#এক_প্রহরের_খেলা
মোর্শেদা হোসেন রুবি
১৫||
নামাজের পাটিতে মাথা রেখে ডুকরে কাঁদায় মনটা অনেকটাই হালকা হয়ে এলো। অনেক কিছুই পরিস্কার করে ভাবতে পারছে এখন। গতরাতে আতঙ্ক এমনভাবে ঘিরে ধরেছিল যে, মনে হচ্ছিল কিডন্যাপাররা এই বাড়ীর ভেতরেই যেন চলে আসবে ওকে নিতে। এক ঘন্টা শুধু কেঁদেই কাটিয়েছে সে। তারপর শায়লার বারংবারের সান্ত্বনা আর গরম চায়ের সাথে কুকিজ খেয়ে পেটের সাথে মনকেও শান্ত করেছে। তারপর শেষ রাতের দিকে জায়নামাজে বসে বাকি সময় পার করেছে। এখন অনেকটাই ফুরফুরে হয়ে আসছে মনটা।
জায়নামাজ ভাঁজ করে শায়লার দিকে তাকালো রুমকি । এলোমেলো হয়ে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা । অবিবাহিত মেয়েরা সাধারণত এভাবে ঘুমায় না। কেবল বিবাহিতদের মধ্যেই এই ভঙ্গিটা দেখা যায়। শায়লা অবিবাহিত হলেও ওর ঘুমানোর ভঙ্গিটা একদম বিবাহিতদের মত । ওর এই অভ্যাসের কারণে রুমকির কিছুটা অসুবিধাই হয়েছে শুতে। অবশ্য রুমকি শুয়েছেই বা কতক্ষণ। চারটার দিকে বিছানায় পিঠটা লাগিয়েছিল কোনমতে। তাতেই শায়লার হাত আর পায়ের ধাক্কায় ওর পড়ে যাবার যোগাড় হয়েছে। ফলে খানিক গড়াগড়ি দিয়ে উঠেই পড়েছে রুমকি। এমনিতেও ওর গায়ে কেউ হাত পা তুলে দিলে ওর ঘুম হয়না। ঋভূর সাথে যে কয়দিন ছিলো তখন ওকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। এর কারণটা প্রথমতঃ ঋভূদের খাটটা ছিলো বেশ বড়। দ্বিতীয়তঃ মাঝখানে কোলবালিশ আর কুশনের ব্যারিকেড থাকায় ঋভূর সাথে ধাক্কাধাক্কিতে যেতে হয়নি। তবে ঋভূ শোবার অভ্যাসও অনেকটা শায়লার মতোই। আর এটা সে টের পেয়েছে শেষের দিন। যেদিন ঋভূ আর ওর মাঝে নতুন এক প্রহরের জন্ম হয়েছিল। সেদিন ঋভূ নিজের জায়গা ফেলে রুমকির সাইডে চলে এসেছিল। শুধু চলে এসেই ক্ষান্ত দেয়নি রীতিমত পেটের ভেতর মুখ গুঁজে সমানে নাক ডাকছিল গন্ডারটা। রুমকি ঘুম ভেঙ্গে যতটা না চমকেছিল তারচে বেশী ভাবাবেগে ভেসে গিয়েছিল। ঋভূর অধিকারবোধের কাছে স্বেচ্ছা পরাজয় মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল রুমকির পোড়া মন।
সেদিনের ঐ এক প্রহরের খেলার ছোট্ট পরিসরে ঋভূ আর ওর মাঝে রচিত হয়েছিল এক অটুট সেতু বন্ধন। চোখে চোখে অনেক কথা বলে ফেলেছিল দুজন। তখনও জানত না ঠিক পরদিনই জীবন ওদের দুজনকে ছিটকে ফেলবে দু প্রান্তে। আজ ঋভূ ঢাকা আর সে ঝিনাইদহে। উপরন্তু গৃহহারা। ঋভূ জানতে পেলে কী করবে কে জানে। একছুটে হয়ত ঝিনাইদহ চলে আসবে। আর নয়ত ফোন করে করে পাগল করে দেবে। কে জানে, এ পর্যন্ত কতবার ফোন দিয়ে বসে আছে সে।
জানালার গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে ভাবনার রাজ্য ডুবে গিয়ে কাটিয়ে দিল সকালটা । আচমকা শায়লাদের পুরোনো দেয়াল ঘড়িতে ঢং ঢং শব্দে ঘোর কেটে গেল রুমকির। ঘড়ির দিকে তাকাল। ভোর ছয়টা বাজে। চোখ নামিয়ে আরেকবার শায়লাকে দেখল সে। বেঘোরে ঘুমুচ্ছে মেয়েটা। সম্ভবত ওর দেরী করে ওঠার অভ্যাস। অবশ্য গতরাতে দুজনে একরকম জেগেই কাটিয়েছে। রুমকিও তার এ যাবৎকালের সকল কথা বলে ফেলেছে পুরোনো বান্ধবীকে। শেষ রাতের দিকে শায়লা আর থাকতে পারেনি। শুয়ে পড়েছে। কিন্তু রুমকির চোখে এক ফোঁটা ঘুম ছিলো না। এক পর্যায়ে রাতটাকে দারুণ বিভীষিকাময় মনে হয়েছে রুমকির কাছে । ভয়ে আতঙ্কে কেঁদেই কাটিয়েছে অর্ধেক রাত। রাত তিনটার দিকে গা কাঁপাকাঁপি থামলেও বাবাকে ফোন করার কথা মনে হয়নি একবারও। তাছাড়া নিজের মোবাইল ফোনটা যে আগেই খুঁইয়ে বসেছিল। শায়লার ফোন নিয়ে যে খবরটা জানাবে সেই বুদ্ধিও তখন মাথায় আসেনি, এতোটাই উত্তেজিত ছিল তখন। এখন হঠাৎ মনে পড়লো, একটা ফোন করে অন্তত আব্বাকে ওর খবরটা জানিয়ে দেয়া দরকার। আর কাজটা অনায়াসেই শায়লার মোবাইল থেকেই করা যেতে পারে। আব্বা আম্মার কী অবস্থা কে জানে। হয়ত এতক্ষণে চিন্তায় চিন্তায় শেষ হয়ে গেছেন দুজনে।
ভাবতে ভাবতেই শায়লার ফোনটা হাতে তুলে নিল রুমকি। খারাপ লাগলে কিছু করার নেই। এমনিতে অনুমতি ছাড়া কোনদিন কারো ফোন ব্যবহার করা তো দুরে থাক, ছুঁয়েও দেখেনি রুমকি । কিন্তু আজ শায়লার অনুমতি ছাড়াই ওর ফোনটা ব্যবহার করতে হবে ওকে। আর কারো নম্বর মুখস্ত না থাকলেও আব্বার নম্বরটা মুখস্ত আছে রুমকির। কারণ আব্বার অনেক পুরোনো সিম এটা।
দুরুদুরু বুকে ফোন করল রুমকি।
আব্বার নম্বরে ফোন করার সময় মনে হলো বুকের ভেতরে হার্ট এত জোরে বিট করছে যেন বাইরে থেকেই তার শব্দ শোনা যাবে।
দুটো রিংও হয়নি। তার আগেই ফোন রিসিভ করল কেউ। রুমকি তার মায়ের কাঁদো কাঁদো কণ্ঠ শুনতে পেল । আবেগে নিজেও কেঁদে ফেলল ।
-” আম্মা…। আমি রুমকি। ”
-” রুমকিই….? আমার রুমু….? তুই কোথায় আছিস রে মা। সারাটা রাত আমরা চিন্তায় শেষ। তোর আব্বা তো…..আচ্ছা, তোর কথা বল। তুই এখন আছিস কোথায় ? ”
-” আম্মা আমি ভালো আছি। নিরাপদে আছি আলহামদুলিল্লাহ। ”
-” আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর লাখ শোকর। আমার মনটা বলছিল যে আল্লাহ আমারে এত বড় বিপদে ফেলবেন না। নিশ্চয়ই একটা উপায় হবে। আল্লাহ সত্যি বড় মেহেরবান।”
-” আম্মা শোনো, আমি আমার বান্ধবী শায়লাদের বাড়িতে আছি। তুমি আব্বাকে চিন্তা করতে মানা করে দিয়ো। আর আম্মা, হ্যালো…! শোনো, ঢাকা থেকে আমার শ্বশুরবাড়ীর কেউ যদি ফোন করে, মানে তোমাদের জামাই যদি….!”
-” আরে জামাই তো ঝিনেদাতে…!” বলেই চুপ মেরে গেলেন রুমকির আম্মা। শব্দ তিনটা বোম ফাটাল যেন ফোনের ভেতর। রুমকি সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড কোন কথাই বলতে পারল না সে। ঋভূ ঝিনাইদহতে , তাও এই সাতসকালে ? এমন অবিশ্বাস্য কথা শোনার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলো না সে। তারমানে ঋভূ রাতেই ঝিনাইদহ পৌঁছেছে এবং সেটা রুমকির ডাক্তারখানার উদ্দেশ্যে বেরোবার পর। কিন্তু কেন !!
তাহলে কী ঋভূ ওকে সারপ্রাইজড করতে চেয়েছিল ? আর উল্টো নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেছে ? হায় আল্লাহ, তারমানে ঋভূ কী সব জানে ?
-” কীহ্…?” রুমকি কোনমতে উচ্চারণ করল।
-” হ্যা রে মা। সে গতরাতেই সব জাইনে গেসে।”
-” তাই নাকি ? শুনে কী বলল ও ? আচ্ছা, তার আগে তুমি ওকে কী বলেছ সেটা বলো তো ।”
-” আমার কী আর বলা লাগে ? সে তো সরাসরি এখানে আইসে ঐ আজাদের সামনেই পইড়েসে। আজাদ তোর বাপেরে ধরাধরি করে বাড়ী আইনি দিতে আইসেছিল। সে তো এমন দেখাচ্ছিল যেন সে এসবের কিছুই জানেনা। ও রূপম বাবাজির সাথে কী কথা বলছে তা তো আমি জানিনা তবে তোর জামাই বড় ভালো মানুষ মাশাআল্লাহ। সে ভেতরে আইসে আমার সাথেও কথা বইলে গেছে। চিন্তা করতি মানা করি গেসে। এরপর আর সারারাতে আর সে আসেনি। কোনো
ফোনও করেনি। তবে তোর দাদী আর চাচি শ্বাশুরী আইসেছিল। দেখা কইরে গেছে। তাের চাচী শ্বাশুরির কথার ছাঁচ আমার কাছে ভাল লাগেনি। একটু কেমন জানি বাঁকা ঠেকল। তোর কিডনাপের বিষয়টা তারা হয়ত ভালোভাবে নেয়নি। আল্লাহই জানে, তারা কী ভাবতিসে ! রূপমরেও তো আর সকালে দেখলাম না। চাচী আর দাদীর কথায় ছেলে ঘুরে গেল কি না কে জানে।”
-” না, মা। ঋভূ এমন ছেলে না। অন্তত আমি ওকে এই অল্প কয়েকদিনে যতটুকু জেনেছি, সে সব না জেনে আমাকে অবিশ্বাস করবে না। তাছাড়া ও যখন শুনবে আমি কিডন্যাপড হইনি তখন তো সে নিশ্চয়ই খুশি হবে।”
-” হ, তা তো আছেই। তবে আজাদ আমাগের বড় একটা ক্ষতি করি দিল। আল্লাহয় যেন ওরে এর জন্য উচিত শিক্ষা দেয়। সে আমার মেইয়ের ঘরে আগুন লাগাইসে। ওর ঘরেও যেন একদিন আগুন লাগে।”
-” থাক্, মা। বদদোয়া না দিয়ে হেদায়েতের দোয়াই করো। আল্লাহ তো তার রহমত দিয়ে আমাকে বাঁচিয়েই দিয়েছেন । নইলে কী যে হতো। তবে এবার আমি আজাদ ভাইকে ছাড়বো না। সরাসরি ফুপির বাসায় যাব আর জিজ্ঞেস করব ওরা কী চায়। ওরা কী আমাকে শান্তিতে বাঁচতে দেবে না কী দেবে না। দরকার হলে এবার লিখে দিয়ে আসব আমার নামের জমিটুকু। এই জমি নিয়ে ওরা মা ছেলে কবরে যাক। ওদের নিত্য এ অশান্তি আর নিতে পারছি না মা।”
-” আচ্ছা, ওসব পরে ভাবা যাবে। এখন শোন্, কাউরে কিছু বলার দরকার নাই। আর তুই একা আসিসনে খবরদার । আমি জামাইরে খবর দিচ্ছি। তোর বাবারে দিয়ে ফোন করায়ে তারে ডাইকে আনব। ওরে সাথে নিয়েই তোর বাবা তোরে আনতে যাবে। তুই একদম একা আসিস নে মা। ওরা গেলি পরে ওগের সাথেই ফিরবি। বুইজেছিস ? আর জামাইরে বলব, সে যেন আজই তোরে নিয়ে ঢাকা রওনা দেয়। এখানে আর একটা দিনও থাকার দরকার নাই।”
-” আচ্ছা, সে দেখা যাবে। এখন শোনো, তোমাদের জামাই যদি আমার সাথে ফোনে কথা বলতে চায় তাহলে ওকে এই নাম্বারে কল করতে বলে দিও। আমার মোবাইলটা তো গতরাতে হাত থেকে পরে গিয়ে হারিয়ে গেছে। আর চারিদিকের এত এত পেরেশানি যে, তোমাদের ফোন দিতেও ভুলে গিয়েছি। মাথা কাজ করছিল না একদম।”
-“থাক্, না দিয়ে ভালই করেছিস। আল্লাহ যা করে ভালর জন্যিই করে। রাত্রে তো আজাদ এখানে ছিল অনেকক্ষণ ধরে। তোর বাবা যখন মাথা ঘুরায়ে পইরে গেছিল, তখন সে তারে ডাক্তার আইনে দেখাইসে। তুই ফোন দিলে সে শুনি ফেলাইত। আল্লাহর দয়া সবদিকেই বাঁচাইসে আমাদের। তবে আজাদের কথা কী আর বলব রে মা। মানুষের যে কত রূপ। কত দয়া দেখালো সে গতরাত্রে।”
-” থাক্, ওর কথা বাদ দাও। আমি এখন রাখি । শায়লার ফোনে এমনিতেই ব্যালান্স ছিল না। ওকে না জানিয়েই লোন নিয়েছি। লোন নিয়ে ফোন করেছি। আচ্ছা, আব্বা কোথায় মা ? ”
-” সে তো এখনও ঘুমে। ডাক্তার তারে ঘুমের সুঁই দিয়ে ঘুম পাড়ায়া গিইসে। বলসে আটটার দিকে ভাঙ্গবে। তাই তারে ডাকিনি।”
-” তাহলে থাক। আগেভাগেই ডাকার দরকার নেই। তুমি বরং আব্বাকে পাঠানোর আগে আমাকে একটা ফোন দিও এই নাম্বারে। তখন কথা বলে নেব আব্বার সাথে। ”
-” আচ্ছা, মা। সাবধানে থাকিস। রাখি।”
ফোন রেখে আরেক দফা লোনাজলে ভাসল রুমকি। অচেনা আনন্দ ঢেউ আছড়ে পড়ল হৃদয়ের বেলাভূমিতে। আহা, তার ঋভূ ঝিনাইদহে ? আজ ওর দেখা পাবে রুমকি ? কেমন হবে সেই পুনর্মিলন ? ঋভূ কী ওকে ফিরে পেয়ে অনেক খুশি হবে ? নাকি অভিমানে মুখ ভার করবে ? আম্মা বলছিল, ওর বড়চাচি নাকি রুমকির অন্তর্ধানকে ভালো চোখে দেখেন নি। এটা মেয়েলী প্রেজুডিস থেকেও হতে পারে। কিন্তু ঋভূও কী তাই ? সেও কী ধরে নিয়েছে রূমকি অপবিত্র হয়ে গেছে ? অপবিত্রতা কী আসলেই শুধু শরীরে ? যেসব নারী স্বামী ছত্রছায়ায় থেকে পরকীয়া করে বেড়ায়, তারা কী অযু গোসল করেও আদৌ পবিত্র ? রুমকি তো শরীরে মনে কেবল ঋভূকেই নিজের দাবিদার মেনে বসে আছে। আজাদ সে জায়গায় কোনদিনই পৌঁছুতে পারেনি। আর না কোনদিন পারবে। ঋভূ যদি সত্যিই ওকে ভুল বোঝে তাহলে যে রুমকি মরেই যাবে।
ভাবনাটা ওর চোখের পানি বাড়িয়ে দিল। খুব ইচ্ছে করছে সরাসরি ঋভূকে ফোন দিতে। কিন্তু প্রানপন চেষ্টা করেও ওর ফোন নম্বরটা স্মৃতিতে আনতে পারল না। এখন ঋভুর দিক থেকে ফোন আসার অপেক্ষা করা ছাড়া দ্বিতীয় কোন পথ নেই রুমকির।
======
শহরের শেষ প্রান্তে এই পেট্রল পাম্পটাতে জটলা সবসময়ই কম। আজ তো আরো নিরব হয়ে আছে জায়গাটা। কারণ আজ পেট্রল পাম্পে তেল সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। যদিও আজ কোন হরতাল বা ধর্মঘট কিছুই নেই। আবার পেট্রোল বা অকটেনও ফুরিয়ে যায়নি। তারপরেও পাম্পের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। সম্ভবত আগত অতিথিদের জন্যেই এই ব্যবস্থা।
পাম্পের বাইরে বেশ কিছু মোটর বাইকের জটলা। তবে একে জটলা না বলাই ভাল কারণ প্রত্যেকেই বেশ দুরে দুরে অবস্থান নিয়েছে। ঢোকার মুখে একটা খোলা জিপের সাথে রয়েছে তিনটা বাইক। এক্সিটের সামনে আরো দুজন। বলা বাহুল্য এরা সবাই একই দলের লোক নয় । কারণ কারো সাথে কারো কথা নেই। সৌজন্য সাক্ষাতও না। তবে দুই দলই তটস্থ হয়ে আছে। কারল পাম্পের অফিস রুমের ভেতর তাদের দুই দলের নেতা মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের দুজনের সাথে নিজেদের একজন করে সঙ্গী রয়েছেন। আজাদের সাথে রয়েছে বেলাল। রাজনকে বাইরে দাঁড় করানো হয়েছে পরিস্থিতি নজরে রাখার জন্য। কে জানে, সমাদ্দারপুত্র আবার কোন ফাঁদ পেতে রেখেছে। তাই কোন ঝুঁকি নিতে চায়নি আজাদ। সে আসার আগেই রাজন আর সায়মন বাইক নিয়ে টহল দিয়ে এখানকার আবহাওয়া দেখে গেছে। তারপরেই আজাদ স্বয়ং এসেছে। এর মিনিট পাঁচেক বাদেই এসেছে সমাদ্দার পুত্র। দুজনে এখন মুখোমুখি টেবিলে বসে আছে।
আজাদ এক নজরেই সমাদ্দার পুত্রকে যা দেখার দেখে নিল। ঈর্ষায় জ্বলে উঠল ওর সর্বাঙ্গ। এই কুলাঙ্গার অদিতির স্বামী হতে যাচ্ছে ? ছ্যাহ্…! না চেহারায় না স্বভাবে। আস্ত শিম্পাঞ্জী একটা। অদিতি কী মনে করে একে বিয়ে করতে রাজী হল। নাকি না দেখিয়েই রাজী করানো হয়েছে, কে জানে। এই ছেলের কোন গুণের কারণে সে এমন মেয়ের স্বামী হবার যোগ্যতা অর্জন করল তা আজাদের বুঝে আসছে না ।
সমাদ্দার পুত্রই প্রথম মুখ খুলল, ” আপনিই তাহলে আজাদ।? ”
-” সেরকমই তো জানি।”
-” হম। যাক, সরাসরি বলি। কত হলে কোন চুক্তিতে আসেন আপনি সেটা পরিস্কার করে বলুন ! এখানে কোন বার্গেনিং হবে না।”
-” কিসের চুক্তি ? ”
-” আহ্ ! যে কোন চুক্তি। আপনার রেট কত ? ”
আজাদের মেজাজটা স্বভাবতই হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল।
রেগেমেগে বলে বসল, ” শুধু ভিজিটই নেই লাখ টাকা। এরপরে কাজ প্রসঙ্গ। আপনি তো আর ভিজিট দেবেন না। নাকি দেবেন ?”
-” দেব ! প্রয়োজনে ফি ও দেব।” ঠান্ডা আর স্থির শোনাল লোকটার কণ্ঠ। আজাদ বিস্মিত।
-” কী কারণে জানতে পারি ? আমাকে কী দরকার আপনার ? ”
-” বলছি তার আগে বলুন ইনি কে ? ” বেলালকে দেখিয়ে বলল সমাদ্দারপুত্র।
-” কাছের লোক। বলতে পারেন যা বলার।”
-” ওকে। তাহলে ভিজিট আর কাজ বাবদ পাঁচ লাখ দিচ্ছি।”
-” আপনার কেন মনে হল আমি গুন্ডামী করে পয়সা নেই ?
-” তাহলে কী ভাল কাজ করে পয়সা নেন ? “সমাদ্দার পুত্র পকেট হাতড়াতে গিয়ে স্বাভাবিক সুরে বললে আজাদ থেমে গেল। সে বলল,
-” কাজটা কী জানতে পারি ? আমি কিন্তু এমনিতেই আপনার হবুবধূকে সরাসরি আপনার বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসতে যাচ্ছিলাম । অযথাই….!”
-” লিসেন, সে আমার হবুবধু নয়। সে আমার বড় ভাইয়ের ফিয়ন্সে। আর তাকে আপনার গায়েব করে ফেলতে হবে। একদম গায়েব। খুঁজলেও লাশ পাওয়া যাবেনা এমন।” শান্ত স্বরে কথাগুলো বলল লোকটা।
আজাদ সামান্য ঝাঁকি খেয়েই স্থির হয়ে গেল। নিরবে তাকিয়ে রইল সামনে বসা নরপিশাচটার দিকে। বলছে কী এই হারামিটা ? গায়েব করে ফেলতে হবে কথাটার মানে কী ? সে কী অদিতিকে মেরে ফেলতে চায় ? কিন্তু কেন ? ”
চলবে….