#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২৩
বুরাকের ডাকে উমায়ের ধীরে ধীরে চোখ খুলল। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে বুরাক দাঁড়িয়ে আছে।
“তোমার কী মাথা ব্যাথা? চা খাবে?”
“না, তুমি কোথায় ছিলে?”
“তুমি তো জানোই পানি নিতে গিয়েছিলাম। ঠান্ডা পানি কারো কাছে নেই। তাই নর্মাল পানি নিয়ে আসলাম।”
উমায়ের নড়েচড়ে বসে বলল-
“সমস্যা নেই, বাস চালু করবে বসো এখন।”
বুরাক মুচকি হেসে উমায়ের এর পাশে বসলো। উমায়ের বুরাকের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ আগের কথা ভাবছে। সত্যি কি পুলিশ বুরাককে শাস্তি দেবে? যদি ইনকাউন্টার করে ফেলে তখন? বুরাকের পুরো পরিবার এতবছর পর বুরাককে কাছে পেয়েছে। এত তারাতাড়ি আবার হারিয়ে ফেলবে? আর রেনু, রেনু তো বুরাককে ভালোবাসে। একমাত্র রেনুই পারবে বুরাককে তার অধিকারের ভালোবাসা দিতে। বুরাক উমায়ের এর চাহনি দেখে এক ভ্রু উঁচু করে বলল-
“কি ভাবছো?”
উমায়ের চোখ সরিয়ে না সূচক মাথা নাড়াল। বুরাক হেসে বলল-
“নিশ্চয়ই কিছু বলতে চাও। বলো কি হয়েছে?”
উমায়ের বুরাকের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। বুরাক উমায়ের এর চাহনি দেখে মুচকি হেসে বলল-
“নিশ্চিন্তে বলতে পারো। তোমার কোন কথা আমার খারাপ লাগে না।”
“সত্যি?”
বুরাক হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। উমায়ের বুরাকের হাতের দিকে তাকিয়ে বলল-
“কতজনকে আজ পর্যন্ত মেরেছো হিসাব করেছো কখনো?”
“না”
উমায়ের বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“ভাবো কেও একজন তোমার অপেক্ষায় আছে কিন্তু তুমি থানার কয়েদি হয়ে সেখানে পড়ে আছো সারাজীবনের জন্য তখন কি করবে?”
বুরাক ফিক করে হেসে দিলো। হাসতে হাসতে শেষ হেলান দিয়ে বসে বলল-
“তুমি হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন করলে আমি জানি না। কিন্তু বিশ্বাস করো তোমার প্রশ্নটা বেশ ফানি।”
“তোমার কেন মনে হলো আমি ফান করছি?”
“তো আর কি? কে অপেক্ষা করবে আমার শুনি? আমি শিওর তুমি আমার পরিবারের কথা বলছো না। কিন্তু আমার সামওয়ান স্পেশাল বলতে কেও নেই।”
“আমি রেনুর কথা বলছি বুরাক।”
বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে দু’বার চোখের পলক ফেলল। উমায়ের সোজা হয়ে বসে বলল-
“সে তোমাকে অনেক ভালোবাসে।”
কিছুক্ষণ পরিবেশ নিরব রইল। হঠাৎ বুরাক শব্দ করে হেসে উঠলো। আশে পাশের সবাই বুরাকের দিকে তাকিয়ে আছে। উমায়ের বিরক্ত হয়ে বুরাককে কনুই দিয়ে গুঁতা মেরে বলল-
“আস্তে হাসো।”
বুরাক হাসতে হাসতেই বলল-
“পারবো না, আমার অনেক হাসি আসছে।”
বুরাকের হাসি যেন থাকতেই চাচ্ছে না। সবাই কানাকানি করছে। উমায়ের বুরাকের কলার ধরে টেনে তার মুখের বরাবর নিয়ে আসলো। উমায়ের এর চেহারার এত কাছে এসে বুরাকের হাসি নিমিষে শেষ হয়ে গেল। উমায়ের চেহারা বুরাক ভালো মতো দেখে ঘোরের মাঝে ডুবে গেল। উমায়ের এর মনে হলো সে মারাত্মক ভুল কিছু করে ফেলেছে। তারাতাড়ি বুরাকের কলার ছেড়ে সোজা হয়ে বসে বলল-
“সরি, দূরে সরো এখন।”
বুরাক সোজা হয়ে বসে উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে বলল-
“তুমি নিজেই তো কাছে টানলে।”
“তো তুমি হাসা বন্ধ না করলে কি করবো?”
“আর তুমি যে জোকস শুনাচ্ছো সেটা কি?”
“জোকস না, রেনু সত্যি তোমাকে ভালোবাসে।”
“হ্যাঁ ভালোবাসে।”
উমায়ের লম্বা নিশ্বাস নিয়ে ছাড়লো। কেন যেন সত্যটা উমায়ের জানলেও মন থেকে মানতে পারছে না। উমায়ের বলল-
“আমি চাই তুমি রেনুর জন্য তোমার পরিবারের কাছে ফিরে যাও।”
“রেনুর জন্য? আমার মায়ের জন্য বললেও বুঝলাম উমায়ের। বার বার রেনুকে কেন মাঝে টানছো?”
“কারণ আমি জানি রেনুই একমাত্র মানুষ যে তোমার জীবনসঙ্গী হতে পারবে।”
“আচ্ছা বুঝলাম, আমি যদি রেনুর জীবনসঙ্গী হয়ে যাই তাহলে রেনুর বর্তমানে যে জীবনসঙ্গী আছে তার কি হবে?”
“তার…এক মিনিট, কি বললে তুমি?”
অন্যদিকে…..
“স্যার আমি আপনাকে কিভাবে ধন্যবাদ দিব বুঝতে পারছি না।”
ফিরোজ আনোয়ার আকলিমার হাত ধরে বলল-
“আরে আরে হাত জোর করছো কেন? ধন্যবাদ দিতে হবে না। এটা আমার কর্তব্য ছিল। ধন্যবাদ তো তোমাকে দেয়া উচিত। তুমি এত কম বয়সে যে কাজ করছো সেটা আমি করতে গেলেও হিমশিম খাবো। তাই অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে দিলাম আমি।”
বলেই ফিরোজ আনোয়ার মুচকি হেসে আকলিমার হাত ছাড়লো। আকলিমা হাসিমুখে বলল-
“এটা তো আমার স্বপ্ন ছিল স্যার। বাবার আশ্রমকে সবসময় হেফাজতে রাখার দায়িত্ব নিয়েছিলাম আমি। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত চেষ্টা করবো আমার সব মা এবং বাবার রক্ষা করার।”
“গর্ব হচ্ছে আমার খুব। আমার মেয়ে ফিরে আসলে তোমার সাথে তার আলাপ করাবো আমি। তুমি তোমার বয়সী প্রত্যেক মানুষের জন্য ইন্সপেরিশন। সবসময় ভালো থাকো দোয়া রইলো আমার।”
আকলিমা মুচকি হাসলো। ববি দর্শক হয়ে তাদের কথা শুনছে কিন্তু বুঝতে পারছে না তারা কিসের সম্পর্কে কথা বলছে। ফিরোজ আনোয়ার ববির দিকে তাকিয়ে বলল-
“চলো এখন যাওয়া যাক তোমার আন্টি অপেক্ষা করছে আমাদের।”
ববি মাথা নাড়াল। ফিরোজ আনোয়ার আকলিমার দিকে একটা কার্ড আর কিছু টাকা এগিয়ে দিয়ে বলল-
“টাকাটা রাখো, আর কার্ডে আমার নাম্বার লিখা আছে। দরকার হলে সাথে সাথে কল দিবা ঠিক আছে?”
আকলিমা শুধু কার্ডটা নিয়ে বলল-
“টাকা তো দিয়ে দিয়েছেন স্যার আর লাগবে না। কিন্তু দরকার হলে আমি নিশ্চয়ই কল করবো।”
ববি বলল-
“টাকাটা আপনার জন্য দিয়েছে। আপনার আম্মুর দেখাশোনার জন্য আপনাকে হসপিটালে থাকতে হবে। আপনারও তো হাত খরচ লাগবে তাই না?”
ফিরোজ আনোয়ার বললেন-
“হ্যাঁ ববি ঠিক বলছে। আমি কিন্তু দয়া করছি না তোমার উপর। তুমি যা করছো তার জন্য এটা তোমার পুরস্কার।”
“হ্যাঁ এখন টাকাটা রাখুন। আপনার জায়গায় আমি হলে সাথে সাথে নিয়ে নিতাম। আই লাভ মানি।”
আকলিমা হেসে উঠলো ববির কথা শুনে। ববির মনে ঘণ্টা বাজছে। সেও হাসলো আকলিমার হাসি দেখে। ফিরোজ আনোয়ার আকলিমার হাতে টাকা দিয়ে ববির দিকে এক ভ্রু উঁচু করে তাকাল। ববির হাসি উড়ে গেল ফিরোজ আনোয়ারের চাহনি দেখে। সাথে সাথে মাথা নিচু করে বলল-
“আসি তাহলে”
আকলিমা মাথা নাড়াল। ফিরোজ আনোয়ার আকলিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বিদায় নিয়ে হাঁটা ধরলো। ববিও চুপচাপ উনার পেছনে হাটতে লাগলো। হাটতে হাটতে দাঁড়িয়ে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে আকলিমার দিকে তাকাল। আকলিমা এখনো তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। ববি মুচকি হেসে হাত দিয়ে টাটা দেখালো। আকলিমা হেসে চোখ সরিয়ে দ্রুত হেটে ভেতরে চলে গেল। ববি হাসিমুখে নিজের মাথায় চুল্কাচ্ছে। হঠাৎ ফিরোজ আনোয়ার বলে উঠলো-
“হয়েছে তো আর কত দেখবে মেয়েটাকে।”
ববি চমকে উঠে ফিরোজ আনোয়ারের দিকে তাকাল। ফিরোজ আনোয়ার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
“সরি স্যার, আমি খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাকাই নি।”
“হুম সেটা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু কাওকে মন দেয়ার আগে জীবনটাকে গুছিয়ে নিলে ভালো হয়, তাই না?”
“হ্যাঁ ঠিক বললেন। জীবনে এমন কিছু করতে হবে যাতে আমি মরার পর সবাই এটা বলতে না পারে যে এই ছেলে ক্রিমিনাল ছিল। ভালো হয়েছে মরে গিয়েছে।”
“বাহ তোমার দেখি খুব বুদ্ধি, চলো এখন।”
ফিরোজ আনোয়ার হাসতে হাসতে এগিয়ে গেলেন। ববিও হাসিমুখে দ্রুত হেটে উনার পেছনে গেল।
অন্যদিকে…..
“মানে? প্লিজ বুঝিয়ে বলো। তোমার কথা আমি বুঝতে পারি নি।”
“রেনু ম্যারিড, তার কাবিন গিয়েছে। তাও যখন সে কলেজে ছিল তখন।”
উমায়ের থমকে বসে আছে। তার মাথা ঝিমঝিম করছে। বুরাক হাসতে হাসতে বলল-
“সে তো মজা করে বলেছে যে আমি ওর আমানত। আর আমি রেনুকে বোনের মতো দেখি। সত্যি বলতে রেনু আমাকে খুব পছন্দ করতো। কিন্তু মামা-মামী কখনোই রাজি হয়নি কারণ আমি একজন ক্রিমিনাল। কোন মা বাবা চাইবে না তার মেয়ে একজন সন্ত্রাসকে ভালোবাসুক। তাই উনারা রেনুর বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।”
বলেই বুরাক হাসিমুখে মাথা করে ফেলল। উমায়ের অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বুরাকের দিকে।
“তোমার কি কষ্ট হয় না?”
বুরাক উমায়ের এর প্রশ্ন শুনে তার দিকে তাকাল।
“তোমার প্রশ্নের মানে বুঝি নি।”
“তোমাকে সবাই ক্রিমিনাল বলে তোমার কষ্ট হয় না।”
“কষ্ট কেন হবে? সবাই তো আর মিথ্যে বলে না।”
“সত্য কথা সবসময় বুকে গিয়ে আঘাত করে বুরাক।”
“কিন্তু আমার বুকে আঘাত করে না। কারণ আমি সত্য মানতে পারি খুব সহজে।”
“আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমি তোমার কখনো হবো না। এটাও কি মানতে পারবে?”
বুরাক উমায়ের এর প্রশ্ন শুনে জবাবে মুখভরা হাসি ছুঁড়ে মারলো। বুরাকের হাসি যেন উমায়ের এর কলিজা ক্ষতবিক্ষত করে ফেলেছে। বুরাক লম্বা নিশ্বাস নিয়ে ছেড়ে সামনের দিকে তাকাল। উমায়ের এখনো বুরাকের দিকে তাকিয়ে আছে। তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে বুরাকের জন্য। বুরাক হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। এখন সে উমায়েরকে কিভাবে বুঝাবে এই সত্যি বুরাককে কতটুকু ভেঙে ফেলেছে ভেতর থেকে। বুরাক ঢোক গিলে নিজের কান্না থামিয়ে ফেলল।
বাস ঢাকার বাসস্ট্যান্ডে এসে থামলো। বুরাক হুডি আর মাস্ক পড়ে নিলো। সবাই এক এক করে নামার পর বুরাক হেটে গিয়ে বাহিরে চোখ বুলিয়ে উমায়েরকে বলল আসতে। উমায়ের তার ওড়না দিয়ে চেহারা ঢেকে নিলো। বাস থেকে নেমে দুজন হেটে গিয়ে চারপাশে চোখ বুলালো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক। বুরাক উমায়ের এর হাত এগিয়ে দিয়ে বলল-
“হাত ধরো আমার। এখানে অনেক ভীর আমি রিস্ক নিতে পারবো না।”
উমায়ের বুরাকের হাত ধরলো। বুরাক ভাবলো এটাই উমায়ের এর সাথে শেষ পথচলা। তারপর দুজন সারাজীবনের জন্য আলাদা হয়ে যাবে। কথাটা ভাবতেই বুরাকের বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বের হলো। বুরাক যে রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করছে সেই বলছে যাবে না। বুরাক বুঝতে পারছে না হচ্ছেটা কি। এই নিয়ে ৭ টা রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলো সবাই বলল যাবে না। বুরাক দাঁড়িয়ে গেল। তার মনে হচ্ছে কোন গন্ডগোল হতে চলেছে। বুরাক উমায়ের এর হাত আরো শক্ত করে ধরে বলল-
“উমায়ের সামনে পেছনে ডানে বামে সব দিকে নজর দেখে তারপর হাটো।”
উমায়ের ভয় পেয়ো গেল।
“কেন বুরাক কি হয়েছে।”
“আপাতত আমি যা ভাবছি তা সঠিক কিনা জানি না। চুপচাপ হাঁটতে থাকো। আর ভয় পেও না আমি তোমার কিছু হতে দিবো না।”
উমায়ের তার দু-হাত দিয়েই বুরাকের ডান হাত শক্ত করে ধরলো। দুজনই হেটে চলেছে সামনের দিকে। হঠাৎ তাদের পায়ের সামনে একটা খালি বোতল উড়ে আসলো। বুরাক আর উমায়ের দাঁড়িয়ে গেল। উমায়ের ভয়ে বুরাকের সাথে ঘেষে দাঁড়াল। বুরাক চারপাশে ভালো মতো চোখ বুলালো। হঠাৎ করেই চারপাশ নিরব হয়ে গেল। রোডের আশে পাশে কাওকে দেখা যাচ্ছে না। বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে বলল-
“দ্রুত হাঁটা ধরো। বিপদ আসলে আমি প্রাণ লাগিয়ে মোকাবিলা করবো।”
উমায়ের মাথা নাড়াল। দুজন দ্রুত হাঁটা ধরলো। হঠাৎ বুরাকের মনে হলো কেও পেছন থেকে দৌড়ে আসছে। বুরাক দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরে দেখে প্রায় ৪ জন মানুষ দৌড়ে এগিয়ে আসছে। সবার হাতে অস্ত্র। বুরাক উমায়েরকে তার পেছনে টেনে নিয়ে সামনে দাঁড়াল।
“বুরাক তুমি কিভাবে লড়বে ওদের সাথে?”
“তোমার কি মনে হয় আমি এমনেই এসেছি? না, আমি আমার সব অস্ত্র সাথে করে নিয়ে এসেছি।”
বুরাক তার পকেট থেকে একটা রুমাল বের করলো। উমায়ের ভ্রু কুঁচকে বলল-
“এটা কি? প্লিজ এখন এটা বলো না ভেজা রুমাল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মারবে ওদের।”
“না বুঝে বেশী কথা বলো না। প্রস্তুত হয়ে যাও আরো একবার ক্রিমিনাল বুরাককে দেখার জন্য।”
বলেই বুরাক রুমাল খুলে এগিয়ে গেল। উমায়ের ডান বাম দেখছে। কিছুই বুঝতে পারছে না কি হবে এখন। তারা সামনে আসতেই বুরাক রুমালের দু’দিক ধরে একজনের হাতে পেচিয়ে সজোরে টান দিলো। সাথে সাথে মানুষ চিৎকার করে উঠলো। উমায়ের বড়ো বড়ো চোখ করে ফেলল বুরাকের রুমাল দেখে। রুমালে কাঁচের টুকরা লাগানো। বুরাক আর একজনের গলায় পেঁচিয়ে চেপে ধরে আগেরজনকে লাথি মেরে দূরে ফেলে দিলো। উমায়ের অবাক চোখে বুরাকের লড়াই দেখছে। তাদের মধ্যে একজন বুরাক সজোরে ঘুষি মেরে দিলো গালে। বুরাক গাল ধরে দু কদম পিছিয়ে গিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমার সুন্দর চেহারাকেই তোরা ধ্বংস করতে চাস।”
বলেই বুরাক রাগে গজগজ করতে করতে দৌড়ে গিয়ে তার চেহারায় রুমাল দিয়ে সজোরে আঘাত করলো। উমায়ের এর মনে হচ্ছে সে এখন অজ্ঞান হয়ে যাবে। বুরাকের সাথে দেখা হওয়ার পর তার জীবন ফিল্মের মতো হয়ে গিয়েছে। চারজনকে মাটিতে শুয়ে পড়েছে। বুরাক ঘাড় ঘুরিয়ে উমায়েরকে দেখে বলল-
“এটা ট্রেলার ছিল। এখন ফুল মুভি আসবে।”
বলার সাথে সাথে বুরাকের সামনে থেকে তিনটে গাড়ি এগিয়ে আসলো। বুরাক হাত পকেট থেকে মোবাইল বের করে উমায়ের এর এগিয়ে এসে বলল-
“উমায়ের শুনো, তুমি পালাও। আর হ্যাঁ তোমার আব্বুর নাম্বার সেভ করা আছে। কল দিয়ে বলো যত দ্রুত সম্ভব আসতে উনার লোক দিয়ে।”
“কিন্তু তুমি?”
“তারাতাড়ি যাও উমায়ের। আমি ওদের এগিয়ে যেতে দিবো না। তারা তোমাকে ছুঁতে পর্যন্ত পারবে না। যাও এখন তারাতাড়ি।”
বলেই বুরাক সামনের দিকে দৌড়ে গেল। আবার থেমে উমায়ের এর দিকে ঘুরে হাতের ইশারায় বলল তারাতাড়ি যেতে। উমায়ের ঘুরে দৌড়ে এগিয়ে গেল। তার এই সময় চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। খুব ভয় করছে বুরাকের জন্য তার। হঠাৎ করে পেছন থেকে গুলি করার শব্দ আসলো। উমায়ের থমকে দাঁড়াল গুলির শব্দ শুনে। তার শরীর থরথর করে কাঁপছে শব্দ শুনে। ধীরে ধীরে পেছনে ফিরে দেখে খালিদ খানের লোক দৌড়ে আসছে তার দিকে।
চলবে……