পাহাড়ে মেঘের ছায়া পর্ব-২১

0
969

উপন্যাসঃ পাহাড়ে মেঘের ছায়া
পর্ব – ২১
(নূর নাফিসা)
.
.
২২.
জংলী বেশে সজ্জিত অদ্ভুত লোক দুটো বৃষ্টিকে ধরে জঙ্গলের আরো গহীনে নিয়ে এলো! যদিও সে ভাবছে এরা ছদ্মবেশী তবুও বৃষ্টির খুব ভয় লাগছে! তারা তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না! তাকে একটা বড় গাছের পাশে আনলো। দেখতে অনেকটা বট গাছের মতো, কিন্তু বট গাছ নয়! এখানে তাদের দলের আরও অনেকে আছে সবাইকে দেখতেই কেমন ভয়ানক মনে হচ্ছে। বৃষ্টিকে দেখে সবার নজর এখন বৃষ্টির দিকে! এভাবে তাকাতে দেখে বৃষ্টির খুব ভয় লাগছে! আরো দুজন এগিয়ে এসে বৃষ্টিকে নিয়ে একটা গাছের সাথে মোটা লতা দিয়ে বেধে ফেললো!
– একি! বাধছেন কেন আমাকে! আমি কি করেছি! আরে!
বৃষ্টি এটা সেটা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু কোন জবাব পাচ্ছে না! লোকগুলো নিজেদের মধ্যে অন্যরকম ভাষায় কথা বলছে যার আগামাথা বৃষ্টি কিছুই বুঝতে পারছে না! এরা কোন দেশের মানুষ! কিন্তু আশেপাশে তাকিয়ে ওদের বসবাসের ধরন দেখে বৃষ্টি মনে মনে প্রশংসা করলো। এদের শুটিং একদম পারফেক্ট! কিন্তু তাকে বেধে রেখেছে কেন, সেটাই তার মাথায় ঢুকছে না! কেউ কেউ তার দিকে তাকিয়ে হেসে যাচ্ছে! বৃষ্টির ভয় লাগছে খুব! সূর্য ডুবে অন্ধকার হয়ে গেছে! তারা লাঠির সাহায্যে মশালে আগুন ধরিয়ে আলোকিত করেছে জঙ্গল! একটু পর দেখলো দুজন কাধে করে কি যেন এনেছে! দেখতে শেয়ালের মতো দেখাচ্ছে! রক্ত পড়ছে টুপটাপ! কিছুক্ষণের মধ্যে তারা এটার চামড়া ছাড়িয়ে আগুনের উপর ঝুলিয়ে পোড়া দিতে শুরু করলো! বৃষ্টির এদিকে ভয়াবহ অবস্থা! এতোক্ষণে সে বুঝতে পেরেছে এরা কোন শুটিং করতে আসেনি! এরা আসল জংলী! জীবনে কখনো জংলীর হাতে ধরা পড়বে ভাবতে পারেনি সে! ভয়ে তার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে! এই প্রানীটার মতো কি তাকেও পুড়িয়ে খাবে এখন! ভাবতেই তার শরীরের সকল লোম দাড়িয়ে গেলো!
এদিকে আকাশ সোজা স্থানীয় থানায় এসেছে পুলিশের সাহায্য নেওয়ার জন্য। এই থানার দারোগা তার এক বন্ধুর বড় ভাই অর্থাৎ সে ও ভাই ডাকে। আর এই দারোগার সাথে পরিচয় বলেই এই জঙ্গলে থেকে শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিয়েছিলো। যথাসম্ভব তারা তাদের শুটিং শেষও করতে পেরেছে। গতকাল জংলীরা এদিকে আসছে সেই আভাস দারোগাই দিয়েছিলো তাদের। আর সেজন্যই তারা আজ সব গুছিয়ে এখান থেকে চলে গেছে। কিন্তু এই বৃষ্টি মেয়েটা আবার সেই প্যাচে ফেললো! দারোগার কাছে সবটা ক্লিয়ার বলে সাহায্য চাইলো। আকাশকে ছোট ভাইয়ের মতো দেখে তাই তারা রিস্ক নিতে রাজি হয়েছে। কয়েকজন পুলিশ নিয়ে তারা প্রস্তুত হয়েই জঙ্গলের দিকে গেলো।
এদিকে জংলীরা ঢাক ঢোল পিটিয়ে নাচছে আর রান্নার আয়োজন করছে! তা দেখে বৃষ্টির কলিজা শুকিয়ে গেছে আর কিছু না ভেবে সে মৃত্যুর সময় গুনতে লাগলো! এই বুঝি তাকে পুড়ে ছিড়ে খাবে জংলীগুলো! কেউ তো জানতেও পারবে না কিছু! ব্যাগ তার পিঠেই আছে আর ফোন ব্যাগে। কিন্তু কাউকে কিছু জানানোর সুযোগ নেই! হঠাৎই পুলিশ আসতে দেখে সে অবাক হলো! পুলিশ বন্দুক হাতে প্রস্তুত হয়ে এসেছে! আর পুলিশদের দেখে জংলীরা সাথে সাথে ধনুক নিয়ে প্রস্তুত! জংলী পুলিশের যুদ্ধ হবে নাকি এখন! বৃষ্টি, কি হবে তা দেখার অপেক্ষায় রইলো। পুলিশ বারবার তার দিকেই তাকাচ্ছে। ইশারা বিশারায় জংলীদের কিছু বুঝিয়ে একটা বাক্স এগিয়ে দিলো। জংলীদের মধ্যে সরদার জংলীটা বাক্সটার ভেতরে দেখে অন্যজনকে কিছু ইশারা করলো আর অই ব্যক্তি এসে বৃষ্টিকে ছেড়ে দিলো। পুলিশ ডাকতেই বৃষ্টি তাদের কাছে চলে গেলো। খুব সাবধানে বৃষ্টিকে সাথে নিয়ে তারা জঙ্গল থেকে বের হচ্ছে। বৃষ্টি এদিকে নানান প্রশ্ন করে যাচ্ছে পুলিশকে। বকবক করতে দেখে দারোগা তাকে ধমক দিলো। তারপর বৃষ্টি আর কোন কথা বলেনি, চুপচাপ তাদের সাথে যেতে লাগলো। আর মনে মনে বললো, ” বাহ! পুলিশ গুলো কতো ভালো! জংলীর হাত থেকে আমাকে বাচিয়েছে! আর যাই হোক, জংলীরা তো আর আমাকে খেতে পারবে না!”
খুশি মনে বৃষ্টি তাদের সাথে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে গাড়ি চলাচলের রাস্তায় এসে থমকে গেলো! আরও দুজন পুলিশের সাথে পুলিশের গাড়ির সামনে পকেটে হাত দিয়ে আকাশ দাড়িয়ে আছে! এবার তার কাছে সব প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার! আকাশই তাহলে পাঠিয়েছে পুলিশদের! কিন্তু আকাশ ই বা জানলো কিভাবে সে জঙ্গলে! এটাই ভাবছে বৃষ্টি। আকাশের সামনে এসে পুলিশ বললো,
– জঙ্গলের আশপাশ ছেড়ে চলে যাও। আর ঘুরতেও এসো না এদিকে। দিনের বেলা ঘুরাফেরাও এখানে বিপদ।
– ওকে, ভাইয়া। ধন্যবাদ।
– হুম, যাও। গাড়িতে উঠো, স্টেশনের কাছে নামিয়ে দেই। সেখান থেকে অটোর সাহায্যেও চলে যেতে পারবে।
পুলিশের গাড়িতে উঠলে তারা স্টেশনের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
যেখানে নামিয়ে দিয়ে গেছে সেখানে দুজনেই চুপচাপ দাড়িয়ে আছে একে অপরের দিকে তাকিয়ে। আকাশের তো চোখের পলকই পড়ছে না আর বৃষ্টি তার দৃষ্টি বুঝতে পারছে না। কিন্তু সেও তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। আকাশ তাকে মিথ্যে বলে চলে আসায় রাগ, অভিমান, কষ্ট এক হয়ে তার চোখে অশ্রু হয়ে দেখা দিচ্ছে! এই বুঝি গড়িয়ে পড়বে!
আকাশের কোন প্রতিক্রিয়া না দেখে বৃষ্টি জঙ্গলের দিকে অর্থাৎ এই মাত্র যেদিক থেকে এসেছে সেদিকে হাটা ধরলো। আকাশ এগিয়ে পেছন থেকে তার হাত ধরে টেনে সামনে ঘুড়িয়ে সাথে সাথে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো বৃষ্টির গালে! বৃষ্টি এক হাতে গাল স্পর্শ করে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর চোখ থেকে টুপটাপ পানি পড়ছে!
– সাহস কি করে হয় একা একা চলে আসার! এই জঙ্গলে ঢুকারই এতো সাহস আসে কোথা থেকে! এইটুকু শরীরে এতো জেদ এতো আবেগ কেন!
বৃষ্টি আচমকা আকাশকে জড়িয়ে ধরলো। কাদতে কাদতে বললো,
– জানি না। জানি না আমি কিছু! এসেছো কেন তুমি! ভালোবাসো না তো আমাকে। বাচালে কেন? খেয়ে ফেলতো জংলীরা আমাকে। মরে যেতাম আমি। তোমার তো কোনো ক্ষতি হতো না। পাঠালে কেন পুলিশদের? কেন এসেছো?
রাস্তায় দাড়িয়ে বৃষ্টি আকাশকে জড়িয়ে ধরে কেদে চলেছে। আকাশ হাত উঠিয়ে শান্তনা পর্যন্ত দিচ্ছে না! পাথরের মতো দাড়িয়ে আছে! বৃষ্টি আকাশের শার্ট খামচে ধরে হু হু করে কান্না করতে করতে আবার বলতে লাগলো ,
– এতো পাষাণ কেন তুমি! একটুও বুঝো না আমাকে? এই ভালোবাসি তো। জানো, তুমি মিথ্যে বলে আমাকে রেখে এসেছো আমার খুব কষ্ট লেগেছে। জঙ্গলে এসেও আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। ওই লোকগুলোকে দেখে আরও বেশি ভয় পেয়েছি যখন জানতে পেরেছি তারা আসল জংলী! ভেবেছিলাম আজকেই বুঝি আমার জীবনের শেষ দিন! বাবামায়ের কথা খুব মনে পড়ছিলো। তোমার কথাও বারবার মনে পড়ছিলো! ওরা আমাকে বেধে রেখেছিলো। ভেবেছি শেষ মুহুর্তে নিজের খবরটা পর্যন্ত কাউকে দিতে পারবো না। বাবামায়ের জন্য অনেক কষ্ট লেগেছে আমার। আমাকে না পেলে পাগল হয়ে যেতো বাবা-মা, ভাইয়া। ওরা খুব ভালোবাসে আমাকে। তুমি তো আমাকে একটুও ভালোবাসো না। তবুও আমি তোমাকে ভালোবাসি, আকাশ!
বৃষ্টি কথা বলতে বলতে কান্না করেই যাচ্ছে। আকাশ এবার দুহাত উঠিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
আকাশ এক হাতে জড়িয়ে ধরে অন্যহাতে পকেট থেকে ফোন বের করে রূপার কাছে কল করে বললো,
– রূপা, বৃষ্টিকে পেয়েছি। ও ভালো আছে। তোমরা কাল সকালের ট্রেনে অথবা বাসে ঢাকা ফিরে যেও। আমি বৃষ্টিকে সাথে নিয়ে ফিরবো।
– ওকে ভাইয়া। ওর সাথে একটু কথা বলতে পারবো?
– ভয় পেয়ে বৃষ্টি নোনা পানিতে গোসল করছে। এখন কি সে তোমার সাথে কথা বলবে!
রূপা কিছু বুঝতে না পারলেও বৃষ্টি বুঝতে পেরে হেসে উঠলো। আকাশের উপর হেলে থাকা অবস্থায়ই হাতটা বাড়িয়ে মোবাইটা হাতে নিয়ে বললো,
– রূপা, পরে তোকে কল করে কথা বলবো। এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। বায়…
বৃষ্টি কল কেটে নিজেই ফোন আকাশের প্যান্টের পকেটে রাখলো। আকাশ এবার বললো,
– মনে হচ্ছে আমরা বিয়ের পর এখন আমাদের বেডরুমে অবস্থান করছি। তাই না?
বৃষ্টি লজ্জা পেয়ে ঝটপট আকাশকে ছেড়ে দিলো। তার খেয়ালই ছিলো না তারা এখন রাস্তার পাশে দাঁড়ানো! চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।
– কোথায় যাবো এখন? সিমি আপুরা কোথায় আছে?
– মৌলভীবাজার। চলো।
বৃষ্টি মুখটা মলিন করে বললো,
– ক্ষুধা লেগেছে খুব। সকালে যে খেয়েছি আর খাইনি সারাদিন।
– খাবার কিনে দিয়ে এসেছিলাম না! খাও নি কেন?
– রেখে এসেছো কেন আমাকে!
– আমার কাছে টাকা কম। মৌলভীবাজার যেতে পারবো কিনা সন্দেহ! ডেবিট কার্ড রিজভীর কাছে দিয়েছিলাম। আর নিতে মনে ছিলো না। তোমার কাছে টাকা থাকলে চলো রেস্টুরেন্টে।
– চলো।
দুজন হেটে হেটে স্টেশন থেকে একটু এগিয়ে এসে একটা রেস্টুরেন্টে এলো। খাবার অর্ডার করে খেয়ে নিলো। আকাশ খাবে না বললেও বৃষ্টি তার জন্য খাবার অর্ডার করেছে। যার ফলে তাকেও খেতে হয়েছে। খাওয়া শেষে ব্যাগ নেড়েচেড়ে বৃষ্টি বললো,
– আমার পার্স কোথায়!
– মানে!
– পার্স পাচ্ছি না কেন! টাকা দিবো কিভাবে!
– হোয়াট! পেট ভরে খেয়ে এখন এই কথা! টাকা দিবো কিভাবে এখন! আমি যে বললাম আমার কাছে টাকা নেই, তুমি আগে ব্যাগ চেক করে নিবে না!
– আমি কি জানতাম নাকি! সমস্যা কি, তোমার কাছে যা আছে সেটা দিয়ে দাও।
– এটা দিলে মৌলভীবাজার যাবো কিভাবে!
– এখন খেয়ে ফেলেছি, টাকা না দিয়ে কি যেতে পারবো!
রেস্টুরেন্টের লোক বিল উঠাতে এলে আকাশ সেই টাকাই দিয়ে দিলো। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে হাটতে লাগলো আর এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো। বৃষ্টি বললো,
– এভাবে কি দেখো?
– কোনো কথা বলবা না। চুপচাপ থাকো। সবসময় একটা না একটা বিপদে ফেলে রাখো!
বৃষ্টি মুখ গোমড়া করে রাস্তা পাড় হয়ে ওপাশে চলে গেলো। আকাশের মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেলো। এতো টেনশনে ফেলে এখন আবার রাগ দেখানো হচ্ছে! ইচ্ছে মতো মাইর দিতে পারলে এখন শান্তি লাগতো! বৃষ্টি হনহন করে রাস্তার বিপরীত দিকে হাটতে লাগলে আকাশও ওপাশে চলে গেলো। আকাশকে তার দিকে আসতে দেখে বৃষ্টি আরও জোরে জোরে কদম ফেলতে লাগলো। আকাশও জোরে জোরে কদম ফেলছে। এক পর্যায়ে একটা দৌড় দিয়ে বৃষ্টি একটা রিসোর্টের ভেতর ঢুকে পড়লো। আকাশ রেগে আগুন! চেনা নেই জানা নেই, হুট করেই এদিক সেদিক চলে যাচ্ছে! আকাশও দৌড়ে রিসোর্টে ঢুকলো। বৃষ্টি তাকে পিছু পিছু আসতে দেখে মুচকি হাসলো। সে ৯৯% নিশ্চিত ছিলো আকাশ তাকে একা ছাড়বে না। সে আসবেই তার সাথে। বৃষ্টি একেবারে রিসিপশনের পাশে এসে দাড়িয়েছে। আকাশ জিজ্ঞেস করলো,
– এখানে এসেছো কেন?
বৃষ্টি তার জবাব না দিয়ে রিসিপশনের ছেলেটিকে বললো,
– এক্সিউজমি, আপনাদের রিসোর্টে কোন রুম ফাঁকা আছে? এক রাতের জন্য নিবো।
– হ্যাঁ, ম্যাম। আছে।
আকাশ বললো,
– পাগল হয়ে গেছো তুমি!
বৃষ্টি তার কথার প্রতুত্তর না দিয়ে লোকটির সাথে কথা বলে একটা রুম নিয়ে নিলো। টাকাও এডভান্স করে দিলো। আকাশ টাকা দেখে তার দিকে রেগে তাকালো! সে টাকা রেখে বলেছে তার কাছে টাকা নেই! বৃষ্টি রুমের চাবি নিয়ে আকাশের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ছো মেরে দৌড় দিলো। আর আকাশকে তার সাথে যেতে বললো। আকাশ ডাকলেও শুনলো না সে। নিরুপায় হয়ে তাকেই যেতে হলো। রুমে একটা বেড আছে আর তিন শেডের একটা সোফা আছে। আকাশ ধপাস করে সোফায় বসে পড়লো।
– টাকা আছে তখন দাও নি কেন?
– আজ এখানে থাকবো। কাল আশেপাশের জায়গা ঘুরবো তোমার সাথে, এজন্যই।
– আসলে তুমি একটা পাগল! বেশি আদর দিয়ে তোমার বাবা-মা পাবনা পাঠাতে চেয়েছে তোমাকে।
বৃষ্টি হিহি করে হেসে জবাব দিলো,
– আর দেখো, বাসায় না জানিয়ে আমি সিলেট এসে পড়েছি! জীবনে ভাবতেও পারিনি জংলী দেখবো! আজ সেটাও দেখেছি!
আকাশ লক্ষ্য করলো বৃষ্টির ভয় সম্পূর্ণ দূর হয়ে গেছে।
– টাকা দাও।
– কেন?
– আমি রুম ভাড়া করবো।
– এক রাত থাকবো এর জন্য দুইটা রুম ভাড়া করতে হবে! শেষ সম্বল আর কিছু টাকা আছে, সেগুলো অযথা নষ্ট করবো না।
– মানে কি! আমি এখানে থাকবো!
– সমস্যা কি!
– থাকবো না আমি। আমার টাকা আমাকে ফেরত দাও। তোমার জন্য আমার সব টাকা শেষ হয়েছে।
– আমার জন্য মানে! তুমি আমার জন্য টাকা শেষ করলে কিভাবে?
– জংলীরা কি তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিয়েছে!
– ওহ! পুলিশ ওদের কিছু দিয়েছিলো। বাক্সে কি ছিলো?
– পুলিশ কিছু দেয়নি। পুলিশের কথায় আমি কিনে দিয়েছি। বাক্সে মুরগী ছিলো। এই মুরগী কিনেই আমার টাকা শেষ!
– ভালোবাসো আমাকে?
– না।
– তাহলে একা একা ছুটে এলে কেন আমাকে বাচাতে? আবার এতো টাকাও খরচ করলে!
– লাগবে না তোমার টাকা, আমার ফোন দাও। বিকাশ থেকে টাকা উঠাবো।
বৃষ্টি দরজা লাগিয়ে ফোন সহ ওয়াশরুমে যেতে যেতে বললো,
– বেশি কথা বললে, ফোন এখন টয়লেটে ফেলে দিবো। আলাদা ব্যবস্থা করে দিবো, এখানেই থাকবে।
বৃষ্টি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলে আকাশ গেলো। বিছানার মাঝামাঝিতে কোল বালিশ রেখে বৃষ্টি একপাশে শুয়ে পড়লো। আকাশ ঘেমে যাওয়ায় শার্ট খুলে ফেললো। পড়নে তার সাদা সেন্টু গেঞ্জি! খাটে না শুয়ে সে সোফায় শুয়ে পড়লো। বৃষ্টির রাগ হলো এটা দেখে। এক রুমে থাকতে পারছে অথচ বিছানায় না! বিছানা তো আলাদা করে দিয়েছেই! হুহ্ ঢং! নিজেরা ঠিক থাকলেই তো সব ঠিক! ঠান্ডা লাগছে একটু একটু। রাত বাড়লে তো ঠান্ডা আরও বাড়বে! একটা পাতলা কম্বলে দুজন দুজায়গায় কিভাবে সম্ভব! বৃষ্টি উঠে গিয়ে কম্বলটা আকাশের গায়ে দিলো।
– এটা এনেছো কেন? লাগবে না আমার, নিয়ে যাও।
– আমি তো দেখতে পাচ্ছি লাগবে। তুমি এটা নাও, আমি বিছানার চাদর উঠিয়েই গায়ে দিতে পারবো।
আকাশ আর কিছু বললো না। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। বৃষ্টি এখানে দাড়িয়েই দেখছে তাকে। অর্ধেক শরীর ঢাকা তার। সাদা গেঞ্জি তে দারুণ লাগছে তাকে! লোভ সামলাতে না পেরে খুব দ্রুত কম্বল সরিয়ে আকাশের বুকে মাথা রেখে কম্বলের নিচে শুয়ে পড়লো। আকাশ হকচকিয়ে গেল!
– এটা কি হচ্ছে! বৃষ্টি, উঠো!
– উহুম!
– উঠতে বলছি!
– থাকি না একটু। এমন করো কেন!
– আমি কিন্তু এখন রুম থেকে বেরিয়ে যাবো!
– প্লিজ আকাশ। পাচ মিনিট থাকি৷ ওকে!
– এক মিনিটও না। বেডে যাও।
– মাত্র পাচ মিনিট। প্লিজ প্লিজ প্লিজ!
আকাশ আর কিছু বললো না, শুধু ঘড়ির কাটা গুনতে লাগলো। আর বৃষ্টি চুপটি মেরে আকাশের বুকে কান পেতে তার হৃদস্পন্দন শুনতে লাগলো! এ তো এক অজানা অনুভূতি! এতো ভালো লাগছে কেন! এদিকে ক্লান্ত শরীর নিয়ে আকাশ ঘুমিয়ে পড়েছে। আকাশের বুকে, কম্বলের নিচে প্রচন্ড আরামে বৃষ্টিও ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here