার কথা শুনে আরাফ উঠে বসলো।সিগারেট মেঝেতে ফেলে দিয়ে বলল,
‘শান্তির জন্য স্মোক করিনা।অন্তর কথা ভাবার সময় স্মোক করতে ভাল লাগে।’
নিপা আলো বন্ধ করে দিল।আন্দাজে হেঁটে আরাফের পাশে সোফার এক কোনায় বসলো।আরাফের সাথে কিছু কথা বলতে চায়।অন্ধকারে কথা গুলো বলতে সহজ হবে সেজন্য আলো বন্ধ করে দিল।নিপা কয়েকটা মুহূর্ত ইতস্তত করলো।তারপর বলল,
‘জানেন?আমিও একজনকে ভালোবাসি।’
আরাফ ভ্রু কুচকালো।নিপার কথা তার পছন্দ হল না।হঠাৎই মনে হল তার পছন্দ হওয়া না হওয়াতে কিছু যায় আসেনা।নিপার সাথে তার ডিভোর্স হয়ে গেছে।নিপা এখন মুক্ত।সে যে কাউকে ভালোবাসতে পারে চাইলে বিয়েও করতে পারে।কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিপা বলল,
‘আমি জানি কোনদিন তার ভালোবাসা পাব না তাও ভালোবাসি।কাছে থেকেও কাছের নয়,আমার হয়েও আমার নয়,অধিকার থেকেও নেই।’
এটুকু বলে নিপা থেমে যায়।বলবে কি বলবেনা- বলা উচিত কি উচিত নয় এমন জড়তায় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে সে।প্রসঙ্গ যখন তুলেই ফেলেছে তাই বলবে বলেই সিদ্ধান্ত নিল।এদিকে আরাফ কিছুটা বিস্মিত হল।নিপা তাকে কেন এসব বলছে?সেকি অন্য কাউকে বিয়ে করতে চায়?কে জানে।কেমন যেন স্থবির হয়ে চুপচাপ বসে আছে আরাফ।সময় চলে যাচ্ছে। নিরবতা ভেঙ্গে আরাফ বলল,
‘কাকে বিয়ে করতে চাস?সবাইকে জানাতে বললে জানিয়ে দিই?’
নিপা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।কিছুটা আশাহত হয়ে আরাফের অন্ধকার অবয়বের দিকে তাকালো।তারপর সেই কাঙ্খিত শব্দটি অনেকটা বিরবির করে বলল,
‘আমি আপনাকে ভালোবাসি।’
নিপা আরাফের কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।আরাফ চুপ করে আছে।নিপা ভয়ে ভয়ে বলল,
‘আপনি কিছু বলছেন না কেন?’
আরাফের নিঃশ্বাসের শব্দ পাওয়া গেল।কিছুটা নড়ে চড়ে বলল,
‘আমি শুধু অন্তকে ভালোবাসি।আর কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয়।’
নিপা ছলছল চোখে আরাফের দিকে তাকালো।মলিন কন্ঠে বলল,
‘আমি সারাজীবন আপনার সাথে থাকতে চাই।ভালোবাসুন অন্তকে সমস্যা নেই।আমাকে ভালোবাসতে হবেনা।এখন যেমনটা চলছে সেরকম করেই চলুক।এর বেশি কখনও কিছু চাইবোনা।বিয়ের আগেও বলেছি এর বেশি কিছু চাইবোনা,এখনও বলছি।’
আরাফ সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো।ব্যালকনিতে কোথায় থেকে একফালি আলো এসে পরেছে।সেই আলোর দিকে যেতে যেতে বলল,
‘পরে কথা বলছি তোর সাথে।’
নিপা আর কিছু বলল না।চুপচাপ ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।আরাফ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালো।নিপা যা বলছে সেটা হবার নয়।এভাবে সারাজীবন কাঁটানো সম্ভব নয়।পরক্ষণেই মনে মনে বলল ভালোবাসলে সবই সম্ভব।আমি নিজের ভালোবাসার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারলে নিপা কেন পারবেনা? ভালোবাসলে ঠিকই পারবে।না পারলে চলে যাবে।কে ধরে রেখেছে ওকে?
—
রাত একটা।ইচ্ছেমতি ড্রইং রুম থেকে সব গিফট গুলো নিজের রুমে নিয়ে আসলো।সোফার উপর সব রেখে ফোন নিয়ে বিছানায় প্রস্থ বরাবর শুয়ে প্রান্তকে ফোন করে বলল,
‘সবাই এসেছিল শুধু আপনি আসেননি।’
প্রান্ত ফোন কানে ধরে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
‘অহ সরি তোমার জন্য অন্যদের মতো দামী গিফট কিনার টাকা ছিলনা তাই যেতে পারিনি।বুঝই তো বেকার মানুষ।’
ইচ্ছেমতি সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অভিমানি কন্ঠে বলল,
‘বিকেলে তো গার্লফ্রেন্ডের হাত ধরে ঠিকই রাস্তার মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করলেন তারপর আবার নাচতে নাচতে ফাস্ট ফুডের দোকানেও ঢুকলেন আর আমার বেলায় টাকা নেই?পাঁচ টাকা দামের একটা ম্যাটাডোর পেন দিলেও আমি খুশি হতাম।খুব ভাল লিখে পেনটা,কোয়ালিটি ভাল।’
প্রান্ত কৌতূহল নিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো।ইচ্ছেমতি তাহলে বিকেলে মেয়েটাকে তার সাথে দেখেছে।মেয়েটাকে প্রান্ত ঠিক করে চিনেইনা।নির্ভীকের উপর ক্রাশ খেয়ে প্রান্তর পেছনে ঘুরঘুর করছিল,যাতে প্রান্ত বলে কয়ে নির্ভীকের সাথে লাইনটা লাগিয়ে দেয়।নির্ভীকের ব্যাপারে সব জানতে প্রান্তর প্রায় পা ধরে প্রান্তকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে বসেছিল আর ইচ্ছেমতি মেয়েটাকে দেখে জেলাস হয়েছে ভেবেই প্রান্তর সুখ সুখ লাগছে।প্রান্ত মৃদু হেসে বলল,
‘গার্লফ্রেন্ড আর তুমি এক হলা নাকি?গার্লফ্রেন্ডের পেছনে খরচা করার সময় টাকা পয়সা আপনা-আপনি হাতে চলে আসে।একশো টাকা আছে ভেবে ওয়ালেট খুললে দেখা যায় পাঁচশো টাকা আছে।ফাস্টফুডে ঢুকলেও দেখা যায় ডিসকাউন্টের ছড়াছড়ি।’
ইচ্ছেমতি রেগে শোয়া থেকে উঠে বসলো।বিরবির করে প্রান্তর শেষের কথা ভেংচিয়ে বলল তারপর তর্কে জিতার জন্য বলল,
‘ওটা সত্যি আপনার গার্লফ্রেন্ড ছিল?ছিঃ কি বিশ্রী দেখতে!!আপনার গার্লফ্রেন্ডের যা চুলের কালার দেখলাম!সেইম কালার আমি একটা গরুর লেজে দেখেছি।’
ইচ্ছেমতি যে সুপ্ত রাগ নিয়ে কথা বলছে প্রান্ত সেটা ভালই বুঝতে পারছে।ইচ্ছেমতিকে আরও রাগানোর জন্য বলল,
‘গরুটা নিশ্চয় ব্র্যান্ডের হবে।আমার গার্লফ্রেন্ড আবার ব্র্যান্ডের হেয়ার কালার ইউস করে।তুমি যেই গরুটা দেখেছো সেটা আমার গার্লফ্রেন্ডের বাবার গরু হতে পারে।শুনেছি উনার গ্রামের বাড়িতে বিদেশি গরুর খামার আছে।উনার মেয়ে বিচিত্র মনের অধিকারী তাই গরু দেখতে গ্রামে যেয়ে দেখা গেল পিংক কালারের গরু নেই।রাখালকে বলে হয়তো হেয়ার কালার লাগিয়ে গরুর কালার পিংক করে নিয়েছে আর তুমি সেই গরুই দেখেছ।বড়ই ভাগ্যবতী তুমি।’
ইচ্ছেমতি কিছুক্ষণ থমথমে মুখ করে বসে থাকলো।তারপর ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘আপনি কিন্তু মেইন পয়েন্ট থেকে সরে যাচ্ছেন।আজকে আমার বার্থডে ছিল।আপনাকে ইনভাইট করেছিলাম আসেননি,কোনো গিফটও পাঠাননি।আপনার টাকা না থাকলেও আপনার বাবার অনেক টাকা আছে।সেই টাকা দিয়ে ঠিকই গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরাঘুরি করছেন অথচ আমার মতো মাসুম বাচ্চাকে সামান্য একটা গিফট দিতে পারলেননা।জানেন আমার রাতে ঘুম আসছেনা।এত বড় অন্যায় আমি মেনে নিতে পারছিনা।’
প্রান্ত বিছানায় হেলান দিয়ে বসে মৃদু হেসে বলল,
‘ তুমি মনে হয় রং নাম্বারে ফোন দিয়েছো।হয়তো ডক্টরকে ফোন দিতে গিয়ে আমাকে ফোন দিয়েছো।আমি প্রান্ত বলছি।গিফট তো তোমাকে পাঠিয়েছি।পাওয়ার কথা,না পেলে আবার পাঠাবো।বড়লোক বাবার ছেলে আমি,টাকা পয়সার অভাব নেই।বাই দ্যা ওয়ে ডক্টর তোমাকে কোন গিফট পাঠায়নি?বড়ই দুঃখের কথা।’
প্রান্ত গিফট পাঠিয়েছে শুনে ইচ্ছেমতি লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে সোফার কাছে গেল।সব গিফট হেংলে হুংলে দেখতে দেখতে বলল,
‘আপনি কার হাতে গিফট পাঠিয়েছেন?কোথায় সেটা?কি গিফট?’
‘আমারটা খুঁজলেই পেয়ে যাবা তবে আবারও বলছি আমি কিন্তু ডক্টর নই।’
একটু খোঁজাখুঁজি করে ইচ্ছেমতি নীল কাগজে মোড়ানো একটা চারকোণা বক্স দেখতে পেল।উপরে লিখা আছে টু সখিনা বিবি।ইচ্ছেমতি মুচকি হাসলো সাথে চিন্তায় ও পরে গেল।প্রান্ত তো গিফট পাঠিয়েছে,নিজের ভুলেই সে গিফটটা দেখতে পায়নি তাহলে এখন প্রান্তকে কি বলা যায়।ইচ্ছেমতি বক্সটা কলসের মতো কোমড়ে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ইনিয়ে বিনিয়ে বলল,
‘আসলে সবার সাথে কথা হল আপনার সাথে হল না তাই ভাবলাম আপনার সাথে একটু কথা বলি।দুলাভাইয়ের বেস্টফ্রেন্ড বলে কথা।একটা আলাদা সম্মান আছে।আপনার ভাগের কেকটা আমি ফ্রিজে রেখে দিয়েছি।’
প্রান্ত মুচকি হেসে বলল,
‘থ্যাংক ইউ তবে আমি বার্থডে কেক খাইনা।ওটা তুমি খেয়ে নিও।’
ইচ্ছেমতি মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘নির্ভীক ভাইয়াও খাননি।আপনার এমন কেন?দেখবো আপনি গার্লফ্রেন্ডের বার্থডে তে কি করেন আর নির্ভীক ভাইয়া অন্তর বার্থডেতে কি করে।আর ডক্টর আমাকে পাঁচ ফিট লম্বাবা টেডি বিয়ার দিয়েছে।লাল টুকটুকে।গলার লকেটে লিখা আছে আই লাভ ইউ।’
প্রান্ত কিছু বলার আগেই ইচ্ছেমতি কল কেঁটে দিল।কৌশলে প্রান্তকে আই লাভ ইউ বলতে পেরে নিজেকে খুব ইন্টিলিজেন্ট মনে করছে।ইচ্ছেমতি ফোন বিছানায় ফেলে দিয়ে আনন্দিত হয়ে প্রান্তর দেওয়া গিফট বক্স খুলতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর বক্সটা খুলে দেখলো ছয়টা বই।সবার উপরে যেই বই আছে সেটার নাম দেখে ইচ্ছেমতি হতবম্ভ হয়ে গেল।বইয়ের নাম ‘বদলে যান এখনই’।ইচ্ছেমতি নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে মনে মনে বলল বদলাবো না কখনও।আপনার গার্লফ্রেন্ডের ওই পিংক কালারের টিকিটা ছিড়ে নিয়েই ছাড়বো।
—
সোফা থেকে ধপ করে নিচে পরে যাওয়ায় অন্তর ভাবনায় ছেদ পরলো।কনুইয়ে আঘাত লেগে কেমন ঝিন ধরে গিয়েছে।কি হয়েছে বুঝে উঠার আগেই নির্ভীক অন্তকে কোলে তুলে নিল।বিছানায় বসে অন্তর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে রাগী কন্ঠে বলল,
‘কাঁদেনা বাবু।কোথায় লেগেছে বল?ওটাতো পঁচা জায়গা,ওখানে কেউ শুয়ে থাকে?হাতে লেগেছে?’
অন্ত ভ্রু কুচকে বলল,
‘আমাকে বলছেন?’
নির্ভীক রাগী কন্ঠে বলল,
‘তাছাড়া তো এখানে আর কোন বাচ্চা দেখছিনা।কেন শুয়েছো ওখানে?সেলাই না কাটলে হাত ভাল হবে?সেলাই কাঁটতে একটু পেইন হয়ই।বলেছি তো আবার হাসপাখি এনে দিব আর ফ্রাইডে ওই বাসায় গিয়ে থাকবো।তাও কেন সোফায় শুয়েছো?থাকবা না আমার সাথে?চলে যাব আমি?ওকে ফাইন,চলে যাচ্ছি।’
সকাল থেকে অন্ত মুখ ফুলিয়ে ছিল তাই এসব বলে বকা দিয়ে নির্ভীক হন হন করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।নির্ভীকের বকা খেয়ে অন্ত কান্নামুখ করে ছবিগুলো নিয়ে নির্ভীকের পেছন পেছন যেতে লাগলো।ইচ্ছেমতির বার্থডে পালন করার জন্য ওই বাসায় গিয়েছিল।রাত একটায় আড্ডা খাওয়া-দাওয়া শেষে নির্ভীক অন্তকে নিয়ে বাসায় চলে এসেছে।ঘুমানোর জন্য কমফোর্টেবল পোষাক পরার জন্য আলমিরা খুলতেই কয়েকটা ছবি অন্তর পায়ের কাছে লুটিয়ে পরলো।নির্ভীক আর অন্য একটা মেয়ের ছবি।যে কেউ দেখলে বুঝতে পারবে দুজনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক আছে।একটা ছবিতে মেয়েটা শুয়ে আছে আর নির্ভীক মেয়েটার পাশে আধ শোয়া হয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।সব ছবি গুলোই এরকম।অন্ত ছবি গুলো আলমিরাতে রেখে সোফায় বসলো।এমন বাজে ছবি দেখার পর যে কারো স্বামীর প্রতি রাগ হওয়ার কথা কিন্তু অন্তর একটুও রাগ হচ্ছেনা।ছবিগুলো তার বিশ্বাসই হচ্ছে না।তবে একটু চিন্তা হচ্ছে।অন্ত চিন্তিত হয়ে সোফায় শুয়ে পরলো।নির্ভীক ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে অন্তকে সোফায় শুতে দেখে বুঝলো অন্ত এখনও তার উপর রেগে আছে। নির্ভীক মুচকি হেসে বিছানা ঠিক করতে করতে বলল,
‘কালকে আমি আর্লি বাসায় ফিরবো।তুমি সকালে ব্রেকফাস্ট শেষে আমাদের ব্যাগ গুছিয়ে রাখবা।একরাত কোথাও থাকার মতো জিনিসপত্র সাথে নিবা ওকে?’
অন্ত নির্ভীকের কথা কানে নেইনি। আনমনে পাশ ফিরতেই ধপ করে মেঝেতে পরে গেল।
নির্ভীক ছাদে আসলো।এখানে ঘুটঘুটে অন্ধকার।নির্ভীক অন্ধকারেই হেঁটে এসে দোলনায় বসেছে।অন্ত নির্ভীককে ছবিগুলো দেখানোর জন্য ছাদের আলো জ্বালিয়ে দিল।গুটি গুটি পায়ে নির্ভীকের সামনে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো।নির্ভীক বুকে হাত গুজে রাগী মুখ করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।অন্ত ঠোঁট ফুলিয়ে নির্ভীকের কোলে বসলো।নির্ভীক রাগী কন্ঠে বলল,
‘উঠো,এখানে কি?আমাকে তো ভালোবাসো না একটুও,কেন এসেছো তাহলে?’
অন্ত ছবি গুলো নির্ভীকের হাতে দিয়ে নির্ভীকের গলায় মুখ গুজে চোখবন্ধ করে থাকলো।নির্ভীক ভ্রু কুচকে ছবি গুলো দেখছে।নির্ভীকের জানা মতে সে অন্ত ছাড়া কোন মেয়ের এত কাছে কখনও আসেনি।তাই খুব সহজেই বুঝতে পারলো সবগুলো ছবি অন্ত আর তার শুধু অন্তর মুখটা ক্রপ করে অন্যকারো মুখ বসানো হয়েছে।ছবি গুলো অন্তদের বাসায় তোলা হয়েছে তাই স্বাভাবিকভাবেই ওই বাসারই কেউ তুলেছে।নির্ভীক আরাফকে সন্দেহ করছে।অন্তকে তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।নির্ভীকক ছবি গুলো পাশে রেখে অন্তকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘এগুলো দেখে রাগ করেছো?’
‘উহুম।’
‘তাহলে মন খারাপ?’
‘না।’
নির্ভীক মুচকি হেসে বলল,
‘জেলাস?’
‘না।’
নির্ভীক অন্তর গালে হাত রেখে বলল,
‘তাহলে ছবিগুলো দেখে তোমার কি মনে হচ্ছে?’
অন্ত নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
‘এসব আপনি করেছেন।আমার রিয়েকশন দেখার জন্য।আপনি সত্যি একটা খারাপ লোক।একটুর জন্য আমার হার্ট এ্যাটাক হয়ে যায়নি।হলে কি হতো বলুন তো?সবাই বলতো সুইসাইড এটেমপ্ট্ করেছি।’
অন্ত নিজেরর মতো করে বুঝে নিয়েছে জন্য নির্ভীক খুশি হল। অন্তকে জড়িয়ে ধরে অন্তর কাঁধে থুতনি রেখে নরম কন্ঠে বলল,
‘সরি বউ।ওই মেয়েটা তুমি, শুধু মুখটা ইডিট করা।আর এমন করব না।কখনও আমার কাছে কিছু লুকাবানা ওকে?আর রাগ হলে নিজেকে কষ্টও দিবানা।সব এভাবে আমাকে বলে দিবা।আই লাভ ইউ আর সরি এগেইন।’
অন্ত মুচকি হেসে বলল,
‘আমাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দিলে সরি একসেপ্ট হবে নাহলে নয়।’
নির্ভীক অন্তর ঘাড়ে চুমু দিয়ে অন্তর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আমাকে ভালোবাসলে বৃষ্টিতে ভিজতে দেওয়া হবে নাহলে নয়।’
অন্ত নির্ভীকের নাকে কামড় দিয়ে মাংস তুলে নিয়ে বলল,
‘আপনার পানিশমেন্ট এটা।আমি আপনার কোন কন্ডিশন শুনবোনা।নেক্সট টাইম বৃষ্টি হলেই বৃষ্টিতে ভিজবো।বাঁধা দিলে আমাদের বাসায় চলে যাব।’
নির্ভীক নাকে হাত দিয়ে চোখ কপালে তুলে বলল,
‘অহ মাই গড,হোয়্যার ইজ মাই নোজ?আই ক্যান্ট ফিল ইট।’
অন্ত খিলখিল করে হেসে উঠে বলল,
‘ইয়ং,ডাশিং, আন ম্যারিড নির্ভীক স্যার না আপনি?মেয়েদের ক্রাশ?’
অন্ত নির্ভীকের গালেও কামড় বসিয়ে দিল।নির্ভীক ব্যথায় চোখ খিচে বন্ধ করে বলল,
‘উফ্ পেইন লাগছে তো।মারছো কেন?ওরা ক্রাশ ভাবলে আমি কি করব?জিজ্ঞেস করলে বলি তো আমি ম্যারিড।ওরা বিশ্বাস না করলে আমি কি করব?’
অন্ত থমথমে মুখ করে নির্ভীকের কোল থেকে নেমে ঘরে যেতে লাগলো।মনে মনে বলল কি করব মানে?কত কিছু করার আছে।ছেলেরা এমন কেন?ঘরে বউ রেখে বাইরে গিয়ে মেয়েদের সাথে লুতুপুতু করে।আপনাকে যদি কখনও মেয়েদের আশেপাশে দেখেছি একদম খুন করে ফেলবো সেই মেয়েকে।নির্ভীক আড়মোড়া ভেঙ্গে ছবিগুলো নিয়ে অন্তর পেছনে যেতে যেতে মনে মনে বলল আরাফ ভাইয়ার সাথে কথা বলতে হবে।তাকে বুঝতে হবে পাগলামি করে লাভ নেই বরং অন্ত জানতে পারলে ঘৃণা করবে।
চলবে…………….