#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৫০
💖
“রিবা মাকে নিদ্রর বউ করে নিতে চাই!”
কথাটা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেলো। বড় বড় চোখ করে নিদ্রর বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে সবাই। আরশ কিছু বলছে না রেগে লাল হয়ে আছে। নিদ্রর মা সবার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো।
“কি ব্যাপার? আপনারা এত অবাক হলেন কেনো? নিদ্র নতুন বিজনেস শুরু করেছে। ইঞ্জিনিয়ার, ভালো ছেলে। রিবাকে আমরা মেয়ের মতোই দেখবো।”
আরিবাদের বাড়ির সবাই নিঃশ্চুপ হয়ে একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে। নিদ্রর বাবা মুচকি হেসে বললো।
“আসলে নেত্রা চলে যাওয়াতে আমাদের খুব একা একা লাগে। রিবা মা থাকলে ভালো হতো।”
আরশ এখন আরও রেগে আছে। হাত মুঠ করে চুপচাপ বসে আছে। সবাই আরশের দিকে তাকালো। মি. জাকির আরশের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো।
“দেখুন রিবা মামনি এখনও ছোট। ওকে এত তাড়াতাড়ি ওকে আমি বিয়ে দিতে চাচ্ছি না। সরি ভাই মাফ করবেন।”
নিদ্রর মা মুচকি হেসে বললো।
“আমরা এখনেই নিতে চাচ্ছিনা। শুধু কথাবার্তা পাকা করে এনগেজমেন্টটা সেরে রাখতে চাই।”
আরিবার মা নিদ্রর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন।
“দেখুন আপা! আমরা এটাও চাচ্ছি না। আরিবা যখন চাইবে তখন এসব নিয়ে ভাববো। ও অনেক পড়তে চায় ওর পড়ালেখা টা শেষ হোক তারপর না হয় বিয়ে নিয়ে ভাববো।”
নিদ্রর বাবা গম্ভীরমুখে বলে উঠলেন।
“নিদ্রকে আপনাদের পছন্দ না? এজন্যই কি এত বাধা দিচ্ছেন? নিদ্রর কোন দিক দিয়ে কম আছে? দেখুন আপনাদের মেয়ে সুখেই থাকবে।”
সবাই চুপ হয়ে গেল। বলার মতো কোনো অপশন খুঁজে পেলো না। আরশ সবার দিকে একবার তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বললো।
“আরিবার বিয়ে ঠিক করা আছে। আপনারা চাইলেই ওর বিয়ে দিতে পারবে না তারা।”
নিদ্রর বাবা মা অবাক হয়ে তাকালো। বাকিরা হতাশ হয়ে বসে আছে। আরশ কাউকেই গ্রাহ্য করলো না। রাগি গলায় নিদ্রর৷ মা বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললো।
“আপনাদের যখন বারবার না করা হচ্ছিল তখন আপনাদের বোঝা উচিত ছিলো এরা বিয়ে দিতে চাচ্ছে না। তবুও আপনারা জোর করছিলেন। তাই আমি এটা বলতে বাধ্য হয়েছি।”
নিদ্রর বাবা মা অপমানিত বোধ করলো। মনে মনে ভাবলো আরিবা নেত্রার কতো ভালো বান্ধবী তাও আরিবা এই কথা নেত্রাকে বললো না? আরিবার প্রতি তাদের একটু খারাপ লাগা কাজ করলো। নিদ্রর বাবা আমতা আমতা করে বললো।
“দেখো বাবা আমরা তো এটা জানিনা। তারা তো এটা বলেনি। আপনারা আগেই বলে দিতেন তবে এমন হতো না।”
সামনে তাকিয়ে শেষের কথাটা বললেন তিনি। মি. জাকির হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন।
“দেখুন! আমরা এই কথাটা কাউকে জানাতে চাচ্ছিলাম না। রিবা মামনিও এই কথা জানেনা। ও জানলে খুব রেগে যাবে তাই কাউকেই জানাতে চাচ্ছিলাম না। সরি ভাই!”
নিদ্র বাবা কিছুই বললেন না। মলিন হেসে সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ালেন। জোর পূর্বক হেসে সম্মানের খাতিরে বললো।
“আচ্ছা ভাই আজ আমরা আসি তাহলে?”
“আরে কি বলেন? বসেন নাস্তা করে যান! না খেয়ে গেছেন শুনলে রিবা মামনি খুব রাগ করবে।”
আরিবার কথা শুনে তারা বসলেন আরশ তাদের থেকে বিদায় নিয়ে নিজের কাজের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন নিদ্রর বাবা মায়ের জন্য নাস্তা নিয়ে এলেন। যদিও তাদের খাওয়ার মন নাই। তবুও আরিবার জন্য খাচ্ছে। কত আশা নিয়ে এসেছিলো কিন্তু তা পূরন হলোনা তাই তারা কষ্ট পেয়েছে। আরিবাকে দিয়ে নেত্রার অভাব পূরন করতে চেয়েছিলো কিন্তু তা আর হলো না। আমরা যখন কোনো ইচ্ছা করি সেটা ভেঙে গেলে আমরা ভিতর থেকে দুমড়ে মুচড়ে যাই। তখন এই জগতের কিছুই ভালো লাগেনা আমাদের। আমরা একেবারে হতাশ হয়ে যাই। যারা দূর্বল হৃদয়ের তারা একেবারেই ভেঙে পড়েন।
নিদ্রর বাবা খাওয়া দাওয়া করতে ছিলো। হঠাৎ করেই মি. আফজাল বললেন।
“নিদ্র আসলে ভালো হতো। ওকে একা রেখে এলেন কেনো? ওকেও সাথে করে নিয়ে আসতেন!”
“নিদ্রর জরুরি কাজ আছে তাই আসতে পারেনি।”
মলিন হেসে কথাটা বললেন নিদ্রর মা। কেউ কিছুই বললেন না। খাওয়ায় মন দিলেন। খাওয়া দাওয়া করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন নিদ্রর মা বাবা। হতাশ চোখে তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো সবাই। মিসেস আঞ্জুমান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন।
“সত্যি তারা খুব কষ্টে আছে। মেয়েটাকে হারিয়ে একেবারে ভেঙে পড়েছে। রিবাকে দিয়ে নেত্রার জায়গা পূরন করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তা তো কখনই সম্ভব না।”
তার কথা শুনে সবাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
———————————
ক্লাস শেষে ক্লাসরুম থেকে বের হচ্ছে আরিবা আর ওর বন্ধুরা। কলেজ মানেই হাসি মজা আর আড্ডার মিলন স্থল। দৌড়া দৌড়ি হাসাহাসির এক অন্য জগৎ। যেখানে থাকে কলিজার বন্ধুরা। কলেজের করিডর দিয়ে হাটছে ওরা সবাই। আর এটা ওটা নিয়ে হাসাহাসি করছে। এক পর্যায় তূর্য হাসতে হাসতে শান্তাকে পিনিক মেরে বললো।
“কিরে তোদের প্রেম কেমন গতিতে চলছে? ট্রেন গতিতে নাকি বাইকের গতিতে? হুম?”
আরিবা ওর সাথে তাল মিলিয়ে শান্তার দিকে তাকিয়ে বললো।
“আরে ভাই ট্রেন গতিতেও চলছে না আবার বাইক গতিতেও চলছে না। ওর প্রেম চলছে রকেট গতিতে। তাইনা শান্তা?”
কথাটা বলেই আরিবা চোখটিপ মারলো। শান্তা লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে আছে। শাওন হঠাৎ করে আরিবার দিকে তাকিয়ে বললো।
“তোর প্রেম কোন গতিতে চলছে রে?”
ওর কথা শুনে আরিবার কাশি উঠে গেলো। শান্তা এবার সুযোগ পেয়েছে। ও আরিবাকে ঢেলা মেরে বললো।
“তোর প্রেম কি বিদ্যুৎ গতিতে চলছে? বল বল?”
আরিবা গলাটা হালকা ঝেড়ে আমতা আমতা করে বললো।
“আমি মোটেও প্রেম করি না। শুধু শুধু ফালতু বকিস না তো।”
“ওর প্রেম তো ঠেলাগাড়ির গতিতে চলে। কি বলিস তোরা? এই রিবা আমি ঠিক বলছি না?”
তূর্যর কথা শুনে আরিবা রাগি দৃষ্টিতে ওদের সবার দিকে তাকালো। ওরা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। কলেজের গেইট দিয়ে বের হতেই নিদ্র ওর সামনে পড়লো। হঠাৎ করে সামনে আসায় আরিবা ভয় পেলো। জোরে শ্বাস নিয়ে বুকে থু থু দিয়ে বললো।
“নিদ্র ভাইয়া আপনি এখানে? কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?”
“আমরাও ভালো আছি। অনেক দিন হলো কলেজে আসেন না। আজ হঠাৎ কি মনে আসলেন ভাইয়া?”
তূর্য মুচকি হেসে কথাটা বললো। ওর কথা শুনে নিদ্র মলিন হেসে বললো।
“আগে নেত্রাকে দিয়ে যেতে আসতাম আর এখন তো…”
কথাটা শেষ করতে পারলো না নিদ্র। তার আগেই কথাটা গলায় আটকে গেলো। সবার নেত্রার কথা মনে পড়লো। ওদের মনেও খারাপ লাগা কাজ করলো। সবাই নিশ্চুপ হয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর নিদ্র নিজেকে ঠিক করে আরিবাকে বললো।
“তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”
“কি কথা ভাইয়া? বলুন আমি শুনছি?”
মুচকি হেসে কথাটা বললো আরিবা। নিদ্র আমতা আমতা করে বললো।
“একটু পারসোনাল কথা। সবার মাঝে বলতে চাচ্ছি না। যদি একটু সাইডে আসতে তবে ভালো হতো।”
নিদ্রর কথা শুনে সবাই একটু অবাক হলো। পরক্ষনেই ভাবলো হয়তো নেত্রার বিষয়ে কথা বলবে। নেত্রাতো অনেক আগে থেকেই আরিবার বন্ধু। তাই শান্তা তূর্য আর শাওন আরিবাকে বিদায় দিয়েই চলে গেলো। ওরা যেতে নিদ্র আমতা আমতা করে বললো।
“তুমি তো জানো নেত্রার মৃত্যুতে আমরা কতটা কষ্ট পেয়েছি। মা বাবা এখনও ওর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তারা নেত্রাকে ভুলতে তোমায় আমার বউ করে নিতে চায়। আমি শুধু অনুরোধ করবো তুমি না করবে না প্লিজ! তাহলে তারা খুব কষ্ট পাবে। তোমার কাছে আমি হাত জোর করে অনুরোধ করছি।”
নিদ্র হাত জোর করে কথাটা বললো। আরিবার প্রথমে খুব অবাক হলো। পরক্ষনেই খুব খারাপ লাগলো ওর কথা শুনে। ও কি উওর দিবে সেটাই বুঝতে পারছে না। আমতা আমতা করে বললো।
“দেখুন ভাইয়া এই বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না। আব্বু যা বলবে তাই হবে। তার পছন্দ মানেই আমার পছন্দ। সরি আমায় মাফ করবেন ভাইয়া!”
আরিবার কথা শুনে নিদ্র হতাশ হলো। আরিবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
“তবুও একটু চেষ্টা করো প্লিজ!”
আরিবা চুপ করে আছে। নিদ্র মনে মনে বললো ” প্লিজ বিউটি ডল রাজি হয়ে যাও। খুব ভালোবাসি তোমায়! তুমি ছাড়া সব নিঃস্ব মনে হয়! প্লিজ রাজি হও!”
“ভাইয়া আমি যাই!”
আরিবা কথায় নিদ্রর ধ্যান ভাঙলো। নিদ্র আরিবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। আরিবা মলিন হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠলো। গাড়ি চলতেই ওকে ফলো করে পাশ থেকে একটি ট্রাক চলতে শুরু করলো। নিদ্র ওটা খেয়াল করেছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজ গন্তব্যে পা বাড়ালো।
ট্রাকের ড্রাইবার একজনকে ফোন করে বললো।
“স্যার মেয়েটি গাড়িতে উঠেছে।”
ওপাশ থেকে লোকটি শয়তানি হাসি দিয়ে বললো।
“একটু চলুক গাড়ি। জীবনতো শেষ হবেই। আরেকটু নিঃশ্বাস নিতে দে। একটু পরেই ধাক্কা মেরে গাড়ি সহ ওকে পরপারে পাঠিয়ে দিবি।”
“ওকে স্যার!”
কথাটা বলতেই ওপাশ থেকে লোকটি ফোন কেটে দিলো। শয়তানি হাসি দিয়ে সামনের লোকটিকে বললো।
“ভাই আজ কাজ হবেই। আমাদের জুনিয়ার বসকে না জানানোই ভালো। ও নিশ্চয়ই ওকে বাঁচায়। ”
সামনে থাকা লোকটি বললো।
“কখনোই নাহ! ও নিজে সুট করেছিলো। তাহলে ও বাচালো কি করে? এক সাথে দু জায়গায় কেউ থাকতে পারেনা। একটা হলেই হলো। ও মরলেই হয়!”
কথাটা বলে দুজনেই উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো।
ট্রাক ড্রাইবারটি আরিবার গাড়ি ফলো করতে করতে অনেক দূরে আসলো। এবার তাড়াতাড়ি আরিবার গাড়ির কাছে গিয়েই গাড়িটি ধাক্কা মেরে ট্রাকটা চলে গেলো। আরিবার গাড়ি ধাক্কা খেয়ে অনেক দূরে ছিটকে পড়লো। কাচ গুলো ভেঙে গুঁড়ো গুড়ো হয়ে গেলো। পাশ থেকে দৌড়া দৌড়ি করে লোক আসছে এটুকুই শুনতে পেয়েছে আরিবা আর কিছুই শুনেনি। ওর চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে। চোখ বন্ধ করে মৃত্যুর প্রহর গুনতে লাগলো। হঠাৎ করেই গাড়িটা ব্লাস্ট করলো। পুরো গাড়িতে আগুন ধরে গেলো।
আল্লাহ যখন মৃত্যু দেন তখন তা কেউ ফিরাতে পারেনা। যদি তিনি সহায় হতেন তবে আজও আরিবা বেঁচে যেতো।
💝
ইনশাআল্লাহ চলবে….
(অনেক ব্যস্ততার মাঝেও গল্প দিলাম কমেন্ট করতে ভুলবে না কেউ)