#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২৫
“নিজের খেয়াল রেখো আমি আবার কাল আসলো।”
বুরাক ফিরোজ আনোয়ারের কথা শুনে মাথা নাড়াল। ববি বলল-
“স্যার আমি আছি তো। আমি ওর খেয়াল রাখবো আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন।”
“তুমি রাত জেগো না। তুমি অসুস্থ।”
“জি স্যার।”
বুরাক চোখ বাঁকা করে উমায়ের এর দিকে তাকাল। উমায়ের দরজার পাশে হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ দাঁড়িয়ে আছে। বুরাক তার মনে কথা তাকে বলার পর থেকেই উমায়ের মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। বুরাক নিঃশব্দে হাসলো। ফিরোজ আনোয়ার বিদায় জানিয়ে তার পরিবারকে নিয়ে কেবিন থেকে বের হলো। ববি বাহির পর্যন্ত গেল তাদের গাড়িতে পৌঁছে দিতে। বুরাক হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করলো। তার শান্তি লাগছে। মনের কথা সামনে থাকা মানুষটাকে বলে দিলে মন হালকা হয়ে যায়। উমায়ের এর সাথে তার ভবিষ্যৎ এক থাকুক বা না থাকুক। সে তার মনের ভাব প্রকাশ করেছিল এতেই তার শান্তি। ফিরোজ আনোয়ার সবাইকে নিয়ে নওয়ানা হতেই ববি হসপিটালের ভেতরে গেল। পকেটে হাত দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল হঠাৎ পেছন থেকে কানে খুব পরিচয় কন্ঠ ভেসে আসলো। ববি দাঁড়িয়ে দ্রুত ঘুরলো৷ আকলিমা নামের মেয়েটি দাঁড়িয়ে নার্সের সাথে কথা বলছে। ববির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ডান বাম দেখে নিজের চুল, শার্টের কলার ঠিক করে এগিয়ে গেল। নার্স কি যেন বলে চলে গেল। আকলিমা ঘুরতেই দেখে ববি দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটাকে দেখলে বিরক্ত লাগে কেন যেন তার। কিন্তু এমন এমন মজাদার কথা বলে না হেসেও থাকা যায় না। আকলিমা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে সালাম দিলো। ববি সালামের উত্তর নিয়ে বলল-
“আপনার আম্মু কেমন আছে এখন?”
“এখন ভালো আছে। আগামীকাল ডিসচার্জ করা হবে উনাকে।”
“স্যার আমাকে আপনার সম্পর্কে বলেছে আপনি এত ভালো জেনে আমার অবাক লাগছে। এই যুগে আপনার মতো মানুষও আছে সত্যি আমি খুব অবাক।”
“কেন? পুরো পৃথিবীতে কি আমার একাই বৃদ্ধ আশ্রম আছে?”
“আপনি আমার কথার মানে বুঝেন নি। বৃদ্ধ আশ্রম অনেক আছে। কিন্তু সেই সব আশ্রমে আপনার মতো কেও নেই। আপনার বয়সী মেয়েটা এখন শুধু পড়াশোনা করে। আর আপনি পড়াশোনা করা, আশ্রম দেখাশোনা সব একা করেন।”
“প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ। আমিও আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছি।”
ববির হাসি উড়ে গেল। আকলিমার চোখে মুখে সে বিরক্ত দেখতে পেল। ববি আবারো জোরপূর্বক হেসে বলল-
“আমি এখন ভালো হয়ে গিয়েছি। নাহলে আপনিই বলুন ফিরোজ আনোয়ারের মতো একজন ভদ্রলোকের সাথে আমি কিভাবে থাকতে পারি।”
“সেটা জানি না। ফিরোজ স্যারের মতো একজন এত ভালো মানুষের সাথে বেইমানি না করলে খুশী হবো।”
“না, আমার জন্য এমনটা ভাবাও মহাপাপ।’
“হুম, আসি এখন। আমার না অপেক্ষা করছে।”
ববি মাথা নাড়িয়ে সরে দাঁড়াল। আকলিমা পাশ কাটিয়ে চলে গেল। ববি মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বুরাকের কেবিনের দিকে হাঁটা ধরলো। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখে বুরাক ফোনে কথা বলছে। ববি দরজা লাগিয়ে এগিয়ে গিয়ে বুরাকের পাশে বসলো। বুরাক কথা বলে কল কেটে ববির দিকে তাকাল। ববিকে দেখে মনে হচ্ছে তার মন খারাপ। বুরাক বলল-
“তোর আবার কি হলো?”
“ভালো লাগে আর এই জীবন।”
“কি? পাগল হয়ে গেলি না-কি?”
“আমি তো ভালো হয়ে গিয়েছি তাই না? তবুও সবাই কেন ভাবে আমার উপর বিশ্বাস করা যায় না?”
“এক মিনিট, কি বলতে চাচ্ছিস বুঝিয়ে বল।”
“একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছে।”
বুরাক হা হয়ে গেল ববির কথা শুনে। ববি মুখ লটকিয়ে বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“মেয়েটা সাধারণ মানুষ না। সে তো মানুষ রূপে পরী।”
বলেই ববি চোখ উল্টে উপরের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসলো। বুরাক ববির গালে আস্তে করে চড় মেরে বলল-
“একদম নোংরা দৃষ্টিতে কিছু ভাববি না।”
ববি অবাক হয়ে বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“আস্তাগফিরুল্লাহ, ছি বুরাক তুই আমাকে এত খারাপ ভাবিস?”
“তো এমন ভাবে তাকাচ্ছিস কেন?”
“আমি ভাবছি আমার পরীটাকে লাল জামা পড়লে কেমন লাগবে।”
বুরাক হাসলো ববির পাগলামি দেখে। সেও মাঝে মধ্যে উমায়েরকে নিয়ে ভাবে উমায়েরকে কোন রং এর জামায় কেমন লাগবে। প্রেমে এমন ছোটোখাটো পাগলামি করা মন্দ না।
রাত ধীরে ধীরে গভীর হচ্ছে। উমায়ের বারান্দায় দাঁড়িয়ে রুম্মানের সাথে কথা বলছে। রুম্মান কাঁদতে কাঁদতে নিশ্বাস উপরে তুলে ফেলেছে। উমায়ের কোনমতেই তার কান্না থামাতে পারছে না।
“কাঁদতে থাকলে আমি এখনই কল কেটে দিবো বলে দিলাম।”
“না না কাটবি না খবরদার। এতদিন পর তোর সাথে কথা বলে কতটা শান্তি লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না আমি।”
“বাহ, তুই আমাকে এত ভালোবাসিস?”
“অনেক ভালোবাসি আমি তোকে। তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড উমায়ের। ভার্সিটির প্রথমদিন থেকে আমাদের ফ্রেন্ডশিপ।”
“আমিও তোকে অনেক ভালোবাসি। আর তোকে অনেক মিস করেছি আমি। সকালে আমরা দেখা করবো ঠিক আছে?”
“আংকেল তো তোকে বাসা থেকে বের হতে দিবে না। আমিই আসবো নি ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে।
“ঠিক আছে আমি অপেক্ষা করবো। তোর সাথে অনেক কথা বলার আছে আমার।”
“ওকে, রাত গভীর হচ্ছে ঘুমিয়ে পড়।”
“আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ।”
“আল্লাহ হাফেজ।”
উমায়ের মুচকি হেসে কল কেটে দিলো। বুরাকের কথা তার কানে বার বার এসে ভাসছে। উমায়ের বুঝতে পারছে না সে খুশী হবে না-কি রাগ হবে। সে জানতো বুরাক তাকে ভালোবাসে কিন্তু বুরাকের মুখে শোনার পর থেকে মনে অস্থিরতা কাজ করছে। উমায়ের আকাশের দিকে তাকাল। মেঘের আড়ালের চাঁদ একবার দেখা যাচ্ছে আবার লুকিয়ে যাচ্ছে। উমায়ের এর চোখে হঠাৎ বুরাকের সাথে দেখা হওয়ার প্রথমদিন ভেসে উঠলো। উমায়ের চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসলো। বুরাকের কথা, বুরাকের হাসি সবই যেন উমায়ের এর মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ উমায়ের এর চোখের সামনে সেইদিনের দৃশ্যটা ভেসে উঠলো। যেদিন বুরাক এসেছিল তার পরিবারকে মারতে। বুরাকের সেই ভয়ংকর দৃষ্টিটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই উমায়ের চমকে উঠলো। মনে আবারো অস্থিরতা ও ভয় কাজ করছে। বুকের বা পাশে হাত রেখে লম্বা নিশ্বাস নিয়ে ছাড়লো।
পরেরদিন…..
উমায়ের ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে গেল। উসমান উজ্জ্বল বসে নাস্তা করছে। উমায়ের গিয়ে চেয়ার টেনে বসে বলল-
“স্কুল যাবে তোমরা?”
উসমান বলল-
“হ্যাঁ, আমাদের এক্সাম খুব শীগগিরই।”
“মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছো তো তোমরা?”
দুজনই মাথা নাড়াল। তখনই মা আসলো পরোটা নিয়ে। উমায়ের উঠে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিলো।
“গুড মর্নিং আম্মু”
“গুড মর্নিং, বসেন নাস্তা করুন।”
উমায়ের মাকে ছেড়ে চেয়ারে গিয়ে বসলো। কিছুক্ষণের মধ্যে বাবা আসলেন। এতদিন পর পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে খাবারের টেবিলে দেখে উনার মন আনন্দে ভরে গেল। এগিয়ে গিয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলালো। উমায়ের বাবাকে দেখে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো। মেয়ের মাথায় চুমু দিয়ে গাল ধরে টানলো। মেয়েটা শুকিয়ে গিয়েছে। চোখের নিচেও হালকা কালো দাগ হয়েছে। ফিরোজ আনোয়ার বললেন-
“এখন যত বিপদ আসুক, আমার মেয়ে আর দূরে যাবে না আমার থেকে।”
উমায়ের হাসলো বাবার কথা শুনে। বাবা গিয়ে চেয়ারে বসে বলল-
“অবশেষে আমার পরিবার আবার সম্পূর্ণ হলো।”
মা চেয়ার টেনে বসে বলল-
“ঠিক বললেন, উসমান উজ্জ্বল তারাতাড়ি নাস্তা করো। আর গিয়ে আবার চেক করে নিও বই খাতা সব ঠিক আছে কিনা।”
দুজন একসাথে মাথা নাড়াল। উমায়ের বাবার দিকে তাকাল। মনে যে প্রশ্ন ঘুরছে এখন কি জিজ্ঞেস করবে? উমায়েরকে না খেতে দেখে মা ভ্রু কুঁচকে বলল-
“কি হলো উমায়ের? তোমার পরোটায় তেল কম দিয়েছি নিশ্চিন্তে খেতে পারো।”
বাবা ভ্রু কুঁচকে বলল-
“তেল কম মানে? এমনিতেই তো শুকিয়ে গিয়েছে আবার ডায়েটিং?”
“আমি কি করবো? আপনার মেয়ে তৈলাক্ত খাবার খায় না ভালে মতোই জানেন।”
“ওর স্বাস্থ্য দেখো কি অবস্থা হয়েছে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করাও মেয়েকে।”
“আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। এখন আপনারা খেয়ে নিন তারাতাড়ি।”
সবাই আবার খাওয়াতে মনোযোগ দিলো। উমায়ের হঠাৎ জিজ্ঞেস করে উঠলো-
“আব্বু তুমি কী হসপিটাল যাবে?”
বাবা উমায়ের এর দিকে তাকাল। বাবার চাহনি দেখে উমায়ের ঢোক গিলল। তার হয় তো উচিত হয়নি প্রশ্নটা করা। বাবা আবার খাবারের দিকে মনোযোগ দিয়ে বলল-
“উসমান আর উজ্জ্বলকে স্কুলে দিয়ে তারপর যাবো।”
মা বলল-
“ববি আর বুরাকের জন্য নাস্তা নিয়ে যেও।”
বাবা জবাবে মাথা নাড়াল। উমায়ের তারাতাড়ি নাস্তা করে নিজের ঘরে চলে আসলো। তার হসপিটাল যেতে ইচ্ছে করছে। কারণটা সে জানে না। কিন্তু একবার বুরাককে দেখলে তার মন শান্তি পাবে।
দুপুর ২ টার দিকে রুম্মান আসলো। নুসাইফা বেগমকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো উমায়ের তার ঘরেই আছে। রুম্মান দ্রুত উমায়ের এর ঘরে গিয়ে দেখে উমায়ের গালে হাত দিয়ে বসে আছে। রুম্মান দৌড়ে গিয়ে উমায়ের এর ঝাপিয়ে পড়লো। উমায়ের থতমত খেয়ে বলল-
“আরে হাফ মেন্টাল ব্যাথা পাচ্ছি তো।”
রুম্মান উমায়েরকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। উমায়ের হেসে রুম্মানের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল-
“তোর মতো বেস্টফ্রেন্ড পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।”
রুম্মান সোজা হয়ে বসে চোখের পানি মুছে বলল-
“আমি ভেবেছিলাম আমার আর সেই ৫০ টাকা পাওয়া হবে না।”
“৫০ টাকা?”
উমায়ের ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ তার মনে আসলো রুম্মান তার কাছ থেকে ৫০ টাকা পায়। উমায়ের চোখ ছোটো ছোটো করে রুম্মানের গলা চেপে ধরে বিছানায় শুইয়ে বলল-
“আজ তুই শেষ, ৫০ টাকার জন্য এত কান্না?”
“আব্বে ছাড়, মরে যাব।”
“মর তুই মর”
“দোস্ত আমি মরে গেলে তোর জিজুর কি হবে?”
উমায়ের থমকে গেল। রুম্মানকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসে বলল-
“মানে কি?”
রুম্মান হাতের ইশারায় বলল বলছে। সোজা হয়ে বসে দু’বার কেশে বলল-
“এখনই মরে যেতাম। একটু ভালোবেসে গলা ধরা উচিত ছিল তোর।”
“এসব ছাড়, কি বললি একটু আগে সেটা বুঝিয়ে বল।”
রুম্মান তার বাম হাত এগিয়ে দিয়ে চোখের ইশারায় বলল দেখতে। উমায়ের রুম্মানের হাত দেখে হা হয়ে গেল। রুম্মানের অনামিকা আঙুলে আংটি। উমায়ের রুম্মানের দিকে তাকিয়ে বলল-
“বিয়ে করে ফেললি তুই? আমার এলাকা থেকে যাওয়ার ১ সপ্তাহও হয়নি।”
“আরে ইয়ার হঠাৎ হয়ে গেল সব। যেদিন দেখতে আসলো সেদিনই সে পাগল হয়ে গিয়েছে আজই এনগেজমেন্ট বা কাবিন করবে। ভাইয়া খোঁজ করেছিল ছেলে ভালো তাই সবাই রাজি ছিল।”
“আর তুই?”
“উনি একটু বেশীই হ্যান্ডসাম। রাজি না হয়ে পারলাম না।”
“প্রেম কি রূপ দেখে হয়?”
“না, কিন্তু সে হ্যান্ডসাম হওয়ার সাথে সাথে খুব ভালো একজন মানুষও। তাই রাজি হয়েছি। উনি আমাকে বলেছে আমাকে কিছু বলতে চায়। জিজ্ঞেস করায় বলেছে বিয়ের পর বলবে।”
“কিন্তু তোদের তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে।”
“হ্যাঁ, আমি পার্মানেন্ট তাদের বাসায় যাওয়ার পর বলবে।”
“হয়তো জিজু প্লেবয় ছিল।”
রুম্মান হেসে উমায়ের এর গালে থাপ্পড় মেরে বলল-
“চুপ থাক, আমি উনার জীবনে প্রথম আর শেষ নারী।”
“দেখা যাবে”
“ওকে, আচ্ছা তুই যেন কি বলতে চাচ্ছিলি।”
উমায়ের এর চেহারায় যেন কালো মেঘ নেমে আসলো। রুম্মান উমায়ের এর চেহারা দেখে বলল-
“কি হয়েছে বল”
অন্যদিকে…..
কথা বলার শব্দে বুরাকের ঘুম ভাঙলো। নাস্তা করে ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছিল। ঔষধের পাওয়ার খুব বেশী। খেলেই ঘুম আসে। উঠে দেখে ববি আর সাথে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বুরাক চোখ ডলে আবার তাকাল। মেয়েটা বুরাককে দেখে চেয়ারে বসে বলল-
“ভাইয়া, চিনেছেন আমাকে?”
বুরাক ভালো মতো দেখে বলল-
“চেনা চেনা লাগছে আপনাকে কিন্তু মনে আসছে না।”
“আপনি আমার বৃদ্ধ আশ্রমে টাকা ডোনেট করতে এসেছিলেন।”
“আকলিমা?”
“জি”
বুরাক মুচকি হেসে ধীরে ধীরে উঠার চেষ্টা করলো। ববি দ্রুত এসে বুরাককে ধরে উঠে বসালো৷ বুরাক হেলান দিয়ে বসে বলল-
“কেমন আছো?”
“আমি ভালো, আপনার এই অবস্থা কেন? আর এসব কি শুনলাম আমি?”
“কি শুনেছো?”
ববি বলল-
“খালিদ খানের বিরুদ্ধে এখন তুই আর আমি সেটাই।”
বুরাক হেসে বলল-
“সেটা তেমন কিছু না। জীবনে এমন অনেক ধাপ আসে যেটার দ্বারা আমরা শিক্ষা লাভ করি। এমনই কিছু হয়েছে আমাদের সাথে ভাবতে পারো।”
“ববি আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আমাকে জোর করে এই কেবিনে না আনলে আমি জানতামই না বুরাক ভাইয়া এই কেবিনে আছে।”
ববি বলল-
“আপনারা ভাই বোন হয়ে গেলেন, বাহ।”
আকলিমা বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমার কোন ভাই নেই। বুরাক ভাইয়াকে দেখলে আমার খুব আপন মনে হয়। আর আপনাদের সম্পর্কে জানা পর….”
ববি বলল-
“এক মিনিট এক মিনিট, আমি অনাথই ঠিক আছি। আ..আমি কারো ভাইয়া হতে চাই না। বুরাক আছে তো, বুরাক আপনার ভাই আপনি ওর বোন।”
আকলিমা ছোটো ছোটো চোখ করে বলল-
“আপনার সাথে কোন রকমের সম্পর্ক আমার লাগবে না। আমি বলতে চাচ্ছিলাম আপনারা খারাপ পথ থেকে সরে ভালো পথে এসেছেন এটা জানার পর আমার অনেক ভালো লেগেছে।”
“ওহ, তাহলে ঠিক আছে।”
বুরাক হেসে বলল-
“তোমরা এখন আর ঝগড়া করো না। আর আকলিমা তুমি এখানে?”
“আমার এক আম্মু অসুস্থ। সন্ধ্যার পর ডিসচার্জ করা হবে চলে যাব উনাকে নিয়ে।”
“তোমার মতো একজন মানুষ আমাকে ভাই ডেকেছে। আমি কতটুকু খুশী হয়েছি বলে বুঝাতে পারবো না।”
আকলিমা জবাবে মুচকি হাসলো। কিছুক্ষণ তারা কথা বলে আকলিমা উঠে দাঁড়াল। তার কেবিনে ফিরতে হবে। মা একা রয়েছে। ববি আর বুরাকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল। ববি চেয়ারে বসে বলল-
“মেয়েটা আমার জন্য কেমন রে?”
“তোর পরীর কি হবে?”
“এটাই আমার পরী।”
“বলিস কি?”
“হুম, আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল।”
“কর”
“আমি তোর বন্ধু কিন্তু তোর সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। এখনো যেন তুই আমার জন্য অচেনা। আজ তুই আমাকে সব বলবি সব।”
“জিজুর ছবি দেখাবি বললি, দেখাবি না?”
রুম্মান নুডলসের বাটি রেখে ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে তার স্বামীর ছবি বের করে উমায়ের এর দিকে এগিয়ে দিল। উমায়ের ছবি দেখে বলল-
“মাশা আল্লাহ, জিজু দেখছি পুরোই হিরো”
“নজর দিবি না”
“এক্সকিউজ মি, আপাতত আমার জীবনেও একজন হিরো আছে। যে আমার জীবনের সত্যিকারের হিরো না হলেও ক্ষনিকের জন্য হিরো।”
“তুই বুরাককে ভালোবাসিস?”
“জানি না রুম্মান, এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত আমার কাছে নেই। আচ্ছা আমার কথা ছাড়, জিজুর নাম কি?”
“মোহাম্মদ মোবিন হোসেন।”
চলবে…….