#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ৩১
দেখতে দেখতে কেটে গেল আরও এক মাস। এতদিনে ইলোরা এরেনের সাথে একদম স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এরেন প্রতিদিন ফোন বা মেসেজ করতেই থাকে। ভার্সিটিতে দেখা হলেও কথা বলার সুযোগ থাকে না কারো। আজ ইলোরার শরীরটা তেমন ভালো নেই। তাই সন্ধ্যাবেলা সে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে ছিল। মেসেজ টোনের শব্দ কানে যেতেই বুঝল এরেন মেসেজ করেছে। কিন্তু টাইপিং করতে ইচ্ছে করছে না এখন। অলসভাবে চোখ বন্ধ করে শুয়েই রইল সে। কিছুক্ষণ পর এরেনের কল এল। অলসতা ভেঙে এবার সে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরল কিন্তু কোনো কথা বলল না। ওপাশ থেকে এরেনের কন্ঠস্বর শোনা গেল,“হ্যালো,ইলো,শুনতে পাচ্ছ?”
ইলোরা ছোটো একটা শব্দ করল,“হুঁ।”
এরেন প্রশ্ন করল,“মেসেজের রিপ্লাই দিলে না যে?”
ইলোরা মৃদু কন্ঠে বলল,“এমনি।”
ইলোরার কন্ঠস্বর শুনে এরেন চুপ মেরে গেল। ইলোরাও চুপচাপ ফোন কানে ধরে রইল। কথা বলতেও ইচ্ছে করছে না তার। কিন্তু এরেন হয়তো কষ্ট পাবে ফোন রেখে দিলে। মিনিট খানেক চুপ থেকে এরেন আদুরে গলায় বলল,“কী হয়েছে আমার ইলোনির?”
ইলোরা চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিল। ছেলেটা এত আবেগ মিশিয়ে ডাকে যে তার শরীর কেঁপে ওঠে। ইচ্ছে করে তাকে আঁকড়ে ধরে কান্না করতে। কিন্তু তার সামনে কাঁদা যে নিষেধ। এরেন আবার বলল,“কী হলো? বলো।”
ইলোরা জানে এখন অসুস্থতার কথা বললেই এরেন তার উপর রাগ ঝাড়বে। তাই সে মিথ্যে উত্তর দিলো,“কিছু হয়নি।”
এরেন অভিজ্ঞের মতো বলল,“আমার থেকে চাইলেও কোনো কথা আড়াল করতে পারবে না। সো বৃথা চেষ্টাও করো না। তাড়াতাড়ি বলো কী হয়েছে।”
ইলোরা এবার সোজাসুজি উত্তর দিলো,“শরীর ভালো লাগছে না।”
“কেন?”
“সর্দি হয়েছে তাই। মাথাটাও ধরেছে কিছুটা।”
এরেন গম্ভীর কড়া গলায় বলল,“আবার অসুস্থ? এই মেয়ে তুমি নিজের যত্ন নিতে পারো না একটু? খুব কষ্ট হয় যত্ন নিতে? অলস একটা! পিটিয়ে অলসতা ছাড়িয়ে দেবো একদম।”
ইলোরা ভালোভাবেই জানে এখন এই কথাগুলোই শুনতে হবে। সে গোমড়া মুখে বলল,“বকছেন কেন?”
এরেন শক্ত মুখে বলল,“বকবো না তো আদর করব তোমাকে?”
ইলোরা মুখ ফসকে বলে ফেলল,“তা-ও তো করতে পারেন।”
কথাটা বলে ইলোরা নিজেই বোকা বনে গেল। দাঁতে জিব কেটে সে একদম চুপ হয়ে গেল। এরেন কিছুটা থমকালো। বুঝল ইলোরা মুখ ফসকে বলে ফেলেছে কথাটা। পরক্ষণেই দুষ্টু হেসে বলল,“আসব? আদর করতে।”
ইলোরা কোনো উত্তর দিলো না। এরেন আবার ঠোঁট টিপে হেসে বলল,“আমার বউয়ের আদর পাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে আর আমি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারি বলো? তার চেয়ে বরং চলে যাই বউয়ের কাছে। লুকিয়ে লুকিয়ে আদর করে আসব।”
ইলোরা বিড়বিড় করে বলল,“অসভ্য।”
এরেনের কানে কথাটা পৌঁছাতেই সে বলল,“ওহ্ আচ্ছা। আমি বললে অসভ্য আর তুমি বললে সেটা সভ্য?”
“আমি কি ইচ্ছে করে বলেছি? মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।”
“জানি জানি। মনের কথাটাই মুখ ফসকে বেরিয়ে এসেছে।”
“ধুর!”
এরেন শব্দ করে হেসে উঠল। তারপর হঠাৎ বলল,“জানো? যেদিন আমাদের বিয়েটা হয়েছিল তার আগের রাতে ওই ভাঙা ঘরটায় ঘুমানোর সময় আমি মনে মনে আল্লাহর কাছে বলেছিলাম ওমন রাত যেন জীবনে আর কোনোদিন না আসে। আর এখন বলতে ইচ্ছে করছে ওমন রাত যেন জীবনে হাজারবার আসে।”
ইলোরা ভ্রুকুটি করে বলল,“হাজারবার আসে মানে? ওমন রাত হাজারবার আসবে আর আপনি হাজারবার বিয়ে করবেন?”
এরেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,“তা কখন বললাম?”
“মাত্রই তো বললেন ওমন রাত যেন হাজারবার আসে। তো ওই রাতের জন্যই তো আমার সাথে আপনার বিয়েটা হয়েছিল। তার মানে আবার ওমন রাত এলে আপনি আবার বিয়ে করবেন?”
এরেন কপাল চাপড়ে বলল,“হায় আল্লাহ্! কী বুঝাতে চাইলাম আর কী বুঝল!”
ইলোরা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,“আর বুঝাতে হবে না আমাকে। যান গিয়ে বিয়ে করুন।”
এরেন ইলোরাকে আরেকটু রাগিয়ে দেয়ার জন্য বলল,“এভাবে বললে কিন্তু সত্যি সত্যিই বিয়ে করে ফেলব।”
“করুন,হাজারবারই করুন। না বলেছে কে?”
“বিয়ে করলে কিন্তু বাসরও করে ফেলব। তোমাকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে বাসর করব,তখন তোমার হিংসে হবে না?”
“বয়ে গেছে আমার হিংসে করতে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে,তুমি যখন নিজেই বলেছো তখন যাচ্ছি বিয়ে করতে।”
“যান।”
ইলোরা ফট করে ফোনটা কেটে দিয়ে সাইলেন্ট করে বিছানার একপাশে ছুঁড়ে মারল। তারপর গম্ভীর মুখে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বিছানায় পড়ে রইল। কিছুক্ষণের মধ্যে চোখ দুটো লেগে এল। তারপর ঘুম ভাঙল মিথিলার চিল্লাচিল্লি শুনে। মিথিলা বাইরে থেকে দরজা ধাক্কাছে। ইলোরা সন্ধ্যাবেলা দরজা বন্ধ করে শুয়েছিল তা তার খেয়ালই নেই। তাড়াতাড়ি উঠে বিছানা থেকে নামতে যেতেই চোখ গেল ফোনের দিকে। ফোনটা হাতে নিয়ে চমকে উঠল। স্ক্রিনে এরেনের মিসড কল আর মেসেজ ভাসছে। তাড়াতাড়ি লক খুলে কললিস্ট আর মেসেজ বক্স চেক করে দেখল এরেন আধঘন্টা আগে থেকে অনবরত কল,মেসেজ করেছে। আধঘন্টা আগের একটা মেসেজ পড়ে ইলোরার বুকটা ধক করে উঠল। এরেন লিখেছে,“বেলকনিতে আসো।”
তারপরের মেসেজ গুলো এমন,“তাড়াতাড়ি আসো প্লিজ। রাগ করেছ? লক্ষ্মী বউ আমার,রাগ করো না। এখানে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে লোকজন কী ভাববে বলো তো? আচ্ছা কান ধরছি। এবার অন্তত আসো।আর কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকব?”………….
এরকম আরও অনেক মেসেজ। ইলোরা দরজা খোলার কথা বেমালুম ভুলে এক ছুটে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। তার রুমের বেলকনিটা বাড়ির পেছনের রাস্তা ঘেঁষে। রাস্তার দিকে তাকিয়েই দেখল এরেন একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে ফোনে কী যেন করছে। ইলোরার বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল। গত আধঘন্টা যাবত ছেলেটা এভাবে দাঁড়িয়ে ছিল ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। এরেন হঠাৎ ফোনের থেকে চোখ উঠিয়ে বেলকনির দিকে তাকাল। ইলোরাকে দেখামাত্র সে মুচকি হেসে হাত নাড়লো। হাসিটা দেখে ইলোরার চোখ দুটো ছলছল করে উঠল। তার জন্য ছেলেটা এত কষ্ট পেল। চোখ ফেটে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। এরেন গম্ভীর মুখে ইলোরার দিকে তাকিয়ে ফোন করল। ফোনটা বাজতেই সঙ্গে সঙ্গে ইলোরা রিসিভ করে কানে ধরল। এরেন তার দিকে তাকিয়ে বলল,“বলেছিলাম আমার সামনে কেঁদো না। আমি কি তোমার কান্না দেখতে এতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি?”
ইলোরা তাড়াতাড়ি চোখ মুছে থমথমে গলায় বলল,“এসব পাগলামির মানে কী?”
“আমার বউয়ের জন্য আমি পাগলামি করব তাতে তোমার কী?”
“বউটা তো আমিই।”
“ও হ্যাঁ। আচ্ছা তাহলে এক কাজ করো। এখন ঐ গোমড়া মুখটাকে হাস্যোজ্জ্বল করে তোমার স্বামীকে একটু দেখার সুযোগ দিয়ে ধন্য করো মহারানি।”
ইলোরা হাসল না। চুপচাপ এরেনের দিকে তাকিয়ে রইল। এরেন তাকে লজ্জা দেয়ার জন্য বলল,“আমার বউটাকে কী কিউট লাগছে! ইচ্ছে করছে আদর করে দিতে। চলে আসব আদর করতে?”
ইলোরা কোনো প্রতিক্রিয়া করল না। এরেন ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হঠাৎ কিছু একটা ছুঁড়ে মারল বেলকনির দিকে। জিনিসটা এসে পড়ল ইলোরার পায়ের কাছে। নিচে তাকিয়ে দেখল লাল টকটকে তাজা গোলাপের তোড়া। এরেনের বাঁ হাতে এটা ছিল খেয়ালই করেনি সে। নিচু হয়ে তোড়াটা হাতে নিয়ে দেখল তার মধ্যে ভাঁজ করা একটা নীল কাগজ। কাগজের ভাঁজ খুলে দেখল তাতে লেখা,“রেস্টুরেন্টে একটা গোলাপ নিয়ে বলেছিলাম শোধ দিয়ে দেবো। দিয়ে দিলাম।”
ইলোরা এরেনের দিকে তাকিয়ে দেখল এরেন মুচকি মুচকি হাসছে। ইলোরাও এবার চুপ থাকতে পারল না। ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে ফেলল। ফোনটা পুনরায় কানে ধরতেই এরেন হাসিমুখে বলল,“ধন্য হলাম।”
ইলোরা কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বলল,“এখন বলুন এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন? আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম। ভাগ্যিস ঘুমটা ভেঙেছিল তাই মেসেজ গুলো দেখেছি। না ভাঙলে কী হত?”
“কী আবার হত? সারারাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মশার কামড় খেতাম।”
“আপনাকে হিরোগিরি করতে কে বলেছে?”
“যা বাবা! যার জন্য এতকিছু করলাম সেই এখন রাগ দেখাচ্ছে!”
“হয়েছে। এক্ষুনি বাড়ি ফিরে যান। কয়টা বাজে খেয়াল আছে?”
“এভাবে তাড়িয়ে দিচ্ছ কেন? একটু কিউট করেও তো বলতে পারো। আর তোমাকে বলেছি না এই আপনি আজ্ঞে বাদ দিতে হবে?”
ইলোরা মাথা চুলকে বলল,“মনে থাকে না। আর কেমন যেন ইতস্তত লাগে।”
“চেষ্টা করতে হবে। তুমি তো চেষ্টাই করো না। এরপর থেকে আপনি আজ্ঞে করলে আমি কথাই বলব না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। চেষ্টা করব। মিথি অনেকক্ষণ ধরে ডাকাডাকি করছে। দরজা মনে হয় ভেঙেই ফেলবে আজ। এখন বাসায় যান।”
“উঁহু,হয়নি। যান না,যাও। আবার বলো।”
ইলোরা ঠোঁট উল্টে এরেনের দিকে তাকিয়ে বলল,“আচ্ছা যাও।”
এরেন মুচকি হেসে হাত নেড়ে বলল,“বাসায় গিয়ে মেসেজ করব। আল্লাহ্ হাফেজ।”
ইলোরাও মুচকি হেসে হাত নেড়ে বলল,“আল্লাহ্ হাফেজ।”
এরেন ফোন কেটে অন্যদিকে ঘুরে হাঁটা দিলো। ইলোরা এরেনের চলে যাওয়া পথের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এরেন চোখের আড়াল হতেই সে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাতের তোড়াটার দিকে তাকাল। মুচকি হেসে তোড়াটা বুকে চেপে ধরে এরেনকে অনুভব করল। মিনিট খানেক পর দ্রুত রুমে ঢুকে তোড়াটা একটা জায়গায় লুকিয়ে রেখে দরজা খুলে বাইরে গেলো।
•
বন্ধুমহল আজও একজনের শূন্যতায় খাঁ খাঁ করছে। তাহসিন এখনও টুম্পার সাথে ভুলেও কথা বলে না। আগের মতো আড্ডা ঠিকই হয় কিন্তু একজনকে বড্ড মনে পড়ে যায়। আজ আড্ডায় বসে হঠাৎ তাহসিন বলে উঠল,“একটা ব্যাপার একদম ভুলে বসেছি আমরা সবাই।”
ডালিয়া প্রশ্ন করল,“কোন ব্যাপার?”
“অন্তু শেষবার যে কথাগুলো বলল। ঐ যে বলল মাহাদি ভাই অরিকে অনেক পছন্দ করে। আবার বলল ইলোর কোন সিক্রেট জানতে পেরেছে। প্রেমে পড়লে তার গলায়ই ঝুলে পড়তে বলল। অরিরটা না হয় বুঝতে পারলাম। কিন্তু ইলোর ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আমার মাথার ওপর দিয়ে চলে গেছে।”
তাহসিনের কথায় ইলোরা চমকে উঠল। এই কথাটা সবাই ভুলে বসেছিল তাই তো ভালো ছিল। আবার হঠাৎ করে মনে পড়ার কী দরকার ছিল? ধুর! এখন সবাই মিলে এটা নিয়ে উঠেপড়ে লাগবে তার পেছনে। এখন সে কী উত্তর দিবে? ইলোরা পড়ল বিপাকে। এবার সত্যি সত্যিই সবাই মিলে মৌচাকের মতো ঘিরে ধরল তাকে। সবার একই কথা,“কাহিনি কী? খুলে বল তাড়াতাড়ি।”
ইলোরা অসহায় মুখে সবার দিকে তাকিয়ে রইল। ডালিয়া বলল,“আমি তোকে আগেই জিজ্ঞেস করেছিলাম তোর কী হয়েছে। তুই তখন এড়িয়ে গিয়েছিলি। এখন তো আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর কিছু একটা ঘটেছে।”
অরিশা বলল,“অসহায়ের মতো তাকিয়ে থেকে কোনো লাভ নেই। যা যা লুকিয়ে রেখেছিস সব বলতেই হবে।”
নাদিয়া অবাক হয়ে বলল,“আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না তুই গোপনে প্রেমও করে বেড়াস। এমন একটা ব্যাপার আমাদের কাছে লুকালি? হায় আল্লাহ্! ও না-কি আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড!”
তাহসিন বলল,“কী? মিথ্যে কথা খুঁজে লাভ নেই। সত্যি কথা বলে ফেল।”
ইলোরা মৃদু কন্ঠে বলল,“আমি কোনো প্রেম করি না ভাই। করলে তো তোরা জানতি।”
মুনা বলল,“না করলে অন্তু জানল কোত্থেকে? ও তো নিশ্চয়ই জেনেশুনে ভুল বলেনি। দেখ,কথা ঘুরাবি না। তাড়াতাড়ি বল।”
ইলোরা ভালোভাবেই জানে এই মানুষগুলো সত্যিটা জানলে চমকাবে ঠিকই কিন্তু কখনও কথাটা অন্য কারো কানে পৌঁছাতে দেবে না। সবাই তার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইলোরা সবার মুখে চোখ বুলিয়ে মাথাটা হালকা নিচু করে কিছু একটা ভাবল। তারপর বড়ো একটা নিঃশ্বাস নিয়ে হঠাৎ বলে উঠল,“আমার বিয়ে হয়ে গেছে।”
কথাটা শুনে সবাই অবাক হওয়ার বদলে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল। সবাইকে পাগলের মতো হাসতে দেখে ইলোরা বুঝল ওরা কেউ কথাটা বিশ্বাস করতে পারেনি। ফান ভেবে পাগলের মতো হাসছে। ইলোরা ভ্রু কুঁচকে বলল,“হাসার মতো কিছু বলিনি। আমি সিরিয়াস।”
তাহসিন হাসতে হাসতে বলল,“আচ্ছা? তো তোর জামাইটা কে শুনি?”
ইলোরা স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলো,“এরেন জামান।”
নিমিষেই সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ আহাম্মকের মতো ইলোরার মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ সবাই মিলে চিৎকার করে বলে উঠল,“কিহ্! এরেন ভাই?”
ইলোরা দুহাতে কান চেপে ধরে বিরক্ত মুখে বলল,“হ্যাঁ।”
ইলোরার ছোট্ট একটা কথায় ভীরের মধ্যে বোম ব্লাস্ট হওয়ার মতো অবস্থা হলো। সবাই হতবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে ইলোরার দিকে তাকিয়ে রইল। কারো মুখে কোনো কথা নেই। সবাই যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। ইলোরা সবার অবস্থা বুঝতে পেরে আস্তে আস্তে প্রথম থেকে সব কথা খুলে বলতে শুরু করল। পুরোটা কথা সবাই রুদ্ধশ্বাসে শুনল। ইলোরার বলা শেষ হতেই সবাই গালে হাত দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল। ডালিয়া ঠোঁট উল্টে আফসোসের সুরে বলল,“আমার বোনের বিয়ের পাঁচ মাস হতে চলল আর আমি আজ জানলাম!”
নাদিয়া দুঃখী দুঃখী মুখ করে বলল,“আমি তো মনে মনে এরেন ভাইয়ের উপর ক্রাশ খাইছিলাম। একি করলি তুই ইলো?”
টুম্পা গাল থেকে হাত সরিয়ে বলল,“আমি শুধু ভাবছি কথাটা দুই পরিবারের সবাই জানলে সেদিন কী হবে?”
ইলোরা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চিন্তিত কন্ঠে বলল,“জানি না।”
চলবে……………….……..🌸