অজানা পর্ব-৪৯

0
805

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৪৯

💝

মিসেস আঞ্জুমান টিভিটা অফ করে আরিবার কাছে আসলো। আরিবা ভয়ে এখনও কাপছে। মিসেস আঞ্জুমান ওকে জড়িয়ে ধরলেন। মিসেস তারিন দৌড়ে ডাইনিং টেবিল থেকে আরিবাকে পানি এনে দিলো। আরিবা পানি খেয়ে চুপ করে বসে আছে। মিসেস তারিন আরিবার পাশে বসলেন। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।

“কিরে? আজ এত ভয় পেলি কেনো?”

আরিবা কাঁপা কাঁপা গলায় থেমে থেমে বললো।

“টিভিতে যে ছয়জনের নৃশংস ভাবে মৃত দেহ দেখাচ্ছে এরা কাল রাতে আমাদের আক্রমন করেছিলো।”

ওর কথা শুনে মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন আবাক হয়ে গেল। মিসেস তারিন আতকে ওঠে বললেন।

“কি বলিস? তারপর কি হলো?

“লোকগুলো আমাকে অনেক বিশ্রী বিশ্রী কথা বলছিলো।”

মিসেস আঞ্জুমান অবাক হয়ে বললেন।

“তোরা ওদের থেকে বাঁচলি কিভাবে?”

আরিবা ঠোঁট দিয়ে জিহ্বা টা ভিজিয়ে আস্তে করে বললো।

“আরশ ভাইয়ার কাছে গান আছে। ওই গান দিয়ে সে একজনকে শুট করে দিয়েছিলো। ওই লোককে শুট করার পর বাকিরা সবাই ভয়ে পালিয়ে গেছে।”

মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন অতটা অবাক হলেন না। তারা একটু হলেও আরশকে চিনে। আরিবাকে খারাপ কথা বলেছে এটা ও কখনই সহ্য করতে পারবেনা। ওদের খুন তো করতেই পারে। তবুও মিসেস তারিন আরিবাকে আশ্বস্ত করে বললেন।

“এগুলো দেখে এত ভয় পাওয়ার কি আছে। এগুলো স্বাভাবিক। ”

আরিবা শক্ত হয়ে বললো।

“নাহ কাকিমনি আমার মনে হচ্ছে ওদের কে আরশ ভাইয়াই এসব করেছে। নাহলে আজেই ওরা মরবে কেনো? আর আরশ ভাইয়া গান দিয়েই কি করে? সে আবার গুন্ডা টাইপ লোক নাতো কাকিমনি?”

মিসেস তারিন হালকা ঢোক গিলে মিসেস আঞ্জুমানের দিকে তাকালেন। তাকে চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলেন। অগত্যা আমতা আমতা করে মুচকি হেসে আরিবাকে বললেন।

“আরে নাহ! আরশ এসব করতেই পারেনা। তুইতো জানোস্ তোর কাকা বাবা কত বড় বিজনেসম্যান। কত শত্রু তাদের তাই ওই কাছে গান রাখতে হয় নিজের সেফটির জন্য।”

মিসেস তারিনের কথা আরিবা বিশ্বাস করতে পারলো না। তার দিকে তাকিয়ে বললো।

“আমি আরশ ভাইয়াকে জিজ্ঞাসা করবো তোমরা চিন্তা করো না। আমি এর সব জেনেই ছাড়বো!”

আরিবার কথায় মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন ভয় পেয়ে গেলেন। যদি আরিবা আরশের বিষয়ে জেনে যায়? আরিবাকে আটকে বললেন।

“থাক না রিবা! এসব নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করে কি হবে? দেখা যাবে আরশ তোর উপর আবার রেগে যাবে।”

আরিবা কিছুই বললো না। সোফা থেকে উঠে দোতলার দিকে পা বাড়ালো। মিসের তারিন মিসেস আঞ্জুমানের দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকালেন।

আরিবা তাড়াহুড়ো করে আরশের রুমে প্রবেশ করলো। দেখলো আরশ এখনও ঘুমাচ্ছে। আরিবা আরশকে ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু আরশ উঠলোই না। আরিবা ওকে জোর করে শোয়া থেকে উঠালো। আরশ উঠেই ঘুম ঘুম চোখে বললো।

“তুই কি আজ প্রতিজ্ঞা করছোছ যে আমাকে ঘুমাতেই দিবিনা? সমস্যা কি তোর? এমন করছোছ কেনো?”

আরিবা আরশের দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বললো।

“সমস্যা আমার না, সমস্যাটা তোমার। তুমি একটা গুন্ডা। নাহয় গান দিয়ে তুমি কি করো হুম?”

আরিবার কথা শুনে আরশের ঘুম উধাও হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলো আরিবা কি সব যেনে গেলো? আরশ ভয় পেলেও সেটা প্রকাশ না করে ধমক দিয়ে বললো।

“সকাল বেলা কি সব বলছিস? কানের নিচে দিবো নাকি একটা? সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করে দেছ!”

কথাটা বলেই আরশ খাট থেকে উঠে গেলো। পালিয়ে যাওয়ার মতো করে ওয়াশরুমে ঢুকতে গেলো। আরিবা ওকে জোর করে খাটে এনে বসালো। আরশ খাটে বসে আরিবা যেখান ধরছে সেখানে ময়লা ঝাড়ার মতো করে বললো।

“এই তুই আমাকে ধরছোছ তুই হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধুইছোছ? যাহ সর এখান থেকে।”

আরশের কথা শুনে আরিবা রেগে গেলো। রাগটা কন্ট্রোল করে বললো।

“তোমাকে যা জিজ্ঞাসা করছি সেটা বলো?”

“কি জিজ্ঞাসা করছেন আপনি বলেন জনাবা? আমি যথারীতি সম্মানের সহিত উওর দিবো।”

আরিবা দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।

“তোমার কাছে গান কি করে এলো?”

“দেখ তোকে আগেও বলছি গান আমি আমার সেফটির জন্য রেখেছি। তোর বিশ্বাস করার হলে কর, না করলে নাই। আমি তোকে জোর করে বিশ্বাস করাবোও না।”

“তুমি গুন্ডা না হলে ওই ছেলেগুলোকে কে মেরেছে বলো?”

“কোন ছেলেগুলো?”

আরশ ভ্রু কুচকে এমন ভাবে জিজ্ঞাসা করলো যেনো ও আকাশ থেকে পড়ছে এটা শুনে। এ ব্যাপারে ও কিছুই জানেনা। আরিবা জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বললো।

“যারা কাল আমাদের আক্রমন করেছিলো। আমায় বাজে কথা আলেছিলো। ওদেরকে কাল রাতেই কেউ নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে। কারো জিহ্বা কেটে দেওয়া হয়েছে কারো চোখ উপরে ফেলা হয়েছে।”

আরশ আঁতকে উঠার ভান করে বললো।

“কি বলছিস্ এসব? দেখ আমি এসব করিনি। তুই তো আমায় ছোট থেকেই চিনোছ! এসব কাজ আমি করতেই পারিনা। তোর কেনো মনে হলো আমি এসব করেছি?”

আরিবা ভাবলেশহীন ভাবে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বললো।

“জিহাদ কেও খুন করতে চেয়েছিলো৷ কিন্তু আধমরা করে রেখে দিয়েছে। নেত্রাকে কেউ খুন করেছে। আমায় কেউ খুন করতে চাইছে। আজ আবার ওই ছেলেগুলোকে। আমি বুঝতে পারছিনা এসব কে করছে। আমার এসবের উওর বের করতে হবে।”

আরিবার কথা শুনে আরশ ভয় পেয়ে গেলো। আরিবাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো।

“দেখ রিবা! যা হওয়ার তা হবেই ওসব কথা চিন্তা করে তোর মাথা খারাপ করিস্ না। সামনে তোর এক্সাম আছে। পড়তে হবে তো তোকে বল? আমি যা বলার বলছি বিশ্বাস করার দায়িত্ব তোর উপর।”

“তাহলে তুমিয়েই বলো ভাইয়া! এসব কে করেছে? কার কাজ হতে পারে?”

“সন্দেহ করে কিছু বলা ঠিক না। সন্দেহ সবসময় সত্যি হয়না। মিথ্যাও হতে পারে, তখন গুনাহগার হতে হয় বুঝলি?”

“হুম” আরিবা ছোট করে উওর দিলো। আরশ ওর কাধে হাত রেখে বললো।

“রুমে গিয়ে পড়তে বস। এসব চিন্তা বাদ দে দেখবি তোর নিজের কাছেই ভালো লাগছে। চিন্তা শুধুই মাথা নষ্ট করে।”

কথাটা বলেই আরশ ওয়াশ রুমে চলে গেলো। শাওয়ারটা অন করে ভাবলো। কিভাবে কাল রাতে ওদের মেরেছে। ওর মায়াপরীকে নিয়ে বাজে কথা বলা ছুটিয়ে দিয়েছে ও।
আরিবা চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেলো।

———————————-

বিকাল বেলা। আরিবা মন ভালো করতে খুব সুন্দর করে সেজেছে। ছাদে উঠছে ছবি তোলার জন্য। নিজে নিজেই সুন্দর করে সেলফি তুলছে। আরশ কোনো কাজে ছাদে আসতেই থমকে গেলো ও। আরিবাকে খুব সুন্দর লাগছে।মায়াপরীকে ও মুগ্ধ হয়ে দেখছে। আরিবা লাল রংয়ের একটি লং ড্রেস পরেছে। ফর্সা চেহারার সাথে ড্রেসটা খুব মানিয়েছে। আরিবা একমনে ছবি তুলছে আরশ যে ওকে দেখছে সেটা ও খেয়াল করেনি। আরিবা ছবি তুলে পিছনে ঘুরতেই দেখলো আরশ ওর দিকে এক দৃষ্টিতে দেখছে। ও খুব অস্বস্তি ফিল করতে লাগলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে হালকা কাশি দিলো। ওর কাশির শব্দে আরশের ধ্যান ভাঙ্গলো। আরশ আরিবার কছে গিয়ে ধমক দিয়ে বললো।

“এগুলো কি সেজেছিস্? একদম পেত্নীর মতো লাগছে। মনে হয় বটগাছ থেকে আসা কোনো পেত্নী।”

আরিবার মনটা একটু ভালো হয়েছিলো কিন্তু আরশের কথা শুনে তা আবার খারাপ হয়ে গেলো। আরিবা রেগে বললো।

“আমাকে পেত্নীর মতো লাগলে তোমার কি? আমি যেমন হই তাতেই আমি খুশি। তোমার ভালো খারাপে আমার কোনোই আসে যায় না। তোমার মায়াপরী সুন্দর হলেই চলবে।”

আরশ আরিবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।

“তুই পেত্নী মতো হলে আমার আসে যায়! মানুষ আমাকে কত কথা বলবে সেটা ভেবেই খারাপ লাগছে।”

“আমি অসুন্দর হলে মানুষ তোমায় কথা শুনাবে কেনো?”

আরিবা ভ্রু কুচকে চোখ ছোট ছোট করে কথাটা বললো।আরশ ওকে ধমক দিয়ে বললো।

“ছোটদের এত কথা বুঝতে হয়না বুঝলি? ছোট ছোটোর মতো থাক! এত প্রশ্ন করিশ কেনো?”

আরিবা অবাক হয়ে বললো।

“আমি মোটেও ছোট নই। আঠারো বছরের নিচে সবাই শিশু। কিন্তু আমার বয়স আঠারো পেরিয়ে গেছে। সো আমি বড় বুঝেছো?”

“এহ আসছে। পুটি মাছের মতো ছোট একটু খানি। সে আবার নিজেকে বড় দাবি করে।”

আরিবা রাগি চোখে তাকালো কিছু বললো না। ও জানে কথায় পারবে না। তাই চুপচাপ ছাদ থেকে নেমে যেতে উদ্যত হলো। আরশ পিছন থেকে চিল্লিয়ে বললো।

“শোন আমার মায়াপরী কিন্তু সত্যি অনেক সুন্দর। ”

আরিবা কিছুই বললো না কথাটা শুনে পিছনে ফিরে একটা ভেংচি মেরে চলে গেলো। আরশ মুচকি হসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো।

“সত্যি আমার মায়াপরী খুব সুন্দর।

——————————-

সকাল বেলা আরিবা কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য বের হতে যাবে তার আগেই দেখলো নিদ্রর মা বাবা ওদের সোফায় বসে আছে। ওর মা বাবা, কাকা কাকিমনি, আরশ ও আছে। আরিবা তাদের দেখে সালাম দিয়ে বললো।

” আরে আংকেল আন্টি! কেমন আছেন আপনারা?

নিদ্রর মা মুচকি হেসে বললো।

“আমরা ভালো আছি। তুমি কেমন আছো মা?

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজ কিন্তু আপনারা থেকে যাবেন। আপনারা আসছেন আমার অনেক ভালো লাগছে।”

নিদ্রর বাবা হেসে বললেন।

“তোমাকে অনেক দেখতে ইচ্ছা করছে তাই চলে এসেছি।”

“ভালোই করেছেন আংকেল। ”

আরিবা তাদের সাথে কথা বলছে আর আরশ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। ও ভাবছে এত সকালে তারা কেনো আসছে? আরিবার কোচিংয়ের সময় হয়ে গেছে তাই তাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আরিবা যেতেই নিদ্রর বাবা সবার দিকে তাকিয়ে বললেন।

“আপনাদের সাথে আমার জরুরি কথা আছে। দয়া করে কিছু মনে করবেন না।”

আরশ ভ্রু কুচকে তাকালো। নিদ্রর মা মুচকি হেসে বললো।

“একটা জিনিস চাইতে আসছি প্লিজ না করবেন না।”

মি. জাকির মুচকি হেসে বললেন।

“আপনারা চাইবেন আর আমরা দিবো না এটা হতে পারে বলুন? সংকোচ না করে বলে ফেলুন।”

নিদ্রর বাবা এমন একটা কথা বললো যা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেলো।

💖

ইনশাআল্লাহ চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here