সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্ব-১২

0
1172

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ১২

পরিবারের সবাই একসাথে রাতের খাবার খেতে বসেছে। খাবারের ফাঁকে ফাঁকে একটু আধটু কথাও হচ্ছে। তারমধ্যে সাকিব সাজিদ হোসেনকে বলল,“আব্বু, কাল থেকে তো আমার এক্সাম শুরু। এ কদিন তুমি ওদের ভার্সিটি দিয়ে এসো। মিথিকে আগে পৌঁছে দিয়ে তারপর ওদের দুজনকে দিয়ে আসবে।”

সাজিদ হোসেন বললেন,“ঠিক আছে।”

মালিহা বেগম সাকিবের প্লেটে তরকারি দিতে দিতে বললেন,“কী যে বানিয়েছিস বোনদের! এত বড়ো হয়ে গেল অথচ এখনও পর্যন্ত কেউ একা চলতে শিখল না।”

সাকিব খেতে খেতে বলল,“আস্ত একটা ভাই থাকতে ওরা একা কেন চলবে?”

সাজিদ হোসেন বললেন,“একা চলতে শেখা ভালো। আজ হয়তো তুই ওদের ছায়ার মতো আগলে রাখছিস। কিন্তু একটা ধ্রুব সত্য কী জানিস? জীবনের কোনো না কোনো মুহূর্তে গিয়ে কিছু মানুষকে একা চলতে হয়। তোর বোনরা যদি একা চলতে না শেখে তাহলে ভবিষ্যতে যদি কোনোদিন ওদের একা চলার দিন আসে। তখন ওরা চলতে গিয়ে বারবার শুধু হোঁচটই খাবে।”

মালিহা বেগম বললেন,“তোমার ছেলে এসব বুঝবে? সে তো নিজেই বোনদের একা চলার সুযোগ দেয় না।”

সাকিব হেসে বলল,“আম্মু, তুমি কোনোদিন একা চলেছ? তোমার জীবনে তো কোনোদিনো তোমাকে একা চলতে হয়নি। দেখবে আমার বোনদেরও ওমন দিন আসবে না।”

মালিহা বেগম একইভাবে বললেন,“যদি আসে?”

মায়ের কথায় সাকিব মুচকি হেসে বলল,“কেন? ওদের ভাই কি তখন মরে যাবে?”

ইলোরা খাবার থামিয়ে মুখ গোমড়া করে বলল,“ভাই, কী সব ফালতু কথা বলছো!”

মালিহা বেগম কিঞ্চিত রাগ দেখিয়ে বললেন,“ফাজিল ছেলে। কোথায় কী বলতে হয় জানিস না? পরিবারের সবার মাঝে বসে মরার কথা বলছিস!”

সাকিব বলল,“আরে রেগে যাচ্ছ কেন? আমি তো এমনি জাস্ট কথার কথা বললাম।”

মিথিলা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,“এখনই মরার কথা বলছো, প্রেমে ছ্যাঁকা খাইছো না-কি ভাই?”

ডালিয়া মিথিলাকে খোঁচা মেরে ফিসফিস করে বলল,“মিথি, এখানে ফুপা আছে।”

সাকিব বলল,“আম্মু এবার দেখো, তোমার মেয়েও জানে না কোথায় কী বলতে হয়। এখানে আব্বু বসে আছে আর ও আমাকে প্রেমে ছ্যাঁকা খাওয়ার কথা বলছে।”

সাজিদ হোসেন মুচকি হেসে বললেন,“আমি আমার ছেলেকে ভালোভাবেই চিনি। কাজেই মিথির দুষ্টুমিতে দোষ খোঁজার দরকার নেই।”

ডালিয়া বলল,“ফুপা, মিথিকে কিন্তু সবচেয়ে বেশি মাথায় তুলেছেন আপনি। সেজন্যই ও বড়োদের সামনে হুটহাট সব কথা বলে ফেলে।”

সাজিদ হোসেন অস্বীকার করে বললেন,“মোটেও না। আমি মাথায় তুললে ওর আদরের ভাই কী করেছে? আমার স্বনামধন্য ছেলেই তো বোনদের মাথায় তুলেছে।”

সাকিব হেসে বলল,“মাথাটাই তো বোনদের জন্য। বোনদের তুলব না তো কাকে তুলব?”

মালিহা বেগম বললেন,“বউয়ের জন্য কিছু জায়গা ফাঁকা রাখিস। নইলে বউ থাকবে না।”

সাকিব গ্লাস হাতে নিয়ে বলল“সেসব পরে ভাবা যাবে। আগে বোনদের বিয়ে দেই, তারপর।”

ইলোরা ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,“এর মানে কী ভাই? তুমি আমাদের বিদায় করে মাথা থেকে নামিয়ে তারপর সেই জায়গায় বউকে জায়গা দেবে?”

মিথিলাও তাল মিলিয়ে বলল,তাইতো। ভাই, তোমার তো খুব বুদ্ধি। মনে মনে এসব বুদ্ধি পাকিয়ে বসে আছো? কী সাংঘাতিক!”

সাকিব মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,“দেখেছো? তোমার মেয়েরা কোন কথার কী মানে বের করে!”

মালিহা বেগম দায়সারা ভাবে বললেন,“আমার দেখার সাধ নাই বাপ। তুই-ই দেখ।”

সাজিদ হোসেন বললেন,“আচ্ছা থামো সবাই। খাবার সময় বেশি কথা বলতে নেই।”


রাত এগারোটা বাজে। বারান্দার রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে আকাশের অর্ধ চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে ইলোরা। মনটা কেমন যেন উস-খুস করছে। বারবার এরেনের বলা কথাটাই মনে পড়ছে। ‘মানুষটা এড়িয়ে গেলেই কি সম্পর্কটা এড়ানো সম্ভব কোনোদিন?’ কথাটার মানে কী? ইলোরার মন একবার বলছে এরেন সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দিতে চায়। আবার বলছে এরেন ছেড়ে দিতে চাইছে। ভাবনা যেন উত্তাল সমুদ্রে ভেসে বেড়াচ্ছে। কিছুতেই কুল খুঁজে পাচ্ছে না। ক্ষণে ক্ষণে ইলোরা দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। তার জীবনের সাথেই কেন এমন হলো? কী থেকে কী হচ্ছে কিছুই যেন বাস্তব মনে হয় না। সবই স্বপ্নের মতো মনে হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কোনোটাই স্বপ্ন না। ইলোরার ভাবনার মাঝে কখন যে ডালিয়া এসে পাশে দাঁড়িয়েছে টেরই পায়নি। ডালিয়া গলা ঝাড়া দিতেই ইলোরা কিছুটা চমকে উঠল। চকিত চাহনিতে পাশ ফিরে তাকিয়ে ডালিয়াকে দেখে কিছুটা নড়েচড়ে দাঁড়াল। তারপর ডালিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করল,“তুই কখন এলি? এসে চুপ মেরে দাঁড়িয়ে আছিস যে?”

ডালিয়া বলল,“এসেছি মাত্রই। কিন্তু তুই তো টেরই পাসনি। মন কোথায় ছিল?”

“মন আবার কোথায় থাকবে?”

“সেটা আমি জানব কীভাবে? আকাশের দিকে তাকিয়ে তো হারিয়ে গিয়েছিলি।”

ইলোরা কোনো কথা বলল না। ডালিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রশ্ন করল,“ঘুমাবি না?”

ইলোরা না তাকিয়েই উত্তর দিলো,“একটু পর ঘুমাব। তুই গিয়ে শুয়ে পড়।”

আবার দুজনে চুপ। অনেক্ষণ দুজন চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। তারপর নীরবতা ভেঙে ডালিয়া হঠাৎ বলে উঠল,“তোর কী হয়েছে ইলো?”

ইলোরা কিছুটা চমকে উঠল। অবাক হয়ে ডালিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,“মানে?”

“আকাশ থেকে পড়লি মনে হচ্ছে? আমি জানি তোর কিছু একটা হয়েছে, কিন্তু তুই কাউকে বুঝতে দিচ্ছিস না।”

ইলোরা হাসার চেষ্টা করে বলল,“ধুর, আমার আবার কী হবে?”

“বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি তুই বেশিরভাগ সময় তন্ময় হয়ে কী যেন ভাবিস। আমাদের বাড়ি থেকে আসার পর থেকেই খেয়াল করেছি। এতদিন আমি কিছু জিজ্ঞেস করিনি, কিন্তু ঠিকই বুঝতে পেরেছি যে তুই কোনো কিছু নিয়ে খুব চিন্তিত। প্রথম ভেবেছিলাম হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। অথচ তা আর হলো না। এখন দেখছি দিন দিনই তোর চিন্তা বেড়েই চলেছে। কোনো বিষয় নিয়ে এতদিন যাবত চিন্তিত আছিস দেখে আমি খুব অবাক হয়েছি। আচ্ছা কী এমন চিন্তা তোর, যে এতদিন ধরে শুধু চিন্তাই করে যাচ্ছিস?”

ইলোরা এবার অনেকটা অবাক হয়ে গেল। ডালিয়া যে এভাবে তাকে খেয়াল করবে তা সে ভাবতেই পারেনি। তবু নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,“তেমন কিছু হয়নি।”

ডালিয়া ত্যাড়াভাবে বলল,“অবশ্যই হয়েছে। আ’ম হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর।”

“আরে কিছু হয়নি রে।”

“কোনো সমস্যায় পড়েছিস? প্লিজ বল না। আমার সাথে তো তুই সব কথা শেয়ার করিস। তাহলে এখন করতে চাইছিস না কেন?”

“তেমন কিছু হলে তো আমি সবার আগে আম্মুকে বলতাম তাই না? বলার মতো কিছুই হয়নি তাই বলিওনি। তুই শুধু শুধু ভুল ভাবছিস ডালিয়া।”

ডালিয়া সন্দিহান কন্ঠে বলল,“তুই কিছু একটা লুকাচ্ছিস।”

ইলোরা ডালিয়ার মাথায় টোকা দিয়ে হেসে বলল,“আজাইরা গোয়েন্দাগিরি বাদ দিয়ে ঘুমাতে চল। আমার ঘুম পাচ্ছে।”

ডালিয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ইলোরা রুমে চলে গেল। ডালিয়া সন্দিহান দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে রইল। ইলোরা যেতে না যেতে আবার এগিয়ে এসে বারান্দায় উঁকি দিলো। ডালিয়া প্রশ্ন করল,“কী?”

ইলোরা মুচকি হেসে ডালিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,“তাহসিন কিন্তু সত্যিই তোকে ভালোবেসে ফেলেছে। যেকোনো সময় প্রপোজ করতে পারে।”

“তো?”

“ভেবে দেখিস একটু।”

“ওর হয়ে পটানোর দায়িত্ব নিয়েছিস না-কি?”

“ফ্রেন্ডের জন্য এটুকু করতেই পারি।”

কথাটা বলে ইলোরা দ্রুত বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। ডালিয়া হা করে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর বুকভরে নিঃশ্বাস নিয়ে সেও বারান্দা থেকে রুমে চলে গেল।


ভোরবেলা নামাজ পড়ে রুম থেকে বেরোতেই জারিন দেখল এরেনের রুমের দরজা খোলা। রুমে লাইট জ্বলছে দেখে জারিন কপাল চাপড়াল। রুমের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বিড়বিড় করে বলল,“বিদ্যাসাগর কি আজ ঘুমায়ওনি না-কি?”

রুমে ঢুকে দেখল এরেন পড়ার টেবিলে বসে আছে। সামনে বই খোলা অথচ তার মনোযোগ ফোনের দিকে। জারিন খেয়াল করল এরেন ফোন হাতে নিয়ে একধ্যানে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। জারিনের কপালে হালকা ভাঁজ পড়ল। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে এরেনের ঠিক পেছনে দাঁড়াল। মাথা উঁচু করে পেছন থেকে উঁকি মারল। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল স্ক্রিনে ইলোরার লাল শাড়ি পড়া ছবি ভাসছে, যেটা এরেন বিয়ের দিন জ্যোৎস্না রাতে তুলেছিল। শুধু চাঁদের আলোতে তোলায় মুখটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না। কিন্তু শাড়িতে তার অবয়বটা দারুন দেখাচ্ছে। এরেন ঘোর লাগা চোখে পলকহীন তাকিয়ে আছে। জারিন মুচকি হাসল। এরেনের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,“প্রেমে পড়ে গেছিস?”

এরেন হকচকিয়ে উঠল। লাফ দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে দ্রুত ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে ফেলল। অবাক হয়ে বলল,“তুই!”

জারিন খিলখিল করে হেসে উঠল। এরেন আবার জিজ্ঞেস করল,“তুই কখন এলি?”

জারিন হাসতে হাসতে বলল,“এসেছি তো মাত্রই। তুই তো বউকে দেখতে ব্যস্ত ছিলি তখন।”

জারিন হেসেই চলেছে। জারিনের হাসি দেখে এরেন ভ্রু কুঁচকে ফেলল। বুঝার চেষ্টা করে প্রশ্ন করল,“পাগলের মতো হাসছিস কেন?”

“তুই ভয় পেয়েছিস?”

“ভয় পাব কেন? কোনো সাড়াশব্দ না করে হঠাৎ এসেছিস তাই ভেবেছিলাম আম্মী চলে এসেছে।”

“অল্পবয়সী প্রেমিকদের মতো মায়ের কাছে ধরা পড়ার ভয় পাচ্ছিস? এখন তো তোর বিয়ে করার বয়স, কাজেই আম্মী এসব নিয়ে নিশ্চয়ই বকা দিবে না।”

“আরে ধুর, এসব এখন জানাজানি হলে হুলস্থূল কান্ড ঘটতে পারে।”

জারিন হাসি থামিয়ে প্রশ্ন করল,“সারারাত ঘুমাসনি?”

“হ্যাঁ। রাত দুইটায় ঘুমিয়েছি। অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলাম ফোনে। ফজরের পরপরই আবার উঠে পড়েছি।”

“ও। আমি ভাবলাম সারারাত জেগে পড়াশোনা করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিস, তাই এখন বউকে দেখে ক্লান্তি দূর করছিস।”

এরেন হামি তুলতে তুলতে বলল,“হঠাৎ মনে পড়ল তাই ছবি দেখছিলাম।”

জারিন মুচকি হেসে বলল,“যা-ই বলিস, তুই কিন্তু অলরেডি ভাবির প্রেমে পড়ে গেছিস।”

এরেন আবার চেয়ারে বসতে বসতে প্রশ্ন করল,“কীভাবে বুঝলি?”

জারিন বাংলা গানের এক লাইন গাইল,“চোখ যে মনের কথা বলে।”

এরেন হেসে ফেলল। সত্য স্বীকার করে বলল,“তা ঠিক। চোখের সামনে দেখতে দেখতে প্রেমে পড়ে গেছি। হয়তো বউ বলেই প্রেমে পড়েছি। অন্য কেউ হলে পড়তাম না।”

“আমারও তাই ধারণা। বউয়ের প্রেমে পড়তেই পারিস। এতে দোষ নেই। তবে এতটাও প্রেমে পড়িস না যাতে পরে কোনোভাবে এই সম্পর্কটা ভেঙে গেলে তোকে কষ্ট পেতে হয়।”

এরেন মলিন হেসে মাথা দোলালো। জারিন আবার বলল,“এখন শুধু ভাবি তোর প্রেমে পড়লেই হয়।”

এরেনের মুখটা সামান্য গম্ভীর হয়ে গেল। ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,“ও তো এখনও আমার সাথে স্বাভাবিক হতে পারছে না রে। এখনও সামনে পড়লেই অস্বস্তিতে পড়ে বারবার এড়িয়ে যায়। ও স্বাভাবিক না হলে সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা কীভাবে করব বল?”

জারিন কিছুটা চিন্তিত কন্ঠে বলল,“আচ্ছা, ওর আচরণ দেখে কি বুঝতে পারছিস না তোর প্রতি ওর কোনো ফিলিংস বা টান আছে কি না?”

এরেন মাথা দুলিয়ে বলল,“ওর মনে কী চলছে বুঝার উপায় নেই। কিন্তু এটুকু বুঝতে পেরেছি যে ও নিশ্চয়ই আমাদের সম্পর্কটা নিয়ে কিছু একটা ভাবে। কী ভাবে সেটাই বুঝতে পারি না। ও এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি চায় না-কি সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দিতে চায়, তা স্পষ্টভাবে না বললে কীভাবে বুঝব?”

“কোনোভাবে কি ওর সাথে ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করা যায় না?”

“ঐ যে বললাম, আমার সামনে ও কখনও স্বাভাবিক থাকতে পারে না। আমি তো প্রতিদিন চেষ্টা করি ওর সাথে কথা বলার, কিন্তু ও-ই তো সুযোগ দেয় না। কিছু বলার আগেই কোনো একটা অজুহাত দেখিয়ে পালায়।”

“এভাবে চললে তো হবে না ভাইয়া। বিয়ের দুমাস হয়ে গেল। এখনও যদি তোরা নিজেদের মধ্যে কথা বলে সব ঠিক না করিস তাহলে আর কবে করবি? পরে দেখবি বেশি দেরি হয়ে গেলে এর জন্য আফসোস করতে হবে।”

“আমি তো চেষ্টা করেই যাচ্ছি। আর কী করব বল?”

জারিন নিচের ঠোঁট কামড়ে আপন মনে কিছুক্ষণ ভাবল। তারপর হঠাৎ উৎফুল্ল হয়ে বলল,“আরে তোর বোন আছে কী করতে? পরের চেষ্টাটা না হয় আমিই করব।”

“মানে? কী করবি তুই?”

“আমি ওর সাথে দেখা করব। আমি যেহেতু মেয়ে, আশা করি ও আমার সাথে কথা বলতে ততটা অস্বস্তিতে পড়বে না, যতটা তোর সাথে পড়ে।”

“মানে তুই আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে কথা বলবি ওর সাথে?”

জারিন উপর নিচে মাথা দোলালো। এরেন খুশি হয়ে বলল,“এই বুদ্ধি আগে আসেনি কেন আমার মাথায়? আরে বাহ্ বুড়ি! তোর দেখছি বুদ্ধি বাড়ছে।”

জারিন এক ভ্রু উঁচিয়ে বলল,“বাড়ছে মানে? আগে ছিল না?”

এরেন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,“তুই তো গাধি ছিলি।”

জারিন রেগেমেগে সজোরে এক থাপ্পড় মারল এরেনের পিঠে। মুখ ফুলিয়ে বলল,“কথা বলবি না আর আমার সাথে। তোর বউ এনে দিবো না। সারাজীবন বিবাহিত ব্যাচেলর লাইফ কাটা।”

জারিন খটখট শব্দ করে হেঁটে দ্রুত রুম থেকে চলে গেল। এরেন শব্দ করে হেসে উঠল। পরক্ষণেই আবার আপন মনে কিছু ভাবল। তারপর পকেট থেকে ফোনটা বের করে আবার ইলোরার ছবি বের করল। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আপন মনে বিড়বিড় করল,“সিরিয়াসলি! এই মেয়েটা এরেন জামানের ওয়াইফ? তো মিসেস এরেন জামান, খুব শীঘ্রই আপনার হাসবেন্ড আপনাকে অনলি মি করে রাখবে। বি রেডি।”

কিছুক্ষণ ঠোঁট কামড়ে হেসে এরেন ফোনটা টেবিলে রেখে পড়ায় মনোযোগ দিলো।

চলবে…………………….🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here