অজানা পর্ব-৩২

0
859

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৩২

💝

ধোয়া উঠানো কফি নিয়ে কলেজের ক্যান্টিনে বসে আছে আরিবা। বসে বসে সময় কাটানোর চেষ্টা করছে। মাঝে মাঝে একা থাকলে ৫মিনিটও আধাঘন্টার মতো লাগে। কপাল কুচকে হাত ঘড়ির দিকে তাকালো আরিবা। সময় দেখে বিরক্ত নিয়ে হাত দিয়ে টেবিলে বাড়ি মারলো। আজ দেরি হবে বলে তাড়াহুড়ো করে আসছে এখন দেখে ওর দেরি হয়নি। ওর বন্ধুরা কেউ আসেনি। বিরক্তি নিয়ে কফিতে হালকা চুমুক দিলো।

“হাই বিউটি ডল! কেমন আছো?”

হঠাৎ পরিচিত কন্ঠ শুনে পিছনে তাকালো আরিবা। দেখলো নিদ্র মুখে হাসি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আরিবা তাকিয়ে রইলো। ও নিদ্রর ভাব সাব বুঝেনা। এখন আবার কি হইছে কে জানে? মাঝে এক বছর ওর সাথে কথাই বলতোনা এখন এই কয়মাস ধরে ওর সাথে লেগে থাকে। আগের মতো ফুচকা, আইসক্রিম খাওয়ায়। হেসে হেসে মিষ্টি করে কথা বলে। আরিবাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিদ্র বললো।

“তোমাকে বিরক্ত করলাম নাকি? চলে যাবো?”

নিদ্রর কথায় আরিবার ধ্যান ভাঙলো। সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে বললো।

“আরে নাহ ভাইয়া! বিরক্ত হবো কেনো? আমি একা একা আরও বোরিং ফিল করছিলা। আপনি এসেছেন ভালো খুব ভালো হইছে।”

“ওহ তাই? তোমাকে চেয়ে থাকতে দেখে বললাম আর কি।”

“ওহ! বসেন ভাইয়া! কি খাবেন? অর্ডার করি?”

নিদ্র মুচকি হেসে চেয়ারে বসতে বসতে বললো।

“তোমাকে অর্ডার দিতে হবেনা। আমি নিজেই দিচ্ছি। তুমি কিছু খাবে?”

“নাহ ভাইয়া!”

নিদ্র নিজের জন্য কফি অর্ডার করলো আর আরিবার জন্য আইসক্রিম। যদিও আরিবা মানা করেছিলো। কিন্তু নিদ্র শুনেনি। নিদ্র অর্ডার করে আরিবার দিকে গভীর ভাবে তাকালো। ও মুগ্ধ হয়ে যায় আরিবার দিকে তাকালে। এই মায়ায় বাধা পড়েছে ও। স্কুল ড্রেসে আরিবাকে ওর কাছে বরাবরই ভালো লাগে। আরও ভালোলাগে আরিবার হিজাব পেচানো। ও খুব সুন্দর করে হিজাব পরতে পারে। কারন আরিবা বাইরে বের হলে সব সময় হিজাব পড়ে। স্কুল ড্রেসের সাথেও সাদা হিজাব পরেছে ওর খুব ভালো লাগছে। নিদ্রকে নিজের দিকে চেয়ে থাকতে দেখে আরিবা হালকা কাশি দিলো। নিদ্র দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হেসে বললো।

“ভাইয়া কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। খেয়ে নিন!”

আরিবার কথায় নিদ্রর খেয়াল হলো। আমতা আমতা করে বললো।

“হ্য হ্যাঁ! খাচ্ছি।”

কথাটা বলেই নিদ্র কফির মগ হাতে নিলো। কফিতে চুমুক দিতে দিতে বললো।

“তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে বিউটি বল!”

ওর কথা শুনে আরিবা একটু অস্বস্তিতে পরে গেলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে জোর পূর্বক হেসে বললো।

“থ্যাংস ভাইয়া!”

আরিবা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সময় হয়ে গেছে। অগত্যা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো। ব্যাগ হাতে নিতে নিতে বললো।

“ভাইয়া আমার সময় নেই যাই!”

“আচ্ছা। পরে কথা হবে বাই।”

আরিবা নিদ্রকে হাত নাড়িয়ে হেসে বাই বলে চলে গেলো। নিদ্র ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিচ্ছে। কারন ও জানে একটু পড়েই আরশ ওকে হুমকি দিবে। ও মাঝে মাঝে আরশের লোকের চোখ ফাকি দিয়ে আরিবার সাথে কথা বলে আবার মাঝে মাঝে দেখিয়েই আসে। যেদিন দেখিয়ে বসে এই দিনেই হুমকিপূর্ন মেসেজ আসে। আজ দেখিয়ে আসছে আজও মেসেজ দিবে। নিদ্র জেনে গেছে ওটা আরশ তাই আর ভয় পায়না। ও জানে আরশ ওর বোনের ক্ষতি কখনোই করবেনা। শুধু ওকে ভয় দেখাবে। নিদ্র কফি খেয়ে মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো।

——————————–

কলেজের মাঠে চুপ করে বসে আছে আরিবা। ওর চারপাশের বসে আছে ওর বন্ধুদের দল। সবাই নিরব হয়ে কফি খাচ্ছে। নিরবতা ভেঙে তুর্য বললো।

“এই তোদের সবার কি জামাই মরছে রে? এমন শোক দিবস পালন করতাছোছ কেন?”

শাওন কাশি দিয়ে উঠলো। রেগে তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো।

“এই শালা হারামী! তোর কি আমাকেও মেয়ে মনে হয়? আমার বৌ মরতে পারে জামাই কি করে মরবে?”

ওর কথা শুনে সবাই রুম কাঁপিয়ে হেসে উঠলো সবাই। হাসতে হাসতে সবার লুটিপুটি খাওয়ার অবস্থা। শাওন রাগি চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আরিবা কোনো মতে হাসি থামিয়ে বললো।

” আরে ইয়ার! তোরা দুজনেই মেয়ে।”

এবার তূর্যও হাসি থামিয়ে দিলো। শাওনের দিকে বোকা চোখে একপলক তাকালো। অতগ্যা আরিবার দিকে চোখ ফিরিয়ে তাকালো। কপাল কুচকে বললো।

“এই রিবা! কি বললি তুই? কোন এঙ্গেল থেকে আমাদের কে তোর ছেলে মনে হয়?”

আরিবা নেত্রা আর শান্তার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেঁপে হাসলো। ঘাড় ঘুরিয়ে তূর্যর দিকে চেয়ে বললো।

“যারা মেয়েদের সাথে থাকে। একটা মেয়ের সাথেও প্রেম করতে পারে না তাদের কে কি বলে?”

তূর্য অসহায় ভাবে বললো।

“তাই বলে ইজ্জতের এমন কাবাব বানাবি? সোজা মেয়ে?”

“তাহলে হিজরা বলতাম?”

কথাটা বলেই আরিবা উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। সাথে নেত্রা আর শান্তাও যোগ হলো। তূর্য আর শাওন গাল ফুলিয়ে বললো।

“অনেক আড্ডা দিছি এবার বাড়ি যাই কাল দেখা হবে।”

“রাগিছ না ইয়ার জাস্ট ফান!”

নেত্রার কথার উওর না দিয়েই ওরা চলে গেলো। শান্তা আরিবার দিকে চেয়ে বললো।

“দেখ রাগ করছে। ওভাবে বলা ঠিক হয় নায় তোর!”

” ধুর! শুধুই পেচাল পারতাছোছ। ওরা রাগ করেনি। দেখিস কাল এসেই আবার হাসাহাসিতে লেগে যাবে। এর মানেই ফ্রেন্ড বুঝলি?”

নেত্রা আর শান্তা মাথা দোলালো। আরিবা বসা থেকে উঠতে উঠতে বললো।

“আচ্ছা বাড়ি যাই রে। মি. খবিশ আবার আমায় ধরে রাম ধোলাই দিবে। শালা হারামী। আমার পিছেই লেগে থাকে।”

সবাই বিদায় নিয়ে নিজেদের বাড়ি চলে গেলো।

—————————

দুপুরের খাবার খেয়ে নিঃচিন্তায় গুম দিয়েছে আরিবা। আরশ আজ দুপুরে বাড়িতে ফেরেনি। ওর কাকিমনির থেকে খবর পেয়েছে আজ রাতের আগে আরশ বাড়ি ফিরবেনা। তাই মনের আনন্দে ঘুম দিয়েছে। ঘুমের মাঝে ফোন বাজার শব্দে বিরক্ত হলো আরিবা। কপাল কুচকে চোফ বন্ধ করেই ফোনটা কেটে দিলো। ফোন কাটতেই আবার ফোন এলো। আরিবা চরম বিরক্তি নিয়ে কল টা রিসিভ করলো। রিসিভ করেই রাগ নিয়ে চিল্লিয়ে বললো।

“এই তুই কোন গাছের পেত্নী রে? আমার সাধের ঘুমটা ভেঙে দিলি? আজ তোর সব চুল ছিড়ে দিবো শালা নাইজেরিয়ার কালী পেত্নী কোথাকার। কে তুই?”

“বইন চুপ কর? কথা বলার কোনো মুড রাখছোছ তুই?”

নেত্রার কথা শুনে আরিবা আরও রাগে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে রাগ নিয়ে বললো।

“তুই? তুই ফোন দিয়ে আমার ঘুম ভাঙলি? কি এত জরুরী ছিলো বইন যে আমার ঘুমটা ভেঙে দিলি?”

“খুব জরুরী দরকার আছে। বিকালে ঘুরতে যাবি?”

ঘোরাঘুরির কথা শুনে আরিবার ঘুম উধাও হয়ে গেলো। আস্তে করে বললো।

“কে কে ঘুরতে যাবি? আর কোথায় যাবি?”

“শান্তা, তূর্য, শাওন তুই আর আমি। ঠিকানা পাঠাচ্ছি এখনি চলে আয়!”

আরশ বাড়িতে নেই এই সুযোগে আরিবা ফাক পেয়েছে। ওর আম্মু আর কাকিমনি কে মেনেজ করে চলে আসছে। নেত্রার দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে অবাক হয়ে গেলো আরিবা। চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে। ও বুঝতে পারছেনা নিদ্র এখানে কি করে এলো। এখান তো নেত্রার থাকার কথা। যায়গাটা খুব সুন্দর করে সাজানো। নিদ্র কফি কালারের একটা পাঞ্জাবী পরে হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে। আরিবা জোর পূর্বক হেসে বললো।

“ভাইয়া কেমন আছে?”

“এই তো ভালো। তুমি কেমন আছো বিউটি ডল?”

“ভালো”

“তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে বিউটি ডল। সত্যি সত্যি একদম ডলের মতো লাগছে। এত সুন্দর কেনো তুমি?”

নিদ্রর কথা গুলো আরিবার কাছে অন্য রকম লাগছে। ও আমতা আমতা করে বললো।

“ভাইয়া এখানে নেত্রার থাকার কথা ছিলো না?”

নিদ্র মুচকি হাসি দিয়ে বললো।

“কেনো? আমার সাথে ঘুরতে তোমার খারাপ লাগছে?”

“নাহ তা বলিনি।”

“আচ্ছা চলো সামনে যাই।”

নিদ্র আর আরিবা সামনে ঘিরতে লাগলো আর মজা করতে লাগলো। নিদ্র তাকিয়ে তাকিয়ে ওর বিউটি ডলের হাসি দেখছে৷ আজ আরিবাকে ওর বলতেই হবে ওর ভালোবাসার কথা। আজ প্রিপারেশন নিয়ে এসেছে। নিদ্র আরিবাকে বলবে ভাবছে এমন সময় ওর ফোন এলো। ফোন টা রিসিভ করেই ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। চোখে জল এসে পড়লো। ও বুঝতে পারেনি এমনটা হবে। ও এখন কি কাবে?

💖

ইনশাআল্লাহ চলবে…..

(ভুলত্রুটি মাফ করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here