তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি পার্ট:২১+২২

তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি
পার্ট:২১+২২
#পিচ্চি_লেখিকা

সবাই আজ বিছানাকান্দির অপরূপ দৃশ্য দেখার জন্য ছুটে চলেছে। গাড়ি করে যাচ্ছে আর বাহিরের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। আয়ুশ গাড়ি চালাচ্ছে পাশেই আরিয়া। পেছনে আইরা দিয়া ইমন রিমা আরিফা সবাই আছে। মিষ্টিও আসতে চেয়েছিলো কিন্তু সামনেই ওর বিয়ে বলে বের হতে দেয়নি কেউ। আরিফা পেছনে বসে শুধু রাাগে ফোসফাস করছে অবশ্য আরিয়ার তাতে যায় আসে না। আয়ুশ গাড়ি চালাচ্ছে আর বার বার আরিয়ার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। আরিয়া লং গাউন পড়েছে,চুল খুলে রেখেছে,চোখে গাড় করে কাজল এটে দেওয়া আর ঠোটে হালকা ভাবে লিপস্টিক দেওয়া। একদম হালকা ভাবেই সেজেছে তাতেই তাকে অসাধারণ লাগছে। এই মেয়েটা আয়ুশেরও এক কাঠি ওপরে তা সে ভালোই বুঝেছে। ভেবেছিলো এক থাপ্পড় খেয়ে সত্যি আর ওর সামনে আসবে না অথচ হলো তার উল্টো।

তখন ভোরবেলা আরিয়া চলে যাওয়ার পর আয়ুশ কাজ করছিলো লেপটপে। রোদ উঠে যাওয়ায় তার দরজায় নক পড়ে। আয়ুশ খুলে দেখে দিয়া,আইরা,মিষ্টি ৩ জনই দাড়িয়ে আছে! আরিয়া নেই। আয়ুশ ভেবেছিলো হয়তো রাগ করছে। মিষ্টি রুমে ঢুকতে ঢুকতে আয়ুশের হাতে কফি দিয়ে বলে,,

“” কাজ করছিলি?

“” হ্যা রে। তোরা এত সকাল সকাল আমার রুমে? বিশেষ দরকার নাকি?

“” ওইরকমই আরকি।

আয়ুশ ভ্রু যুগল কিঞ্চিত কুচকে বলে,,

“” ভালো করে বল!

“” ছোটরা সবাই বায়না ধরেছে বিছানাকান্দি ঘুরে দেখবে। আম্মু আমাকে যেতে দেবে না সাফ সাফ বলে দিয়েছে। ওরা সবাই চায় তুইও যাবি ওদের সাথে।

“” এই পাগল হয়ছিস? আমার সময় নেই। কাজ আছে। ওরাই যাক ঘুরে আসুক।

হঠাৎ করেই আইরা আর দিয়া দুজন এক সাথে বলে,,

“” প্লিজ ভাইয়া প্লিজ না কইরেন না প্লিজ।

আয়ুশ ওদের জোড়াজুড়িতে যেতে রাজি হয়। আরিয়া তো যাবেই এটা আবার বলার দরকার নাকি। বিকেল বেলা যাওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়। সবাই মিলে যখন বের হবে তখন আরিফা ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসতে গেলে আরিয়াই আগে বসে পড়ে। সবাই জিজ্ঞেস করলে বলে তার সামনে বসতে ভালো লাগে। আইরা ভালো মতোই বুঝেছে আসল কাহিনি কি তাই দিয়াকেও থামিয়ে দেয় আর আরিফা তো রাগে জলছে। গাড়ি তার আপন গতিতে চলছে। আরিয়ার খোলা চুল গুলো উড়ছে আর আয়ুশ তা বার বারই আড় চোখে দেখছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই বিছানাকান্দিতে চলে আসে। সত্যিই অপরুপ সৌন্দর্য এই জায়গাটার। পানির শুরু তো দেখা যাচ্ছে তবে তার শেষ চোখ পড়ে না। পানির মাঝেই পাথর অনেক কাপল চারপাশে ঘুরছে।কেউ তার পরিবারের সাথে এসেছে কেউ বন্ধুবান্ধব তো কেউ হাজবেন্ডের সাথে এসেছে। কেউ কেউ তার বাবু নিয়ে ঘুরছে। ইসস কত্ত কিউট বাবু গুলা। আশে পাশে অনেক পাহাড় আছে। পানি পাথর পাহাড় নিয়েই যেন অপরুপ সৌন্দর্যের এই বিছানাকান্দি।

আরিয়া তো মুখিয়ে আছে কখন এই পানিতে নামবে। আরিয়া ধৈর্য ধরে দাড়াচ্ছে না। তাই সবাই মিলে পানিতে নামলো। আরিয়া আর আইরা বাচ্চাদের মতো লাফাচ্ছে। এত সৌন্দর্যের মাঝেও আয়ুশের চোখ তার বউজানের দিকে। এই মেয়েটার হাসি কান্না বাচ্চামো সবই মুগ্ধ করে আয়ুশকে। এই প্রকৃতি দেখার টাইম তার কাছে নাই। সে অন্য কিছু দেখতেই ব্যাস্ত। আরিয়া আর আইরা লাফালাফি করছে হঠাৎ ই আরিয়ার চোখ আয়ুশের দিকে যায়। এক ধ্যানে খুব সুক্ষ্ম ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়া বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে আয়ুশের দিকে পা বাড়ায়। আয়ুশ এখনো তার চিন্তায় মগ্ন। আরিয়া খুব সাবধানে আয়ুশের পাশে গিয়ে গলা খাকাড়ি দিয়ে বলে,,

“”উহুম উহুম,,ওই ভাবে তাকালে আমার লজ্জা করে।

আরিয়ার কথায় আয়ুশ নড়েচড়ে উঠে নিজেকে সামলে বলে,,

”” কাকে বলছেন?

“” এই একদম ন্যাকামো করবেন না। আমি দেখেছি আপনি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলেন।

“” বলেছে আপনাকে। আমি তো আরিফা কে দেখছিলাম। ওই দেখেন আরিফা।

সামনের দিকে ইশারা করে বলে। আরিয়া ইশারা ফলো করে তাকিয়ে দেখে সত্যি সেখানে আরিফা আছে। সাথে সাথে আয়ুশের কলার টেনে ধরে বলে,,

“”একদম চোখ তুলে মারবেল বসিয়ে দিবো। আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন সেইটা আমি দেখেছি তবে আরিফার দিকে ভুল করেও যদি তাকান কি যে করবো আপনাকে ভাবতেও পারছি না।

আরিয়া এত গুলো লোকজনের সামনে আয়ুশের কলার ধরেছে এত সাহস কেন এই মেয়ের? স্মৃতির বোন এত ডেঞ্জারাস আগে জানলে সে বিয়ে তো দুর ওর দিকে তাকাতো ও না। আরিয়া আয়ুশকে ছেড়ে দিয়ে আইরার কাছে এগিয়ে যেতে গিয়েও থমকে দাড়িয়ে পড়ে। কাকে যেন দেখেছে সে। আরিয়া ভালো করে খেয়াল করতেই দেখে দিশা। এতদিন পর দিশা কে দেখে আরিয়ার চোখ চকচক করছে। ছুটে দিশার কাছে যায়। আরিয়াকে এমন ছুটে আসতে দেখে দিশা ভয় পেয়ে যায়। আরিয়া খুশিতে কথা বলতে পারতেছে না। সোজা দিশাকে জড়িয়ে ধরে।

“” আরু বেবি তুই এখানে? আর এমন দৌড়াচ্ছিস কেন?

“” দিশু তোকে অনেক দিন পর দেখলাম ইসস জানু কি যে খুশি লাগছে তোকে কি বলবো?

“” হয়ছে থাক আর ন্যাকামো কইরেন না। ১ বছর তো দিশা কে সেটাই ভুলে গেছিলেন। আর আজ আসছেন ভালোবাসা দেখাতে?

অভিমানে স্বরে বাচ্চাদের মতো করে কথা গুলো বলে দেয় দিশা। অনেক অভিমান করছে দিশা তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে আরিয়া।

“” ও দিশু বেবি সরি। এই দেখ কানে ধরছি।

“” আমার সাথে কথা বলবেন না।

“” ও বেবি সরি। আলাবু জানু। প্লিজ রাগ করে না।

আরিয়া আরো অনেক কিছু বলে দিশার অভিমান ভাঙাই।

“” তুই লন্ডন থেকে বিডি তে এসেছিলি কখনও তো বলিস নি আরু। তুই বলেছিলি তোর মা নেই বাবা কোথায় তা তুই জানিস না। ছোট থেকেই নাকি মামা মামির কাছে থাকিস এতো মিথ্যা আমাকে কেন বলেছিলি? আমি কি তোর কেউ না যে আমাকে মিথ্যা বললি?

“” সরি মনু। আসলে তখন অন্যরকম চিন্তাতে ছিলাম তাই তোকে বলতে পারিনি নয়তো বলে দিতাম।

“” জানি। আরুশ ভাইয়াকে তো তুই স্যুট করেছিলি তাই না?

আরিয়া দিশার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। দিশা তো এসব জানতো না।

“” তুই কিভাবে জানলি?

দিশা মৃদু হেসে বলে,,

“”আরুশ ভাইয়া মারা যাওয়ার নিউজ দেখে আমিও তাড়াতাড়ি চলে যায় ওই বাড়ি। পরে আস্তে আস্তে শুভ ভাইয়া আমাকে সবটা জানায়। তুই তো ভাইয়াকে ভালোবাসিস তাহলে?

“” আমি আরুশকে স্যুট করিনি। যায় হোক বাদ দে এসব। একটা ম্যাজিক দেখবি?

“” ম্যাজিক? কেমন?

আরিয়া দিশাকে আয়ুশের দিকে ইশারা করে। দিশা তো শকড হা হয়ে গেছে পুরো। সে নিজে দেখেছে আরুশের লাশ তাহলে এখানে আরুশ কিভাবে? দিশা আর আরিয়া আয়ুশের কাছে যায়।

“” এই যে ফায়ুশ গুন্ডা,,

আরিয়ার কথা শুনে আয়ুশ ওর দিকে তাকায়। পাশে দিশা কে দেখে অনেকটাই অবাক হয়। তারপর নিজেকে সামলে বলে,,

“” ফায়ুশ কি? আপনার মাথার সত্যি কি তার ছিড়া। আমি আয়ুশ।

“” হয়ছে হয়ছে। দিশা কথা বলবে আপনার সাথে।

“” কোন দিশা?

“” লেও ঠ্যালা এখন দিশাকেও চেনে না মাতাল একটা।

“” ওই আমাকে মাতাল বলবেন না একদম।

দিশা এতক্ষণ আয়ুশকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিলো। দুজনের ঝগড়া দেখে দিশা দুজনকে থামায়।

“” এই আপনারা থামেন এত ঝগরুটে কেন আপনারা? যায় হোক আরুশ ভাইয়া আপনি বেচে আছেন কিভাবে? আমি তো নিজে আপনার লাশ দেখেছিলাম।

“” আপু আপনিও কি এই মেয়েটার মতোই পাগল? সারাদিন আমাকে আরুশ আরুশ করে মারে। আমি আয়ুশ চৌধুরী।

“” এই আপনার এই আইডেন্টিটি বন্ধ করেন দিশা চল।

আরিয়া দিশাকে কিছুটা টানতে টানতে প্রায় নিয়ে গেলো। দিশা আরুশের কথা কিছুই বুঝেনি। আরিয়া দিশা কে সব বললো এমন সময় কোথা থেকে একটা ছেলে এসে দিশাকে বলতে লাগলো,,

“” এই দিশা তুমি এখানে আর আমি সারা দুনিয়া খুজে বেড়াচ্ছি। চলো সবাই ওয়েট করছে আমাদের জন্য।

“” তানিম দাড়ান একটু।

“” কেন?

“” আমি আসলে আরিয়ার সাথে কথা বলছিলাম।

তানিম পিছনে তাকিয়ে দেখে আরিয়া চোখ বড় বড় করে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। দিশা আরিয়াকে গাট্টা মেরে বলে,,

“”হা করে তাকাস না। এইটা আমার হবু বর। ১৫ দিন পর বিয়ে। তোর সাথে কোনো যোগাযোগ ছিল না তাই বলতে পারিনি। বিয়েতে আসিস প্লিজ।

“” ওরে তলে তলে এত কিছু আইচ্ছা আমু নে। বাই দ্যা ওয়ে এত হ্যান্ডসাম জিজু কই পাইলি?

শেষের কথাটা দিশার কানের কাছে আস্তে আস্তে বললো।

“” আকাশে পাইছি।

দিশা তানিম আর আরিয়ার পরিচয় করিয়ে দিলো। তারপর আরিয়ার থেকে বিদায় নিয়ে দুজন চলে যায়। এতক্ষণ সবটাই আয়ুশ দেখছিলো। এখানে বেশিক্ষণ থাকা নিরাপদ না তাই এক প্রকার জোড় করেই সবাই কে বাড়ি নিয়ে আসলো। সবাই যে যার মতো ফ্রেশ হতে চললো। বাড়ি আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সবাই এখন ক্লান্ত তাই রেস্ট নিচ্ছে। আয়ুশ শুয়ে শুয়ে কি যেন খুব গভীর ভাবে চিন্তা করছে। এমন সময় ফোনটা টুং শব্দ করে লাফাচ্ছে। আয়ুশ মেসেজ ওপেন করতেই দেখে আরিয়ার মেসেজ। “২ মিনিটে ছাদে আসেন নয়তো খবর আছে”। এই মেয়ে আবার তাকে আলাদা ডাকছে আবার কি মেরে দেওয়ার চিন্তা নাকি। আর নাম্বাার কই পেলো আজব। এসব ভাবতে ভাবতেই আয়ুশ ছাদে চলে যায়। আরিয়া একা দাড়িয়ে আছে। আয়ুশ আলতো ভাবে আরিয়ার পাশে দাড়িয়ে বলে,,

“” এভাবে ছাদে কেন ডাকলেন?

“” ডেকেছি বলেই এসেছেন কেন?

“”ওরে বাবা আপনি যে ডেঞ্জারাস না আসলে তো আস্তো চাবিয়ে খাবেন। আর আমার নাম্বার কই পাইলেন?

“” এতো কিছু যেন আপনার কি দরকার? চুপ করে থাকেন।

“” ওকে।

আয়ুশ মনোযোগ দিয়ে আকাশ পর্যবেক্ষণ করছে। আর আরিয়া আয়ুশকে দেখছে। আয়ুশ সেইটা আড়চোখে অনেক বারই খেয়াল করেছে। এমন চুপচাপ পরিবেশ দেখে আয়ুশও কথা বাড়ালো,,

“” সকাল বেলা ভেবেছিলাম এক থাপড় খেয়ে সত্যি আপনি আমাকে আর বিরক্ত করবেন না কিন্তু আপনি তো উলটা।

আরিয়া আয়ুশের কথা শুনে মৃদু হেসে বলে,,

“” বিরক্ত করবো না কেন ভাবলেন?

“” ওই যে থাপ্পড় দিয়ে চলে যেতে বললাম আর চলে গেলন।

“” হেহেহে,,আপনি ভেবেছেন থাপ্পড় খেয়ে চলে গেছি? আরুশ আরফান কবে থেকে এত বোকা হলো?

‘”‘মানে?

“” মানে আমি জানি আপনি কি পরিমান ঘাড়ত্যাড়া। থাপ্পড় খেয়ে একটু ফিলিংসে লেগেছে যদিও ওইটা তো ওখানেই শেষ করে দিয়েছি আর চলে যাওয়া? আরে সারা রাত জেগে জেগে আপনাকে দেখেছি তাই খুব ঘুম পাচ্ছিলো। আপনার ওখানে দাড়ালে একটুও ঘুমাতে দিতেন না তাই চলে গেছিলাম।

আয়ুশ মনে মনে বলে,,

“” এইটা কি মেয়েরে বাবা! থাপ্পড় খেয়েও সোজা হয়নি। এটাকে মেরেও আমার কাছ থেকে দুরে পাঠাতে পারবো না। আবার সারা রাত জেগে আমাকে দেখে নিজের ঘুমের ১২ টা বাজিয়েছে।

আয়ুশকে চুপ থাকতে দেখে আরিয়া বলে,,

“” এই যে হ্যালো গুন্ডা ঘাড়ত্যাড়া জামাই কি ভাবেন আপনি?

“” দেখুন আমি আপ..ছাড়ুন আপনাকে এসব বললেও আপনার মাথায় ঢুকে না আর ঢুকবেও না। সারারাত নাা ঘুমিয়ে আমাকে কেন দেখছেন?

আরিয়া ছোট করে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে,,

“” ১ বছর দেখিনি তাই কাল দেখার সুযোগ পেয়ে ভাবলাম দেখে সাধ মিটায়।

আরিয়ার কথা শুনে আর কিছু বললো না আরিয়া। আরিয়া ছাদের রেলিং এ পিঠ ঠেকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর আয়ুশ গভীর ভাবে তার বউজান কে দেখছে। দুজনের মধ্যেই পিনপতন নিরবতাাা। হঠাৎ করেই কই থেকে ইমন দৌড়ে এসে আরিয়াকে জড়িয়ে ধরে। আরিয়া তো শকড হয়ে গেছে কি হলো এটা। আয়ুশের ভাবনারা থমকে দাড়িয়েছে। কি হলো এটা। ইমন কেন জড়িয়ে ধরলো? তবে কি? আয়ুশ আর কিছু না ভেবে দ্রুত পায়ে ছাদ থেকে নেমে যায়….

চলবে….

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️❤️

হ্যাপি রিডিং😊

#তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি
#পার্ট:২২
#পিচ্চি_লেখিকা

ইমনের এমন হাব ভাব মোটেও ভালো লাগেনি আরিয়ার। এদিকে আয়ুশও ছাদ থেকে চলে গেছে। কোথাও আবার ভুল বুঝে দুরে সরে যাবে না তো? আরিয়ার এসব ভাবতেই যেন মাথাটা ঘুরে উঠছে। কোনরকম বললো,,

“” এই ইমন কি করছিস এসব? ছাড় আমাকে।

আরিয়ার কন্ঠ পেয়েই ইমন ছিটকে দুরে সরে যায়। দুরে দাড়িয়ে বলে,,

“” তুই? এই রাতের বেলায় ছাদে?

“” বলছি। আগে বল জড়িয়ে কেন ধরেছিলি?

“” আপু আপু সরি। আমি ভেবেছিলাম দি..

ইমন আর কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে গেলো। আরিয়া বুঝতে পারছে তবুও বাজিয়ে দেখার জন্য বললো,,

“” আমি জানি তুই আমাকে অন্য কেউ ভেবেই জড়িয়ে ধরেছিস। কাকে ভেবেছিলি? তাড়াতাড়ি বল।

“” আমি কাউকে ভাবিনি।

“” আহা আমি কাউকে ভাবিনি,,(ব্যাঙ্গ করে)। ঠিক আছে তুই বলিস না। আমি নিচে গিয়ে সবাইকে বলে দেবো তুই আমাকে জড়িয়ে ধরেছিস।

আরিয়া এই কথা বলেই সামনে পা বাড়ালে ইমন কাদো কাদো বাচ্চা ফেস নিয়ে বলে,,

“‘আমার মতো অবলা একটা বাচ্চা ছেলেকে এভাবে ব্ল্যাকমেইল করতে পারছিস?

“” ব্ল্যাকমেইল কই করছি? তুই বল কাকে ভেবে জড়িয়ে ধরেছিস নয়তো আমি যাচ্ছি।

“” এই বলছি বলছি।

“” হ্যা বল বল।

“” দি..দিয়া দিয়াকে ভেবে তোকে জড়িয়ে ধরে ফেলেছি সরি বোনু।

আরিয়া এবার শব্দ করে হেসে দেয়। ইমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আরিয়ার দিকে তাকায়।

“” লাইক সিরিয়াসলি ইমন। এটুকু কথা বলতে এত সময় নিলি ভিতু কোথাকার। এত ভয় পেয়েছিলি তোর মুখটা দেখার মতো ছিল।

“” উফফ তুইও না।

“” হয়ছে হয়ছে। কবে থেকে চলছে এসব? তাই তো বলি দুজনের এত ভাব কিসের?চোখে চোখে কথা কও ওমাগো বাংলা সিনেমা হিহিহি।

“” আরু তুই কিন…

“” আরে হ্যা হ্যা তলে তলে ট্যাম্পু চালাও আমরা কইলেই হরতাল😁।

“” দাড়া হরতাল বের করছি।

ইমন ছুটে আসতে গেলে আরিয়া ভো করে দৌড় মেরে সোজা ২ তালায় চলে যায়। ইমন ওখানেই দাড়িয়ে হাসতে থাকে। তার মতো পাগল একটাও নেই। না দেখে সোজা গিয়ে কি না জড়িয়ে ধরলো। ধরেছে তো ধরেছে তাও আরিয়াকে। আরিয়া যে চিল্লানি দেয় নাই এই অনেক। এসব ভেবেই ইমন নিজের মাথায় গাট্টা মেরে হাসে। দিয়া যখন কলেজে পড়ে তখন থেকেই তাদের রিলেশন। একটু দাড়াতেই দিয়া এসে পড়ে। তারপর ওরা প্রেম করুক আমরা যায় গা।

আরিয়া আয়ুশের রুমের কাছে এসে দেখে আয়ুশের দরজা বন্ধ। ফোন করলো কিন্তু ফোন তুললো না। আইরাকে দিয়েও ডাকিয়েছে বিশেষ কোনো লাভ হয়নি। সারা রাত না ঘুমিয়ে ফোন করেই গেছে কিন্তু আয়ুশের পাত্তা নেই।

তখন ইমন আরিয়াকে জড়িয়ে ধরেছে এটা দেখেই আয়ুশ নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয়। বুকের বাম পাশে ভিষন চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। সিগারেট মুখে দিয়ে ড্রিংক বানালো। কয়েক পেগ মেরেই মেডিসিন বক্স থেকে ঘুমের ট্যাবলেট নিয়ে শুয়ে পড়লো। এই ব্যাথা তার আর সহ্য হয় না। এতদিন দুরে থাকায় কি ইমন আর আরিয়ার কোনো সম্পর্ক হয়ে গেছে?না এটা কিভাবে হয় সে তো তার আরুশকেই ভালোবাসে। তবে? তবে ইমন কেন জড়িয়ে ধরলো? আর কিছু ভাবতে পারছে না আয়ুশ। এক সময় ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় আর বেচারি আরিয়া চিন্তায় চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। সারা রাত নির্ঘুমে কাটিয়ে ভোরের দিকে একটু ঘুমালো আরিয়া।

ঘুম ভাঙে সকাল ১০ টাই। তাড়াতাড়ি আয়ুশের রুমের কাছে যায় কিন্তু এবারো দরজা আটকানো। কয়েকবার ডাকলে ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে দেয় আয়ুশ।দরজা খোলার সাথে সাথেই আরিয়া রুমের মধ্যে ঢুকে দরজা আটকে আয়ুশকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ আরিয়ার জড়িয়ে ধরাতে আয়ুশের মাথার উপর দিয়ে গেলো সব। কোনো রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,,

“” এত সকালে আমার রুমে কি? আর এভাবে জড়িয়ে ধরছেন কেন?

আরিয়া এক প্রকার কান্না করে দিছে প্রায়। সারা রাত যে কিসের মতো কাটিয়েছে তা সে নিজেই জানে। আয়ুশকে ছেড়ে দিয়ে ওর কলার ধরে রাগে গিজগিজ করতে করতে বলে,,

“” সারারাত কই ছিলেন আপনি? কত ফোন দিছি দেখেন। কতবার ডেকেছি কোনো সারা নেই। কি মনে করেন নিজেকে?

আয়ুশ নিজের কলার ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,,

“” আজব তো আমাকে খুজার কি আছে? আপনার বফ তো ছিলোই।

আরিয়া আয়ুশের এসব কথার মানে না বুঝে জিজ্ঞেস করে,,

“” কি বলছেন আবোল তাবোল? আমার কিসের বফ? আর বফের সাথে আপনার কি সম্পর্ক?

“” এত শত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না। আপনি যান তো।

“”ড্রিংক করেছেন রাতে?

আয়ুশ শান্ত গলায় বললো,,

“” হুম করেছি।

“” কেন?

“” সব প্রশ্নের আন্সার দিতে আমি বাধ্য নয়।

“” ঠিক আছে।

আরিয়া আর কথা বাড়ালো না। আরিয়া ভালো ভাবেই বুঝেছে আয়ুশ ইমনের বিষয় নিয়ে ক্ষেপে আছে। তাতে তার কি? সে তো কিছু করেনি। আর এত সমস্যা থাকলে একবার জিজ্ঞেস করছে না কেন?

২ দিন কেটে গেলো,,আরিয়া আগের মতোই আয়ুশকে জালিয়ে মারে।আজ মিষ্টির গায়ে হলুদ। সারাদিন ধরেই চলছে প্রচুর তোড়জোড়। বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে যেমন তেমন ভাবে তো আর না। অনেক মেহমান তো আগেই চলে এসেছে তার মধ্যে জুটেছে এক পাগল। আরিয়ার পিছু ছাড়েই না।৷ আর আরিয়া আয়ুশের পিছু ছাড়ে না। এদিকে ইমন আর দিয়া চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছে। রিমা আর আইরা মাাঝখান দিয়ে হা করে বসে আছে। সারাদিন আড্ডা দিয়ে বিকাল বেলা থেকেই সবাই রেডি হওয়া শুরু করে দিয়েছে। সেই সন্ধ্যা পেরিয়ে অনুষ্ঠান।

সব মেয়েরা হলুদ সাদা কম্বিনেশনে লেহেঙ্গা,আর্টিফিশিয়াল গহনা পড়েছে,গর্জিয়াস মেক আপ করেছে অনেকেই কিন্তু ওই যে আমাদের নায়িকার মেক আপ করতে ভালো লাগে না তাই সে হালকা ভাবেই সেজেছে আর আইরাকে ভারী মেক আপ করিয়েছে। সবাই এক রকম ভাবেই সেজেছে। সবার সাজ একরকম হলেও সবাইকেই দারুন লাগছে। ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামা পড়েছে। যদিও আয়ুশ পড়তে চায়নি কিন্ত আরিয়ার কড়া হুমকির কাছে বাধ্য হয়েই সব করছে। এই মেয়েটা তাকে মেরে ছাড়বে। হলুদ পাঞ্জাবি সাদা পাজামা হাতে ব্র্যান্ডের ওয়াচ,চোখে সানগ্লাস,সিল্কি চুল গুলো জেল দিয়ে ব্রাশ করা। হাতে ফোন নিয়ে নিশ্চিন্তে বসে বসে গুতাচ্ছে। আয়ুশের ফোন কল আসায় সে একটু দুরে চলে যায় কথা বলতে। কথা বলা শেষ করে খুশিমনে লিভিং রুমের দিকে আসতেই চোখ আটকে যায় সিড়িতে। আরিয়া,আইরা,দিয়া,রিমা,আরিফা সবাই একরকম ভাবে সেজেছে শুধু মুখের আটা ময়দার পার্থক্য। আরিয়া তো বরাবরই সুন্দর। আরিয়া আর আইরা এক সাথেই আছে, ২ বোন যেন ২ টা পরী।আরিয়া নিজের সাজের কথা না ভেবে বারবার আইরার সাজ ঠিক করে দিচ্ছে আর আইরা মৃদু হেসে ঠিক করছে। বড় বোন হয়তো এমনই। মা না থাকলে যেমন মায়ের দায়িত্ব পালন করে ঠিক তেমনই বন্ধুর মতো সব সময় পাশে থাকে। সব বিষয়ের খেয়াল রাখে। আইরা মাঝে মাঝে নিজেকে সত্যি ভাগ্যবান মনে করে এমন বোন পাওয়ায়। স্মৃতিও খুব ভালোবাসতো ওদের কিন্তু ভাগ্য কতটা দুরে করে দিয়েছে স্মৃতিকে। আরিয়া আইরার সাজ ঠিক করছে আয়ুশ যে তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাতে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই কিন্তু আইরা ঠিকি খেয়াল করেছে তাই আরিয়ার কাছ থেকে মুচকি হেসে সরে আসে আয়ুশের কাছে। আরিয়া এতক্ষণে খেয়াল করে আয়ুশকে। আহা তার মনে আরেকবার ক্রাশের ঘন্টা বাজলো। আয়ুশের সামনে গিয়ে আইরা,,

“” উহুম উহুম,,

আইরার গলা খাকাড়ি তে আয়ুশ তার চোখ সরিয়ে নেই।

“” কি ব্যাপার ভাইয়া?

‘””কই কি ব্যাপার আপু?

“” কোনো ব্যাপার নেই?

“”না তো। তোমাকো অনেক কিউট লাগছে। একদম ছোট্ট একটা পরী।

আয়ুশের কথায় মুচকি হাসে আইরা।

“” ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনাকেও অনেক সুন্দর লাগছে তবে এতো সুন্দর লাগার কারনে মে বি আপনাকে শাস্তি পেতে হবে।

কথাটা বলেই আইরা মুখ চেপে হেসে দেয়। আয়ুশ আইরার কথা না বুঝে বলদের মতো তাকিয়ে আছে। সুন্দর লাগার জন্য শাস্তি কেন পেত হবে?আজব।
আয়ুশকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আইরা দৌড়ে চলে যায় আর বেচারা আয়ুশ ভাবছে শাস্তি কিসের? আইরা চলে যাওয়ার পরপরই আরিয়া এসে আয়ুশের সামনে দাড়ায়। এতক্ষণে সে আইরার কথার মানে বুঝতে পেরেছে। “পিচ্চিটা দিন দিন পেকে যাচ্ছে” এটা ভেবেই সে মুচকি হাসে।

“” মুচকি মুচকি হাসছেন কেন?

“” কই হাসছি?আর যদিও হাসিও তাতে আপনার কি শুনি?

“” আমার কি তাই না! আচ্ছা বিয়েটা শেষ হোক তারপর বুঝাবো আমার কি? এখন বলেন এত হান্ডু হইয়া ঘুরতাছেন কেন?

“” হোয়াট ইজ হান্ডু?

আরিয়া ব্যাঙ্গ করে বলে,,

“” হোয়াত ইস হান্দু? ঢং কিছুই বুঝে না যেন।

“” বুঝি তো না ই।

“” বুঝাবো তো অনুষ্ঠান টা শেষ হোক।

আয়ুশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আরিয়ার পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আরিয়া তো ফুসছে। সব মেয়েরা চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। এত সুন্দর করে কেন বানায়ছে আল্লাহ। এই নিয়েই হাজারটা কথা বলতে বলতে চলে যায় আরিয়া। আর আরিয়াকে রাগাতে পেরে আয়ুশ হাসতে হাসতে শেষ। হলুদ মাখা মাখি শেষ করে সবাই বসে আছে। সবাই কাপল ডান্স করবে। কয়েকটা কাপল আগে থেকেই আছে এদিকে দিয়া আর ইমন ডান্স করবে, রিমা আর আইরা মুখে আঙুল দিয়ে বসে আছে কি আর করবে ওদের তো কাপল নেই। আরিয়াকে অনেকে ডান্সের কথা বললেও যায়নি সে। তার তো জামাইয়ের দিকে নজর। আর তার জামাইয়ের নজর ফোনের দিকে। আরিয়া উঠে গিয়ে আয়ুশের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়।

“” ফোন কেন নিচ্ছেন?ফোন দেন।

“” দিবো না,ফোনে এত কি আপনার? কোন gf আছে শুনি।

“” যেই gf ই থাকুক আপনাকে কেন বলবো?

“” ফোনও দেবো না। সবাই কাপল ডান্স করছে আর আমরাও করবো চলেন।

“”ইম্পসিবল আমি আপনার সাথে ডান্স করবো না।

“” চুপ একটাও কথা বলবেন না চুপচাপ ডান্স করেন নয়তো বিয়ে বাড়িতে সিনক্রিয়েট শুরু করে দিবো।

আয়ুশ পড়েছে মহা জালায়। এই পাগল মেয়ে তাকেও পাাগল না বানিয়ে ছাড়বে । না ডান্স করলে সত্যি যে সিনক্রিয়েট করবে তাও আয়ুশ ভালোভাবেই জানে। সে চায় না তার জন্য এমন কিছু হোক। তাই সে রাজি হয়ে গেলো,,

“” ঠিক আছে চলেন।

আরিয়া তো সম্মতি পেয়ে খুশিতে এখানেই নাচ শুরু করবে পারলে। আয়ুশের হাত টেনে ডান্স ফ্লোরে চলে যায়। সব লাইট অফ হয়ে হালকা মিটমিট করে একটা লাইট জ্বলছে যা আবছা ভাবে জানান দিচ্ছে কে কোনটা……

চলবে….

ভু্লত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️❤️

হ্যাপি রিডিং😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here