ভোরের_আলো পর্ব-৩৮

0
1123

#ভোরের_আলো
৩৮.

অর্পিতার অপেক্ষায় সকাল থেকে অধীর আগ্রহে বসে আছে আশফাক। গতরাত থেকে কৌশিকও এখানেই আছে। অর্পিতা কি সিদ্ধান্ত নেবে সেটা শোনার কৌতুহল রিমন কৌশিকেরও কম নেই। আজকে অর্পিতার নেয়া সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করবে ওরা এরপর কিভাবে এগোবে। যদি অর্পিতা সংসার করতে রাজি হয়ে যায় তো ভালো কথা। আজকেই অর্পিতার বাড়ি প্রস্তাব নিয়ে যাবে। আর যদি রাজি না হয় তো অনিচ্ছাবশত আঙুল বাঁকা করতেই হবে। দুইধরনের প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছে কৌশিক। কিন্তু অর্পিতার মুখোমুখি হওয়ার সাহস রিমনের হয় না। লজ্জা লাগে মেয়েটার মুখোমুখি হতে। কোন মুখে দাঁড়াবে ওর সামনে? যদি জিজ্ঞেস করে বসে জেনেশুনে তোমার ভাইয়ের মত একটা মানুষের সাথে আমাকে বিয়ে দিলে কি করে? একটুও বিবেকে বাঁধলো না? তখন কি উত্তর দিবে সে? বড্ড স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম। শুধু ভাইয়ের ভালোর কথা ভেবেছি। তাই এমনটা করেছি? প্রত্যুত্তরে কি বলবে অর্পিতা? মনভরে অভিশাপ দিবে নিশ্চয়ই!

ড্রইংরুমে বসে সিগারেট ফুঁকছে আশফাক। মাত্রই গোসল সেড়ে এখানে এসে বসেছে।

– তোর কি শুধু সিগারেট খেলেই দিন যাবে? ভাত খাবি না? তিনটা বেজে গেছে তো।
– উহুম।
– কি উহুম?
– গলা দিয়ে খাবার ঢুকবে না।
– কেনো ঢুকবে না? তোর বউ তো আসছেই।
– প্রচুর টেনশনে আছি। আমার সাথে তো ভুলেও থাকতে চাইবে না৷ কিভাবে আটকাবো ওকে?
– সমস্ত প্রিপারেশন নিয়েই রেখেছি। মাথা ঠান্ডা রাখ।
– তবুও,,,,, চোখ বন্ধ করে সেদিনের কথা যখন কল্পনা করি অর্পিতা নিজচোখে আমাকে রাত্রির সাথে দেখেছে, মাথাটা ঝিম মেরে যায়।
– আর আমার মন চায় দেয়ালে মাথা ঠুঁকে মরে যাই৷ কত বড় অপরাধের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরছি তা কাউকে বুঝাতে পারবো না। অর্পিতার কথা মাথায় এলে মনে হয় বিয়ে করিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছি। আর তোমাকে দেখলে মনে হয় ভাগ্যিস বিয়েটা করিয়েছিলাম। আর নয়তো এ জীবনে অর্পিতাকে পাওয়ার আশা করতে পারতে না। কি করলে তুমি? কেনো করলে কিচ্ছু বুঝি না। একটাবারও কি হাত কাঁপলো না তোমার আরেক মেয়ের গায়ে হাত দিতে?
– বাদ দে রিমন। যা হওয়ার হয়েছে। ঐ ঘটনা তো আমরা কেও বদলাতে পারবো না৷ তাছাড়া বারবার ওকে এসব স্মরন করাচ্ছিস কেনো? তুই কি চাস না তোর ভাই ভালো থাকুক?
– ভাইয়ের ভালো ভাবতে গিয়েই তো,,,,,,,

রিমনের কথা শেষ হওয়ার আগেই বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো। সোফা ছেড়ে খুব দ্রুত দরজার দিকে এগিয়ে গেলো কৌশিক। আবিদ এসেছে। তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে অর্পিতা। কৌশিক দরজা ছেড়ে ওদের ভেতরে আসতে বললো। অর্পিতাকে দেখে সোফা ছেড়ে দাঁড়ালো আশফাক। ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে তার। অর্পিতার কাছে এগিয়ে আসতেই পিছিয়ে গেলো অর্পিতা। থেমে গেলো আশফাক। একনজরে তাকিয়ে আছে অর্পিতার দিকে। ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে কৌশিক। যে মানুষটাকে বরাবরই আশপাকের আশপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা গেছে সে মানুষটা আজ আশফাকের ধারে কাছে থাকতে চাচ্ছে না। দুজনের শরীরের মাঝে খুবজোড় একহাত দূরত্ব। আর মন? হাজার মাইল দূরে চলে এসেছে। ব্যাপারটা পীড়া দিচ্ছে কৌশিককে। আশফাকের এই মুহুর্তে মনের অবস্থা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছে কৌশিক।

– আচ্ছা, তোমরা দুজন আলাদা বসে কথা বলো। আমরা এখানে আছি।
– আলাদা বসার দরকার কি? যা বলার এখানেই বলুক।
– সমস্যা কি আবিদ? ওদের দুজনের মামলা ওদেরকে সামাল দিতে দাও না রে ভাই। ওদের মাঝে বারবার তুমি কেনো নাক গলাচ্ছো বুঝলাম না তো।
– আমার বোনের ব্যাপারে আমি তো নাক গলাবোই।
– বোনের এখন বিয়ে হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রথমে ও আশফাকের ওয়াইফ এরপর ও তোমার বোন।
– আমি এখানে বসেই কথা বলবো।
– প্লিজ, অর্পি আমরা ভিতরে বসে কথা বলি। সবার সামনে তো সব বলা যায় না।
– কেনো বলা যায় না? লজ্জা পাও? লজ্জা আছে তোমার?
– দেখো যা খুশি বলো কিন্তু এখানে না। প্লিজ, চলো আমার সাথে।

কথাটা বলেই অর্পিতার হাত শক্ত করে ধরলো আশফাক।

– প্লিইইজ,,,,,
– অর্পিতা আমরা থার্ড পার্সন। নিজেদের সমস্যাগুলো নিজেরা আলাদা সলভ করো। অহেতুক আমাদের শুনিয়ে লাভ কি বলো? বড় হয়েছো। ব্যাপারগুলো তো বুঝো তাই না?
আবিদের মুখের দিকে তাকালো অর্পিতা। ইশারায় আলাদা বসে কথা বলতে বললো আবিদ।

মুখোমুখি বসে আছে অর্পিতা আর আশফাক৷ বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে অর্পিতা আর আশফাক তাকিয়ে আছে অর্পিতার মুখের দিকে। চেহারার লাবন্যতা দুশ্চিন্তা গ্রাস করে নিয়েছে। সেখানে এখন মলিনতার বিচরন। চোখের নিচে কালচে দাগ পড়েছে। শুকিয়ে গেছে বেশ। খানিকটা কাছে এগিয়ে এসে অর্পিতার গালে হাত রাখলো আশফাক।

– কোথায় চলে গিয়েছিলে হুম? তোমাকে ছাড়া আমি কতটা অচল হারে হারে টের পেয়েছি। তোমার শূন্যতা আমাকে শেষ করে দিচ্ছিলো। তোমাকে ছাড়া নিঃশ্বাস নেয়াটাও কষ্টের।

নিষ্পলক অাশফাকের দিকে তাকিয়ে আছে অর্পিতা। চোখে শুধু ঘৃনা জ্বলজ্বল করছে। গাল থেকে হাতটা সরিয়ে বললো,

– মানুষ এত নিখুঁতভাবে মিথ্যা কিভাবে বলতে পারে?
– মিথ্যা বলছি না। বিশ্বাস করো।
– কাকে বিশ্বাস করতে বলো? তোমাকে?
– মানুষের চোখ মিথ্যা বলে না। আমার চোখের দিকে তাকাও তো৷ দেখো তো মিথ্যা বলছি কিনা।
– মানুষের চোখ পড়ার ক্ষমতা আমার নেই। থাকলে তোমার মিথ্যা সেই কবেই ধরতে পারতাম।
– খুব ঘৃনা করতে শুরু করেছো আমাকে তাই না?
– ঘৃনা করাটা কি উচিত না? ভালোবাসা উচিত?
– জানি না কি করা উচিত। কিন্তু আমি যে তোমাকে ছাড়া অচল।
– আমিও তোমাকে ছাড়া অচল ছিলাম। তুমি ছাড়া নিজেকে অস্তিত্বহীন মনে হতো। ব্যাপারটা ছিলো এমন, তুমি আছো তো আমি আছি। তুমি নেই তো আমি নেই। তোমার মাঝে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াতাম। তুমি যে আমার কি ছিলে, কতটা জুড়ে ছিলে তা তুমি জানো না৷ এই যে দেখো, সেই আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে শিখে গেছি। কে বলে একজনকে ছাড়া অন্যজন অচল? ভুল কথা৷ সব মিথ্যা৷ চরম মিথ্যা। কেও কাউকে ছাড়া অচল না। কারো জীবন থেমে থাকে না। সবাই নিজের তাগিদে বেঁচে থাকে। আর তুমি? তুমি তো কখনো আমাকে ভালোইবাসোনি। তোমার জীবন থেমে থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না। তোমার আশপাশে তো হূর পরীদের অভাব নেই। সকালে একজন রাতে আরেকজন। সেখানে অর্পিতা নামক কোনো সাধারণ মেয়ে মানুষের প্রয়োজন নেই। আমি তোমার আবেগ ভালোবাসা কোনোটাই না। আমি শুধুমাত্র তোমার জীবনে একটা সংখ্যা। সাময়িক বিনোদোনের সংখ্যা। আচ্ছা তোমার ইউজ করা মেয়েগুলোর মধ্যে আমি কততম? ৫০ নাকি ৬০?
– তুমি আমার ওয়াইফ। কোনো সংখ্যা না।
– আচ্ছা আমাকে বিয়ে কেনো করেছো? মিথ্যা বিয়ে করলেই তো হতো। তোমার তো বউ দরকার ছিলো না। তোমার প্রয়োজন শুধুমাত্র এন্টারটেইনমেন্ট। ভুয়া বিয়ে করে খুব সহজেই আমাকে বিছানা অব্দি নিতে পারতে৷ শুধুশুধু বিয়ে করলে। এখন এই ডিভোর্স নিয়ে কি একটা ঝামেলা পোহাতে হবে! আব্বু আম্মু পর্যন্ত এই কথা যাবেই। কতটা ঝামেলায় তুমি আমাকে ফেলেছো ভাবতে পারছো? তুমি তো বেসামাল রকমের ধাক্কা দিয়েছোই, তারউপর এই ডিভোর্স নিয়ে কম ঝক্কি সামাল দিতে হবে না। সবগুলো ধাক্কা একসাথে পাচ্ছি। এখন কি করা উচিত আমার? হাজবেন্ড আমাকে বাজেভাবে ধোঁকা দিয়েছে সেটা নিয়ে দুঃখ বিলাস করা উচিত নাকি বাবা মা কে কি উত্তর দিবো সোসাইটিতে কিভাবে মুখ দেখাবো সেটা নিয়ে ভাবা উচিত?
– একতরফা কখন থেকে বলেই যাচ্ছো। কিসের ডিভোর্স? কে দেবে ডিভোর্স তোমাকে?
– কেনো? ডিভোর্স পেপারে সাইন করবে না?
– মরে গেলেও না।
– কেনো? প্রোপার এন্টারটেইন করতে পারিনি? আরো চাও?
– তোমাকে আমার প্রয়োজন। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন।
– দেখো, তোমার এসব কথা শুনলে আগে মনে প্রেম জাগতো৷ একেবারে উথাল পাথাল প্রেম। এখন অসহ্য লাগে। রাগে গা জ্বলে। তোমার প্রতিটা মিথ্যা কথা, নাটক সব মনে পড়ে যায়। নিজের বোকামির কথা বারবার স্মরণ হয়ে যায়। আসল কথায় আসি যেটা বলার জন্য এসেছি। আমি ডিভোর্স চাই। চাই মানে চাই। তোমার মত প্রতারকের সাথে বাস করা অসম্ভব।

হ্যাচকা টানে অর্পিতাকে বুকে নিয়ে এলো আশফাক৷ দুহাতে শক্ত করে ধরে রেখেছে অর্পিতাকে।

– বললেই হলো? হুম? মরার আগে তোমাকে ছাড়ছি না। ভালোবাসি তোমাকে। কে বলে প্রিয়জনকে ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব? হয়তোবা ওরা পারে। আমি পারবো না। সব হারিয়ে তোমাকে পেয়েছি। তোমাকে চিনতে একটু সময় লেগেছে এটাই ভুল। আগে চিনলে কখনোই এমন করতাম না। জানি কখনো ক্ষমা করতে পারবে না৷ ভালোবেসে আমার অন্যায়গুলো মাটিচাপা দেয়ার একটা সুযোগ তো অন্তত দাও। জাস্ট একটা সুযোগ দরকার।

কথার ফাঁকে নিজেকে দুই তিনবার ছাড়াতে চেয়েছে অর্পিতা৷ প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে। শেষমেষ জোরে চেঁচিয়ে উঠলো অর্পিতা। #ভোরের_আলো
পর্ব-৩৮
লেখা-মিম

অর্পিতার অপেক্ষায় সকাল থেকে অধীর আগ্রহে বসে আছে আশফাক। গতরাত থেকে কৌশিকও এখানেই আছে। অর্পিতা কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা শোনার কৌতুহল রিমন কৌশিকেরও কম নেই। আজকে অর্পিতার নেয়া সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করবে ওর এরপর কিভাবে এগোবে। যদি অর্পিতা সংসার করতে রাজি হয়ে যায় তো ভালো কথা। আজকেই অর্পিতার বাড়ি প্রস্তাব নিয়ে যাবে। আর যদি রাজি না হয় তো অনিচ্ছাবশত আঙুল বাঁকা করতেই হবে। দুইধরনের প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছে কৌশিক। কিন্তু অর্পিতার মুখোমুখি হওয়ার সাহস রিমনের হয় না। লজ্জা লাগে মেয়েটার মুখোমুখি হতে। কোন মুখে দাঁড়াবে ওর সামনে? যদি জিজ্ঞেস করে বসে জেনেশুনে তোমার ভাইয়ের মত একটা মানুষের সাথে আমাকে বিয়ে দিলে কি করে? একটুও বিবেকে বাঁধলো না? তখন কি উত্তর দিবে সে? বড্ড স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম। শুধু ভাইয়ের ভালোর কথা ভেবেছি। তাই এমনটা করেছি? প্রত্যুত্তরে কি বলবে অর্পিতা? মনভরে অভিশাপ দিবে নিশ্চয়ই!

ড্রইংরুমে বসে সিগারেট ফুঁকছে আশফাক। মাত্রই গোসল সেড়ে এখানে এসে বসেছে।

– তোর কি শুধু সিগারেট খেলেই দিন যাবে? ভাত খাবি না? তিনটা বেজে গেছে তো।
– উহুম।
– কি উহুম?
– গলা দিয়ে খাবার ঢুকবে না।
– কেনো ঢুকবে না? তোর বউ তো আসছেই।
– প্রচুর টেনশনে আছি। আমার সাথে তো ভুলেও থাকতে চাইবে না৷ কিভাবে আটকাবো ওকে?
– সমস্ত প্রিপারেশন নিয়েই রেখেছি। মাথা ঠান্ডা রাখ।
– তবুও,,,,, চোখ বন্ধ করে সেদিনের কথা যখন কল্পনা করি অর্পিতা নিজচোখে আমাকে রাত্রির সাথে দেখেছে, মাথাটা ঝিম মেরে যায়।
– আর আমার মন চায় দেয়ালে মাথা ঠুঁকে মরে যাই৷ কত বড় অপরাধের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরছি তা কাউকে বুঝাতে পারবো না। অর্পিতার কথা মাথায় এলে মনে হয় বিয়ে করিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছি। আর তোমাকে দেখলে মনে হয় ভাগ্যিস বিয়েটা করিয়েছিলাম। আর নয়তো এ জীবনে অর্পিতাকে পাওয়ার আশা করতে পারতে না। কি করলে তুমি? কেনো করলে কিচ্ছু বুঝি না। একটাবারও কি হাত কাঁপলো না তোমার আরেক মেয়ের গায়ে হাত দিতে?
– বাদ দে রিমন। যা হওয়ার হয়েছে। ঐ ঘটনা তো আমরা কেও বদলাতে পারবো না৷ তাছাড়া বারবার ওকে এসব স্মরন করাচ্ছিস কেনো? তুই কি চাস না তোর ভাই ভালো থাকুক?
– ভাইয়ের ভালো ভাবতে গিয়েই তো,,,,,,,

রিমনের কথা শেষ হওয়ার আগেই বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো। সোফা ছেড়ে খুব দ্রুত দরজার দিকে এগিয়ে গেলো কৌশিক। আবিদ এসেছে। তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে অর্পিতা। কৌশিক দরজা ছেড়ে ওদের ভিতরে আসতে বললো। অর্পিতাকে দেখে সোফা ছেড়ে দাঁড়ালো আশফাক। ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে তার। অর্পিতার কাছে এগিয়ে আসতেই পিছিয়ে গেলো অর্পিতা। থেমে গেলো আশফাক। একনজরে তাকিয়ে আছে অর্পিতার দিকে। ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে কৌশিক। যে মানুষটাকে বরাবরই আশপাকের আশপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা গেছে সে মানুষটা আজ আশফাকের ধারে কাছে থাকতে চাচ্ছে না। দুজনের শরীরের মাঝে খুবজোড় একহাত দূরত্ব। আর মন? হাজার মাইল দূরে চলে এসেছে। ব্যাপারটা পীড়া দিচ্ছে কৌশিককে। আশপাকের এই মূহূর্ত্বের মনের অবস্থা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছে কৌশিক।

– আচ্ছা, তোমরা দুজন আলাদা বসে কথা বলো। আমরা এখানে আছি।
– আলাদা বসার দরকার কি? যা বলার এখানেই বলুক।
– সমস্যা কি আবিদ? ওদের দুজনের মামলা ওদেরকে সামাল দিতে দাও না রে ভাই। ওদের মাঝে বারবার তুমি কেনো নাক গলাচ্ছো বুঝলাম না তো।
– আমার বোনের ব্যাপারে আমি তো নাক গলাবোই।
– বোনের এখন বিয়ে হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রথমে ও আশফাকের ওয়াইফ এরপর ও তোমার বোন।
– আমি এখানে বসেই কথা বলবো।
– প্লিজ, অর্পি আমরা ভিতরে বসে কথা বলি। সবার সামনে তো সব বলা যায় না।
– কেনো বলা যায় না? লজ্জা পাও? লজ্জা আছে তোমার?
– দেখো যা খুশি বলো কিন্তু এখানে না। প্লিজ, চলো আমার সাথে।

কথাটা বলেই অর্পিতার হাত শক্ত করে ধরলো আশফাক।

– প্লিইইজ,,,,,
– অর্পিতা আমরা থার্ড পার্সন। নিজেদের সমস্যাগুলো নিজেরা আলাদা সলভ করো। অহেতুক আমাদের শুনিয়ে লাভ কি বলো? বড় হয়েছো। ব্যাপারগুলো তো বুঝো তাই না?
আবিদের মুখের দিকে তাকালো অর্পিতা। ইশারায় আলাদা বসে কথা বলতে বললো আবিদ।

মুখোমুখি বসে আছে অর্পিতা আর আশফাক৷ বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে অর্পিতা আর আশফাক তাকিয়ে আছে অর্পিতার মুখের দিকে। চেহারার লাবন্যতা দুশ্চিন্তা গ্রাস করে নিয়েছে। সেখানে এখন মলিনতার বিচরন। চোখের নিচে কালচে দাগ পড়েছে। শুকিয়ে গেছে বেশ। খানিকটা কাছে এগিয়ে এসে অর্পিতার গালে হাত রাখলো আশফাক।

– কোথায় চলে গিয়েছিলে হুম? তোমাকে ছাড়া আমি কতটা অচল হারে হারে টের পেয়েছি। তোমার শূন্যতা আমাকে শেষ করে দিচ্ছিলো। তোমাকে ছাড়া নিঃশ্বাস নেয়াটাও কষ্টের।

নিষ্পলক অাশফাকের দিকে তাকিয়ে আছে অর্পিতা। চোখে শুধু ঘৃনা জ্বলজ্বল করছে। গাল থেকে হাতটা সরিয়ে বললো,

– মানুষ এত নিখুঁতভাবে মিথ্যা কিভাবে বলতে পারে?
– মিথ্যা বলছি না। বিশ্বাস করো।
– কাকে বিশ্বাস করতে বলো? তোমাকে?
– মানুষের চোখ মিথ্যা বলে না। আমার চোখের দিকে তাকাও তো৷ দেখো তো মিথ্যা বলছি কিনা।
– মানুষের চোখ পড়ার ক্ষমতা আমার নেই। থাকলে তোমার মিথ্যা সেই কবেই ধরতে পারতাম।
– খুব ঘৃনা করতে শুরু করেছো আমাকে তাই না?
– ঘৃনা করাটা কি উচিত না? ভালোবাসা উচিত?
– জানি না কি করা উচিত। কিন্তু আমি যে তোমাকে ছাড়া অচল।
– আমিও তোমাকে ছাড়া অচল ছিলাম। তুমি ছাড়া নিজেকে অস্তিত্বহীন মনে হতো। ব্যাপারটা ছিলো এমন, তুমি আছো তো আমি আছি। তুমি নেই তো আমি নেই। তোমার মাঝে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াতাম। তুমি যে আমার কি ছিলে, কতটা জুড়ে ছিলে তা তুমি জানো না৷ এই যে দেখো, সেই আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে শিখে গেছি। কে বলে একজনকে ছাড়া অন্যজন অচল? ভুল কথা৷ সব মিথ্যা৷ চরম মিথ্যা। কেও কাউকে ছাড়া অচল না। কারো জীবন থেমে থাকে না। সবাই নিজের তাগিদে বেঁচে থাকে। আর তুমি? তুমি তো কখনো আমাকে ভালোইবাসোনি। তোমার জীবন থেমে থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না। তোমার আশপাশে তো হূর পরীদের অভাব নেই। সকালে একজন রাতে আরেকজন। সেখানে অর্পিতা নামক কোনো সাধারণ মেয়ে মানুষের প্রয়োজন নেই। আমি তোমার আবেগ ভালোবাসা কোনোটাই না। আমি শুধুমাত্র তোমার জীবনে একটা সংখ্যা। সাময়িক বিনোদোনের সংখ্যা। আচ্ছা তোমার ইউজ করা মেয়েগুলোর মধ্যে আমি কততম? ৫০ নাকি ৬০?
– তুমি আমার ওয়াইফ। কোনো সংখ্যা না।
– আচ্ছা আমাকে বিয়ে কেনো করেছো? মিথ্যা বিয়ে করলেই তো হতো। তোমার তো বউ দরকার ছিলো না। তোমার প্রয়োজন শুধুমাত্র এন্টারটেইনমেন্ট। ভুয়া বিয়ে করে খুব সহজেই আমাকে বিছানা অব্দি নিতে পারতে৷ শুধুশুধু বিয়ে করলে। এখন এই ডিভোর্স নিয়ে কি একটা ঝামেলা পোহাতে হবে! আব্বু আম্মু পর্যন্ত এই কথা যাবেই। কতটা ঝামেলায় তুমি আমাকে ফেলেছো ভাবতে পারছো? তুমি তো বেসামাল রকমের ধাক্কা দিয়েছোই, তারউপর এই ডিভোর্স নিয়ে কম ঝক্কি সামাল দিতে হবে না। সবগুলো ধাক্কা একসাথে পাচ্ছি। এখন কি করা উচিত আমার? হাজবেন্ড আমাকে বাজেরকমের ধোঁকা দিয়েছে সেটা নিয়ে দুঃখ বিলাস করা উচিত নাকি বাবা মা কে কি উত্তর দিবো সোসাইটিতে কিভাবে মুখ দেখাবো সেটা নিয়ে ভাবা উচিত?
– একতরফা কখন থেকে বলেই যাচ্ছো। কিসের ডিভোর্স? কে দিবে ডিভোর্স তোমাকে?
– কেনো? ডিভোর্স পেপারে সাইন করবে না?
– মরে গেলেও না।
– কেনো? প্রোপার এন্টারটেইন করতে পারিনি? আরো চাও?
– তোমাকে আমার প্রয়োজন। বেঁচে থাকার প্রয়োজন।
– দেখো, তোমার এসব কথা শুনলে আগে মনে প্রেম জাগতো৷ একেবারে উথাল পাথাল প্রেম। এখন অসহ্য লাগে। রাগে গা জ্বলে। তোমার প্রতিটা মিথ্যা কথা, নাটক সব মনে পড়ে যায়। নিজের বোকামির কথা বারবার স্মরণ হয়ে যায়। আসল কথায় আসি যেটা বলার জন্য এসেছি। আমি ডিভোর্স চাই। চাই মানে চাই। তোমার মত প্রতারকের সাথে বাস করা অসম্ভব।

হ্যাচকা টানে অর্পিতাকে বুকে নিয়ে এলো আশফাক৷ দুহাতে শক্ত করে ধরে রেখেছে অর্পিতাকে।

– বললেই হলো? হুম? মরার আগে তোমাকে ছাড়ছি না। ভালোবাসি তোমাকে। কে বলে প্রিয়জনকে ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব? হয়তোবা ওরা পারে। আমি পারবো না। সব হারিয়ে তোমাকে পেয়েছি। তোমাকে চিনতে একটু সময় লেগেছে এটাই ভুল। আগে চিনলে কখনোই এমন করতাম না। জানি কখনো ক্ষমা করতে পারবে না৷ ভালোবেসে আমার অন্যায়গুলো মাটিচাপা দেয়ার একটা সুযোগ তো অন্তত দাও। জাস্ট একটা সুযোগ দরকার।

কথার ফাঁকে নিজেকে দুই তিনবার ছাড়াতে চেয়েছে অর্পিতা৷ প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে। শেষমেষ জোরে চেঁচিয়ে উঠলো অর্পিতা।
– ছাড় আমাকে। নির্লজ্জ। তোর মত নোংরা না আমি। তুই আমার গায়ে হাত দিলে নিজেকে নোংরা মনে হয়৷ তোর ঐসব গার্লফ্রেন্ডদের মতো বারো ঘাটের জল আমি খাইনি। ঐসব বাজে মেয়েদের শরীর হাতিয়ে এখন এসেছিস আমার গায়ে হাত দিতে৷ অসভ্য জানোয়ার একটা। কত মজা নিয়ে কুকাজ করছিলি তা তো নিজ চোখেই দেখেছি৷ তোর ঐ গার্লফ্রেন্ডের কত্ত মুড নিয়ে উহ আহ গান গাচ্ছিলো সেগুলোও শুনেছি। এগুলো মনে পড়লে ইচ্ছে করে তোর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেই। আমার জীবনে একটা কালো দাগ ফেলে দিলি তুই জানোয়ার। শান্তি পাবি না৷ আল্লাহ যেনো তোকে সহজে মরন না দেয়৷ তোকে যেনো মানসিক যন্ত্রনা দিয়ে দিয়ে একটু একটু করে শেষ করে৷ আর ডিভোর্স? ডিভোর্স তোকে আমি দিবোই। তুই আমাকে মুক্তি দিয়ে তোর গার্লফ্রেন্ডদের সাথে যত খুশি ফূর্তি কর যেয়ে৷ চামার কোথাকার।

বোনের চেঁচামেচির আওয়াজ পেয়ে আশফাকের রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে আবিদ।

– বেরিয়ে আয় অর্পিতা৷ যা দরকার ছিলো বলেছিস৷ আর কথা বাড়ানোর দরকার নেই।

আশফাকের কাছ থেকে কোনোভাবেই নিজেকে ছাড়িয়ে আনতে পারছিলো না অর্পিতা। শেষমেষ উপায়ন্তর না পেয়ে আশফাকের হাত কামড়ে ধরলো। সহ্য করতে না পেরে অর্পিতাকে ছেড়ে দিলো আশফাক৷ হাত থেকে রক্ত বেরুচ্ছে তার।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here