ভোরের_আলো পর্ব-৩৭

0
889

#ভোরের_আলো
৩৭.

অর্পিতাকে নিয়ে আলাদা গাড়িতে বসেছে আবিদ। এই গাড়িতে শুধু আবিদ আর অর্পিতাই আছে। অন্য গাড়ীতে বাকি সবাইকে পাঠিয়ে দিয়েছে সে। বোনের সাথে আলাদা কিছু কথা বলার আছে তার। একান্তে। খানিকটা পথ যাওয়ার পর বলতে শুরু করলো আবিদ।

– অর্পি, তোকে কিছু বলার ছিলো।
– কি?
– তোর কাছে একটা কথা লুকিয়েছি।
– কি কথা?
– আশফাক ভাই আর তোর বিয়েটা সত্যিই হয়েছিলো।

মোবাইলের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিলো অর্পিতা। আবিদের কথা শুনে মুখ তুলে তাকালো সে। দ্বিধা চোখে স্পষ্ট। সামান্য ভ্রুঁ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

– কে বলেছে?
– কাগজ আমি নিজে দেখেছি।
– কাগজ কোথায় পেলে?
– বেড়াতে আসার আগের দিন রাতে কাগজসহ আশফাক ভাই বাসায় চলে এসেছিলো। পরে আমি ওকে বাহিরে নিয়ে এসেছি। কাগজটা দেখিয়ে বারবার বলছিলো ওর সাথে বিয়ে হয়েছে। বিয়েটা মিথ্যা না। কাগজের ছবি তুলে আমার এক বন্ধুকে দিলাম। ও ল’ইয়ার। ও বললো কাগজ সব ঠিকঠাক আছে। আর আশফাক ভাই বলছে শরীয়াহ মোতাবেকও নাকি বিয়েটা সত্যিই করেছে। যেহেতু কাগজটা সত্যি তারমানে শরীয়াহ মতের বিয়েটাও সত্যিই হবে। বারবার রিকুয়েস্ট করছিলো তোকে যেনো ওর হাতে তুলে দেই। ভেবে দেখলাম বাসায় থাকলে কাগজ নিয়ে আবার চলে আসবে। তোর সাথে যোগাযোগ করতে চাইবে। আব্বু আম্মুর কাছ থেকে কতক্ষণ লুকাবো? ধরা পড়ে যেতাম। ভেবেছিলাম বেশ কিছুদিন দূরে থেকে কিছু একটা প্ল্যান করে এরপর বাসায় যাবো। কিসের কি? প্ল্যান করার আগেই কৌশিক ভাই ফোন করলো গতকাল। তোর সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। তারউপর আমি বলে এসেছি তোকে ওর কাছে দিবো না। এখন ছয়দিন যাবৎ কিছু খাচ্ছে না৷ অসুস্থ হয়ে গেছে খুব। কৌশিক ভাই বললো তোকে নিয়ে আজকের মধ্যে যেতে। না গেলে বিশাল ঝামেলা করবে৷ যেহেতু মুখ দিয়ে বলেছে ঝামেলা করবে তারমানে ঝামেলা করবেই।
– এজন্যই কি ঢাকা চলে যাচ্ছি?
– এছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না। আমি চাই না এসব নিয়ে এলাকায় কোনো কথা উঠুক।
– ও তো আমাকে ভালোবাসে না৷ তাহলে বিয়ে করলো কেনো?
– সে প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই।
– বিয়ে হলে হয়েছে। আমি ওর সংসার করবো না।
– দেখ অর্পিতা, সংসার করবি না ভালো কথা৷ আমিও চাইনা তুই উনার সংসার কর। কিন্তু অনেক সমস্যা আছে। বিয়েটা তুই আড়ালে করতে পেরেছিস। কিন্তু ডিভোর্স কখনো লুকিয়ে হয় না। সমাজের পাঁচজন জানাজানি হবেই। সবাইকে জানিয়ে তালাক্ব করাতে হবে। এলাকার কমিশনারের কাছে নোটিশ পাঠাতে হবে। উনারা সালিশ বসাবে মিমাংসার জন্য। সালিশ বসানো মানে আশপাশের লোক জানা। সমাজের কথা বাদ দিলাম। আব্বু আম্মুকে কি বলবি? বিয়ে হতে না হতেই ডিভোর্স?

হতাশ লাগছে অর্পিতার। শূন্যদৃষ্টিতে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে সে। চোখজোড়া জ্বালা করছে। দেয়ালে মাথা ঠু্ঁকে মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। এতটা হিতাহিতজ্ঞানশূন্য একটা মানুষ কি করে হতে পারে? ভালো-মন্দের যাচাই না করে মাত্র চারমাসের পরিচয়ে বিয়ে! নিজের নেয়া সিদ্ধান্তটাকে নিজেরই বিশ্বাস হয়না। স্বপ্ন-স্বপ্ন লাগে। কি করে সম্ভব? কি করে? কারো প্রতি মোহ কি এমন অন্ধই হয়? নাকি আশফাক অন্ধ মোহ তৈরী করতে জানে?

– কিভাবে কি করবো কিচ্ছু মাথায় আসছে না। কৌশিক ভাই যেভাবে জোর দিয়ে বললো আর আশফাক ভাই সেদিন যেভাবে রিকুয়েস্ট করছিলো মনে হয়না এত সহজে সেখান থেকে ছুটতে পারবি। ছোটবেলা থেকে আশফাক ভাই অবহেলা পেয়ে বড় হয়েছে৷ মোটকথা সে একজন ভালোবাসার কাঙাল। তোর কাছে ভালোবাসা পেয়েছে, যত্ন পেয়েছে। এত সহজে তোকে উনি ছাড়বে না।
– ভালোবাসার কাঙাল হলে আমার সাথে এমন বেঈমানী করার কথা না। বরং আমার ভালোবাসাকে সযত্নে আগলে রাখার কথা ছিলো।
– ঐ যে স্বভাব খারাপ হয়ে গেছে। মেয়ে মানুষের নেশা তো। হাজার ভালোবাসা দিলেও বাইরে ছুটবেই।

দীর্ঘশ্বাস ফেললো অর্পিতা। মাথায় আপাতত শুধু বাবা মায়ের কথা ঘুরছে৷ লোক জানাজানি হলে বাবা মায়ের সম্মান কোথায় যেয়ে ঠেকবে? বাবা মা তো কষ্ট পাবে। মাথাটা ঘুরিয়ে উঠলো অর্পিতার।

– শোন, আমরা সরাসরি এখন আশফাক ভাইয়ের বাসায় যাবো। তোরা দুজন আলাদা বসে কথা বল৷ বুঝিয়ে শুনিয়ে বল সেপারেশনের কথা যাতে বেশি ঝামেলা না করে। আপোষে সেপারেট হওয়াই বেটার৷ আর আব্বু আম্মুর ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দে। ঐটা আমি সামাল দিবো।
– কিভাবে সামাল দিবি?
– সময়েরটা সময়ে বুঝবো৷ খবরদার আব্বু আম্মু শুনবে সেই ভয়ে এমন একটা মানুষের সাথে সংসার করার সিদ্ধান্ত নিস না৷ উনার সংসারে গেলে কখনোই ভালো থাকতে পারবি না।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here