ভরসার_দুহাত পর্ব_৬

0
494

#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৬

রাত কেটে সকাল হয়ে গেল। উমায়ের এর চোখে ঘুম নেই। রাতের ঘটনা বার বার তার চোখে ভেসে উঠছে। আর সেই চোখ দু’টো। তার মনে হচ্ছে সে চোখ দু’টো চিনে। কিন্তু গভীরভাবে কিছু ভাবতে পারছে না। যদি সে মানুষটা তার বাবাকে মেরে ফেলতো? এই কথাটা ভাবতেই উমায়ের এর গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। শোয়া থেকে উঠে বসলো উমায়ের। ঘড়ির দিকে তাকাল, ভার্সিটির সময় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার ভার্সিটি যেতে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে সারাদিন বাবার চোখের সামনে থাকতে। তার মনে ভয় ঢুকে গিয়েছে। সে চলে গেলে যদি বাবাকে তারা মেরে ফেলে? হঠাৎ উমায়ের এর মোবাইল বেজে উঠলো। হঠাৎ শব্দ হওয়ায় উমায়ের চমকে গিয়েছে। বালিশের পাশ থেকে মোবাইল নিয়ে দেখে রুম্মান কল দিয়েছে। রিসিভ করে কানে ধরলো-
“হ্যালো”
“হ্যালো ট্যালো ছাড় এসব কি শুনছি?”
“কি?”
“রাতে না-কি তোদের বাসায় হামলা হয়েছিল। পুলিশও এসেছিল শুনলাম। তোরা ঠিক আছিস তো?”
“হুম, একটা অঘটন ঘটেছিল। আজ বাসায় আসিস সব বলবো নি।”
“কেন তুই ভার্সিটি আসবি না?”
“না, আমার আজ খুব অস্বস্তি হচ্ছে। তুই আসিস দেখা করতে।”
“ঠিক আছে, নিজের খেয়াল রাখিস। আর শুন ভয় পেতে হবে না। তোদের সিকিউরিটি দ্বিগুণ করা হয়েছে শুনেছি।”
“এত দূরে থেকেও কিভাবে যে এত খবর পেয়ে যাস।”
“এটা এলাকাবাসীদের ট্যালেন্ড। একজন একটা বিষয় জানলে বাকি সবার জানতে দেরি হয় না।”
“এতক্ষণ পর মনটা ভালো হলো। তুই সত্যি আমার হ্যাপি মেডিসিন।”
“হয়েছে হয়েছে ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছি আমি। রাখি আল্লাহ হাফেজ।”
“আল্লাহ হাফেজ।”
উমায়ের কল কেটে লম্বা নিশ্বাস ফেলল। সত্যি তার এখন ভালো লাগছে কিছুটা। ঘুমও পাচ্ছে হালকা হালকা। বিছানা হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।

অন্যদিকে…..
বুরাক লম্বা শাওয়ার নিয়ে বের হলো। রাতে ঘুম না হওয়ার কারণে তার মাথা ব্যাথা করছে। খাটে বসে চুল মুছছে আর রাতের ঘটনা ভাবছে। ঘটনাটা যে ভুলতে পারছে না। না জেনে অনেক বড়ো ভুল করেছে সে। এই ভুলের শাস্তি খুব ভয়ংকর হবে তার মন বলছে। বুরাক এর জন্য৷ নিজেকে প্রস্তুত রেখেছে। কিন্তু সে শাস্তি রুপে যদি উমায়েরকে হারিয়ে ফেলে তখন? এই নিয়ে তার ভয় করছে খুব। হঠাৎ দরজা ঠকঠক করার শব্দ আসলো। বুরাক উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে ববি এসেছে। ববির হাতে খাবারের ট্রে। বুরাককে ইশারায় ববি বলল সরে যেতে। বুরাক সরে যেতেই ববি ভেতরে প্রবেশ করলো। খাটের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল-
“আজ তুই ব্রেকফাস্টে আসিস নি বস চিন্তিত খুব। উনার মন বলছে তুই কিছু লুকাচ্ছিস।”
বুরাক দরজা বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়াল। ববি ট্রে টা খাটের উপর রেখে বুরাকের দিকে ঘুরে বলল-
“নিজেকে স্বাভাবিক কর বুরাক। বস যদি জেনে যায় তোর মনে ফিরোজ আনোয়ারের মেয়ের প্রতি অনুভূতি আছে জানি না কি করবে।”
“তো আমি কি করবো এখন সেটা বল।”
“ভুলে যা উমায়েরকে।”
বুরাক অন্যদিকে তাকিয়ে বলল-
“আমি চেষ্টা করবো কিন্তু আমার মনে হয় না এটা সম্ভব।”
“কেন সম্ভব না? বস থেকে বেশী জরুরি কি সেই মেয়েটা তোর জন্য?”
“তুই আমার জায়গায় থাকলে কি করতি?”
“ভুলে যেতাম মেয়েটাকে। কারণ বস যা যা করেছে আমার জন্য সেটার ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না আমি।”
“মুখে বলা খুব সহজ রে ববি। যেদিন তুই আমার জায়গায় দাঁড়াবি সেদিন কথা হবে এই বিষয়ে। এখন খাবার নিয়ে যা আমার ক্ষুধা নেই।”
“তুই না খেলে বস আরো সন্দেহ করবে।”
বুরাক লম্বা নিশ্বাস ফেলল। আপাতত বসকে কিছু জানানো যাবে না। বুরাক এগিয়ে গিয়ে খাটে বসলো নাস্তা করার জন্য।

মায়ের ডাকে উমায়ের এর ঘুম ভাঙলো। ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখে মা দাঁড়িয়ে আছে। আর চারপাশে আযান ভাসছে। উমায়ের ঘড়ির দিকে তাকাল। ১২ টা ৫০ বাজছে। উমায়ের মায়ের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলল বসতে। মা পাশে বসতেই জড়িয়ে ধরলো। সব টেনশন নিমিষেই যেন শেষ হয়ে গেল তার। মা মুচকি হেসে উমায়ের এর কপালে চুমু দিয়ে বলল-
“উঠে নামাজ পড়ে নাও। যা হচ্ছে আমাদের সাথে বেশী বেশী আল্লাহকে ডাকতে হবে। উনিই পারবেন সকল বিপদ থেকে রক্ষা করতে।”
উমায়ের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল-
“যদি রাতে সে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলতো?”
“মেরে ফেললে মরে যেতাম আমরা। কিন্তু কথায় আছে না রাখে আল্লাহ মারে কে? উনি থাকতে আমাদের ভয় নেই। এখন উঠো তারাতাড়ি। নাস্তাও তো করো নি।”
“আমার ক্ষুধা পেয়েছে। কিন্তু নামাজ আদায় করে খাবো।”
মা মুচকি হেসে উমায়ের এর মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে দাঁড়াল। উমায়ের খাট থেকে নেমে বাথরুমে চলে গেল। মা ঘর গুছিয়ে বেরিয়ে গেল।

বুরাক ভার্সিটি এসেছে। আজ একটু লেট হলো সে। এসে দেখে ছুটি হয়ে গিয়েছে। উমায়ের চলে গিয়েছে কি-না বুঝতে পারছে না। কারণ তার গাড়িও দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ বুরাক রুম্মানকে দেখলো। রুম্মান দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে। বুরাক গিয়ে তার সামনে দাঁড়াল। হঠাৎ বুরাককে দেখে রুম্মান বিরক্ত হয়ে বলল-
“কি হলো কি চাই?”
“একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
“তারাতাড়ি করুন।”
“আপনার ফ্রেন্ড আসে নি?”
“আপনি দেখি খুব ছ্যাচড়া। ওর পেছনে ঘুরার কারণ কি জানতে পারি?”
বুরাক জবাব দিলো না। রুম্মান জেনেও কেন জিজ্ঞেস করছে বুঝলো না। বুরাককে চুপ থাকতে দেখে রুম্মান বলল-
“দেখুন আমি জানি আপনি ওকে পছন্দ করেন। এই কিছু মাসে আপনার কান্ড গুলো দেখেছি আমি। কখনো তার সাথে মিসবিহেভ করেন নি তাই বুঝলাম আপনি ভালো মানুষ। শুধু প্রেমে মজনু হয়েছেন এই আর কি।”
বুরাক হেসে দিলো। রুম্মান ভ্রু কুঁচকে বলল-
“হাসা বন্ধ করুন। এখন আমার কথা শুনুন, উমায়ের এর বাবা এখন আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান। আপনি ওর উপর চান্স মারা বন্ধ করে দিন।”
“বাবা চেয়ারম্যান হয়েছে এর সাথে আমার চান্স মারার কি সম্পর্ক?”
“সম্পর্ক আছে, আপনি আর ও এখন আকাশ জমিন। আপনাদের এক হওয়া অসম্ভব। আর শুধু তাই না, আমি কিছুদিন আগে একটা মেয়ের সাথে আপনাকে দেখেছি। আপনি দেখছি অন্যান্যদের মতোই ক্যারেকটারলেস।”
“মাইন্ড ইওর ল্যাংগুয়েজ, আমি যেমনই আছি নারীদের সম্মান করি। সেদিন যে মেয়েটার সাথে ছিলাম সে আমার বন্ধুর স্ত্রী হয়। যদিও সেও আমার বন্ধু। আমরা সবাই এক সময় বন্ধু ছিলাম। অনেকদিক পর তার সাথে দেখা হয়েছিল তাই কথা বলার সময় হাট ধরেছিলাম।।আপনারা বেশ আজব তিলকে তাল বানিয়ে ফেলেন।”
রুম্মান থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা তাকে কত কিছু শোনালো কিন্তু সে জবাব দেয়ার মতো কোন শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না। বুরাক নিজেকে শান্ত করে বলল-
“মাফ করবেন, আমি যেমনটা বলেছি। আমি নারীদের সম্মান করি। আসলে বাজে অপবাদ সহ্য করতে পারি না। তাই রেগে গিয়েছিলাম সরি।”
রুম্মান মুখ বাঁকা করে বলল-
“ইটস ওকে, এখন পথ থেকে সরে দাঁড়ান আমি যাব।”
“এটা তো বলে যান আপনার ফ্রেন্ড কোথায়?”
“ও বাসায়, ওর সাথে এমন কিছু ঘটেছে সে সহ্য করতে পারছে না।”
বুরাক এমন ভান ধরলো যেন কিছু জানে না।
“মানে কি? কি হয়েছে?”
রুম্মান সব বলল বুরাককে। বুরাক বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে। উমায়ের ভয় পেয়েছে খুব। সে কাজটা ভালো করে নি। এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। রুম্মান বলল-
“ভয় পেয়ে গেলেন তাই না? এটাই উমায়ের এর জীবন। এখন কিছুদিন পর পরই সে এমন বিপদের মোকাবিলা করবে।”
“না, আজকের পর থেকে তার এবং তার পরিবারের উপর কোন বিপদ আসবে না।”
কথাটা বলার সময় বুরাকের কন্ঠ কাঁপছিল। রুম্মান কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। বুরাক পথ থেকে সরে ইশারায় বলল চলে যেতে। রুম্মান চুপচাপ মাথা নিচু করে চলে আসলো। বুরাক পকেটে হাত রেখে মাটির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল- “ওয়াদা রইল আমার। আমি আজকের পর থেকে উমায়ের এবং তার পরিবারের কোন ক্ষতি হতে দিব না। গোপনে তাদের রক্ষা করে যাব।”

“বলিস কি?”
“হ্যাঁ তোর মজনুকে কেমন মনমরা লাগছিল। বেচারা তোকে মিস করে হয় তো।”
“ধ্যাত এসব বলিস না। তুই তো বলেছিলি ওকে একটা মেয়ের সাথে দেখেছিলি।”
“হ্যাঁ জিজ্ঞেস করেছিলাম, ও তো বলল মেয়েটা ওর বান্ধবী ছিল। এখন তার আর এক বন্ধুর স্ত্রী।”
উমায়ের বারান্দার রেলিং ছেড়ে ঘরে এসে খাটে বসলো। রুম্মান বিরক্ত হয়ে এগিয়ে গিয়ে উমায়ের এর পাশে বসলো।
“ফিল্মের নায়িকাদের মতো আচরণ করা বন্ধ কর।”
“আমি আবার কি করলাম?”
“এইযে এক্টিং এর বক্স খুলে বসেছিস। বলছিস না কেন তোর মনে ওর জন্য অনুভূতি আছে কি-না।”
“না নেই”
“আমার দিকে তাকিয়ে বল তো কথাটা।”
উমায়ের রুম্মানের দিকে তাকাল। কিন্তু তার মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কেও তার গলা চেপে ধরে রেখেছে। উমায়ের আবার মাথা নিচু করে ফেলল। রুম্মান হেসে দিয়ে বলল-
“আমি জানতাম তুই তোর মজনুর লেলা হয়ে যাবি।”
“আহা রুম্মান, প্লিজ এসব বলা বন্ধ কর। আমার মাথা কাজ করছে না।”
“ঠিক আছে, আচ্ছা এটা বল যে কি বলতে চাচ্ছিলি তুই?”
উমায়ের রুম্মানের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকাল। রুম্মান তার চাহনি দেখে বুঝতে পারলো উমায়ের তাকে কিছু বলতে চায় কিন্তু বলতে পারছে না। রুম্মান উমায়ের এর হাত ধরে বলল-
“আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড তাই না? তো বল কি বলতে চাস।”
“রুম্মান আমি…”
“আহা চুপ থাকবি না, বল।”
“রাতে যে ঘটনা হলো। সেখানে এমন দেখেছি যেটা আমাকে ভাবনায় ফেলে দিয়েছে।”
“কি দেখেছিস? তুই অর্ধেক কথা বলে থেমে যাস কেন? বললাম না ফিল্মের নায়িকাদের মতো আচরণ বন্ধ কর।”
“যে এসেছিল আব্বুকে মারতে। তাকে আমি দেখিনি। মাস্ক আর হুডি পড়ে ছিল। কিন্তু তার চোখ, তার চোখগুলো আমার বেশ চেনা চেনা লাগছিল।”
“বলিস কি? দেখে কার চোখ মনে হচ্ছিল?”
“ও..ওর।”
“হোয়াট? তুই তোর মজনুর কথা বলছিস?”
উমায়ের হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। রুম্মান হেসে দিয়ে বলল-
“তুই পাবলিক প্লেসে বকাঝকা করবি বলে কখনো তোর সাথে কথা বলার চেষ্টা টুকু করেনি। আর তুই বলছিস ও তোদের বাসায় তোদের মারতে গিয়েছিল!”
“আমি সেটা বলছি না, চোখদুটো ওর মতো লাগছিল।”
“উমায়ের তুই হয় তো তখন ওকে মিস করছিলি তাই এমনটা লেগেছে তোর।”
“হয় তো, কিন্তু ভবিষ্যতে যদি জানি তারা দুজন মানুষ একজনই তখন আমি কি করবো রে?”
রুম্মানের খুব হাসি আসছে। উমায়ের পাগল হয়ে গিয়েছে নিশ্চয়ই। কোনমতে হাসি থামিয়ে বলল-
“নিজের হাতে ওকে গুলি করে দিস।”

রাতেরবেলা…..
খালিদ খানের ডাকে বুরাক ঘর থেকে বেরিয়ে হলরুমে আসলো। বুরাককে দেখে খালিদ খান হেলান ছেড়ে বসে বলল-
“কোথায় থাকিস তুই? খুজেই পাওয়া যায় না।”
“ঘরে ছিলাম বস।”
“এদিকে আয় কথা আছে।”
বুরাক গিয়ে খালিদ খানের পাশে বসলো। তখন ববি আর রাশিদ খানও আসলো। খালিদ খান তাদেরও বসতে বলল পাশে।
“আমি ইলেকশন হেরে গিয়েছি। এতে আমার মনে দুঃখ কম রাগ বেশী। আমি যত টাকা ইনকাম করেছিলাম তার অর্ধেক এলাকাবাসীদের উপর খরচ করে ফেলেছি। এখন তোরা একটা খোঁজ কর, কারা কারা টাকা নিয়েও ভোট করেনি আমাকে।”
বুরাক নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল-
“আর এসব করে কি লাভ বস? এখন যদি তাদের কোন ক্ষতি হয় সর্বপ্রথম সন্দেহ আপনার উপরেই আসবে। ফিরোজ আনোয়ারের আপনার বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করতে বেশী সময় লাগবে না।”
“বুরাক, যদি ফিরোজ আনোয়ারই না থাকে তাহলে আমার বিরুদ্ধে কে প্রমাণ জোগাড় করবে?”
বুরাকের বুকের বা পাশ মোচড় দিয়ে উঠলো। তার চোখের সামনে উমায়ের এর চেহারা ভাসছে। খালিদ খান রাশিদ খানের দিকে তাকিয়ে বলল-
“তোদের ৩ জনের উপর আমার খুব বিশ্বাস। প্ল্যান বুঝিয়ে দিচ্ছি কি কি করতে হবে।”
বুরাক ববির দিকে তাকাল। ববি বুরাকের চাহনি দেখে মাথা নিচু করে ফেলল।

পরেরদিন…..
“উমায়ের, এই উমায়ের”
রুম্মানের ডাকে উমায়ের এর হুঁশ ফিরলো। বিরক্ত চেহারা বানিয়ে রুম্মানের দিকে তাকাল উমায়ের। রুম্মান এক ভ্রু উঁচু করে বলল-
“এভাবে তাকাতে হবে না। খাবার এনেছি খেয়ে নে। এরপর জল্লাদ স্যারের ক্লাস। আমার ভালো লাগে না উনার ক্লাস করতে আমার। কিভাবে তাকিয়ে থাকে ছি।”
“এক সময় উনি তোর ক্রাশ ছিল।”
“সময়ের সাথে সাথে ক্রাশিত ভাবও ফুরিয়ে গিয়েছে।”
“যদি আমি বলি স্যার তোর জন্য মজনু তখন?”
“একদম না, আমার জন্য মজনু হলে কি আমাকেই এত এত হোমওয়ার্ক দিত? আমার কষ্ট হবে এই ভেবে দিতই না।”
“কত ভাবনা বাহ”
রুম্মান ভেংচি কেটে খেতে শুরু করলো। উমায়ের এর খেতে ইচ্ছে করছে না। তার আজ আবার ভয় করছে। সেদিন ভয় করেছিল অকারণে আর রাতেই অঘটন ঘটেছিল। আর আজও তার অকারণে ভয় করছে। যদি আবারও অঘটন ঘটে? ক্ষুধাও পেয়েছে, পেটের আগে মনের দাম নেই। খেয়ে নিল খাবার। ক্লাসের ঘন্টা বাজতেই রুম্মানের ন্যাকামো শুরু হলো সে ক্লাস করবে না। উমায়ের টেনে তাকে ক্লাসে নিয়ে গেল। প্রতিবারের মতে এবারের তাই হলো। স্যার রুম্মান আজও অনেকগুলো হোমওয়ার্ক দিয়ে দিলো। ভার্সিটির শেষে রুম্মান রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর স্যারের চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছে। উমায়ের না হেসে পারলো না। হঠাৎ সামনে তাকাতেই থমকে দাঁড়াল। সে দাঁড়িয়ে আছে। উমায়ের এর হৃৎস্পন্দন হঠাৎ বেড়ে গেল। রুম্মান তাকে দেখে নিচু স্বরে বলল-
“দেখ তোর মজনুকে আরও হ্যান্ডসাম হয়ে গিয়েছে। তো বল তোর মনে ঘন্টা বেজেছে কি-না। মনে হয় বেজেছে কারণ আমি ঘন্টা বাজার শব্দ শুনতেন পাচ্ছি।”
উমায়ের রুম্মানের দিকে ছোটো ছোটো চোখ করে তাকিয়ে বলল-
“আপাতত আমার মনে না পাশের স্কুলে ছুটির ঘন্টা বাজছে। তুই সেটাই শুনতে পাচ্ছিস।”
রুম্মান বিরক্ত হয়ে হাত আড়াআড়িভাবে ভাজ করলো। বুরাক ধীরে ধীরে হেটে এসে উমায়ের এর বরাবর দাঁড়াল। উমায়ের এর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। বুরাক রুম্মানের দিকে তাকিয়ে বলল-
“ঝালমুড়ি খাবেন?”
রুম্মান সাপের মতো ফোশ করে উঠলো-
“এই এই আমি কি বলেছি আমি ঝালমুড়ি খাব? আমার কাছে টাকার কমতি নেই। নিজেরটা নিজে কিনে খেতে পারবো।”
“ফর্মালিটি ভাবতে পারো, আমারও ইচ্ছে নেই নিজের ১০ টাকা তোমার জন্য খরচ করা।”
উমায়ের ফিক করে হেসে দিলো। তার হাসি থামছে না। রুম্মান হা হয়ে তাকিয়ে আছে। বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমি শুনেছি আপনার বাসায় হামলা হয়েছিল। আপনি ঠিক আছেন তো?”
উমায়ের হাসি থামিয়ে বুরাকের দিকে তাকাল। বুরাকের কথা শুনে তার মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সে তো ভাবছিল এই ছেলেটাই এসেছিল। কিন্তু এখন নিজের ভাবনার উপর রাগ হচ্ছে। এই মানুষটা এত খারাপ হতে পারে না। উমায়ের মাথা নিচু করে বলল-
“জি”
“আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম সব শুনে। কিন্তু আপনি চিন্তা করবেন না। আপনার বা আপনার পরিবারের কোন ক্ষতি হবে না।”
রুম্মান বিরক্ত হয়ে বলল-
“কেন আপনি পুলিশ, র‍্যাব, বডিগার্ড না-কি ভবিষ্যত বলা পীর বাবা? এমনভাবে বলছেন যেন নিজে রক্ষা করবেন উমায়েরকে।”
“দরকার হলে তাই করবো, আর আপনি রাগী ষাড়ের মতো রাগছেন কেন বার বার?”
“কারণ আপনাকে আমি সহ্য করতে পারছি না। দূরে থাকুন আমার বান্ধবী থেকে।”
“কাছে আসলামই কবে যে দূরে যাব?”
“তো এখন কি ১০ হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছেন? উমায়ের এই ছেলে দেখছি মাথামোটা।”
“আমি একদম ঠিক আছি। আপনার মাথায় সমস্যা আছে। গিয়ে চিকিৎসা করান।”
“আবার ভাই ক্যারাটে শেখায়। ভাইয়াকে বলে দিব। ব্যস এসে দিবে আপনাকে মাইর।”
“ওহ শিট ভয় পেয়ে গেলাম আমি। আমার হাঁটু কাঁপছে।”
উমায়ের হাসছে তাদের ঝগড়া দেখে। এক সময় চারপাশে মানুষের ভিড় জমে গেল। উমায়ের পরিস্থিতি দেখে তাদের দুজনকে থামালো। বুরাককে থাকতে বলে রুম্মানের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। বুরাক ঘাড় ঘুরিয়ে তাদের দিকে তাকাল। রুম্মানের ব্যবহারের জন্য উমায়ের তার এক কান ধরে সরি বলল। বুরাক হেসে মাথা নাড়াল। উমায়ের রুম্মানকে ধমক দিয়ে গাড়িতে বসালো। তারপর এক নজর বুরাককে দেখে নিজেও উঠে বসলো। বুরাক পকেটে হাত দিয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। বেশ ফুরফুরে লাগছে মনটা। হঠাৎ তার মোবাইল বেজে উঠলো। পকেট থেকে বের করে দেখে ববি কল দিয়েছে। রিসিভ করে কানে ধরলো-
“হ্যাঁ বল”
“ছোটো বস খুব বাজে কিছু ভেবেছে উমায়ের এর জন্য।
“মানে কি? বুঝিয়ে বল।”
ববি অপর পাশ থেকে এমন কিছু বলল বুরাকের রাগ সপ্তম আকাশের উঠে গেল। বাম হাত শক্ত করে মুঠো করে ফেলল। চোখ দুটো সাথে সাথে লাল রং ধারণ করলো। কপালের রগ ফুটে উঠেছে। বুরাক দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
“আজ রাতে? ঠিক আছে আজ রাতেই ওর জানাজা আমি বের করবো।”

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here