ধূসর রঙে আকাশ পর্ব-১১

0
1248

#ধূসর_রঙে_আকাশ
#পর্ব_১১
লিখা: Sidratul Muntaz

সকালে ঘুম থেকে উঠেই খুব বিচলিতবোধ করছে তোহা। একটা প্রশ্ন আমীরকে প্রতিদিন করার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে সে। কিন্তু কোনো এক নাম না জানা সংকোচ তার মনের প্রশ্নটা কঠিনভাবে দমিয়ে রাখে। কিছুতেই বের হতে দেয় না। আমীরের চোখের দিকে তাকিয়ে এই প্রশ্ন করার চেয়ে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে মরে যাওয়াও অনেক সহজ মনে হয়। বুকের মধ্যে খুব ভারী একটা বস্তু লাফঝাপ শুরু করে। তোহা গলায় শব্দ আটকে যায়। সে হয়ে পড়ে শব্দহীন। আজকে তোহা ঠিক করেছে যেভাবেই হোক আমীরকে প্রশ্নটা করবে। কারণ যতদিন এই কথা সে না বলবে, মনের অবাধ্য অস্থিরতা থামবে না। নাম না জানা সংকোচের বেড়াজাল থেকেও তোহা বের হতে পারবে না। অস্বস্তিতে দম আটকে আসার মতো অনুভূতিটা যে খুব ভয়ানক! তোহা জোরে জোরে তিনবার শ্বাস নেয়। আজকে আমীরকে সে এ বিষয়ে নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করবে। আমীর খট করে দরজা খুলে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। তোহার বুকের ভিতর সেই শব্দটা তীরের মতো লাগে। ধড়মড় করে বিছানায় বসা থেকে উঠে দাড়ালো তোহা৷ একহাতের সাথে আরেকহাত ঘষাঘষি করছে। ঘন ঘন ঢোক গিলছে। আর চোখের পলক অবিরত ফেলছে। আমীর ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ দেখল৷ তারপর ভেজা মাথা তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে বলল,
” কিছু বলবে তোহা?”
তোহার আবার দমবন্ধকর অনুভূতি হচ্ছে। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যায়। হাসফাস করতে করতে বলল,
” ইয়ে.. মানে, চা খাবেন?”
আমীর সন্দিহান কণ্ঠে বলল,” উহুম। এইটা তোমার মনের কথা না। যেটা বলতে চাও সেটা আগে বলো। আর চা খাবো কিন্তু তোমার কথা শোনার পরে। কি নিয়ে এতো ডিস্টার্ব তুমি?”
আমীর প্রশ্নের ঝুলি নিয়ে বিছানায় বসে।
তোহা স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে বলল,” তেমন কিছু না। এমনি আর কি.. একটা প্রশ্ন করার ছিল। থাক পরে করলেও হবে। আগে আপনাকে চাই দেই। ”
তোহা ঘর থেকে পালানোর জন্য জড়োসড়ো হয়ে হাটতে লাগে। আমীর হাত টেনে ধরল। দৃঢ় গলায় বলল,
” তুমি কথা শেষ না করে তো এখান থেকে নড়তে পারবে না তোহা! কি বলতে চাও সত্যি করে বলো। মিথ্যে বললে কিন্তু আমি বুঝে ফেলি।”
তোহার গলা কাঁপতে থাকে। শরীরও মৃদু কাঁপছে। আমীর হাত ধরেছে তাই। আমীর সেই কম্পন খেয়াল করে হাতটা ছেড়ে দিল। কাশির মতো শব্দ করে গলা পরিষ্কার করে বলল,
” কি জানতে চাও বলো।”
” আপনি কিভাবে বুঝলেন আমি কিছু জানতে চাই?”
” তোমার টেনশন করা দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানতে চাইছো তুমি। কিন্তু লজ্জায় হয়তো বলতে পারছো না। আমার কাছে কিসের এতো লজ্জা তোহা? কাম অন তোহা, আই এম ইউর হাসব্যান্ড।”
হাসব্যান্ড শব্দটা সারা শরীরে কাপন ধরায়। কি সাংঘাতিক তাইনা? অচেনা,অজানা একটা ছেলে দিন-রাত কানের কাছে বলতে থাকে আই এম ইউর হাসব্যান্ড, আমার সামনে লজ্জা কিসের, সহজ হও, নির্ভয়ে বলো, সত্যিই কি সহজ হওয়া যায়? বললেই নির্ভয়ে থাকা যায়? এইযে তোহার গলা শুকিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে এক গ্লাস পানি না খেলে দুম করে মরে যাবে। এটা কেন হচ্ছে? আমীর সাথে সাথেই এক গ্লাস পানি ঢেলে তোহার সামনে দাড়ালো। কোমলভাবে বলল,” নাও খাও।”
তোহা বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। এই মানুষটা এতো কিছু খেয়াল করে? মনটা নিশপিশ করছে প্রশ্নটা করার জন্য। তোহা কি করবে? আগে পানিটা খেয়ে নিল। আমীর বলল,
” এবার বলো কি বলতে চাও?”
তোহা জিহ্বা দিয়ে দুইবার ঠোঁট ভিজায়। একহাতে থুতনির নিচের অংশ মালিশ করল। সহজ হওয়ার চেষ্টা। আমীর নিজে থেকেই বলল,
” আচ্ছা মেনস্ট্রুয়াল প্রবলেম কি? প্যাড লাগবে?”
এই কথায় তোহা এতোই অপ্রস্তুত হলো যে ওর হাত থেকে কাঁচের গ্লাসটা পড়ে ভেঙে গেল। তোহা আতঙ্ক নিয়ে তাকালো আমীরের দিকে।আমীর একটুও বিরক্ত হলো না। ধৈর্য্য ধরে মেঝে থেকে কাচের টুকরা গুলো তুলতে লাগল। তোহা ভয়ে ভয়ে বলল,
“আই এম সরি। কখন হাতের ফাঁক গলে পড়ে গেল বুঝতেই পারিনি।”
” আমি কি এমন বললাম যে এতো হেজিটেটেড হয়ে গেলে? তোমরা মানুষরা এতো লজ্জা পাও কেন?”
তোহা গোল গোল চোখ করে বলল,” আপনি বুঝি মানুষ না!”
আমীর উঠে দাড়িয়ে বলল,” হ্যা আমিও মানুষ। কিন্তু তোমার মতো এতো লজ্জা পাইনা।”
কাচের টুকরা গুলো ঘরের কোণে রাখা ডাস্টবিনে ফেলে আসে আমীর। তোহা এবার বলল,
” ছেলে মানুষ তো। লজ্জার কারণ আপনি কিভাবে বুঝবেন?”
” কেন? ছেলেরা লজ্জা বুঝে না?তাহলে পোশাক কেন পড়ে? লজ্জা না বুঝলে তো নগ্ন হয়েই রাস্তায় চলে যেতো।”
তোহা হতভম্ব হয়ে যায়। কি উত্তর দিবে বুঝতে পারে না। আমীর বলল,
” নির্বিঘ্নে বলো তোহা। আমি যেটা বলেছি সেটা ঠিক? নাকি অন্যকিছু?”
” না না, আপনি যা ভাবছেন তা না। এতো ছোটোখাটো বিষয়ে আপনাকে কেন বিরক্ত করবো আমি? নিজের জিনিস নিজেই গিয়ে আনতে পারি। আসলে সমস্যাটা হচ্ছে…”
আমীর এবার হালকা বিরক্ত হয়। অধৈর্য্যের মতো বলল,
” আবার থামলে কেন?”
তোহা যথেষ্ট লজ্জা নিয়ে বলে,
” একটা ছোট্ট প্রশ্ন ছিল।”
” বলো।”
” আপনি তো বলেছেন আমাদের বিয়ের বয়স তিনমাস। এর মধ্যে আড়াইমাস আমি সুস্থ-স্বাভাবিক ছিলাম৷ পনেরো দিন আগে আমার এক্সিডেন্ট হয়েছিল। মাথায় এখনো সেই দাগ আছে, চিহ্নও আছে। সব বুঝলাম। কিছু অবিশ্বাসের কোনো উপায়ও নেই। এই বাসায় আমরা এসেছি মাত্র একদিন হয়। গত চৌদ্দদিন ধরে তো আমি হসপিটালেই ছিলাম। তারপর আমার অনুরোধেই আপনি আমাদের এলাকায় আমার বাসার পাশাপাশি ফ্ল্যাট ভাড়া করে সরাসরি বাবা-মা’র কাছে নিয়ে এসেছেন। আমি কিন্তু এখনো জানিনা আমরা আগে কোথায় থাকতাম, কিভাবে থাকতাম।ছবি,ভিডিওতে যা দেখেছি সব তো রিলেশনের সময়। কিন্তু বিয়ের পরের ঘটনাগুলো তো কিছুই জানিনা।”
” তখন আমরা অনেক প্রবলেমের মধ্যে ছিলাম। কতটা ঝামেলা ফেস করতে হয়েছে জানো? তোমার তো কিছুই মনে নেই। তোমার বাবা সারাদেশ তোলপাড় করে তোমাকে খুঁজেছেন। প্রত্যেকটা জেলার থানায় থানায় ইনফর্ম করে রেখেছিলেন। প্রথম দেড়মাস তো পুলিশ আমাদের হন্যি হয়ে খুঁজেছে। পেপারেও নিউজ ছাপা হয়েছিল। তোমাকে বাসা থেকে বের করাও তখন বিপজ্জনক। সোশ্যাল মিডিয়ার সব জায়গায় শুধু তোমার হারানোর অ্যাডভারটাইজ। দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার।তোমাকে কত লুকিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়েছে তার কোনো আইডিয়া নেই তোমার। শেষে ভিসাটা আসল, অস্ট্রেলিয়া পালিয়ে যাওয়ার সবকিছু ব্যবস্থা হলো, আর তখনি এতোবড় এক্সিডেন্ট। আলাদা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকা সত্ত্বেও আমি তোমাকে এখানে এনেছি। আঙ্কেল হয়তো আমার নামে মামলা করতে পারতেন। অপহরণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন। আঙ্কেল চাইলে আমাকে অন্তত পাচ-ছয় বছরের জেল তো খাটাতেই পারতেন। কত বিপদের আশঙ্কা! তবুও আমি কোনোকিছুর তোয়াক্কা করিনি। কারণ কি জানো? তুমি যেন একটু খুশি থাকো।”
” তুমি তো আমাকে অপহরণ করোনি। বাবা কেন তোমার নামে মামলা করবে?”
” অপহরণ না করলেও তোমাকে দিয়ে সব অস্বীকার করিয়ে আমাকে মিথ্যে মামলায় ফাসাতে পারতেন। শাস্তি দিতে পারতেন।”
” আমার বাবা এতো খারাপ লোক না।”
” সেটা আমার সৌভাগ্য।”
” যেখানে আমারও দোষ আছে সেখানে বাবা একলা তোমাকে কেন শাস্তি দিবে? দিলে আমাদের দুজনকেই একসাথে দিবে। বরং আমাকে আরও বেশি দিবে। কারণ আমি মেয়ে হয়ে বিশ্বাস ভেঙেছি। প্রতারণা করেছি। আর তুমি তো পরের ছেলে। দেখো, সবচেয়ে বেশি শাস্তি কিন্তু আসলে আমিই পাচ্ছি।”
” কারণ আমার বলা প্রত্যেকটি কথা তুমি স্বীকার করেছো। নাহলে তুমি তো অতীতের সব ভুলেই গিয়েছিলে তোহা। যদি বাবা-মাকে ফিরে পেয়ে আমাকে অস্বীকার করতে? এই ভয় কি আমার ছিল না?”
তোহা মাথা তুলে বলল,” আমি এতো অকৃতজ্ঞ না।”
আমীর মুচকি হেসে বলল,” এটাও আমার সৌভাগ্য। বাই দ্যা ওয়ে মেইন পয়েন্ট থেকে দূরে সরে যাচ্ছি আমরা। তুমি কি জানতে চাইছিলে সেটা বলো।”
তোহা আবার অস্বস্তিতে আমতা-আমতা শুরু করল। আমীর দাঁত খিচড়ে বলল,
” উফফ একটা কথা বলতে তিনঘণ্টা লাগাবে নাকি?”
” আসলে.. আমি জানতে চাইছি, বিয়ের পর সর্বপ্রথম আমরা কোথায় গিয়েছিলাম?”
” আমার এক বন্ধুর বাসায়।”
” ও, তারপর সেখানে কি হয়েছিল?”
” কি আর হবে? সেখানে একরাত থেকে সকালেই তো বেরিয়ে গেছিলাম। মনে রাখার মতো কিছু হয়নি তো।”
তোহা আড়ষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন করল,
” কিছুই হয়নি?”
” বুঝেছি তুমি কি জানতে চাইছো। আসলে তোহা, তুমি মা-বাবাকে ছেড়ে আসায় মেন্টালি খুব ডিস্টার্ব ছিলে কয়েকদিন। সারাখন আপসেট হয়ে থাকতে। তাই আমি কখনো তোমার সাথে জোর-জবরদস্তি করিনি। এটা আমার রুচিতেও আসেনি। ওয়াহিদের বাসা থেকে চলে আসার পর তোমাকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ছদ্মনাম দিয়ে একটা মহিলা কলোনীতে রেখেছিলাম। আর আমি আমার ব্যাচেলর বাসায় থাকতাম। চাকরি খুঁজতাম। প্রতিদিন একবার করে দেখা হতো। তখন আলতো করে জড়িয়ে ধরা ছাড়া আর কিছুর সুযোগই হতো না। এবার নিশ্চয়ই বুঝেছো। জানি আমাদের মধ্যে শারীরিক একটা গ্যাপ আছে। আমি চাই এটা ততদিন থাকুক, যতদিন না তুমি নরমাল হও। এইবার বুঝেছো?”
তোহার মন থেকে অজান্তেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে। এতোদিনের সব জড়তা,লজ্জা,ভয়,আড়ষ্টতা এক নিমেষে শেষ হয়ে যায়। এই মানুষটার প্রতি আগের চেয়েও বেশি শ্রদ্ধাবোধ কাজ করছে। কে বলেছে আমীর ওর মনকে গুরুত্ব দেয়না? অবশ্যই দেয়, সবচেয়ে বেশি দেয়। তোহা কণ্ঠে খুশির জোয়ার মিশিয়ে অস্বস্তি ঠেকাতে বলল,
” বসো তোমাকে চা এনে দিচ্ছি।”
আমীর চিন্তিত মুখে বিছানায় ধপ করে বসল। চশমাটা খুলে ভাবতে লাগল,সে তোহাকে সব ঠিকঠাক বুঝাতে পেরেছে কি? তোহার মনে এই বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই তো? আমীর যা বলেছে সবই যে মিথ্যে বানানো গল্প। তোহা কোনোদিন জানবেও না আমীরের অতি সাধনার বিশাল ড্রিম প্রজেক্টের ছোট্ট এক অংশ ছিল তোহা। এছাড়া ওর কোনো মূল্যই নেই।

তোহা যখন চুলা জ্বেলে কেটলিতে চা বসালো তখনি কলিংবেল বাজে। তোহা দরজা খুলে দেখল পূরবী এসেছে৷ তোহার মনে প্রশান্তি ছেয়ে যায়। কেন জানি মনে হচ্ছে পূরবীকে মা পাঠিয়েছে। তোহা খুশি হয়ে বলল,
” পূরবী!”
পূরবী গম্ভীরমুখে জিজ্ঞেস করে,” ভেতরে আসবো?”
” অবশ্যই আসবি। আয়, আয়।”
পূরবী ভেতরে ঢুকে আশপাশটা দেখতে লাগল। তারপর কথায় ঠেস মারার মতো বলল,
” ভালোই তো গুছিয়েছিস নতুন সংসার!”
তোহা নিচুস্বরে বলল,” মা-বাবা কেমন আছে?”
পূরবী তাকিয়ে শক্ত কণ্ঠে বলল,” এতোদিন যেমন ছিল, এখন তার চেয়েও খারাপ আছে। আগে তোর ফিরে আসার অপেক্ষায় কাঁদতো। এখন তুই ফিরে এসেছিস। তাই খুশিতে কাঁদে।”
পূরবীর খোচা মারা উত্তরে তোহার হৃদয় চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। চোখের কোণায় পানি জমে উঠে। মুখে হাত দিয়ে কেঁদে ফেলতে ইচ্ছে করে। তোহা কান্না লুকানোর জন্য নরমগলায় পূরবীকে বলল,
” তুই বোস। আমি একটু আসি।”
তোহা দ্রুত রান্নাঘরে ঢুকে। তারপর মুখে দুই হাত ঠেসে কাঁদতে শুরু করল। পূরবী একটু পর রান্নাঘরে যায়। তোহা তখন কান্না থামিয়ে চা ঢালায় মনোযোগ দেয়। পূরবী বলল,
” তিনমাস ধরে সংসার করিস৷ এখনো চাটাও ভালো করে বানানো শিখলি না? এতো বাজে রঙ কেন চায়ের?”
তোহা শুকনো গলায় বলল,” আমি যেভাবেই চা বানাই, উনি খেয়ে নেয়। কখনো অভিযোগ করেনা।”
” তা করবে কেন? যে প্রেম দেখলাম তোদের! বলক উঠা দুধের ফেনার মতো উপচে উপচে পড়ে।”
তোহা প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বলল,
” তোরা গ্রাম থেকে কবে এসেছিস?”
” আমরা কবে এসেছি মানে? আমি তো আগেই ছিলাম। মা আমাকে নিতে এসেছিল, তারপর আন্টির অবস্থা দেখে এখানেই থেকে গেছে। ”
” ও৷ তুই আগে থেকেই ছিলি? কবে এসেছিস এখানে?”
” তুই থাকতেই তো এসেছিলাম।”
তোহা চোখ ছোট করে বিভ্রান্তি নিয়ে বলল,
” আমি থাকতে?”
” এমন ভান করছিস যেন কিছুই জানিস না? আমার জন্য শপিং করতেই তো গিয়েছিলি সেদিন। মনে নেই? আমরা ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করেছিলাম, আমার কোনো ভালো ড্রেস ছিল না আর তোর ড্রেসও আমার লাগছিল না। আমি তো মাশাল্লাহ তোর থেকে তিন ডাবল। তাই তুই নিজেই শখ করে আমার জন্য কাপড় কিনতে গেছিলি। সব ভুলে গেলি? অবশ্য মনে থাকবে কিভাবে? সেদিন তো আসলে আমার জন্য শপিং করতে যাসনি৷ নিজের জন্য গিয়েছিলি। বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালানোর জন্য বাসা থেকে জামা-কাপড় নিয়ে গেলে তো আন্টি সন্দেহ করতো৷ তাই আমার জন্য শপিং করার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিস। আসলে তো শপিং করবি তোর প্রয়োজনে। তারপর তিনমাসের জন্য লাপাত্তা হবি। পরে বাচ্চাসমেত ফেরত এসে ন্যাকা কান্না কাঁদতে কাঁদতে মাকে বলবি,” মাফ করে দাও মা! আর এমন হবে না। ” তারপর সবাই মেনে যাবে৷ হ্যাপি এন্ডিং! কি বুদ্ধি রে তোহা তোর! তোকে খুব সহজ-সরল ভাবতাম আমি। কিন্তু তুই আসলে গভীর জলের মাছ।”
তোহা চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে পাথরের মতো দাড়িয়ে আছে। পূরবীর বলা কোনো কথাই তার মাথায় ঢুকছে না। কারণ কিছুই যে মনে পড়ছে না! গোটা এক বছরের সমস্ত স্মৃতি তোহার ব্রেইন থেকে ভ্যানিশ হয়ে গেছে। তাই পূরবী কবে তাদের বাসায় এসেছিল, তার সাথে থেকেছিল, তাদের একসাথে কাটানো সময়গুলো কিছুই তোহার মনে নেই। একটুও মনে নেই।

চলবে

( এই তিনমাসে যা যা হয়েছে সব ফ্লেশব্যাক দেখানো হবে। আমি আশা করি সবকিছু এমন ভাবেই প্রকাশ করবো যেন কারো মনে কোনো সংশয় না থাকে। সবাই যেন বোঝে। ততদিনে আপনারা নিজেদের মতো প্রেডিকশন করতে থাকেন। দেখি কে কতদূর ভাবতে পারে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here