সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_১৫
Writer-Afnan Lara
.
আরেহহ!!এত ভালো বুদ্ধি আসলো দিবার মাথা থেকে,,ওড়না দিয়ে কিনা পাঞ্জাবি বানালো??
.
মা এগিয়ে এসে আহনাফের হাত থেকে পাঞ্জাবিটা নিয়ে ওলটপালট করে দেখে বললেন”কি সুন্দর হয়েছে রে দিবা!!তোর মাথায় এত বুদ্ধি জানতামই না,,কেউ দেখে বলবেই না এটা একটা ওড়নার কাপড়ের পাঞ্জাবি,,”
.
আমি পরবো না এটা,,ইম্পসিবল!
.
তুই পরবি না তোর বাপে পরবে,,নিজের জন্য তো কিছু কিনিস নাই জানা আছে আমার,ভেবেছিলাম আজ লুকিয়ে একটা পাঞ্জাবি কিনে আনবো তোর জন্য
হাতে জমানো টাকা ছিলো,কিন্তু আমার কাজ দিবাই করে দিয়েছে
এবার যা পরে আয় এটা,,তোকে বেশ লাগবে
.
না পরবো না
.
না পরলে ইলিশ ভাজা আর বেগুন ভর্তা পাবি না
.
মা এটা কিন্তু ঠিক না,আমার প্রিয় জিনিস কেড়ে নিবা এই পাঞ্জাবির জন্য?ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছো!
.
হুম তাই করবো,গিয়ে পরে আয় তাহলে দুই পিস ইলিশ মাছ দেবো পাতে
.
আহনাফ কিছুক্ষন ভাবলো
ইলিশ হলো দূর্বলতা আমার,,ইলিশ মাছের লোভ কিছুতেই ছাড়া যায় না,,,তাও এমন একটা দিনে,আবার বেগুন ভর্তা,ফেবারিট দুইটা আইটেম কিনা কম্প্রোমাইজ করবো এই পাঞ্জাবি না পরে??
.
আচ্ছা ফাইন,পরে আসছি আমি,তোমরা জিতলা আর আমি হারলাম
.
আহনাফ পাঞ্জাবিটা নিয়ে চলে গেলো,দিবা বই রেখে উঠে দাঁড়াতেই খালামণি ওকে জড়িয়ে ধরলেন,চোখ বন্ধ করে রাখলেন কিছুক্ষণ তারপর বললেন”আমার ছেলেকে আমার মতন করে আজ তুই বুঝলি,তোকে কি করে ধন্যবাদ জানাবো তা জানি না,,আমার মনের কথা তুই বাস্তবে পূরন করে দিলি,কি চাই তোর বল,আজ তোকে সেটাই দেবো”
.
দিবা মুচকি হেসে বললো”একদিন মা,বাবা ভাইয়া আর ইতিকে দাওয়াত দিবে??তাদের দেখতে,ছুঁতে মন চাইছে খুব,তুমি জোর করে বললে তারা নিশচয় আসবে”
.
খলামনি নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন,একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন”সেটা কি আর নতুন??আমি তো এতগুলো বছরে সবকয়টা অকেশানে ওরে দাওয়াত করি,,ও নিজের শ্বশুর বাড়িতেই যায় না,,বাবার বাড়ি আর বোনের বাড়ির তো ঠিকানায় ভুলে গেছে মনে হয়”
.
আচ্ছা এত কিসের অভিমান মায়ের তোমাদের উপর?
.
ঐ যে জোর করে জসিমের সাথে বিয়ে দিয়েছিলো বাবা মা,,সাদাত ওকে ছেড়ে দেওয়ার পর আমরা কথা পাঁচকান হওয়ার আগেই বিয়ে দিয়েছিলাম ওকে একটুও সময় দেইনি ওকে
ভাঙ্গা মণ নিয়ে সে বিয়ের পিড়িতে বসে ছিলো,তার সেই অভিমান আজ পর্যন্ত রেখে দিয়েছে,তবে সবচাইতে বেশি অভিমান ওর সাদাতের প্রতি
.
দিবা মুখটা ছোট করে বললো”বাবা দেখতে কেমন ছিলো জানো?দেখেছো কখনও?”
.
হ্যাঁ দেখেছিলাম,,আমাকে মৌসুমী ফটো দেখিয়েছিলো,একদম তোর চেহারা,দেহের গঠন বলিষ্ঠ,,আর ও নাকি অনেক হেসে কথা বলে,সাদাতের নাকি মুখ থেকে হাসিই সরে না,এটার প্রেমেই তো তোর মা পড়েছিলো
কিন্তু আফসোস,এমন একটা সিচুয়েশনে সাদাত মৌসুমীকে একা ফেলে দিয়েছিলো
.
দিবা চোখের পানি মুছে বললো”ঘৃনা করি তাকে,সে ধোকা শুধু আমার মাকে দেয়নি,আমাকেও দিয়েছে,,তার শাস্তি আমি এখনও পাচ্ছি”
.
বাদ দে এসব,এমন একটা ভালো দিনে মন খারাপ করতে নেই,,চল আমরা দুপুরের রান্নার আয়োজন করি
.
আচ্ছা খালামনি আমি রান্না করি আজ??তোমার ছুটি,,টিভিতে সিরিয়াল দেখো যাও
.
খালামণি চলে গেলেন,,দিবা ওড়না গলায় ঝুলিয়ে চুলে খোঁপা করতে করতে রুম থেকে বের হতেই আহনাফের সামনে পড়লো
আহনাফ পাঞ্জাবিটা পরে সবেমাত্র বেরিয়েছে
দিবা হা করে তাকিয়ে আছে আহনাফের দিকে,,সে পাঞ্জাবির সাথে মিলিয়ে একটা সাদা প্যান্ট পরেছে
চুলগুলোতে জেল ও লাগিয়েছে,,হাতে আবার কালো ঘড়ি,,দিবা খোঁপা থেকে হাত নামিয়ে ফেলে বললো”আমার হাতে দম আছে”
.
কি বললে?আমাকে ভালো দেখানোর সাথে তোমার হাতে দম আছে মানে কি?
.
মানে সহজ,,আপনাকে এতদিন কালা পোশাকে বান্দরের মতন লাগতো,এখন আমার হাতের ছোঁয়ার পাঞ্জাবি পরে শুদ্ধ বাঙালী মনে হচ্ছে
.
কি বললে?আমি বাঁদর?
.
নাহ তো,,কে বললো আপনি বাঁদর,,আপনি তো বান্দর!
.
দিবা এক দৌড় দিলো কথাটা বলে,আহনাফের রাগ হলো না,,কারণ তার চোখ গেছে টেবিলের উপর
সেখানে তার জন্য সাজিয়ে রাখা প্লেট তার দিকে,ইলিশ মাছ দেখে মাথা হ্যাং হয়ে গেছে ওর
জলদি এসে প্লেট নিয়ে বসে গেলো সে,খেতে খেতে চেঁচিয়ে বললো”এত ভালো বেগুন ভর্তা বানালে কি করে মা?”
.
মা নিজের শাড়ীটা পরতে পরতে বললেন”দিবা বানিয়েছে এত ভালো করে,আমাকে ও তো কোনো কাজই করতে দেয় না”
.
আহনাফের গলায় খাবার আটকে গেছে দিবার নাম শুনে,আহনাফ কাশছে দেখে দিবা হাতে খুন্তি নিয়ে ছুটে আসলো,পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো সে,আহনাফ কোনোদিকে না তাকিয়ে আগে পানি খেয়ে নিলো,,দিবা একটু ভাব করতে গিয়ে খুন্তি দিয়ে গলা চুলকাতে গিয়েছিলো তার মনেছিলো না খুন্তি গরম,,বিরিয়ানির মশলা বানাতে সব মশলা টালছিলো তাওয়াতে,,খুন্তি গলায় লাগতেই চামড়া একটু উঠে সাদা হয়ে গেছে
দিবা উহ্ বলে রান্নাঘরের দিকে ছুটে গেলো তাড়াহুড়ো করে
.
আহনাফ আগামাথা কিছুই বুঝলো না,আবারও খাওয়াতে মন দিলো সে,,ভর্তাটা বেশ হয়েছে,,রান্নার হাত পাকা মেয়েটার,,তবে মুখে স্বীকার করবো না, নাহলে ওর দাম বেড়ে যাবে অনেক
.
পেট পুরপ খেয়ে আহনাফ টিভি অন করে বসলো,,খাবার হজম হলে একটু বের হবে ঘুরার জন্য
সোফার পাশে হাত রাখতেই আহনাফের কপালে ঘাম এসে গেলো,মিনি চুপচাপ বসে আছে সেখানে,এতক্ষণ কোনো সাড়াশব্দ করেনি কারণ তার খুব ভালো করে জানা আছে আহনাফ তাকে দেখলেই শুরু করবে মেলোড্রামা
চুপ থেকেও শেষে লাভ হলো না, আহনাফ সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁচি দিতে দিতে দূরে চলে গেলো
.
এই আজাইরা বিড়াল,এবার আমার সাথে বসে তোমার টিভি ও দেখতে হবে??
.
মিনি চুপ করে অসহায় লুক নিয়ে চেয়ে রইলো,,আহনাফ নাক ডলে রান্নাঘরে গেলো একটা পলিথিন আনতে
দিবা ওড়না দড়িতে ঝুলিয়ে রেখে বসে বসে পেঁয়াজ কাটছিলো,আজ হালিমা আন্টি আসেননি
আহনাফ রান্নাঘরে আসতেই দিবা লজ্জা পেয়ে তাড়াহুড়ো করে উঠতে গেলো ওড়না নেবে বলে,ও এ সময়ে আসবে তার জানাই ছিল না
আহনাফ আরেকদিকে ফিরে পলিথিন একটা নিয়ে যেতে যেতে বললো”তাকাইনি”
.
দিবা আর উঠলো না,নিজের কাজে মন দিলো
আহনাফ পলিথিনে হাত ঢুকিয়ে মিনিকে খপ করে ধরে দূরের সোফায় বসিয়ে দিয়ে আসলো,,তারপর আবার নিজের জায়গায় বসে টিভি দেখা শুরু করলো সে
মিনি দূরে থেকে বসে টিভি দেখছে মাঝে মাঝে আহনাফকেও দেখছে
আহনাফ চ্যানেল পাল্টে বললো”এরকম করে কি দেখো তুমি??আমারে এত ভাল্লাগে তোমার??একদম গাল টিপে আলুর ভর্তা বানাই দিবো”
.
মিনি আগামাথা কিছুই বুঝলো না তাও চেয়ে রইলো,,
দিবা আজ বিরিয়ানি বানাচ্ছে,খালামণি শাড়ী পরে পাশের ফ্ল্যাটের আন্টির কাছে গেছেন গল্প করতে
মিনি খালামণির পিছু পিছু গেছেন সেখানে,,খালু বাসার নিচে গেছে তার সেই আড্ডাতে মাততে,,আরিফ আরিশাকে নিয়ে আজ ঘুরতে বেরিয়েছে
বাসায় এখন আহনাফ আর দিবা
দিবা ওড়না গলায় পেঁচিয়ে চামচে করে পোলাও নিয়ে বের হলো খালামণিকে দেখাবে বলে,,তাকে রুমে না পেয়ে এদিক ওদিক খোঁজাখোঁজিতে লেগে গেলো সে
আহনাফ টিভি অফ করে বললো”মা পাশের ফ্ল্যাটে গেছে”
.
তাহলে আপনি টেস্ট করে দেখুন লবণ ঠিক আছে কিনা?
.
আহনাফ দিবার থেকে চামচ নিয়ে মুখে দিয়ে চিবিয়ে বললো”আরেকটু লাগবে”
.
দিবা তাই চলে গেলো আবার,,আহনাফ ঘুরতে যাবে বলে চলেই যাচ্ছিলো পরে ওর মনে আসলো দিবা বাসায় একা,,ওকে কি একা রেখে যাওয়া ঠিক হবে?আমি থাকলে তো কানের কাছে প্যানপ্যান করবে,কি করি!!
আহনাফ আবার ফেরত এসে টিভি অন করলো,,দিবা রান্নাবান্না শেষ করে ওড়না দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে নিজের রুমে চলে গেছে,,বাসায় এত ওড়না নিতে হতো না ওর,,বাবা আর ইভান ভাইয়া সকালে বেরিয়ে রাতে বাসায় ফিরতো তাই
আর এখানে কথায় কথায় ওড়না নিয়ে ঘুরতে হয়,এরকম গরমে কি এসব পারা যায়,,দিবা ওড়নাটা ছুঁড়ে মেরে ফ্যান বাড়াতে যেতেই আহনাফের গলার আওয়াজ পেলো,সাথে সাথে ওড়না পরে দাঁড়িয়ে পড়লো সে
.
আমি একটু বের হবো,তুমি একা থাকতে পারবা নাকি তোমার আজাইরা বিড়ালটাকে আনাই দিতাম?
.
নাহ,আমি এখন খালামনির কাছে যাব ওখানে
.
ওহ,,তাহলে ঠিক আছে আমি যাই
.
আহনাফ চলে গেলো,,পিছন দিয়ে দিবা ও বের হলো পাশের ফ্ল্যাট টাতে যাবে বলে,,সেখানে থাকে মিসেস রহমান আর তার দুই মেয়ে,,তার দুই মেয়েকেই বিয়ে দিয়ে দিছেন,,আপাতত বাসায় তিনি আর তার হাসবেন্ড থাকেন
দিবা কলিংবেল বাজাতেই ওপাশ থেকে মিসেস রহমানদের বাসার বুয়া এসে দরজা খুলে দিলো
ভেতরে সোফায় খালামণি বসে আছে তার পাশে মিনি ও বসে আছে,,মিসেস রহমানের কথা শোনা যাচ্ছে
দিবা সালাম দিয়ে এগিয়ে গেলো
.
আরে আসো আসো,,তোমার খালামণি এতক্ষণ তোমার অপেক্ষাই করছিলো,,কি নাম তোমার?
.
দিবা হক,,
.
আচ্ছা আগে চা খাও,,আমার হাতের চা খেলে বারবার খেতে চাইবা তুমি
.
দিবা চায়ের কাপ হাতে নিলো,,মিসেস রহমান মুচকি হেসে বললেন”তোমায় এর আগে কখনও দেখিনি,,খালার বাসায় কি কখনও আসতে না??”
.
না আসলে দিবারা খুলনায় থাকে তো,,
.
তো কি,,ঈদের সময় কিংবা অকেশানেও তো বোনের বাসায় আসতে পারে তোমার বোন,,আসেনা কেন,,আর তার ছেলেমেয়েরাও তো আসতে পারে,মানুষ খালাদের জন্য কত পাগল থাকে,,তোমাদেরও তো খুলনায় যেতে দেখলাম না কোনোদিন”
.
না বাসা খালি রেখে আমরা তো কোথাও যাই না তেমন
.
কে বললো??রোজার ঈদে তো সাত দিনের জন্য তোমরা তোমাদের গ্রামের বাড়িতে যাও,,তাহলে??
.
খুলনা আর গ্রামের বাড়ি কি এক?,,রাখেন ওসব কথা,,আপনার মেয়েদের কি খবর সেটা বলেন
.
মিসেস রহমান খালামণির কথার জবাব না দিয়ে দিবার দিকে তাকিয়ে বললেন”তা কতদিনের জন্য বেড়াতে এসেছো?আবার তো চলে যাবা তাই না?”
.
দিবা ঢোক গিলে বললো”না মানে আসলে…”
.
না যাবে না
.
কেন যাবে না??
.
কারণ ও এখানে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে,,ছুটি পেলে যাবে,এই আর কি
.
ওহ এবার বুঝলাম,,তা তোমার আহনাফকে কবে বিয়ে দিবে?
.
কি যে বলেন আপনি!!ও তো এখনও পড়ছে
.
মাস্টার্স কমপ্লিট হয়ে গেলো বলে,এবার তো চাকরি পেয়ে যাবে,,মেয়ে টেয়ে দেখে রাখবে না? নাকি ছেলের চাকরির কামাই খাবে কদিন,,বউ আসলে তো আর টাকা এরকম খাওয়া যাবে না,তখন বারতি খরচ,এখনকার মেয়েদের কথা কি বলবো বোন!!বিয়ে করেই কালাজাদু করে
.
না আমার আহনাফ ওরকম না,,
.
তোমার আহনাফ তো মা মা ও করে না,তো কিরকম তাহলে?
.
আমার আহনাফ দুই হাতে দুদিক সামলাবে,,এক হাতে তার ওয়াইফ আরেক হাতে আমাদের গোটা ফ্যামিলি,
.
এক কাজ করতে পারো,,নিজের বোনের মেয়েকেই বিয়ে করিয়ে দিতে পারো,তাহলেই হয়,,তোমার কথা থাকবে সবসময় উপরে
.
দিবা কপাল কুঁচকে তাকালো মিসেস রহমানের দিকে
.
খালামণি দাঁত কেলিয়ে বললেন”দিবা অনেক ছোট,,আহনাফ সবসময় ম্যাচিউর পছন্দ করে,,দিবার সাথে ওর খুনসুটিই জমছে না,, বিয়ের বন্ডিং তো দূরের কথা,,খাটবে না,,যদি খাটে আর আল্লাহর হুকুম থাকে তো আলহামদুলিল্লাহ!
চলবে♥