#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৪৭
💝
অনেক আগেই জিসানের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আরশ আরিবা জিসানের সাথে ওদের বাড়ি গিয়েছে। শান্তার মা বাবা বকবে বলে শাহীন ওকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে গেছে। শান্তাকে পৌঁছে দিয়ে শাহীন নিজের বাড়ি চলে গেছে।জিসানদের বাড়ির সবাই জিসানকে আর তৃনাকে এক সাথে বসিয়ে মিষ্টি মুখ করাচ্ছে। জিসান খুব ভয়ে আছে আরশ বলছে আজ ওর বাসর হবেনা ১০০%। আরশ যখন বলেছে তো ও করেই ছাড়বে। কিন্তু কিভাবে করবে সেটাই ভাবছে ও। আরিবা একা এক কোনায় বসে আছে। কাউকেই চিনেনা ও, এজন্যই আসতে চায়নি। কিন্তু ওই যে আরশ! ওর জন্য আসতেই হলো। এসেই আরশ ওকে রেখে চলে গেছে আড্ডায়। আরিবা বিরক্তি নিয়ে আরশের দিকে তাকালো। দেখলো আরশ অন্যান্য মেয়েদের সাথে হাসাহাসি করছে। আরিবা দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো। “দেখো নিজে কি সুন্দর দাঁত কেলাচ্ছে। আর আমি যে এখানে একা বসে আছি সে খেয়াল আছে তার? এনেই চলে গেছে মেয়েদের মধ্যে। শালা আস্ত লুচির পরোটা।”
“হাই মিস!”
আরিবা বিড়বিড় করে আরশের গুষ্টি উদ্ধার করছিলো। হঠাৎ কারো কথা শুনে পাশে তাকালো। দেখলো ২৪-২৫ বছরের একটি ছেলে দাঁত বের করে দাড়িয়ে আছে। আরিবা আরও বিরক্ত হলো। বিড়বিড় করে অন্য দিকে ঘুরে গেলো। ছেলেটি ওর পাশে সোফায় বসে পড়লো। আরিবা অবাক হয়ে ছেলেটির দিকে তাকালো। ছেলেটি মুচকি হেসে বললো।
“আপনি বোধহয় একা একা বোরিং ফিল করছেন? অনেকক্ষন ধরে আমি খেয়াল করেছি এটা। তাই চলে এলাম আড্ডা দিতে।”
আরিবা বিরক্তি নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো। ” কেনো রে? তোকে বলছি আমি বোরিং হচ্ছি তুই এসে সঙ্গ দে? শালা লেছ কাটা কুমির। সেধে সেধে চলে আসে বিরক্ত!” ছলেটি আরিবার কথা শুনতে পেলোনা। অগত্যা প্রশ্ন করলো।
“কিছু বলনেন আমাকে? একটু জোরে বলুন?”
আরিবা জোর পূর্বক হেসে বললো।
“নাহ ভাইয়া আপনাকে কিছুই বলিনি!”
“ওহ! আপনি কোন পক্ষের লোক?”
“আমি ছেলে পক্ষের। মানে জিসান ভাইয়ার ক্লোজ ফ্রেন্ডের চাচাতো বোন।”
“তাই নাকি? আমি জিসানের খালাতো ভাই। তারেক হক!”
আরিবার কথা বলতে ইচ্ছা করছেনা। তাও মুখে হাসি নিয়ে ছোট্ট করে বললো।
“ওহ!”
“আপনার নাম কি মিস? বললেন না তো?”
“জান্নাতুল ফেরদৌস আরিবা! ডাক নাম আরিবা, সবাই ভালোবেসে রিবা বলেই ডাকে!”
তারেক মুচকি হেসে বললো।
“বাহ! অনেক সুন্দর নাম তো! আমি তোমাকে তাহলে জান্নাত বলে ডাকবো। তোমার সমস্যা হবে নাতো?”
আরিবা জোরপূর্বক হেসে দিলো। দাঁতে দাঁত চেঁপে মনে মনে বললো। “তোর সাথে আমার আর দেখা হলে তো তুই ডাকবি। আগে জানতাম তুই লেছ কাটা কুমির এখন তো দেখি লেছ ছাড়া ছেছড়া বান্দর।”
“কি ব্যাপার? কথা বলছেন না কেনো?”
আরিবা ঠোঁট দুটো প্রশারিত করে বললো।
“এমনি ভাইয়া ইচ্ছে করছেনা।”
আরশ অন্যান্য মেয়েদের সাথে কথা শেষে আরিবার দিকে তাকাতেই দেখলো ও তারেকের সাথেই কথা বলছে। আরশ তারেককে খুব ভালো করেই চিনে। তারেক শুধু মেয়েবাজ ছেলে। আজ একটা তো কাল একটা মেয়ে নিয়ে ঘোরে। ড্রেস চেঞ্জ করার মতো করে গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করে। আরিবাকে তারেকের সাথে হেসে হেস কথা বলতে দেখেই ওর মাথা গরম হয়ে গেলো। হাত মুঠ করে আরিবার কাছে গেলো। আরিবা আরশেকে আসতে দেখেই বড় সরো একটা ঢোক গিললো। আরশ আরিবার কাছে এসেই চোখ গরম করে বললো।
“এখানে কি করছিছ? চল জিসানকে আর তৃনাকে শরবত খাওয়াতে হবে।”
কথাটা বলেই আরশ তারেকের দিকে তাকালো। পিঠে জোরে একটা চাপর মেরে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।
“সব মেয়ের দিকে নজর দেও ভালো কথা, ভুলেও রিবার দিকে চোখ দিওনা তাহলে চোখটাই থাকবেনা।”
আরশের ঠান্ডা গলায় দেওয়া হুমকিতে তারেকে ভয় পেলো। একটা ঢোক গিলে চুপচাপ চলে গেলো। আরশ জিসানদের কিচেনে গেলো। একটু পর একটা গ্রাস ভর্তি শরবত এনে আরিবার হাতে দিয়ে বললো।
“যাহ! জিসান আর তৃনাকে খাওয়ায়ে আয়!”
আরিবা খুব আনিজি ফিল করলো। তবুও সবার সামনে গিয়ে মুকি হসে গ্রাসটা জিসানের দিকে এগিয়ে দিলো। জিসান একটু খেয়ে আবার তৃনাকে খেতে দিলো। তৃনা পুরোটা খেয়ে নিলো। এটা দেখে আরশ রহস্যময় হাসি দিলো। আরিবা আস্তে করে এসে আরশের পাশে দাড়ালো। আরশ আরিবার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো।
“ওই তারেকের সাথে হেসে এত কি কথা বলছিলি?”
আরশের তাকানো দেখে আরিবা ভয় পেয়ে গেলো। ভয়ে আমতা আমতা করে বললো।
“কিছুনা ভাইয়া!”
“কিছু না বলতে এত সময় লাগে? আমাকে তোর মতে বলদ মনে হয়? তুই কাকে বোকা বানাচ্ছিস্ বলতো?”
আরিবা চুপ করে রইলো। আরশ ধমক দিয়ে বললো।
“ফারদার যদি কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দেখি তাহলে তোর খবর আছে। আমি ছাড়া সব ছেলের সাথে কথা বলা তোর জন্য হারাম।”
“আব্বু আর কাকার সাথেও বলবো না?
” চুপ! থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিবো ফাজিল। ফাজলামোর জায়গা পাছ না? আমার সাথে ফাজলামি করোছ? ফাজলামি কমানোর ঔষধ আমার কাছে আছে। দিবো নাকি?”
আরশের ধমকে আরিবা চুপ মেরে গেলো। মাথা নিচু করে চলে গেলো। রেগে বিড়বিড় করে বললো। “শালা শয়তানের বড় ভাই! তুই সব মেয়েদের সাথে ঢলাঢলি করতে পারবি আর আমি কথা বললেই দোষ। নিজের টা ষোলো আনা আর আমারটা এক আনাও না।
সবাই তৃনাকে ফুল সাজানো বিছানায় নিয়ে গেলো। তৃনা বিসানায় বসে ঢুলছে। ওর খুব ঘুম আসছে। খুব কষ্ট করে চোখ খোলা রেখেছে ও। আরশ জিসানকে বাসর ঘরে দিয়ে আসতে গেছে। জিসান সিড়ি বেয়ে উঠছে আর ঢুলে ঢুলে আরশকে বলছে।
“মামা আমার এত ঘুম পাচ্ছে কেনো?”
“তোমাকে ঘুমের ঔষধ খাওয়েছি তাই!”
জিসান অবাক চোখে আরশের দিকে তাকালো। আকাশসম বিষ্ময় নিয়ে বললো।
“কখন খাওয়ালি?”
“মনে আছে রিবা শরবত দিয়েছিলো? তাতেই ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দিয়েছি।”
জিসান হতাশ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো। আরশ ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললো।
“আমাদের রেখে বিয়ে করার শাস্তি।”
হঠাৎ জিসানের ফোনে কল এলো। জিসান ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে শাহীন উচ্চ স্বরে হেসে বললো।
“কি মামা! কি খবর তোমার?”
জিসান রেগে বললো।
“ধূর শালা! তোরা বন্ধু নামের শত্রু!”
ওর কথায় শাহীন আরও হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বললো।
“গুড নাইট দোস্ত! নাহ সরি, গুড বাসর রাত মামা!”
কথাটা বলেই হাসতে হাসতে ফোনটা কেটে দিলো শাহীন। আরশ জিসানকে ভিতরে পাঠিয়ে নিচে নেমে এলো। আরিবার কাছে এসে ওকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। জিসান ভিতরে গিয়ে দরজা অফ করে বিছানার দিকে তাকাতেই দেখলো তৃনা ঘুমিয়ে গেছে। তৃনাকে খুব সুন্দর লাগছে। জিসান ঘুমঘুম চোখে তৃনাকে দেখতে লাগলো। নিজেরও খুব খুম পাচ্ছে। তৃনাকে দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে পড়ছে ও নিজেও টের পায়নি। ড্রেস চেঞ্জ না করেই ঘুমিয়ে পড়লো। ফুলে ঘেরা বিছানায় দুটি কাপল মহা সুখে ঘুমিয়ে আছে।
———————————
রাত প্রায় ১২ টা। চারদিক নিস্তব্ধ। চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে আরশ। আরিবা জানালা খুলে বাইরের দিকে তাকালো। জানালায় হাতে ভর দিয়ে রাতের পরিবেশ দেখছে আরিবা। চারদিকে এমন নিস্তব্ধ দেখে গা ছমছম করে উঠলো আরিবার। ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে। ভালোই শীত পড়ছে। গাড়ি চলানোর ফলে খুব বাতাস বইছে। আরশ গাড়ির জানালা বন্ধ করে দিলো। আরিবা আরশের দিকে তাকিয়ে বললো।
“ভাইয়া আমার খুব ভয় লাগছে!”
আরশ গাড়ি চালাতে চালাতে প্রশ্ন করলো “কেনো?”
আরিবা আরশের দিকে একটু এগিয়ে বসলো। ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো।
“ভাইয়া দেখছো চারদিক কত নিরব। রাস্তা নিরাপদ নয়। আমার কেমন কেমন যেনো লাগছে।”
“কেমন লাগছে হুম? বিজ্ঞানের স্টুডেন্ট হয়েও ভুতে বিশ্বাস করোছ? তোর তো কচু গাছের লতির সাথে ফাঁসি দেওয়া উচিত।”
রাগি গলায় কথাটা বললো আরশ। আরিবা ভয়ে আমতা আমতা করে বললো।
“ভাইয়া আমি ভুতে বিশ্বাস করিনা। আমরা একা যদি কোনো ডাকাতে ধরে? তখন কি করবো?”
এবার আরশও ভয় পেলো। একা থাকলে ভয় পেতো না। সাথে আরিবা বলে ভয় পাচ্ছে। ডাকাতরা সুন্দরী মেয়ে দেখলে তুলে নিয়ে যায়। ওর মায়াপরীর যদি কিছু হয়? এই ভয়েই ওর গলা শুকিয়ে আসছে। নানা রকম ভাবনা ভাবছে আরশ। হঠাৎ করেই গাড়ির সামনে ৬ জন লোক দেখতে পেলো ওরা। আরশ গাড়ি থামিয়ে দিলো। আরিবা ভয়ে আরশকে জড়িয়ে ধরলো। আরশও আরিবাকে জোরে ধরলো। আরিবা ভয়ে কেঁদে দিলো। আরশ ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো।
“রিবা ভয় পাইছ না। আমি তো আছি আমার উপর ভরসা রাখ। আমি মরে গেলেও তোর কিছু হতে দিবো না।”
আরিবা কান্না ভেজা চোখে ওর দিকে তাকালো। আরশ ভাবছে ওকে তো সান্ত্বনা দিলো। কিন্তু এবার কি হবে? বাড়ি কি যাওয়া হবে? আরশ কি করবে? ওকি পারবে ওর মায়াপরীকে বাঁচাতে?
💖
ইনশাআল্লাহ চলবে…..