অজানা পর্ব-১৫

0
1043

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–১৫

কলেজের গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে আরিবা। নতুন তাই একা একা ভিতরে যাচ্ছে না। বাইরে দাড়িয়ে ভিতরে উঁকিঝুঁকি মারছে। একা দাড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছেনা। সবাই কেমন করে তাকাচ্ছে আবার এটা ওটা বলছে। আরিবা এসবে পাত্তা দিচ্ছে না। অন্য দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো। “চান্দুরা অপেক্ষা করো। সবার মুখ চিনে রাখছি পরে সব সুধে আসলে শোধ করবো। এই জান্নাতুল ফেরদৌস আরিবাকে চিনোনা, সে কারও ধার রাখেন।” এসব বলেই ও ঘড়ির দিকে তাকালো। সময় দেখেই বিরক্তি নিয়ে সামনে রোডের দিকে তাকালো। নেত্রার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। সেই বিশ মিনিট আগে বলছে আসতাছি। কিন্তু এখনোও আসছেনা। আরিবার মেজাজ খুব খরাপ হচ্ছে এবার। আরশেরও আজ জরুরী ক্লাস আছে তাই তাকে নামিয়ে দিয়েই চলে গেছে। এই আরশের কথা মনে পড়তেই ওর মেজাজ আরও খারাপ হলো। এই বেটা অনেক খাটাশ। ওর রেজাল্টের দিন ওকে খুব ভয় দেখিয়ে ছিলো। আরিবা গোল্ডেন A+পাইছে। কিন্তু আরশ যা বলছিলো তাতো ওর কলিজা শুকিয়ে গেছিলো। রেজাল্ট দেখে সবাই খুব খুশি হয়েছিলো। সবাই গিফ্ট দিয়েছে। আরশ স্পেশাল ভাবে গিফট দিয়েছে ওকে। ওর প্রিয় জায়গায় ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলো ওর পছন্দের অনেক কিছুই করছে। করলে হবে কি? এই ছেলে তো ওর পিছে না লাগলে তার পেটের ভাত হজম হয়না মনে হয়। আরিবা অন্য কলেজে ভর্তি হতে চাইছিলো কিন্তু আরশ ওকে এই কলেজেই ভর্তি করবে। কারন আরশ এই কলেজে পড়ছে সব চেনা জানা ওর।

” কিরে এখানে কি করোছ?”

আরিবা ভাবনার ফোড়ন কাটলো নেত্রার কথায়। ও ভ্রু কুচকে মনে মনে ভাবলো। বলে কি? ওর জন্য অপেক্ষা করছি আর ও বলে এখানে কি করোছ? অগত্যা আরিবা ওর পিঠে ধুম করে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বললো।

” আধা ঘণ্টা দাড় করিয়ে রেখে বলোছ এখানে কি করি? ওই কুত্তি তোর কয়টায় আসার কথা ছিলো?”

নেত্রা ঠোঁট উল্টালো। পিঠ ঢলতে ঢলতে বললো।

“দেরি হইছে বলে এমন সবার সামনে মারবি? আমার কি মানসম্মান নাই?”

” আমার হাতের মাইর না খেলে তোর রাতে ঘুম হয় না, তোর আবার মানসম্মান!”

ডোন্ড কেয়ার ভাব নিয়ে কথাটা বলে আরিবা অন্য দিকে তাকালো। নিদ্রকে আসতে দেখে মুচকি হেসে বললো।

” কেমন আছেন ভইয়া?”

নিদ্র আরিবার দিকে তাকালো। মেয়েটাকে অনেকটাই বড় লাগছে। কলেজে উঠার সাথে সাথে একটু পরিবর্তন হয়েছে।আরিবা ঘায়েল করা হাসি মুখে তাকিয়ে আছে। সে দেখতে চায়না এই হাসি। এই হাসি তাকে ঘুমোতে দেয়না খুব কষ্ট দেয় বুকে। হঠাৎ কিছু মনে হতেই নিদ্র ওর থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। নিদ্র আশে পাশে তাকালো কিন্তু ওদের কেউ ফলো করছে এমন কাউকে দেখছেনা। কিন্তু নিদ্র আরিবাকে লুকিয়ে দেখলে বা ওর সাথে একটু কথা বললে অজানা নাম্বার থেকে ওকে থ্রেট করে। ওই অজানা লোকটা কি করে জানে এটা বোঝেনা নিদ্র। হয়তো সব সময় আরিবাকে নজরে রাখে। ও নিজের জন্য ওর বোনের ক্ষতি কখনোই চায়না। নিদ্র নিচের দিকে তাকিয়ে বললো।

“ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”

“আলহামদুল্লিলাহ ভালো আছি।”

“ওহ। আচ্ছা ভিতরে চলো তাড়াতাড়ি। দেরি হয়ে যাবে।”

নিদ্র ওদের নিয়ে ভিতরে গেলো। আরিবা আশেপাশে তাকাচ্ছে। অনেকেই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আরিবার খুব অস্বস্তি ফিল হচ্ছিলো। কিছু ছেলেরা তো ভং হয়ে তাকিয়ে আছে। আরিবা ভদ্র মেয়ের মতো চলে গেলো। নিদ্র পিন্সিপালের সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে এসেছে।

ক্লাসে প্রথম বেঞ্চে বসে আছে ওরা। নেত্রা আরিবাকে ফিসফিস করে এটা ওটা বলছে। আরিবা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে কিন্তু চেনা কাউকেই দেখলোনা।

” এই তোমরা কারা হুম? প্রথম বেঞ্চ থেকে উঠো!”

হঠাৎ কথা শুনে সাইডে তাকালো আরিবা। দেখলো ৩টা মেয়ে একসাথে দাড়িয়ে আছে। এদের মধ্যেই হয়তো কেউ একথা বলছে। নেত্রা বোকা বোকা চাহনিতে তাকিয়ে আছে। আরিবা হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসলো। পা দুলিয়ে বললো।

“আমরা মানুষ। তোমাদের মতোই। চোখে কম দেখো নাকি? কই দেখিতো! আল্লাহ তুমি খুব ফোন চালাও তাই এমন হইছে। দেখি দেখি”

কথাটা বলেই আরিবা সামনের মেয়েটার চোখ দেখতে আগালো। মেয়েটা দু কদম পিছিয়ে গিয়ে রাগ নিয়ে বললো।

” চুপ ননসেন্স! এত কথা বলো কেনো? কোন ক্ষেত থেকে উঠে আসছো? কোথায় কিভাবে কথা বলতে হয় জানোনা।”

নেত্রা এতক্ষন দেখছিলো। এবার আর চুপ থাকতে পারলোনা। রাগি গলায় মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো।

“এই তুমি আমার বেষ্টুকে বকছো কেনো? সরো।

“দেখ তমা! এর চামচামি করছে।”

ওদের মধ্যে একজন সামনের মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বললো। তার মানে এই মেয়েটির নাম তমা? নেত্রাকে চামচা বলায় আরিবা রেগে গেলো। ঠাস করে মেয়েটার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। এমন হবে কেউই বুঝতে পাড়েনি। মেয়েটা গালে হাত দিয়ে লজ্জায় এদিক ওদিক তাকালো। আরিবা রাগ নিয়ে আঙ্গুল উচিয়ে বললো।

“সবাইকে নিজের মতো ভাবিস? তুই তমার চামচামি করোছ বলে সবাই কেই তা ভাবোস? ও আমার বন্ধু বুঝলি? আমাদের সাথে কথা বলার আগে ভেবে বলবি। মাইন্ড ইট! ফট এখান থেকে।”

আরিবা তুরি মেরে শেষের কথাটা বললো। চোখের ইশারায় ওদের যেতে বললো। তমার ওর দিকে তাকিয়ে বললো।

“তোমাকে আমি দেখে নিবো!”

একথা বলেই ওরা পেছনে চলে গেলো। নেত্রা মুচকি হেসে বললো।

“চাইলে এখনই দেখতে পারো।”

কথাটা বলেই দুজনে শব্দ করে হেসে ফেললো।

—————————-

ক্লাসে বসে আছে আরশ। রাগে ওর মাথা টগবগ করছে। সব কিছু ভেঙে ফেলতে ইচ্ছা করছে। বাড়ি হলে সে সব কিছু ভেঙে ফেলতো এতক্ষনে কিন্তু এটা ক্লাস। তাই ও জোরে জোরে শ্বাস ছেড়ে নিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারলো না। শাহীন চুপ করে পাশে বসে আছে। কথা বললেই ঝাড়ি শুনতে হবে। তাই গালে হাত দিয়ে আরশের দিকে তাকিয়ে আছে। রাগে আরশের চেয়াল শক্ত হয়ে এলো। টেবিলের উপর হাত দিয়ে একটা ঘুষি মেরে দাড়িয়ে বললো।

“ওই মেয়ে কে আজ মেরেই ফেলবো এত বড় সাহস? আমার নামে মিথ্যা বলে? আবার সবার সামনে জড়িয়ে ধরে প্রমান করে? ওকে তো..”

কথাটা বলে আরশ সামনে আগাতে গেলেই শাহীন ওকে আটকে দেয়। জোর করে বসিয়ে বলে।

” ভাই এমন করিছ না। ১টা বছর গেলেই পড়া শেষ, আমরা চলে যাব। এখন ঝামেলা করিস না। সমস্যা হতে পারে।”

আরশ ওর কথা শুনে চুপ করে রাগে ফোসফাস করছে। জিসান এসেই আরশের পাশে বসলো। ওর পিঠে একটা ঘুষি মেরে মাথা দুলাতে দুলাতে বললো।

“কিরে মামা! কি খবর!”

আরশ ওর দিকে রাগি চোখে তাকালো। জিসান বিষ্ময়ে তাকিয়ে আরশের শরীর থেকে হাত সরিয়ে নিলো। আরশ রেগে আছে কেনো সেটাই বুঝতে পারছেনা। শাহীনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো। শাহীন ওকে ইশারায় চুপ থাকতে বললো। জিসানের না শুনা অব্দি ভালো লাগবেনা। তাই সিরিয়াস হয়ে বললো।

“কি হইছে? আমাকে কি বলা যায় না? আমি তোদের বন্ধু না?”

আরশ কিছুই বললো না। চুপ করে বসে রাইলো। শাহীন বললো।

” ওই যে তৃনা আছেনা? ও মানুষের কাছে বলে বেড়াচ্ছে আরশ ওর সাথে প্রেম করে। প্রমান করার জন্য আজ আরশ কলেজে ঢুকতেই ওকে দৌড়ে জড়িয়ে ধরছে। সবাই ছিলো অনেকে ভিডিও করছে। ওই মেয়ে কে ভর্তা বানাইতে ইচ্ছা করছে দোস্ত। তাও পা দিয়ে ডলে হাত দিয়ে না।”

জিসান হতাশ হলো। ও বুঝেনা কেনো এই মেয়ে এমন করে? ও জানে তৃনা আরশকে খুব ভালোবাসে কিন্তু আরশ তো রিবাকে ভালোবাসে। ওর তো এটা বোঝা উচিত। তাছাড়া তৃনার দোষ কোথায়? সবাই সবার ভালোবাসা পেতে চায়। আরশ যেমন রিবাকে যে কোনো মূল্যে চায় তৃনাও সেটাই চায়। দুজনেই সমান!

“ওই মেয়ে কে আজেই ফোন করে রেস্টুরেন্টে ডাকবো।”

আরশের কথায় জিসান ভাবনা থেকে বের হলো। অবাক হয়ে বললো।

“তৃনাকে ডাকবি কেনো?”

“সেটাই তো দোস্ত! তুই কি তৃনার সাথে প্রেম করবি?”

শাহীনের কথা শুনে আরশ বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।

“তোরা আস্ত গাধা। আমার মায়াপরী থাকতে ওর সাথে প্রেম করবো কেনো? ওকে বিয়ে করতে ডাকবো।”

ওরা দুজনে হা করে তাকিয়ে আছে। কি বলে এসব? একবার বলে প্রেম করবেনা আরেকবার বলে বিয়ে করবে। এগুলো কি? ওদের মাথায় ডুকলোনা। ওরা প্রশ্ন করতেই ভুলে গেছে। আরশ ওদের দুজনকে দুটো থাপ্পড় দিয়ে বললো।

” আজ সন্ধ্যায় বুঝতে পারবি। জিসান ওকে ফোন করে বল আমি সন্ধায় আসতে বলছি।”

জিসান ওর কথামতো তৃনাকে বললো। তৃনা শুনে যে খুব খুশি তা ওরা সবাই বুঝলো। জিসান ভাবছে কি হবে আজ সন্ধ্যায়?

ইনশাআল্লাহ চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here