#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২৪
হঠাৎ করে পেছন থেকে গুলি করার শব্দ আসলো। উমায়ের থমকে দাঁড়াল গুলির শব্দ শুনে। তার শরীর থরথর করে কাঁপছে শব্দ শুনে। ধীরে ধীরে পেছনে ফিরে দেখে খালিদ খানের দুজন লোক দৌড়ে আসছে তার দিকে। উমায়ের এর পা যেন জমে গেল। সে কোনমতেই নড়তে পারছে না। ধীরে ধীরে হাত তুলে বাবার নাম্বার খুঁজতে লাগলো। কিন্তু লক খুলতে পারছে না। বাটন মোবাইলের সিস্টেম যে বুঝে না। তখনই বুরাকের স্বর ভেসে আসলো-
“উমায়ের পালাও”
উমায়ের মাথা তুলে দেখে বুরাক দৌড়ে আসছে তাদের পেছনে। উমায়ের বুঝতে পারলো খালিদ খানের লোকেরা তাকে ধরতে আসছে না। বরং বুরাকের মার থেকে বাঁচতে দৌড়ে আসছে। উমায়ের উঁচু স্বরে বলল-
“বুরাক তোমার মোবাইলের লক কিভাবে খুলবো?”
বুরাক উমায়ের এর প্রশ্ন শুনে বিরক্ত হলো। এই কঠিন সময় এই মেয়ের বোকামি কিভাবে সহ্য করবে সে। বুরাক দৌড়ের গতি বাড়িয়ে সেই দুজন লোকের কলার ধরে টেনে পেছনের দিকে ছুঁড়ে মারলো। তারা মাটিতে পড়ো গেল। কিন্তু তাদের জামা ছিঁড়ে বুরাকের হাতে রয়ে গিয়েছে। বুরাক নাক মুখ কুঁচকে হাত থেকে জামা ফেলে উমায়ের এর এগিয়ে গেল।
“এই সময় তুমি আমার সাথে মজা করছো? বাটন মোবাইলের লক খোলা সবচেয়ে বেশী সহজ।”
“আমি পারি না, সত্যি বলছি।”
বুরাক নিজের কপালে থাপ্পড় দিয়ে উমায়ের এর হাত থেকে মোবাইল নিয়ে লোক খুলতেই উমায়ের বলল-
“বুরাক পেছনে দেখো।”
বুরাক ঘাড় ঘুরাতেই তার গালে ঘুষি পারলো। বুরাক গাল ধরে উমায়ের এর গায়ের সাথে ঘেষে দাঁড়াল। মাথা ঝিমঝিম করছে। চোখ বন্ধ করে মাথা ঝাকিয়ে আবার তাকাল। সামনে থাকা মানুষ আবার মারতে নিলো। তার আগেই বুরাক সজোরে তার পেটে লাথি মেরে দূরে ঠেলে দিলো। উমায়ের এর হাতে মোবাইল দিয়ে বলল-
“এখন দেখো ফিরোজ স্যার লিখে সেভ করা তোমার বাবার নাম্বার। তারাতাড়ি কল দিয়ে আসতে বলো তাদের।”
বলেই বুরাক সামনের দিকে এগিয়ে গেল। উমায়ের তার বাবার নাম্বার খুঁজতে লাগলো। সামনে থেকে আরো কিছু লোক এগিয়ে আসলো। বুরাকের রাগ সপ্তম আকাশে উঠে গেল। খালিদ খান নিজে না এসে নিজের টাকায় পালিত চ্যালাদের পাঠাচ্ছে। বুরাক হিংস্র বাঘের মতো দৌড়ে গেল তাদের দিকে। দৌড়াতে দৌড়াতে আবার থেমে আশে পাশে তাকাল। রাস্তার পাশের ইট, বালু বস্তা রাখা। বুরাক দ্রুত গিয়ে বস্তা থেকে বড়ো সাইজের ইট খুঁজে খুঁজে তাদের দিকে ছুঁড়ে মারতে লাগলো। তারা তবুও দৌড়ে আসছে। বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকাল। সে এখনো মোবাইল টিপছে কল দিয়েছে কিনা কে জানে। বুরাকের মাথায় আইডিয়া আসলো। বালুর বস্তা থেকে দুই মুঠো ভরে বালু নিয়ে খালিদ খানের লোকেদের বরাবর দাঁড়াল। তারা সামনে আসতেই বুরাক তাদের চেহারায় বালু ছুঁড়ে মারলো। তারা চোখ ডলতে ডলতে পিছিয়ে গেল। বুরাক উমায়ের এর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে উঁচু স্বরে বলল-
“এই মেয়ে এতক্ষণ লাগছে কেন?”
উমায়ের বুরাকের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
“কি করবো পাচ্ছি না তো।”
“তোর মতো হাঁদারাম আমি আজ পর্যন্ত দেখি নি। ডায়াল লিস্ট চেক কর। তারাতাড়ি তোর বাবাকে আসতে বল নাহলে আমার সাথে সাথে আজ তুইও শেষ।”
বলেই বুরাক ঘুরে খালিদ খানের লোকেদের এলোপাথাড়ি ভাবে লাথি ঘুষি থাপ্পড় মারতে লাগলো। উমায়ের থতমত খেয়ে দাড়িয়ে আছে। বুরাক তাকে তুই করে বলল। রাগী ও কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল-
“তুমি আমাকে তুই করে বললে? আমি এখনই আব্বুকে কল দিয়ে বলছি।”
বুরাকের রাগ যেন হাওয়া হয়ে গেল। ঘাড় ঘুরিয়ে উমায়ের এর অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবছে এই মেয়ে সুস্থ না-কি স্পেশাল চাইল্ডদের লিস্টে তার নাম আছে। উমায়ের তার বাবার নাম পেতেই কল করে কানে ধরলো। রিং বাজার সাথে সাথে কল রিসিভ হলো।
“হ্যাঁ বুরাক বলো”
উমায়ের কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল-
“আমি বলছি”
“হ্যাঁ মামনি বলো, কেমন আছো তুমি?”
“ভালো না”
“কিন্তু কেন?”
“বুরাক আমাকে তুই করে বলেছে। আজ পর্যন্ত তুমিও আমাকে তুই করে বলো নি। ওর সাহস কি করে হলো?”
বলেই উমায়ের নাক টানলো। ফোনের অপরপাশে বাবা এবং রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে থাকা বুরাক। দুজনই ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। উমায়ের বাবাকে চুপ থাকতে দেখে বলল-
“কি হলো তোমার?”
“মামনি, সবসময় দোষ ধরতে নেই। তুমি কি করেছো সেটা বলো।”
“কি কিছু করি নি। খালিদ খানের লোকেদের রাগ আমার উপর তুলছে ও।”
ফিরোজ আনোয়ার হেলান দিয়ে বসে ছিলেন। মেয়ের কথা শুনে ধরফরিয়ে উঠে বসলেন।
“খালিদ খানের লোক? মানে কি?”
“ওহহো বলতে ভুলে গিয়েছি আমরা ঢাকা এসেছি।”
“হোয়াট? কিন্তু কেন? আমি বুরাককে বলেছিলাম খালিদ খান নামক বিপদ শেষ হলেই তোমাকে নিয়ে আসতে।”
“আমরা তো এসে পড়েছি। আসার সাথে সাথেই খালিদ খানের লোকের আমাদের পেছনে পড়ে গিয়েছে।”
“হায় আল্লাহ, বুরাক আমাকে কেন বলেনি আসার আগে?”
“জানি না তো”
“আচ্ছা এখন কোথায় আছো তোমরা? আর ঠিক আছো তো তুমি?”
“হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। আব্বু প্লিজ তারাতাড়ি আসো।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ মামনি আমি আসছি। তুমি একদম চিন্তা করো না। আর বুরাক ঠিক আছে তো?”
“আপাতত সেও ঠিক আছে।”
“আমি এখনই আসছি।”
উমায়ের কল কেটে বুরাকের দিকে তাকাল। বুরাক উমায়ের এর সামনে কাওকে আসতে দিচ্ছে না। যেভাবে পারছে সেভাবেই লাথি ঘুষি মেরে চলেছে তাদের। হঠাৎ বুরাককে পেছন থেকে মাথায় আঘাত করলো একজন। বুরাক মাথা ধরে থমকে দাঁড়াল। চারপাশ হঠাৎ ঘোলাটে লাগছে। আবার চেহারায় ঘুষি লাগলো তার। বুরাকের কানে উমায়ের এর চিৎকাড ভেসে আসছে। বুরাক ধীরে ধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে উমায়ের এর দিকে তাকাল। উমায়ের এর দিকে একজন লোক এগিয়ে যাচ্ছে। বুরাক তার দিকে হাঁটা ধরতেই কেও একজন তার পিঠে লাথি মেরে দিলো। বুরাক কিছুটা এগিয়ে গিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। কিন্তু তার দৃষ্টি সামনে। লোকটা উমায়ের এর হাত চুল টেনে ধরলো। উমায়ের বুরাকের নাম ধরে চিৎকার করে ডাকলো। উমায়ের এর চিৎকার বুরাকের ব্রেইনে গিয়ে ধাক্কা লাগলো। শরীরের সবটুকু শক্তি লাগিয়ে তারাতাড়ি উঠে দাঁড়াল। এগিয়ে যেতে নিলো সাথে সাথে কেও তার শার্টের কলার পেছন থেকে ধরে টেনে পেছনে ফেরালো। বুরাক পেছনে ফেরার সাথে সাথে তার বরাবর থাকা লোকটার কপালে সজোরে৷ নিজের কপাল দিয়ে বারি দিলো। লোকটা কপাল ধরে পিছিয়ে গেল। বুরাক পাশের লোকটার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই সে দৌড়ে পালালো। বুরাক যাকে মাত্র আঘাত করলো তাকে আরো দু’টো ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দিলো। আবার পেছনে ফিরে দেখে সেই লোকটা উমায়ের এর মুখ চেপে ধরে রেখেছে। বুরাক রাগে গজগজ করতে করতে এগিয়ে গেল। লোকরা ভয়ে বলল-
“বুরাক আমাকে কিছু করলে আমি ওকে মেরে ফেলবো।”
বুরাক এগিয়ে যেতে যেতেই বলল-
“ওকে ধরেছিস বলে রাগে আমার গা জ্বলছে। তো ভাব ওর কিছু হলে তোর কি অবস্থা হবে।”
লোকটা ভয় পেয়ে গেল। বুরাক এগিয়ে এসে সজোরে তার চেহারায় ঘুষি মেরে পেছনে সরিয়ে ফেলল। উমায়ের তার গাল ধরে সরে দাঁড়াল। অতিরিক্ত জোরে চেপে ধরেছিল তাই ভীষণ ব্যাথা করছে তার গাল। কানে সেই লোকটার চিৎকার ভেসে আসলো। উমায়ের তাদের দিকে তাকিয়ে দেখে চমকে উঠলো। লোকটা মাটিতে পড়ে আছে আর বুরাক তার যৌনাঙ্গে পা রেখে ভর দিয়ে রেখেছে। উমায়ের এর গা শিউরে উঠলো। বুরাকের রাগ দেখে তার শরীর কাঁপছে। বুরাক ইচ্ছে মতো লাথি মেরে সরে দাঁড়াল। লোকটা নড়ার শক্তিটুকু পাচ্ছে না। বুরাকের হঠাৎ মাথা ব্যাথা শুরু হলো। মাথা চেপে ধরে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখলো। উমায়ের দ্রুত বুরাকের সামনে গিয়ে বলল-
“ঠিক আছো বুরাক?”
বুরাক চোখ বন্ধ রেখেই হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল।
“তোমার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে।”
বুরাক ধীরে ধীরে চোখ খুলে উমায়ের এর দিকে তাকাল। উমায়ের তার ওড়না দিয়ে বুরাকের নাক মুছতে মুছতে বলল-
“কেন এই জীবন বেছে নিলে তুমি? নিজের অবস্থা দেখেছো একবারো?”
বুরাক তাকিয়ে আছে উমায়ের এর দিকে। উমায়ের এর চোখে তার প্রতি চিন্তা দেখে তার ভালো লাগলো। হঠাৎ সামনে থেকে একটি কালো রং এর গাড়ি ফুল স্পিডে এগিয়ে আসতে লাগলো। বুরাক গাড়িটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল-
“তোমার শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারলাম না উমায়ের।”
উমায়ের অবাক হলো বুরাকের কথা শুনে। বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকাল। উমায়ের এর চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে সে বুরাকের কথার মানে বুঝেনি। বুরাক তার মুখে বড়ো হাসি ফুটিয়ে বলল-
“মাফ করে দিও।”
সাথে সাথে বুরাক উমায়ের এর উপর ঢোলে পরলো। উমায়ের বুরাককে ধরে তার নাম ধরে ডেকে চিৎকার করে উঠলো।
মাথায় বেশ যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে। বুরাক দ্রুত চোখ খুলল। চোখ খুলে দেখে বরাবর ফ্যান ঘুরছে। বুরাক বুঝতে পারছে না সে কোথায় আছে। হঠাৎ তার চোখের সামনে একটা পরিচিত চেহারার দেখা মেললো। পরিচিত মানুষটা আর কেও নয় ববি। ববি কি যেন বলে হাসিমুখে চলে গেল। বুরাক ববির কথা বুঝতে পারলো না। কিছুক্ষণের মধ্যে একজন ডাক্তার এসে টর্চ দিয়ে বুরাকের চোখ চেক করতে লাগলো। পাল্স চেক করে ববিকে কি যেন বলল। ববি হেসে ডাক্তারের সাথে হ্যান্ডশেক করে বুরাকের দিকে তাকাল। ডাক্তার বুরাকের নাক থেকে অক্সিজেন মাস্ক খুলে রেখে চলে গেল। ববি বুরাকের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল-
“ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি।”
বুরাক এখন ববির কথা বুঝতে পারলো। বুরাক চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখে ধীরে ধীরে বলল-
“আমি এখন হসপিটালে?”
“হ্যাঁ”
হঠাৎ উমায়ের এর কথা মাথায় আসতেই বুরাক দ্রুত উঠার চেষ্টা করলো। কিন্তু মাথা ও পেটে যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে বলে পারছে না উঠে। ববি ধমকের স্বরে বলল-
“পাগল হয়ে গিয়েছিস? ডাক্তার বলেছে তোকে উঠে বসতে না।”
“ববি, ববি উমায়ের কোথায়? সে ঠিক আছে তো? তখন, তখন খালিদ খানের গাড়ি আসছিল দেখেছি। তারা উমায়ের এর ক্ষতি করেনি তো?”
“ওটা খালিদ খানের না। ফিরোজ স্যারের গাড়ি ছিল।”
বুরাক তার মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করলো। ববি বুরাকের হাত ধরে বলল-
“বেশী কিছু ভাবিস না বুরাক। তোর ঠিক হতে খুব বেশী সময় লাগবে।”
বুরাক চোখ খুলে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে।
“আমার খুব যন্ত্রণা হচ্ছে মাথায়।”
“ঠিক হয়ে যাবে। ডাক্তার বলেছে তোর ব্রেইন স্ট্রোক হয় নি এটাই আল্লাহর রহমত।”
“ববি আমার তো যেতে হবে।”
“তুই এখন বিছানা থেকেই নামতে পারবি না তো যাবি কিভাবে? জানিস তোর ২৮ ঘন্টার পর জ্ঞান ফিরেছে। কয়দিন ধরে ঘুমাস না বল তো।”
“উমায়েরকে নিয়ে যাওয়ার পর ঘুম হয়নি। রাত জেগে চারপাশে নজর রাখতাম। কেন জানি আমার মনে ভয় ঢুকে গিয়েছিল। ভাবতাম এই বুঝি খালিদ খানের লোকেরা এসে আমার পরিবারকে শেষ করে ফেলল।”
“খালিদ খান জানতো না তুই কোথায়৷ আর আমরাও জানি না খালিদ খান কোথায়।”
“হয় তো আমি জানি।”
“তুই জানিস?”
বুরাক চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো। ববি পাশে থাকা চেয়ারে বসে বুরাকের দিকে তাকিয়ে আছে। বুরাক হঠাৎ মাথা ধরে বলল-
“ব্যাথা করছে, ভাবতে পারি না কেন?”
“তোর মাথায় আঘাত লেগেছে বুরাক। আর কিছু ভাবতে হবে না। তুই যদি জেনে থাকিস খালিদ খান কোথায় সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর ফিরোজ স্যারকে বলে দিস।”
বুরাক মাথা নাড়াল। তখনই দরজা ঠেলে কেও একজন ভেতরে ঢুকলো। তারা দুজন দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে ফিরোজ আনোয়ার ভেতরে আসলেন। ববি দাঁড়িয়ে গেল। বুরাক সালাম দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করতেই ফিরোজ আনোয়ার দ্রুত এগিয়ে এসে বললেন-
“না বুরাক, শুয়ে থাকো। ডাক্তার তোমাকে রেস্ট নিতে বলেছে।”
বুরাক আবার শুয়ে পরলো। ফিরোজ আনোয়ার হাসিমুখে বললেন-
“তোমাকে যত ধন্যবাদ দিবো তত কম। আমার মেয়ের খেয়াল রাখার জন্য তোমাকে ও তোমার পরিবারকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।”
বুরাক জবাব দিলো না। সে ভাবছে উমায়ের আসে নি কেন। ববি বলল-
“আমি চা নিয়ে আসি আপনার জন্য, বসুন।”
“না আমি চা খেয়ে এসেছি। আর তোমার আন্টি আসবে কিছুক্ষণ পর বুরাকের জন্য খাবার নিয়ে।”
“কিন্তু স্যার ডাক্তার বলেছে হসপিটালের খাবার ছাড়া অন্য কিছু না খাওয়াতে।”
“সব হসপিটালেই এই নিয়ম। কিন্তু ঘরের খাবারের মতো খাবার আর কোথায় পাওয়া যায় বলো? ডাক্তারের সাথে কথা আমি বলে নিব।”
ববি হেসে মাথা নাড়াল। বুরাকের দৃষ্টি দরজার দিকে। উমায়ের কি তার মায়ের সাথে আসবে? ফিরোজ আনোয়ার চেয়ারে বসে বলল-
“বুরাক একটা সমস্যা হয়েছে।”
বুরাক ফিরোজ আনোয়ারের দিকে তাকাল।
“কি স্যার?”
“তোমার উপর যত কেস ছিলো আমি কোনমতে সরাতে পারছি না।”
“সমস্যা নেই স্যার, আমি নিজেকে পুলিশের কাছে দিতে রাজি।”
“কিন্তু আমি এমনটা চাই না। তোমার কোন ক্ষতি আমি হতে দিতে পারবো না। আমি চেষ্টা করছি। হয় তো সময় লাগবে। যতদিন পর্যন্ত তোমার কেসগুলো বন্ধ না হবে তুমি লুকিয়ে থাকবে। তোমার আর ববির জন্য আমি একটা ফ্ল্যাট নিয়েছি। সেটা হচ্ছে আমাদের বাড়ির স্টোররুম। রুম আমি পুরো ঠিক করিয়ে ফেলেছি। ববি আপাতত সেখানে একাই আছে। ১ সপ্তাহ তোমাকে হসপিটাল থাকতে হবে। তারপর আমাদের সাথে বাসায় যাবে।”
বুরাক জবাব দিলো না। এত ভরসার যোগ্য সে?
কিছুক্ষণ পর দরজা ঠকঠক করার শব্দ আসলো। ববি গিয়ে দরজা খুলে দেখে নুসাইফা বেগম দাঁড়িয়ে আছে। মুচকি হেসে দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়াল। তিনি ভেতরে প্রবেশ করতেই বুরাক সালাম জানালো। সালামের উত্তর নিয়ে নুসাইফা বেগম হাসিমুখে বললেন-
“তোমাকে ধন্যবাদ, আমার মেয়ে বলেছে তুমি আর তোমার পরিবার তার অনেক যত্ন নিয়েছো।”
“ধন্যবাদ দিতে হবে না ম্যাম। উমায়ের ঠিক আছে তো?”
“হ্যাঁ সে ঠিক আছে, সে তো…”
নুসাইফা বেগম পুরো কথা শেষ করার আগেই দরজা ঠেলে দৌড়ে উসমান উজ্জ্বল আসলো৷ উমায়েরও প্রবেশ করে রাগী কন্ঠে বলল-
“এই বাঁদরের দল, কি বলেছিলাম তোদের? হসপিটাল এসে দুষ্টুমি করতে না।”
বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে আছে। উসমান উজ্জ্বল দ্রুত বুরাকের দিকে আসলো। উজ্জ্বল বলল-
“আপনি সুপারহিরো তাই না?”
উসমান বলল-
“আপু আমাদের বলেছে আপনি একদম সুপারহিরোর মতো ফাইট করতে পারেন।”
বুরাক মুচকি হেসে বলল-
“সবার মধ্যে সুপারহিরো আছে। আপনাদের মধ্যেও আছে।”
উসমান বলল-
“সত্যি?”
“হ্যাঁ, সেটা বড়ো হওয়ার পর বুঝতে পারবেন।”
উজ্জ্বল বলল-
“উসমান আমি বড়ো হতে চাই।”
“আমিও”
উমায়ের এগিয়ে এসে তাদের মাথায় আস্তে করে থাপ্পড় দিয়ে বলল-
“বলেছিলাম না বুরাক অসুস্থ বেশী কথা না বলতে?”
“সমস্যা নেই ম্যাম আমি ঠিক আছি।”
উমায়ের ভ্রু কুঁচকে পেছনের দিকে তাকাল। আবার বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“তুমি আমাকে ম্যাম বললে?”
বুরাক জবাবে মুচকি হাসলো। ফিরোজ আনোয়ার হেসে বললেন-
“আচ্ছা অনেক কথা হলো। বাচ্চারা বুরাক ভাইয়ার সাথে বেশী কথা বলো না উনি অসুস্থ। উমায়ের এর মা তুমি বুরাককে খাবার বেড়ে দাও।”
নুসাইফা বেগম হাসিমুখে মাথা নাড়ালেন। উমায়ের হেটে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়াল। বুরাক এক নজর উমায়েরকে দেখে আবার ফিরোজ আনোয়ারের দিকে তাকাল। উমায়ের আড়চোখে বার বার বুরাককে দেখছে। নার্স এসে একটা ঔষধের প্রেসক্রিপশন দিয়ে বলল ঔষধ নিয়ে আসতে। ববি প্রেসক্রিপশন নিয়ে বলল সে এসে দিচ্ছে। উমায়ের হেটে এসে চেয়ারে বসলো। বুরাক উমায়েরকে দেখে সোজা হয়ে বসার চেষ্টা করলো। উমায়ের বুরাকের কাঁধে হাত রেখে বলল-
“একা উঠতে পারবে না। ওয়েট আমি হেল্প করছি।”
“লাগবে না ম্যাম আমি পারবো।”
“প্রথমত তুমি একা পারবে না। দ্বিতীয়ত আমি তোমার ম্যাম না। সো ডোন্ট কল মি ম্যাম এগেইন।”
বুরাক মাথা নিচু করে ফেলল। উমায়ের বুরাককে ধরে উঠে বসতে সাহায্য করলো। ফিরোজ আনোয়ারের কল আসতেই উনি কেবিনের বাহিরে চলে গেলেন। নুসাইফা বেগম বুরাককে খাবার বেড়ে দিলো। বুরাক কাঁপা কাঁপা হাত এগিয়ে দিয়ে প্লেট ধরতে নিলো। উমায়ের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল-
“ও তো হাতে শক্তি পাচ্ছে না। খাইয়ে দিলে ভালো হয়।”
“হুম ঠিক বললে।”
“চামচ দাও আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”
বুরাক থতমত খেয়ে গেল উমায়ের এর কথা শুনে। মা উমায়ের এর হাতে প্লেট দিয়ে চামচ খুঁজতে লাগলেন। উমায়ের বুরাকের দিকে ঘুরে তার চাহনি দেখে হাসলো।
“কি হলো? ভূত দেখলে মনে হয়।”
“আমাকে দাও আমি নিজে খেতে পারবো।”
“ওকে”
উমায়ের এর দিকে প্লেট এগিয়ে দিলো। বুরাক প্লেট ধরে দেখে সে হাতে শক্তি পাচ্ছে না। উমায়ের বাঁকা হাসি দিয়ে বলল-
“কি হলো খাও।”
বুরাক প্লেটটা পাশে রেখে বলল-
“চামচ দিয়ে খেতে পারবো।”
“অনেক হয়েছে চুপচাপ বসো।”
মা চামচ এগিয়ে দিলো উমায়ের এর দিকে। উমায়ের প্লেট হাতে নিয়ে চামচ দিয়ে ভাত মাখিয়ে নিলো৷ বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে আছে। উমায়ের চুল ক্লিপ দিয়ে আটকে রেখে সামনে দিয়ে একটুখানি চুল বের করে রেখেছে। উমায়ের বুরাকের দিকে তাকিয়ে চামচে খাবার নিয়ে এগিয়ে দিলো। বুরাকের চাহনি দেখে দু’বার চোখের পলক ফেলল। বুরাক খাবার মুখে নিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। উসমান উজ্জ্বল দুষ্টুমি করছে মা সেদিকে এগিয়ে গেল। বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলল-
“একটা কথা বলি?”
উমায়ের ভাত মাখতে মাখতেই বলল-
“বলো”
“রাগ করো না, না বললে আমার জীবনের সবচেয়ে আফসোস এটাই হবে।”
“বললাম তো বলো।”
“আই লাভ ইউ”
চলবে…….