সুইটহার্ট-শেষ পর্ব

0
1916

#সুইটহার্ট
#Sohani_Simu
২২.(শেষ পর্ব)

মুখের উপর পানির ছিটা লাগায় ঘুম ভেঙ্গে গেল।চোখ খুলে দেখি শ্রাবণ আমার দিকে ঝুকে আছে।উনার কপালে পড়ে থাকা সিল্কি চুলগুলোও আমার দিকে ঝুকে আছে।উনি আমার গালে হাত দিয়ে বললেন,

“এই তোমার কি প্রবলেম হচ্ছে?এত বেশি ঘুমোচ্ছ কেন?একটা মেডিসিন খেয়েই এই অবস্থা ভাগ্যিস দুটো দিইনি।”

আমি আবার চোখ বন্ধ করলাম।উনি আমার গালে ছোট ছোট ব্যথাহীন থাপ্পড় দিতে দিতে বললেন,
“আবার ঘুমোচ্ছ নাকি?জুৃঁই?প্লিজ উঠো।দেখো বাসায় কত লোক এসেছে,আমাদের বিয়ে হবে তো এখন।সবাই ওয়েট করছে এই সুইটহার্ট?”

আমি বিরক্ত হয়ে গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিলাম।ডান পাশে কাত হয়ে শুতেই উনি আমাকে টেনে তুলে বসিয়ে দিলেন।আমি জোর করে চোখ খোলার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা,ঘুমে আমি কাহিল।বসে থাকা অবস্থাতেই শ্রাবণ ভাইয়ার উপর ঢলে পরে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললাম,”শ্রাবণ ভাইয়া……”

আর কিছু বলতে পারছিনা।কোন কথায় মাথায় আসছে না। ঘুমের মধ্যে বুঝতে পারলাম উনি আমাকে কোলে তুলে কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন।একটু পর আমি হকচকিয়ে চিৎকার করে উঠলাম।শ্রাবণ আমার মুখ চেপে ধরে বললেন,
“চিৎকার করছো কেন?ঘুমাও তুমি। আমি সব কাজ কমপ্লিট করে তোমাকে ডেকে দিব তখন তুমি শুধু কবুল টা বলে দিও।”

আমি মুখ থেকে উনার হাত সরিয়ে দিলাম।নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি আমি ব্যাথট্যাবের মধ্যে।উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,”আমি কোথায়?আপনি কি বলছেন এসব?এত পানি কেন এখানে?”

উনি আমার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে আমাকে পর পর পাঁচ ছয় বার বাথট্যাবে চুবিয়ে দিলেন।আমি ঘন ঘন শ্বাস নিতে নিতে বললাম,”কি করছেন?”

শ্রাবণ আমাকে ট্যাব থেকে টেনে তুলে ফ্লোরে দাঁড় করালেন।টাওয়াল দিয়ে আমার মাথা মুছতে মুছতে বললেন,”নিচে সবাই ওয়েট করছে তাড়াতাড়ি রেডি হতে হবে।সোফায় তোমার শাড়ি আছে পরে নাও আমি ততক্ষণে শাওয়ারটা নিয়ে নিই,গো।”

উনি আমাকে ওয়াশরুম থেকে বের করে দিয়ে ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিলেন।আমি রুম দেখে অবাক।পুরো রুম চেন্জ হয়ে গেছে।ঘুমোনোর আগে শুধু বক্স খাট,ড্রেসিং টেবিল আর একটা সোফা ছিল আর এখন খাটের দুইপাশে দুটো ছোট টেবিল,টেবিলে তিনটে করে ছয়টা ড্রয়ার আছে।দুই টেবিলের উপর দুটো ল্যাম্প।একপাশের দেয়াল জুরে আলমিরা।অন্যপাশে সোফা,সোফার পাশে সাদা কম্পিউটার ডেস্ক।ডেস্কের উপর কম্পিউটার সাজানো আছে আর শ্রাবণ ভাইয়ার ল্যাপটপের মতো একটা ল্যাপটপও আছে।ডেস্কের সামনে সাদা চেয়ার আছে।সোফা আর বেডের উপর অসংখ্য শপিং ব্যাগ পরে আছে।আমি দাঁড়িয়ে থেকে অবাক হয়ে এসব দেখছিলাম তখনই শ্রাবণ ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসলেন।আমি উনার দিকে তাকিয়েই দ্রুত অন্যদিকে তাকালাম কারন উনি শুধু একটা বাথটাওয়াল পরে আছেন।উনি আমাকে দেখেই রাগী কন্ঠে বললেন,”হোয়াট দ্যা….এখনও চেন্জ করোনি কেন?”

আমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার ড্রেস পুরো ভেজা।ড্রেসের পানিতে ফ্লোর অনেকটা ভিজে গিয়েছে। শ্রাবণ দ্রুত এসে সোফা থেকে একটা শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে সেখান থেকে লাল বেনারসি,ব্লাউজ আর পেটিকোট বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,”এটা পরে আসো যাও,ফাস্ট।”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,”আমি এসব পরতে পারিনা।”
শ্রাবণ শাড়িটা আমার হাত থেকে নিয়ে বললেন,”বাকি গুলো পরে আসো যাও,গো।”

আমি ওগুলো ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বললাম,”আমি পরবোনা এসব।”

সঙ্গে সঙ্গে শ্রাবণ আমার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলেন।আমি গালে হাত দিয়ে নিঃশব্দে কান্না করতে লাগলাম।উনি ফ্লোর থেকে ড্রেস গুলো তুলে সোফায় রেখে দিলেন।নিজে একটা লাল আর গোল্ডেন কালারের শিরওয়ানি আর গোল্ডেন কালার পায়জামা পরে নিলেন।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে হাতে ঘড়ি পরলেন।আমি গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে কাঁদছিলাম তখনই উনি আমার কাছে এসে গাল থেকে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে গালে কিস করে ড্রেস টেনে বললেন,”খোল এগুলো।”

আমি চোখ বড় বড় করে কয়েকধাপ পিছিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে লেগে দাঁড়ালাম।উনি আমার সামনে এসে বললেন,”তুই একা করবি নাকি আমি করে দিব?”

আমি হেঁচকি তুলতে তুলতে বললাম,”আমি করছি।”

ওয়াশরুমে ঢুকে কোনরকমে শাড়ি পেচিয়ে বের হয়ে দেখি শ্রাবণ ভাইয়া ফোনে কারও সাথে ঝগড়া করছেন।রাগী কন্ঠে বলছেন,”কেন শুনবো তোমার কথা?তুমি বলেছিলে এক্সামের পর বিয়ে দিবে কিন্তু এখন বলছো দুবছর পর বিয়ে করতে,হুয়াই???…..আমি তোমার কোন কথা শুনবোনা।আমরা এখন এই মুহূর্তে বিয়ে করবো।….ইম্পসিবল!!….ওর যত প্রবলেম আছে আমি দেখে নিব।…..উফ্ শাট আপ!”

বলেই উনি কল কেটে দিলেন।উনাকে এত রেগে যেতে কখনও দেখিনি,ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে।আমার দিকে তাকিয়েই উনি যেন শান্ত হয়ে গেলেন।আমার সামনে এসে হাসতে হাসতে বললেন,
“এই সুইটহার্ট এসব কি পরেছো?এভাবে কেউ শাড়ি পরে?এসো আমরা আরেকবার ট্রায় করে দেখি।এভাবে বাহিরে গেলে সবাই হাসবে তো।কাঁপছো কেন?শীত করছে?কখন থেকে বলছি চেন্জ করে নাও, শুনছোনা আমার কথা।এখন ঠান্ডা লেগে গেল।”

উনার চোখ মুখে ভয়ানক রাগ দেখতে পাচ্ছি,চোখ লাল হয়ে আছে কিন্তু উনি কথা বলছেন নরম কন্ঠে।উনি ফোন টিপতে টিপতে বিরবির করে বললেন,”হাউ টু উয়ার আ শাড়ি।”

একটু পর উনি ফোন সামনে রেখে ভিডিও দেখতে দেখতে আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিলেন।আমাকে আয়নার সামনে টুলে বসিয়ে দিলেন। ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে চিরুনি করে দিলেন।বেডের উপর থেকে শপিং ব্যাগ নিয়ে সেখান থেকে জুয়েলারি বক্স বের করে আমাকে পরিয়ে দিতেই আমি ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে বললাম,”আমি আপনাকে বিয়ে করব না।বাসায় যাবো।বাবার কাছে যাবো।”

শ্রাবণ আমার কোন কথায় কানে নিলেন না।আমার মাথায় লাল ওড়না পরিয়ে দিয়ে বললেন,”ডান।”

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,”তোকে যতটা সুন্দর লাগবে ভেবেছিলাম তার থেকে বেশি সুন্দর লাগছে।চল,চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।শোন নিচে যেয়ে একদম উল্টা পাল্টা কিছু বলবিনা শুধু কবুল বলতে বললে কবুল বলবি।”

আমি আরও বেশি কান্না করতে লাগলাম।উনি মুখ মলিন করে আমার দুই গালে হাত রেখে বললেন,
“কাঁদছো কেন?আমাকে বিয়ে করবা না?আচ্ছা করতে হবেনা।আমি সবাইকে চলে যেতে বলছি।কান্না থামাও।”

উনি ওয়াশরুম যেয়ে একটা নীল প্যান্ট আর কালো টিশার্ট পরে বেরিয়ে আসলেন।দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।আমি ফ্লোরে বসে দরজার দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকলাম।দেয়াল ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই দেখি সন্ধ্যা সাতটা বাজে।প্রায় একঘন্টা পর শ্রাবণ ফিরে আসলেন।আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে মুখ মলিন করে বললেন,”ডোন্ট ক্রাই বিয়ে করব না,চলে গেছে সবাই।”

তারপর বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে হাঁটুতে হাত রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”তোর কখনও কাউকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করেনা?কেউ একজন যাকে তুই অনেক ভালোবাসবি।তুই অবশ্য এসব ভাবিস না আমি জানি।তুই তো অনেক ছোট,ভালোবাসা কি সেটায় এখনও জানিসনা।আয় তোকে একটা লাভ স্টোরি শোনায়।এদিকে এগিয়ে এসে বস আমার এখন জোরে কথা বলতে ভাল লাগছেনা।কি হল?আমার কাছে আয়।”

আমি শুধু উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।উনিই আমার কাছে এগিয়ে এসে বসলেন।ধীরে ধীরে আমাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরলেন।ক্ষীণ কন্ঠে বলতে লাগলেন,
“একবছর আগে লন্ডনে কলেজ ক্যাম্পাসে বসে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম।হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো।বাংলাদেশ থেকে কল এসেছে,তালহা ভাইয়া ভিডিও কল দিয়েছে।একটু দূরে গিয়ে কল রিসিভ করে ভাইয়ার সাথে কথা বললাম।একসময় ভাইয়া বলল আজকে জুঁই এর বার্থডে আমার কাছে একটা অদ্ভূত গিফট চেয়েছে আমি দিতে পারছিনা তুই একটু আইডিয়া দিতে পারবি?আমি হাসতে হাসতে বললাম অহ পিচ্চিটার বার্থডে আজ?কি চেয়েছে তোমার কাছে?ভাইয়া বলল এখানে ড্রিম ওয়ার্লডের অডিটোরিয়ামে ওর বার্থডে পার্টির আয়োজন করেছি।ও বলেছে পার্টি শেষে অডিটোরিয়ামের ভেতরে ওকে বৃষ্টিতে ভেজাতে হবে।এখন পার্টি শেষ আমি অডিটোরিয়াম এর ভেতরে বৃষ্টি কোথায় থেকে আনবো বলতো?ওই দেখ জুঁই ফ্লোরে শুয়ে আছে বৃষ্টিতে না ভিজলে সে কোথাও যাবেনা।ভাইয়া ক্যামেরা তোর দিকে ধরলো।আমি দেখলাম তুই একটা সাদা ড্রেস পরে ফ্লোরে শুয়ে থেকে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছিস।জুঁই তো নয় যেন একটা পরী!তখন পর্যন্ত তুই আমার কেউ ছিলিনা কিন্তু হঠাৎ তুই উঠে দাঁড়ালি ভাইয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলি আমার মনে হচ্ছিলো আমার দিকে এগিয়ে আসছিস,আমি তোকে দেখে মুগ্ধ হয়েছি।ফোনের মধ্যে তোর গালে হাত দিব তখনই ভাইয়া ফোন নামিয়ে নিল আমি আর তোকে দেখতে পাচ্ছিনা কিন্তু কথা শুনতে পাচ্ছি।তুই বলছিস তুমি একটা পঁচা ভাইয়া শ্রাবণ ভাইয়া অনেক ভাল ছিল।ছোটবেলায় আমাকে একবার ছাদ ফুটো করে বৃষ্টি দেখিয়ে ছিল।তুমি এখনই শ্রাবণ ভাইয়াকে আসতে বলো।
কিছুক্ষণ এসব আবোল তাবল বকে আবার চলে গেলি।ভাইয়া ফোন সামনে ধরতেই আমি ভাইয়াকে বললাম তুমি অডিটোরিয়ামে আগুন ধরিয়ে দাও ফ্যায়ার এলার্ম বেজে উঠলেই ছাদ থেকে পানি পরবে।বাই দ্যা ওয়ে অডিটোরিয়ামে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা আছে তো?ভাইয়া বলল পুরো বিল্ডিং এ আছে।ভাইয়া আগুন ধরিয়ে দিল একটু পরই ফ্যায়ার এলার্ম বেজে উঠলো আর সিলিং থেকে বৃষ্টি পরাও শুরু হলো।ব্যস তুই ভিজতে শুরু করলি।কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে তোর লাফালাফি দেখে ফোন কেটে বাসায় চলে গেলাম।সেদিন থেকে আমার সব কিছু চেন্জ হতে শুরু করলো।তোকে নিয়ে আমার প্রথম ভাবনা পিচ্চিটাকে সেই ছোটবেলায় একটা ম্যাজিক দেখিয়েছিলাম সে এখনও ভুলেনি।তারমানে আমি তোর কাছে অবশ্যই স্পেশাল কেউ।সেদিন সারারাত তোর কথা ভেবে ঘুম হলোনা। বার বার শুধু তুই সাদা পরী হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠছিলি।পরের দিন সকালেই ভাইয়ার কাছে ফোন দিয়ে নির্লজ্জের মতো তোর ছবি চাইলাম।ভাইয়া তখন ঘুমোচ্ছিল বলল পরে দিবে।দুদিন পরও দিল না।এদিকে আমি শুধু একবার তোকে দেখার জন্য ছটফট করতে থাকলাম।ভাবির কাছে ফোন করেও ছবি চাইলাম।ভাবি প্রথমেই বুঝতে পারলো কেন ছবি চাইছি অনেক টালবাহানা করে প্রায় একমাস পর তোর ছবি পেলাম।তুই জানিস আমি তোকে দেখার চক্করে এক্সাম মিস করে ফেলেছিলাম।শুধু মনে হত এত সুন্দর চোখ কোন মেয়ের হতে পারেনা নিশ্চয় কোন পরী হবে।ছবি তোলার সময় কি দেখছিল সে এমন করে?আর এত টুকু পিচ্চির এত লম্বা চুল ওএমজি।আচ্ছা ওর গাল গুলো কি খুব নরম?এই ধরনের হাজারও প্রশ্ন মনে নিয়ে একবছর তোর ছবি দেখে কাটিয়ে দিলাম।প্রতিদিন তোকে ভিডিও কলে দেখতাম।কখনও ঘুমোতিস কখনও লাফালাফি করতিস কখনও পটর পটর করে কথা বলতিস।

ফাইনাল এক্সাম শেষ করে লন্ডনে আর থাকতে পারলাম না কারন তুই নষ্ট হয়ে যাচ্ছিস।কাউকে ভয় পাসনা কে ঠিক করবে তোকে?দুলাইন বেশি বুঝে বার বার সুইসাইড এটেমপ্ট করছিলি।আমি আর ওখানে থাকতে পারলাম না।অনেক ঝামেলা করে টিসি নিয়ে চলে আসলাম।সেদিন সকালে তোকে ছাদের রেলিং এ দাঁড়াতে দেখে ভয়ে আমার প্রাণটা মনে হয় উড়েই গিয়েছিল।তোর সাহস দেখে আমি হতবাক।ওখান থেকে পরলে তোর অস্তিত্ব থাকতো?আমি তোকে শুধু ভয় দেখানোর জন্য থাপ্পড় মেরেছি।নাহলে তোকে কন্ট্রোল করা যেত না।আমি খুব সরি সুইটহার্ট।”

বলেই উনি আমার গালে কিস করলেন।আবার আমাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

“সেদিন থেকে সব ছেড়ে তোর সাথে লেগে থাকলাম।সবাই জেনে গেল আমি কি চায়।সবাইকে বললাম আমি তোকে বিয়ে করতে চাই।কেউ রাজী হলো না,কেউ না।পাঁচদিন আম্মুর পা ধরে বসে থেকে আম্মুকে রাজী করিয়েছিলাম।তারপর আম্মু সবাইকে বলে রাজী করিয়ে ছিল।সবাই বলল তুই বড় না হওয়া পর্যন্ত কোন বিয়ে নয় এদিকে আমি তো একমুহূর্তের জন্যও তোকে চোখের আড়াল করতে পারছিলাম না।তোকে সামনে পেলেই বার বার ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছিল।আম্মু এসব পছন্দ করে না।পাপের ভয়ে বার বার আমাদের আলাদা করে দিতে চেয়েছে।কিছুদিন যাবত তোর বাচ্চামি এত বেড়ে গিয়েছে যে সব পরিকল্পনা শেষ হয়ে গিয়েছে।আম্মু তার একমাত্র ছেলেকে এতটা কেয়ারলেস মেয়ের সাথে কিছুতেই বিয়ে দিবেনা।কাল রাতে দুই পরিবারে মনমালিন্য হলো।তুই তো বেঘোরে ঘুমোচ্ছিলি।তুই এসবের কিছুই জানিস না।

আমি কতটা প্রেশারের মধ্যে আছি তুই বুঝতে পারছিস না।আমি তোকে কতটা ভালোবাসি তুই সেটাও বুঝতে পারছিস না।তোকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবোনা।তুই সুইটহার্ট আমার।আমার হৃদয়ে রেখেছি তোকে।এখান থেকে তুই কোনদিন বের হতে পারবিনা,যেদিন বের হবি সেদিন আমার মৃত্যু হবে।”

উনি আমার কাঁধে মাথা রাখলেন।আমি কোন কথা বলতে পারছিনা।আমি জানতাম না উনি আমাকে এত ভালবাসেন।ভাবতাম সবাই তো এমনই করে।আমি একটু অন্যরকম তাই সবাই আমাকে অপছন্দ করে কিন্তু আমাকে ঘিরে যে এত কিছু হয়ে গেছে আমি বুঝতে পারিনি।কাঁধ থেকে মাথা তুলে শ্রাবণ আমার দুগালে হাত রেখে বললেন,

“এই হলো আমার লাভ স্টোরি।আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তুমি আমাকে ভালোবাসেনা।বড় হয়ে যাওনা তাড়াতাড়ি!আর পাঁচটা নরমাল মেয়েদের মতো হওনা প্লিজ।একটু বুঝার ট্রায় কর,আই রিকুয়েস্ট ইউ।”

উনি আমার গাল ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বেডের উপরের ব্যাগ গুলো সোফায় রাখতে রাখতে রাগী কন্ঠে বললেন,”তোর বয়সের মেয়েরা কিনা কি করছে।হাজারটা প্রেম করে বেড়াচ্ছে। তোর ফ্রেন্ড হেমা আমাকে দুবার প্রপোজ করেছে।ও বলেছে আমি যতদিন ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করবোনা ও ততদিন আমাকে প্রপোজ করতেই থাকবে।আর তুই কি করছিস?সারাদিন শুধু সিজান আর রকিকে বিয়ে করতে চাস।রকি তো তোকে কোনদিন বিয়ে করবে না আর সিজানকে এমন কেলানি দিয়েছিনা ও আর কোনদিন তোর সামনে আসবেনা।ওই শুভ,ওর হাত আমি ভেঙ্গে দিয়েছি।কত্ত বড় সাহস আমার সামনে সেদিন তোর হাত ধরেছিল!!”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,”সিজানকে কি বলেছেন?”

উনি আলমিরাতে সব তুলতে তুলতে বললেন,”এতক্ষণে কথা ফুটলো তোর?আমি তো ভেবেছি বোবা হয়ে গেছিস। সিজানকে মেরে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলাম তারপর আর জানিনা ওর খবর।রকি জানে,রকি আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট।তোর জন্য আমার কত অপমান হয় জানিস?তুই আমাকে বাদ দিয়ে বার বার আমার অ্যাসিস্ট্যান্টকে বিয়ে করতে চাস।কি আছে রকির?পড়াশুনা তো পারেনা কিছু, প্রাইভেট ভার্সিটিতে পরে আর বাপের টাকা ধংস করে।আমার কত টাকা আছে জানিস?তোর বাপের থেকে আমার টাকা বেশি।তোর বাপ তো দুনিয়ার হারকিপ্টে।আমি কত ভাল জব করবো জানিস?তোর ভাইয়ের মতো মদন মার্কা ঘর বাড়ির ছবি আঁকানোর জব আমি করবোনা।আমি তো কয়দিন পর ডিপিডিসি তে জব নিবো,ইলেকট্রিক্যাল ইন্জিনিয়ার বেতন কত পাবো জানিস?ওয়ান সেভেন্টি থাউজেন্ড টাকা আর তোর ভাই কত পায় ওনলি এইটটি থাউজেন্ড আর তুই আমাকে বিয়ে করতে চাইছিস না গাধী একটা।”

আমি ভ্রু কুচকে উনার কথা শুনছি।উনি সব গুছিয়ে রেখে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,”চল খেয়ে আসি।সবাই তো আমাদের বিয়ে খেয়ে চলে গেল এখন আমরাও খেয়ে ঝামেলাটা মিটিয়ে ফেলি।”

বলেই উনি আমাকে টেনে নিয়ে নিচে আসলেন।টেবিলে বসে উনি আমার দিকে প্লেট এগিয়ে দিয়ে খেতে বলে নিজে খেতে লাগলেন।আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম।এত বড় বাসায় আমরা দুজন ছাড়া কেউ নেই,কেমন গা ছম ছম করছে।শ্রাবণ আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,
“কি হলো খা?”

উনার ধমক শুনে আমি কেঁপে উঠে বললাম,”পানি খাবো।”
উনি গ্লাসে পানি ঢেলে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,”খাও।”
আমি ঢকঢক করে পানি খেয়ে বললাম,”শ্রাবণ ভাইয়া চলুন বাসায় যাই।”

উনি কিছু বললেন না।উনার প্লেট থেকে বিরিয়ানি নিয়ে জোর করে আমাকে খাওয়াতে লাগলেন।খাওয়া শেষে রুমে এসেই উনি বেডে শুয়ে বললেন,”আমি তো এখানে ঘুমাবো।তুই কোথায় ঘুমাবি?যা ভাগ এখান থেকে।এভাবে শাড়ি পরে আমার সামনে ঘুরঘুর করছিস কেন?”

আমি তেজি গলায় বললাম,”আমি আগেই বলেছি এটা আমার রুম।আপনি যান এখান থেকে।”
শ্রাবণ চোখ বন্ধ করে বললেন,”আমাকে বিয়ে করলে এটা তোর রুম হতো,বিয়ে তো করলিনা তাই তোর রুমও হলোনা।”

আমি রেগে বললাম,”আপনিই তো বিয়ে করতে দিলেন না।ট্যাং ট্যাং করে নিচে চলে গেলেন। ”

উনি ধুরমুর করে উঠে বসে অবাক হয়ে বললেন,”তুই বিয়ে করতি?ওএমজি এটা আমি কি করলাম।ফোন,ফোন কোথায় আমার?হোয়্যার ইজ মাই ফোন?”

উনি বেড থেকে নেমে ফোন খুঁজতে লাগলেন।আমি বেডে বসে বললাম,”হেমার সাথে আর একবার কথা বললে তোর মুখ আমি ভেঙ্গে দিব।”

উনি মুচকি হেসে কাউকে কল দিয়ে বললেন,”হ্যালো রকি,বিয়ে হবে।আবার সবাইকে নিয়ে চলে আসো এখনই।”

আমি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, “নাআআআআ,আমি বিয়ে করব না।”

উনি ফোন রেখে বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন,”কেন করবি না?রকির সাথেই তো তোকে বিয়ে দিব।পাগল প্লাস মাথা খারপ ইকুয়াল ট্রু লাভ।তোদের বিয়ে হলে আমি আর তোর ফ্রেন্ড হেমা বিয়ে করব।তোর মতো গাধীকে অনেক ভালোবেসেছি আর একটুও ভালোবাসবোনা,গেটলস্ট।”

আমি রেগে বেডের উপর দাঁড়িয়ে বললাম,”হেমাকে বিয়ে করবি তুই?তোকে আজ..!”

বলেই বালিশ নিয়ে উনাকে মারতে লাগলাম।উনি বোকার মতো মুখ করে হাসছেন আর মাইর খাচ্ছেন।উনার হাসি দেখে আমি আরও রেগে যাচ্ছি। বালিশ ফেলে দিয়ে দুই হাত দিয়ে উনার চুল টেনে ধরে যত গালি আমার জানা আছে সবগুলো বলতে লাগলাম।উনি শুধু মিটি মিটি হাসছেন।আমি রেগে গলার নেকলেস খুলে ফ্লোরে আছাড় দিলাম।কানের দুল খুলবো তখন উনি আমাকে আটকিয়ে বললেন,”আমার বউ এর জিনিস আমি তোকে পরতে দিব না।হেমাকে এই শাড়িতে বেশি সুন্দর লাগবে।দে আমাকে এগুলো।”

বলেই উনি আমার কোমড় ধরে আমাকে ফ্লোরে নামিয়ে দিলেন।আমি রাগী চোখে উনার দিকে তাকিয়ে উনাকে ধাক্কা দিলাম।শ্রাবণ সোফায় বসে গা এলিয়ে দিয়ে বললেন,
“তুমি এত কালো তোমার পেট কেন এত ফর্সা?হুয়াই?”

আমি উনার মুখে একটা ঘুশি দেওয়ার জন্য এগিয়ে যেতেই শাড়ির সাথে পা বেঁধে পরে গেলাম।কোথাও চোট না পেলেও আমি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম।এখন আমার অনেক কান্না পাচ্ছে।চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কারন উনি আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন না।ওই হেমা শাকচুন্নিকে বিয়ে করতে চাইছেন,আমাকে কালো বললেন,আমি ফ্লোরে পরে গেলাম,শাড়ি খুলে গেল।এত সব দুঃখ রাখার জায়গা না পেয়ে আমি গলা ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে লাগলাম।

শ্রাবণ আমাকে তুলে বেডে বসিয়ে দিয়ে ব্যস্ত হয়ে বললেন,”কোথায় লেগেছে?”

আমার রাগ এবার আকাশ ছুলো।মনে মনে বললাম বেটা শয়তান কাঁটা ঘায়ে নুন ছিটাচ্ছিস?উনি আমার শাড়ি ঠিক করে দিতেই উনার ফোন বেজে উঠলো।উনি ফোন রিসিভ করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।আমি উঠে দাঁড়িয়ে আলমিরা খুলে দেখতে লাগলাম পরার মতো আর কোন ড্রেস আছে কিনা যদি থাকে তাহলে এই শাড়ি আমি পানিতে চোবাবো যাতে শ্রাবণ এটা হেমাকে দিতে না পারে।

আলমিরাতে অনেক গুলো ড্রেস পেলাম।সবগুলো আমার সাইজের।লাল কালার একটা গাউন পরে আমি শাড়ি ওড়না জুয়েলারি সব বাথট্যাবে ডুবিয়ে দিলাম।ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখি তৌসি আমার সামনে হা করে দাঁড়িয়ে আছে।আমি ওকে দেখেই হকচকিয়ে লাফিয়ে উঠে বললাম,
“তুই?”

তৌসি বলল,”শাড়ি কোথায়?ভাইয়া তোকে ঠিক করে শাড়ি পরিয়ে দিতে বলল।”

আমি ভাব নিয়ে বললাম,”শাড়ি আমি বাথট্যাবে ডুবিয়ে দিয়েছি।শোন না হেমা এসেছে?আমি রকিকে বিয়ে করবোনা আমি শ্রাবণ ভাইয়াকে বিয়ে করব।শ্রাবণ ভাইয়া হেমাকে বিয়ে করবে বলছে।”

তৌসি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ রুম থেকে যেতে যেতে চিৎকার করে বলল,”ভাইয়া!ও ভাইয়া!!জুঁই শাড়িটা বাথট্যাবে ডুবিয়ে রেখেছে।”

আমি ঠোঁট উল্টে দাঁড়িয়ে থাকলাম।একটু পর শ্রাবণ রাগী মুখ করে এসে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমাকে কোলে নিয়ে ধপধপ করে হেঁটে নিচে আসলেন।নিচে এসে আমি অবাক।ফুপ্পি আর নিতু আপু বাদে সবাই এখানে আছে।শ্রাবণ আমাকে সোফায় নামিয়ে দিয়ে আমার পাশে বসলেন।বাবা আর ভাইয়াকে দেখে আমি কিছু বলার জন্য মুখ খুলেছি তখনই শ্রাবণ আমার মুখ চেপে ধরে বললেন,” আগে বিয়ে করবি তারপর যত ইচ্ছে পটরপটর করিস।”

সেই যে উনি আমার মুখ চেপে ধরলেন কবুল বলার আগে আর খুললেন না।কাজী সাহেব আগে শ্রাবণকে কবুল বলতে বললেন।উনি তো ফট ফট করে কবুল বলে দিলেন আর আমি ফটফটানি মেয়ে হয়েও মিন মিন করে তিন বার আলহামদুলিল্লাহ কবুল বলে দিলাম।ব্যস বিয়ে হয়ে গেল।

বিয়ে শেষ হতেই আমি বাবার কাছে যেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে অভিযোগের সুরে বললাম,”বাবা জানো?শ্রাবণ ভাইয়া আমাকে বলেছে ‘তোর বাপের থেকে আমার টাকা বেশি তোর বাপ তো দুনিয়ার হারকিপ্টে আর ভাইয়া নাকি মদন মার্কা ঘর বাড়ির ছবি আঁকানোর জব করে’।”

আমার কথা শুনে সবাই হু হা করে হেসে দিল।শ্রাবণ চোখ গরম করে আমার দিকে তাকালেন।আমি একটুও ভয় পেলাম না।এখন বাবা ভাইয়া আমার সাথে আছে হু।আমি এবার ফুপ্পাকে বললাম,”ফুপ্পা জানো?শ্রাবণ ভাইয়া….”

তখনই ভাবি বলল,”হুম জানে ফুপ্পা সব জানে।এখন তোমরা চলো সবাই।বিয়ে তো হলো,খাওয়া তো আগেই খেয়ে নিয়েছি এখন বাসায় যাওয়া যাক।অনেক রাত হয়েছে ফুপ্পি ওয়েট করছে।”

ভাবির কথায় সবাই একমত।সবাই আমাকে আর শ্রাবণকে নিয়ে ফুপ্পির বাসায় আসলো।এই বাসাটা আমার খুবই ভাল লাগে।ফুপ্পির সামনে ভয়ে ভয়ে দাঁড়াতেই ফুপ্পি আমার কপালে চুমু দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,”আমার আম্মু এখন থেকে আমার বউ মা।”

তারপর আমাকে আর শ্রাবণকে এক সাথে জড়িয়ে ধরে বলল,”দোয়া করি তোমরা একে অপরের চিরসাথী হও।সারাজীবন সুখে থাকো।”

এরপর ফুপ্পি আমাকে নিয়ে সোফায় বসে আমার হাতে সোনার চুড়ি,গলায় চেইন,আঙুলে রিং পরিয়ে দিল।তারপর আমাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে ফুপ্পির বিয়ের লাল বেনারসি শাড়ি বের করে দিল।ভাবি,তৌসি আর নিতু আপু আমাকে বউ সাজাতে লাগলো।নিতু আপুর মন খারাপ আমি বেশ বুঝতে পারছি।ভাবি আমার খোপায় বেলি ফুল দিতে দিতে বলল,
“জুঁই শোন বাসরঘরে কি হয় না হয় কালকে কাউকে বলবিনা।যদি বলার ইচ্ছে হয় শুধু আমাকে বলবি তাও কানে কানে।”

তৌসি বলল,”আমাকেও বলবি।”
নিতু আপু বলল,”কাউকে বলার দরকার নেই।”

আমি অবাক হয়ে বললাম,”কি বলবো?”
ভাবি থতমত করে বলল,”সকালে ঘুম থেকে উঠে শ্রাবণের নামে তোর যদি কোন অভিযোগ থাকে সেগুলো শুধু আমাকে বলবি,খবরদার আর কাউকে বলবিনা।”

আমি ভ্রু কুচকে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।রাত দুটোর সময় ওরা আমাকে শ্রাবণ ভাইয়ার ঘরে ফুল দিয়ে সাজানো বেডের উপর বসিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে গেল।আমি বেডে শুয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতেই শ্রাবণ এসে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলেন।উনি ঠিক আগের মতো লাল আর গোল্ডেন শিরওয়ানি পরেছেন।সাজুগুজু করে আমার থেকে বেশি সুন্দর লাগছে উনাকে।উনাকে দেখেই আমি হকচকিয়ে উঠে বসে বললাম,
“ভাবি বলেছে এটা আমার রুম যাও ভাগো তুমি এখান থেকে।”

শ্রাবণ দরজায় হেলান দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন।আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
“কি হলো যান।”

উনি দ্রুত আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার পাশে বসে বললেন,”আমি ভাবতে পারছিনা তুমি আমার বউ হয়ে গিয়েছো।আমার সোনা বউ।”

বলেই উনি আমার কপালে চুমু দিলেন।আমি বেড থেকে নেমে দাঁড়াতেই উনি আমার হাত টেনে আমাকে উনার কোলের উপর বসিয়ে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
“কোথায় যাচ্ছো সুইটহার্ট?”

আমি চমকে গিয়ে বললাম,”এই কি করছেন ছাড়ুন।”

উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,”আই লাভ ইউ সুইটহার্ট।”

আমি উনার হাতে খামছি দিয়ে বললাম,”ছাড়বি?এক্ষণি ফুপ্পিকে ডাকবো দাঁড়া।”

শ্রাবণ আমার মুখ চেপে ধরে আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,”আম্মুকে কি বলবা?আম্মু তোমাকে আমার হাতে তুলে দিল দেখলেনা?আজকে তো আমাদের বিয়ে হলো,এখন থেকে আমরা এক রুমেই থাকবো।এটা আমাদের দুজনারই রুম।শোন তুৃমি আগে আমাকে একটা প্রমিস করো তো।আম্মুর নামে প্রমিস করো।”

আমি বললাম,”কিসের প্রমিস?”
শ্রাবণ আমার গালে আর ঠোঁটে কিস করে বললেন,”আমি তোমাকে আদর করলে কাউকে বলবানা,প্রমিস মি।”

আমি ভীত চোখে উনার দিকে তাকালাম।ভয়ে আমার কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে। ভাবিও কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করছে,শ্রাবণ ও প্রমিস করিয়ে নিতে চাইছেন।কি করতে চাইছেন উনি?আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,”কককি করবেন আপনি?”

উনি আমাকে বেডে ফেলে আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বললেন,”আদর করব।”

উনার কথা শুনে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।উনি যা করছেন লজ্জায় আমি শেষ।মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছেনা।এসব লজ্জার কথা আমি কাউকে বলতে পারবোনা তাও শ্রাবণ আমার থেকে আম্মুর নামের প্রমিস করিয়েই ছাড়লেন।উনি জানেন আম্মুর নামে প্রমিস করলে আমি সেটা কখনও ভাঙিনা।

~ সমাপ্ত ~

(বি.দ্র. :- গল্প শেষ করে দিলাম!!!আগেও একবার বলেছি গল্প যেমনটা চেয়েছি তেমনটা হয়নি।তাও আপনারা পাশে ছিলেন জন্য আমি গল্প লিখায় উৎসাহ পেয়েছি।জুঁই কাল্পনিক চরিত্র হলেও বাস্তবে এমন অনেক জুঁই আছে তাই আপনারা ব্যাপারটাকে হেসে উড়িয়ে দিবেননা।জুঁই এর মতো মেয়েরা হাস্যকর হলেও তারা খুব ভাল মানসিকতার হয়।শ্রাবণকে নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।

গল্পের সাথে থাকার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।আপনাদের কমেন্টের জন্য ওয়েট করব।আজকে যদি আপনারা নেক্সট বলেন আমি সত্যি খুব মজা পাবো।আমি জানি আজকে কেউ নেক্সট বলবেনা হা হা হা।

যাইহোক,খুব শীঘ্রই পরবর্তী গল্প নিয়ে আসবো ততদিন ভাল থাকবেন সবাই।)

💜আল্লাহ্ হাফেজ💜

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here