ভরসার_দুহাত পর্ব_৫

0
529

#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৫

ছেলেটা হুডি আর মাস্ক পড়ে আছে বলে চেহারা দেখতে পারছে না। তখনই বাহির থেকে পুলিশের গাড়ির শব্দ ভেসে আসলো। উমায়ের শব্দ শুনে বলল-
“এখন আমাদের মেরে ফেললেও পাড় পাবে না। সাহস থাকলে গুলি চালাও।”
বুরাক কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে রিভলবার নামিয়ে ফেলল। উমায়ের আর ফিরোজ আনোয়ার অবাক হলো ছেলেটার এমন আচরণ দেখে। হঠাৎ বুরাক এক কদম করে পেছনে বাড়তে লাগলো। উমায়ের দু’বার চোখের পলক ফেলল। দরজা দিয়ে পুলিশ প্রবেশ করতেই বুরাক পিছনে ফিরেই সজোরে দৌড়ে গেল অন্যদিকে। তার পেছনে পুলিশরাও দৌড়ে গেল। একজন পুলিশ এসে ফিরোজ আনোয়ারকে জিজ্ঞেস করলেন-
“আপনি ঠিক আছেন?”
“হ্যাঁ আমি ঠিক আছি, আর আমার পরিবারও ঠিক আছে। সেই ছেলেকে যেভাবেই হোক ধরুন আপনারা। আমি জানতে চাই কে সে।”
“আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন আমরা সব সামলে নিব। আপনার হাতে ব্যাথা লেগেছে ব্যান্ডেজ করে নিন।”
উমায়ের ঘুরে বাবার হাত ধরে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল-
“ওয়াদা করেছিলে নিজের ক্ষতি হতে দিবে না।”
“আমি আমার ওয়াদা ভুলি নি মামনি।”
তখনই নুসাইফা বেগম আর ছেলেরা আসলো। স্বামীর হাত রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে নুসাইফা বেগম ভয় পেয়ে গেলেন।
“আপনার হাতে কি হলো? ঠিক আছেন তো? উমায়ের ডাক্তারকে কল দিয়ে আসতে বল।”
ফিরোজ আনোয়ার বললেন-
“তুমি চিন্তা করো না আমি ঠিক আছি। আর ছেলেদের উঠালে কেন? ওরা ছোটো, ভয় পাবে তো।”
“আমি উঠাইনি, এত শব্দ হচ্ছিল ওরা নিজেরাই উঠে গিয়েছে।”
উমায়ের বলল-
“আম্মু ফাস্ট এইড বক্স কোথায় নিয়ে আসো। আব্বুর হাতে ব্যান্ডেজ করতে হবে।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ আমি আনছি।”
নুসাইফা বেগম দ্রুত নিজের ঘরে গেলেন। উমায়ের বাবাকে সোফায় বসিয়ে নিজে হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসলো। ফিরোজ আনোয়ারের বেশ মায়া হলো মেয়েকে দেখে। মেয়েকে দেখলে উনি সবসময় উনার মাকে মনে করেন। একদম মায়ের মতোন করে খেয়াল রাখে উমায়ের উনার। নুসাইফা বেগম বক্স নিয়ে এসে উমায়েরকে দিলেন। উমায়ের দ্রুত ঘায়ে ঔষধ দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো। ফিরোজ আনোয়ার পুলিশের দিকে তাকিয়ে বললেন-
“আপনাকে ধন্যবাদ সময়ের মতো আসার জন্য।”
“আপনাদের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আমি আজই আপনাদের সিকিউরিটি বাড়ানোর ব্যবস্থা করছি। যে এসেছিল তার কাজকর্ম দেখে একটা জিনিস বুঝতে পারলাম।”
“কি?”
“সে খুব চালাক, এসব কাজের মাস্টার।”
“তাকে ধরা সম্ভব?”
“হ্যাঁ, আপনারা তাকে দেখেছেন?”
“তার চেহারা দেখতে পারিনি। সে মাস্ক পড়া ছিলো।”
“শিট, এখন আমার টিম তাকে না ধরতে পারলে আমাদের জন্য একটু কষ্ট হতে পারে তাকে খুঁজে বের করতে।”
বাবার হাত ধরে উমায়ের ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো হঠাৎ। ফিরোজ আনোয়ার মেয়েকে শান্তনা কিভাবে দিবে বুঝতে পারছে না। পুলিশ বলল-
“কান্না করো না উমায়ের। আমরা স্যারের কিছু হতে দিব না। আর ওই ছেলেটাকে পেয়ে নিই সোজা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিব।”
উমায়ের পুলিশের দিকে তাকিয়ে বলল-
“সে আমার বাবাকে মারতে এসেছিল। তাকে নিজের হাতে শাস্তি দিব আমি। একবার জেনে নিই কে সে। উমায়ের বিনতে ফিরোজ, ফিরোজ আনোয়ারের একমাত্র মেয়ে তাকে কখনো ছাড়বে না।”

অন্যদিকে…..
ধীরপায়ে হেটে বুরাক বাড়ির দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো। তার চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। বুরাককে আসতে দেখে খালিদ খান সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ববি তখনই দৌড়ে এসে পড়েছিল। বুরাক হেটে এসে খালিদ খানের বরাবর দাঁড়াল। খালিদ খান হেসে বুরাকের কাঁধে হাত রেখে বলল-
“তুই আমার জন্য আজও এত বড়ো কাজেই করে দেখালি। মেরে ফেললি তাদের। বুরাক, তুই….”
খালিদ খান কথা শেষ করার আগেই বুরাক বলল-
“পারি নি আমি তাদের মারতে।”
খালিদ খান আর ববি চমকে উঠল। বুরাককে কেমন মনমরা দেখাচ্ছে। খালিদ খান চিন্তিত স্বরে বলল-
“কি হয়েছে বুরাক? তোকে আজ প্রথমবার আমি এমন অবস্থায় দেখছি।”
“বস, আই এম সরি। আমি তাদের মারার আগেই পুলিশ এসে পড়েছিল।”
“বলিস কি? পুলিশ তোকে দেখেনি তো?”
“না, আমি তার আগেই পালিয়ে এসেছি।”
“সমস্যা নেই, আর একদিন এই কাজ করা যাবে। তুই বিশ্রাম কর গিয়ে।”
খালিদ খান বুরাকের গালে হাত রেখে বলল-
“বুরাককে এমন মনমরা মানায় না। মন খারাপ করতে হবে না আমি তোর উপর রাগ করিনি। যা আমার বাচ্চা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।”
বুরাক কিছু বলল না। মুচকি হেসে চুপচাপ পাশ কাটিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। ববির কেন যেন মনে হচ্ছে বুরাক কিছু লুকাচ্ছে। বা এমন কিছু ঘটেছে যার কারণে সে শকড। বুরাক নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে ধীরে ধীরে হেটে গিয়ে খাটের উপর রিভলবার রাখলো। হুডি আর মাস্ক খুলে ধপ করে মাটিতে বসে খাটের সাথে হেলান দিয়ে গভীর চিন্তায় ডুবে গেল। কিছুক্ষণ পর দরজা ঠকঠক করার শব্দ আসলো। বুরাকের হুশ ফিরতেই জিজ্ঞেস করলো কে এসেছে। দরজার অপর পাশ থেকে ববির কন্ঠ ভেসে আসলো। বুরাক ববিকে বলল ভেতরে আসতে। ববি দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। ববি ভেতরে আসতেই বুরাক বলল-
“ফিরোজ আনোয়ারের পরিবারের সবার ছবি তোর কাছে আছে?”
“হ্যাঁ আমার ঘরে রেখেছি সব ডিটেইলস।”
“এনে দে আমার লাগবে।”
ববি কিছু জিজ্ঞেস করতে চেয়েও করলো না। নিজের ঘরে গিয়ে ফাইলটা নিয়ে আসলো। বুরাক ববির হাত থেকে খোপ করে ফাইলটা নিয়ে খুলল। ফিরোজ আনোয়ারের পরিবারের সবার ছবি বের করে চেক করতে লাগলো। ছবিগুলোর মাঝে পেল উমায়ের এর ছবি। বুরাক উমায়ের এর ছবির দিকে তাকিয়ে রইল। ববি বুরাকের কান্ড দেখে অবাক না হয়ে পারছে না। ববি বুরাকের হাতের কব্জি ধরে বলল-
“কি হয়েছে বুরাক? তুই এই মেয়ের ছবি দেখে এমন করছিস কেন?”
বুরাক উমায়ের এর ছবির দিকে তাকিয়েই বলল-
“৬ মাস আগে আমি তাকে প্রথম দেখেছিলাম।”
“হ্যাঁ, তো”
বুরাক ববির দিকে তাকাল। বুরাকের চোখে হঠাৎ পানি জমে গেল। ববি হাঁটু গেড়ে বসে ছিল। বুরাকের চোখে পানি দেখে মাটিতে বসে বলল-
“তুই..তুই কাঁদছিস?”
বুরাক উমায়ের এর ছবির দিকে আবার তাকাল। হারিয়ে গেল ৬ মাস আগের দিনে।

৬ মাস আগে…..
বুরাক হাঁটতে রাস্তায়৷ বোরিং লাগছে তার খুব। আজ দুপুরে কিছু খায়নি। ক্ষুধাও পেয়েছে তার। ভার্সিটির সামনে ফুচকাওয়ালা, ঝালমুড়িওয়ালা বসে আছে। সে কখনো এসব খায় না। পেট খারাপ হয়ে যায় বলে। তখনই ভার্সিটির দরজা খুলল দারোয়ান মামা। সাথে সাথে ভার্সিটি থেকে ছাত্র ছাত্রীরা বের হতে লাগলো। বুরাক ভাবলো চলে যাওয়া যাক। ঘুরে দাঁড়াতেই তার কানে একটা মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসলো-
“আমি ফুচকা খাবো না। সেদিন গ্যাসট্রিকের সমস্যা হয়ে গিয়েছিল আমার। চল আজ ঝালমুড়ি খাই।”
বুরাক পেছনে ফিরলো। অনেকগুলো মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঝালমুড়িওয়ালা মামার সামনে। কন্ঠটা কার ছিলো সে বুঝতে পারছে না। বুরাক ডান বাম দেখে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল। তার জানতেই হবে কন্ঠটা কার। ঝালমুড়িওয়ালা মামা সবাইকে এক এক করে মুড়ি বানিয়ে দিলো। হঠাৎ একটা মেয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল-
“আমরা আগে আসলাম আর আপনি তাদের আগে দিয়ে দিলেন। নিব আপনার থেকে। রুম্মান চল।”
বুরাক মেয়েটাকে দেখে দু’বার চোখের পলক ফেলল। যদিও মেয়েটা বোরকা, নিকাব পড়ে আছে। শুধু চোখ দেখা যাচ্ছে। মামা বলল-
“আরে বাবা রাগ কইর না। তুমাগো লাইগা তো ইসপেশিয়াল কইরা বানামু।”
“সত্যি তো?”
“হো হো সত্যি একটু খারাও। তো বাবা তোমারে কি দিমু?”
মুড়িওয়ালা মামা বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল কথাটা। মেয়ে দুটো বুরাকের দিকে তাকাল। বুরাক সেই মেয়েটার চাহনি দেখে ঢোক গিলল। তার চোখে দেখা সবচেয়ে সুন্দর চোখ হলো এই মেয়েটার। মুড়িওয়ালা মামা বলল-
“কই হারাইলা?”
বুরাক মামার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল-
“এক প্লেট ঝাল ছাড়া মুড়ি চাই আমি।”
মেয়ে দু’টো ফিক করে হেসে দিল। বুরাক তাকাল তাদের দিকে, সে কি ভুল কিছু বলেছে? মুড়িওয়ালা মামা দাঁত বের করে হেসে বলল-
“আজ্ঞে বাবা আমি তো প্লেটে না ঠোংগায় মুড়ি দেই।”
বুরাক মাথা চুল্কাচ্ছে মামার কথা শুনে। এই প্রথম বুরাকের মনে হচ্ছে সে এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। কিছু ভাবতে পারছে না। বোরকা পড়া মেয়েটা বলল-
“মামা উনাকে পরে দিয়েন। আমাদের আগে দিন ড্রাইভার মামা দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের যেতে হবে।”
“আচ্ছা বাবা দিতাছি। তুমি একটু খারাও অগো দিয়া লই।”
বুরাক মাথা নাড়াল মামার কথা শুনে। মেয়ে দু’টো নানা ধরনের কথা বার্তা বলছে। শপিং করবে, ঘুরতে যাবে সব কথা বুরাকের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মেয়ে দুটো মুড়ি নিয়ে হাঁটা ধরলো। মেয়েটা যেখানে যাচ্ছে বুরাক সেদিকেই তাকিয়ে আছে। মেয়ে দু’টো গিয়ে একটা কালো রং এর গাড়িতে বসে পরলো। গাড়িটা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেতে গেতে অনেকটা দূরে চলে গেল। বুরাকের হুশ ফিরলো মুড়িওয়ালা মামার ডাকে।
“বাবা তোমার মুড়ি।”
বুরাক মামার দিকে তাকাল। পকেট থেকে ২০ টাকা বের করে এগিয়ে দিলো।
“১০ ট্যাকার দিছি তো।”
“রেখে দিন।”
মামা হেসে মাথা নাড়াল। বুরাক মু্ড়ি দাঁড়িয়ে রইল। তার চোখের সামনে থেকে মেয়েটার চোখ সরছে না। বার বার কানে তার কন্ঠটা ভাসছে। হঠাৎ বুরাক তার হাতে কারো স্পর্শ পেল। নিচের দিকে তাকাল। একটা ছোটো বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে। ছেঁড়া জামা পড়া। বুরাকের মায়া হলো। পকেট থেকে ৫০ টাকা বের করে দিয়ে মুড়ির প্যাকেটটাও দিয়ে দিলো। বাচ্চাটার চেহারার হাসি দেখে বুরাকও হাসলো।

পরেরদিন…..
বুরাক আজ আবার এসেছে ভার্সিটির সামনে। এই সময়টাতেই ছুটি হয়। পাশেই সেই কালো রং এর গাড়িটা পার্ক করা। তার মানে মেয়েটা এসেছে। বুরাকের মন খুশীতে নাচছে। মুড়িওয়ালা মামা বুরাককে দেখে ডাকলো। বুরাক উনার ডাক শুনে এগিয়ে গেল।
“জি মামা বলুন।”
মামা দাঁত বের করে হেসে জিজ্ঞেস করলো-
“আজকে আবার আইলা যে।”
মামার প্রশ্ন শুনে বুরাক ভ্রু কুঁচকালো। মামা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে বুরাক কেন এসেছে আজও। বুরাক স্বাভাবিক ভঙিতে বলল-
“আপনার বানানো মুড়ি খুব মজা তাই ভাবলাম আবার খেয়ে আসি।”
“তুমি খাইসো কালকে?”
“হ্যাঁ খেয়েছি।”
“আমি তো দেখলাম মুড়ি একটা বাচ্চারে দিয়া দিলা।”
বুরাক থতমত খেয়ে গেল। নিজের কথায় নিজে এইভাবে ধরা খাবে কল্পনাও করেনি। মামা এখনো দাঁত বের করে হাসছে। তখনই ভার্সিটির দরজা খুলে ছাত্র ছাত্রীরা বের হবে শুরু করলো। বুরাকের দৃষ্টি সাথে সাথে ভার্সিটির দরজার দিকে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়ে দু’টো বের হলো। বুরাকের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। মুড়িওয়ালা মামা না হেসে পারলেন না। সবাই মেয়েটাকে কি যেন বলে জড়িয়ে ধরছে। আর সাথের মেয়েটা মুখ ফুলিয়ে তাদের বকছে। তারা কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসলো। তারা আসতেই মুড়িওয়ালা মামা হাসিমুখে বললেন-
“বাবা আজ না-কি তোমার জনমদিন?”
মেয়েটা হেসে বলল-
“হ্যাঁ মামা”
সাথের মেয়েটা বলল-
“আরে মামা জনম দিন না জন্মদিন হবে।”
“অইতো একই”
“না এক না।”
মেয়েটা ধমকের স্বরে বলল-
“থাম না রুম্মান, মামার যেভাবে বলতে ইচ্ছে হবে বলুক।”
রুম্মান মেয়েটা মুখ বাঁকা করলো। মুড়িওয়ালা মামা বললেন-
“আচ্ছা আমার লাইগা তুমরা ঝগড়া কইরো না। আজ তোমার জনমদিন আমি ফিরিতে মুড়ি খাওয়ামু। এটা আমার তরফতে উপহার।”
রুম্মান ভ্রু কুঁচকে বলল-
“মামা ফিরি না ফ্রি হবে। আর আমাদের দেরি হচ্ছে ম্যাডামকে শপিং-এ নিয়ে যাব।”
মামা কিছু বলার আগেউ উমায়ের মামার দিকে তাকিয়ে বললেন-
“মামা, আপনি যেহেতু আমাকে উপহার দিতে চান তাহলে আমি নিশ্চয়ই নিব। মজা করে বানিয়ে দিন।”
মামা হাসিমুখে মুড়ি বানাতে লাগলো। রুম্মান চারপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে বুরাকের দিকে তাকাল। তার মনে আসলো গতকালও ছেলেটাকে দেখেছিল। ছেলে পলকহীন দৃষ্টি বানিয়ে উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে আছে। রুম্মানের বিষয়টা ভালো লাগলো না। সে অপেক্ষায় রইল কখন মামার মুড়ি বানানো শেষ হবে। উমায়ের রুম্মানের চাহনি দেখে ঘাড় ঘুরালো। গতকালের ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। উমায়ের তাকে এক পলক দেখে চোখ সরিয়ে ফেলল। ছেলেটার চাহনি দেখে সে বিরক্ত হলো। মামা মুড়ি বানিয়ে দিতেই উমায়ের নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে হাঁটা ধরলো। বুরাক তার দিকে তাকিয়ে রইল। আজও কথা হলো না তাদের। এইভাবেই কেটে গেল ৫ মাস। বুরাক ২ দিন পর পর ভার্সিটির সামনে চলে গেল মুড়ি বা ফুচকা খাওয়ার বাহানায়। সে উমায়েরকে সর্বপ্রথম দেখার পর মুগ্ধ হয়েছিল। উমায়েরকে এখন এক নজর না দেখলে তার ভালো লাগে না। কিন্তু উমায়ের এর সাথে সরাসরি কখনো কথা হয় নি তার। এবং কি সে উমায়ের এর নামটা পর্যন্ত জানতে পারছিলো না। কিন্তু এইটুকু বুঝেছে রুম্মান ডাকে মজনু বলে ডাকে। বুরাকের নামটা পছন্দ হয়েছে। সত্যি সে মজনু হয়ে গিয়েছে এই কিছু দিনে। একদিন বুরাক ভেবেছিল এবার সরাসরি গিয়ে উমায়ের এর সাথে কথা বলবে। কিন্তু তার আগেই খালিদ খান তাকে একটার পর একটা অর্ডার দিচ্ছিল। ২০ দিনের মতো বুরাক ব্যস্ত ছিল ভোটের কারণে। উমায়ের এর সাথে দেখা করতে যেতে পারে নি। নিজেকে কাজে ব্যস্ত রেখে দিত যাতে উমায়ের এর কথা মনে না পড়ে।

বর্তমান….
ববি কপালে হাত দিয়ে চুপচাপ বসে আছে। বুরাকের বুক কাঁপছে। যদি উমায়ের জেনে যায় বুরাক তাদের মারতে গিয়েছিল তখন? উমায়ের এমনিতেই বুরাককে পছন্দ করে না জানার পর ঘৃণা করা শুরু করবে। ববি সোজা হয়ে বসে লম্বা নিশ্বাস নিয়ে ছাড়লো। বুরাকের দিকে তাকিয়ে দেখে বুরাক চিন্তিত চেহারা বানিয়ে বসে আছে। ববি বলল-
“এখন কি করবি?”
“জানি না”
“আচ্ছা টেনশন নিস না। উমায়ের কখনো জানতে পারবে না।”
“আমার উচিত ছিল যাওয়ার আগে একবার ফিরোজ আনোয়ারের সম্পর্কে সব জেনে যাওয়া। তার পরিবারের ছবিটা দেখে নিলে আজ এসব ঘটতো না। আমি কোন মতে বসকে মানিয়ে ফেলতাম।”
“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তুই প্রেমে পড়েছিস।”
“কেন আমার কি প্রেমে পড়া বারণ?”
“যদি বলি হ্যাঁ?”
বুরাক আচমকা ববির দিকে তাকাল। বুরাক এখন অন্ধকার জগতের সাথে জড়িত। উমায়ের কি কখনো একজন অন্ধকার জগতবাসীকে মেনে নিবে? বুরাক যদি কখনো উমায়ের এর দিকে তার দুহাত বাড়িয়ে দেয় উমায়ের কি কখনো তার হাতদুটোকে ভরসার দুহাত ভাববে? বুরাক তার দুহাত তুললো। এই দুই হাত দিয়ে সে অনেক মানুষের প্রান নিয়েছে। বুরাক হাতদুটো শক্ত করে মুঠো করে ফেলল। উমায়ের কিভাবে তার এই দুহাতকে ভরসার দুহাত ভাববে?

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here