#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১৯
“কত লাগবে আপনার?”
পুলিশটা চলে যেতে নিলো কিন্তু খালিদ খানের কথা শুনে থেকে গেল। খালিদ খানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিলো।
মা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। বুরাক মায়ের হাত ধরে চুপচাপ বসে আছে মায়ের সাথে ঘেষে। তার ভয় করছে খুব। বাবা ডাক্তারদের সাথে কিছুক্ষণ আগে কথা বলছিল। পুলিশরা বর্ষাকে দেখে গেলে বর্ষাকে তারা গ্রামে নিয়ে যাবে। গ্রামের কবরস্থানে কবর দেবে৷ এটা শোনার পর থেকেই বুরাক ভয়ে কাঁপছে। রেনু শাফিয়াকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। যবে থেকে এই ঘটনা ঘটেছে চারপাশ কেমন যেন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে৷ কিছুক্ষণের মধ্যে বাবা আসলো পুলিশকে সাথে নিয়ে৷ সবাই পুলিশকে দেখে নড়েচড়ে বসলো। পুলিশ এসে সবাইকে দেখে বুরাকের বাবার দিকে তাকিয়ে বলল-
“রাশিদ, মোবিন, টগর ও বনি তারা চারজন ছিল একসাথে নেশাগ্রস্ত অবস্থায়।”
“তাদের এরেস্ট করেছেন?”
“মোবিন, টগর ও বনিকে এরেস্ট করেছি। কিন্তু রাশিদ খান পলাতক। তাকে খুঁজে বের করতে কতদিন লাগবে আমি জানি না।”
“আমি আপনাকে অনুরোধ করছি। দয়া করে তাকে খুঁজে বের করুন। আমার একটাই মেয়ে ছিল। তারা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাকেও কেঁড়ে নিলো।”
“শাহরিয়ার সাহেব, একটা কথা আপনাকে ক্লিয়ার করতে চাই। যদি কোন মানুষ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কারো খুন বা এক্সিডেন্ট করে তাহলে তার শাস্তি হওয়া অসম্ভব। কারণ মানুষটা নিজের মধ্যে ছিল না।”
শাফিয়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো-
“এটা কি আইনের অংশ?”
পুলিশ ঘাড় ঘুরিয়ে শাফিয়াকে দেখে বলল-
“না, এটা আমাদের থানার রুলস।”
“তাহলে আপনার রুলস এর বই জ্বালিয়ে ফেলুন। আইনে এমন কোন নিয়ম নেই। অপরাধী নিজের মধ্যে থাকুক বা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকুক। তার শাস্তি হওয়া নিশ্চিত।”
“মেয়ে তুমি আমাদের থেকে বেশী জানো?”
“হ্যাঁ জানি, আপনারা কী আদৌও পুলিশ?”
পুলিশ রাগী দৃষ্টি বানিয়ে শাফিয়ার দিকে তাকাল। বুরাকের বাবা শাফিয়াকে ইশারায় চুপ থাকতে বলল। তারপর পুলিশের দিকে তাকিয়ে বলল-
“মাফ করবেন, আসলে ও ওর ছোটো বোনকে অনেক ভালোবাসে তাই নিজের মধ্যে নেই।”
“দেখুন শাহরিয়ার সাহেব, আমরা আমাদের পুরো চেষ্টা করবো। কিন্তু আপনার উচিত আপনার পরিবারকে সামলানোর। এমন বেয়াদবি করবে থানায় ধরে নিয়ে যাবো।”
তখনই দরজার পাশ থেকে বশির বলে উঠলো-
“যে হাত দিয়ে ধরবেন সে হাত আর আস্ত থাকবে না।”
সবাই দরজার দিকে তাকাল। বশির দ্রুত হেটে এসে পুলিশের বরাবর দাঁড়িয়ে বলল-
“আমরা যথেষ্ট পড়াশোনা করেছি। মুর্খ ভেবে থাকলে আপনারই ক্ষতি।”
পুলিশ রাগী কন্ঠে বলল-
“শাহরিয়ার সাহেব আপনার সন্তানরা খুবই বেয়াদব। ছোটো বলে আমি কিছু বলছি না নাহলে লাঠি চার্জ কাকে বলে বুঝিয়ে দিতাম।”
বুরাকের বাবা বশিরকে ধমকের স্বরে বলল-
“তুমি নিজের রাগকে সামলাও। আর যাও এখান থেকে। ছোটোরা আর একটাও কথা বলবে না। আমি আছি এখনো।”
মা উঠে দাঁড়িয়ে বশিরকে টেনে সরিয়ে ফেলল। বশির রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পুলিশের দিকে। পুলিশ বুরাকের বাবার সাথে কথা বলছে আর আড়চোখে বশিরকে দেখছে। তারাতাড়ি কথা শেষ করে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল৷ বাবা বশির আর শাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল-
“কী দরকার ছিল তোমাদের মাঝখানে কথা বলার?”
শাফিয়া বলল-
“ফুপা, ওই পুলিশটা মিথ্যে বলছে। আমার তো সন্দেহ হচ্ছে যে রাশিদ খান পলাতক না-কি উনি ইচ্ছে করে এরেস্ট করেনি।”
“এমন কিছুই না, বড়োলোক পরিবারের ছেলে। পালাতে কতক্ষণ? আমার বিশ্বাস আছে তার নিশ্চয়ই এরেস্ট করবে রাশিদ খানকে।”
বশির একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে ফেলে নিজেকে শান্ত করে বলল-
“আব্বু, আমি শিওর এই পুলিশ ঘুষ নিয়েছে। আপনি উকিলের ব্যবস্থা করুন দ্রুত। কোর্ট থেকে একবার রাশিদ খানকে এরেস্ট করার অর্ডার পেয়ে গেলে কেও রাশিদকে বাঁচাতে পারবে না।”
বাবা ভাবলো বশির ঠিক বলছে। উকিল খুব প্রয়োজন। উনি দ্রুত কেবিন থেকে বেরিয়ে পরলেন। বশির একবার বুরাকের দিকে তাকাল। বুরাক বশিরের চাহনি দেখে মাথা নিচু করে ফেলল। শাফিয়া এগিয়ে এসে বশিরের কাঁধে হাত রেখে বলল-
“বশির, যদি সত্যি পুলিশ ঘুষ নিয়ে থাকে তাহলে কেস খুব ক্রিটিকালের পথে চলে গিয়েছে।”
“জানি না কী হবে ভবিষ্যতে। আমার তো মনে হচ্ছে আমরা এমন এক চক্রে ফেসেছি যেখানে শুধু বিপদ রয়েছে। আর এটা হয়েছে শুধুমাত্র ওর জন্য।”
বুরাক মাথা তুলে বশিরের দিকে তাকাল। শাফিয়া বিরক্ত হয়ে বলল-
“এবার একটু বেশী হচ্ছে না বশির? তুমি অকারণে বার বার বুরাককে দোষারোপ করছো।”
“অকারণে? আমি নিজের চোখে দেখেছি ও বর্ষাকে ধাক্কা দিয়েছে। আরে আমি আমার বোনকে পাঁচ মিনিটের জন্য ওর কাছে দিয়ে গিয়েছিলাম। এই পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমার বোনকে নিয়তি এভাবে কেড়ে নিবে জানলে ওকে গাড়ি থেকেই বের করতাম না।”
“দোষ কিন্তু আমাদেরও বশির। আমরাই প্ল্যান করেছিলাম ঢাকার মেলা ঘুরার। আমরা যদি না আসতাম এমন কিছু ঘটতো না।”
বশির কিছুক্ষণ চুপ থেকে ধীরে ধীরে হেঁটে গিয়ে বিছানায় বসলো। মা বুরাকের হাত ধরে বশিরের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বুরাককে বশিরের পাশে বসালো। বুরাক ভয় পাচ্ছে বশিরের সামনে এসে। মা বশিরের মাথায় হাত রেখে বলল-
“মনে আছে বশির? বুরাক যখন জন্ম হয়েছিল সবচেয়ে বেশী তুই খুশী হয়েছিলি। আর যখন বর্ষা জন্ম হয়েছিল তোরা দুজনই ওকে দেখে কান্না করেছিলি। তোদের মধ্যে সবসময় ঝগড়া লেগে থাকতো যে বর্ষা কার কোলে থাকবে। বর্ষা যখন কথা বলতে শিখে। তোদের দুজনের ঝগড়া লাগলে বর্ষা-ই তোদের মিল করাতো। আর আজ আবারো ওকে নিয়ে তোদের মাঝে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়েছে। যদি বর্ষা থাকতো কী করতো বলতো।”
দুজনই চুপচাপ বসে আছে। রেনু দ্রুত এসে বুরাক ও বশিরের হাত ধরে একে অপরের হাতে রেখে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল-
“ভাইয়ারা, তোমরা যদি ঝগড়া করো আমি আর কখনো তোমাদের সাথে কথা বলবো না। এখনই সরি বলো একে অপরকে।”
বুরাক বশিরের দিকে তাকাল। বশির কিছুক্ষণ তাদের হাতের দিকে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ এক ঝটকায় নিজের হাত সরিয়ে দাঁড়িয়ে বলল-
“আজ শুধু আমার বোন না। আমার ভাইও মরে গিয়েছে আমার জন্য। যে আমাদের নিল করাতো সেই যদি না থাকে আমি ভাই দিয়ে কী করবো। যতবার আমি ওর চেহারা দেখবো আমার চোখে বার বার সেই দৃশ্য ভেসে উঠবে।”
বলেই বশির হাঁটা ধরলো। বুরাক দৌড়ে গিয়ে বশিরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল-
“ভাইয়া মাফ করে দে। আমি আমার বোনকে কিভাবে মারতে পারি বল। আমি তো ইচ্ছে করে করি নি।”
বশির নিজেকে ছাড়িয়ে বুরাকের দিকে ঘুরে সজোরে ধাক্কা মেরে বলল-
“কসম লাগে তোকে আমার কাছে আসবি না। আমি তোকে মাফ করবো না কখনো। আর আমাকে ভাইয়া ডাকা বন্ধ কর।”
বুরাক ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মা কিছু বলতে চেয়েও পারছে না। তাদের এত সুন্দর পরিবারের উপর কিভাবে নজর লাগলো বুঝতে পারছে না। শাফিয়া বশিরকে উদ্দেশ্য করে বলল-
“তোমার নাটক আর ভালো লাগছে না। তুমিও ভালো মতো জানো বুরাক…”
“চুপ, আর একটা শব্দ যাতে তোমার মুখ থেকে না বের হয়।”
রেনু রাগী কন্ঠে বলল-
“আমার বোনের সাথে তুমি ঠিক মতো কথা বলো।”
“তোর বোনকে বলে দে আমাকে জ্ঞান দেয়ার প্রয়োজন নেই। আসলে, আমার এখানে থাকাটাই ঠিক না। আমিই চলে যাই নাহলে আমার হাতে কারো খুন হয়ে যাবে।”
বশির এক নজর বুরাককে দেখে চলে গেল। শাফিয়া এক হাত কোমড়ে রেখে আর হাত দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরে রেখেছে। বুরাক মায়ের হাত ধরে বলল-
“আম্মু, আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন আমার জন্য এটাই যথেষ্ট। আব্বু আর ভাইয়া এখন রেগে আছে। আমি জানি খুব শীগগিরই উনাদের রাগ কমে যাবে।”
মা বুরাককে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
বাবা উকিলের সাথে পুলিশ স্টেশন গেলেন। পুলিশ পায়ের উপর পা টাকা গুনছিলেন। শাহরিয়ার শাহকে দেখে তারাতাড়ি টাকা ড্রয়ারে রেখে উঠে দাঁড়াল। বুরাকের বাবার চোখে দৃশ্যটা ধরা পরেছে। কিন্তু না জেনে উল্টা পাল্টা কিছু ভাবা ঠিক হবে না। পুলিশ উকিল দেখে হাসিমুখে বলল-
“আরে আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন। চা নাস্তার ব্যবস্থা করি দাঁড়ান।”
উকিল বলল-
“আমরা চা নাস্তা করতে আসি নি ইন্সপেক্টর সাহেব।”
বলেই ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে টেবিলের উপর রেখে আবার বলল-
“এটা দিতে এসেছিলাম। যান এখন নিজের ডিউটি করুন। সময় মাত্র ১ ঘন্টা দিলাম।”
পুলিশ কাগজটা হাতে নিয়ে খুলে দেখতেই চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। কাগজ সরিয়ে শাহরিয়ার শাহ এর দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে বলল-
“আমি তো আমার টিম অলরেডি পাঠিয়ে দিয়েছি রাশিদ খানকে খোঁজার জন্য।”
“আপনি এখনই আমাদেরকে নিয়ে খালিদ খানের বাসায় যাবেন। আপনি নিজে তাদের বাসার প্রত্যেকটা ঘর সার্চ করবেন।”
“সেটা তো আমি অলরেডি করেছি।”
“আমি বললাম তো, আপনি আবার সার্চ করবেন। এবার আমি যাব আপনার সাথে এবং আপনার উপর নজর রাখবো।”
“আপ..আপনি কি বল..বলতে চান উকিল সা..সাহেব।”
“এটাই বলতে চাই যে আপনি ঘুষ নিয়েছেন। যদি নিজ দায়িত্বে কাজ পুরো না করেন আপনাকে এরেস্ট করবে আপনার সিনিয়র। এবং সারাজীবনের জন্য পুলিশের চাকরি থেকে আউট করে দেয়া হবে। আরো কিছু শুনবেন না-কি আমাদের নিয়ে খালিদ খানের বাসায় যাবেন?”
“চলুন খালিদ খানের বাসায় যাই।”
“গুড, চলুন শাহরিয়ার সাহেব।”
বুরাকের বাবা মাথা নাড়ালেন। পুলিশের কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে।
রাশিদ খান সোফায় বসে লেবুর শরবত পান করছে। খালিদ খান মাথায় ঠান্ডা পানির ব্যাগ দিয়ে হাটাহাটি করছে। রাশিদ খান ভাইকে চিন্তিত দেখে বলল-
“ভাইজান, আপনি চিন্তা না করে শরবত খান।”
খালিদ খান দাঁড়িয়ে রাগী দৃষ্টি বানিয়ে রাশিদ খানের দিকে তাকিয়ে বলল-
“তোর কারণে আমার জ্বর এসেছে। অচেনা এক পুলিশকে ৫ লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে। আর কত বিপদে ফেলবি আমাকে তুই?”
“সরি ভাইজান, এটাই শেষ ওয়াদা রইল আমার।”
“রাশিদ তুই..”
খালিদ খান বলার আগেই কলিংবেল বেজে উঠলো। দুজনই চমকে উঠল শব্দ শুনে। খালিদ খান রাশিদ খানের দিকে তাকিয়ে বলল-
“তুই ভেতরে যা। আমি না বলার পর্যন্ত ঘর থেকে বের হবি না। এবং ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে রাখবি।”
রাশিদ খান শুনেই দৌড়ে ঘরে চলে গেল। খালিদ খান ডান বাম দেখে ধীরে ধীরে হাঁটা ধরলো। বার বার কলিংবেল বাজছে। খালিদ খান দরজা খুলে দেখে পুলিশ, উকিল ও একজন মানুষ দাড়িয়ে আছে। পুলিশের চেহারায় ভয় ভয় ভাব দেখা যাচ্ছে।
“জি বলুন কাকে চাই?”
উকিল পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলল-
“আপনি নিজে বলবেন না-কি আমি বলবো ইন্সপেক্টর সাহেব?”
“আমিই বলছি।”
পুলিশ খালিদ খানের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলল-
“আপনার ভাইকে এরেস্ট করতে এসেছি আমরা।”
“আমার ভাই? কিন্তু আপনাকে তো বলেছি সে এখনো বাসায় ফিরে নি।”
“এটা আমিও উকিল সাহেবকে বলেছিলাম কিন্তু উনি মানতে নারাজ।”
উকিল বলল-
“খান সাহেব, দয়া করে সরে দাঁড়ান। এতক্ষণ আমি আসিনি বলে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এর জন্য আমি শাহরিয়ার শাহ সাহেবের উপর বেশ রেগে আছি। উনার আরো আগে আমার কাছে যাওয়া উচিত ছিলো।”
খালিদ খান শাহরিয়ার শাহ সাহেবের দিকে তাকাল। শাহরিয়ার শাহ সাহেব উকিলকে বললেন-
“এমন ঘটনা ঘটলো আমাদের সাথে। আমি আসলে বুঝতে পারিনি কি করা যায়। আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।”
“ধন্যবাদ এখন না, তখনই দিয়েন যখন আপনার মেয়ের খুনীদের ফাঁসির আদেশ দেয়াতে পারবো।”
বলেই উকিল সাহেব খালিদ খানের দিকে বাঁকা হাসি দিয়ে তাকাল। খালিদ খান রাগে কটমট করছে। উকিল সাহেব বলল-
“এবার সরে দাঁড়ান। আসামী বাসায় আছে কি নেই সেটা আমরাই চেক করবো।”
না চাওয়ার শর্তেও খালিদ খান সরে দাঁড়াল। উকিল এবং শাহরিয়ার শাহ ভেতরে ঢুকলেন। পুলিশ মাথা নিচু করে ভেতরে ঢুকলো। খালিদ খান ফিসফিস করে বলল-
“টাকা নেয়ার পর বেইমানি? তোকে টাকা দেয়ার সময় আমি ভিডিও করে রেখেছি। খুব শীগগিরই তোর সিনিয়ারদের কাছে পাঠিয়ে দিবো। শাস্তি আমার ভাই একা না তুইও ভোগ করবি।”
পুলিশ ঢোক গিলল। সে কোথায় এসে ফাঁসলো নিজেও বুঝতে পারছে না। ভেবেছিল একটা হয়ে গেল আর একটা। উকিল সাহেব পুলিশকে ইশারায় বলল ভেতরে যেতে। শাহরিয়ার শাহ দাঁড়িয়ে আছে উকিল এবং পুলিশ ভেতরে গিয়েছে রাশিদ খানকে খুঁজতে। খালিদ খান রাগী দৃষ্টি বানিয়ে তাকিয়ে আছে শাহরিয়ার শাহ এর দিকে। শাহরিয়ার শাহ খালিদ খানের দিকে তাকিয়ে তার চাহনি দেখে বলল-
“আমি আমার ১২ বছরের রাজকন্যা হারিয়েছি। আসামীকে ছাড় দিবো না।”
“আমার ভাই ইচ্ছে করে কিছু করেনি। সে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলো।”
“নেশা করাও পাপ মিস্টার খালিদ খান।”
তখনই উকিল সাহেব টেনে রাশিদ খানকে বাহিরে নিয়ে আসলেন। রাশিদ খান রাগী কন্ঠে চেচিয়ে বলল-
“ছাড় আমাকে, তোদের কাওকে ছাড়বো না আমি বলে দিলাম। মেরে ফেলবো তোদের।”
খালিদ খান দ্রুত গিয়ে রাশিদ খানকে ধরে বলল-
“শান্ত হো রাশিদ। তোর কিছু হতে দিবো না আমি।”
“এই উকিলকে বলো আমার কলার ছাড়তে।”
উকিল আরো শক্ত করে রাশিদকে ধরে বলল-
“তোর সাহস থাকলে নিজেকে ছাড়িয়ে দেখা। এখানেই পুঁতে রেখে দিবো চেচালে। ইন্সপেক্টর সাহেব, আপনি নিয়ে যাবেন না-কি আমিই এই ডিউটি পালন করবো?”
পুলিশ ধীরে ধীরে হেটে এসে রাশিদ খানকে হালকা করে ধরলো। উকিল হেসে বলল-
“আসামীর কলার ধরতে হয় ইন্সপেক্টর সাহেব।”
“ভু..ভুলে গিয়েছিলাম।”
“আপনি পুলিশ কিনা আমার সন্দেহ হচ্ছে। ভুলে গেলে তো চলবে না তাই না? এখন হেঁচকা টেনে নিয়ে যান। এমনভাবে টানবেন যাতে মানসম্মান মাটির সাথে মিশে যায়।”
খালিদ খান রাগী কন্ঠে বলল-
“এই কালো কোর্টওয়ালা, অতিরিক্ত হচ্ছে এখন।”
“এই কোর্ট পড়লে নিজেকে খুব সাহসি মনে হয় আমার। এই কোর্ট পড়ার অবস্থায় মৃত্যু হলেও আমি খুশী। চলি এখন, আমাকে হারাতে হলে আমার টক্করের কাওকে নিয়ে আসুন। খোদা হাফেজ।”
বলেই উকিল সাহেব হাঁটা ধরলেন। শাহরিয়ার শাহ এক নজর খালিদ খানকে দেখে উকিলের পেছনে চলে গেল। পুলিশ রাশিদ খানকে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে এসে ভ্যানে তুললো। খালিদ খান দৌড়ে বাহিরে এসে তাকিয়ে রইলো ভাইয়ের যাওয়ার দিকে। শাহরিয়ার শাহ গাড়িতে বসে তাকিয়ে আছে খালিদ খানের দিকে। খালিদ খান শাহরিয়ার শাহ এর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
“আমি জানি না তুই কে। কিন্তু এইটুকু বলে রাখি। এর পর যা হবে তুই কখনো আমাকে ভুলতে পারবি না।”
চলবে…..