#ভোরের_আলো
৩৫.
– প্রেশার লো। ৫০/৩০। এত কমলে তো সমস্যা।
– হুম।
– ওকে জোর করে হলেও খাওয়াও।
– না খেলে আমি কি করবো? ও কি ছোট বাচ্চা যে জোর করে খাওয়াবো?
– দেখো ভাই, তোমার কি হয়েছে আমি জানিনা। আজকে প্রায় পাঁচবছর যাবৎ পাশাপাশি আমরা আছি৷ বরাবরই তোমাকে হাসিখুশি দেখি৷ মাঝেমাঝে ওয়াইফকে বলি ছেলেটা বেশ হাসিখুশি। ওর হাসি দেখলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। আমি তোমাকে বেশ কিছুদিন ধরে অবজার্ভ করছিলাম। তুমি মনমরা হয়ে থাকো আজকাল। যদিও তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার, তবু জিজ্ঞেস করছি কোনো সমস্যা?
অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে আশফাক। কোনো উত্তর সে দিচ্ছে না। ঘরের দরজা দিয়ে কৌশিক ঢুকতে ঢুকতে বললো,
– এখনও বাসায় রেখেছিস কেনো? হসপিটালে নিয়ে গেলি না কেনো?
ঘরে ঢুকেই রুবেলের মুখোমুখি হলো কৌশিক। রিমন এগিয়ে এসে বললো,
– উনি রুবেল ভাই। পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। উনি মেডিসিন স্পেশালিষ্ট।
– অহ, তাহলে তো হলোই।
– বাসা থেকে বাইরে যাচ্ছিলো। উনার সামনেই সেন্সলেস হয়ে পড়ে গিয়েছিলো।
– কি একটা অবস্থা বল দেখি! অর্পিতার খোঁজ পেয়েছে?
– পেলে তো হতোই। কোথায় গিয়েছে কে জানে? সপরিবারে গায়েব।
– ছুটাচ্ছি গায়েব হওয়া। আশফাকের বিয়ে করা বউ সে। প্রেমিকা না। তবু ওর ভাইয়ের কাছে আপোষে মেয়ে চাচ্ছি দিচ্ছে না৷ তুলে আনলে মজা বুঝবে।
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো রুবেল। রিমনকে ডেকে বললো,
– রিমন, রাত তো বেশ হয়েছে। তোমার ভাবী ওয়েট করছে খাবার নিয়ে।
– ওহ্ হ্যাঁ। ভাইয়া কোনো মেডিসিন কি ভাইয়াকে দিতে হবে?
– ওর মেডিসিন হচ্ছে খাবার। ইচ্ছেমতো খাওয়াও।
– ও বিগত ছয়দিন যাবৎ পানি ছাড়া আর কিছু মুখে নেয়নি৷ লাস্ট খাবার খেয়েছে সাতদিন আগে। সেদিন সকালে নাস্তার পর থেকে এখন পর্যন্ত পানি আর সিগারেট ছাড়া আর কিছু খায়নি।
– আচ্ছা, আজকে রাতটা দেখো কিছু খাওয়াতে পারো কি না। না খেলে কালকে সকালে স্যালাইন পুশ করতে হবে। আমি এসে করে দিয়ে যাবো।
রুবেল এগিয়ে এসে আশফাকের মাথায় হাত রেখে বললো,
– এভাবে না খেয়ে মরে গেলে লাভ কি হবে বলো তো? মরে গেলে যা চাচ্ছো তা পাবে কি? বেঁচে থেকে, সুস্থ থেকে নিজেরটু্কু আদায় করে নাও। জলদি সুস্থ হও। বউ ঘরে আনো। আমাদের দাওয়াত করে খাওয়াও। ঠিকাছে?
রুবেলের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আশফাক। চোখে পানি ছলছল করছে তার। এই মূহূর্ত্বে আশফাককে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে রুবেলের। জানতে ইচ্ছে হচ্ছে গল্পটা। বোধহয় অনধিকার চর্চা হয়ে যাবে। ইচ্ছেটাকে মাটিচাপা দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো সে।
– কি রে? মরে যাবি?
-………….
– রিমন, খাবার আন তো।
– খাবো না আমি।
– তুই বেঁচে আছিস এতেই আবিদ রেডি হয়ে আছে বোনকে অন্যজায়গায় বিয়ে দিবে। আর তুই মরে গেলে তো পুরো ময়দান ফাঁকা। ঝামেলা করার কেও থাকবে না। তুই মরবি একদিকে অন্যদিকে অর্পিতাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। তখন খুব ভালো হবে না?
– ওর চেহারা আমি দেখেছি। ও ডিটারমাইন্ড আমার কাছে অর্পিতাকে দিবে না। আমি মাথা কুঁটে মরে গেলেও দিবেনা৷
এতক্ষণ নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছিলো আশফাক। এখন সে চিৎকার করে কাঁদছে। অসহ্য লাগছে কৌশিকের। সে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
– শালা, তুই কি হিজড়া হয়ে গেছিস? পুরুষ না তুই? তোর বউ আরেকজন উধাও করে ফেলে কিভাবে? একসপ্তাহ হয়ে গেছে অর্পিতা নিখোঁজ। এতদিনে খুঁজে বের করতে পারিসনি তোর বউ কোথায়? ভালোমতো খোঁজ করলেই ওকে বের করে ফেলতে পারতি। তা না করে ঘরে বসে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেই যাচ্ছিস। শার্ট, প্যান্ট পড়ে ঘুরিস কেনো? শাড়ী পড়, চুড়ি পড়। দিনদিন ভেড়া হয়ে যাচ্ছিস। মরে যা তুই। তোর রাগ, জেদ কোথায় উড়াল দিয়েছে শুনি? তোর বউকে তোর কাছে দিবে না মানে কি? অর্পিতার সেন্স আসার পরই তোর উচিত ছিলো ওকে সরি বলে যেভাবে পারিস ওকে ম্যানেজ করা। এখন পর্যন্ত তুই একটা সরিও বলিসনি।
– সরি বলে ক্ষমা পাওয়ার মতো অন্যায় আমি করিনি। অন্যায়টা অনেক বড় ছিলো৷ কিছু অন্যায়ের কখনো ক্ষমা হয়না। জানি আমি কখনো ক্ষমা পাবোও না৷ খুবজোর ভালোবাসা-যত্ন দিয়ে অন্যায়ের ভার কিছুটা কমাতে পারি। ওর মনের এককোনে নিজের জায়গাটা করে নিতে পারি। কিন্তু ক্ষমা? কখনোই না। ওর কাছে ক্ষমা চাওয়ার দুঃসাহস আমার নেই কৌশিক।
(চলবে)