অজানা পর্ব-৫৭

0
805

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৫৭

💖

পরীক্ষা দিয়ে কিছুদিন রেস্ট করছে আরিবা। কিছুদিন বলতে এক সপ্তাহর মতো। এক সপ্তাহও পেতোনা শুধু ও অসুস্থ বলে আরশ ওকে এক সপ্তাহ টাইম দিয়েছে। এর পরেই শুরু হবে ওর আসল পড়া। কোচিং সেন্টার খোজা হচ্চে ওর জন্য। আরিবা আপাতত টেনশন মুক্ত। কিন্তু আরশের জ্বালা রয়েই গেছে। আরশ প্রতিদিন যাবার সময় ওকে এটা ওটা বলে বিরক্ত করে যায়। আবার এসে বিরক্ত করে। বিরক্ত বলতে ওকে পচানো। আরশের কাজেই এই একটা এটা সেটা বলে ওকে ছোট করা। আরশের হসপিটাল থেকে আসতে আরও এক ঘন্টা বাকি। তাই আরিবা শুয়ে শুয়ে পায়ে উপর পা তুলে মোবাইল টিপছে আর গুন গুন করে গান গাইছে।

আরশ আজ ১ঘন্টা আগেই চলে এসেছে। আরিবার রুমের সামনে দিয়ে যেতেই দেখতে পেলো আরিবা মোবাইল টিপছে আর গুন গুন করে গান গাইছে। আরশের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। ভেবেছিলো ফ্রেশ হয়ে এসে আরিবাকে জ্বালাবে কিন্তু এখনেই জ্বালাতে ইচ্ছে করছে। ঠোঁট বাকিয়ে হেসে আরিবার রুমে প্রবেশ করলো। আরিবার হাত থেকে মোবাইলটা ছিনিয়ে নিয়ো। আরশকে দেখে আরিবা অবাক হলো। প্রতিদিন তাও একঘন্টা পরে আসে আজ আগেই এসে পরেছে ওর পিছে লাগতে। এবার তো ও শেষ। আরশ ওকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর বিছানায় আয়েশ করে বসলো। ওকে বসতে দেখে আরিবা শোয়া থেকে উঠে ঠিকঠাক হয়ে বসলো। জানে কিছু তো বলবেই ওকে। আরশ আরিবার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো।

“সারাদিন এমন অলস শুয়ে না থেকে একটু তো কাজও করতে পারোছ। তাহলে শরীরের চর্বিটাও একটু কমবে আর শরীরটাও ঠিক থাকবে। সারাদিন শুয়ে বসে ঘুমিয়ে খেয়ে খেয়ে তো শরীরে চর্বি জমিয়ে ফেলছিছ। এমন মোটা হলে বিয়ে দেওয়াতো মুশকিল হয়ে পরবে।”

আরিবা অবাক হয়ে নিজের দিকে তাকালো। অবাক হয়ে ভাবলো ও মোটা? সবাই ওকে শুকনা বলে আর ওর মা তো ওকে বাস পাতা বলে আর এ কিনা বলছে ও মোটা? আরিবা নিজের দিকে ঠিক করে তাকালো দেখলো নাহ ওতো ঠিকেই আছে। আরশের দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বললো।

“তোমার চোখে সমস্যা হইছে। ভালো দেখে ডক্টর দেখাও বুঝলে? আমি মোটেও মোটা না। তুমি হইলা মোটু আর আমি পাতলু বুঝলে? নাহয় তুমি বল্টু আর আমি নাট। হুহ!”

আরশ ভ্রু বাকিয়ে আরিবার দিকে তাকালো। ঠোঁট বাকিয়ে হেসে আরিবার দিকে একটু এগিয়ে বললো।

“মোটু পাতলু আর নাট বল্টু তো বন্ধু। তুই আর আমি কি বন্ধু নাকি? কবে থেকে হলাম রে?”

আরিবা ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো।

“মোটেও তুমি আর আমি বন্ধু না। তোমার সাথে বন্ধু হওয়ার চেয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া নাহয় বিষ খেয়ে সুইসাইড করা অনেক ভালো। হুহ!”

“এই তোর সাথে বন্ধু হতে চায় কে? ছিছ! তোর মতো ফালতু মেয়ের সাথে আমার মতো এ্যাটিটিউট বয় কখনই বন্ধুত্ব করে না বুঝলি? তুই নিজেই মটু পাতলু বলছিলি।”

“ওটা তো ভুলে মুখ থেকে বের হয়ে গেছে। নাহয় কখনই বলতাম না। এত কথা না বলে আমার ফোন দিয়ে বিদায় হও যাও! বেশি কথা বলা ভালো না এতে আয়ু কমে যায়।”

আরশ রাগি চোখে আরিবার দিকে তাকিয়ে বললো।

“ডক্টর তুই না আমি?”

“কেনো তুমি জানোনা? এত ফুটানি দেখাইও না। কদিন পর ইনশাআল্লাহ আমিও ডক্টর হবো।”

“এত কথা বলিস্ না। কাকিমনির সাথে একটু কাজটাজ কর। করে কিছু শিখ নাহয় বিয়ের পরের দিনেই আবার এবারি ফিরত পাঠাবে। সারাজীবন তোকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে কে?”

আরিবা বিরক্তি নিয়ে আরশের দিকে তাকালো। ঠোঁট কামড়ে মনে মনে বললো। “তুমি যে আমায় অন্য কোথাও বিয়ে হতে দিবেনা সেটা আমি জানি। বিয়েটা হতে দাও এর শোধ আমি তুলবো। কিন্তু তোমার মায়াপরী কোথায়? কে এই মেয়ে সেটাই জানতে পারছিনা। তুমিতো তাকে অনেক ভালোবাসতে তাহলে সেই মেয়েটা তোমায় কেনো ছেড়ে গেলো? আমায় কবে থেকেই ভালোবাসলে? কত উওর অজানা ও গড!” আরিবা এমন চুপ থাকতে দেখে আরশ ওর চোখের সামনে তুড়ি বাজালো। তুড়ির শব্দে আরিবার ধেয়ান ভাঙলো। আরশের দিকে তাকিয়ে রেগে বললো।

“সমস্যা কি তোমার? এমন করছো কেনো?”

“কার চিন্তায় মশগুল হয়ে ছিলি?”

“তাতে তোমার কি?”

“আমার কি মানে? এই বড়দের সাথে কথা বলতে শিখছ নি? আমি তোর বড় সেটা ভুলে গেছিস?”

“বড়দের সাথে কথা বলতে ঠিকই শিখছি। কিন্তু কিছু বুইড়া আছে যারা সাদাসিধা ছোট বাচ্চাদের পিছনে পরে থাকে তাদের সাথে কথা বলতে শিখিনি আমি।”

আরশ রাগ করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কারো আসার শব্দ পেলো। আরশ চুপ হয়ে গেলো। মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন সাজুগুজু করে রুমে প্রবেশ করলো। দুজনেই আরশকে দেখে অবাক হলো। মিসেস আঞ্জুমান অবাক হয়ে বললো।

“কিরে আরশ আজ এত তাড়াতাড়ি আসলি? এসে ভালোই হইছে আমরা একটা পর্টিতে যাচ্ছি। ফিরতে দেরি হবে।”

মিসেস তারিন আরশের দিকে তাকিয়ে বললো।

“ঠিকমতো থাকবি। ঝগড়া করলে খবর আছে।”

আরশ কিছু না বলেই ওর রুমে চলে গেলো। মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন চলে গেলেন। নিচ থেকে মি. জাকির আর মি. আফজাল তাড়া দিচ্ছেন তাই।

——————————–

রাত ১০ টা। আরিবার আর একা একা ভালো লাগছেনা। অনেক ভেবে আরশকে জ্বালানোর একটা বুদ্ধি পেলো। আস্তে করে ফোনটা হাতে নিয়ে উঠে গেলো। আরশের রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো আরশ নেই। স্টাডি রুমেও দেখলো আরশ নেই। আরিবা ঠোঁট কামড়ে ভাবলো আরশ কোথায় যেতে পারে? পরক্ষনেই মনে পরলো হয়তো ছাদে গেছে। আরিবা হালকা পায়ে শব্দ না করে ছাঁদে উঠলো। দেখলো আরশ নাই। একটু সামনে আগাতেই দেখলো এক কোনায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে। এত কি ভাবছে? আরিবা ওসবে পাত্তা দিলোনা। ও নিজের প্লান কাজে লাগাতে লাগলো। আরশ যে কোনায় দাঁড়িয়ে আছে তার বিপরীত কোনায় গিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনটা কানের কাছে ধরে বললো।

“আরে দোস্ত তুই যদি ওই মুখোশধারী অজানা লোকটাকে দেখতি তাহলে তার বডি দেখেই বেহুঁশ হয়ে পরতি। ধুর! রাখ তোর শাহীন। তখন তাকেও ভুলে যাইতি।”

আরশ গভীর ভাবনায় ছিলো। আরিবার কথা শুনে সেদিকে কান দিলো। মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলো ও কি বলছে।

“শান্তা দোস্ত! সত্যি রে আমি ওই অজানা ছেলেটার প্রেমে একদম ফিদা হয়ে গেছি।”

এ কথা আরশের কানে যেতেই ওর কান গরম হয়ে এলো। হাত মুঠ করে চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। আরিবা চোখ বাকিয়ে আরশের দিকে তাকালো। ওর ভঙ্গি দেখে টোট চেঁপে হেসে বললো।

“স্বপনে স্বয়নেশুধু ওকেই দেখি। জানিস ওকে নিয়ে একটা গান বানাইছি। দাড়া তোকে শুনাচ্ছি।

ও অজানা… তুমি কি জানোনা?
আমি যে তোমারি, তুমি যে আমারি।
তুমি তুমি তুমি করে
জেগে থাকি রাত ভরে।
হতে চাই তোমার স্বপ্নের রানী।”

গান শুনে আরশ নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে পারলো না। আরিবার কাছে গিয়ে ওকে টান মেরে নিজের দিকে ঘুরিয়েই ওর গাল চেঁপে ধরলো। আরিবার গাল চেপে ধরে ওর মুখের কাছে এগিয়ে এনে বললো।

“এই গান যেনো এই মুখ দিয়ে আর না বের হয়। তবে এই ঠোঁট আর এখানে থাকবেনা।”

আরিবা খুব ব্যাথা পাচ্ছে কিন্তু আরশ এতই রেগে আছে যে ওর এসবে ফেয়ান নাই৷ আরশ আরিবার গাল চেঁপে ধরে আরও কাছে আনলো এবার আরিবার অন্য রকম অনুভুতি হচ্ছে। আরিবাকে ওভাবে তাকাতে দেখে আরশের হাত আলগা হয়ে এলো। আস্তে করে আরিবার গাল ধরে ওর মুখের আরও কাছে আনলো। আরশ এখন একেবারেই নিজের মধ্যে নেই। আস্তে করে আরিবার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁটের মাঋে নিয়ে নিলো। এতক্ষন পর আরিবা হুশ আসলো আরিবা ওর হাত দিয়ে আরশকে ধাক্কাচ্ছে কিন্তু আরশের ছাড়ার নামেই নেই ও আরও শক্ত করে ধরছে। হঠাৎ আরিবার ফোন বেঁজে উঠলো। ফোনের শব্দে আরশ চমকে উঠলো। পরক্ষনেই মনে পরলো ও কি করে ফেলেছে। নিজের উপরেই এখন রাগ হচ্ছে ওর। আরিবাকে ছেড়ে অন্য দিকে ঘুরে গেলো। আরিবা ফোনটা কানের কাছে ধরেই থমকে গেলো। ফোনটা হাত থেকে মাটিতে পড়ে গেলো। ফোন পড়ার শব্দে আরশ তাকালো। তাকিয়ে দেখলো আরিবা হাটু ভেঙে বসে পরেছে। আরশ ফোন তুলে কানের কাছে ধরতেই চমকে গেলো। কেনো মতে আরিবাকে তুলে ওর মায়ের দেওয়া ঠিকানায় চলে এলো।

———————————

হসপিটালে বেঞ্চে অনুভূতিশূন্য হয়ে বসে আছে আরশ মিসেস তারিন আর মি. আফজাল। সবার চোখেই পানি। সবাই একেবারে চুপচাপ। সত্যি তারা খুবেই শোকাহত। কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছেনা। কেউ বুঝতে পারেনি এমন হবে। একঘন্টার ব্যবধানে এমন অঘটন ঘটে গেলো। হসপিটালে বেডে মিসেস আঞ্জুমানের নিথর দেহ পড়ে আছে। আরিবা ওর মাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদছে। ওর মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে একেবারেই বিশ্বাস করেনি ও। যখন এসে দেখলো তখন আর নিজেকে আটকে রাখতে পাড়লো না হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। সবাই ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। করলে কি হবে? ওর মায়ের শোক কখনই ভুলতে পারবেনা। তাই সবাই ওকে কাঁদতে দিয়েছে। কাদলে মন হালকা হয়। আরিবা কাঁদছে আর ভাবছে ওর মা ওকে কত ভালোবাসতো। কত আদর করতো ওগুলো কে করবে? ওর মা আর নেই সেটা ও বিশ্বাসেই করতে পারছেনা। ওর মাকে ধরে কেঁদে কেঁদে বললো।

“আম্মু তুমি ফিরে এসো! তুমি উঠো আমি আর কখনই খাওয়া নিয়ে তোমায় জ্বালাবোনা উঠো তুমি। উঠো!”

এটুকু বলেই আর কিছুই বলতে পারলোনা। চিৎকার করে কেঁদে উঠলো আরিবা। মিসেস তারিন এগিয়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলেন। আরিবা তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বললো।

“কাকিমনি তুমি আম্মু কে উঠতে বলে। প্লিজ উঠতে বলো!”

মিসেস তারিন ও কেঁদে দিলেন। সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা খুজে পেলেন না। আরিবার কান্নায় আরশের বুক কেঁপে উঠছে। ওর কাকিমনির জন্যও আরশের খুব কষ্ট হচ্ছে। তিনি ওকে নিজের ছেলের মতো দেখতেন। মিসেস তারিন আরিবাকে জড়িয়ে ধরে ওর বাবার কাছে নিয়ে গেলেন। মি. আফজাল বসে বসে ভাবছেন মাত্র কিছুসময়ে কত কি ঘটে গেলো। পার্টিতে খুবেই মজা করছিলো তারা। পার্টি শেষে বাড়ি ফেরছিলেন তারা। বাড়ি ফেরার পথেই পথে মি. জাকির ও মিসেস আঞ্জুমানের গাড়ি এক্সিডেন্ট করে। এতে মিসেস আঞ্জুমান মারা যান কিন্তু মি. জাকির গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ার কারনে তেমন আঘাত পাননি। পাশে পানিতেই তিনি লাফিয়ে পড়েছিলেন কিন্তু মিসেস আঞ্জুমান তা করতে পারেননি তাই না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

মি. জাকির মাথায় আঘাত পেয়েছেন। একটু আগেই তার জ্ঞান ফিরেছে। আরিবা একাই রুমে প্রবেশ করলো। আরিবা ওর বাবাকে ধরে কেঁদে দিলো। মি. জাকির মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।

“কাঁদেনা মামনি! আল্লাহর জিনিস আল্লাহ নিয়ে গেচে এতে কাঁদতে নেই। শোকর করো যে আমি বেঁচে আছি।”

আরিবা কাঁদতে কাঁদতে বললো।

“আব্বু তুমি আম্মুকে এনে দাও! আম্মুকে ছাড়া আমি কখনও থাকতে পারবো না। সব তোমার দোষ। তুমি কেনো ঠিক মতো গাড়ি চালালে না।”

মি. জাকির মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন।

“ঠিক মতোই গাড়ি চালাচ্ছিলাম। আমাদের ইচ্ছে করে কেউ মারতে চাইছে। ভাগ্য ভালো আমি বেঁচে গেছি।”

কথাটা শুনেই আরিবা অবাক হয়ে তাকালো। কান্না ভেজা চোখে বললো।

“কি বলছো আব্বু? আমাদের এত শত্রু কেনো? কে আমাকে আর তোমাদের মারতে চাইবে?”

মি. জাকির এমন একটি নাম বললো যা শুনে আরিবা হতবাক। অবাক হয়ে ওর বাবার দিকে তাকালো। ও যেনো কান্না করতেও ভুলে গেলো।

💝

ইনশাআল্লাহ চলবে…

(রি-চেইক করিনি ভুলত্রুটি মাফ করবেন। এতদিন বিজি ছিলাম তাই গল্প দিতে পারিনি সরি গাইস্। সবার ভালোবাসা পেলে প্রতিদিন লিখবো ইনশাআল্লাহ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here