সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্বঃ১৭

0
1191

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ১৭

আজ এরেনের এক্সাম শেষ হয়েছে। এক্সাম শেষ করে এখন খুব শান্তি শান্তি লাগছে। এ কদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়াও হয়ে ওঠেনি। ভাবল সবাই মিলে আজ জমিয়ে আড্ডা দিবে। বিকেলে এরেন নিজের বিছানায় আরাম করে শুয়ে প্রথমে সাকিবকে কল করল। পরপর কয়েকবার রিং হয়ে কেটে গেল, কিন্তু রিসিভ হলো না। এরেন আবার কল করল। এবারও রিং হয়ে কেটে গেল। তবু এরেন দমে গেল না। বারবার চেষ্টা করতে লাগল। সাকিব তখন বাড়ির বাইরে ছিল। কিছুক্ষণ আগেই সে কোনো একটা প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার সময় ভুল করে বাসায় ফোন ফেলে রেখে গেছে। ইলোরা রুম থেকে বেরিয়ে বসার ঘরে যাওয়ার সময় শুনল ভাইয়ের ফোন বাজছে। বুঝতে পারল ভাই ফোন ফেলে রেখে চলে গেছে। বারবার ফোন বেজেই চলেছে শুনে ইলোরা রুমে ঢুকে ফোন খুঁজতে লাগল। বালিশের পাশে ফোনটা পেয়েও গেল। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ইলোরা ভ্রু কুঁচকে ফেলল। মহাজ্ঞানী! এ আবার কে? ইলোরা ঠোঁট কামড়ে ভাবতে লাগল কে হতে পারে। ততক্ষণে ফোনটা কেটে গেল। আবার কল আসবে ভেবে ইলোরা ফোন হাতেই দাঁড়িয়ে রইল। দুই মিনিট কেটে গেল, কিন্তু কল এল না। আর কল আসবে না ভেবে ইলোরা ফোনটা আবার বালিশের পাশে রেখে দরজার দিকে পা বাড়াল। সঙ্গে সঙ্গে আবার ফোনটা বেজে উঠল। ইলোরা দাঁড়িয়ে পড়ল। আবার গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল সেই মহাজ্ঞানীই ফোন করেছে। এবার কিছু না ভেবেই সে কল রিসিভ করে কানে ধরে বলল,“আসসালামু আলাইকুম।”

নারী কন্ঠ শুনে এরেন ভ্রু বাঁকালো। বুঝতে পারল না কে ফোন রিসিভ করেছে। কারণ সাকিবের বাসায় চারজন নারী আছে। এরেন তৎক্ষণাৎ সালামের উত্তর দিলো। তারপর বলল,“সাকিবকে দেয়া যাবে?”

ইলোরা বলল,“জি না। আপনি কিছুক্ষণ পরে ফোন করলে ভাইয়াকে পাবেন। আসলে ভাইয়া কিছুক্ষণ আগে বাইরে যাওয়ার সময় ভুল করে বাসায় ফোন রেখে গেছে।”

এরেন ভাবল সাকিবকে যখন ভাইয়া বলছে তখন নিশ্চয়ই ওর বোন। কিন্তু কোন বোন? এরেন প্রশ্ন করল,“আপনি কে?”

“আমি ইলোরা। আব্দুল্লাহ্ সাকিবের বোন।”

এরেন থমকে গেল। অনুভূতিরা হুট করেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। এরেন ঠোঁট দিয়ে জিব ভিজিয়ে হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করল। ওপাশের লোকটা কথা বলছে না বলে ইলোরা আবার বলল,“হ্যালো।”

“হুঁ।”

“ভাইয়া এলে কিছু বলতে হবে? তাহলে বলুন, আমি বলে দিব।”

এরেনের মাথায় হঠাৎ দুষ্টুমি এসে ভর করল। সে দুষ্টু হেসে বলল,“সাকিব এলে বলবেন ওর ভবিষ্যৎ ভাগনির একমাত্র মায়ের একমাত্র ভাইয়ের দুইমাত্র বোনের মধ্যে একজনের একমাত্র জামাই ফোন করেছিল।”

ইলোরা হতবুদ্ধি হয়ে গেল। এরেন এত দ্রুত কথাটা বলল যে পুরো কথাটা ইলোরার মাথার ওপর দিয়ে রকেটের গতিতে চলে গেল। সে মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবতে লাগল লোকটা আসলে কী বলল। কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে ইলোরা বোকার মতো বলল,“সংক্ষেপে বলুন। আমি কিছুই বুঝতে পারিনি।”

এরেন ঠোঁট টিপে হেসে বলল,“আমি তো সোজাসাপ্টা বললাম। তা-ও বুঝতে পারলেন না?”

“সোজাসাপ্টা!”

“হ্যাঁ। আচ্ছা আমি আবার বলি। এবার ধীরে ধীরে বলি, তাহলেই বুঝতে পারবেন।”

“ওকে।”

ওকে বলেই ইলোরা বুদ্ধি করে কল রেকর্ডার অন করে দিলো, যাতে পরে সেটা শুনে ঠান্ডা মাথায় বুঝতে পারে।

এরেন থেমে থেমে বলতে শুরু করল,“সাকিবের ভবিষ্যৎ ভাগনির, একমাত্র মায়ের, একমাত্র ভাইয়ের, দুইমাত্র বোনের মধ্যে একজনের, একমাত্র জামাই।”

ইলোরা এবার আর বুঝার চেষ্টা করল না। কথাগুলো রেকর্ড তো হয়েই গেছে। সে দ্রুত বলল,“আচ্ছা ঠিক আছে। ভাইয়া এলে বলব। আল্লাহ্ হাফেজ।”

ইলোরা ফোন কেটে দিলো। এরেন ভ্রু কুঁচকে ফেলল। ভাইয়াকে বলব বলে দিলো, ও নিজে কি বুঝতে পেরেছে? বুঝতে পারলে তো আর ফোন কেটে দিত না। নিজে না বুঝলে ভাইকে কী বুঝাবে? এর মাথায় তো দেখছি কিছুই নেই। ইলোরা ফোন কেটে ভয়েস রেকর্ড শুনতে লাগল। শুনতে শুনতে মনে মনে ভাবতে লাগল,“ভাইয়ের ভবিষ্যৎ ভাগনি মানে ধরি আমার মেয়ে, মেয়ের একমাত্র মা মানে আমি, মায়ের একমাত্র ভাই মানে আমার ভাই, ভাইয়ের দুইমাত্র বোনের মধ্যে একজনের একমাত্র জামাই মানে আমি বা মিথি!”

ইলোরা যেন আহাম্মক বনে গেল। চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে অবাক কন্ঠে বিড়বিড় করে বলল,“অ্যাঁ! আমাদের মধ্যে একজনের জামাই! মানে কী? লোকটা কি আমার সাথে মজা করল? তা-ই হবে। পাজি লোক একটা! জিলাপির মতো প্যাঁচিয়ে কথা বলে। ভাই এর নাম আবার মহাজ্ঞানী দিয়ে সেভ করল কেন কে জানে?”

ইলোরা ফোনটা আবার পূর্বের জায়গায় রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। বসার ঘরে এসে দেখল সাকিব চলে এসেছে। সাকিবকে দেখেই ইলোরা বলল,“ভাই, তুমি ফোন রেখে চলে গিয়েছিলে।”

সাকিব বলল,“হ্যাঁ, খেয়াল ছিল না।”

ইলোরা প্রশ্ন করল,“মহাজ্ঞানী কে?”

সাকিব বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করল,“কী?”

“মহাজ্ঞানী নামে কার নাম্বার সেভ করেছ?”

সাকিব দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,“ওটা তো এরেন। সবসময় কথায় কথায় আমাদের জ্ঞান দেয় বলে আমরা মহাজ্ঞানী বলি। ফোন করেছিল না-কি?”

নামটা শুনেই ইলোরা স্তব হয়ে গেল। সাথে ভীষণ অবাকও হলো। এরেন তার সাথে এভাবে মজা করল! ইলোরা কোনোমতে সাকিবের প্রশ্নের উত্তরে বলল,“হ্যাঁ।”

কথাটা বলেই ইলোরা তার রুমে ঢুকতে গিয়ে দেখল ডালিয়া ফোনে কথা বলছে। সম্ভবত তাহসিনের সাথে কথা বলছে। ইদানিং ডালিয়া মাঝে মাঝেই তাহসিনের ফোন ধরে, কথাও বলে। ওকে ডিস্টার্ব করার ইচ্ছে নেই এখন। ইলোরা দ্রুত পায়ে হেঁটে সোজা ছাদে চলে গেল। ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল এরেনের কথা। এরেন স্ব-ইচ্ছায় তাকে লজ্জায় ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু ইলোরা তো বুঝতেই পারেনি যে এরেন এটা বুঝিয়েছে যে সে তার হাসবেন্ড। তার মানে কী? এরেন তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে সিরিয়াস? কথা শুনে তো সেটাই মনে হলো। ইলোরা একটা শুকনো ঢোক গিলল। হঠাৎ করেই কেমন যেন অনুভব হচ্ছে! তার মানে সম্পর্কটা বাঁচানোর সম্ভাবনা আছে! ভাবতেই কেন জানি মনের মধ্যে আনন্দ অনুভব হচ্ছে। হঠাৎ করেই ইলোরার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এল। কেন যেন কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কেন এমন অদ্ভুত ইচ্ছে জাগছে তা সে নিজেও জানে না। ইলোরা চোখ বন্ধ করে মুচকি হেসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিল।


পরপর দুটো ক্লাস শেষ করে সবাই ক্যাম্পাসে এসে গোল করে বসেছে। ইলোরা মনে মনে আল্লাহ্কে ডাকছে যাতে এরেনের সামনে না পড়তে হয়। তাহলে আজ সে লজ্জায় মরেই যাবে। আড্ডা চলছে মুনাকে নিয়ে। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর তিন চারদিন পর্যন্ত মুনা অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে ভার্সিটিতে আসেনি। সবাই ফোন করে বুঝিয়ে শুনিয়ে ভার্সিটিতে এনেছে। কিন্তু ভার্সিটিতে এসে মুনা আফসার স্যারের ক্লাস বাতিলের খাতায় দিয়ে বসে আছে। জোর করেও তাকে আফসার স্যারের ক্লাসে নেয়া যায়নি। আফসার স্যার এরমাঝে শুধু একদিন ফোন করেছিলেন। তা-ও মুনা ইচ্ছে করে রিসিভ করেনি। তারপর আর কখনও ফোন করেননি। বন্ধুরা সবাই মিলে মুনাকে অনেক বুঝিয়েছে তবু সে মানতে নারাজ। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে বিয়ের ডেট ফিক্সড হওয়ার পর থেকে আফসার স্যার একবারও মুনার বা তার বন্ধুদের সামনে আসেনি। তাদের দেখেও না দেখার ভান করে চলে যান। অথচ আগে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে তাদের দেখলেই স্যার হাসিমুখে এগিয়ে এসে গল্প করতেন। মুনা এখন ভার্সিটিতে এলে প্রায় সময়ই গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। এটা সাধারণত তখন বেশি হয়, যখন মুনা আফসার স্যারকে দেখে। আজ আবার আফসার স্যারকে সামনে দিয়ে যেতে দেখে মুনা গাল ফুলিয়ে বসে আছে। অরিশা বিরক্ত হয়ে বলল,“মুনা, তুই শুধু শুধু এমন করছিস। আফসার স্যার কিন্তু অনেক ভালো একজন মানুষ।”

মুনা তিক্ততার সাথে বলল,“হ্যাঁ, এমনই ভালো মানুষ যে ছাত্রীকে পছন্দ করে চুপিচুপি বিয়ে পর্যন্ত ঠিক করে বসে আছে।”

“আজব! তুই শুধু স্যারের দোষ ধরিস কেন? তোর বাবাও তো তোকে কিছু জানায়নি।”

“বাবাকে পটিয়েছে, তা কি আমি বুঝি না?”

অন্তর বলে উঠল,“কচু বুঝস তুই। স্যারের মতো এমন একটা জামাই পাবি তা তো তোর ভাগ্যের ব্যাপার মুলা। না বুইঝা হুদাই চিল্লাস।”

নাদিয়া অন্তরের কথায় সায় দিয়ে বলল,“ঠিকই। স্যার সব দিক থেকেই একদম পারফেক্ট।”

মুনা বলল,“তবু তো সে আমার স্যার।”

ডালিয়া বলল,“তাতে কী? দুনিয়ার আর কোনো ছাত্রীর কি তার স্যারের সাথে বিয়ে হয়নি? হয়েছে, হচ্ছে, আর ভবিষ্যতেও হবে। কত ছাত্রী তার স্যারের সাথে প্রেম করে বিয়ে করে। আর সেখানে তোর আর স্যারের তো অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হবে। স্যার তোকে পছন্দ করে সোজা বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে, প্রেমের প্রস্তাব তো পাঠায়নি। সে হয়তো হালাল সম্পর্ক চায়।”

মুনা কটাক্ষ করে বলল,“মুখে তো কত কথাই বলা যায়। তোদের সাথে এমন হলে বুঝতি।”

টুম্পা দুঃখী দুঃখী মুখ করে বলল,“ক্রাশ খাইলাম আমি, আর বিয়া কি না হইব তোর সাথে! হায় কপাল! কবে যে বুঝবি তুই।”

তাহসিন বলল,“আরে বুঝব বুঝব। কবে বুঝব জানস? বিয়ার পর যেদিন থিকা ওর আফু ষাঁড় ওরে চব্বিশ ঘণ্টা বইয়ের মধ্যে চুবাইব, ঐদিনই বুঝব।”

অন্তর তাল মিলিয়ে বলল,“আরে মামা ঠিক কথা কইছস তো। আমাগো মুলা তো আফু ষাঁড়ের স্পেশাল স্টুডেন্ট হইয়া যাইব। পড়তে পড়তে এক্সামের সময় তো টেক্কা মারব।”

ইলোরা চিন্তিত কন্ঠে বলল,“মুনা রেএএএএ। স্যার যদি তোকে সারাদিন বই নিয়ে বসিয়ে রাখে?”

মুনা রাগত স্বরে বলল,“থামবি তোরা।”

অরিশা দাঁত কেলিয়ে বলল,“না।”

সবাই মিলে মুনাকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করল। হাসতে হাসতে ইলোরার চোখ চলে গেল অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা এরেনের দিকে। এরেন পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইলোরা তাকাতেই সে মুচকি হেসে ভ্রু জোড়া নাচাল। ইলোরার চোখ দুটো বড়ো হয়ে গেল। গত দিনের কথা মনে পড়তেই সে ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। ঢোক গিলে অপ্রস্তুত ভাবে এদিক-ওদিক দৃষ্টি বিচরণ করতে লাগল। এরেন হা করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইলোরা খেয়াল করল এরেনের সাথে সাকিব বা রনি কেউই নেই। এরেনের দৃষ্টি দেখে ইলোরা লজ্জায় পড়ে গেল। সে হঠাৎ বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,“এই চল, আমরা লাইব্রেরিতে যাই।”

ইলোরার কথায় কেউ রাজি হলো না। সবাই জানাল, এখানে বসে আড্ডা দিতেই তাদের ভালো লাগছে। ইলোরা বাধ্য হয়ে সেখানেই বসে রইল। কিন্তু এরেনের দিকে আর তাকাল না। কিছুক্ষণ পর আড়চোখে তাকিয়ে দেখল এরেন নেই। হয়তো চলে গেছে। ইলোরা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। আরও কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে সবাই উঠে পড়ল ক্লাসে যাওয়ার জন্য। মেয়েরা সবাই সামনে হাঁটছে, আর তাহসিন অন্তরের সাথে কথা বলতে বলতে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। হঠাৎ অন্তর দেখল, একটা ছেলে টুম্পার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় টুম্পার হাত ধরে হালকা একটা টান দিয়ে আবার সাথে সাথে হাত ছেড়ে দিয়ে সামনের দিকে চলে গেছে। টুম্পা অবাক হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। মুহুর্তে অন্তরের চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করল। সে এক ছুটে গিয়ে পেছন থেকে সেই ছেলেটার শার্টের কলার চেপে ধরল। ঘটনার আকস্মিকতায় ছেলেটা হকচকিয়ে গেল। চোখের পলকে কী হয়ে গেল বুঝতে না পেরে বন্ধুরা সবাই অবাক হয়ে গেল। সবাই দ্রুত অন্তরের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। ততক্ষণে অন্তর ছেলেটার নাকে-মুখে চার পাঁচটা ঘুষি বসিয়ে দিয়েছে। ছেলেটা চেষ্টা করেও নিজেকে অন্তরের হাত থেকে ছাড়াতে পারছে না। ছেলেটা রাগত স্বরে বলল,“হচ্ছেটা কী এসব? গায়ে হাত তুলছো কেন তুমি?”

অন্তর রক্তচক্ষুতে তাকিয়ে ছেলেটার কলার আরও শক্ত করে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,“মাইয়া দেখলেই খালি ছুঁইতে মন চায়? সব মাইয়াগোরে এক পাল্লায় মাপস? সব মাইয়ারা কি তোর মতো ছোঁয়া-ছুঁয়ি করতে ভার্সিটিতে আসে?”

আশেপাশের অনেক ছাত্রছাত্রী হা করে তাকিয়ে আছে অন্তরের দিকে। তাহসিন তাড়াতাড়ি গিয়ে অন্তরকে টেনে সরিয়ে এনে বলল,“অন্তু, কী করছিস এসব?”

ছেলেটা অন্তরের দিকে তেড়ে আসতে নিতেই তাহসিন অন্তরকে ছেড়ে গিয়ে ছেলেটাকে আটকে বলল,“কী সমস্যা? কী করেছ তুমি?”

অন্তর পেছন থেকে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,“ও টুম্পির হাত ধইরা টান মারছে।”

ছেলেটা এতক্ষণে বুঝতে পারল মার খাওয়ার কারণ। তাহসিন কথাটা শুনে নিজেও ছেলেটার গালে কষে এক থাপ্পড় মারল। রাগত স্বরে বলল,“নেক্সট টাইম আর এমন ভুল করিস না। এই যে মেয়েগুলোকে দেখছিস? এদের থেকে মেপে মেপে বিশ হাত দূরে থাকবি।”

অন্তর আবার দৌড়ে গিয়ে ছেলেটার কলার ধরে টেনে এনে টুম্পার সামনে দাঁড় করিয়ে বলল,“মাফ চা।”

ছেলেটা বুঝল এখন বাড়াবাড়ি করলে চরম কেলানি খেতে হবে। বাধ্য হয়ে মাথা নিচু করে টুম্পার উদ্দেশ্যে বলল,“সরি।”

টুম্পা আর বাকি মেয়েরা সবাই এখনও হা করে তাকিয়ে আছে। এমন একটা ঘটনার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। টুম্পা একবার অন্তরের রাগী মুখের দিকে তাকিয়ে তারপর অপ্রস্তুতভাবে মৃদু কন্ঠে বলল,“ইটস ওকে।”

অন্তর এবার ছেলেটার কলার ছেড়ে দিয়ে বলল,“যাহ্। আজকে ছাইড়া দিলাম। এমন ভুল আর করবি না।”

তাহসিন এগিয়ে এসে বলল,“ভুলেও আর এই মেয়েদের দিকে তাকাবি না। আবার যদি এমন ভুল করিস তাহলে তোর চোখ হারাবি।”

ছেলেটা তাহসিন আর অন্তরের দিকে কটমট করে তাকিয়ে তারপর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে দ্রুত পায়ে হেঁটে সেখান থেকে সরে পড়ল। ছেলেটা চলে যেতেই টুম্পা একসঙ্গে পরপর তিনবার পলক ফেলে অবাক কন্ঠে বলল,“কী থেকে কী হয়ে গেল!”

অন্তর সামনের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বলল,“পিঁপড়া থেকে হাতি হইছে। এখন ক্লাসে চল।”

সবাই ব্যাপারটা আপাতত ভুলে গিয়ে ক্লাসের দিকে ছুটল।

চলবে……………………..🌸

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here