#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৩১
রুম্মান উমায়ের এর মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মোবিন রুম্মানকে দেখে মাথা ঝাঁকিয়ে ভালো মতো দেখে চোখ বড়ো বড়ো করে বলল-
“রুম্মান কি করছো? ছাড়ো উমায়েরকে।”
রুম্মান না সূচক মাথা নাড়িয়ে বলল-
“আপনাকে যদি বুরাক এখন না ছাড়ে আমি উমায়েরকে মেরে ফেলবো। বুরাক মোবিনকে ছাড়ো।”
বুরাক তাকিয়ে আছে উমায়ের এর দিকে। উমায়ের বুরাকের চাহনি দেখে চোখ ফিরিয়ে নিলো। রুম্মান আবার বলল-
“ছাড়ো মোবিনকে।”
বুরাক রাগী কন্ঠে বলল-
“তুমি ওর আসল চেহারা দেখেছো? জানো ও কি করেছিল নিজের অতীতে?”
“জানি, আমি সব জানি। যা জানি তা সব সত্যি। কিন্তু তুমি এখনো মিথ্যের চক্রে ফেঁসে আছো।”
“মিথ্যে না, ও সত্যি একজন ধর্ষক।”
“ও ধর্ষক না”
রুম্মান রাগে চিল্লিয়ে বলল কথাটা। রুম্মান উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে বলল-
“বুরাককে কল মোবিনকে ছেড়ে দিতে উমায়ের। আমি সত্যি তোকে গুলি করে দিবো।”
রুম্মানের কথা শুনে উমায়ের বুরাকের দিকে তাকাল। উমায়ের এর চাহনি বুরাককে ভেতর থেকে ভেঙে দিচ্ছে। বুরাক এক নজর রুম্মানের হাতে থাকা রিভলবারের দিকে তাকাল। রুম্মান যেন কোনো সময় গুলি চালিয়ে দিতে পারে। রিস্ক নেয়া যাবে না। বুরাক মোবিনকে ছেড়ে দিলো। মোবিন বুরাকের দিকে তাকিয়ে আবার রুম্মানের দিকে তাকাল। বুরাক রাগে টিনের বোলে সজোরে লাথি মেরে নিজের চুল চেপে ধরলো। উমায়ের ধীরপায়ে এগিয়ে গেল বুরাকের দিকে। রুম্মান রিভলবার ফেলে দৌড়ে এসে মোবিনকে জড়িয়ে ধরলো। বুরাক উমায়েরকে আসতে দেখে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। উমায়ের বুরাকের কাঁধে হাত রেখে বলল-
“বুরাক, তুমি সব সত্যি জানো না।”
বুরাক উমায়ের এর দিকে বিরক্ত চেহারা বানিয়ে তাকাল। উমায়ের বুরাকের হাত ধরে বলল-
“অন্য কেও না তোমার উমায়ের বলছে এই কথা। তুমি কি আমার উপরেও বিশ্বাস করো না?”
বুরাক নিজের হাত ছাড়িয়ে বলল-
“আমি নিজে খোঁজ করেছি। আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। সে নিজের মুখে কবুলও করেছিলো। ভিডিও দেখতে চাও? এক মিনিট দেখাচ্ছি।”
বুরাক পকেট থেকে মোবাইল বের করে পাওয়ার অন করলো গ্যালারি থেকে একটা ভিডিও অন করে উমায়ের এর দিকে এগিয়ে দিলো। উমায়ের ভিডিওর দিকে তাকাল। ভিডিওতে মোবিন একটা চেয়ারে বসে নিজের মুখে শিকার করছে যে সে ধর্ষণ করেছে। উমায়ের একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলল। মোবিন রুম্মানের কাঁধে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে বুরাকের দিকে এগিয়ে এসে বলল-
“আমি জানি তুমি এসব কথা কার কাছ থেকে জেনেছো। রাশিদ খান তাই তো?”
বুরাক মোবিনের দিকে তাকাল। মোবিনের মুখ বেয়ে রক্ত ঝরছে। সে আবার থুথু ফেলে বলল-
“আমি তোমাকে বলছি আসল ঘটনা। আমরা যখন ভার্সিটিতে ছিলাম। আমি, রাশিদ, টগর এবং বনি একই ভার্সিটিতে পড়তাম। আমাদের এক ইয়ার জুনিয়র হায়াত, যাকে ধর্ষণ করার অপরাধে আমি জেলে গিয়েছিলাম। রাশিদের বাজে নজর ছিলো হায়াতের উপর। বিষয়টা আমার অপছন্দ ছিলো। কারণ আমি হায়াতকে অনেক পছন্দ করতাম। হায়াত প্রায়ই আমার সাথে কথা বলতো। সে একবার বলেছিল আমাদের ৪ জনের মধ্যে সে আমাকেই অনেক বেশী ভরসা করে। এই নিয়ে টগর রাশির বনি আর আমার মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে যেত। তারা বলতো হায়াত তাদের সাথে কেন কথা বলে না শুধু আমার সাথে কেন কথা বলে। আমি জানতাম না হায়াত কেন এমন করতো। একদিন হায়াত আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলে বনি তার সাথে বেয়াদবি করেছে। তার ওড়না ধরে টেনে বুকে হাত দেয়ার চেষ্টা করেছে। আমি বনিকে সেদিন অনেক মেরেছিলাম সবার সামনে। এই নিয়ে টগর আর রাশিদও আমাকে বেশ গালাগাল করে। আমি সেদিন তাদের সাথে বন্ধুত্ব ভেঙে ফেলি। হায়াত আর আমি ধীরে ধীরে বেস্টফ্রেন্ড হয়ে যাই। পরের বর্ষে আমরা দুজনই ভার্সিটি ছেড়ে অন্য ভার্সিটিতে জয়েন হই। আমি তার বার্থডের দিন তাকে প্রপোজ করি। সে রাজি হয়। আমাদের মাঝে সব ঠিক বলছিল। আমাদের পরিবারের মাঝেও কথা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু একদিন আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল করি। আমি আর হায়াত শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। সেদিন পর আমি আমার পরিবারকে বার বার চাপ দিচ্ছিলাম যে আমাদের বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দেয়া উচিত। কিন্তু আমার পরিবার বলেছিল না আমাকে ভার্সিটি পুরোপুরি শেষ করে তারপর বিয়ে করতে হবে। জানি না কেন যেন ভয় করছিল আমার খুব। হায়াত স্বাভাবিক ছিল। আমাদের মাঝে একবারই সহবাস হয়েছিল। একদিন আমার বাড়িতে পুলিশ আসে আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কারণ জিজ্ঞেস করায় বলেছে আমি একটা মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। আমি অবাক হয়েছিলাম জানার পর যে হায়াত আমার বিরুদ্ধে কেস করেছে। আমি ৩ রাত জেলে ছিলাম। শেষ রাতে একটা লোক আসে আমার সাথে দেখা করতে। আমাকে হুমকি দেয় যে আমি যাতে নিজেকে ধর্ষক না বলি তাহলে আমার পরিবারকে মেরে ফেলবে। আমি ভয়ের কারণে মিথ্যে বলেছি যে আমি ধর্ষণ করেছি। আমি ভেবেছিলাম লোকটা এই ভিডিও কোর্টে প্রমাণ হিসেবে দেখাবে। কিন্তু না পরের দিন আমার জামিন হয়ে যায়। জেল থেকে বের হওয়ার পর আমি সর্বপ্রথম হায়াতকে দেই। আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মিথ্যে কেস করার কারণ কি। কিন্তু ও জবাব দেয় নি। শুধু আমার কাছ থেকে মাফ চেয়েছিলো। পরেরদিন আমি খবর পাই হায়াত সুইসাইড করেছে। কিছুদিন পর আব্বু আমাকে সৌদি আরব পাঠিয়ে দেয়। আমি ১০ বছর পর নিজের দেশে ফিরেছি।”
বুরাক মোবিনের সব কথা শুনে বিরক্তি হয়ে বলল-
“কাহানী ভালোই বানাতে পারিস। কিন্তু একটা পয়েন্ট তো মিস করে দিলি। হায়াতের মৃত্যুর পর তার পোস্ট মোর্টেম রিপোর্টে ধরা পড়েছে তার মৃত্যুর আগে আবার তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। আর দ্বিতীয়বার ধর্ষণটাও তুই করেছিলি। রিপোর্টে স্পষ্ট লিখা ছিলো। রিপোর্টটা তুই সরিয়ে ফেলেছিস।”
“আমি করি নি। আমার সাথে হায়াতের দেখা পর্যন্ত হয়নি আমি কিভাবে?”
বুরাক রাগে কটমট করতে করতে আবার এগিয়ে গেল মোবিনের দিকে। উমায়ের বুরাককে সাথে সাথে ধরে ফেলল। রুম্মান মোবিনের সামনে দাঁড়িয়ে রাগী দৃষ্টিতে বুরাকের দিকে তাকাল। মোবিন এক নজর রুম্মানকে দেখে রুম্মানের মাথায় হাত রেখে বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমি রুম্মানকে অনেক ভালোবাসি। আমি আমার ভালোবাসার কসম খেয়ে বললাম আমি হায়াতকে ধর্ষণ করি নি। আমার মন বলছে রাশিদ আমাকে ফাঁসিয়েছে।”
বুরাক মোবিনের দিকে তাকিয়ে রইলো। কেন যেন এখন তার ইচ্ছে করছে মোবিনকে বিশ্বাস করতে। কিন্তু একটা কথা মাথায় আসতেই বুরাক ভ্রু কুঁচকে বলল-
“তো তুই খালিদ খানের সাথে দেখা করতে কেন গিয়েছিলি?”
“সে আমাকে ডাকিয়েছিল। রাশিদ টগর আর বনিকে যে মেরেছে সে আমাকেও মেরে ফেলবে। আমি বিশ্বাস করি নি তার কথা। কিন্তু এখন বুঝলাম যে রাশিদ টগর আর বনিকে তুমি মেরেছো।”
“হ্যাঁ মেরেছি, ওরা না আসলে তোকেও মেরে ফেলতাম।”
উমায়ের বুরাকের গালে হাত রেখে টেনে তার দিকে মুখ ফেরালো। বুরাক উমায়ের এর চোখ দেখে মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইলো কিন্তু উমায়ের তার গালে হাত দিয়ে রাখায় পারলো না। উমায়ের এল নজর মোবিন আর রুম্মানকে দেখে আবার বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“বুরাক, আমি মোবিন ভাইয়ার উপর বিশ্বাস করেছি। আমার মন বলছে উনি সত্য বলছে। তুমি যদি সত্যি জানতে চাও উনি সত্যি বলছে কিনা তাহলে যাও খালিদ খানের কাছে। তোমার প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর সেই দিতে পারবে।”
বুরাক উমায়ের এর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। উমায়ের আবার বলল-
“যদি তুমি জানতে পারো যে মোবিন ভাইয়া সত্যি বলছে তাহলে তুমি নিজের হাতে উনাকে মারবে। এর কারণে আমার আর রুম্মানের সম্পর্ক নষ্ট হলেও আমার সমস্যা নেই।”
উমায়ের এর কথা শুনে রুম্মান বলল-
“উমায়ের ঠিক বলছে, যদি মোবিনের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাও তুমি আমি তোমাকে থামাবো না। কারণ একজন ধর্ষকের স্ত্রী হওয়ার চেয়ে ভালো আমি সারাজীবন বিধবা হয়ে থাকবো।”
মোবিন রুম্মানকে ধীরপায়ে হেটে বুরাকের বরাবর দাঁড়িয়ে বলল-
“তারা যা বলছে সেটাই করো। আমি তোমাকে হায়াতের বাড়ির এড্রেস দিচ্ছি। তুমি চাইলে তার ভাই আর বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে পারো। উনারা নিশ্চয়ই কিছু জানেন। আমি জিজ্ঞেস করায় আমাকে কিছু বলেনি। হয় তো তুমি বললে উনারা সব বলবে। আর হ্যাঁ খালিদ খানের সাথে দেখা করতে হলে তোমার তার সবচেয়ে পুরানো আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে হবে।”
“যে বাড়িতে রাশিদ খানকে কবর দেয়া হয়েছে সে বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ডে?”
“হ্যাঁ, আমাকে একবার সেখানে ডাকিয়েছিল। ডাকানোর দুদিন পর আমি সেখানে গিয়েছিলাম কিন্তু খালিদ খানকে পাই নি। সে এখন থেকে সেখানেই থাকবে। সেখানে যেতে তোমার বেশী কষ্ট করতে হবে না। তার সব চ্যালাপ্যালাদের পুলিশ ধরে ফেলেছে।”
“এত কিছু তুমি কিভাবে জানলে মিস্টার মোবিন?”
“রাশিদের মৃত্যুর পর খালিদ খান আমাকে কল করেছিল বলতে গেলে আমার সাথে তার যোগাযোগ ছিল। প্রায়ই দেখা করতে যেতাম।”
মোবিনের কথা শুনে বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকাল। উমায়ের চোখের ইশারায় বলল মাথা ঠান্ডা রাখতে। বুরাক বিরক্ত হয়ে বলল-
“আমি কিছু বুঝতে পারছি না কি করবো।”
মোবিন বলল-
“আমাকে এখন তোমার বিশ্বাস করতে হবে না। তুমি সর্বপ্রথম হায়াতের বাড়িতে যাও। সেখান থেকে কিছু হলেও জানতে পারবে। তারপর খালিদ খানের কাছে যেও।”
বুরাক এগিয়ে এসে মোবিনের একদম বরাবর দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বলল-
“আমি সব প্রমাণ নিয়ে তারপর ফিরবো। যদি তোর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাই তাহলে…”
“তুমি যা শাস্তি দেবে আমি মেনে নিবো।”
বুরাক মাথা ঘুরিয়ে উমায়ের এর দিকে তাকাল। উমায়ের বুরাকের হাত ধরে রেখেছে। বুরাক উমায়ের এর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে হাঁটা ধরলো বাহিরে যাওয়ার পথে। উমায়ের বুরাকের যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে হাতের দিকে তাকাল। রুম্মান এগিয়ে এসে উমায়ের এর কাঁধে হাত রেখে বলল-
“উমায়ের, বুরাক খালিদ খানের বাসায় যাবে। আমার ভয় করছে সে সুস্থ সবল ফিরবে তো?”
উমায়ের রুম্মানের দিকে তাকিয়ে জবাবে হাসলো। তার কাছে এই প্রশ্নের উত্তর নেই। বুরাক এলোমেলো পায়ে রাস্তায় হাঁটছে। যদি মোবিন সত্যি নির্দোষ হয়ে থাকে আর বুরাক তাকে মেরে ফেলতো তাহলে? একজন নির্দোষ তার হাতে মরে গেলে সে নিজেকে কখনো মাফ করতে পারতো না। হঠাৎ বুরাকের মোবাইলে মেসেজ টন বেজে উঠল। মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে একটা অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। হায়াতের বাড়ির এড্রেস। মোবিন পাঠিয়েছে মেসেজ। বুরাক এড্রেস ভালো মতো দেখে পকেটে মোবাইল রেখে রওয়ানা দিলো হায়াতের বাড়ির উদ্দেশ্যে৷
আকলিমা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তার মাথার ব্যান্ডেজ ধীরে ধীরে খুলছে। সকালে ড্রেসিং করে নি কাজের জন্য। ডেইলি ড্রেসিং না করলে মাথার ঘা শুকাবে না। হঠাৎ দরজায় ঠকঠক শব্দ হলো। আকলিমা আয়না দিয়েই দেখে দরজা খোলা। আকলিমা বুঝতে পারলো এই ভদ্রলোক কে হতে পারে।
“আসুন”
ববি আকলিমার কথা শুনে ঘরের ভেতরে ঢুকলো। আকলিমার মাথার পেছনের ঘা দেখে ববির বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বের হলো। প্রচুর খারাপ তার মেয়েটার জন্য। ডাক্তার ডাকে ভর্তি রাখতে চেয়েছিল কিন্তু সে থাকে নি। আশ্রমের বাবা মাদের চিন্তা করে বাসায় ফিরে এসেছে। ববি এগিয়ে গিয়ে আকলিমার হাত থেকে মেডিসিন আর তুলা নিয়ে তাকে ইশারায় বলল খাটে বসতে। আকলিমা জানে না করে লাভ নেই ববির জোর করে তাকে ড্রেসিং করে দেবে। আকলিমা খাটে বসলো। ববি হাসিমুখে তুলায় মেডিসিন মিশিয়ে ধীরে ধীরে আকলিমার ঘায়ের স্থানে লাগালো। আকলিমা হেসে বলল-
“আপনি একটু বেশীই কেয়ারিং।”
“তাই?”
“হ্যাঁ, ঘায়ের স্থানে ব্যাথা পাবো বলে কত যত্ন করে মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছেন। একদম একটা আড়ো ভাইয়ের মতো খেয়াল রাখছেন আমার।”
ববি বিরক্ত হয়ে আকলিমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আকলিমা মাথা তুলে ববিকে দেখে খিলখিল করে হেসে উঠল। ববি আরো বিরক্ত হয়ে বলল-
“যেহেতু তুমি আমার মনের কথা জানো তাই ইচ্ছে করে দুষ্টুমি করা বন্ধ করো।”
“সত্যি জানার পর দুষ্টুমি করা মজাই আলাদা।”
ববি আকলিমার কথা শুনে হেসে তার বরাবর এসে বসলো। আকলিমা ববির হাসি দেখে বলল-
“আপনার হাসিটা আমার খুব প্রিয়। সকাল থেকে আপনাকে মিস করছিলাম এখন মনে হচ্ছে আমার আপনাকে মিস করা স্বার্থক।”
“বাহ এত ভালোবাসা আমার প্রতি?”
“ভালোবাসার সম্পর্কে জানি না। আমি আপনাকে অনেক সম্মান করি। যদি ভালোবাসার প্রথম ধাপ সম্মান হয়ে থাকে তাহলে হ্যাঁ আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
ববি আকলিমার নাক ধরে টেনে বলল-
“যদি জানতাম আমার ভাগ্য এত সুন্দর তাহলে সেই অন্ধকার জগৎ ছেড়ে অনেক আগেই চলে আসতাম।”
আকলিমা জবাবে মুচকি হাসলো। ববি আকলিমার দুহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল-
“একটা কথা জানার ছিল।”
“কি?”
“তুমি আমার সম্পর্কে সব জানো তবুও কেন এত ভরসা করছো আমার উপর?”
আকলিমা ববির কথা শুনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আর একটু কাছে এসে ববির চোখে চোখ রেখে বলল-
“বৃষ্টির পরে সূর্যের সৌন্দর্য বেড়ে যায় জানেন?”
“হ্যাঁ”
“ঠিক তেমনই, কেও যদি নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চায় তার সকল মুছে যাওয়ার পর তার মনের সৌন্দর্যও বেড়ে যায়। আপনার উপর ভরসা আছে বলে আপনার সাথে পথচলার কথা ভেবেছি। আশা করছি আমার ভরসার মান রাখবেন।”
ববি আরো শক্ত করে আকলিমার হাত ধরে বলল-
“কখনো এমন কোনো কাজ করবো না যার ফলে তোমার কষ্ট হবে। সবসময় তোমার পাশে থাকবো আমি।”
আকলিমা মুচকি হেসে ধীরে ধীরে মাথা এগিয়ে নিয়ে ববির বুকে রাখলো। ববি আলতো করে আকলিমার মাথায় হাত রাখলো।
সূর্য ধীরে ধীরে ডুবে যাওয়ার পথে। বুরাক রাগে গজগজ করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে৷ তার মনে হচ্ছে রাশিদ খানকে তখন মারা উচিত হয়নি। সে আর কি কি করে রেখেছে সব জেনে তারপর তাকে মারা উচিত ছিল। বুরাক দাঁড়িয়ে সামনে থাকা বাড়ির দিকে তাকিয়ে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। বাড়ির বাহিরে কেও নেই। বুরাক মেইন দরজা ঠেলে ভেতরে গেল। যেতে যেতে হঠাৎ বাগানের দিকে চোখ গেল। রাশিদ খানের কবর দেখা যাচ্ছে। বুরাক ধীরপায়ে হেটে সেখানে গেল। কবর থেকে কিছুটা দূর দাঁড়িয়ে থেকে তাকিয়ে রইলো রাশিদ খানের কবরের দিকে। হঠাৎ বুরাকের মনে হলো কেও তার পেছন থেকে এগিয়ে আসছে। বুরাক পেছনে ফিরতেই তার মুখে সজোরে আঘাত লাগলো। বুরাক সাথে সাথে মাটিতে পড়ে গেল। চারপাশ ঘোলাটে লাগছে। ছোটো ছোটো চোখ করে দেখার চেষ্টা করলো। কেও একজন হাতে থাকা বাঁশ ঘুরাতো ঘুরাতে বুরাকের সামনে হাঁটু ভেঙে বসলো। বুরাক দেখতে পারছে না ভালো মতো। হঠাৎ হাসির শব্দ আসলো।
“ওয়েলকাম ওয়েলকাম, আমি এতদিন আপনার অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে আমার অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটলো।”
বুরাক চিনে গিয়েছে কন্ঠ শুনে। কিন্তু কিছু বলার আগেই চারপাশ অন্ধকারে ছেয়ে গেল।
চলবে……