#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৪৩
💖
শহরের নাম করা একটি রেস্টুরেন্টে বসে আছে শাহীন। অনেকক্ষন ধরেই অপেক্ষা করছে। বারবার গেইটের দিকে তাকাচ্ছে। একবার গেইটের দিকে তো আবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। শান্তা কি তাহলে আসবে না? ওর হৃদয় অশান্ত হয়ে উঠলো। তাড়াহুড়ো করে শান্তার ফোনে কল দিতে যাবে তার আগেই দেখলো শান্তা গেইট দিয়ে ঢুকছে। পড়নে সিল্কের একটি থ্রি-পিছ। মাথায় ওড়না দেওয়া। গুঁড়ি গুঁড়ি চুলগুলো বের হয়ে আছে শাহীনের খুবেই ভালো লাগছে। শান্তা এসে শাহীনের বিপরীত দিকের চেয়ারে বসতে বসতে বললো।
“সরি লেট করো ফেলেছি বোধ হয়?”
শাহীন আমতা আমতা করে বললো।
“সমস্যা নাই। তোমাকে এক পলক দেখার জন্য আমি সারাদিন অপেক্ষা করতেও রাজি আছি।”
শাহীনের কথায় শান্তা লজ্জা পেলো। মুচকি হেসে মাথা নিচু করে ফেললো। শাহীন ওর দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো লজ্জা পেলে ওর শ্যামাঙ্গীকে কত সুন্দর লাগে। শাহীন যখন এক ধ্যানে শান্তার দিকে তাকিয়ে আছে তখনেই আরিবা তূর্য আর শাওন এসে ওদের পাশের চেয়ারে বসে পরলো। আরিবা শাহীনের দিকে তাকিয়ে কাশি দিলো। আরিবার কাশি শুনে শাহীম চমকে গেলো। পাশে আরিবাদের দেখে অবাক হলো। শাহীন জোর পূর্বক হেসে বললো।
“আরে তোমরা? কখন আসছো?
“এমন করে এক ধ্যানে থাকলে কি করে বুঝবেন ভাইয়া?”
আরিবার কথা শুনে শাহীন কেশে উঠলো। সবার দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক মুচকি হেসে বললো।
” আরিবা কেমন আছো? তোমরা সবাই কেমন আছো?”
তূর্য শান্তার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো।
“এতক্ষণ ভালো ছিলাম না। এখনা আপনাকে দেখে ভালো আছি দুলাভাই।”
তূর্যর কথা শুনে শান্তা আর শাহীন কেশে উঠলো। আরিবা, শাওন আর তূর্য দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগলো। শাওন হাসতে হাসতে বললো।
“সত্যি বলছি দুলাভাই আমার শরীরে এনার্জি চলে এসেছে।”
“আমার তো ক্ষুদা লোগে গেছে দুলাভাইকে দেখে।”
সবার মুখে দুলাভাই শুনে শাহীন লজ্জা পেলো। কেমন আনিজি ফিল করতে লাগলো। শান্তা ব্যাপার টা বুঝতে পেরে ওদের দিকে তাকিয়ে বললো।
“তোরা থামবি! কি শুরু করছোছ?”
শাহীন কিছুই বললো না। হঠাৎ শাহীনের ফোনে কল আসলো। ফোনটা রিসিভ করেই বললো।
“হ্যাঁ আরশ বল?”
আরশের নাম শুনে আরিবা চমকে গেলো। চুপ করে কান পতে শুনতে লাগলো আরশ কি বলে। আরশ ওপাশ থেকে বললো।
“কোথায় আছোছ? ”
“রেস্টুরেন্টে আরিবা, শান্তা আর ওদের ফ্রেন্ডদের সাথে।”
আরিবার নাম শুনেই আরশের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এলো। ও শাহীনকে বললো সাউন্ড একটু বাড়াতে। শাহীন তাই করলো। আরশ আরিবাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো।
” এইতো লেনার সাথে লাঞ্চ করতেছি।”
লেনার কথা শুনেই আরিবার মাথা গরম হয়ে গেলো। কান পেতে শুনতে লাগলো আর কি বলে। আরশ আবার বললো।
“থাক লেনা তুমি খাও আমায় খাইয়ে দিতে হবে না!”
আরিবা রেগে বোম হয়ে গেলো। শাহীন এক পলক আরিবার দিকে তাকিয়ে বললো।
” তুই কি লেনার সাথে বিজি আছোছ?”
“হ্যাঁ তোকে পরে ফোন দিচ্ছি।”
কথাটা বলেই আরশ ফোনটা কেটে দিলো। এদিকে আরিবা রেগে ফেটে যাচ্ছে। শাহীন ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মেনু কার্ডটা এগিয়ে দিয়ে বললো।
“নেও তোমরা অর্ডার করো!”
ওরা সবাই ইচ্ছা মতো অর্ডার করলো। শাহীন চুপচাপ বসে আছে। শান্তা আহত দৃষ্টিতে শাহীনের দিকে তাকালো। শাহীন চোখের ইশারায় বোঝালো ওর কাছে টাকা আছে। সবাই মিলে খুব খাওয়া দাওয়া করলো। খাওয়া শেষে শাহীন আর শান্তার থেকে বিদায় নিয়ে আরিবা, শাওন আর তূর্য বেড়িয়ে আসলো। শান্তা আর শাহীন নিজেদের মতো করে গল্প করতে লাগলো। শাওন আর তূর্য এক সাাথে গেলো। আর আরিবা রেগে অন্য দিকে গেলো।
————————————
হাসপাতালে লাঞ্চ শেষে রোগী দেখা শুরু করেছে আরশ। লেনা সব ঠিকঠাক করে রাখছে। একেক করে রোগী ভিতরে পাঠাচ্ছে। আরিবা একটা বোরখা পড়ে লাইনে দাড়িয়েছে। আরশ লেনার সাথে কি করছে সেটাই দেখতে এসেছে। আরিবা বিরক্ত নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সরকারি হাসপাতালে এই একেই সমস্যা, লাইনে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যাথা করে। তার উপর মানুষের কোলাহল তো আছেই। হাসপাতালে গেলেই দেখা যায় হাজার রকমের মানুষ। কেউ ব্যাথায় কাতরাচ্ছে আবার কেউ রোগীর সেবা করছে আবার কেউকেউ স্বজন হারানোর কষ্টে কাঁদছে। স্বজন হারানোর কষ্ট অনেক বেশি যে হারায় সেই বোঝে ব্যাথা কি?
অনেক সাধনার পরে আরিবা লাইনের প্রথমে এসেছে। আস্তে করে ভিতরে গেলো। আরশ টেবিলের উপর একটা ফাইল দেখতে দেখতে বললো “বসুন।” আরিবা বসে পড়লো। আরশ ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকিয়ে বললো।
“বলুন আপনার সমস্যা কি?”
আরিবা কি বলবে ভেবেই পাচ্ছেনা ওতো লেনাকে দেখতে এসেছিলো। ওকে চুপ থাকতে দেখে আরশ আবারও বললো।
“আমার কথা কি আপনি বুঝতে পারেননি?আপনার কি সমস্যা বলুন! নাহলে আমি বুঝবো কিভাবে?”
আরিবা তাড়াহুড়ো করে বলে দিলো।
“আমার খুব মাথা ব্যাথা করে। সময় আসময়ে খুব মাথা ব্যাথা হয়। আমি সহ্য করতে পারিনা অনেক ব্যাথা ক..”
আরিবা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই আরশ ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো।
“আপনি ভুল করছেন। আমি হার্ট সার্জন। আমি নিউরোলজিস্ট না। আপনি ঠিক ডক্টরের কাছে যান!”
আরিবা চুপ হয়ে গেলো। আরশ হার্ট সার্জন ও জানে তাড়াহুড়োতে ভুলে কি না কি বলে ফেলছে। নিজের বোকামীর জন্য নিজেকে গালাগাল করতে লাগলো। আরিবাকে চুপ হয়ে ভাবতে দেখে আরশ মুচকি হেসে আরিবার দিকে তাকালো। হাতে কলম ঘোরাতে ঘোরাতে মনে মনে বললো।
“কি ভেবেছো মায়াপরী আমি তোমায় চিনবো না? তোমার চোখ দেখেই চিনে ফেলেছি। তবুও কনফিউজ ছিলাম। কিন্তু কথা শুনে একদম শিওর হয়ে গেলাম। আমি জানতাম তুমি আসবে তাইতো শাহীনকে সাউন্ড বাড়াতে বলছিলাম। এবার বুঝবা মঝা!”
আরশ লেনাকে ডাকলো। লেনা ভিতরে এসেই ঢং করে বললো।
“বলুন স্যার! Any problem?
” ইয়েস! এসব পাগল টাগল ভিতরে পাঠাও কেনো? মাথা ব্যাথা দেখাতে এসেছে আমার কাছে।”
“কি বলেন স্যার? আমি পরের বার থেকে চেইক করে পাঠাবো।”
আরশ মুচকি হেসে বললো।
“কিছু বলার আগেই তুমি আমার কথা বুঝে যাও। এজন্যই তো তোমায় এত ভালো লাগে।”
আরশের কথা শুনে লেনা লজ্জা রাঙা হাসি দিলো। আরিবার মেজাজ খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেঁপে বসে রইলো। আরশের দিকে তাকিয়ে রেগে মনে মনে বললো। “এখানে ওর সাথে প্রম করতেই আসো তাইনা? আজ তোমার প্রেম করা ছুটাবো আমি। এই লেনার দাঁত কেলানো বের করছি আমি।”
“আপনি উঠুন সঠিক ডক্টরের কাছে যান!”
লেনার কথায় আরিবার ধ্যান ভাঙ্গলো। রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠলো। আরশ একবার আরিবার দিকে তাকালো। অগত্যা চোখ ফিরিয়ে লেনার দিকে তাকিয়ে বললো।
“ওনাকে দিয়ে আসো আজ আর রোগী দেখবো না তুমি আর আমি বাইরে যাবো ওকে?”
লেনা অবাক হয়ে গেলো। যে ওর সাথে ঠিক মতো কথা বলেনা সে ওকে নিয়ে বাইরে যাবে? এটাতো মেঘ না চাইতেও বৃষ্টি। আরিবা চোখ লাল করে দাঁতে দাঁত চেঁপে সব সহ্য করছে। লেনা ওকে নিয়ে সামনে হাটতেই আরিবা লেনাকে ল্যাং মেরে ফেলে ঠাস ঠাস শব্দ করে চলে গেলো। আরশ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শরীর কাঁপিয়ে উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। লেনা আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবলো। ও পড়ে গেছে আর আরশ এত হাসছে কেনো? লেনা মুখ ভার করে চলে গেলো। আরশ খুব খুশি। হাত দিয়ে কলম ঘোরাতে ঘোরাতে ভাবলো ওর মায়াপরী ওকে ভালোবাসে এটা ও বুঝে গেছে। ওর মনের কথা বলার সময় হয়ে গেছে। এসব ভেবেই আরশ মুচকি হাসলো।
——————————
রোদের মধ্যে রাস্তায় একা একা হাটছে আরিবা। ওর মেজাজ খুব গরম হয়ে আছে। রোদের তাপে আরও গরম হয়ে যাচ্ছে। জোরে জোরে রাগ নিয়ে হাটছে আর আরশকে বকছে।
“শালা খবিশ তোকে আমি দেখে নিবো। প্রেম করা ছুটাবো তোর! তোকে পিছ পিছ করে কেটে নদীতে ভাসাবো। শালা উগান্ডার শয়তান। কি আছে ওই লেনার মাঝে। আমি কি ওর থেকে কম সুন্দ…”
কথাটা বলতে বলতে থেমে গেলো আরিবা। মনে মনে ভাবলো আরশ প্রেম করলে ওর কি? ও এমন ক্ষেপেছে কেনো? তাহলে কি ও আরশকে ভালোবাসে..? নাহ কখনই না। এসব ভাবছে। হঠাৎ সামনে তাকাতেই দেখলো একটা গাড়ি আসছে ওর দিকেই। ও রোডের সাইডে সরে গেলো। তবুও গাড়িটা একদম ওর কাছাকাছি চলে আসছে। এত তাড়াতাড়ি হয়েছে যে আরিবা কিছুই বুঁজে উঠতে পারলো না। ও ভয়ে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে রইলো। আজ হয়তো ও এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে। হয়তো কাউকে দেখা হবেনা। ওর মা বাবার আর আরশের কথা খুব মনে পড়ছে।
💝
ইনশাআল্লাহ চলবে…
(রি চেইক করিনি ভুলত্রুটি মাফ করবেন। এতদিন অনেক বিজি ছিলাম তাই গল্প দিতে পারিনি। সরি গাইস্। সবাই বেশি বেশি লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন)