অজানা পর্ব-১৪

0
997

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–১৪

সকাল ৮.৩০। নেত্রাদের বাসার সবাই ডাইনিং টেবিলে নাস্তা খেতে বসছে। আরিবা নেত্রার আগেই তাড়াতাড়ি গিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো। নেত্রা অবাক হয়ে ভাবলো এটা কি ওর নিজের বাড়ি? নাকি আরিবাদের বাড়ি ভুলে চলে আসছে? চারপাশে তাকালো। নাহ! এটা তো তাদেরেই বাড়ি। অগত্যা ও চেয়ারে বসে পরলো।

“আরে রিবা! কখন এসেছো? কতদিন হলো তোমায় দেখিনা? আগে তো প্রায় আসতে এখন আসো না।”

আরিবার প্লেটে খাবার দিতে দিতে কথাটা বললেন নেত্রার মা। নেত্রার বাবা তাতে সায় দিয়ে বললেন।

“মাঝে মাঝে আসতে পারো তো মামনি! তুমি আসলে ভালো লাগে।”

আরিবা খাবার মুখে দিতে দিতে বললো।

“আংকেল আমিতো আসতেই চাই কিন্তু নেত্রা আনতে চায়না। ওর ভাগে খাবার কম পড়ে বোধহয়।”

নেত্রা অবাক চোখে তাকালো। ওর মা বাবা ওর দিকে কড়া চোখে তাকালো। নেত্রা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিবা ওর মায়ে দিকে তাকালো। পা দুলিয়ে খাবার চিবাতে চিবাতে বললো।

“জানেন না আন্টি! আজকে আসছি আরও বসতে দিবে তাইনা? তা না করে বলে কেনো আসছোছ? নিদ্র ভাইয়াও তো দরজা খুলেই বলছে এত সকালে আসছো কেন? এগুলো শুনলে আসতে ইচ্ছা করে বলেন আন্টি?”

নিদ্র খাওয়া রেখে ওর দিকে তাকালো। এটা কি হলো? ভালো করতে গিয়ে খারাপ হয়ে গেলো? নিদ্রর মা ওকে জিজ্ঞাসা করলো।

“কিরে? তুইও এসব বলোছ? নেত্রা নাহয় ছোটো বেশি কিছু বুঝেনা তাই বলে তুইও?”

“এজন্যই বলে ভালো মানুষের ভাত নাই।”

“ঠিকই ভাইয়া! তাইতো আপনি রুটি খাচ্ছেন। আন্টি এখন থেকে নিদ্র ভাইয়াকে ভাত দিবেন না।”

আরিবা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথাগুলো বললো। নিদ্র হতাশ হয়ে ওর দিকে তাকালো। সবাই মুচকি মুচকি হাসছে। তাতে কি? আরিবা তো খাওয়ায় ব্যস্ত। সে মন দিয়ে খাচ্ছে। হঠাৎ কলিংবেল বাজলো। নেত্রার মা তাদের কাজের লোককে দরজা খুলতে বললেন।

“আরে তুমি! বসো বসো অনেক দিন হইছে আসোনা।”

লোকটিকে দেখে নেত্রার মা কথাটা বলে তরিঘরি করে করে কাছে গেলেন। নিদ্র টেবিল থেকে উঠতে উঠতে বললো।

“আরে ভাই! সব চমক এক দিনে? হজম হবে তো?”

লোকটি কারো কথার কোনো উওর না দিয়ে রাগি চোখে ডাইনিংয়ের দিকে এগিয়ে গেলো। তাকে আসতে দেখে নেত্রা আরিবাকে খোচাঁচ্ছে। আরিবা ওকে ঝাড়ি মেরে বললো।

“গুড়ি কৃমি হইছে? খোঁচাছ কেনো? খেতে দিবি ন…”

কথাটা শেষ করতে পারলোনা তারআগেই কেউ ওকে চেয়ার থেকে টেনে তুললো। সামনে তাকিয়ে আরশকে দেখে অবাক হয়ে গেলো আরিবা। কিছু বলতে নিবে তার আগেই দিলো থাপ্পড়। হঠাৎ থাপ্পড়ে টাল সামলাতে না পেরে টেবিলের উপর পরে গেলো আরিবা। সবাই চমকে উঠলো। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। এটা কি হলো? আরশ ওর বাহু ধরে টেনে তুললো। ওর সামনে দাড় করিয়ে রাগ নিয়ে বলতে লাগলো।

“এই! তোর কমনসেন্স নাই? নুন্যতম মানুষের যেই জ্ঞান থাকে সেটাও নেই তোর? স্টুপিড! তুই ছোটো? বুঝোছ না? কোন সাহসে একা একা বের হলি? যদি কিছু হতো? বাড়ির কারো কথা ভাবলি না? সবাই তোকে কত ভালোবাসে সেটা মনে করোছ নি। কাকিমনি কাকার কথা একবারও মাথায় আসেনি? তারা তোকে না দেখে কি অবস্হা হবে সেটা ভাবোছনি? কেনো বের হইছোছ? কি কারনে বল?

আরিবা মাথা নিচু করে আছে। চোখ দিয়ে নিরব ধারায় জল পড়ছে। সবাই অবাক হলো। আরিবা পালাইছে? কেনো পালাইছে? তবুও কিছু বললেন না নিরব দর্শক হয়ে দেখছেন। নিদ্রর খুব খারাপ লাগছে কিন্তু কিছুই বলার নেই তার। আরশ ওকে ঝাকিয়ে আবারও বললো।

” কিরে কথা বলোছ না কেনো? এখন বোবা হয়ে গেলি? এমনিতে তো মুখে খই ফোটতে থাকে। কার জন্য পালাইছোছ বল? চল আজেই ওর সাথে তোর বিয়ে দিব। খুব শখ জাগছে না? চল!”

আরশ ওকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। নেত্রা আর চুপ থাকতে পারলোনা। নিজের বান্ধবীর এই অপমান সে মেনে নিবে না। তাই আরশের সামনে গিয়ে বললো।

“ভাইয়া! রিবা আপনার জন্য পালাইছে।”

আরশ কিছুই বুঝতে পারলোনা। ভ্রু কুচকে বললো।

“মানে?”

“টেস্ট পরীক্ষায় রেজাল্ট ভালো না হওয়ায় আপনি ওকে বকছিলেন। এবার যদি মারেন সেই ভয়ে পালাইছে। আজকে তো রেজাল্ট দিবে।”

আরশ থমকে গেলো। আরিবা তাকে এত ভয় পায়? নিজের চুল খামছে ধরে এদিক ওদিক তাকালো। হতাশ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে আরিবার দিকে তাকালো। মেয়েটা এখনও কাঁদছে। আরশের খুব খারাপ লাগছে। কি করে রাগ ভাঙাবে এবার? তার মায়াপরী তো খুব রাগ করছে। নিজেকে যথেষ্ট শান্ত করে বললো।

“রিবা! তাকা আমার দিকে? আমি কি তোকে বেশি বকাবকি করি? খুব মারি? একটুও ভালোবাসি না?”

আরিবা উওর দিলোনা। আরশ আবার বললো।

“আমি বকলেও তো তোর ভালোর জন্যই বকি তাইনা? তোর প্রিয় জিনিস ও এনে দেই বল না?”

আরিবা গাল ফুলিয়ে বললো।

“আম জাম পড়ছে
আগে আমায় মারছে
আপেল কমলা বেদানা
এখন আদর নিবোনা।”

এগুলো বলেই সোফায় বসে পড়লো। সবাই অবাক হয়ে দেখছে ওকে। এ নাকি রাগ করছে? রাগলে মানুষ ছড়া বলে? আরশ মুচকি হেসে ওর পাশে বসলো। নিজের কান ধরে কিউট করে বললো।

“সরি! আমার সরি কি একসেপ্ট হবে? ”

আরিবা গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে ঘুরে গেলো। নিদ্র ওদের দেখছে আর ওর ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে। আরশেকেও ওর বিউটি ডলের পাশে সহ্য হয়না। ও উপরে চলে গেলো। আরশ আরিবাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো।

“চল! আজ তোকে বিরিয়ানি খাওয়াবো ঘুরতেও নিবো।”

“বিরিয়ানী আমি খাবো না
তোমার সাথেও যাবো না।
ভালো থাকবেন সবাই
আমি এখন বাড়ি যাই।”

কথাটা বলেই আরিবা সামনে চললো। সবাই ওর কথা শুনে হাসছে। আরশ সবার থেকে বিদায় নিয়ে আরিবার পিছু চললো। নিদ্র উপর থেকে দেখছে তার বিউটি ডল যাচ্ছে। ও যদি পারতো এই বুকে আটকে রাখতো কিন্তু..। নিরব ভাবে কষ্ট গুলো সহ্য করতে লাগলো ও। আকাশের দিকে তাকিয়ে ব্যক্ত করতে লাগলো নিজের অব্যক্ত কথা।

——————————

মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের পাশে বসে আছে আরিবা। এসেই যে মায়ের কাছে বসছে আর ছাড়েনি। সবার শরীরে যেনো প্রান ফিরে এসেছে। আরিবার চিন্তায় সকাল থেকে কেউ খায়নি। অগত্যা মিসেস তারিন সবাইকে খাবার খেতে দিচ্ছেন। আরিবা খায়নি, সকালে একটু খেয়েছিলো। তাছাড়া রেজাল্টের চিন্তায় ওর গলা দিয়ে খাবার নামবেনা। ও চুপটি করে ওর মায়ের কোলে শুয়ে আছে। প্রত্যেক স্টুডেন্ট রেজাল্ট দেওয়ার দিন খাওয়া দাওয়া করতে পারেনা। কেনো জানি তাদের ভিতরে একটা ভয় কাজ করে। যত ভালো স্টুডেন্ট হোক তবু তাদের বুকে ধুকবুক করবেই। আরিবারও তেমন হচ্ছে।

খাওয়া দাওয়া শেষে আরশ ল্যাপটপ নিয়ে বসছে আরিবার রেজাল্ট দেখবে বলে। আরিবা ভয়ে পুরাই শেষ। না জানি আরশ কি করবে ওকে। দাঁত দিয়ে নখ কাটতেছে আর চুপ করে আছে। ওর মা ওকে শান্তনা দিয়ে বললো।

“ভয় নেই তুই ভালো রেজাল্ট করবি ইনশাআল্লাহ।”

“রিলাক্স মামনি! আমি জানি আমার মেয়ে ভালো স্টুডেন্ট।”

আরিবা ওর মা বাবার সান্ত্বনায় একটু সাহস পেলোনা উল্টো ভয় পেলো। যদি ভালো রেজাল্ট না আসে? এদের আশাটাই মাটি। মিসেস তারিন আরিবার পাশে বসলো। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।

“রিবা চিন্তার কিছু নাই। রেজাল্ট যাই হোক কেউ বকবেনা তোকে।”

আরিবা ঠোঁট উল্টালো। ভয়ে ভয়ে আরশের দিকে তাকালো। আরশের বাবা ওটা লক্ষ্য করে বললেন।

“ভয় নেই মামনি। আমি আছি দেখি তোমায় কে বকে।”

“হ্যাঁ সবাই ওকে আরও উসকানি দেও। এমনিতেও মাথায় উঠাইছো এখন কোথায় উঠাইবা? তালগাছে নাকি আইফেল টাওয়ারে?

আরিবার যতটুকু সাহস বেড়ে ছিলো আরশের কথায় তার বেশি কমে গেছে। আরিবা আল্লাহ আল্লাহ করছে যেনো এবারের মতো পাড় করে দেয়।

“দেখে যা কি রেজাল্ট করছোছ! এটা রেজাল্ট? ছিঃ! আয় দেখে যা!”

আরশের রাগি গলায় কথা শুনে চমকে উঠলো আরিবা। ভয়ে ওর বুক কেঁপে উঠলো। তারমানে ও ভালো রেজাল্ট করেনি। কি হবে এখন? সবার সামনে যাবে কিভাবে ও? সবাই তো লজ্জা দিবে। আরশ? আরশ ওকে কি করবে? বকবে নাকি মারবে? এমন হাজার চিন্তা ঘুরতে লাগলো আরিবার মাথায়।

ইনশাআল্লাহ চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here