জেদ” পর্ব-১৪

0
998

#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট১৪
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.

একটা কফিসেন্টারে আমি আর আরাজ মুখোমুখি হয়ে বসে আছি।রাগে গা জ্বলছে আমার ।মন চাইছে আরাজের দুইই গালে কষে দুইটা চটকনা লাগিয়ে দিতে।গত ১০ মিনিট যাবত ফোনে কথা বলছে সে।কথা শেষ করে ফোন পকেটে গুজে আমার দিকে হাসি মুখে তাকাতেই গর্জে উঠলাম আমি
-তোমার কাছে আমি একটা ছোট হেল্প চেয়েছিলাম আর তুমি কিনা উলটো বিপদ বাড়ীয়ে দিলে?এটাকে তুমি ফ্রেন্ডশিপ বল?
আমার কথা শুনে আরাজ যেন আকাশ থেকে পড়ল।আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল

-কি বলছ ইনা তুমি? সরি ইনায়াত।তোমার কি মাথাটাথা গেছে নাকি! আমি আবার তোমার বিপদ বাড়াতে যাব কেন?
-বাবাকে কি বলেছ তুমি?
আমার প্রশ্নে আরাজ যেন দমে গেল একটু।কোন রকমে হাসিটা ধরে রাখার চেস্টা করে বলল
-তেমন কিছুই না ।আমি শুধু আংকেল কে বলেছি আংকেল ইনা এখন বিয়ে করতে চায় না।ও আগে নিজের ক্যারিয়ার সেটেল করতে চায়।ও নিজের ড্রীম প্রজেক্টে কাজ করতে চায় এখনযদি আমরা বিয়ে করি তাহলে…
আমি কথা শেষ কয়ার আগেই আংকেল বললেন
-আচ্ছা ভালো হলো আমাকে জানালে।তোমার ওসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না ।আমি দেখছি ব্যাপারটা ।আমি ইনার সাথে কথা বলব এই ব্যাপারে।
So I thought….
-You thought তুমি বাবাকে বলবা আর উনি মানে যাবেন?আরাজ যদি আমার মতামত জানানোর দরকার হত তাহলে আমি নিজেই সেটাকে বাবাকে বলতাম নাকি তোমার দ্বারা বলাতাম।তোমাকে আমি সেদিন স্পষ্ট করে বুঝিয়ে বলেছিলাম তোমার অমত জানা্তে।আর what do mean by যদি আমরা বিয়ে করি?
-ইনায়াত…ইনায়াত রিলাক্স ।আমার কথা শোন।আংকেল আব্বুকে তোমার ছবি পাঠিয়ে আমি তোমাকে প্রথম দেখাতেই এক বাক্যে বিয়ের জন্যে রাজী হয়ে গিয়ছিলাম।I mean আমি তো তখন এত কিছু জানতাম না ।মানে তুমি আর আরদ্ধ।এখন যদি হঠাত করে আমি বিয়েতে অমত জানাই তাহলে ব্যাপারটা কেমন সন্দেহভাজন হয়ে যায়।আর তাছাড়া সপ্তাহ খানেক আমি দেশে আছি ।তারপর আমি আবার আমেরিকা ব্যাক করে যাব ।কোন ভাবেই এই উইকটা বিয়েটা ডিলে করতে পারলেই…

আরাজ কথা শেষ না করতেই আমি চেচিয়ে উঠলাম
-আমি তোমাকে বিয়ে ডিলে করতে না ডিনাই করতে বলেছিলাম আরাজ ।আর বিয়ে ডিলে করবে কেন?দেখ আরাজ একটা কথা ভালো করে শুনে আর বুঝে রাখ আমি আরদ্ধকে ভালোবাসি আর বিয়ে করলে আমি শুধু মাত্র আরদ্ধকেই করব।যদি তোমার মনে হয় বিয়ে ডিলে করে বা অন্য কিছু করে তুমি আমাকে বিয়ের জন্যে রাজী করাতে পারবে তাহলে এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেল।

.
.
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে আমি উঠে চলে আসছিলাম আরাজ পেছন থেকে ডেকে বলল
-ইনা তুমি ভুল বুঝছ।আমি তোমাকে হেল্প করতে চেয়েছিলাম ব্যাস ।
আমি পেছনে ঘুরে হাত জোর করে বললাম
-তোমার যা করার অলরেডি করে ফেলেছ ।আর না।এখন যা করার আমি করব।আরেকটা কথা যদি আমার আর আরদ্ধের মাঝেভুল করেও আসার চেস্টা কর তাইলে ওটা তোমার লাইফের লাস্ট ভুল হবে ।
কথাগুলো বলেই আমি আরাজের জবাবের অপেক্ষা না করেই সেখান থেকে চলে আসলাম।

ফোনটা বাজছে।আরদ্ধ কল করছে ।কথা বলতে ইচ্ছে করছে বড্ড তার সাথে কিন্তু আমি চেস্টা করলেও আরদ্ধের কাছ থেকে কথা লুকাতে পাব না।ছেলেটা কোন না কোন ভাবে বুঝেই যাবে ঝামেলা হয়েছে কোন।আমি চাইনা ওকে অযথা চিন্তায় ফেলতে ।ফোনটা বের করে আরদ্ধকে টেক্সট করলাম

-রাস্তায় আছি।বাসায় গিয়ে ফোন করি?
ওপাশ থেকে ছোট করে রিপ্লাই এল
-সাবধানে যেও।

আমি ফোনটা ব্যাগে রেখে সিএনজিতে চড়ে বসলাম।
.
.

আরদ্ধ হয়তো এতক্ষনে বুঝে গেছে আমি কোন ঝামেলায় পরেছি তাই তার কল রিসিভ করিনি।কিন্তু সে জানে সময় মতো ঠিকই তাকে সব বলব আমি।আমি হাত উঠিয়ে ডান হাতের রিংটার দিকে তাকালাম। আমাকে প্রপোজ করার পর থেকে আরদ্ধরধর মধ্যে আমূল পরিবর্তন এসেছে।যান্ত্রিকতা ছাপিয়ে যেন নতুন এক প্রান পেয়েছিল ছেলেটি।আরদ্ধের প্রতি শুরু থেকেই দূর্বলতা ছিল আমার।ওকে প্রথম দেখাতেই অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করেছিল।কিন্তু যেদিন আরদ্ধ আমাকে নিজের করে নেওয়ার কথা বলেছিল সেদিন সবকিছু যেন অগোছালো লাগছিল।চাওয়া সত্ত্বেও আমি তাকে বলতে পারিনি আপনাকেও আমার ভালো লাগে।
আরদ্ধ তার কথা রেখেছিল।সে আমাকে কোন ফোর্স করেনি।খুব স্বাভাবিকভাবেই চলছিল দিনগুলো।আরদ্ধর কোম্পানির সাথে প্রজেক্টের কাজও প্রায় শেষ হয়ে আসছিল আমি যেন ভুলেই গিয়েছিলাম সেদিনের কথা। আংটিটাও আমার কাছে খুব স্বাভাবিক মনে হতে লাগল।এদিকে আমার একটা হ্যা শুনার আশায় অধীর আগ্রহে দিন কাটাচ্ছিল আরদ্ধ।হয়তো তখনো আমার টনক নড়ত না যদিনা আরদ্ধ সেদিন পাগলামি না করত!
লাঞ্চ আওয়ারে আমি আর রাফাত ক্যান্টিনে বসে লাঞ্চ করছিলা।লাঞ্চ শেষে তখনো প্রায় ১০ মিনিট বাকি ছিল।রাফাত কিছু একটা দেখানোর ছলে আমার খুব কাছে এসে বসে ছিল।ঠিক সে সময়েই আগমন ঘটল আরদ্ধর।আরদ্ধকে দেখে আরাজ উঠে দাড়াল।
-আরে স্যার আপনি! বসুন প্লিজ।
আরদ্ধ বরফ শীতল চোখে কিছুক্ষন আমাদের দিকে তাকিয়ে কিড়মিড়িয়ে উঠল
-মিস ইনায়াত আমার সাথে একটু আমার কেবিনে আসবেন এক্ষুনি।একটা ফাইল নিয়ে জরুরি কাজ আছে।
আরদ্ধর কথামত আমি তার পিছনে পিছনে কেবিনে গিয়ে ঢুকলাম।দরজা লাগাতেই সে তেড়ে এসে আমাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরল।রাগে আরদ্ধের চোখদুটো লাল হয়ে আছে।মনে হচ্ছে যেন এই মুহুর্তে পারলে আমাকে চিবিয়ে খাবে।আমি ভয়ে ভয়ে ঢক গিলে বললাম
-স্যা..স্যা…স্যার কি করছেন আপনি!
-তুমি কি করছিলে রাফিনের সাথে?

আরদ্ধর কথা শুনে অবাক হলাম আমি।ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে দিয়ে বললাম
-কি করছিলাম সেটা আপনি নিজের চোখেই দেখে এসেছেন ।তারপরেও আপনার মনের শান্তির জন্যে বলে দেই রাফাত আমাকে তার ফ্যামিলি পিকচার দেখাচ্ছিল এটা যদি আপনার চোখে অপ্রতীকর হয়ে থাকে তাহলে নিজের মাইন্ডটাকে কন্ট্রোল করার চেস্টা করুন ।আমাকে নয়।
কথাগুলো বলেই পিছন চলে আসতে যাব তখনি আরদ্ধ পেছন থেকে আমাকে এক ঝটকায় টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল।আরদ্ধ আমার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে আছে।ওর গরম নিশ্বাস আমার মুখের উপর এসে পরছে।
-ইনা আমি কোন নেগেটিভ মিন করিনি।বাট তোমাকে অন্য কারও সাথে দেখলে সহ্য হয় না আমার ।রাগে জ্বলে যায় পুরো শরীর।তোমার হয়তো মনে হয় সব স্বাভাবিক আছে কিন্তু কিছ ঠিক নেই।আমি ঠিক নেই।তোমাকে ছাড়া প্রতিটা মুহুর্ত বিরক্ত লাগে আমার।তুমি যখন চোখের সামনে থাক I feel comfortable. Each and every moment I think about you. Ina I think I am in love with you.আমার #জেদ ধীরে ধীরে ভালোবাসায় রুপ নিচ্ছে।
.
.
আরদ্ধর কথাগুলোতে একটা অন্যরকম মাদকতা কাজ করছিল।আমি যেন ঘোরে হারিয়ে গিয়েছিলাম।আরদ্ধ আমাকে ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়াল।
-Am sorry Ina.I didn’t mean to hurt you.
আরদ্ধ গিয়ে তার টেবিলের পাশে দাড়াল।তার দৃষ্টি গ্লাস ওয়াল ভেদ করে বাইরের বড় বড় অট্টালিকার উপর গিয়ে পরেছে।ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বলল
-ইনা তোমার কোম্পানির সাথে আমার কনট্রাক্ট প্রায় শেষের পথে ।আর দুই সপ্তাহ পরেই দুই কোম্পানি আলাদা হয়ে যাবে।যদিও কনট্রাক্ট রিনিউ করার কথা বলা বলা হয়েছে তোমাদের পক্ষ থেকে কিন্তু I don’t think I would be able to work with you anymore.তাছাড়া তোমাকে চোখের সামনে সহ্য করাটা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাবে আমার জন্যে।সো আমি আমেরিকা চলে যাচ্ছি।নেক্সট উইক শেষে আমি একটা পার্টি এরেঞ্জ করেছি ।আশা করি তোমার উত্তর হ্যা বা না যাই হোকনা কেন তুমি নির্দ্বিধায় জানাবে ।শুধু এতটূকুই বলব Just Do as your heart say.I am gonna be okey with that.
তুমি আসতে পার এখন।……
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here