সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্বঃ২৭

0
1020

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ২৭

পাঁচদিন পর আজ আফসারের সাথে ভার্সিটিতে এসেছে মুনা। আসার পর থেকে সবাই মিলে তাকে ঘিরে ধরেছে। একেক জনের একেক প্রশ্নে মুনা গাল ফুলিয়ে বসে রইল। নাদিয়া মুখ বাঁকিয়ে বলল,“কেউ কিছু জিজ্ঞেস করিস না। স্যারের সাথে তার ভালোই চলছে মনে হচ্ছে।”

মুনা বিরক্ত হয়ে বলল,“বেশরমগুলা, চুপ করবি?”

ইলোরা সবার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করল,“অন্তু কখন আসবে?”

তাহসিন হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,“ক্লাস টাইম তো হয়েই গেছে। এখনও তো এল না।”

অরিশা বলল,“ওয়েট, আমি ফোন করছি।”

তাহসিন বলল,“আমি করেছিলাম। বারবার রিং হয়ে কেটে গেছে। ফোন ধরছে না।”

মুনা অবাক হয়ে বলল,“মানে? ও তো কখনও এমন করে না।”

অরিশা টুম্পার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,“তোর সাথে রাগ করেছে না কি?”

টুম্পা বিরক্তি নিয়ে বলল,“ওর বিষয়ে আমাকে কেন টানিস সবসময়?”

তাহসিন শক্ত মুখে তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,“সাধু সাজিস না সবসময়। অন্তত আমার সামনে সাজিস না। কোনোকিছুই অজানা নেই আমার।”

টুম্পা রাগী দৃষ্টিতে একবার তাহসিনের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। ওদের দুজনকে লক্ষ্য করে সবাই কিছুটা অবাক হলো। ইলোরা ভ্রুকুটি করে বলল,“কিছুই বুঝলাম না । সাধু সাজে মানে? আর তুই কী জানার কথা বলছিস?”

তাহসিন মৃদু কন্ঠে বলল,“কিছু না।”

ডালিয়া বলল,“কিছু তো অবশ্যই। বল কী হয়েছে?”

“পরে বলব। ক্লাসে চল।” কথাটা বলেই তাহসিন হাঁটা ধরল। কেউ আর কথা না বাড়িয়ে ক্লাসের দিকে ছুটল। কয়েক পা বাড়াতেই সামনে এরেনকে চোখে পড়ল। নিমেষেই ইলোরার মন একরাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেল। গতকালের ঘটনা মনে পড়তেই তার ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করল। এরেনকে দেখে সবাই থেমে পড়ল। সে সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলল। ইলোরা আজ আর আড়চোখেও তার দিকে তাকাল না। এরেন আহত দৃষ্টিতে ইলোরার দিকে তাকাচ্ছে। মেয়েটার সাথে কথা বলা দরকার, কিন্তু সুযোগ নেই। এরেন সবার সাথে কথা বলার মাঝে ইলোরাকে প্রশ্ন করল,“শরীর ভালো তো তোমার?”

ইলোরা শান্ত দৃষ্টিতে একবার এরেনের দিকে তাকিয়ে থমথমে গলায় বলল,“হ্যাঁ।”

এরেন বুঝল ইলোরা আঘাত পেয়েছে। সে আর কথা বাড়াল না। এরেনের সাথে কথা বলে সবাই ক্লাসে‌ চলে গেল। দুপুর দুইটায় ক্লাস শেষ করে সবাই ক্যাম্পাসে এসে দাঁড়াল। সাকিব কী যেন একটা কাজে গেছে। সাকিব না আসা পর্যন্ত ইলোরা আর ডালিয়াকে অপেক্ষা করতে হবে। ওদের দুজনের সাথে তাই সবাই ক্যাম্পাসে দাঁড়াল। তখনই আফসার মুনাকে কল করল। মুনা কল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই আফসার প্রশ্ন করল,“ক্লাস শেষ হয়েছে তোমার?”

“হ্যাঁ।”

“এখন কোথায় আছো?”

“ক্যাম্পাসে।”

“ওরা সবাই চলে গেছে?”

“না। সাকিব ভাইয়া একটু কাজে গেছে। ইলো আর ডালিয়াকে নিতে আসবে। আমরা একসাথেই আছি।”

“আচ্ছা, ওখানেই অপেক্ষা করো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি আমি।”

“আচ্ছা।”

মুনা ফোন রাখতেই নাদিয়া বড়ো একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আফসোসের সুরে বলল,“আজ একটা জামাই নেই বলে একাই বাড়ি ফিরতে হয়।”

অরিশা হেসে বলল,“জামাই নাই তো কী হইছে? প্রেম কর, বয়ফ্রেন্ড প্রতিদিন বাসায় পৌঁছে দিবে।”

অরিশার কথায় নাদিয়া তাহসিনের দিকে একবার তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,“প্রেম? ওসব প্রেম ভালোবাসা সবার কপালে জোটে না রে অরি।”

অরিশা চুপ হয়ে গেল। সে আসলে কথাটা মজা করেই বলেছে। নাদিয়া যে কষ্ট পাবে এটা ভাবতে পারেনি। ডালিয়া অসহায় দৃষ্টিতে নাদিয়ার দিকে তাকাল। তাহসিন সেটা খেয়াল করে কথা ঘুরানোর চেষ্টা করে বলল,“অন্তু আজ কারোর ফোনই রিসিভ করল না। একবার হাতের কাছে পাই ওরে। কেলিয়ে চৌদ্দ গোষ্ঠীর নাম ভুলিয়ে দিব।”

তাহসিনের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই তার ফোন বেজে উঠল। তাড়াতাড়ি সে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখল অন্তর ভিডিও কল করেছে। তাহসিন কপাল কুঁচকে বলল,“নাম নিতেই ভিডিও কল! রিসিভ করমু না আজকে। সবাইরে টেনশনে ফেলে এখন আসছে ভিডিও কল দিতে।”

ইলোরা বলল,“আরে রিসভ কর না। আমাদের কারোর ফোন রিসিভ করেনি কেন তা তো জিজ্ঞেস কর আগে।”

তাহসিন ফোন রিসিভ করল। কয়েকটা ঝাড়ি মারার জন্য মুখ খুলতেই ফোনের স্ক্রিনে অন্তরের বিধ্বস্ত চেহারাটা দেখে দমে গেল। সে অবাক হয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে সূক্ষ্ম চোখে অন্তরকে নিরীক্ষণ করতে লাগল। লাল টকটকে দুটো চোখ, উসকো-খুসকো চুল, মলিন মুখ। এ যেন সম্পূর্ণ অগোছালো একজন মানুষ, যার মুখোভাবই বলে দিচ্ছে সে ভালো নেই। তাহসিন অবাক হয়ে বলল,“অন্তু, এ কী অবস্থা তোর!”

অন্তর মলিন হাসল। তাহসিনের কথায় আর মুখোভাবে বাকিরা সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে। অন্তর তাহসিনের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে অস্বাভাবিক গলায় বলল,“ফোনটা সবার সামনে রাখবি একটু? সবার সাথে একবার কথা বলব।”

“কেন?”

“প্রশ্ন করিস না ভাই। প্লিজ তাড়াতাড়ি ফোনটা রাখ সবার সামনে।”

তাহসিন ঘাসের উপর তিনটা বই রেখে। তার সাথে ফোনটা ভালো করে বসিয়ে দিলো যাতে সবাইকে স্ক্রিনে দেখা যায়। সবাই এবার উৎসুক দৃষ্টিতে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে অন্তরের অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে গেল। কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অন্তর মলিন হেসে বলল,“তোদের কাছে রিকোয়েস্ট করছি, কেউ কোনো প্রশ্ন করবি না আমাকে। আমি মাত্র কয়েক মিনিট কথা বলব তোদের সাথে। বেশিক্ষণ কথা বলার সময় নেই।”

অগত্যা সবাই মাথা নাড়ল। অন্তর সর্বপ্রথম মুনার দিকে তাকিয়ে বলল,“কিরে মুলা? বিয়ের পর আজকে ভার্সিটিতে গেলি আর আমার সাথে দেখাই হলো না। যাক, আগে এটা বল যে আমাদের আফু ষাঁড়ের কপাল কতটুকু ফাটছে? বেচারা ভালো লোকটার কপালে শেষমেষ তোর মতো শাকচুন্নী জুটল! শোন, তোর বিশ কেজি ওজনের থাপ্পড়গুলা এবার থেকে আমার বদলে তহসিনরে দিস। একটা সত্যি কথা বলি, তুই আর স্যার কিন্তু খুব সুখী কাপল হবি। তোদের দুজনকে খুব মানায় একসাথে। আফু ষাঁড়কে বলিস তার একটা অদ্ভুত নাম দিয়েছিলাম আমি। মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট কথা, তোর হাসি কিন্তু এক ফোঁটাও কমাবি না। সারাজীবন এমনই হাসবি। সবার মুখে এমন স্বাধীন হাসি থাকে না। পারলে এ বছরই আমাকে মামা বানিয়ে ফেলিস।”

বলেই অন্তর শব্দ করে হাসল। কিন্তু সে হাসিটা লোক দেখানো। মুনা কী বলবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ করে ভিডিও কলে এসব কথা বলার কারণটাই বা কী? অন্তর মুনার কথার অপেক্ষা না করে নাদিয়াকে বলল,“নাদি, তুই কি জানিস তোর মন ঠিক কতটা শক্ত? একটা মানুষকে এক বছর ধরে ভালোবেসে পরে হঠাৎ করেই জানলি সে অন্য কাউকে ভালোবাসে। তবু তুই সবার সাথে হেসেখেলে দিন পার করছিস। এটা কতজন পারে বল তো? হিংসা হয় না তোর? ভালোবাসার অভাব বোধ করছিস তাই না? আমি বলছি দেখিস, একদিন তোর জীবন ভালোবাসার রঙে রঙিন হয়ে যাবে।”

নাদিয়া কিছু বলার আগেই এবার অন্তর ডালিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,“ওই ডালিম, মনে মনে যে তাহসিনের প্রেমে হাবুডুবু খাস তা কিন্তু আমি জানি। ও কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই প্রপোজ করবে তোকে। প্রপোজ করার সাথে সাথে একসেপ্ট করিস। এমন পোলা এক পিসই আছে। আমার ভাইটারে আবার ছ্যাঁকা দিস না, খবরদার।”

ডালিয়াও উত্তরহীনভাবে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। অন্তর অরিশার দিকে ফিরে বলল,“সরিষা, আর কত ছেলেদের থেকে দশ হাত দূরে থাকবি? বেছে বেছে অন্তত একজনকে তো পাত্তা দে বইন। শোন একটা সিক্রেট কথা বলি। আমাদের সিনিয়র মাহাদি ভাই আছে না? উনি কিন্তু তোকে পছন্দ করে। রিজেক্ট হওয়ার ভয়ে বেচারা প্রপোজ করে না। প্রপোজ করলে ফিরিয়ে দিস না। উনি খুব ভালো ছেলে।”

অরিশা বলল,“এসব পরে শুনব। আগে বল……..।”

অরিশার কথা শেষ করার সুযোগ না দিয়ে অন্তর ইলোরার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,“এই যে বারো মাসের রোগী, মুখ অমন গোমড়া কেন? হুতুম পেঁচার মতো লাগছে তোকে। তোর মুখে হাসিই মানায়। সবসময় হাসিখুশি থাকবি আর নিজের যত্ন নিবি, বুঝছিস? একটা কথা বললে এখন হাঁটে হাঁড়ি ভাঙা হবে, তাই বললাম না। শুধু এটা জেনে রাখ, আমি কিন্তু কিছু একটা আঁচ করতে পারছি। প্রেমে পড়লে তার গলায়ই ঝুলে পড়িস বুঝলি? তাতে তো তোর সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। সবাইকে আরেকটা বিয়ে খাওয়ার সুযোগ করে দিস খুব তাড়াতাড়ি। আমি জ্যোতিষীর মতো গণনা করে তোর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছি। আমার গণনা ভুয়া ভাবিস না হুঁহ্।”

“অন্তু…………।”
ব্যাস, ইলোরাকেও কথা বলার সুযোগ দিলো না অন্তর। তাহসিনের দিকে তাকিয়ে প্রশস্ত হেসে বলল,“ভাই, অমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছিস কেন? তুই শুধু আমার বন্ধু না, আমার ভাইও। তুই তো সব জানিস। টুম্পির উপর রাগ করিস না। ওসব আমার ভাগ্য, বুঝলি? সবার ভাগ্যে সবকিছু থাকে না। আর মানুষটা যদি হই আমি, তাহলে তো কথাই নেই। সুখ আবার আমাকে বড্ড ভয় পায়। ভুলে যা সব। আর শোন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই ডালিমরে প্রপোজ করে ফেল। এসব ব্যাপারে দেরি করিস না রে মামা। নিজেও ভালো থাকবি, আর ওরেও ভালো রাখবি।”

তাহসিন গম্ভীর গলায় বলল,“এসবের মানে কী অন্তু? তোর মাথায় কী চলছে? খবরদার বলছি, কোনো উলটা-পালটা চিন্তা মাথায় আনলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না তোর জন্য।”

অন্তর এবারও মলিন হাসল। সবশেষে সে তাকাল টুম্পার দিকে। কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মৃদু হেসে বলল,“ভালো থাকিস টুম্পি। তোকে শুধু একটা অনুরোধ করব। সৃজন ভালো ছেলে না,পারলে ওর থেকে দূরে থাকিস। কোনো একটা ভালো ছেলেকে লাইফ পার্টনার হিসেবে বেছে নিস। আজ থেকে তুই মুক্ত। অন্তর নামক কাঁটা আর কোনো দিনও তোর সামনে গিয়ে বলবে না তার ভালোবাসার কথা। তোর প্রতি আমার ভালোবাসা যেমন ছিল, তেমনি আছে। খুব, খুব, খুব ভালো থাকিস। কষ্ট খুব খারাপ একটা জিনিস রে টুম্পি। আমি জানি এর অনুভূতি কেমন। প্রার্থনা করি জীবনে কোনো কষ্ট যেন তোকে না ছোঁয়।”

যে টুম্পা এতদিন অন্তরের কথায় মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত, আজ সে-ও চোখে এক রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। নাদিয়া থমথমে মুখে বলল,“তোর কী হয়েছে অন্তু? এসব কী করছিস, কী বলছিস কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমরা। কেন এসব বলছিস?”

অন্তর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শুকনো মুখে মলিন একটা হাসি টেনে সবার উদ্দেশ্যে বলল,“তোরা আমার জীবনের একটা অংশ। বিশ্বাস কর, এই তোদের সাথে সময় কাটাতে কাটাতে না আমি নিজের সব দুঃখ, কষ্ট এক নিমিষেই ভুলে যাই। অনেকগুলো বছর তোদের সাথে কাটিয়েছি। কত হাসি, আড্ডা, দুষ্টুমি, খুনসুটি আরও কতশত স্মৃতি জড়িয়ে আছে তোদের সাথে। ভালোবাসি ফ্রেন্ডস, খুব ভালোবাসি তোদের। তোদের ছাড়তে ইচ্ছে করে না। কিন্তু কী বল তো? না চাইলেও সবাইকেই ছাড়তে হয়। এটাই নিয়ম। আমাকে ভালোবাসতে হবে না, শুধু মনে রাখিস। প্রতিদিন আড্ডা দেওয়ার সময় অন্তত একবার সবাই আমাকে মিস করিস। এতেই আমি খুশি। তোদের সাথে আমার এটুকুই পথ চলার ছিল। শেষ মুহূর্তে এসে ইচ্ছে হলো তোদের মুখগুলো দেখার, আর শেষবারের মতো কিছুটা সময় কাটানোর। ব্যাস, আর কী চাই? জীবনের শেষ মুহূর্তটুকু রঙিন…………….।”

আর কিছু বলার আগেই অন্তর হঠাৎ কাশতে শুরু করল। যেনতেন কাশি না, কাশতে কাশতে গলা দিয়ে রক্ত উঠে গেল। অন্তর দুহাতে মুখ চেপে ধরে কাশছে। ফোনের এপাশে বসে সবাই এতক্ষণ দমবন্ধ পরিস্থিতির মধ্যে শুধু অবাক হয়ে অন্তরের কথা শুনছিল আর বুঝার চেষ্টা করছিল। এবার সবার মাঝে উত্তেজনা দেখা গেল। সবাই অস্থির হয়ে বলছে,“অন্তু, কী হয়েছে তোর? কাশছিস কেন? রক্ত! এত রক্ত পড়ছে কেন? অন্ত প্লিজ কথা বল, অন্তু?”

অন্তর কারোর প্রশ্নের জবাব দিতে পারল না। শুধু একবার দুর্বল চোখে সবার দিকে তাকাল। তারপর সঙ্গে সঙ্গেই সে নেতিয়ে পড়ল। হয়তো জ্ঞান হারিয়েছে। তাহসিন ফোন হাতে নিয়ে হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,“এক্ষুনি ওর বাসায় যেতে হবে। চল।”

তাহসিনের সাথে সবাই উঠে দাঁড়াল। কোনোদিক না ভেবে সবাই একসঙ্গে ছুটতে শুরু করল। সবার চোখেমুখে ভয়, চিন্তা আর উত্তেজনা। এই মুহূর্তে সবার মাথায় একটাই চিন্তা,‘যত দ্রুত সম্ভব অন্তুর কাছে পৌঁছাতে হবে।’

আফসার ক্যাম্পাসে তন্ন-তন্ন করে খুঁজেও মুনাকে পায়নি। বারবার মুনাকে কল করছে কিন্তু মুনা একবারও রিসিভ করছে না। যতবার কল করছে ততবারই বারকয়েক রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে। আফসার এবার কিছু একটা ভেবে বাড়িতে ফোন করল। ফোন করে তার মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করল মুনা বাসায় ফিরেছে কি না। কিন্তু জানতে পারল মুনা বাসায় ফেরেনি। তারপর ফোন করল মুনার মায়ের কাছে। সে-ও বলল মুনা ঐ বাসায় যায়নি। আফসার এবার বড্ড চিন্তায় পড়ে গেল। মেয়েটাকে বলল ক্যাম্পাসে অপেক্ষা করতে। আথচ ক্যাম্পাসের কোথাও তার চিহ্নও নেই। প্রচন্ড চিন্তায় মুনার উপর এবার রাগ উঠে গেল তার। মুনার বন্ধুদের কারোর নাম্বার নেই তার কাছে। থাকলে কল করে জিজ্ঞেস করা যেত। সবাই মিলে আবার ঘুরতে বেরিয়েছে কি না কে জানে? তাই বলে একবার ফোন করে বলে যাবে না? মেয়েটা বোধ হয় ভুলে বসেছে সে এখন বিবাহিত। তার জন্য চিন্তা করার আরও একজন মানুষ আছে। আফসার গেইটের কাছে পৌঁছতেই সামনে পড়ল সাকিব, এরেন আর রনি। তাদের দেখেই সে সাকিবকে প্রশ্ন করল,“ইলোরাকে কি বাসায় পৌঁছে দিয়েছ?”

সাকিব বলল,“না তো। আমি তো ওদের নিতেই এসেছি। অনেকক্ষণ ধরে ফোন করছি অথচ ধরছেই না।”

আফসার এবার চিন্তিত কন্ঠে বলল,“তার মানে ওরা একসাথেই আছে। ওরা কেউ ক্যাম্পাসে নেই। আমি পুরো ক্যাম্পাস খুঁজেও পাইনি। মুনাও ফোন ধরছে না। বুঝতে পারছি না কোথায় গেছে।”

এরেন বলল,“কেউ ফোন ধরছে না! কোথাও গেলে তো ওরা সবসময় বলে যায়। আজ কোথায় গেল সবাই মিলে?”

রনি কিছু একটা ভেবে বলল,“সবাই একসঙ্গে ফোন রিসিভ করছে না, এটা তো চিন্তার বিষয়। আমি রবিনকে ফোন করে দেখছি। রবিনের বাসা তো অন্তরের বাসার কাছেই। অন্তর আজ ভার্সিটিতে আসেনি।‌ মনে হয় বাসায় আছে। রবিনকে বলব একবার গিয়ে অন্তরকে জিজ্ঞেস করতে, ওদের খবর জানে কি না।”

সাকিব তাড়া দেখিয়ে বলল,“তাড়াতাড়ি কর।”

রনি পকেট থেকে ফোন বের করে রবিনের নাম্বারে ডায়াল করল। সঙ্গে সঙ্গে ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করে রবিন হ্যালো বলতেই রনি বলল,“রবিন, তুই কি বাসায় আছিস?”

ওপাশ থেকে রবিনের উত্তর,“হ্যাঁ।”

“আচ্ছা, তুই একবার অন্তরের বাসায় গিয়ে দেখতে পারবি ও বাসায় আছে কি না? থাকলে ওকে একটু জিজ্ঞেস করিস ওর বন্ধুরা সবাই কোথায় আছে। আসলে সাকিবের বোনদের জন্য ও খুব চিন্তায় আছে। কেউই ফোন ধরছে না।”

ওপাশ থেকে রবিনের যা উত্তর এল, তা শুনে রনি এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। আফসার, সাকিব আর এরেন উৎসুক দৃষ্টিতে রনির দিকে তাকিয়ে আছে। রনির মুখোভাব দেখে তাদের কলিজা কেঁপে উঠল। সবাই আরও চিন্তিত হয়ে পড়ল। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই রনি হঠাৎ কান থেকে ফোন নামিয়ে কাঁপা কাঁপা অস্ফুট স্বরে বলল,“অ..ন্তর, সুইসাইড করেছে।”

চলবে…………………….🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here